#আমার_সংসার
.
.
Part:23
.
.
Writer:Mollika Moly
.
.
.
এতো তেজ হয়েছে সিনহা তোমার।আমায় তেজ দেখানো দাড়াও দেখাচ্ছি তোমায়।আমার সাথে মিসবিহেভ করা।তোমায় আমি,, এগুলো ভাবছে আর রাগে লাল হয়ে যাচ্ছে সিফাত।
.
অফিস শেষে বাড়ি ফিরে সিফাতের মন টা আজ ফুরফুরে লাগছে।রাগ হলেও কেমন জানি একটা প্রশান্তি পাচ্ছে সে। হারানো কিছু ফিরে পেয়েছে এরকম মনে হচ্ছে তার।সিনহা কে কতদিন পর সে দেখছে।একদম পাতলা হয়ে গেছে সে।চোখের নিচে কালো ছাপ পড়েছে।না জানি কতদিন ঘুমায় নি সে।আচ্ছা সিনহা কি খুব কষ্টে আছে, নাহ কষ্টে থাকবে কেন সে তো তার সুখের ঠিকানায় গেছে।কষ্টে নেই সে বরং সুখেই আছে।কষ্টে ছিলাম আমি।এবার থেকে আমিও সুখে থাকবো।আমিও সাইরি কে বিয়ে করবো ওর সামনে সে অন্যকারো সাথে ঘর বাধতে পারলে আমি কেন পারবো না।আমিও পারবো।আনমনেই সিফাত এগুলো ভেবে রাগে চোখ দুটো লাল করে ফেললো।
.
সিনহা অফিস থেকে ফিরে স্বপ্ন কে স্বপ্ন কে স্কুল থেকে নিয়ে বাড়ি ফিরে। ফিরে ফ্রেশ হয়ে টুকিটাকি কাজ করে বিকেলে জানালার রেলিং ধরে বাহিরে তাকিয়ে চারপাশ টা চোখ বুলাচ্ছে। আজ অনেক দিন পর সিফাতের সাথে দেখা।পৃথিবী টা এতো ছোট কেনো। যার সামনে পড়তে চাই না তার সাথেই দেখা হয়ে গেলো।তার সাথেই আমার কাজ করতে হবে এখন থেকে। আমি সিফাতের সামনে থাকবো কি করে। আমার যে আরো বেশি কষ্ট হবে।ভালবাসার মানুষটিকে সামনে থেকে দেখতে হবে সে অন্যকারো এর চাইতে বেশি কষ্ট কি হতে পারে।ওনার সামনে গেলেই আমার হাত পা কাপাকাপি শুরু হয়ে যায়, আমি কাজ করবো কিভাবে।আর উনি আমার সাথে ঐরকম বিহেভই বা কেন করে বুঝিনা।মনে হয় উনি পাগল হয়ে গেছে।তাহলে তো সমস্যা আমার মেয়ে কে সবাই পাগলের মেয়ে বলবে।আমার বর পাগল ওরে আল্লাহ না না তুমি ওনাকে পাগল বানিয়ো না বানালে একটুস খানি সাইকো বানাও বাট পুরো পাগল বানিয়ো না।আল্লাহ জানে জারা উনাকে সামলাতে পারে কি না।উনি যে রাগী।উনাকে সামলানোর সাধ্য কারো নেই।এইসব ভেবে মনের অজান্তেই হেঁসে উঠলো সিনহা।
.
এর মধ্যেই স্বপ্ন টিউটরের কাছে থেকে ফিরলো পড়ে।কলিং বেল চাপতেই সিনহা দরজা খুলে দিলো।আর স্বপ্ন সামনে থেকে সরে গিয়ে বলে দেখো মামুনি কাকে নিয়ে এসেছি।সিনহা এক গাল হেঁসে কুশল বিনিময় করে ভিতরে আসতে বলে।তারপর উনাকে বসিয়ে চা, মিষ্টির ব্যবস্থা করতে চলে যায়।আর স্বপ্ন আর ওর টিউটর ফাহিম গল্প করতে থাকে।সিনহা চা নিয়ে এসে ফাহিম কে দেয়।আর স্বপ্ন বলে উঠে।
.
– “জানো মামুনি স্যার কতো পঁচা?
– ” স্বপ্ন স্যার গুরুজন হয়।গুরুজনদের এভাবে বলতে হয়না।উনি হলেন তোমার শিক্ষাগুরু।সবসময় সম্মান দিবে কেমন?
– আরে না ওভাবে বলছেন কেন,সে অসম্মানের কি করলো শুনি,আমিতো পঁচাই কেন পঁচা বলছে সেটা জিঞ্জেস করুন তো।আমি কি করেছি ওকে?(ফাহিম বললেন)
– “হুম তাই তো বলো স্বপ্ন কি করেছেন স্যার যে তাকে তুমি এভাবে বলছো?
– ” আমায় আজ নীল ডাউন করে রেখেছিলো।তখন হিসু পেয়েছিলো তবুও যেতে দেয়নি।
কথাটি শুনে সিনহা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার উপক্রম।
– “আসলে সরি এজন্য আমি ভাবলাম স্বপ্ন হয়তো দুষ্টুমি করে বলেছে শাস্তির ভয়ে সেজন্য এমন টা করেছি।সরি সরি।
– ” আরে ধুর মি.চৌধুরী আপনিও না।ভুল কিছু করেন নাই তো বেশ হয়েছে যেমন ছাত্র তেমনই শিক্ষক হওয়া উচিত।পড়াশুনা না করে দুষ্টুমি করলে না পিঠের ছাল তুলে বস্তায় ভরে বাড়ি পাঠাবেন।
– “দেখুন আমিতো প্রফেশনাল টিউটর নই।আপনার কথায় আর স্বপ্ন কে পড়াতে ভালো লাগে তাই অফিস শেষে বাড়িতে একা একা বোর হই তারজন্য ওকে পড়িয়ে সময় কাটাই।এইসব ছাল টাল তুলে বস্তায় ভড়ানো মনে হয় আমাকে দিয়ে হবে না।খুব সহজভাবে কথাগুলো বললো ফাহিম।
– ” হুম জানিতো আমি আপনি আমার কথা মেনেই ওকে টিউশনি করতে রাজি হয়েছেন।আমিও আপনাকে রিকুয়েস্ট করেছিলাম ওর জন্য কি করবো বলুন আমি অফিস থাকি ওকে বাড়ি থেকে বের হতে দিতে ইচ্ছে করে না প্রচুর দুষ্টু। যেহেতু আমরা আপনার ফ্ল্যাটেই থাকি আপনি ওপরে থাকেন তাই ভাবলাম বাহিরে যেতে হবে না আপনার কাছেই থাকুক সে।আপনার সাথে ওর বেশ ভালো মিল।আপনার যদি প্রবলেম হয় তাহলে বলে দিতে পারেন।
– “আরে না প্রবলেম কেন হবে।ওকে পড়াতে আমারো ভালোই লাগে।ওর দুষ্টুমি গুলো আমার প্রচুর ভালো লাগে।এগুলো নিয়েই বাড়ির সময় গুলো কেটে যায়।আর অফিস তো ব্যস্ততায় কাটে।আপনারা আসার আগে বাড়িটা কেমন জানি স্বশান ছিলো।আপনারা আসার পর প্রান পেয়েছে।মেতে থাকে বাড়িটা স্বপ্নের দুষ্টুমি গুলোতে।
প্রতি উত্তরে সিনহা শুধু মৃদু হাসলো ।
– “একি মি.চৌধুরী আপনি চা তো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে এখনো খেলেন না,নিশ্চয়ই ভালো হয়নি চা তাই না?
– ” আরে না এটা কি বলেন আপনার চা তো অসাধারন । রোজ ইচ্ছে করে আপনার হাতের চা খেতে।
– “তাহলে রোজ চলে আসবেন স্বপ্নের সাথে চা খেতে।
– ” ওকে আসবো,আজ তাহলে উঠি।সন্ধ্যা নেমে আসছে যাই গিয়ে রাতের রান্না টা সেড়ে ফেলি।
– ” না থাক আপনাকে আজ রান্না করতে হবে না।আমি আপনার খাবার পাঠিয়ে দিবো।রান্না আজ থাক আপনার।
– “মিসেস আহমেদ আপনি কিন্তু আমার অভ্যাস খারাপ করে দিচ্ছেন। এভাবে রোজ রোজ আপনি খাওয়ালে আমি অলস হয়ে যাবো পরে আর রান্না করতে ইচ্ছে করবে না।
– ” আরে না না হবে না অভ্যাস রোজ কই খাওয়াই আমি।এটুকু তে আমার মনে হয় না অভ্যাসের পরিবর্তন আসবে।
– “নাহ আসবে আজকাল প্রায় এসেই গেছে।
– ” ওকে আসলে আসুক আপনি তাহলে রোজই খেয়ে যাবেন হয়ে যাবে।
– “আপনার কথায় কখনো পারবো না আমি।
– ” জানেনই পারবেন না তাহলে আসেন কেনো কথা বাড়াতে যেটা বলি সেটাই শুনেন।
– “হুম শুনলান আজকেই শেষ বার কিন্তু।
– ” ওকে দেখা যাবে।
বলে সিনহা কিচেনে চলে গেলো।আর স্বপ্ন আর ফাহিম বসে আছে স্বপ্ন কার্টন দেখছে আর স্বপ্নের সাথে দুষ্টুমি করছে।
.
রান্না শেষ করে এসে দেখে স্বপ্ন কে ফাহিম নিয়ে পড়তে বসিয়েছে।স্বপ্ন ঝিমুচ্ছে।
.
– “রান্না রেডী আসুন খেতে দিচ্ছি।
ফাহিম কে খেতে দিয়ে সিনহা স্বপ্ন কে খাইয়ে দিচ্ছে।
– “মিসেস আহমেদ আপনিও খান।বসে আছেন কেনো,?
– ” হ্যাঁ খাচ্ছি স্বপ্ন কে একটু খাইয়ে দেই নইলে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়বে।
-“হুম
বলে ফাহিম খেতে লাগলো।খাওয়া শেষে সিনহা কে বলে ওর ফ্ল্যাটে চলে গেলো।
.
সিনহা ঘুমিয়ে পড়লো স্বপ্ন কে বুকে জড়িয়ে।
এদিকে সিফাতও জান্নাত কে বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।আর ফাহিম সেতো ডুব দিয়েছে তার কল্পনায়।তার মায়াপরীর কল্পনায় সে বিভোর।জানে না তাকে সে পাবে কি না।তবে সে যে তার মায়াপরী কে প্রচুর ভালোবেসে ফেলেছে।তার ঐ চোখদুটের ছাহনি যেনো মাতাল করে।তার সেই মায়াপরী টা গ্রাস করে ফেলছে তাকে।আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরছে ফাহিম কে তার মায়াপরীর ভাবনা।নাহ কিছুতেই সে ঘুমাতে পারছে না।ফোনে থাকা ছবিগুলো সে বের করে দেখতে লাগলো।তাকে যে সবসময় দেখতে ইচ্ছে করে ফাহিমের।কিন্তু এটাতো সম্ভব না। এটা সম্ভব তখুনি হবে যখন সে তার মায়াপরীকে তার ঘরের বউ করে নিয়ে আসবে।ফাহিম ব্যাচেলার। কখনো বিয়ে করার ইচ্ছে ছিলো না।কিন্তু মায়াপরী টা তার ইচ্ছের পরিবর্তন ঘটালো।প্রেমহীন মনে প্রেম জাগালো।এখন সে মায়াপরী টাকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারছে না।ওর মায়াপরী কে ওর চাইয়ি চাই।এসব ভাবতো ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লো ফাহিম।
.
to be continue……..