আমার_শহরে_তুমি পর্ব ২৪+২৫

#গল্পের_নাম_আমার_শহরে_তুমি
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ২৪
,,,,,,
,,,,,
রক্তিম আর আমি রায়জাদা ভিলার উদ্দেশ্যে বের হয়েছি।অনেকদিন পর আমি সে বাসায় যাচ্ছি মা আমাকে অনেক বললো আরো কয়েকটাদিন থেকে যেতে আমি মাকে বুঝিয়ে বললাম যে আমি আবার আসবো।আমি বাহিরে তাকিয়ে আছি কেন জানি এই ১৫দিন যাবত সবকিছু নির্জীব লাগছে।কোনো কিছুতে সজীবতা খুজে পাই না হয়তো আপনজন হারানোর দুঃখের কারণে।বাবার কথা প্রতি মূহুর্তে মনে পরে জীবনের সবচেয়ে বেস্ট মানুষটিই আজ আমার পাশে নেই।ভাবলেই চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরে ইশশ কী কষ্টকর শ্বাসরুদ্ধকর এই পৃথিবী।হঠাৎ আমার হাতে কারো শীতল স্পর্শ পেয়ে জানালা থেকে মুখ ফিরিয়ে দেখি রক্তিম আমার হাত শক্ত করে ধরে আছেন।আমি তার দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বললাম,
~রক্তিম সব ঠিক হয়ে যাবে তো?মায়ের এমন মুখ দেখতে ভালো লাগে না।
রক্তিম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
~অধরা,মা হচ্ছে এমন একজন মানুষ যে নিজের সন্তানের জন্য সবকিছু সহ্য করতে পারে।তাই মাও তোমাদের জন্য এ শোক সহ্য করে নিবে কিন্তু তাকে সময় দিতে হবে দিনশেষে সেও একজন মানুষ তারও মন আছে অনুভূতি আছে।
রক্তিমের কথাশুনে মনে হচ্ছে আসলেই মাকে সময় দেওয়া উচিত। সময় সবকিছু হয়তো ঠিক করে দিবে আমারও নিজেকে সামলাতে হবে আমার পরিবারের জন্য।বাবাও আমাকে শিখিয়েছে সব পরিস্থিতিতে নিজেকে সামলাও।

বাসায় পৌছে যেই না ভিতরে ঢুকতে যাবো ভিতর থেকে অনেক চেঁচামেচির আওয়াজ কানে আসলো।এই আওয়াজ শুনে আমি আর রক্তিম ভিতরে গিয়ে দেখি রাত রাগী কন্ঠে বলছে,
~তোমাদের সাহস দেখে আমি অবাক হই বলেছিনা বিয়ে করবো না।তার উপর তোমরা এই বাচ্চা মেয়ে সাবিহাকে আমার জন্য দেখতে গিয়েছো আমাকে ছবিও দেখাচ্ছো।
রাতের কথা শুনে আমি বাকরুদ্ধ সাবিহাকে রাতের জন্য দাদীমা পছন্দ করেছে রাতের কথা শেষ হতেই দাদীমা বলে,
~সাবিহা কোনো বাচ্চা মেয়ে না তার বয়স ১৯বছর।আর মেয়ে হিসেবে ভালো যতদিন এবাসায় এসেছে কতো ভালো করে মিশে গেছে মেয়েটা।একদম অধরার মতো
দাদীমার কথা শুনে রাতের চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে রাগে কটমট করতে করতে সে বললো,
~দাদীমা,সাবিহা কোনোদিনই আমার মতো ছেলেকে সে পছন্দ করবে না সে বরাবরই রক্তিম ভাইয়ের মতো ছেলে পছন্দ করবে।
রাত কথা শেষ করেই দরজার দিকে তাকায় আমাকে আর রক্তিমকে দেখে মাথানিচু করে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে নিবে তখনই দাদীমা বললো,
~যদি বলি সাবিহাই নিজে তোকে পছন্দ করেছে তাহলে কী বিশ্বাস করবি?
রাতের পা থেমে গেলো সে পিছে ফিরে দাদীমার দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে থেকে হেসে বললো,
~সাবিহা হয়তো পরিবারের চাপে পরে এমনটা বলছে।আমি কোনো চাপে নেই তাই আমি কোনো মেয়ের জীবন আর নষ্ট করবো না।আর কারোও অভিশাপ আমি নিজের জীবনে নিতে চাই না

রাতের কথা শুনে আমার অনেক খারাপ লাগছে রাত অনেক অনুতপ্ত এটা তার কথায় বুঝা যাচ্ছে।এই অনুতপ্তের আগুনে সে নিজেকে শেষ করে দিচ্ছে এই ব্যাপারটা ভালো লাগছেনা জীবনে মানুষ অনেক ভুল করে কিন্তু ভুলের জন্য যদি অনুতপ্ত হয় তাহলে সেই ভুলের ক্ষমা রয়েছে।রক্তিম আর আমি দাদীমার কাছে গিয়ে দাড়ালাম রক্তিম রাতকে উদ্দেশ্য করে বললো,
~রাত আমরা আগামীকাল সাবিহার সাথে দেখা করতে যাবো।আর এই ব্যাপারে আমি কোনো কথা শুনতে চাই না
রক্তিমের কথায় রাত হকচকিয়ে গেলো আর বললো,
~ভাই তুমি কী বলছো?সাবিহার সাথে দেখা করার কোনো প্রয়োজন মনে করছি না আমি
রাতের বলা শেষ হতেই আমি বললাম,
~আপনি কেন বারবার একই কথা বলছেন?সাবিহা এমন মেয়ে নয় যে তাকে কেউ force করে কিছু করাতে পারবে।ওর মন যা বলে তাই সে করে
রাত বিরক্ত হয়ে বললো,
~বিয়ের ব্যাপারে অনেক সময় মেয়েরা দূর্বল হয়ে যায় পরিবারের কাছে এটা ভাবি আপনাকে বুঝাতে হবে না বলে মনে করছি।
রক্তিম কিছুটা রাগী কন্ঠে বললো,
~রাত আমি তোমার বড় ভাই আর আমি যা বলেছি তাই হবে।মা আর বাবার সাথে আমি কথা বলবো।
That’s final no more talk in this topic.
এতটুকু বলে রক্তিম রাতের পাশ কেটে হনহন করে সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো।আমিও রক্তিমের পিছে হাঁটা ধরলাম

রুমে এসে দেখি রক্তিম পায়চারি করছে তার চোখে মুখে চিন্তার ছাপ।আমি আসতে করে বিছানার উপরে বসে ঠান্ডা কন্ঠে বললাম,
~রাতকে নিয়ে চিন্তিত?
রক্তিম পায়চারি বন্ধ করে আমার দিকে ফিরে বললো,
~ছেলেটা বড্ড বেশি বুঝে যেখানে সাবিহার কোনো আপত্তি নেই রাতের এতো মাথা ব্যাথা কেন?
আমি মুচকি হেসে বললাম,
~রক্তিম, রাত কোনো সম্পর্ক গড়তে ভয় পাচ্ছে সে মনে করছে এবারো সে হেরে যাবে মাঝপথে ছেড়ে দেবে একটা সম্পর্ক এই ভেবে সে আগে বাড়ছে না।
রক্তিম আমার কথা শুনে বললো,
~রাতের ভয় বুঝতে পেরেছি কিন্তু
রক্তিমের কথা শেষ না করতে দিয়েই আমি বললাম,
~সাবিহার সাথে দেখা করে তারপর আমরা সিদ্ধান্ত নিবো।আর রাতকেও সময় দিতে হয়তো সে এখন বিয়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে পারেনি।
আমার কথা শেষ করে বিছানা ছেড়ে উঠে রক্তিমের কাছে গিয়ে চুলগুলো ঠিক করে বললাম,
~সব ঠিক হয়ে যাবে।আপনিই বলেন যে সময় সব কিছু পরিবর্তন করে দেয়।
রক্তিম মলিন হেসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।আগামীকাল সাবিহার সাথে কথা বলতে হবে রাতকেও সাবিহার কথা শুনতে হবে দুজন যে সিদ্ধান্ত নিবে তাই সবার মানতে হবে।

পরেরদিন সকালে,
আমি আর রক্তিম রেডি হয়ে গাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছি রাতের অপেক্ষায় সাবিহার সাথে দেখা করতে যাবো আমরা।আমি গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছি রক্তিম বারবার হাত ঘড়ি দেখছে।কিছুক্ষন পর রাত মুখ গম্ভীর করে আমাদের সামনে চলে আসে রাতের এমন চেহারা দেখে রক্তিম বললো,
~তোকে আমরা যুদ্ধে নিয়ে যাচ্ছি না তাই একটু হাসলে কোনো প্রবলেম নেই।
রাত বললো,
~ভাই আমার অনেক জরুরি মিটিং আছে যদি তুমি তাড়াতাড়ি করতে।
আমি বললাম,
~সব জিনিসে তাড়তাড়ি হয় না।
রাত বললো,
~ভাবি প্লিজ
রাতের কথা শেষ করতে না দিয়ে রক্তিম বললো,
~বাজে কথা ছেড়ে চল দেরি হচ্ছে।
আমরা গাড়িতে গিয়ে বসলাম রক্তিম ড্রাইভ করছে আমি সাবিহাকে ফোন করে বললাম যে আমরা রওনা দিয়েছি।
আমাদের গন্তব্যে পৌছে আমরা গাড়ি থেকে নেমে পরলাম।রেস্টুরেন্টেই আমরা সাবিহার সাথে দেখা করবো আমি এদিকসেদিক চোখ বুলিয়ে সাবিহাকে খুজতে লাগলাম।হঠাৎ আমাদের সামনে শাড়ি পড়া এক সুন্দর রমনী এসে দাড়ালো আমি তাকে দেখে হা হয়ে গেলাম সাবিহাকে একদম পরী লাগছে হালকা মেরুন রঙের শাড়িতে দারুন লাগছে।আমি চোখ ফিরিয়ে পাশে তাকিয়ে দেখি রাত হয়ে আছে।
রক্তিম আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
~সাবিহা বড় হয়ে গেছে এ কয়েকদিনে তাই না?
আমি রক্তিমের কথা শুধু হাসলাম।সাবিহা বললো,
~ভাবি সেই কখন থেকে আমি তোমাদের অপেক্ষা করছি।
আমি বললাম,
~তাই নাকি চলো আমরা কোথাও বসি?রাত চলো
আমার কথায় রাতের ধ্যান ভাঙ্গে তারপর বললো,
~জ্বী ভাবি।
রাতের অবস্থা দেখে সাবিহা মুখ টিপে হাসলো।রাত তার হাসি দেখে বললো,
~এতে হাসার কী হলো?
রাতের কথার জবাব না দিয়ে রক্তিমকে বললো,
~ভাইয়া ওই টেবিলটা খালি আছে ওখানে গিয়ে বসি।
রক্তিম বললো,
~চলো।
আমরা বসে পরলাম টেবিলে সাবিহা আমাদের সাথে বকবক করেই যাচ্ছে রাত মুখ গম্ভীর করে বসে আছে।
তাদের কথা বলার মতো পরিবেশ চাই তাই আমি বললাম,
~সাবিহা আমরা এখানে কীসের জন্য এসেছি তা তোমার অজানা নয় তাই তুমি আর রাত কথা বলো।আমরা ওই টেবিলে গিয়ে বসছি।
সাবিহা মাথাদুলালো আমি আর রক্তিম অন্য টেবিলে গিয়ে বসলাম।রক্তিম আমাকে বললো,
~অধরা কতদিন আমরা একসাথে সময় কাটাইনা আজকের পরিবেশটাও রোমান্টিক তাই আজকে শুধু তুমি আর আমি।
বলেই আমার হাতে তার ঠোঁট ছুয়িয়ে দিলো।আমি বললাম,
~অসভ্য সবাই দেখছে।
রক্তিম বললো,
~তোমার জন্যই তো আমি অসভ্য।
রক্তিমের কথা শুনে লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে।

রাত আর সাবিহা বসে আছে তাদের মাঝে পিনপতন নীরবতা। কেউই বুঝে উঠতে পারছে না কী থেকে শুরু করবে তাই আগে রাতের ঠোঁট নড়ে উঠলো সে বললো,
~দেখো সাবিহা আমি তোমাকে বিয়ে করতে
রাতের কথা শেষ হওয়ার আগে সাবিহা বললো,
~করতে পারবেন।
রাত ভ্রুকুচকে বললো,
~কী?
সাবিহা বললো,
~বিয়ে করতে পারবেন।
রাত বললো,
~একদম কথা বাড়াবে না ছোট বাচ্চা মেয়ে এখন কীসের বিয়ে?
সাবিহা ঠোঁট উল্টে বললো,
~এখনই তো বিয়ে করবো আমার স্বামী আমাকে লালন-পালন করবে।আর সেই স্বামীটা আপনি হবেন
সাবিহার কথা শুনে রাত ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলো এই মেয়ের মাথা ঠিক আছে। রাতের ভাবনার মাঝে সাবিহা বললো,
~দেখেন আপনাকে আমার ভালে লেগেছিল রাহি আপির বিয়ের সময় কিন্তু আমি জানতে পারি কোন সারা না পারার সাথে আপনার নিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
এই কথাটা বলতে সাবিহার গলা কাঁপছে সে সেই কাঁপা গলায় বললো,
~কিন্তু পরে জানতে পারি ভাবির কাছ থেকে ওই মেয়ে আপনাকে ভালোবাসে না সেদিন মনে মনে অনেক খুশি হই।তবুও একটা জড়তা কাজ করছিল ওইদিন যখন জিজ্ঞেস করছিলেন আমার কেমন ছেলে পছন্দ চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছিল যে আপনি আমার পছন্দ।কয়েকদিন আগে বাবা আমার কাছে কয়েকটা ছবি এনে বলে এইখান থেকে ছেলে পছন্দ করতে আমি রাগের বসে সেই ছবি গুলো ফেলে দেই কিন্তু একটা ছবিতে চোখ আটকে যায় সেটা ছিল আপনার।দৌড়ে সেই ছবি নিয়ে বাবার হাতে তুলে দেই বাবা আমার নীরবতা বুঝতে পেরে মুচকি হেসে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

এতটুকু বলে সাবিহা থেমে যায় রাত স্তব্ধ আজ তাকে কেউ ভালোবাসতে পারে তাও এভাবে এটা সে জানতোনা।এতোটা ভালোবাসা সে ডির্সাভ করে না আচ্ছা সাবিহা কী ভাবির ব্যাপারটা জানে।হয়তো না তাই আমাকে ভালোবেসেছে ভাবির ব্যাপারটা জানলে হয়তো ঘৃণা করবে রাত তার ভাবনা শেষ করে বললো,
~সাবিহা তুমি অনেক ভালো মেয়ে আমি অতোটা ভালো না তুমি হয়তো জানোনা আমি ভাবির সাথে
এতটুকু বলতেই সাবিহা রাতকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
~অতীত চলে গেছে তাকে টানবেন না।ভালোবাসার পরিমাপ অতীত দিয়ে করবেন না বেশ বেমানান লাগে।
রাত আরো অবাক হলো সাবিহা বললো,
~আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি আপনি কী আমাকে আপনার মনে এক তিল পরিনাণ জায়গা দিতে পারবেন না।এতো কঠোর আপনি
সাবিহার চোখে পানি হয়তো ভালোবাসা পাওয়ার আকুলতা তার বেড়ে গেছে আর রাত সে তো ভাবছে তার জীবন তাকে আরেকটা সুযোগ দিয়েছে একবার এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে দেখা যাক এর পরিণাম কী হয়। হয়তো সাবিহার ভালোবাসা তার জীবনকে সুন্দর করে তুলবে তাই সে এখন একটা ভয়াবহ কান্ড ঘটাবে রাত তার চেয়ার থেকে উঠে সাবিহার দিকে ঝুঁকে তার ঠোঁট সাবিহার গালে ছুয়িয়ে দিয়ে পুনরায় চেয়ারে বসে পরে সাবিহা গালে হাত দিয়ে রাতের দিকে তাকিয়ে আছে।রাত মুচকি হেসে ফোন বের করে রক্তিমকে ফোন করে বলে চলে আসতে
রক্তিম আর আমি কথা বলছিলাম সেই সময়ই রাত ফোন করে বললো চলে আসতে।আমি আর রক্তিম সেখানে পৌছে দেখি সাবিহা গালে হাত দিয়ে বসে আছে। রাত আমাদের দেখে বলে,
~ভাই ৩মাস পর বিয়ে হবে কোনো দেরি করা যাবে না।সাবিহার বাবার সাথে কথা বলো এখনই বিয়ে করে নিতাম কিন্তু সাবিহার পরীক্ষা আমি ওর পড়াশোনায় বাঁধা হতে চাই না।
এতটুকু বলে রাত চলে যায় আর আমরা তিনজন বলদ সেজে দাড়িয়ে রইলাম।
#গল্পের_নাম_আমার_শহরে_তুমি
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ২৫
,,,,,,
,,,,,,
৩মাস দেখতে দেখতে কেটে গেলো রাত আর সাবিহার বিয়ের তারিখ ঘনিয়ে এসেছে আসলেই সময় কারোও জন্য অপেক্ষা করে না বাবার মৃত্যুর পর মা অনেকটাই ভেঙে পরেছিল কিন্তু এখন ততটাই সে নিজেকে মজবুত করে নিয়েছে।হয়তো আমাদের কথা ভেবে সে নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছে মায়ের সাথে রোজই কথা হয় ভালোমন্দ সবই মা এখন দেখছে।
সেদিন রেস্টুরেন্ট থেকে ফিরে আমরা সবাইকে রাতের সিদ্ধান্ত জানাই।সবাই অনেকটা খুশি হয় দাদীমা অনেক বেশি খুশি হয়েছে ইদানিং আমি সাহারা রায়জাদাকে মা বলে ডাকা শুরু করে দিয়েছি সে তো রাতের বিয়ে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে দেখতে শেষ।কিন্তু রাত strictly বলে দিয়েছে সে কোনো আয়োজন চায় না তার বিয়েতে শুধুমাত্র কয়েকজন কবুল পরিয়ে সাবিহাকে বাসায় নিয়ে আসবে যদি এরকম না হয় তাহলে সে বিয়ে করবে না। আমরা সবাই তার কথায় রাজি হয়ে যাই কিন্তু সাবিহার বাবা কোনো ক্রমেই মেনে নিতে চাননি সাবিহা বুঝানোর পর সে রাজি হয়েছে।সারার বিয়ে হয়ে গেছে প্রতীকের সাথে সে আমাদের বাসায়ও এসেছিল রাত তাদের সাথে ভালো মতো কথা বলেছে কারো ভিতরই কোনো জড়তা ছিল না।
রক্তিম তার ভার্সিটি নিয়ে একটু ব্যস্ত কারণ ভাইয়ের বিয়ে বলে সে লম্বা ছুটি নিবে শুধু রাতের বিয়ের জন্যই না রক্তিম আমাকে নিয়ে পাহাড়ের রাজ্যে যেতে চায় রাতের বিয়ের পরই আমরা সেই ভ্রমনে বের হবো।

এসবের মধ্যে একটা কথা হচ্ছে ইদানিং আমার শরীরটা বেশ খারাপ যাচ্ছে মাথা ঘোরা,বমি হওয়া কোনো কিছু খেলে বমি হয়ে যায়।কেন জানি মনে হচ্ছে সুখবর আসতে যাচ্ছে তাইতো এসবের লক্ষণ দেখে শাশুড়ী মা আর মা দুজনই ডক্টরের কাছে নিয়ে যেতে চায়।আমি রক্তিমকে কিছু বলে নি উনি তো আমাকে প্রথমদিনই ডক্টরের কাছে নিয়ে যেতে চেয়েছেন আমিই যাইনি আর তাকে তো সারপ্রাইজ দিবো।
হঠাৎ রক্তিম আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরতেই আমি নিজের ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে আসি।সে আমাকে বললো,
~কী ভাবছো এতো?
আমি বললাম,
~এইতো কিছু না।
রক্তিম বললো,
~গত ৭দিন ধরে তোমার শরীরটা ভালো না।ডক্টরের কাছে যেতে প্রবলেম কী?
আমি বললাম,
~যাবো তো পরে এখন আপনি যান ভার্সিটি।দেরি হচ্ছে না আপনার
রক্তিম বললো,
~হুমম আজকে পরীক্ষার খাতা জমা দিতে হবে। আজ থেকে ফ্রী হয়ে যাবো রাতের বিয়েরও মাত্র ২দিন বাকি।
আমি বললাম,
~হুম।
রক্তিম ভার্সিটির জন্য বের হয়ে যেতেই আমি, মা,আর শাশুড়ী মা বের হয়ে গেলাম ডক্টরের ক্লিনিকের জন্য।
প্রায় ২০মিনিট পর ক্লিনিকে পৌছালাম ডক্টরের সাথে দেখা করে নিজের সব প্রবলেম বললাম সে কিছু টেস্ট দিয়ে দিলো তা করিয়েই আমরা বাসায় চলে আসলাম।রির্পোট কালকে দিবে বাসায় গিয়ে দেখি আমার দুইভাই হাজির। আরিফ জারিফ কে দেখে আমি বললাম,
~তোরা এখানে?
আরিফ বললো,
~আপু ২দিন এখানে থাকবো।
আমি অনেক খুশি হয়ে গেলাম কতোদিন পর আবার সবাই একসাথে।আর আমি যেটা ভাবছি যদি সেটা হয় তাহলে তো আরো বেশি খুশি হয়ে যাবো।ওদের সাথে কিছুক্ষন আড্ডা মেরে রুমে এসে পরলাম মাথাটা ভার হয়ে আছে ঘুমের প্রয়োজন আমি ফ্রেশ হয়ে একটা আপেল খেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।

রক্তিম ভার্সিটির সবকাজ শেষ করে চলে যায় শপিং করতে অধরার জন্য সে নিজ পছন্দরের শাড়ি কিনে,তার সাথে ম্যাচিং করে চুড়ি, কানের দুল সবকিছুর বিল পে করে সে রওনা হলো বাসার উদ্দেশ্যে। বাসায় পৌছে দেখতে পায় সোফার রুমে আড্ডার জলসা সবাইকে দেখে রক্তিম অনেক খুশি হয় সে সবার সাথে কুশলাদি করে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে সে অধরাকে খুজে বেড়াচ্ছে।হঠাৎ আরিফ বললো,
~দুলাভাই,আপু তো উপরে এভাবে চারপাশ খুজে লাভ নেই।
আরিফের কথা শুনে রাত আর জারিফ হো হো করে হেসে দেয় আর বড়রা মুখ টিপে হাসছে। রক্তিম উঠে দাড়িয়ে বিনা লজ্জায় বললো,
~শালাবাবু নিজের বউকে খোজা কোনো অপরাধ না আর তোমার আপু ছাড়া আমার আবার চলে না তাই আমি উপরে চলে যাচ্ছি পরে কথা হবে।
রক্তিম কথা শেষ করে উপরের দিকে চলে গেলো বাকি সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে তার যাওয়ার পাণে।
রক্তিম ঘরে ঢুকে দেখে অধরা গালে হাত দিয়ে ঘুমিয়ে আছে রক্তিম মুচকি হেসে কার্বাড থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।কিছুক্ষন পর ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে সে অধরার পাশে শুয়ে পরলো তারপর অধরার দিকে ঘুরে একদৃষ্টিতে তার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো।এভাবে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকার পর রক্তিম অধরার গালে তার ঠোঁট ছুয়িয়ে দিলো।ঘুমের মধ্যেই অধরা কপাল কুচকে বুঝালো তার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটছে তা দেখে রক্তিমের ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটে উঠে।অধরার চোখ পিটপিট করে খুলে রক্তিমকে এভাবে দেখে অবাক হয় পরক্ষনেই সে নিজেকে সামলে রক্তিমের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়।

ঘুমের মধ্যে গালে স্পর্শ পেয়ে চোখ পিটপিট করে খুলে দেখি রক্তিম আমার দিকে তাকিয়ে আছে তাকে দেখে আমি বললাম,
~আপনি কখন আসলেন?
রক্তিম বললো,
~এইতো মাত্র আসলাম।তোমার শরীর কী বেশি খারাপ লাগছে।
আমি হেসে বললাম,
~না এখন ঠিক আছি।আজ আপনি একটু বেশিই ক্লান্ত তাই না?
রক্তিম বললো,
~তাতো বটেই।তোমার জন্য একটা শাড়ি এনেছি দেখেতো পছন্দ হয় নাকি?
বলেঔ আলমারি থেকে দুটো শপিং ব্যাগ বের করে আমার সামনে রেখে দিলো আমি শাড়ি বের করে দেখলাম।আসলেই শাড়িটা অনেক সুন্দর আমি ঠোঁটের হাসিটা আরো চওড়া করে বললাম,
~অনেক সুন্দর।
রক্তিম গর্বের ভঙ্গিতে বললেন,
~দেখতে হবে না পছন্দটা কার?
তার কথা শুনে আমি হেসে উঠলাম।রক্তিম আমার হাসি দেখে নিজেও হেসে উঠলো রাতের খাবারের পর যে যার ঘরে চলে গেলো আমি আর রক্তিম রুমে এসেই শুয়ে পরলাম আমি ভাবছি আগামীকাল রিপোর্টে কী আসবে?আমি কী সত্যিই মা হতে চলেছি একথাটি ভাবতেই আমার হাত পেটে চলে যায়।আগামীকালের কথা ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে গেলাম

সকালে রেডি হচ্ছি রিপোর্ট আনতে যেতে হবে।রক্তিমকে সাথে করে নিয়ে যাবো সারপ্রাইজটা কীভাবে নিবে কে জানে?আমি আয়না থেকে চোখ সরিয়ে পিছনে ঘুরে দেখলাম রক্তিম মোবাইল হাতে বসে আছে আমাকে দেখেই বললো,
~আমরা কোথায় যাচ্ছি?
আমি বললাম,
~গেলেই তো দেখতে পাবেন।
রক্তিম আর কিছু না বলে রুম থেকে বের হলো আমিও তার পিছে পিছে বের হয়ে আসলাম যাওয়ার আগে আমার মা আর শাশুড়ি মা দুজনই বললেন সাবধানে যেতে।
আমি আর রক্তিম গাড়ির পিছনের সীটে বসে পরলাম গাড়ি ড্রাইভার চালাচ্ছে।কিছুক্ষন পর আমরা ক্লিনিকের সামনে চলে আসলাম রক্তিম অবাক হয়ে বললেন,
~এখানে কেন?
আমি বললাম,
~একদম চুপ।
আমি আর রক্তিম ডক্টরের সামনে বসে আছি তার হাতে আমার রিপোর্ট রক্তিম কিছু না বলে অবাক নয়নে ডক্টরের দিকে তাকিয়ে আছে।ডক্টর রির্পোট চেক করে আমার দিকে তাকিয়ে হাসি হাসি মুখ করে বললেন,
~Congratulation mrs Odhora.you are pregnant
ডক্টরের এতটুকু কথায় আমার শরীরের পুরো রক্ত হিম হয়ে গেলো সত্যিই আমি মা হতে চলেছি ছোট এক অস্তিত্ব আমার মাঝে বেড়ে উঠছে আমাকে কেউ মা বলে ডাকবে।ভাবতেই তো কতো ভালো লাগে বাস্তবে যখন হবে তখন আমি কী করবো?
আমার সুখের মাঝে আমি রক্তিমের কথা ভুলে গেছি রক্তিমের দিকে তাকিয়ে দেখি সে চুপচাপ বসে আছে।তাকে নীরব দেখে আমি বললাম,
~কী হয়েছে?
রক্তিম আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
~বাসায় যেতে হবে অধরা সবাই অপেক্ষা করছে।
বলেই আমার হাত ধরে অতিসাবধানে গাড়িতে গিয়ে বসিয়ে দিলো।ড্রাইভারকে কিছু টাকা দিয়ে চলে যেতে বললো আর নিজে ড্রাইভ করতে শুরু করলো।রক্তিমের এমন নীরবতা আমার ভিতরে ভয় সৃষ্টি করছে সে কী এই বাচ্চা চায়না একথা ভাবতেই তো আমার আত্মা কেঁপে উঠে।রক্তিম একধ্যানে গাড়ি চালাচ্ছে তার মনে যে তুফান চলছে তা আর কেউ জানে না এই তুফান খুশীর তুফান বাবা হবে সে ছোট একটা প্রাণ তাকে বাবা বাবা বলে ডাকবে উফফ এই দৃশ্য ভাবতেই তো তার সুখের ঢেউ শুরু হয়ে যায়।রক্তিম গাড়িটা একজায়গায় দ্বার কড়িয়ে সীটের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বললো,
~অধরা,ধন্যবাদ এতো বড় একটা উপহার তুমি আমায় দিচ্ছো।কোনো দিন ভাবিনি তোমায় পাবো কিন্তু এখন দেখো তুমি আমার সন্তানে মা হতে যাচ্ছো।
এতটুকু বলে চোখ খুলে অধরার দিকে তাকিয়ে অধরার চোখ দিয়ে পানি পরেই যাচ্ছে রক্তিমের প্রতিটা কথা তার মনকে ছুয়ে দিয়েছে।
রক্তিম তার দুইহাত প্রসারিত করে বললো,
~একটু বুকে আসো তো।
অধরা অপেক্ষা না করে ঝাপিয়ে পরে রক্তিমের বুকে অধরাকে পরম আবেশে তার বাহুডরে আবদ্ধ করে।

বাসায় আসতেই সবাই আমাদের দিকে অদ্ভুত নয়নে তাকিয়ে আছে।আমি তাদের অবস্থা দেখে মুচকি হেসে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললাম সবাই বুঝে গেলো আমার কথা রক্তিম আর আমাকে অনেক অভিনন্দন জানালো।তারপর নিজের রুমে এসে বিছানায় বসে পরি।অনেকটা ক্লান্ত লাগছে ক্ষুধাও লেগেছে তাই ফ্রেশ হতে চলে গেলাম শাওয়ার নিয়ে বের হতেই দেখি রক্তিম টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে আমাকে দেখে সে বললো,
~খাবারটা খেয়ে নেও।
আমি খাবার শেষ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলেম রক্তিম আমার পাশে শুয়ে বললো,
~রাতের বিয়েতে কোনো প্রকার দৌড়াদৌড়ি করবে না।যদি দেখেছি এখান থেকে সেখানে গেতে তোমার খবর আছে।
রক্তিমের থ্রেড শুনে আমি অসহায় মুখে মাথাদুলালাম সারাদিন আমার এভাবেই কেটে গেলো কেউ আমাকে কোনো কাজ করতে দিলো না আমি শুধু চেয়ে দেখলাম।

পরেরদিন সকালে সবাই ব্যস্ত রাতের বিয়ের জন্য আমি রুমে বসে বসে হাই তুলছি।শাশুড়ি মা এসে বললো,
~অধরা ক্ষুধা লেগেছে?খাবার আনবো?
আমি বললাম,
~আর কতো খাবো?পেট ফুলে যাবে
শাশুড়ি মা হেসে বললো,
~এই সময় বেশি বেশি খাবার খেতে হবে। শক্তি বাড়ে ফল বেশি করে খেতে হবে
আমি শুধু মাথাদুলালাম।
রাতে আমি রক্তিমের দেওয়া শাড়িটা পরে রেডি হয়ে বসে আছি।তখনই রাতের ঘরে যাওয়ার জন্য ডাক পরলো আমি আস্তে ধীরে উঠে রাতের ঘরে চলে গেলাম।রাত বরবেসে দাড়িয়ে আছে তাকে ঘিরে সবাই দাড়িয়ে আছে রাত আমাকে দেখে বললো,

চলবে।।।

( বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন?ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading 🤗🤗)

(আগামীকাল গল্পের শেষ পর্ব দেওয়া হবে আজই দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু ব্যস্ততার জন্য দিতে পারবো না)
চলবে।।।

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন?ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading 🤗🤗)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here