আমি তোমার গল্প হবো পর্ব -০১

টকটকে লাল শাড়ি আর হালকা সাজে বধূ বেশে বসে আছে অধরা। পারিবারিক ভাবেই ছোটখাটো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আজ তার বিয়ে,, টপ বিজনেসম্যান আশ্বিন চৌধুরীর সাথে।
মূলত, আশ্বিনের জোরাজুরিতেই বিয়েটা ঘরোয়া পরিবেশে খুব সাধারণ ভাবেই হচ্ছে।

অধরা এতোক্ষণ ধরে স্টেজে ঘাপটি মেরে বসে আছে। এই বিয়ে করার কোন ইচ্ছাই তার ছিলো না।
হুট করেই পরিস্থিতির চাপে পড়ে দাদু ভাই তাকে এই বিয়েতে বাধ্য করেছেন। নয়তো এতো জলদি বিয়ের কথা চিন্তাও করেনি সে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে রাগে গাল ফুলিয়ে অতীতে ডুব দেয় অধরা….

🌻ফ্ল্যাশব্যাক🌻

সকাল থেকেই অধরাদের বাসায় নানারকম আয়োজন করা হচ্ছে। অধরার চাচাতো বোন কণাকে আজ পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে।
বাসার সবাই যেখানে কাজে ব্যস্ত সেখানে অধরা তার বড় টেডি বিয়ারটা জড়িয়ে ধরে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।

— অধরার মা তার রুমে প্রবেশ করে,, ” অধরা! এখনো ঘুমাচ্ছো তুমি? কতোবার বলেছি আজকে বাসায় মেহমান আসবে। কোথায় একটু জলদি উঠে সবাইকে কাজে সাহায্য করবে,, তা না করে এখনো ঘুমাচ্ছে। উঠো বলছি। ”

— অধরা ঘুমের ঘোরে,, ” আম্মু,, আর পাঁচ মিনিট..। এমনিতেও আমি কোন কাজ পারি না করতে। জলদি উঠে কি করবো? ”

— জোড় করে অধরার হাত টেনে বসিয়ে,, ” কোন কথা শুনতে চাই না আমি। যাও ফ্রেশ হয়ে জলদি রেডি হয়ে নাও।
আর একটা কথা,, খবরদার! ভুল করেও আজকে মেহমানদের সামনে কোন উল্টো পাল্টা কিছু করবে না তুমি। মনে থাকবে? ”

— অধরা হাই তুলতে তুলতে,, ” আম্মু তুমি কোন চিন্তাই করো না তো। আমার মতো লক্ষি মেয়ে কখনো উল্টো পাল্টা কিছু করতেই পারে না। ”

— অধরার মা চোখ ছোট করে তাকিয়ে,, ” হ্যা। আমি তো সব জানিই। ”
কথাটা বলেই তিনি রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।

কিছুক্ষণ পর অধরা রেডি হয়ে বাহিরে এসে দেখে পুরা বাসা একদম পরিপাটি করে সাজানো গোছানো। ড্রইংরুমে সোফার উপর অর্ণব বসে আছে।

— ” ভাইয়া…! ” কথাটা বলেই অধরা দৌড়ে গিয়ে অর্ণবের গলা জড়িয়ে ধরে বসে পরে।

— অর্ণব অধরার গাল টেনে দিয়ে,, ” বোন,, এতোক্ষণ কোথায় ছিলি তুই? জানিস না মেহমানরা একটু পরেই চলে আসবে? এখন যা,, কণার রুমে গিয়ে তার পাশে বসে থাক। ”

অধরা আচ্ছা বলেই দৌড়ে কণার রুমে চলে আসে।
কথা খাটের এক কোণে মুখ কালো করে বসে আছে। তার পাশে একটা সুন্দর কলাপাতা রঙের শাড়ি। অধরা ধীরে ধীরে এসে কণার পাশে বসে..

— ” কি হয়েছে আপুনি? তোমার মন খারাপ? ভাইয়া বললো মেহমান এখনি চলে আসবে কিন্তু তুমি এখনো রেডি হওনি! ”

— কণা মন খারাপ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে,, ” আমার ভালো লাগছে না ছোট। একটু একা থাকতে চাই। ”

অধরা কিছুক্ষণ ড্যাবড্যাব করে কণার দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে রুম থেকে বেরিয়ে আসে।

— অধরা নিজের রুমে প্রবেশ করতে করতে,, ” আপুনির আবার কি হলো? কাল রাত থেকে দেখছি আপুনির মন খারাপ। তবে কি হবু দুলাভাই দেখতে পঁচা নাকি??
আহারে আমার আপুনি। কষ্ট লাগছে তোমার জন্য। ”

অধরা খাটের উপর বসে দুইপা ঝুলিয়ে একা একাই কথাগুলো বলছিলো। হঠাত নিচে থেকে হৈচৈ এর শব্দ শুনে দৌড়ে নিচে নেমে এসে দেখে মেহমান চলে এসেছে। অধরা ধীর পায়ে তাদের সামনে গিয়ে একে একে তাদের খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে। একটা ছেলে আর একজন বৃদ্ধ মহিলা এসেছেন।

হঠাত অর্ণবের পাশে বসা ছেলেকে দেখে চোখ আটকে যায় তার। কালো শার্ট, কালো প্যান্ট, হাতে দামি ঘড়ি আর চুলগুলো স্পাইক করা, মুখে হালকা চাপদাড়ি,, সব মিলিয়ে অধরা হা করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। এ যেনো তার স্বপ্নের সেই রাজপুত্র।

— অর্ণব অধরার দিকে তাকিয়ে,, ” বোন। কি হয়েছে তোর? এভাবে হা করে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? সবার সাথে পরিচিত হও। ”

অর্ণবের কথায় অধরার হুশ ফিরে। সে কোনমতে নিজেকে সামলে নিয়ে তার দাদু ভাইয়ের পাশে বসে পড়ে।

— মনে মনে,, ” ইয়া আল্লাহ! উনিই তাহলে আমার হবু দুলাভাই? হায় হায়! আমি তো পুরাই- জ্ঞান হারাবো,, মরেই যাবো,, বাঁচাতে পারবে না কেউ।
আরে ধুর! আমি এসব কি ভাবছি? দুলাভাই হয় আমার, হুম। ”

— আশ্বিনের দাদি অধরার দিকে তাকিয়ে,, ” আমিত,, এটাই তাহলে তোমার ছোট্ট মেয়েটা? এতো বড় হয়ে গিয়েছে? একদম পুতুলের মতো দেখতে। মাশাল্লাহ।
আশ্বিন,, দেখো অধরাকে। ”

আশ্বিন এতোক্ষণ চুপচাপ বসে মোবাইলে কিছু কাজ করছিলো আর অর্ণবের সাথে গল্প করছিলো। হঠাত তার দাদির কথা শুনে মুখ তুলে সামনে তাকিয়ে দেখে অধরা পিঠা খেতে খেতে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।

— অধরার বাবা একটা হাসি দিয়ে,, ” জী হ্যা। এটাই আমার মেয়ে অধরা। দেখতে দেখতেই কতো বড় হয়ে গিয়েছে তাই না? তাই বলে আবার তাকে শান্ত ভেবে ভুল করবেন না। ভারি দুষ্টু,, পুরো বাসা মাথায় তুলে রাখে। ”

কথাটা বলেই সবাই একসাথে হেসে ওঠে। অধরা ভ্রু কুঁচকে একবার তাদের দিকে তাকিয়ে একটা ভেংচি কাটে।

— আশ্বিন অধরার দিকে তাকিয়ে,, ” অর্ণব, এটাই তোর পিচ্চি বোনটা? কি যেনো নাম..? ও হে,, অধরা ওহি তাই না?
শেষবার যখন দেখেছিলাম তখন অনেক ছোট ছিলো। ”

— অর্ণব মুচকি হেসে,, ” তোর মনে আছে তাহলে। হ্যা এটাই অধরা। এখনও আগের মতোই আছে। ”

কথাটা বলেই দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। অধরা তাদের কথার কিছুই বুঝতে পারছে না। সে বোকার মতো তাদের দিকে তাকিয়ে,,

— ” তোমরা এভাবে হাসছো কেনো? কি হয়েছে? ”

— অর্ণব মুচকি হেসে,, ” কিছু না বোন। এমনি। ”

অধরা ভেংচি কেটে একে একে পিঠা খেতে শুরু করে। অধরাকে এভাবে খেতে দেখে অধরার মা দূর থেকে তাকে বারবার ইশারা করে যাচ্ছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা।

ততক্ষণে অধরার চাচি কণাকে নিয়ে তাদের সামনে এসে আশ্বিনের পাশে বসিয়ে দেয়। কণার মুখটা মলিন হয়ে আছে। সবাই মিলে কিছু কথা বলার পর আশ্বিন আর কণাকে আলাদা কথা বলার জন্য পাঠানো হয়।

🌻এদিকে,,

অধরা আশ্বিনের দাদির সাথে ইতিমধ্যেই ভাব জমিয়ে ফেলেছে। সে দাদিকে একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। দাদিও খুশি মনে অধরার বোকার মতো প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছেন।
আর,, দূর থেকে অধরার মা অর্ণবকে ইশারা দিতেই অর্ণব অধরাকে জোর করে সেখান থেকে নিয়ে যায়।

কিছুক্ষণ পর আশ্বিন আর কণা ফিরে আসে। সবাই খুশি মনে তাদের কাছে মত জানতে চাইলে,,

— আশ্বিন দাদির দিকে তাকিয়ে,, ” দাদি আমি এই বিয়েতে রাজি না। এই বিয়ে হবে না। ”

আশ্বিনের কথায় সবার মুখের হাসি মিশে যায়। সবাই অবাক হয়ে একে অপরের দিকে তাকায়।

— ” কি হয়েছে দাদুভাই? হঠাত এমন সিদ্ধান্ত কেনো? তোদের বিয়ে তো আগে থেকেই ঠিক ছিলো,, তাহলে এখন এসব বলছিস কেনো? ”

— আশ্বিন কণার দিকে একবার তাকিয়ে,, ” দাদি উনি অন্য একজনকে পছন্দ করেন আর তাকেই বিয়ে করতে চায়।
তারমানে উনাকে জোর করে এই বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর তুমি তো জানোই…। ”

আশ্বিনের কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে যায়। এদিকে কণা মাথা নিচু করে বসে আছে।

— অধরার দাদা শক্ত মুখে কণার দিকে তাকিয়ে,, ” কণা, এটা কি সত্যি? আশ্বিন কি সত্যি কথা বলছে? ”

— কণা নিচের দিকে তাকিয়ে কাপা কণ্ঠে,, ” জ..জি দাদুভাই।
আমি বাবাকে বলেছিলাম। কিন্তু বাবা আমার কোন কথাই শোনেনি। ”

— কণার বাবা দাদুর দিকে তাকিয়ে,, ” বাবা, কণা এখনো ছোট। ভালো মন্দ বোঝেনা। সে ভুলে গিয়েছে আমরা আশ্বিনের পরিবারের কাছে ওয়াদা বদ্ধ। আর..। ”

— দাদুভাই তাকে থামিয়ে দিয়ে,, ” এই বাসার সকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আমি এখনো বেঁচে আছি কবির। তোমার উচিত হয়নি আমার কাছ থেকে এসব কথা লুকানোর। ”

দাদুর কথা শুনে কণার বাবা মাথা নিচু করে ফেলে। অধরার বাবা বড় ভাইয়ের দিকে একবার তাকিয়ে,,

— দাদুর সামনে এসে,, ” কিন্তু বাবা, এখন আমাদের কি করা উচিত? ”

— দাদু কিছু একটা ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে,, ” আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। রহমানরা কখনো তাদের কথার বরখেলাপ করে না,, এবারও করবে না। তাই বলে আমরা কণার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাবো না।
এই বিয়ে হবে। তবে কণার সাথে না,, অধরার সাথে হবে। ”

দাদাভাই এর কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে উনার দিকে তাকায়। কারো সাহস নেই উনার বিপক্ষে কিছু বলার,, তাই সবাই চুপ করে আছে।

— আশ্বিনের দাদি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,, ” অধরার খুব লক্ষি একটা মেয়ে। সেই ছোট্ট বুড়িটার সাথে আমার আশ্বিন দাদুভাইয়ের বিয়ে হবে,, ভাবতেই ভালো লাগছে। আমার এই বিষয়ে কোন আপত্তি নেই। ”

— দাদাভাই আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে,, ” বাবা, তোমার কিছু বলার আছে? ”

— আশ্বিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে একবার দাদির দিকে তাকিয়ে,, ” দাদির ইচ্ছাই আমার ইচ্ছা। যেহেতু দাদি রাজি তাহলে আমিও রাজি। ”

— দাদুভাই একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে,, ” আলহামদুলিল্লাহ। তাহলে ঠিক হয়ে গেলো,, আগামী সপ্তাহে আশ্বিনের সাথে আমাদের ছোট্ট অধরার বিয়ে।
আর, আমার সিদ্ধান্তই শেষ সিদ্ধান্ত। ”

কথাটা বলতেই হঠাত ঠাস করে একটা শব্দ হয়। সবাই একসাথে পিছনে ফিরে দেখে অধরা অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।

—চলবে🌻

#আমি_তোমার_গল্প_হবো🍁
লেখিকা- মাহিয়া তাহসীন মেরিন
পর্ব::::০১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here