আমার_শহরে_তুমি পর্ব ৭

#গল্পের_নাম_আমার_শহরে_তুমি
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ৭
,,,,,
,,,,,
আমি তাকিয়ে দেখলাম একজন যুবক চোখে সানগ্লাস পরে আমার সামনে বসে আছে।আমি আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম অনেক মানুষ জড়ো হয়ে আছে।আমি তাদের দেখে আরো ঘাবরে যাই।সেই যুবকটি আমার অবস্থা বুঝতে পেরে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
~এখানে কী সিনেমা চলছে যে সবাই তাকিয়ে আছেন?যার যার কাজে চলে যান।
যুবকটির কথায় অনেকে মাথানিচু করে চলে যায় আবার অনেকে বিড়বিড় করতে করতে নিজ নিজ কাজে চলে যায়।সবাই চলে যাওয়ার পর সে যুবকটি আমাকে বললো,
~আপনার কী বেশি লেগেছে?
আমি তাকে বললাম,
~না।
সে বললো,
~আপনাকে আমি হাসপাতাল নিয়ে যাবো। চলেন আমার সাথে
তার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে আমি বললাম,
~আমাকে প্লিজ আমার ভার্সিটিতে ড্রপ করে দিবেন।আমার পরীক্ষা মিস হয়ে যাবে
সে বললো,
~অবশ্যই।আপনার ভার্সিটি কোথায়?
আমি বললাম,
~এখান থেকে মাত্র ২০ মিনিট লাগবে।
সে যুবকটি হাত বাড়িয়ে বললো,
~আমার হাত ধরে উঠে দাড়ান।
আমি কাঁপা কাঁপা হাতে তার হাত ধরে উঠে দাড়ালাম সে আমাকে খুবই যত্ন সহকারে গাড়িতে বসিয়ে দিলেন।তারপর তিনি গাড়িতে উঠে গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করলেন।সে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,
~আপনার ভার্সিটির নাম কী?
আমি বললাম,
~ ***** ভার্সিটি।
সে একটু হেসে বললো,
~আমিও সেই ভার্সিটিরই student.আমার নাম রাত রায়জাদা।
আমি মুচকি হেসে বললাম,
~আমার নাম অধরা।
রাত বললো,
~কোন ইয়ার?
আমি বললাম,
~ ১ম বর্ষ।
রাত বললো,
~আমি ৩য় বর্ষ।আর হ্যাঁ আমি সিনিয়র দেখে ভাইয়া বলবে না আমার এই ডাকটা ভালো লাগে না।
তার কথায় মুচকি হেসে সামনের দিকে তাকালাম রাত আবার বললো,
~সরি আমার জন্য তোমার এতো কষ্ট পেতে হলো।
আমি বললাম,
~আপনার জন্য না নিজের অসাবধানতার জন্য।
কিছুক্ষন পর আমরা ভার্সিটি পৌছে গেলাম আমি রাতকে ধন্যবাদ বলেই দৌড়ে ক্লাস রুমে চলে গেলাম।

,,,,,
,,,,,
সেদিনের পরীক্ষাটা মোটামোটি ভালো হয়েছে।আমার হাত থেকে এখনো রক্ত পরছিল হঠাৎ কেউ আমার হাতে রুমাল চেপে ধরে আমি সেই ব্যক্তির মুখের তাকাতেই বললো,
~এখন তো পরীক্ষা শেষ চলো ডাক্তারের কাছে।
আমি রাতের কথা শুনে বললাম,
~ডাক্তারের প্রয়োজন নেই।একটা ব্যান্ডেজ লাগালেই ঠিক হয়ে যাবে।
রাত বললো,
~তাহলে চলো সামনেই ফার্মেসি আছে।
আমি তার কথায় রাজি হয়ে ফার্মেসিতে চলে গেলাম ব্যান্ডেজ করে সেদিন আমরা যে যার মতো বাসায় ফিরে আসলাম এরপর অনেকদিন চলে গেলো আমার রাতের সাথে কোনো দেখা হয়নি। আমার আর রাতের আবার দেখা হয় ভার্সিটির এক প্রোগ্রামে।সেদিন আমি নীল রঙ্গের শাড়ি পড়েছিলাম আর আমার বান্ধবীদের সাথে অডিটোরিয়ামের এক কর্ণারে বসে কথা বলছিলাম।তখনই একটা ছেলে এসে আমাকক উদ্দেশ্য করে বললো,
~তোমার নাম কী অধরা?
আমি বললাম,
~জ্বী।
সেই ছেলেটি বললো,
~তোমাকে রাত ডেকেছে।
আমি অবাক হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম
~আমাকে কেন ডাকছেন তিনি?
সেই ছেলেটি বললো,
~যাওয়ার পরই বুঝতে পারবেন।রাত ৩য় তলার ৩০১ নাম্বার রুমে আছে।
আমি সেই ছেলেটিকে বললাম,
~আমি একা কোথাও যাবো না আমার ফ্রেন্ডকে সাথে নিয়ে যাবো।
সেই ছেলেটি বললো,
~কোনো প্রবলেম নেই।
আমি আমার ফ্রেন্ড লিমাকে সেদিন আমার সাথে নিয়ে চলে গিয়েছিলাম ৩য় তলার ৩০১ নাম্বার রুমে।
আমি রুমে ডুকেই দেখেছিলাম রাত কালো রঙের পান্জবী পরে দাড়িয়ে আছে হাতে একটা বক্স নিয়ে।সে আমাকে দেখেই বললো,
~অধরা তুমি কেমন আছো?
আমি বললাম,
~ভালো।
সে মুচকি হেসে বক্সটা আগে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
~এটি তোমার জন্য আমি যে তোমাকে সেদিন কষ্ট দিয়েছিলাম এই গিফটাই আমার তরফ থেকে সরি হিসেবে গ্রহণ করো।
আমি সাথে সাথে বললাম,
~এটা আমি নিতে পারবো না।
রাত বললো,
~প্লিজ নিয়ে নেও।যদি তুমি এটা না নেও তাহলে ভাববো তুমি আমার সরি গ্রহন করোনি।
সেদিন আমি বাধ্য হয়ে সেই গিফটটা নিয়ে নেই।রাত এতে অনেক খুশি হয়েছিল তারপর আমি আবার অনুষ্ঠানে চলে যাই। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর আমি বাসায় এসে ওই বক্স টা খুলে দেখি অনেক গুলো রেশমি চুরি।সেই চুরি গুলো অনেক সুন্দর ছিল এভাবেই প্রতিদিন আমার সাথে রাতের দেখা হতো কথা বলতাম।সে আমার অনেক খেয়াল রাখতো আমাদের বন্ধুত্বটা অনেক গভীর হয়ে উঠে।আমিও রাতের প্রতি অন্যরকম কিছু অনুভব করতে শুরু করলাম কিন্তু নিজের অনুভূতি গুলোকে আমি প্রশয় দিতাম না যদি রাত আমাকে ফিরিয়ে দেয় আর আমাদের বন্ধুত্বটা ভেঙ্গে যায়।

,,,,,
,,,,,
কিন্তু একদিন আমার এই ভুল ভেঙে যায়। সেদিন আমি ভার্সিটির ক্যান্টিনে বসে কথা বলছিলাম হঠাৎ আমাদের ডির্পাটমেন্টের একটা ছেলে এসে আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আমাকে ভালোবাসার প্রস্তাব দেয়।আমি যখনই না করতে যাবো তখনই রাত কোথা থেকে এসে সেই ছেলেটির নাক বরাবর ঘুষা মেরে নিচে ফেলে দিয়ে তাকে বেধরক পিটাতে থাকে।রাতের বন্ধুরা তাকে খুব কষ্টে তাকে থামায় আমি একপাশে দাড়িয়ে মুখে হাত দিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করছিলাম।তখনই রাত আমার দিকে তাকাতেই আমি দুকদম পিছে চলে যাই।রাত হনহন করে আমার সামনে এসে আমার হাত ধরে সবার সামনে থেকে টেনে নিয়ে যায়। ভার্সিটির একটা খালি রুমে নিয়ে যায় তারপর আমার দুগালে হাত রেখে বললো,
~আমি তোমাকে ভালোবাসি।তোমার সাথে অন্য কাউকে আমি সহ্য করতে পারবো না।বলেই আমাকে জড়িয়ে ধরে আমিও মুচকি হেসে সেদিন রাতকে জড়িয়ে ধরি আর নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করি।
আমাদের দিন গুলো ভালোই কাটছিল।আমার পরীক্ষার রেসাল্ট পাবলিশ হলো আমি বাকি সব বিষয় ভালে করলেও একটি বিষয় একটু খারাপ নাম্বার আসে।আমি অনেক মন খারাপ করে ফেলি। রাত আমাকে বললো,
~অধরা তুমি মন খারাপ করো না।আমি তোমাকে একটা কোচিং সেন্টারের ঠিকানা দিচ্ছি আমার ভাইয়ের সেটা। আমি রাতের সাথেই কোচিং সেন্টারে চলে যাই সেখানেই আমার সাথে দেখা হয় রক্তিম রায়জাদার সে আমার সাথে গম্ভীরভাবে সব সময় কথা বলতেন।ক্লাসে তিনি ভীষণ কড়া ছিলেন কিন্তু তিনি আমাকে অনেক সাহায্য করতেন পড়ার বিষয়ে কিন্তু সে ৪মাস পর আমেরিকা চলে যায় কেন কী জন্য সে চলে যায় এটা কেউ জানে না।আমিও আর এবিষয় নিয়ে ঘাটাইনি ব্যস্ত হয়ে যাই পড়াশুনা নিয়ে এরই মধ্যে বাবার আরেকটা গুরুতর এক্সিডেন্ট হয়ে যায় বাবার একপা ফ্রেকচার হয়ে যায় বাবার ইনকামে সংসারে চলে কিন্তু এখন বাবার অবস্থা ভালো না তাই আমি কয়েকটা টিউশনি জোগার করি রাতের ব্যাপারে আমার বাসায় সবাই জানতো তাই রাত আমাদের বাসায় এসে বাবাকে দেখে গেলো একদিন।

,,,,,
,,,,,,
এরইমধ্যে আমি আরো ব্যস্ত হয়ে পরলাম।রাতকে ঠিকমতো টাইম দিতে পারতাম না তাই রাত অনেক অভিযোগ করতো। আমি তাকে বুঝিয়ে বলতাম সে বুঝতে চাইতো না একদিন সে জেদ ধরলো তার বাসায় যেতে হবে আমি সেদিন তার সাথে চলে গেলাম রায়জাদা ভিলায় সাহারা রায়জাদার চেহারা দেখেই বুঝে ছিলাম সে আমায় পছন্দ করেননি। কিন্তু ছেলের জন্য চুপ ছিলেন।দাদীমা আমাকে অনেক আদর করতেন মাঝে মাঝে তাদের বাসায় যাওয়া হতো।
কিছুদিন পর দেখলাম রাত আমাকল আগের মতো কেয়ার করে না কথা বলে না আমি ফোন করলে বিজি বলে যখন জিজ্ঞেস করি তখন সে বলে,
~ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বলে তাই বিজি ছিল।আমিও তার কথা বিশ্বাস করে ফেলতাম তার উপরে টুশব্দও করতাম না।কিন্তু একদিন আমার মোবাইলে আননোন নাম্বার থেকে অনেকগুলো ছবি আসে আমি ছবি গুলো দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।রাত একটা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আছে প্রথমে আমি ভেবেছিলাম এটা মিথ্যা কিন্তু পরক্ষনে আমার মোবাইলে একটা ম্যাসেজ আসলো সেখানে লেখা,
~তোমার ভালোবাসা অন্যকারো সাথে এটা তোমার অবশ্যই বিশ্বাস হবে না তাই আজ বিকেলে ভার্সিটির পিছনে চলে এসো দেখে নিও তোমার ভালোবাসা কী কী করে বেরাচ্ছে।আমি সেই নাম্বারে অনেকবার ট্রাই করি কিন্তু সেটা বন্ধ আমি রাতকেও কল করি কিন্তু
তাকে ব্যস্ত বলছে।তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমি ভার্সিটি যাবো।সেদিন বুকে পাথর রেখে আমি বিকেলবেলা ভার্সিটির পিছনে চলে গেলাম আর সেখানে গিয়ে দেখি

চলবে।।।

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন আর ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here