আমার_পূর্ণতা #রেদশী_ইসলাম পর্বঃ১৪

0
305

#আমার_পূর্ণতা
#রেদশী_ইসলাম
পর্বঃ১৪

” এখানে অপমানের কি দেখলেন?”

” অপমান না বলছিস? এইযে হাত থেকে ব্রেসলেট খুলে ছুড়ে মারলি এটা তো অপমান-ই। ”

তাফসিরের কথায় ভ্রু কুঁচকে উঠলো প্রাচুর্যের। কারন কথাটা তাফসির একটু করুন সুরেই বলেছে। প্রাচুর্যের মনে হলো এখন তাফসির নাটক করছে। কারন এই সামান্য কারনে এখানে অপমানের কি দেখলো সে। আর অপমান করলেও অন্তত তার থেকে তো কম করেছে। কিন্তু এখন এতো কিছু ভাবার সময় নেই। অলরেডি ঘন্টা দিয়ে দিয়েছে কলেজের। তাই প্রাচুর্য ব্যস্ত কন্ঠে বললো—

” তাফসির ভাই আমি যায় এখন। ঘন্টা দিয়ে দিয়েছে। আরেকটু দেরি হলে স্যার ঢুকতে দিবে না ক্লাসে।”

প্রাচুর্যের কথায় তাফসির পকেট থেকে ব্রেসলেট বের করে প্রাচুর্যের হাতে পরিয়ে দিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললো—

” আর কখনো যেনো এটা খুলতে না দেখি। যদি কখনো খুলিস তবে সেদিন দেখবি আমি কতোটা খারাপ।”

গম্ভীর অথচ শান্ত কন্ঠে প্রাচুর্যকে থ্রেড দিয়ে হাত ছেড়ে দিলো তাফসির। কিন্তু তখনও প্রাচুর্য অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাফসিরের দিকে। যা দেখে তাফসির বললো—

” যা। ক্লাসের দেরি হয়ে যাচ্ছে। ছুটির সময় নিতে আসবো। ভদ্র মেয়ের মতো চলে আসবি। এখানেই অপেক্ষা করবো।”

———————

রিয়া সাধারণত সব সময় একা থাকতেই বেশি পছন্দ করে। তার বন্ধু বান্ধব নেই বললেই চলে। ক্লাসমেট কারোর সাথে দেখা হলে হাই হ্যালো পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে। এর বেশি কিছু না। আর তার এমন একা থাকার সব থেকে বড় কারন হলো তার মা। ছোট থেকেই তার মা তাকে বন্ধু বান্ধব এর সাথে খুব কমই মিশতে দিয়েছে। কোথাও গেলে সাথে করে নিয়ে গেছে এবং সাথে করে এনেছে। বাড়িতে থাকলে বেশির ভাগ সময়ই বই নিয়ে বসিয়ে রাখতো। খেলাধুলা ও খুব কমই করেছে ছোট কালে। অন্য আর পাঁচটা ছেলে মেয়ে যখন খেলাধুলা করেছে তখন দেখা গেছে তার মা তাকে ঘরে দরজা বন্ধ করে পড়াচ্ছে। এখন সামি,সাদনানের সাথেও ঠিক তাই করছে। আর সেই স্বভাব এখনো পর্যন্ত থেকে গেছে তার। সে পারে না সহজে কারো সাথে মিশতে বা বন্ধুত্ব করতে। বাড়ির মানুষ গুলোই যে তার সব। অবশ্য তারা সাথে থাকলে বাড়তি কোনো বন্ধুর দরকার পরে না তার। তবে ইদানীং তার বন্ধু হয়েছে একটা। মেয়ে বন্ধু নয় ছেলে বন্ধু। বন্ধুত্বের শুরুটাও হয়েছিলো খুব সাধারণ ভাবেই। এখনো তার মনে পরে সেদিন টার কথা যেদিন প্রথম দেখা হয়েছিলো আরফানের সাথে।

সেদিন ছিলো সোমবার। চট্টগ্রাম যাওয়ার আগে। রিয়া ভার্সিটি শেষ করে বাড়ি ফিরছিলো তখন। সে বেশিরভাগ সময়ই বাড়ির গাড়িতে যাতায়াত করে। সময় বিশেষ হয়তো রিকশা ব্যবহার করে। তবে নিত্যদিনের মতো সেদিনও গাড়িতে আসছিলো সে। কিন্তু পথিমধ্যে ভিড় দেখে ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বলে জিজ্ঞেস করলো—

” আঙ্কেল এখানে এতো ভিড় কেনো? কোনো সমস্যা হলো নাকি?”

” তাতো জানি না মামনি। হয়তো কিছু হয়েছে।”

এর মধ্যেই গাড়ির জানালায় ব্যস্ত ভাবে টোকা দিলো কেউ। রিয়া জানালার কাচ নামাতেই সুঠামদেহের অধিকারী একজন যুবক বলে উঠলো —

” ম্যাডাম একটু সাহায্য করবেন? পাশে একটা এক্সিডেন্টে হয়েছে। গুরুতরভাবে আহত হয়েছে। তাড়াতাড়ি হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে। প্লিজ একটু সাহায্য করুন।”

লোকটির কথা শুনে ড্রাইভার রিয়ার দিকে তাকালো। কিন্তু এদিকে চিন্তায় পরে গেলো রিয়া। পরমুহূর্তেই ভাবলো মানুষের উপকার করা উত্তম কাজ। কোনো মানুষকে এমন আহত রেখে চলে যাওয়া মনুষ্যত্বের ভেতর পরে না। তাই সে আহত ব্যাক্তিকে নিয়ে আসতে বলে ফ্রন্ট সিটে চলে গেলো। সাথে সাথে রাস্তার কিছু লোক মিলে ধরে একজন মধ্যবয়স্ক লোককে গাড়িতে উঠিয়ে দিলো। সাথে উঠে বসলো চশমা পড়ুয়া সেই সুঠাম দেহের পুরুষটি। সাথে সাথেই তাড়া লাগিয়ে বললো হসপিটাল যাওয়ার জন্য কারন লোকটি গুরুতর ভাবে আহত। যুবকটির কথা মতো ড্রাইভার ও গাড়ি চালাতে শুরু করলো। তার মধ্যে এবার রিয়া পেছনে ফিরে তাকালো আহত লোকটির দিকে। বয়সে হয়তো বড় বাবা অর্থাৎ ইশতিয়াক চৌধুরীর বয়সের হবেন। রিয়া এবার সেই সুঠাম দেহের যুবকের দিকে ফিরে তাকালো। বয়স হয়তো বেশি হবে না। তাফসিরের মতোই হবে। তার থেকে দু-এক বছরের ছোট হতে পারে। কিছুটা উজ্জ্বল শ্যামলা ধরনের যুবকটির দিকে তাকিয়ে রিয়া জিজ্ঞেস করলো—

” ওনার কি হয়েছে? এক্সিডেন্ট কিভাবে হলো?”

” উনি আসলে রিক্সা চালান। আমি লোকমুখে যা শুনলাম তা হলো উনি নাকি রিকশা ঘুরিয়ে আনতে যাচ্ছিলেন তখন বিপরীত দিক থেকে একটা সিএনজি আসছিলো। তখন সেই সিএনজি এসে ওনার রিকশার সাথে সংঘর্ষ হয়। তখন উনি ছিটকে নিচে পরেন। দেখে মনে হচ্ছে হাত ভেঙে গেছে আর মাথা ফেটেছে।”

” খুবই দুঃখ জনক ঘটনা। ইশ এখন কি হবে ওনার পরিবারের? চলবে কিভাবে ওরা। দেখে তো মনে হচ্ছে অনেকদিন কাজ করতেও পারবে না।”

রিয়ার কথায় লোকটি চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো—

” চিন্তা করবেন না ম্যাডাম। আল্লাহ কোনো ব্যবস্থা করে দেবেন। ”

” বার বার ম্যাডাম ম্যাডাম করছেন কেনো? আমার নাম রিয়া। রিয়া বলে ডাকুন। ম্যাডাম ডাকলে নিজেকে অনেক বড় বড় লাগে।”

” বেশ তবে তাই হোক। রিয়া বলেই ডাকবো।”

” আপনার নাম?”

” আমার নাম আরফান। আরফান খন্দকার।”

এর মধ্যেই গাড়ি এসে থামলো হসপিটালের সামনে। ড্রাইভার ও আরফান মিলে হসপিটালের ভেতরে নিয়ে গেলো লোকটিকে। সাথে সাথে নিয়ে যাওয়া হলো চেক-আপ করানোর জন্য। আরফান যা ভেবেছিলো তাই মাথা এবং হাতে ইনজুরি হয়েছে। রক্ত লাগবে এক ব্যাগ। সাথে অপারেশনের জন্য কাউন্টারে ৩০ হাজার টাকা জমা দিতে হবে। যা শুনেই মুখ শুকিয়ে গেলো আরফানের। আরফানের মুখের দিকে তাকিয়ে রিয়া হয়তো কিছুটা আন্দাজ করেছে তাই আর কিছু না বলে তার একাউন্ট থেকে টাকা তুলে রিসিপশনে জমা দিলো। তখন লোকটি রিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো—

” আপনাকে ধন্যবাদ রিয়া এভাবে সাহায্য করার জন্য।”

” এখানে ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু নেই মিস্টার আরফান। কাউকে বিপদে সাহায্য না করার শিক্ষা আমি পাই নি।”

” নিঃসন্দেহে আপনার পরিবারের মানুষ মহৎই।”

” উমম বলতে পারেন তা ঠিক। আমার পরিবারের মানুষ গুলো অনেক ভালো।”

” বেশ তবে চলুন কফি খেয়ে আসি। ওনার অপারেশন করতে সময় লাগবে অনেক। ততোক্ষণ গল্প করা যাক।”

” বেশ চলুন তবে।”

সেই থেকেই পরিচয় দু’জনের। আরফান সেদিন নাম্বার নিয়েছিলো রিয়ার। যদিও সেটা দরকারি কাজেই। তবে তার পর থেকেই কথা চলছে তাদের।

———————

আজ প্রাচুর্যের কলেজে ক্লাস টেস্ট হওয়ার কথা থাকলেও তা ক্যানসেল হলো কোনো কারন বশত। তবে ক্লাস হলো সবগুলো। তাই প্রাচুর্য সব ক্লাস শেষ করে কলেজ থেকে বের হতেই দেখলো তাফসির গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ফোন টিপছে। প্রাচুর্য মনে মনে বেশ বিরক্ত হয়ে বিরবির করে বললো—

“দেখো এমন এটিটিউড নিয়ে দাড়িয়ে আছে যেনো কোন প্রেসিডেন্ট। দেখে মনে হচ্ছে ভাজা মাছটা ও উল্টে খেতে জানে না। অথচ আমি তো জানি এই লোকটা কি পরিমান শয়তান। ”

প্রাচুর্যকে বিরবির করতে করতে গাড়ির দিকে আসতে দেখেই তাফসির সোজা হয়ে দাঁড়ালো। প্রাচুর্যের দিকে তাকিয়ে বললো—

” এমন পাগলের মতো বিরবির করছিস কেনো?”

প্রাচুর্য দাঁত বের করে হেঁসে কথা পাল্টিয়ে বললো—

” বলছিলাম যে আজকে আপনাকে খুব সুন্দর লাগছে তাফসির ভাই। একদম তুর্কীর হিরো দের মতো।”

প্রাচুর্যের কথা তাফসিরের বিশ্বাস হলো না। কারন সে খুব ভালো করেই প্রাচুর্যকে চেনে। কিন্তু তবুও কিছু না বলে চললো বাড়ির দিকে।
.
.
.
.
রাত তখন প্রায় নয়টা। এ সময় বাড়ির তিন গিন্নি সিরিয়াল দেখতে ব্যস্ত থাকে এবং তিন কর্তা বাইরে যান চা খেতে এবং একটু হাটাহাটি করতে। আর মেয়েরা নিজেদের রুমে ব্যস্ত থাকে নিজেদের পড়ালেখা নিয়ে। বাংলাদেশে আসার পর তাফসির সন্ধ্যার পরপরই বাইরে চলে যায় বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে। তবে আজ তার ব্যতিক্রম ছিলো। আজ অফিসের ভিডিও কনফারেন্স ছিলো। ছুটিতে থেকেও শান্তি নেই। এতো দুর থেকেও তার কনফারেন্সে জয়েন্ট হতে হচ্ছে। দীর্ঘ দু ঘন্টা ইংলিশে বকবক করার পর অবশেষে শেষ হলো কনফারেন্স। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে তার সাথে মাথা ব্যাথা তো আছেই। তাই পানি খেয়ে উঠে দাঁড়ালো তাফসির। দোতলা থেকে লিভিং রুম স্পষ্ট দেখা যায়। তাই দোতলায় দাড়িয়ে মা’কে ডেকে বললো এক কাপ ব্লাক কফি দিয়ে যেতে। ছেলের কথা শুনে মিসেস ফারাহ উঠে গেলেন ছেলের জন্য কফি বানাতে। হঠাৎ তার কিছু একটা মনে পরতেই তাড়াতাড়ি কফি বানিয়ে ছুটলেন ছেলের রুমের দিকে।

#চলবে

[ ভালো বা খারাপ যায় হোক না কেনো মতামত জানাবেন। খারাপ হলে আমি শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করবো]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here