#আমার_মনপাখি
#পলি_আনান
#পর্ব – ১১
রাইফা নামাজ শেষ করে বিছানায় গিয়ে বসে।বালিশের পাশ থেকে ফোনটা নেওয়ার সময় একটা চিরকুট পায়। চিরকুট টি খুলে রাইফা পড়া শুরু করে,
–শুভ সকাল মনপাখি।আজকে যেমন নামাজ আদায় করেছ। ঠিক তেমন প্রতিদিন নিয়ম করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে।আগে যা করেছ তা মেনে নিলাম। কিন্তু এখন তোমার জিবন আমার জিবনের সাথে জড়াবে আমি চাই না তুমি তোমার আগে করা হাসির ছলে ভুলগুলো আবার কর।তোমার যত রং, ঢং যা হবে সব আমার সাথে হবে।তুমি ভালো তো আমি ভালো।তুমি আমার কথা না শুনলে তখন আমি আবার আমার খারাপ রুপ টা দেখাতে বাধ্য হবো”।
রাইফা লেখা গুলো পড়ে স্তব্দ হয়ে যায়।একটুপর তার ফোনে একটা মেসেজ আসে,মেসেজটি ওপেন করে সে পড়তে শুরু করে,
— ছাদে যাও, সকালের অবহাওয়া উপভোগ করো।দেখবে তোমার মন সতেজ হয়ে যাবে।ভয় পেয়োনা আমি আসবো না.।সকালের আবহাওয়ার মিষ্টি অনুভুতি কখনো পেয়েছো, পাওনি, ঘুম থেকে উঠো সকাল ৯ টায় বুঝবে কি করে আল্লাহর দেওয়া প্রকৃতির এই সুন্দর সকালে আরো মনোরম লাগে।আর কিচ্ছু বলবোনা। যদি মন চায় ছাদে যেও।
রাইফা মেসেজটি পড়ে মনে মনে ভাবে
–সত্যিত কখন সকাল সকাল।ছাদে যাই নি।
রাইফা মাথায় ওড়না জড়িয়ে হাতে মোবাইল নিয়ে ছাদের উদ্দেশ্য রওনা হয়।ছাদের গেট পার করেই সকালের ঠান্ডা শিতল হাওয়া গায়ে লাগে তার।আলাদা একটা অনুভূতি ছুয়ে যায় মন জুড়ে। পূর্ব দিকে সূর্যটা গোল হয়ে লালছে আলোর আবরন নিয়ে ছড়িয়ে আছে।সাদা আকাশটায় কিছু কাক আর নাম না জানা পাখি উড়ে যাচ্ছে।পুরো পরিবেশটায় মুগ্ধ হয়ে দেখছে সে।আস্তে আস্ত ছাদের রেলিং গেসে দাঁড়ায় রাইফা।ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসি ভেসে যাচ্ছে।মনে মনে বলে অচেনা লোকটিকে নিয়ে কত শত কথা ভাবতে থাকে।
–ইসস আমি কখনো এই সুন্দর সকালটি উপভোগ করিনি।কেন যে পড়ে পড়ে ঘুমাতাম। যাই করুক না কেন এই মুহুর্ত উপহার দেওয়ার জন্য ওই মানুষ টাকে একটা ধন্যবাদ দেওয়া প্রয়োজন।
–কিরে এটা কি সত্যি তুই নাকি,তোর ভূত।”
কারো কথা শুনে পাশে তাকায় রাইফা।পাশের ছাদে রেলিং গেসে রাইফার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আহাদ। পড়নে টি শার্ট,টাউজার,হাতে কফির মগ, আরেকটা বই।
–এই কি হলো কথা বলছিস না কেন।হাতের কাটার সাথে কি কান ও গেছে নাকি(ধমক দিয়ে)
আহাদকে দেখে এবার রাইফার আবেগ সব ফুস করে উড়ে গেল।কেননা কাল ওই লোকটা তাকে হুমকি দিয়েছে যেন আহাদের সাথে কথা কম বলে।তবুও নিজের মনে একটা জেদ চেপে বসে। আহাদ কথায় কথায় তাকে অপমান করে।আর এর রিভেঞ্জ নিতে হলে তো কথা চালিয়ে যেতেই হবে।তাই শুকনো মুখটাতে একটু হাসি টেনে বলে,
— আমার ভূত হবে কেন আহাদ ভাই, আমি রাইফা মির্জাই দাড়িয়ে আছি,। কেন ডাউট হচ্ছে।(ভ্রু কুচকে)
— মাই গড, তুই এতো সক্কাল, সক্কাল কেন উঠেছিস।,আমার জানা মতে তুই বেলা ১০টার আগে ঘুম থেকে উঠিস না।
— আজ উঠেছি তাতে আপনার কি সমস্যা।
— না আমার সমস্যা কি হবে আর।এমনি বললাম।
হঠাৎ হালকা ঠান্ডা বাতাস বয়ে যায় পুরো পরিবেশ জুড়ে ।রাইফার শরীর জুড়ে ঠান্ডা শিহরণ বয়ে যায়।তার শীত শীত অনুভব হচ্ছে। আহাদ রাইফার অবস্থা বুঝতে পারে।তাই সে রাইফা কে জালানোর জন্য বলে,
— আসার সময় কফি আনিস নি কেন।ওওওও আমি তো ভুলেই গেছি তুই হলি অর্কমার ঢেকি।কাজ টাজ তো পারিস না। সামান্য একটা কফি বানানো ও শিখলি না। ডাফার একটা।কোন ছেলের ভাগ্যেযে তুই আছিস আল্লাই যানে। ছেলেটার জীবন শেষ করে দিবি তুই।
আহাদের কথা শুনে রাইফা রেগে যায়।আহাদের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
— যে ছেলের ভাগ্যে থাকি না কেন। তাতে আপনার কি। মুখটা বন্ধ করুন দয়া করে।যদি যানতাম আপনি ছাদে তবে জিবনেও আসতাম না।
— কেনরে অন্য কোন ছেলেকে আশা করেছিস বুঝি।আচ্ছা তুই দাড়া আমি আসছি।
আহাদের ছাদ আর রাইফাদের ছাদের মাঝে হালকা ফাক।তাই আহাদ সহজেই রাইফাদের ছাদে লাফিয়ে আসে।
আহদের কান্ড দেখে রাইফা চোখ বড় করে তাকিয়ে থাকে।রাইফার চাহনি দেখে আহাদ বলে,
— এই এমন হেবলার মতো তাকিয়ে আছিস কেন। ঠান্ডায় তো জমে যাচ্ছিস, এইটুকু ঠান্ডা তোর সয্য হয় না।নে কফিতে একচুমুক দে।
রাইফার থেকে ঠান্ডা লাগছে আবার এই পরিবেশ ছেড়ে যেতেও ইচ্ছে করছে না। তাই বাধ্য হয়ে আহাদের কফিতে চুমুক দেয়।
রাইফার কাছে কফিটা ভালো লাগে।তাই সে আনমনে কফিটায় চুমুক দিয়েই যাচ্ছে।একটু পর আহাদ ছো মরে রাইফার কফিটা নিয়ে নেয় আর নিজে রাইফা যে স্থানে চুমুক দেয় ওই স্থানে চুমুক দেয় ।
–এটা কি হলো আহাদ ভাই।
–তোকে আমি একচুমুক দিতে বলেছি আর তুই চুমুক দিয়ে যাচ্ছিস।পাজিল একটা। তুই জানিস আমার কফি মগ আমি কাউকে শেয়ার করি না।আমার কফির শেয়ার পাবে শুধু মাএ আমার বউ।আমরা প্রতিদিন সকালে একমগ কফি দুইজনে মিলে উপভোগ করবো।
আহাদের কথা শুনে রাইফার মাঝে কেমন যেন অনামিক অনুভূতি হয়।তার মনে মাঝে অজানা ঢেউ খেলে যায়।যে ঢেউয়ে ভেসে যেতে চায় সে।নিজের সাজানো সপ্নগুলো বারবার কড়া নাড়চ্ছে।হঠাৎ তার চোখের সামনে আহাদ তুড়ি বাজায়।আর রাইফার ধ্যান ভাঙ্গে।
–কিরে কি ভাবছিস।
–ন্না…না কিছু না।
–ও বুঝতে পেরেছি তুই ভাবছিস আমি বলেছি আমার কফির ভাগ একমাএ আমার বউ পাবে আর তুই নিজেকে আমার বউ ভাবছিস।ছে ছে ছে রাইফা তোর মতো মেয়েকে বিয়ে না করে গলায় দড়ি দিয়ে মরা ভালো।
আহাদের কথায় রাইফা নিজেকে অপমান বোধ করে।রেগে আহাদের হাত থেকে কফি মগটা নিয়ে পুরো কফি নিচে ফেলে দেয়।
–আপনি দুই লাইন বেশি বুঝেন আহাদ ভাই.(রেগে)
–এই বেয়াদপ মেয়ে তুই আমার কফি ফেলে দিলি কেন(রেগে)
–বেশ করেছি ফেলেছি
রাইফা আর এক মূহুর্ত অপেক্ষা না করে নিচে নেমে যায়।আহাদ রাইফার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে মনে মনে বলে,
–বউ তো তোকেই করবো। বাট একটু ঝালাবো যে জ্বালা আমাকে জ্বালিয়েছিস তার একটু শোধ নিব।
🌿🌿🌿🌿
ভার্সিটির লাইব্রেরীতে বসে আছে রাইফা, কলি আর মিম।চারিদিকে চোখ বুলিয়ে যাচ্ছে রাইফা। কাকে যেন খুচ্ছে সে। আসার পর থেকে তারা রাইফাকে হাতের আঘাতের কথা জানতে চেয়েছে কিন্তু ও বারবার কথা কেটে গেছে। রাইফার হাবভাব দেখে কলি বললো,
–কিরে কি খুচ্ছিস তুই এমন।
কলির কথায় তাল মেলায় মিম।
–হ্যা আমিও খেয়াল করেছি ২০ মিনিটের মতো তুই কাকে যেন খুচ্ছিস।
রাইফা এবার বিরক্ত হয়ে মিম আর কলির দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে,
— হারামি তোদের কেমনে বুঝাবো আমি কি জ্বালায় আছি।ওই বদমাইশ লোকটা আমাকে আবার হুমকি দিয়েছে আমি কেন আহাদ ভাইয়ের সাথে কফি সেয়ার করলাম।এখন বলেছে তার শাস্তি নাকি দিবে।আবার আজ যদি অনিকের সাথে কথা বলি তার শাস্তি ও নাকি দিবে।সাথে কলির অবস্থা ও খারাপ করবে।তোদের বাচাইতে আমি আমার স্বাধীনতা বিসর্জন দিচ্ছি।অনিকের কাছ থেকে বাছতে এই লাইব্রেরিতে গা ঢাকা দিয়েছি।যদি দেখি অনিক এখানেও আসে তবে আবার পালাবো।আর তোরা কিনা আমার পিছনে গোয়েন্দাদের মতো লেগেছিস।
ভাবনার মাঝেই রাইফার ফোন বেঝে উঠে।ফোনের স্কৃিনে তাকিয়ে দেখে অনিক ফোন করেছে
–কিরে ফোন বেজেই যাচ্ছে ধরছিস না কেন(মিম)
–আমি ফোন ধরবোনা মিম।আমি চাইনা আর অন্য কোন ছেলের সাথে সর্ম্পকে জড়াতে।
রাইফার কথা শুনে মিম আর কলির চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম হয়েছে।রাইফার কথা শুনে কলি বলে,
–তুই কি আগের রাইফা নাকিরে।
–হুম।আমি ভেবে চিনতে সিধান্ত নিয়েছি।আমি আর এসব টাইমপাস প্রেম করবো না।
মিম সবাইকে অবাক করে দিয়ে রাইফাকে জড়িয়ে ধরে।আর খুশিতে হাসতে থাকে।
–দোস্ত তুই ভালো একটা সিধান্ত নিয়েছিস।আমি তোকে আগে কত বুঝাতে চেয়েছি কিন্তু তুই বুঝতি না।(রাইফাকে জড়িয়ে ধরে)
মিমের কথা শুনে বিরক্ত হয়ে যায় কলি।
–এই তুই থামতো মিম।রাইফা তুইকি পাগলের মতো কথা বলছিস কেন আর অনিক।ছেলেটা দেখতে মাশাল্লাহ। তুই কিনা ওকে ছেড়ে দিবি।
–হ্যা দিবো।আর ওকে বলে দিস ওর সাথে আমি আর আগাতে পারবোনা।আমি এখন বাসায় যাচ্ছি আমার কিচ্ছু ভালো লাগছেনা।
রাইফার যাওয়ার দিকে কলি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।
🌿🌿🌿🌿
দুপুরে মির্জা বাড়ির খাওয়ার টেবিলে বসে আছে। রাইফা,রাইসা মিসেস ডালিয়া আর মি.জহির।সবাই চুপচাপ খাচ্ছে।এমন সময় রাইসার বাবা জহির মির্জা বললো।তোমরা আজ তাড়াতাড়ি রেডি থেকো। তোমারা মেয়েদের সাজতে যা সময় লাগে।রাইফা তার বাবার কথা শুনে সবার দিকে একবার তাকায়। তারপর প্রশ্ন করে
— কই যাবো আমরা আব্বু।
–কেন তুমি যানোনা, আজ আমাদের বহু পুরনো বিজনেস পাটনার জামাল খানের মেয়ের গায়ে হলুদ। আমাদের আর চৌধুরীদের কে তো ২ সাপ্তাহ আগেই ইনভাইট করেছে।
–কই আম্মু আর রাইসা তো আমাকে কিছু বলেনি।
রাইফার কথা শুনে রাইসা বলে,
–সরি আপু আমি ভুলে গেছিলাম। বাবা বলেছে তাই এখন আবার মনে পড়েছে।আসলে আহাদ ভাই আসলো সে আয়োজন তারপর তোমার হাতের আঘাতের কান্ড আমি সব ভুলে গেছিলাম।
—আচ্ছা আমি তৈরি হয়ে থাকবো।
–আপু আমি কিন্তু শাড়ি পরবো, তুমিও আমার সাথে পড়বে।
–না আমি শাড়ি পড়বো না। পাগল নাকি।
–রাইফা রাইসা আজ দুজনে শাড়ি পরবে।(মিসেজ ডালিয়া)
–কিন্তু মা আমি,
রাইফাকে আর কোন কথা বলতে না দিয়ে মিসেস ডালিয়া বলে।
–আমি যখন বলেছি শাড়ি পড়বে মানে পড়বে।
–আচ্ছা পড়বো।
রাইফার কথা শুনে রাইসা খুশি হয়ে যায়।
–ইয়ে আপু শাড়ি পরবে।
{আসলে রাইসাকে আহাদ শিখিয়ে দিয়েছে যাতে রাইফাকে শাড়ি পড়তে বাধ্য করে।আর শিহাব আহাদকে শিখিয়ে দিয়েছে যাতে রাইসাও শাড়ি পড়ে।তাই আহাদ নিজে পছন্দ করে রাইফার জন্য শাড়ি কিনেছে।আর শিহাব রাইসার জন্য নিযে পছন্দ করেছে।তারপর আহাদ রাইসার কাছে শাড়ি গুলো দেয়।রাইসা যানে না শিহাব তার জন্য শাড়ি পছন্দ করে কিনেছে।আবার রাইফা ও যানেনা আহাদ তার জন্য শাড়ি পছন্দ করে কিনেছে। রাইসা যানে তার শাড়ি আহাদ তাকে দিয়েছে}
#আমার_মনপাখি
#পলি_আনান
#পর্ব – ১২
–ছিহ ছিহ ছিহ,,তোকে দেখতে পুরো শেওড়া গাছের পেত্নির মতো লাগছে।কি লাগিয়েছিস ঠোঁটে এগুলো লাল চকচক করছে।চোখের উপর কি দিয়েছিস লাল,হলুদ। চোখের পাপড়ি এত বড় হলো কেমনে।কি দিয়েছিস পুরো মুখে এগুলো গোল্ডেন রঙের চকচক করছে।ছিহ তোকে আজ অনুষ্ঠানে নেয়া হবে না।(কপাল কুচকে আহাদ)
আহাদের কথায় রেগে যায় রাইফা।আহাদের একটু সামনে এগিয়ে এসে বলে,
–আমার যা ইচ্ছা আমি তা লাগাবো তাতে আপনার কি।খবরদার আমাকে নিয়ে কিছু বলবেন না।সে আধিকার আমি আপনাকে দি নাই।(চোখ গরম করে)
অধিকার বোধ কথাটি আর রাইফার এমন আচরণ আহাদের মাথা গরম হয়ে যায়।আহাদ রাইফার দুই হাত পেছন থেকে মুচড়ে ধরে।হঠাৎ আহাদের এমন আচরণে ভয় পেয়ে যায় রাইফা।সে ভাবেনি আহাদ আগের মতো এখনো তার সাথে ঝগড়া করবে।এই কয়েক দিন আহাদ তো স্বাভাবিক আচরন করেছে।কিন্তু আজ আবার তাকে আগের সেই জেদি আহাদ রুপে পাবে ভাবতে পারে নি রাইফা।হাতের অসয্য ব্যাথা আর আহাদের প্রতি জেদে তার চোখ থেকে দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।নিজের জেদকে একপশে সরিয়ে রাগ নিয়ন্ত্রণ করে রাইফা দাতে দাত চেপে আহাদ কে বলে,
— আহাদ ভাই আমাকে ছেড়ে দিন আমার লাগছে।
— লাগছে লাগুক। আমার সাথে এমন করে কথা বলার সাহস তুই কই পেলি।আর জদি এমন সাহস দেখি তোর তবে পুরো হাতটাই ভেঙ্গে দেব।মাইন্ড ইট।
আহাদ রাইফাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে নিজের চুল টানতে টানতে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।
রাইফার হাতে থাকা কাচের চুড়ি গুলো ভেঙ্গে গেছে।চুল এলোমেলো হয়ে গেছে।মুখের পুরো সাজ নষ্ট হয়ে গেছে। রাইফা হাতের থাকা বাকি চুড়ি গুলো খুলে নিচে আছাড় মারে আর দাতে দাত চেপে বলে,
–কে বলেছিল ওই বেয়াদব লোকটাকে আমার রুমে ডুকতে।রাইসাকে খুজবি তো খোঁজ না আমার রুমে রাইসাকে খুজতে এসেছিস কেন।আমার ২ ঘন্টা ধরে করা মেকাপ সব নষ্ট করে দিলি।দাড়া আমিও রাইফা মির্জা এমন সাজ দিবনা পুরো বিয়ে বাড়ির ছেলেদের চোখ থাকবে আমার দিকে।(বাকা হাসি দিয়ে)
🌿🌿🌿
এদিকে আহাদ চুল টানতে টানতে শিহাবের কাছে গিয়ে বসে।শিহাব বুঝতে পারে আহাদ কোন ব্যাপার নিয়ে রেগে আছে,
–আহাদ কি হয়েছে।রেগে আছিস কেন।
–রাগবো না তো কি করবো ওই মেয়ে আমাকে অধিকার বোধ দেখাতে এসেছে।
–আরে কিসের অধিকার বুঝিয়ে বল তো।
আহাদ শিহাবকে পুরো ব্যাপার টা বলে।শিহাব হাসতে হাসতে বলে,
–সব দোষতো তোর তুই জানিস না মেয়েদের মেকাপ নিয়ে কিচ্ছু বলা যায় না। তুই কিনা ওকে পেত্নি বলেছিস(হাসতে হাসতে)
শিহাবের হাসির মাঝে শাড়ি ঠিক করতে করতে এগিয়ে এলো রাইসা আর সামাদ।
–ভাইয়া চলো, আপু কই আমার তো শেষ আপু এখনো আসছে না কেন।
–তোমার আপু তো আটা নিয়ে বসেছে গিয়ে ডেকে আনো।
শিহাব রাইফার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে হলুদ কমলা, হালকা লাল মিশ্রিত শাড়িটি তাকে বেশ মানিয়েছে।কানে ঝুমকো, দু হাতে রেশমি চুড়ি শাড়িটাকে হাতের দিকটায় ছেড়ে দিয়েছে।কপালে লাল টিপ।গলায় মালা।তাকে ভিষন মায়াবতী লাগছে।শিহাব রাইসার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে,
–যদি পারতাম এখনি তোমাকে আমার ঘরে তুলে নিতাম।
রাইসা, রাইফাকে ডাকার আগেই রাইফা সিড়ি দিয়ে নামতে থাকে।রাইসা রাইফাকে দেখে বলে,
–ওই তো আপু আসছে।
রাইফাকে দেখেই আহাদের মাথা গরম হয়ে যায়।তার পুরো শরীর জ্বলতে থাকে।যেন কেউ উওপ্ত লাভা ঢেলে দিয়েছে।তার ইচ্ছে করছে কসে দুইটা চড় রাইফার গালে বসিয়ে দিতে।
রাইফা সিড়ি দিয়ে নেমে রাইসাকে বলে
–এমন বলদের মতো তাকিয়ে আছিস কেন।
–আপু তুমি দেড়ি করলে কেন।
–আমার ইচ্ছা চল দেড়ি হয়ে যাচ্ছে।আব্বু আম্মু,ছোট বাবা,মামনি তারা তো চলে গেছে চল এবার আমরা যাব।শিহাব, ভাইয়া চলেন সামাদ চল।
আহাদ রাইফার দিকে তাকিয়ে আছে উওপ্ত দৃষ্টিতে।রাইফার গায়ে হলুদ আর কমলা মিশ্রনে শাড়ি পড়া। শাড়ি টা সে এমন ভাবে পড়েছে তার পেট কোমড়ের খানিকটা অংশ দেখা যাচ্ছে। কানে ঝুমকো, দুহাতে চুড়ি।গলায় মালা।কপালে টিপ।ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক।
🌿🌿🌿
আহাদ, শিহাব,সামাদ,রাইফা, রাইসা গাড়িতে বসে আছে কারো মুখে কোন কথা নেই।আহাদ ড্রাইভিং করছে।শিহাব সমনে থাকা মিররে রাইসাকে দেখছে। রাইসা,রাইফা ফোন নিয়ে ব্যাস্ত। রাইফার ফোনে একটা মেসেজ আসে সেই অচেনা নাম্বার থেকে।রাইফা মেসেজটি ওপেন করে পড়তে থাকে।
–তুমি আমার কথা বারবার কেন অমান্য করো মনপাখিপ।তোমার এই সাজ থাকবে শুধু আমার জন্য কিন্তু তুমি এই সাজে বিয়ে বাড়িতে যাচ্ছ। এর পরিনাম কিন্তু ভালো হবে না মনপাখি।
মেসেজটি পড়ে রাইফার মাথা আরো গরম হয়েযায়।একেতো আহাদের এমন আচরণ তার উপর এই লোকটার হুমকি।সে রাগের মাথায় রিপ্লাই দেয়
–আমার জীবন,আমার ইচ্ছা, আমার খুশি তাতে আপনার কি।আমি যেভাবেই চলি না কেন।আর আমাকে কোন মেসেজ দিবেন না।
মেসেজটি দিয়েই নাম্বারটি ব্লক করে দেয় রাইফা।
ওপর দিকে লোকটি রাইফার মেসেজ পড়ে, মনে মনে বলে,
–ছেলেদের শরীর দেখাতে খুব শখ তাইনা।আমিও দেখি তুমি কিকরে আমার কথার অমান্য হও।(বাকা হাসি দিয়ে)
🌿🌿🌿
রাইফারা পৌছে যায় খান বাড়িতে। রাইফা গাড়ি থেকে নামতেই সব ছেলেরা তার দিকে তাকিয়ে আছে কেউ কেউ হাই বলছে। রাইফাও আহাদকে দেখে সুযোগ বুঝে হাত নাড়ছে।রাইসা গাড়ি থেকে বের হতেই ছেলেরা রাইসার দিকে তাকিয়ে থাকে আর তা দেখে শিহাব দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে রাইসার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। আর রাইফাকে ধমক দিয়ে বলে,
–খবরদার রাইসা আমি তোমাকে আগেই বলে দিচ্ছি কোন ছেলের সাথে কথা বলবেনা।যদি দেখি বলেছো তো আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।মাইড ইট।
বলেই আহাদের সাথে গিয়ে দাঁড়ায়। রাইসা শিহাবের কথার কোন মানেই বুঝে না সে কিংকত্যবিমূঢ় হয়ে তাকিয়ে আছে।আহাদ আর শিহাবকে দেখে সব মেয়েরা হা হয়ে তাকিয়ে থাকে।আহাদ পড়েছে রাইফার শাড়ির সাথে মেচ করে পাঞ্জাবি।হাতে ব্রন্ডের ওয়াচ।চুল গুলো সিল্কি কিছু চুল সামনে এসে পড়েছে।আর শিহাবের ও একই লুক তব সে রাইসার সাথে মেচ করে পাঞ্জাবি পড়ে।আহাদ সহ সবাই ভেতরে বাড়ির ভেতর ডুকছে।তবে আহাদের মুখে বাকা হাসি।আহাদ শিহাব সবার সাথে পরিচিত হয়ে একপাশে গিয়ে বসে পড়ে ।প্রত্যেক টা মেয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে আবার কেউ হাত নাড়ছে তবে আহাদ ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে তার মনে হচ্ছে ফোনে তার জগতের সবকিছু।ফোনের বাইরের জগতে তার জন্য কিচ্ছু নেই।শিহাব আহাদের কানে ফিসফিস করে বলে,
_কিরে ভাই আমার তো মনে হয় না আমরা আমাদের হবু বউয়ের কাছে ফিরে যেতে পারবো।মেয়েরা যে ভাবে আমাদের গিলে খাচ্ছে।
শিহাবের কথা শুনে আহাদ মুচকি হেসে ফোনের দিকে তাকিয়ে বলে,
_যে তাকাবে সে তো তাকায় না।অন্য কে তাকালো তা দিয়ে আমাদের কি।
_হুম তা ঠিক ভাই। তবে ভাই আমরা যে রাইফা আর রাইসার সাথে পাঞ্জাবি মেচ করে পড়েছি কই তারাতো তাকালো না।কিন্তু অন্য একটা মেয়ে এসে আমাকে বলে আপনারা গাড়ি থেকে যারা নামলেন তারা কি দম্পতি।
_ তুই কি বলেছিস(ফোনের দিকে তাকিয়ে আহাদ)
_আমি বলেছি কেন বলুনত।মেয়েটা রাইসাকে দেখিয়ে বলে আপনার সাথে ওনার ড্রেস মেচ করা। আবার তোকে আর রাইফাকে দেখিয়ে বলে ওনাদের ও মেচ করা।কিন্তু আপনারা একই গাড়ি থেকে নেমেছেন।কেউ কাউকে পাওা দিচ্ছেনা।মনে হচ্ছে কেউ কাউকে চিনেন না।
আহাদ অবাক হয়ে শিহাবের দিকে তাকায়।
_তারপড় তুই কি বললি শিহাব।(ভ্রু কুচকে)
_যা বলার তাই বলেছি।আমদের বিয়ে ঠিক।যেকোন সময় বিয়ে হয়ে যাবে।আসলে ওরা আলাদা কারন বিয়ে বাড়ি বুঝতেই তো পারচ্ছেন।দেখেছিস ভাই কি সুন্দর মিথ্যা কথা বললাম।কিন্তু কি জানিস মিথ্যা টা বলার সময় কলিজাটা ফেটে গেসে(কান্নার অভিনয় করে)
আহাদ শিহাবের ঘাড়ে হাত দিয়ে বলে,
_ দেখ আমার শালিকাটা মেয়েদের সাথে কি সুন্দর হেসে হেসে কথা বলছে আর আমার বউটা সব ছেলেদের সাথে কথা বলছে। এ জীবন রেখে লাভকি বল।(মন খারাপ করে)
শিহাব রাইসার দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
🌿🌿🌿
কিছুক্ষন পর রাইফা এখনো ছেলেদের সাথে কথা বলেই যাচ্ছে।ছোট একটা মেয়ে এসে রাইফার শাড়ীর আঁচল ধরে টান দেয়।রাইফা বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
_ তুমিকি কিছু বলবে ছোট আপু।
_আপুমনি তোমাকে তোমার আম্মু বলতে বলেছে ডানে গেলে ৩ নাম্বার যে ঘরটা আছে ওইটাতে যেতে।
এইকথা বলেই মেয়েটা আর অপেক্ষা না করেই দৌড়ে চলে যায়।
আর রাইফা ৩ নাম্বার ঘরটিতে যাওয়ার জন্য হাটা ধরে।
[[প্রিয় পাঠকরা আপনাদে সাড়া অনেক কম। আপনাদের সাড়া এত কম হলে তবে গল্পটি আর লিখবো না। তাড়াতাড়ি শেষ করে দিব]]
চলবে……….
(ভুলগুলো ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন)
চলবে…..
(ভুলগুলো ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন)