#আমার_হৃদয়ে_সে
#রোকসানা_আক্তর
পর্ব-০২
৩.
দুপুর নাগাদ রিমি আপু এবং টিপি বাসায় এসে পৌঁছায়।তাদের সাথে কিছুক্ষণ সাক্ষাৎ করে আবার রান্না ঘরের দিকে ছুটে যাই।রান্নাটা সেই এগোরটার দিকেই চড়াই।অনেক রকমের রান্না ত তাই এখনো শেষ হয়নি। আর মা অভি যাওয়ার পরপরই দারোয়ানকে দিয়ে তখনই বাজারটা করিয়ে আনেন।আমি মাংসটা চুলা থেকে নামিয়ে রাখতেই আমার শাশুড়ী মা কিচেনে আসেন।এসেই বলেন,
“বউমা, আর কি কি রান্না করা বাকি আছে?”
“এইতো সব শেষ মা।আর মাত্র সবজিটা বাকি।”
“আচ্ছা,তাহলে তুমি গোসল করে নামাজটা আগে সেরে নাও।নামাজের দেরী হয়ে যাচ্ছে।আমি নিজেই সবজিটা চড়াচ্ছি।”
তারমানে মা এখন চুলোর আগুনের কাছে যেতে চাচ্ছে।আর তিনি আগুনের কাছে গিয়েছে শুনলে অভি আজ আবার গতকাল রাতের মতন ওরকম অশোচণীয় আচরণ করে বসবে।জানোয়ারদের মতন গালে চড় দিবে।ভেবেই মাকে আমি বাঁধা দেওয়া গলায় বলে উঠি,
“নাহ মা।সবজিটা আমি নিজেই করতে পারবো। নামাজের এখনো আরো পঞ্চাশ মিনিটস সময় আছে।আর সবজিটা করতে ত বিশ মিনিটও লাগবে না।”
মা তারপরও মানতে চাইলেন না।আমিও সে বারণ শুনতে চাইলাম না।ঝটপট ফ্রিজ থেকে সবজি নামালাম।সবজিটা শেষ করতে করতে বলা বিশ মিনিটের জায়গায় ত্রিশ মিনিট লেগে গেল।তারপর আর কি করা! তরহর করে গোসলের দিকে ছুটলাম।গোসল শেষ করে নামাজটা পড়লাম।তারপর নিচে গেলাম।নেমে দেখি আমার শাশুড়ী মা নিজেই রিমা আপু এবং টিপিকে খাবার সার্ভ করছেন।আমিও আর দেরী না করে মাকে হেল্প করতে গেলাম।রিমি আপু বললেন,
“ভাবী?তুমিও আমাদের সাথে তাড়াতাড়ি খেতে বসো।খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। ”
রিমি আপুর কথায় সায় দিয়ে আমি পাশের চেয়ারটায় বসলাম।মার সার্ভ করা শেষ হলে মাও বসেন।সবার খাওয়াদাওয়া শেষ হলে যে যার রুমে আসি।ভীষণ ক্লান্ত শরীর!একটু রেস্ট না হলে পরে হাঁটারও একটু বল পাবো না।সন্ধের দিকে আবার জল খাবার বানাতে হবে।বালিশটা টান দিয়ে বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিলাম।চোখদুটো বুঁজার চেষ্টা করলাম।এমন সময় খুট করে দরজা খোলার শব্দ হয়।তাকিয়ে অভি এসেছে।ঘামময় তার সারা শরীরে ক্লান্তির ছাপ লেপ্টে আছে।দেখেই বুঝা যাচ্ছে ভীষণ ব্যস্ততা সামাল দিয়ে ছুটে এসেছে বাসায়।
তবে আজ তাড়াতাড়ি ই ফিরেছে।নাহলে অন্য সময় অফিস থেকে রাত ন’টার দিকে ফিরে।অবশ্যি রিমি আপু এবং টিপি যে আসলো হয়তো তাড়াতাড়ি ফেরার একমাত্র কারণ সেটাই।তাকে আমি হালকা উঠে বসার চেষ্টা করলাম।তৎক্ষণাৎ অভি বলে উঠলো,
“উঠতে হবে না!”
অভি কথা বললো!?তাও আমাকে উদ্দেশ্য করে?কিন্তু অভি ত অফিস থেকে ফিরে কখনো আমার সাথে এভাবে কথা বলে না!উন্মাদ মুখ নিয়ে সোঁজা বাথরুমের দিকে ঢুকে যায়।গত আঁটমাস ধরেই ত এরকম করে আসছে!কিন্তু আজ?আজ কেন বললো?কোনো কারণ নয়তো?আচ্ছা কাল যে আমাকে চড় মারলো সেটার জন্যে নিজে নিজে অনুতপ্ত বোধ করে নয়তো!মুহূ্র্তে সারা শরীর আমার অস্বস্তিতে ভরে যায়। ভাবনার মাঝে “ঠাস” করার শব্দ শুনতে পাই।পাশ ফিরে তাঁকিয়ে দরজা বন্ধ করার শব্দ।অভি বাথরুমে ঢুকেছে।আমি অভির আর বারণ শুনলাম না।শোয়া থেকে উঠে বসলাম।এভাবেই অনেকক্ষণ থাকলাম।এরমাঝে অভি বাথরুম থেকে গোসল শেষ করে ফিরেছে।আমি তার দিকে একফোঁড় তাকালাম।সকালের থেকে তাকে এখন আরো বেশি সুন্দর লাগছে।একদম নেশা ধরানোর মতন।একবার তাঁকালে চোখ ফেরানো ভার!কিন্তু তার উপর আমার কোনো অধিকার নাই ভেবে সাথে সাথে নিষিদ্ধ চোখজোড়া আবার সরিয়ে নিলাম।এমন সময় সেখান থেকেই শব্দ আসে,
” আসলে গত কালরাতের জন্যে আমি সরি।”
আমি আবার মাথা তুলে তাকাই।তাকিয়ে কথাটা অভিই আমাকে বলছে।কিন্তু প্রথমবারের মতন এবার আর অভি কথা বলাতে আমার তীব্র অবাক আর অপ্রস্তুতের ছাপ মুখে ভাঁসে নি।কেনজানি স্থির চোখে অভির দিকে তাঁকিয়ে থাকি!অভিও আমার জবাব পেতে আর দাঁড়ায় নি।সে পেছনে ঘুরতে উদগ্রীব হয়।চলেও যায় কিছুটা।তাও দরজা বরাবর।তবে দরজার বাহিরে তার যেতে পারেনি।তার আগেই কেনজানি আমার স্তব্ধ মুখের বাঁধ ভেঙ্গে শব্দের তরঙ্গ বেরিয়ে আসে।বলে উঠি,
“শুনুন?”
আমার কন্ঠধ্বনি তার কান বরাবর যেতেই তার পায়ের গতি শ্লথ হয়ে যায়।সে সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে যায়।পেছন ফিরে নি।আমি বলে উঠি,
“আপনাকে আমার অনেকগুলো প্রশ্ন করার আছে। আশা করি শুনবেন!শুধু শুনবেন না জবাবও দিবেন!
কী জবাব দিবেন?”
অভি আমার কথায় এবার পেছন ফিরলো।চোখজোড়া তীব্র সংকুচিত করে আনলো।কপাল পুরু করলো আর
ঠোঁটজোড়ায় চাঞ্চল্যকর ফুঁটিয়ে তুললো।এসব ভঙ্গিমায় সে বুঝালো আমি কী জানতে চাই।বললাম,
“আপনি বিয়ের পর থেকে আমার সাথে কেন এরকম করেন?কেন মিসবিহেভ করেব?কেন স্বাভাবিক থাকেন না?আমার কি কোনো দোষ ছিল?নাকি আমাকে আপনার কি স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারেন নি?নাকি আবার আছে কোনো অন্য কারণ!এসবের জবাব চাই আমার!”
অভি এবার কপাল,চোখ,ঠোঁটের ভঙ্গিমা স্বাভাবিকে এনে সোঁজা হয়ে দাঁড়ালো।তারপর দুইহাত পকেটে গুঁজে সুদৃঢ় গলায় বললো,
“জবাব দিতে আমি বাধ্য নই!”
“তাহলে বিয়ে কেন করলেন!বিয়ে করার আগে এসব বলতে পারলেন না আমার বাবাকে?!”
আমার কথা শুনার অভির আর প্রয়োজন বোধ হলো না।চলে গেল সামনে থেকে।আমার দুই চোখ বেয়ে আবারো নোনা জল গড়িয়ে গেল!আমি হালকা অস্ফুট স্বরে ফুঁপিয়ে উঠলাম।এতটা মাস পর সাহস করে এতদিনের মনে চেপে রাখা প্রশ্নগুলো তাকে আজ জিজ্ঞেস করলাম আর এই হলো তার জবাব?এভাবেই কি চলবে সব?এভাবে কী হাঁটবে সামনের পথ ?আমি কী এভাবেই বারংবার লাঞ্চিত,বঞ্চিত,কষ্ট পেয়ে যাবো?খুব জোরে “হা” করে জোরে বড় একটা শ্বাস টেনে নিলাম।বামহাতে দুই চোখের পানি মুছে নিলাম!নাহ এইভাবে আর হবে না!!বহুৎ সহ্য করেছি!
৪.
সকাল ন’টা এখন!কিছুক্ষণ আগে নাস্তা শেষ করলাম।
অভি আঁটটার দিকেই নাস্তা করে অফিসে চলে গেছে।আমি রুমে এসে চেয়ার টেনে টেবিলের সামনে বসলাম।অনেকগুলো তাক তাক করে সাজানো প্যাডের গোছা থেকে একটা প্যাড টানলাম।প্যাডটি অভির পার্সোনাল প্যাড।সে এটাতে মাঝেমধ্যে হালকা পাতলা কিছু লেখালিখি করে।অবশ্যি তার লেখালিখির অভ্যেস আছে তাই।আর সাথে একটা পেন নিলাম।মনোযোগ সহকারে লিখতে বসলাম,
প্রিয় অভি,
আমি আপনাকে কিছু কথা বলতে চাই।আশা করি আমার কথাগুলো মনোযোগ সহকারে পড়বেন।অভি আমি আমাদের বাসায় চলে যাচ্ছি।জানি না আর ফিরবো কিনা।হয়তো কখনো নাও ফিরতে পারি।আপনি এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গিয়েছেন আমি কেন বাসায় চলে যাওয়ার কথা বলেছি। আর যদি না বুঝে থাকেন তাহলে শুনুন লিখে দিচ্ছি-প্রথমত, আমি আপনার স্ত্রীর অধিকার থেকে বঞ্চিত। আপনার সাথে আমার বিয়ে
হয়েছে আঁট আঁটটি মাস,এই আঁটটি মাসে আপনি কখনো আমার সাথে একটু সময় নিয়ে কথা বলেন নি।আমাকে সবসময় এভয়েড করে চলেছেন।আমি যে আপনার স্ত্রী, স্ত্রী হিসেবে আমারও যে আপনার উপর কিছু অধিকার বা কর্তব্য আছে বা সেইম আপনারও তা আপনার একবারও ভাবার প্রয়োজনই বোধ হয়নি!মনে হয় আমি আপনার স্ত্রী না।আমি অন্যকেউ এরকম ব্যবহার আমার সাথে!
দ্বিতীয়ত,
এসব করার কি এমন কারণ,অভি?আমাকে কি আপনার পছন্দ না?আমি কি আপনার অযোগ্য?নাকি অন্য কোনো কারণ!থেকে গুলো প্রশ্নগুলো!
তৃতীয়ত,
কোনো মেয়ে এভাবে তার স্বামীর বাড়ি চলতে পারে না!কতদিন চলবে,বলুন?একদিন,দুইদিন,তিনদিন….?কিন্তু আমিতো আঁট আঁটটি মাস সব মেনে চলেছি।কাউকে কিছু বুঝতে দিই নি। না আমার ফ্যামিলিকে,আর না আপনার ফ্যামিলিকে।কেন দিই নি জানেন? এই আশায় যে আপনি একদিন আমাকে ঠিকই বুঝবেন!কারণ ধৈর্যের ফল আল্লাহ একদিন ঠিকই দেন!তবে না আজ দেখলাম আমার ধৈর্যটা একটু বেশিই লিমিট ক্রস করে ফেলেছে!
চতুর্থত,
সবকিছুর শেষে আমার কথাগুলো যদি আপনার না ভালো লাগে তাহলে আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিতে পারেন।আমি কোনো আপত্তি করবো না।
ভালো থাকবেন!
চিঠিটা লিখা শেষ করা মাত্রই দুই ফোঁটা নোনাজল কাগজের উপর উপচে পড়লো!
চলবে…
(এবার কিছু কথা..!”ফনক” নামটি চেইঞ্জ করে অভি দিলাম।আপনাদের অনেকেরই “ফনক” নামে বিপত্তি ঘটলো।অনেকে এটাও বললেন “ফনক” তো কখনো নাম হয় না।জ্বী “ফনক” নাম হয়।ফরাসি একজন বিমান চালকের নাম ছিল”কর্ণেল রেনা পল ফনক”।আপনি এই নামে গুগলে সার্চ করলে উনার বিস্তারিত সব পেয়ে যাবেন।আর বিস্তারিত বলছি না।)