#আমি_তোমার_গল্প_হবো🍁
লেখিকা- মাহিয়া তাহসীন মেরিন
পর্ব:::০৮
সকাল থেকেই অধরা আশ্বিনকে এটা সেটা বলে বিরক্ত করেই যাচ্ছে। আশ্বিন রাগী চোখে অধরার দিকে তাকিয়ে,
— ” তুমি কি দুই মিনিটের জন্য একটু চুপ থাকবে…প্লিজ? ”
— অধরা একটা ভেংচি দিয়ে, ” হুহহ! একটু তো কথাই বলেছি, তাই বলেই এতো বিরক্ত হচ্ছেন? যেদিন থাকবো না সেদিন ঠিকই মনে করবেন, হুম। ”
কথাটা বলেই অধরা গাল ফুলিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আশ্বিন হা করে অধরার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে…
— ” এটা কি বলে গেলো পিচ্চিটা?
থাকবো না মানে কি? এতো বড় সাহস, আমার মুখের উপর কথা…। দেখাচ্ছি তোমাকে। ”
আশ্বিন তারাতারি উঠে দাঁড়িয়ে তড়িঘড়ি করে নিচে নেমে দেখে অধরা কোথাও নেই। দাদির রুমে গিয়ে দেখে দাদি একা বসে টিভি দেখছে।
— আশ্বিন দাদির কাছে গিয়ে রেগে, ” দাদি অধরা কোথায়?
কোথায় আছে তোমার ওই কুখ্যাত ছোট্ট বুড়ি? ”
— দাদি অবাক হয়ে, ” কি হয়েছে আশ্বিন? অধরা তো তিশার সাথে কলেজে চলে গেলো। তোকে বলে যায়নি? ”
— আশ্বিন কিছু একটা ভেবে মাথা চুলকে, ” আসলে দাদি। না মানে, আমার খেয়াল ছিলো না। ”
— ” কি হয়েছে? পিচ্চিটা কি আবারও কিছু করেছে নাকি? ”
— ” আরে নাহহ, এমনি।
আচ্ছা, আমি যাই। ”
কথাটা বলে আশ্বিন রুম থেকে বেরিয়ে অধরাকে কল দেয়। কিন্তু কল রিসিভ না হওয়ায় আশ্বিন রেগে…
— ” সাহস বেড়ে গিয়েছে। আমার কল রিসিভ করেনি! ওকে ফাইন, আমিও দেখে নিবো। ”
🌻এদিকে🌻
অধরা আর তিশা আপনমনে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। আর অধরা একা একাই আশ্বিনকে বকে যাচ্ছে।
— তিশা আঁড়চোখে অধরার দিকে তাকিয়ে মনে মনে, ” দিন দিন দেখি অধরা পাগল হয়ে যাচ্ছে। আশ্বিন ভাইয়াকে বলে যেভাবেই হোক একে একটা ডাক্তার দেখাতে হবে। ”
এদিকে, অধরা কথা বলতে বলতে হঠাত থেমে যায়।
তিশা অধরার দিকে তাকিয়ে,
— ” কি হলো তোর? কথা শেষ হয়ে গেলো নাকি? যাক আলহামদুলিল্লাহ। ”
— অধরা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে, ” তিশা দেখ সামনে মামুনি। আশ্বিনের মা। ”
— তিশা সামনে তাকিয়ে, ” আন্টি এখানে কি করছেন? হয়তো কোন কাজে এসেছেন। আমাদের কি? চল যাই। ”
— অধরা কিছু একটা ভেবে, ” তুই যা। আমার উনার সাথে কথা আছে। ”
তিশা একবার অধরার দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে চলে গেলো।
এদিকে অধরা ধীর পায়ে অনুরিমার কাছে এসে…
— ” এখানে কি করছেন আপনি? ”
— অনুরিমা হঠাত ডাক শুনে চমকে উঠে পাশে ফিরে তাকিয়ে, ” অধরা! তুমি এখানে…? ”
— অধরা একবার ভালোভাবে অনুরিমাকে পর্যবেক্ষণ করে, ” সামনেই আমার কলেজ। কিন্তু, আপনি এখানে কি করছেন? আপনার তো এখানে থাকার কথা না। ”
— অনুরিমা আমতা আমতা করে, ” আ..আসলে একজনের সাথে দেখা করতে এসেছিলাম। মানে, বান্ধবী আর কি। কিন্তু পরে জানতে পেরেছি সে নাকি আসবে না। তাই চলে যাচ্ছি। ”
— অধরা গভীর ভাবে কিছু ভেবে, ” আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে। চলুন সামনের কফি শপে যেয়ে বসি। ”
— অনুরিমা অবাক হয়ে, ” কি কথা? আমার আসলে বেশি সময় নেই। যা বলার এখানেই বলো। ”
— ” আমারও বেশি সময় লাগবে না। চলুন। ”
অনুরিমা আশেপাশে একবার তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে অধরার সাথে চলে আসে।
🌻🌻
অধরা আর অনুরিমা মুখোমুখি বসে আছে। অনুরিমা বারবার আশেপাশে তাকিয়ে কিছু একটা দেখছে আর অধরা গভীর ভাবে তাকে পর্যবেক্ষণ করছে।
— অনুরিমা অধরার দিকে তাকিয়ে, ” বলো কি বলতে চেয়েছিলে? ”
— ” আমি সব জানতে চাই।
মানে, কেনো আপনি বাবাকে ডিভোর্স দিয়ে শাহিন হাসাদকে বিয়ে করেছেন? কেনো আশ্বিনকে একা ফেলে চলে গিয়েছেন?
দ্বিতীয় বিয়ে হয়ে গেলেও তো আপনি চাইলেই আশ্বিনকে নিজের কাছে রাখতে পারতেন, আর কিছু না হলেও এট লিস্ট যোগাযোগ তো রাখতেই পারতেন। কিন্তু আপনি এমন করেননি, কেনো? ”
— অনুরিমা এতোক্ষণ চুপ করে অধরার কথা শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, ” এসব অনেক পুরনো কথা। এখন এই কথা জেনে কোন লাভ নেই। সো, আমি যাচ্ছি। ”
কথাটা বলে অনুরিমা উঠে যেতে চাইলে অধরা তার হাত ধরে ফেলে।
— ” লাভ আছে। কথাগুলো পুরনো হলেও আমার জন্য নতুন। আর এই পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে কথাগুলো জানার অধিকার আমার আছে। ”
—অধরার কথা শুনে অনুরিমা চুপচাপ বসে কিছু একটা ভেবে,
” আমার আর আকাশের বিয়েটা হয়েছিলো পারিবারিক ভাবেই। আকাশ তখন নতুন বিজনেস সামলাতে শুরু করেছে।
যেহেতু আকাশের বাবা ছিলেন না, তাই আমার বাবা আকাশকে বিজনেসে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করে।
সব কিছু ভালোই যাচ্ছিলো। আকাশ তার ছোট বিজনেসকে অনেকটা উপরে তুলে ফেলে আর তখনই…
হঠাত একদিন আকাশের বিজনেসে ঝামেলা হতে শুরু করে। একে একে সব কিছু আমরা হারাতে শুরু করি। আকাশ কোনভাবেই কোনকিছু সামলে উঠতে পারছিলো না তখন আমার বাবা তাকে সাহায্যের চেষ্টা করতে গিয়ে, উল্টো উনি নিজেও অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা কেউই জানতাম না আসলে কি হচ্ছে, কে এমন করছে?
আমাদের মাঝে প্রতিনিয়ত ঝগড়া হতে থাকে। দুজনের মাঝে দুরত্ব বাড়তে থাকে।
কেনো জানি না, আমার মনে হয়েছিলো এসব আকাশ ইচ্ছা করেই করছে।
রোজ রোজ এসব ঝগড়া বিবাদে আমি একপ্রকার অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিলাম তাই সেদিন বাসা ছেড়ে চলে আসি। তখন বাবার ইচ্ছেতেই আমি তাকে ডিভোর্স দেই। ”
— অধরা এতোক্ষণ মনোযোগ দিয়ে সবকিছু শুনছিলো, ” সব তো বুঝলাম। কিন্তু আশ্বিন..? তার কথা কি বলবেন? ”
— অনুরিমা কিছুক্ষণ চুপ থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে,
” ডিভোর্সের পর দীর্ঘদিন ধরে যখন বাসায় ছিলাম তখন আশেপাশের মানুষেরা নানারকম কথা শুনাতো। অনেকে তো বাজে কথাও বলতো।
তখন বাধ্য হয়ে বাবা আমার আর শাহিনের বিয়ে দেয়।
অবশ্য শাহিন নিজেই আমাদের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে। বাবা তখনই আমাদের বিয়ে দিয়ে কিছুদিনের মাঝেই ইতালি, আমার ভাইয়ের কাছে চলে যায়।
বিয়ের পর আমি চেয়েছিলাম আশ্বিনকে আমাদের সাথে রাখতে কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। আর আমিও চেয়েছিলাম নতুন জীবনে নতুন করে সব কিছু শুরু করে আকাশকে দেখিয়ে দিবো।
জানতাম না আশ্বিনের জীবনটা এভাবে নষ্ট হয়ে যাবে। ভেবেছিলাম আকাশ সবসময় আশ্বিনকে সামলে রাখবে। কিন্তু…। ”
কথাগুলো বলেই অনুরিমা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। অধরা কিছুক্ষণ চুপ করে বসে…
— ” নিজেদের জীবনকে সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতে কিভাবে একটা ছোট্ট জীবনকে নষ্ট করে দিলেন? একটা অবুঝ মনের ইচ্ছাগুলো, স্বপ্নগুলো হঠাত করেই কিভাবে ভেঙে দিলেন? ”
— অনুরিমা উঠে দাঁড়িয়ে, ” অধরা, আমি জানি আমি অন্যায় করেছি আশ্বিনের সাথে। কিন্তু শেষ একটা কথা বলতে চাই, অনেক সময় পরিস্থিতি আমাদের অনেক কাজ করতে বাধ্য করে। যা আমরা কখনোই করতে চাই না।
আমি আসি। ”
কথাগুলো বলেই অনুরিমা চলে যায়। অধরা ভ্রু কুঁচকে উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
🌻রাতে🌻
অধরা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে অনুরিমার কথাগুলো গভীর ভাবে চিন্তা করছে। কোনভাবেই সে কথাগুলো গুছিয়ে মিলাতে পারছে না। কোথাও না কোথাও একটা ঝামেলা তো আছেই।
অধরা ফোন নিয়ে একটা কল দেয়…
— ” হ্যালো জনি ভাইয়া। ”
— ওপাশ থেকে, ” আরে ছোট মনি! কেমন আছো? ”
— ” আমি ভালো আছি ভাইয়া। আমার আপনার একটা হেল্পের খুব দরকার। ”
— ” আরে এভাবে বলো না। শুধু বলো কি করতে হবে? ”
— ” আমার কিছু তথ্য খুঁজে বের করতে হবে। যদিও তথ্যগুলো অনেক আগের। তাও যদি কোনভাবে বের করতে পারো…। ”
— ” আরে সমস্যা নেই। তুমি শুধু বলো কি তথ্য। বাকিটা আমি দেখছি। ”
— ” অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। ”
অধরা ফোনে কথা শেষ করে সামনে তাকাতেই দেখে আশ্বিন তার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে…
— অধরা আমতা আমতা করে, ” এ..এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো? চোখ দিয়ে গিলে ফেলবেন নাকি? ”
অধরার কথাটা শেষ হতেই আশ্বিন অধরাকে এক টানে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে দুহাত চেপে ধরে…
— ” সাহস দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে তাই না? আমার মুখের উপর কথা শুনিয়ে আবার রাগ দেখিয়ে চলে যাওয়া?
এখন কি করবে? কোথায় পালাবে? ”
আশ্বিনের বলা কথাগুলোর কোন হুশ অধরার নেই। সে চোখ বড় বড় করে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে আছে।
আসলে আশ্বিন তার অজান্তেই অধরার অনেকটা কাছে চলে এসেছে। আশ্বিনের নিঃশ্বাস অধরার মুখে এসে পড়ছে। এই মাত্র শাওয়ার করায় আশ্বিন খালি গায়ে, একটা কালো টাওজার পরে আছে। চুল থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। অধরা আশ্বিনকে এভাবে দেখে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। হা করে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।
আশ্বিন কিছুক্ষণ অধরার এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে যখন বুঝতে পারে সে অধরার কতটা সামনে তখন এক ঝটকায় দূরে সরে আসে।
আশ্বিন সরে যেতেই অধরা বড় বড় নিঃশ্বাস নিতে শুরু করে।
— আশ্বিন অন্যদিকে ফিরে কিছুক্ষণ চুপ থেকে, ” আর কখনো যদি আমাকে না জানিয়ে বাসা থেকে বের হও তাহলে আর বাসায় ঢুকতে দিবো না।
মনে থাকে যেন? ”
কথাটা বলে আশ্বিন রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। অধরা তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা ভেংচি কেটে চিৎকার করে…
— ” কেনো দিবেন না? এটা এখন আমারও বাসা। আমি এই বাসার বউ হই, বউউউউ। মিসেস আশ্বিন চৌধুরী।
ভালোবেসে না বিয়ে হয়েছে আমাদের? ”
আশ্বিন যাওয়ার সময় অধরার শেষ কথাটা শুনে বাঁকা হাসি দিয়ে দাদির রুমে চলে আসে।
#আমি_তোমার_গল্প_হবো🍁
লেখিকা- মাহিয়া তাহসীন মেরিন
পর্ব:::০৯
সকালে…
অধরা হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আশ্বিন এক ধ্যানে অধরার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। পিচ্চিটা বড় হয়ে গেলেও এখনো সেই আগের মতোই আছে।
হঠাত মনে পড়ে গেলো সেই দিনটার কথা…
🌻অতীতে🌻
আশ্বিন দাদিকে নিয়ে একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে আসে।
আশেপাশের কেউ তেমন পরিচিত না হওয়ায় আশ্বিন চুপচাপ এক জায়গায় বসে ছিলো। হঠাত পাঁচ ছয় বছর বয়সী একটা পিচ্চি মেয়ে তার সামনে এসে দাঁড়ায়।
আশ্বিন মুখ তুলে তাকিয়ে দেখে, গুলুমলু একটা পিচ্চি মেয়ে, একটা লাল জামা পড়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
মেয়েটার একহাত কোমরে গুজে অন্যহাতে চকলেট খেতে খেতে আশ্বিনের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।
— ” এই ছেলে, তুমি এখানে একা একা বসে আছো কেনো? ”
আশ্বিন ভ্রু কুঁচকে একবার মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নেয়। তা দেখে পিচ্চিটা আশ্বিনের আরো সামনে এসে,
— ” তুমি কি আমার কথা শুনতে পারছো না?
কেউ কি তোমাকে বকে দিয়েছে? নাকি কেউ তোমার সাথে খেলছে না? কোনটা? আমাকে বলো। ”
— আশ্বিন ভ্রু কুঁচকে, ” তোমাকে বললে কি হবে? ”
— পিচ্চি চকলেট খেতে খেতে আশ্বিনের পাশে এসে বসে, ” আমাকে বলো তোমাকে কে বকে দিয়েছে। আমি গিয়ে এখনই তার চুল টেনে দিবো, হুম। ”
পিচ্চি কথাটা বলতেই কেউ একজন এসে তাদের সামনে দাঁড়িয়ে,
— ” অধরা বোন, তুই এখানে কি করছিস? ”
— অধরা অর্ণবের দিকে তাকিয়ে, ” ভাইয়া দেখো, এই ছেলেটার মন খারাপ। আমাকে বলছে না কেনো তার মন খারাপ। ”
— অর্ণব আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে, ” আশ্বিন, কি হয়েছে তোর? এখানে চুপচাপ বসে আছিস কেনো? চল আমার সাথে। ”
আশ্বিন অধরার দিকে একবার তাকিয়ে উঠে যেতেই অধরাও উঠে দৌড়ে এসে তাদের পিছু পিছু হাটতে শুরু করে।
পুরোটা অনুষ্ঠান অধরা আশ্বিন আর অর্ণবের পিছু পিছু ঘুরঘুর করে। কিন্তু আশ্বিন একবারে জন্যও অধরার দিকে ফিরে তাকায় না। তাই অধরা গাল ফুলিয়ে একটা চেয়ারে বসে পড়ে।
— অধরার খালামনি তার পাশে বসে, ” কি হয়েছে আমার পিচ্চি বুড়িটার? ”
— অধরা গালে হাত দিয়ে, ” আমি একটা কথা ভাবছি…। ”
— ” ওরে বাবা, তাই নাকি? আমিও একটু শুনি আমার বুড়িটা কি নিয়ে এতো ভাবছে। ”
— ” আচ্ছা খালামনি, বিয়ে মানে কি? ”
— খালামনি অধরাকে কোলে নিয়ে, ” বিয়ে মানে?
বিয়ে মানে হলো দুইটা মনের মিলন, একটা পবিত্র বন্ধন। যেখানে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে সারাজীবন একে অপরের পরিপূরক হয়ে থাকে। একে অপরকে অনেক ভালোবাসে। ”
— অধরা খালামনির দিকে তাকিয়ে, ” তাহলে আমার বিয়ে কবে হবে? কার সাথে হবে? ”
— কথাটা শুনে খালামনি হাসতে হাসতে, ” তা তো আমি জানি না।
আচ্ছা তুমি থাকো আমি একটু আসছি। ”
কথাটা বলেই খালামনি চলে যেতেই অধরা কিছু একটা ভেবে ধীরে ধীরে উঠে আশ্বিনের সামনে আসে। আশ্বিন তখন অর্ণবের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলো। হঠাত অধরা তার সামনে এসে,
— ” এই ছেলে…! হ্যা, তোমাকেই বলছি। তুমি কি আমার বর হবে? আমি বড় হয়ে কিন্তু তোমাকেই বিয়ে করবো। ”
অধরার কথা শুনে আশ্বিন আর অর্ণবের চোখ বড় বড় হয়ে যায়। অধরা স্বাভাবিক ভাবেই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
এক পর্যায়ে আশ্বিন আর অর্ণব একসাথে হেসে ওঠে। অধরা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে,
— ” তোমরা এভাবে হাসছো কেনো? আমি সত্যি সত্যি বলেছি কিন্তু। ”
আশ্বিন আর অর্ণব একসাথে হেসে যাচ্ছে। এদিকে তাদের এমন ভাবে হাসতে দেখে অধরা ঠোঁট উল্টে কান্না করতে করতে সেখান থেকে চলে যায়। অধরাকে এভাবে কান্না করতে দেখে আশ্বিনের কিছুটা খারাপ লাগলেও সে আর কিছুই বলেনি।
সেদিনের পর থেকে আর কখনো অধরার সাথে আশ্বিনের দেখা না হলেও অর্ণবের ফোনে অধরার ছবি অনেক দেখেছে আশ্বিন।
কে জানতো পিচ্চিটার কথা একদিন সত্যি হবে, আশ্বিনের সাথে অধরার বিয়ে হবে।
অধরার হয়তো সেই দিনের কথাগুলো এখন আর মনে নেই।
🌻বর্তমানে🌻
আশ্বিন এতোক্ষণ এক ধ্যানে অধরার দিকে তাকিয়ে কথাগুলো ভাবছিলো।
হঠাত একটা কল আসায় আশ্বিন ফোন রিসিভ করে একটু দূরে যেতেই অধরা ঘুম ঘুম চোখে উঠে বসে।
এদিকে, আশ্বিন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একটা কথা শুনেই দৌড়ে নিচে নেমে আসে। আশ্বিনকে এভাবে নিচে যেতে দেখে অধরাও দৌড়ে তার পিছু নেয়।
— দাদি আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে, ” কি হয়েছে দাদুভাই? এভাবে অস্থির হয়ে আছিস কেনো? ”
আশ্বিন দৌড়ে নিচে নেমে টিভি অন করতেই দেখে পুরো নিউজ চ্যানেল জুড়ে দেখানো হচ্ছে,
” আশ্বিন চৌধুরীর ফ্যাক্টরীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। ”
নিউজ দেখে অধরা দাদি আর আশ্বিন স্তব্ধ হয়ে যায়।
— দাদি কাপা কাপা কণ্ঠে, ” এসব কি বলছে আশ্বিন? আমাদের ফ্যাক্টরী…। এসব কিভাবে..? ”
— আশ্বিন কোনমতে নিজেকে সামলে নিয়ে, ” দাদি প্লিজ তুমি এতো টেনশন করো না। আমি বিষয়টা দেখছি। তুমি শান্ত হও। সব ঠিক হয়ে যাবে।
অধরা দাদিকে দেখে রাখো। আমি আসছি। ”
কথাটা বলেই আশ্বিন দ্রুত সেখান থেকে চলে যায়। এদিকে অধরা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
🌻এদিকে🌻
অনুরিমা টিভিতে নিউজটা দেখেই স্তব্ধ হয়ে যায়। আর শাহিন আর সাহিল নিউজ দেখে মুচকি হাসি দেয়।
— অনুরিমা সাহিলের দিকে তাকিয়ে, ” সাহিল… এসব কি? এখানে কোনভাবে তোমার হাত নেই তো? ”
— সাহিল ড্যাম কেয়ার ভাব নিয়ে, ” মম.. আমি কি করেছি? তোমার কেনো মনে হচ্ছে এসব আমি করেছি? ”
— অনুরিমা অস্থির হয়ে, ” সাহিল…। ”
— শাহিন তাকে থামিয়ে দিয়ে, ” অনুরিমা, তুমি কিভাবে সাহিলকে এর জন্য দায়ী ভাবতে পারো?
তোমার ছেলে নিজের ফ্যাক্টরী সামলাতে পারেনি এখানে আমার ছেলের কি দোষ?
অবশ্য এটাই হওয়ার ছিলো, অল্প বয়সে বেশি নাম ডাক হয়ে গেলে এমনই হয়। ”
কথাটা বলে শাহিন আর সাহিল সেখান থেকে চলে যায়। অনুরিমা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে।
— ” কোন সন্দেহ নেই সাহিল অধরাকে পাওয়ার জন্যই আমার আশ্বিনের সাথে এমনটা করেছে।
আমি এখন কি করবো? সাহিল কিভাবে এমনটা করলো…। ”
🌻🌻
অধরা আর দাদি পাশাপাশি বসে আছে। দাদি অনেক বেশি টেনশন করায় একটু অসুস্থ হয়ে গিয়েছে। অধরা কোনভাবে দাদিকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছে।
অধরা কিছু একটা ভেবে জনিকে কল দেয়। কল রিসিভ হতেই…
— ” হ্যালো জনি ভাইয়া। ”
— ” হ্যা ছোট মনি। কি খবর?
নিউজে এসব কি দেখছি? ”
— ” হুম। ভাইয়া আমার কেনো যেনো মনে হচ্ছে এই অগ্নিকাণ্ড পূর্ব পরিকল্পিত। যেভাবেই হোক খোঁজ খবর নিয়ে আসল অপরাধীর নাম জানতে হবে ভাইয়া।
আপনি এখনি খোঁজ নেওয়া শুরু করুন। তবে, বিষয়টা যেনো গোপন থাকে। ”
— ” ঠিক আছে। আমি দেখছি কী করা যায়।
আর আমার কিছু কথা ছিলো ছোট মনি। ”
— ” জি বলুন…। ”
— ” আমার মনে হচ্ছে আজকের এই অগ্নিকাণ্ডে কোনো না কোনো ভাবে শাহিন হাসাদের হাত আছে। ”
— ” শাহিন হাসাদের? কিন্তু উনি এমন কেনো করবেন? ”
— ” ছোট মনি, হতে পারে এটা পূর্ব পরিকল্পিত কোন ষড়যন্ত্র। আমার মনে হচ্ছে শাহিন কোন না কোন ভাবে আশ্বিনকে বড় ধরনের বিপদে ফেলতে চাইছে।
কারণ আশ্বিন দিন দিন বিজনেসে উনার সমতুল্য হয়ে যাচ্ছে। হয়তো এই কারণেই…। ”
— ” কথাটা একদম অস্বীকার করার মতো না। আপনি এই বিষয়ে আরো খোঁজ নিতে শুরু করুন। আমি কোনভাবেই শাহিনের মাধ্যমে আশ্বিনকে আর কষ্ট পেতে দিবো না। ”
— ” ঠিক আছে ছোট মনি। ”
কথাটা বলেই অধরা ফোন কেটে দেয়। গভীর ভাবে কিছু একটা ভেবে…
— ” নতুন করে কি করতে চাইছেন উনি? আশ্বিনের সাথে গেইম খেলতে চাইছে? ওকে ফাইন, আমিও দেখিয়ে দিবো, অধরা ওহি কি করতে পারে। ”
—চলবে❤