#আমার_সংসার
.
.
Part:28
.
.
Writer:Mollika Moly
.
.
ঝুম বৃষ্টি নেমেছে  চারিদিকে।ফাহিম তার মায়াপরীর কথা ভাবছে আর ড্রাইভ করছে।রাস্তা পুরো ফাঁকা। জন-মানব শুন্য।হবে নাই বা কেনো বৃষ্টির দিনে তো রাস্তা ঘাটে গাড়ি ছাড়া মানুষ চলাচল করে না।চারদিকে বৃষ্টির আওয়াজ, হালকা মিউজিক,আর মায়াবতীর ভাবনা খুব ভালো করে উপভোগ করছে। গাড়ি চলতে চলতে হঠাৎই  ব্রেক করলো ফাহিম।গাড়ি থেকে নামলো।জনমানব শুন্য খোলা একটা মাঠে গিয়ে দাড়ালো । দু হাত দু দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে সে।বৃষ্টির ফোটা গুলো তার চশমার  কাঁচ ঝাপসা করে দিয়েছে।চোখ বন্ধ  করে তার মায়াবতী কে অনুভব করছে। মায়াবতীর সাথে যদি এমন বৃষ্টি বিলাস করতে পারতাম তাহলে অনেক ভালো লাগতো।নিজের মনকে বললো ফাহিম।ফাহিম বৃষ্টিতে ভেজা পছন্দ করে না।অন্যরকম একটা ছেলে।রসকষহীন। কিন্তু আজ তার বৃষ্টিতে ভিজতে খুউব ইচ্ছে করছিলো। মায়াবতীর আঙুলে আঙুল ডুবিয়ে কপালে কপাল,নাকে নাক ঠেকিয়ে ভিজতে ইচ্ছে করছে তার।চোখ বন্ধ  করে দু হাত দুদিকে বাড়িয়ে আকাশপানে তাকিয়ে অনেকক্ষন ধরে বৃষ্টিতে  ভিজছে ফাহিম।হঠাৎই  বৃষ্টি  পড়া বন্ধ  হয়ে গেলো। ফাহিমের শরীরে আর বৃষ্টি পড়ছে না।চোখ খুলে সামনে তাকাতেই ফাহিমের চোখ চরকগাছ।চোখ দুটো ভালো ভাবে ডলছে সে।এটা কল্পনা নয়তো নাকি সত্য।
  – “বৃষ্টিতে ভিজছেন?
  কথাটি শুনেও শুনলো না ফাহিম কেনোনা সে এখনো থমকে আছে।
  – “আরে আজব লোক তো।ঠাডা পড়ে এমন স্টেচু হয়ে নেই তো কে জানে।সাইরি বিড় বিড় করে বললো।ফাহিম তখনো চুপ করে সাইরি কে দেখে যাচ্ছে। তার মায়াপরী আবারো তার সামনে এটা সত্য নাকি ওর কল্পনা বিশ্বাস করতে পারছে না।
  এইবার সাইরি একটু জোরেঔ বললো।
  – “আচ্ছা  আপনি কি পাগল?
  জোরে কথা শুনে  চমকে উঠলো ফাহিম।বুকে ফু দিলো।এবার সে নিশ্চিত এটা কল্পনা না সত্যই তার মায়াপরী তার সামনে দাড়িয়ে কথা বলছে।
  – “ভয় পেয়ে গেলেন? সাইরি ফাহিম কে বললো।
  – ” নাহ মানে তেমন কিছু না,আপনি এখানে?
  – “হ্যাঁ  এই পথ দিয়ে যাচ্ছিলাম দেখি আপনি দাড়িয়ে  ভিজছেন।আসলে খুশিতে  ভিজছেন না কাঁদছেন  এটা দেখতে এসেছিলাম।আচ্ছা  আপনি কাদছিলেন তাই না?
  সাইরির এমন প্রশ্ন শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।
  – “নাহ মানে কি বলছেন আপনি, আমি কাঁদবো  কেনো?
  – ” অস্বাভাবিক কিছু না।
  – “মানে?
  – ” মানে একা একা বৃষ্টিতে আপনার মতো এভাবে ভিজলে মনে হয়  কেউ সদ্য প্রেমে পড়েছে সেই খুশিতে  ভিজে একটু অন্যরকম মুডে থাকে আর কি।আর ব্যর্থ হওয়া মানুষগুলো ভিজে চোখের জল আড়াল করে।দু ধরনের মানুষই এই ধরনের পরিবেশ নিজেদের পরিস্থিতির  সাথে মানিয়ে নেয়।আপনি কোন পরিস্থিতির মাঝে পড়ছেন বলুন তো?
  – “হালকা মৃদু হাসলো ফাহিম আর কিছু বললো না।
  – ” আপনি উত্তর  না দিয়ে হাসলেন কেনো,কারন কি?
  – “নাহ এমনি কিছু না।
  – ” বললেন না তো আপনার পরিস্থিতি টা কি?
  – “আজ থাক সেটা না হয় অন্য একদিন বলবো।
  – ” আপনি মনে হয় সত্যিই পাগল।
  – “কেনো?
  – আমাদের যে আবার দেখা হবে তার কি গ্যারান্টি আছে,যদি না হয় তাহলে শুনবো কিভাবে?
  – ” দেখা যে হবেই না তার কি গ্যারান্টি?
  – “ভারী উল্টো  মানুষ তো আপনি।উল্টো যুক্তি দেখিয়ে দিলেন।
  – ” আবারো হাসলো ফাহিম।
  – “আবার কি হলো হাসছেন কেনো?
  – ” নাহ কিছু না শুনুন?
  – “হ্যাঁ বলুন?
  – “আমাদের এই নিয়ে চার বার দেখা হলো বুঝছেন সো আবারো দেখা হবে বলে আমার মনে হয়।
  – ” চার বার অবাক হয়ে বললো সাইরি।
  – “হ্যাঁ চার বার।
  – ” কই আমিতো জানি না?
  – “আপনি খেয়াল করেননি হয়তো।
  – ” কোথায় কোথায় দেখা হয়েছে আমাদের?
  – “প্রথম কক্সবাজারে, ২য় বার কিছু দিন আগে একটা ফুচকার দোকানে,৩য়বার কয়েক ঘন্টা আগে আমার গাড়ি আটকিয়ে তারওপর ব্যাগ রেখে চুল ঠিক করলেন আর ৪র্থ বার,,,,!
  – ” হইছে বুঝেছি আর বলতে হবে না কিন্তু একটা কথা।
  – “কি কথা?
  – ” আপনি মনে রেখেছেন কেনো আমাদের এতোবার দেখা হয়েছে?
  – “কই মনে রাখিনিতো,।
  – ” মনে রাখেননি তাহলে বললেন কিভাবে?
  – “মনে ছিলো তাই বললাম।
  – ” মনে ছিলো কেন,তার মানে,,,,,,,!ভ্রু কুচকে তাকালো সাইরি ফাহিমের দিকে কথাটি বলে।
  – “আচ্ছা  মনে রাখাটা কি খারাপ বলুন,এই যে এখন আপনি আমায় প্রশ্ন করলেন আমার মনে ছিলো জন্য উত্তর  দিতে পারলাম এটা কি ভালো হলো না বলেন?
  – ” হুম তা ঠিক।আমি আপনার গাড়ির ওপরই ব্যাগগুলো রেখেছিলাম তাই না।আর আপনি হর্ন দিয়ে  আমার মাথা খেয়ে ফেলছিলেন।রাগী দৃষ্টিতে তাকালো সাইরি।
  ফাহিমের মনে পড়লো সে সামনে কাউকে দেখে হর্ন দিচ্ছিলো তারপর কাজ না হওয়াই ব্রেক কষে মায়াপরী কে দেখে তার হাতের আঙুল টা হর্ন বাটনেই ছিলো যার ফলে হর্ন বাজতেই ছিলো।
  – “হ্যাঁ।
  – ” ঐভাবে হর্ন দিয়েছেন কেনো,আমার কানের পর্দা ফাটিয়ে যেতো আরেকটু  ওখানে থাকলে ইচ্ছে করছিলো গিয়ে গাড়িওয়ালার নাক ফাটিয়ে দেই।
  – “ওভাবে কেউ গাড়ির সামনে আসে,যদি আমার গাড়ির ব্রেক ফেল হয়ে যেতো তাহলে কি হতো ভেবেছেন একবারো?
  – ” কি আর হতো আমি মরে যেতাম আর তখন আপনাকে মার্ডার কেসের আসামী বানাইতাম আর তখন আপনাকে,,
  সাইরির পুরো কথা বলা শেষ না হতেই ফাহিম ওর মুখ চেপে ধরলো।আর সাইরি ওভাবে কথা বলতে আছে।ফাহিম  ছেড়ে দিলো ওর মুখ।
  – “সরি কিছু মনে করবেন না হঠাৎই  হাত মুখে দিয়ে ফেলেছি মাফ করবেন।
কথাগুলো  বলেই গাড়ি নিয়ে চলো গেলো ওখান থেকে।আর সাইরি থ হয়ে দাড়িয়ে থাকলো।আজিব লোক কেনইবা মুখে হাত দিয়ে ধরলো আর কেনইবা এভাবে চলে গেলো বুঝলাম না কিছু   পাগল সত্যিই ধ্যাত পাগল হলে হোক আমার কি।বিড় বিড় করে চলে গেলো সাইরি।
.
অফিস থেকে সিনহা  সোজা ওর  স্কুলে চলে যায়।  স্বপ্ন কে বাড়ি নিয়ে আসতেই চারদিকে ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়।বৃষ্টির কারনে সে খিচুড়ি, বেগুন ভাজা আর ইলিশ ভাজা করে।সন্ধ্যা গড়িয়ে গেছে।বৃষ্টি থেমেছে। বৃষ্টির পরবর্তী পরিবেশটাও বেশ ভালো লাগার মতো।গাছের পাতায় ডালে পানি জমে থাকে সেগুলোর টুপটাপ পড়ার শব্দ অসম্ভব ভালো লাগে। সিনহা জানালা দিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।নিস্তব্ধ শহর দেখছে।লাম্পপোষ্টের আলো আর গাড়ির আলোয় পিচঢালা ভেজা রাস্তা টা ঝলমল করছে।গাড়ি একের পর এক ছুটে চলেছে তার গন্তব্যে। ভাবছে অনেক কিছু সে।সিফাতের কথাগুলো পুরোনো দিনের সেইসব কথা যা আজ স্মৃতি।সেই স্মৃতিটুকু আঁকড়ে  সিনহার বেঁচে  থাকা।এজিবনে সিনহা সিফাতের কাছে যে আবার ফিরবে  সিফাত যে ওকে ফিরাতে চাইবে এটা সে আশা করেনি।কারন সে জানে তার সংসার আর তার নেই।তার স্বামীও তার নেই,তার সন্তানও তার নেই।সব জারার হয়ে গেছে।যা ছিলো ওর আজ সব জারার।কিন্তু তবুও কেনো সিফাত আজ ওকে ফেরাতে চায়।সে যখন এইসবকিছুর মায়া ত্যাগ করে নিজের স্বামী,সন্তান সংসার অন্যের কাছে দিয়ে এসেছে সেখানে সে কেনো ফিরবে। নতুন করে ঝামেলা  কেনো করবে সে।সিফাত তখন দূরে সরিয়ে আজ কেনো কাছে টানছে।বরাবরই  নিজের সিদ্ধান্ত  অন্যের ওপর চাপিয়ে দেয় সে।কিন্তু এবার আমি ওর সিদ্ধান্ত মানবো না।যা দান করে এসেছি জারা কে সেটা কিভাবে ফিরিয়ে নিবো আমি।এটা কখনোই আমাকে দিয়ে হবে না।আমি আমার স্বপ্ন কে নিয়েই ভালো আছি।ফিরবো না আমি আর আমার সংসারে।একমনে ভেবে চলেছে সিনহা।এদিকে ডিনারের সময় হয়ে গেছে।স্বপ্ন কে পাঠিয়ে দিয়েছে সিনহা ওপরের ফ্ল্যাটে ফাহিম কে ডাকতে। আলাদা কিছু রান্না করলে সিনহা ফাহিম কে খাওয়াই। আর বৃষ্টির দিনে খিচুড়ি  বেগুন ভাজা ইলিশ ভাজা তার অনেক প্রিয়।তাই সিনহা স্বপ্ন কে পাঠিয়েছে ডাকতে।অনেকটা সময় হয়ে গেলো স্বপ্ন  ফাহিম কে নিয়ে আসছে না।এখনো আসছে না কেনো ওরা এগুলো ভাবতেই স্বপ্ন  ছুটে আসে।হাফাতে হাফাতে বলে মা আঙ্কেল,,,,বলে হাফাচ্ছে সে
  – “কি হয়েছে তোর আঙ্কেলের এলো না?
  – “ফ্লাটে দেখবে চলো,,,,,,,
  অতঃপর সিনহা আর দেরী না করে সোজা ফাহিমের ফ্লাটে গিয়ে দেখে চমকে গেলো।
.
To be continue….. 
            
		




