#আমি_তোমার_গল্প_হবো🍁
লেখিকা- মাহিয়া তাহসীন মেরিন
পর্ব:::০২
কথাটা বলতেই হঠাত ঠাস করে একটা শব্দ হয়। সবাই একসাথে পিছনে ফিরে দেখে,, অধরা অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
অধরা আবাক নয়নে ধীর পায়ে দাদাভাইয়ের কাছে এসে,,
— ” দাদুভাই তুমি এটা কি বললে?
আমি কি ভুল শুনেছি? আমার বিয়ে মানে? আমার কি বিয়ের বয়স হয়েছে নাকি? ”
— দাদাভাই অধরার কাছে এসে,, ” অধরা মামুনি, তুমি এখন বড় হয়েছো। আমরা পরিস্থিতির চাপে পড়ে এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি।
আর দাদুভাই, কখনো তোমার ক্ষতি চায় না। আমি জানি, আমার ছোট্ট অধরা তার দাদাভাইয়ের কথা ঠিকই রাখবে। ”
— অধরা কিছুক্ষণ দাদাভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে,, ” কিন্তু দাদু…আমি.. ”
কথাটা বলেই চুপ হয়ে গেলো অধরা, কেননা দাদাভাইয়ের উপরে কিছু বলা তার পক্ষেও সম্ভব না। তাই বাধ্য হয়ে বিয়েতে রাজি হয়ে যায় সে।
🌻বর্তমানে🌻
অধরার বেস্ট ফ্রেন্ড তিশার ধাক্কায় বাস্তবে ফিরে আসে অধরা। রাগি চোখে তিশার দিকে তাকাতেই..
— তিশা ভ্রু কুঁচকে অধরার দিকে তাকিয়ে,, ” আজব তো। এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেনো?
তোকে কখন থেকে কবুল বলতে বলছে, শুনতে পারিস না? ”
তিশার কথায় অধরা খেয়াল করে কাজি সাহেব তাকে বারবার কবুল বলতে বলছে। অধরা ঠোঁট উল্টে একবার তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আবার অর্ণবের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কবুল বলে দেয়।
— মনে মনে,, ” শেষ! সব শেষ হয়ে গেল।
আমার স্বপ্নের নায়ক আসার আগেই আমার বিয়েটা হয়ে গেলো। তাও আবার আমার হবু দুলাভাইয়ের সাথে।
হায় হায় রে কপাল আমার। এখন আমার কি হবে? ”
অধরার কাছে একটা বিষয় একটু সন্দেহ লাগলো, বিয়েটা পারিবারিক ভাবে হলেও বরপক্ষ থেকে কেবল আশ্বিন, তার দাদি আর আশ্বিনের কিছু ক্লোজ ফ্রেন্ডরা এসেছে।
— অধরা মনে মনে,, ” উনার সাথে তো তেমন কেউই আসলেন না। আর কেউ না হলেও তো, আশ্বিনের আব্বু আম্মুর তো থাকার কথা ছিল।
সেদিন যখন দেখতে এসেছিলো তখনও তারা আসেননি আর আজ বিয়েতেও আসলেন না। তবে কি উনার মা বাবা নেই? নাকি অন্য কোন কারণ আছে? ”
অধরার মনে কথাগুলো বারবার নাড়া দিচ্ছে।
দেখতে দেখতেই বিদায়ের সময় চলে আসে। অধরা তার বাবা মা ভাইকে বিদায় জানিয়ে চলে আসে নতুন এক অজানা পথে।
🌻🌻
আশ্বিন আর অধরা বাসায় প্রবেশ করতেই আত্মীয় স্বজনরা এসে অধরাকে ঘিরে ধরে। আশেপাশের সবাই এসেছে নতুন বউ দেখার জন্য। দাদি খুব গর্বের সাথে অধরাকে নিয়ে তাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন।
এদিকে আশ্বিন তাদের পাত্তা না দিয়ে সোজা তার নিজের ঘরে চলে আসে।
— অধরা মনে মনে,, ” ধুর। আর ভালো লাগে না। উনারা এমনভাবে আমাকে দেখছেন যেন আমি একজন এলিয়েন। আজই প্রথম পৃথিবীতে এসেছি।
হুহহ,, যতসব ঢং। ”
— দাদি অধরার কানের কাছে এসে,, ” ছোট্ট বুড়ি, তুই একদম চিন্তা করিস না। এখনি সবাই চলে যাবে। তারপর কিছু খেয়ে নিজের রুমে গিয়ে বিশ্রাম নিবি, ঠিক আছে? ”
— ” জি। ঠিক আছে, দাদি বুড়ি। হিহিহি। ”
দাদিও হালকা হেসে খুশি হয়ে অধরার মাথায় হাত রাখে।
ঠিক তখনই, একজন মহিলা তড়িঘড়ি করে বাসার ভেতরে প্রবেশ করে দাদির কাছে আসে।
— ” মা, এসব আমি কি শুনছি? আপনি আমাকে না জানিয়ে আমার ছেলের বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন?
আমি ভেবেছিলাম কথাটা মিথ্যা, কিন্তু এখন তো দেখছি আমি ভুল ভেবেছি।
আপনি এটা কিভাবে করতে পারলেন মা? ”
— ” অনুরিমা আমার কথাটা তো একবার শুনো…। ”
— চিৎকার করে,, ” কি শুনবো আমি? আপনি আমার অনুমতি ছাড়াই আমার ছেলের বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন।
আপনি জানতেন আমি আশ্বিনের জন্য আমার বান্ধবীর মেয়ে মারিয়াকে পছন্দ করে রেখেছি। তাও আপনি কিভাবে…?
এমনটা কেনো করলেন আপনি? ”
— ” কারণ আমি অনুমতি দিয়েছি…। ”
কথাটা শুনে সবাই পিছনে ফিরে দেখে আশ্বিন দাঁড়িয়ে আছে। অনুরিমা একবার দাদির দিকে তাকিয়ে, আশ্বিনের সামনে এসে..
— ” এসবের মানে কি বাবা? তুমি বিয়ে করেছো আর আমাকে একবার জানানোর প্রয়োজন মনে করলে না? মা হই আমি তোমার, আমার জানার অধিকার আছে।
আচ্ছা ঠিক আছে, মানছি তুমি নিজ ইচ্ছায় এই বিয়ে করেছো, কিন্তু মাকে একবার জানানোর প্রয়োজন মনে করলে না তুমি? ”
— আশ্বিন ড্যাম কেয়ার ভাব নিয়ে এসে সোফায় বসে,, ” দাদি বলে দাও উনাকে আশ্বিন চৌধুরীর মা নেই।
তিনি অনেক আগে থেকেই আমার জন্য মৃত। আমার ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করার কোন অধিকার উনার নেই। ”
— দাদি আশ্বিনের সামনে এসে,, ” দাদুভাই এভাবে বলছিস কেনো? অনুরিমা তোর মা। আর…। ”
— আশ্বিন উঠে দাঁড়িয়ে,, ” প্লিজ দাদি। এতকিছুর পরও তুমি উনাকে ক্ষমা করে দিলেও, আমি পারবো না। উনার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই, কথা শেষ। ”
— ” আশ্বিন। বাবা আমার কথাটা একবার শোনো…। ”
কথাটা বলতেই আশ্বিন হনহন করে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো। অনুরিমা আশ্বিনের যাওয়ার দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
🌻এদিকে…
অধরা এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের সব কথাবার্তা শুনছিলো। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না সে। তবে এটা নিশ্চিত, আশ্বিন আর তার মায়ের মাঝে কোন একটা ঝামেলা ঠিকই আছে।
অনুরিমা ধীর পায়ে অধরার সামনে এসে, অধরার মাথায় হাত রেখে,,
— ” যদিও আমি চেয়েছিলাম মারিয়ার সাথে আশ্বিনের বিয়ে হোক, কিন্তু কি আর করার।
আশ্বিনের ইচ্ছাই আমার ইচ্ছা।
আমার ছেলেটা একটু রাগী, কিন্তু তার মনটা অনেক ভালো। সব সময় তার পাশে থেকো। ”
কথাটা বলেই তিনি এক মুহূর্ত দেরি না করেই বেরিয়ে গেলেন। অধরা উনার যাওয়ার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে দাদির দিকে তাকায়। দাদি মাথা নিচু করে চোখ মুছে।
— অধরা অবাক হয়ে তাকিয়ে,, ” দাদি, উনি..? ”
— ” এসব কথা পরে হবে। আগে চল কিছু খেয়ে বিশ্রাম নিবি। আশ্বিনটাও না জানি কোথায় চলে গেল। ”
অধরা কিছুক্ষণ ভেবে দাদির সাথে চলে আসে।
🌻🌻
বেশ অনেকক্ষণ ধরে অধরা একটা রুমে বসে আছে। এতোক্ষণ ধরে পুরো ঘরটাকে সে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছে। সারা ঘরেই আশ্বিনের ছবি। দেখেই বোঝা যাচ্ছে উনি অনেক সৌখিন।
— ” ধুর। ভালো লাগে না, কখন থেকে বসে আছি ।
আমার মতো একটা বাচ্চা মেয়েকে দাদুভাই এ কার গলায় ঝুলিয়ে দিলো!
মনে তো হচ্ছে আমি শ্বশুর বাড়ি না, একটা রহস্যের মাঝে প্রবেশ করেছি।
মা ছেলের মাঝে দ্বন্দ্ব,, বাবা গায়েব,, দাদির কাছে বড় হয়েছে ছেলে,, উয়াও নায়েস,, হোয়াট এ ফ্যামিলি। ”
অধরা খাটের উপর বসে একা একাই কথাগুলো বলছিলো। হঠাত তার ফোনে তিশার কল আসে। অধরা কোনকিছু না ভেবেই কল রিসিভ করে,,
— ” হ্যালো..। ”
— ওপাশ থেকে তিশা মজা করে,, ” কিরে,, অধরা বান্ধবী…? কি করিস..? ”
— ” কি আর করবো? আমি আর তোর দুলাভাই মিলে তোকে মারার প্ল্যান করি। ”
— ” এহহ! শখ কতো।
আচ্ছা যাই হোক,, কাল নাকি তুই কলেজে আসবি? ”
— ” কিসের কলেজ? ”
কথাটা বলেই অধরা একটা দুষ্টু দিয়ে কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে,, ” আর বলিস নারে তিশা। তোর দুলাভাইকে এতো করে অনুরোধ করলাম আমাকে যেনো পড়তে দেয়। অন্তত পক্ষে পরীক্ষাটা যেনো দিতে দেয়। কিন্তু আফসোস, রাজি হলো না। ”
— ” হায় হায়,, তাই নাকি? আর কি কি বলেছেন আশ্বিন ভাইয়া? ”
— ” আর বলিস নারে,, বলেছে আমি আশ্বিন চৌধুরী, এতো বড় একজন বিন্যাস ম্যান। আমার বউয়ের এতো লেখাপড়ার কি দরকার।
জানিস,, কতো অনুরোধ করেছিলাম।
তোর সাথে হয়তো আর দেখা হবে না রে। ”
— ” হুহহ,, শেষ হয়েছে তোর ড্রামা?
তোর কি মনে হয় আমি বোকা নাকি?
একটু আগেই জিজু ফোন করেছিলো আমাকে। ”
— অধরা এক লাফে সোয়া থেকে উঠে বসে,, ” আশ্বিন ফোন দিয়েছিলো? কেনো দিয়েছিলো? কি বলেছে তোকে? ”
— ” আরে আস্তে।
জিজু বললো তুই নাকি কালকে থেকে কলেজ যাবি। দুই দিন কলেজ আসিসনি তাই নোট গুলো তোকে দিতে বলেছে। ”
— ” কিহহহ? আমি কেনো কলেজ যাবো? আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে, তো এখন পড়ালেখা করে কি হবে?
আর এসব পড়ালেখা বাচ্চাদের জন্য, আমি কি বাচ্চা নাকি? ”
— ” বেশি কথা বলিস না তো। সময় মতো ক্লাসে চলে আসিস। বাই। ”
কথাটা বলেই তিশা ফোন কেটে দেয়। অধরা মাথায় হাত দিয়ে,,
— ” এখন আমার কি হবে?
আমি তো বই খাতা সব বিক্রি করে দিয়েছি পড়তে হবে না ভেবে। ইয়া আল্লাহ!
নাহহ,, দাদিকে বলে যেভাবেই হোক একটা না একটা ব্যাবস্থা নিতেই হবে। অধরা,, ডোন্ট ওয়ারি, পড়া নাই চিল। ”
কথাটা বলেই অধরা চোখ বন্ধ করে শুয়ে মুহূর্তেই ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দেয়।
🌻🌻
রাত একটার দিকে আশ্বিন বাসায় ফিরতেই সার্জেন্ট এসে দরজা খুলে দেয়।
— ” আমিনা, দাদি কোথায়? ”
— ” দাদিমনি উনার রুমেই আছেন। আর ছোট মনি আপনার রুমে। ”
— ” আচ্ছা। আমার রুমে এক কাপ কফি রেখে আসো, আমি দাদির সাথে দেখা করে আসি। ”
— ” ওকে স্যার। ”
আশ্বিন ধীরে ধীরে দাদির রুমে এসে দেখে দাদি খাটের উপর অধশোয়া হয়ে বসে বই পড়ছেন।
— আশ্বিনের উপস্থিতি বুঝতে পেরে,, ” চলে এসেছিস দাদুভাই? এতো দেরী হলো কোনো? এখন কি আর আগের মতো করলে চলবে? বাসায় যে একটা পিচ্চি বউ আছে জানিস না? ”
— আশ্বিন দাদির পাশে বসে,, ” ঔষধ খেয়েছো তুমি? ”
— ” খেয়েছি।
তখন এভাবে চলে গেলি কেনো? অনুরিমা অনেক কষ্ট পেয়েছে আশ্বিন। হাজার হোক সে তোর মা। ”
— ” দাদি আমি উনাকে নিয়ে কোন কথা বলতে চাই না। অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়ো। ”
— ” দাদুভাই, মায়ের উপর রাগ করে অধরাকে কষ্ট দিসনা। আমি জানি তুই মন থেকে বিয়েটা করিসনি, শুধু আমার অনুরোধে করেছিস। ”
— ” চিন্তা করো না দাদি। আমি অধরার সব সময় খেয়াল রাখবো। অনুরিমার রাগ অধরার উপর প্রভাব ফেলবে না।
তবে কখনো মন থেকে মেনে নিতে পারবো না। ”
— দাদি মুচকি হেসে,, ” দেখিস একদিন এই পিচ্চিটাকে তুই পাগলের মতো ভালোবাসবি। মিলিয়ে নিস। ”
আশ্বিন তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে দাদিকে শুইয়ে দিয়ে গায়ে চাদর দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসে।
—চলবে❤