আমি তোমার গল্প হবো পর্ব -০৬+৭

#আমি_তোমার_গল্প_হবো🍁
লেখিকা- মাহিয়া তাহসীন মেরিন
পর্ব::০৬

কথাটা বলেই আশ্বিন সেখান থেকে বেরিয়ে যায়। অধরাও আশ্বিনকে ডাকতে ডাকতে তার পিছু নেয়।

এদিকে, আশ্বিনের দাদি অনুরিমার দিকে এক নজর তাকিয়ে মাথা নিচু করে বেরিয়ে আসে।

🌻🌻

আশ্বিন হুড়মুড় করে বাসায় প্রবেশ করেই নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়। অধরা দৌড়ে এসে দরজার ধাক্কাতে শুরু করে।

— ” আশ্বিন দরজা খুলুন। ”

এদিকে আশ্বিন রাগে রুমের সবকিছু ভাঙচুর শুরু করে। হাতের কাছে যা আছে সব ভাঙতে শুরু করে আশ্বিন।
অধরা রুমের ভেতর এতো শব্দ শুনে,

— ” আশ্বিন, কি করছেন আপনি? দরজা খুলুন বলছি। আমাকে ভেতরে আসতে দিন। ”

— আশ্বিন রাগে দেয়ালে ঘুষি দিয়ে চিৎকার করে,
” চলে যাওওও। তুমিও চলে যাও, তাদের কাছে। কাউকে চাই না আমি।
আমার কাউকে চাই না,, চলে যাও এখান থেকে। ”

— অধরার কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে, ” আশ্বিন প্লিজ দরজা খুলুন। ”

অধরার এতো অনুরোধের পরও আশ্বিনের দরজা খোলার কোন লক্ষণ নেই, উল্টো ভেতর থেকে আরো বেশি ভাঙচুরের শব্দ হচ্ছে।

— অধরা কান্না করতে করতে, ” আমি তো এমনটা চাইনি।
ভেবেছিলাম পার্টিতে আপনার মায়ের সাথে আপনার দেখা হবে, হয়তো এভাবে একদিন ভুল বোঝাবুঝি শেষ হয়েও যেতে পারে। ”

— আশ্বিন চিৎকার করে, ” ওই মহিলা আমার মা নাহহ। দাদি ছাড়া কেউ নেই আমার।
চলে যাও, তুমিও চলে যাও। কাউকে লাগবে না আমার। ”

— অধরা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে শান্ত কণ্ঠে,
” চলে যাওয়ার জন্য তো আমি এখানে আসিনি,
ছেড়ে যাওয়ার জন্য এই হাত তো আমি ধরিনি আশ্বিন। ”

অধরার কথাটা বলার পর ধীরে ধীরে ভেতর থেকে শব্দ বন্ধ হয়ে যায়।
কিছুক্ষণ পর আশ্বিন দরজা খুলে দিতেই অধরা ধীরে ধীরে রুমে ঢুকে দেখে সব কিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে মেঝেতে পড়ে আছে।

আশ্বিন সোফার উপর হেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করে আছে।
অধরা ধীর পায়ে আশ্বিনের সামনে গিয়ে দেখে আশ্বিনের হাত কেটে রক্ত পড়ছে। সে দ্রুত আশ্বিনের পাশে বসে তার হাতে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে…

— ” এমন কেনো করছেন আশ্বিন?
জানি যা হয়েছে তা ঠিক হয়নি। কিন্তু তাই বলে এভাবে নিজেকে কষ্ট দিয়ে কি লাভ?
আমরা আছি তো আপনার পাশে। ”

— আশ্বিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে হুট করে অধরাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ভাঙা কণ্ঠে, ” এমন তো হওয়ার কথা ছিল না।
আমার সাথেই কেনো এমন হলো? ”

আশ্বিনের কথাটা শুনে অধরা চুপ হয়ে যায়। এই মুহূর্তে তার কথা বলার ভাষা নেই। আশ্বিনের কষ্টে সমবেদনা প্রকাশ করার ভাষা তার নেই।

বেশ কিছুক্ষণ পর আশ্বিন অধরাকে ছেড়ে দিয়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে যায়। অধরা এখনও আগের মতোই চুপচাপ বসে গভীর ভাবে কিছু একটা ভাবছে।

আশ্বিন কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক ভাবে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে সোজা খাটের উপর শুয়ে,

— ” আমি অনেক টায়ার্ড। প্লিজ লাইট অফ করে দিও। গুড নাইট। ”

কথাটা বলেই আশ্বিন অপর দিকে ফিরে শুয়ে পড়ে। অধরা কিছুক্ষণ চুপ করে বসে পড়ে ধীরে ধীরে উঠে লাইট অফ করে রুম থেকে বেরিয়ে দাদির রুমে চলে আসে।

🌻🌻

দাদি এতোক্ষণ চুপ করে খাটের এক কোনে বসে ছিলো। অধরা ধীর পায়ে হেঁটে দাদির পাশে বসে,

— ” দাদি বুড়ি…। ”

— দাদি একদম শান্ত কণ্ঠে, ” আশ্বিন ঘুমিয়ে পড়েছে? ”

— ” হ্যা। তুমি এখনো ঘুমাওনি? অনেক রাত হয়ে গিয়েছে। ”

— দাদি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, ” আমার আবার ঘুম..।
বলেছিলাম তোকে, আমাদের পার্টিতে না যাওয়াই ভালো। এখন না জানি আমার বাচ্চাটা, কতোটা কষ্ট পাচ্ছে। ”

অধরা দাদির কথা শুনে মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছে।

— ” একটা পাঁচ বছরের বাচ্চার জীবন হঠাত করেই কিভাবে বদলে গেল।

রোজ রোজ বাবা মায়ের ঝগড়া বিবাদ দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখতো। আশেপাশের মানুষেরা তাদের এই ঝগড়া নিয়ে কতো উপহাস করে বেড়াতো। আবার কেউ কেউ তো আশ্বিনকে দেখলে আফসোসও করতো। হুহ!
হাসিখুশি ছেলেটা ধীরে ধীরে শান্তশিষ্ট হয়ে গেলো। চুপচাপ এক ঘরে বসে থাকতো।

হঠাত একদিন অনুরিমা সবকিছু গোছগাছ করে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়।
আমার ছোট্ট অবুঝ ছেলেটা মায়ের শাড়ির আঁচল ধরে কাঁদতে কাঁদতে দরজা পর্যন্ত যাচ্ছিল আর বলছিলো,, মা আমাকে রেখে কোথায় যাচ্ছো? কখন ফিরে আসবে? আমাকেও সাথে নিয়ে যাও।

ছোট্ট আশ্বিনের সেই কথাগুলো মনে হলে এখনো আমার হৃদয় কেপে ওঠে।
বাচ্চাটা কি জানতো তার মা আর কখনো তাকে কোলে তুলে ভালোবাসবে না। মা থাকতেও আর কখনো তাকে মা ডাকা হবে না।

আকাশকে কতো বললাম অনুরিমাকে যেতে নিষেধ করতে, কিন্তু নাহ।
ভেবেছিলাম তাদের মধ্যে ছোট খাটো ঝামেলা হয়েছে তাই দুদিন পর অনুরিমাকে নিয়ে আসতে তাদের বাসায় যাই। অবশ্য যাওয়ার আর একটা কারণ ছিলো, আশ্বিন মায়ের জন্য পাগলামি করছিলো। কিন্তু সেখানে গিয়ে জানতে পারি, অনুরিমা আর আকাশের ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে, আর আমি কিছুই জানিনা।
বাচ্চা ছেলেটাও সেদিন অনুরিমা নিজের কাছে রাখেনি,, আমার সাথে কাঁদতে কাঁদতে বাসায় ফিরে আসে।

আর কিছুদিন পর জানতে পারি অনুরিমার বিয়ে শাহিন হাসাদের সাথে। সেদিনই আকাশ রাগ করে আমাদের রেখে লন্ডন চলে যায়। আর কখনো ফিরে আসেনি।

জানিস? আমার আশ্বিনের ভালোবাসার অনেক অভাব।
ছোটবেলায় প্রতিদিন রাতে যখন আমি তার মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে ঘুম পারিয়ে দিতাম। তখন ছেলেটা হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে বলতো, দাদি তুমি দেখো কাল সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখবো মা আমার পাশে বসে আছে।

প্রতিটা সকালেই সে মন খারাপ করে রুম থেকে বেরিয়ে আসতো, কারণ তার মা আর আসেনি।
দরজায় বেল বেজে উঠলেই খুশি হয়ে দৌড়ে আসতো, কিন্তু তার মা কখনো আসেনি।

আমি জানি না, অনুরিমা এমন স্বার্থপর কিভাবে হয়ে গেলো? যেই অনুরিমা আশ্বিনকে ছাড়া এক মূহুর্ত থাকতো না, সে কিভাবে আশ্বিনকে একা করে দিলো? হয়তো এটাই ছিলো নিয়তি।

যেদিন টিভিতে দেখেছিলো শাহিন টপ বিজনেস ম্যান হয়েছে। আর অনুরিমা আর শাহিনকে একসাথে দেখানো হচ্ছে।
আশ্বিনের অবুঝ মন তখন থেকেই এটা ভেবে নিয়েছে, সে যদি টপ বিজনেস ম্যান হয়, তাহলেই অনুরিমা তার কাছে ফিরে আসবে।
দেখো এখন কিভাবে টপ বিজনেস ম্যান হওয়ার চেষ্টা করছে।

একটা বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যতটা সহজ, সেই বন্ধন সারাজীবন আগলে রাখা ততটাই কঠিন। ডিভোর্সের সময় কোন বাবা মা হয়তো তাদের সন্তানদের কথা একবারও ভেবে দেখে না। তাদের আর কখনো বাবা মাকে নিয়ে স্বাভাবিক জীবনের স্বপ্ন দেখা হয়না।”

কথাগুলো বলে দাদি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। অধরা এতোক্ষণ ধরে দাদির কথাগুলো শুনছিলো। মনের অজান্তেই তার চোখ ভিজে গিয়েছে,, মানুষকে দেখলে কখনও বোঝা যায়না তার মনের ক্ষত গুলো কতো গভীর।

— অধরা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, ” দাদি অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়ো। ”

কথাটা বলেই দাদিকে শুইয়ে দিয়ে গায়ে চাদর দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসে।

নিজের রুমে প্রবেশ করে দেখে আশ্বিন ঘুমিয়ে পড়েছে। অধরা ধীরে ধীরে আশ্বিনের পাশে বসে আলতো করে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে,

— ” আশ্বিন, তুমি একা না।
আমি আছি তোমার পাশে।
আমি সব সময়ই তোমার পাশে থাকবো। তোমার রঙহীন আকাশের রংধনু হয়ে আমি আসবো।
তোমার পুরোনো সকল ক্ষতের ঔষধ হবো।
তোমার অপূর্ণতায় আমি পূর্ণ হবো।
কারণ আজ থেকে,
আমি_তোমার_গল্প_হবো🍁। ”

অধরা কথাগুলো বলে আশ্বিনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে।

🌻এদিকে🌻

অনুরিমা বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাতের আকাশের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আজ জীবনের প্রথম আশ্বিনের গায়ে হাত তুলেছে সে। সেই মূহুর্তে আশ্বিনের চোখের চাপা কষ্ট সে দেখেছে।

— অনুরিমা চোখের পানি ফেলে, ” মা হিসেবে তো আমি ব্যার্থ। আর আজ তো…।
কখনো বুঝিনি আমার একটা ভুল আমার সারাটা জীবন শেষ করে দিবে।
জীবনের গল্পটা তো এমন না হলেও পারতো। ভাগ্য কেনো আমাদের সাথেই এমন হলো। ”

কথাগুলো ভাবতে ভাবতে নিরবে চোখের পানি ফেলে অনুরিমা।
#আমি_তোমার_গল্প_হবো🍁
লেখিকা- মাহিয়া তাহসীন মেরিন
পর্ব:::০৭

🌻সকালে🌻

শাহিন হাসাদ খাবারের টেবিলে বসে আছে। অনুরিমা তাদের নাস্তা সার্ভ করে দিচ্ছে। তখন সাহিল শার্টের হাতা ফোন্ড করতে করতে সিঁড়ি দিয়ে নেমে শাহিনের পাশে বসে,

— ” গুড মর্নিং ড্যাড। গুড মর্নিং মম। ”

— শাহিন মুচকি হেসে, ” গুড মর্নিং মাই সান। কি ব্যাপার? আজ কেমন খুশি খুশি মনে হচ্ছে। ”

— সাহিল বাঁকা হেসে, ” ইয়েস ড্যাড।
কাল রাত থেকে একজনের কথা ভেবে একদমই ঘুমাতে পারিনি।
কেমন যেন, প্রথম দেখায়ই তাকে আমার ভালো লেগে গিয়েছে। ”

— অনুরিমা খুশি হয়ে, ” এটা তো খুব ভালো কথা। আমিও ভাবছিলাম তোর বিয়ে নিয়ে। বলো তো, মেয়েটা কে? নাম কি? ”

— সাহিল একটা হাসি দিয়ে, ” নাম শুনলে তো তোমরা চমকে উঠবে। ”

— শাহিন কফির মগে চুমুক দিয়ে, ” আগে তো বলো মেয়েটা কে? ”

— ” অমিত রহমানের মেয়ে অধরা ওহি। ”

সাহিলের কথা শুনে অনুরিমার মুখ মূহুর্তেই কালো হয়ে যায়, অবাক হয়ে সাহিলের দিকে তাকিয়ে,

— ” কিন্তু, অধরা তো আশ্বিনের…। ”

— সাহিল অনুরিমাকে থামিয়ে দিয়ে, ” উফ মম। তো কি হয়েছে?
আশ্বিন কোনভাবেই অধরার হাসবেন্ড হওয়ার যোগ্য না। তাই ভাবছি, অধরাকে আমি নিজের করে নিবো। কি বলো ড্যাড? ”

— অনুরিমা জোর দিয়ে, ” সাহিল আশ্বিন তোমার ভাই হয়। ছেলেটার সাথে এমন করো না। আর অধরাও এমন মেয়ে না যে..। ”

— শাহিন খাওয়া থামিয়ে, ” অনু, মনে হচ্ছে আশ্বিনকে নিয়ে একটু বেশিই ভাবছো। যে তোমাকে মা হিসেবে মনেই করে না তার জন্য এতো কিসের মায়া।
আর, অধরা যদি আমার ছেলেকে পছন্দ করে তাহলে ক্ষতি কিসের? সাহিল, তোমার পছন্দই আমার ইচ্ছা। ”

— ” দ্যাটস লাইক মাই ড্যাড। লাভ ইউ সো মাচ। বাই দ্য ওয়ে, চলো আমিও তোমার সাথে বের হবো। ”

কথাটা বলেই সাহিল আর শাহিন একসাথে চলে যায়। অনুরিমা এক ধ্যানে সেখানে দাঁড়িয়ে আছে।

— মনে মনে, ” আমি যে ভুল করেছি অধরাকে এই ভুল করতে দেওয়া যাবে না।
আশ্বিনের সাথে আমি অন্যায় করেছি, আমি জানি অধরা কখনোই এমন করবে না। ”

🌻এদিকে🌻

অধরা আর দাদি খাওয়ার টেবিলে বসে আশ্বিনের অপেক্ষা করছে। অধরা এক নজর তাকিয়ে দেখে দাদি মন খারাপ করে চুপচাপ বসে আছে। কিছুক্ষণ পর আশ্বিন রেডি হয়ে নিচে নেমে…

— ” দাদি আমাকে এখনি বেরুতে হবে। একটা জরুরী মিটিং আছে। আমি আসছি। ”

কথাটা বলে চলে যেতে নিতেই অধরা এক চিৎকার দিয়ে দৌড়ে আশ্বিনে সামনে এসে,

— ” না খেয়ে চলে যাচ্ছেন কেনো? আগে চলুন আমার সাথে। ”

— আশ্বিন শান্ত কণ্ঠে, ” অধরা আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। আমি পরে কিছু খেয়ে নিবো। ”

কে শোনে কার কথা, আধরা জোর করে আশ্বিনে চেয়ারে বসিয়ে নিজে আশ্বিনের কোলে বসে পড়ে।

— আশ্বিন অবাক হয়ে, ” এটা কি হচ্ছে? দাদির সামনে এসব কি ধরনের অসভ্যতা? ”

— ” কি করেছি আমি? আমি জানি আপনি বারবার উঠে যাবেন।
খাওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত যেন আপনি যেতে না পারেন তাই আমি এভাবে বসেছি। কি বলো দাদি? ”

— দাদি মুচকি হেসে, ” খুব ভালো করেছিস পিচ্চি। এই না হলে আমার আশ্বিনের বউ। ”

অধরা দাদির দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে নিজ হাতে আশ্বিনকে খাইয়ে দেয়।
অধরার কাজে আশ্বিন প্রথমে অবাক হলেও পরে নিজেকে সামলে নেয়। এদিকে দাদি তাদের একসাথে দেখে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।

🌻🌻

অধরা কলেজে বসে আছে আর তিশা তাকে এটা সেটা বলেই যাচ্ছে। অধরা কিছু একটা ভেবে..

— ” এই তিশা জানিস? আমার মাথায় না একটা বুদ্ধি এসেছে। ”

— তিশা চোখ ছোট করে তাকিয়ে, ” আবার কি ঝামেলা করতে চাচ্ছিস? দেখ আমি কিন্তু তোর সাথে নেই। একদম না। ”

— ” আরে ভাগ। তোর সাপোর্টের কোন প্রয়োজনও নেই আমার। হুহহ। ”

— তিশা একটা ভেংচি কেটে, ” তো, কি করবি তুই? ”

— অধরা বাঁকা হাসি দিয়ে, ” দাঁড়া দেখাচ্ছি তোকে। ”

কথাটা বলেই অধরা ফোন নিয়ে আশ্বিনকে কল দেয়। দুইবার রিং বেজে ফোন রিসিভ হতেই…

— ” হ্যালো আশ্বিন…। ”

— ওপাশ থেকে, ” হ্যালো ম্যাম। আমি স্যারের পিএ। আশ্বিন স্যার মারিয়া ম্যাডামের সাথে মিটিয়ে আছে। ”

— অধরা অবাক হয়ে, ” কিহহ? কার সাথে আছে? ”

— ” মারিয়া ম্যাম। ”

কথাটা শুনে অধরা চুপ হয়ে ফোন কেটে দেয়। তিশা ভ্রু কুঁচকে অধরার দিকে তাকিয়ে,

— ” কি হলো? তোর চোখ এমন রসগোল্লার মতো বড় হয়ে গেলো কেনো? ”

— ” মারিয়ার বাচ্চা…। ”

— তিশা অবাক হয়ে, ” কার বাচ্চা? ”

— ” শাকচুন্নি মারিয়া। জামাই চোর। আমার আশ্বিনকে চুরি করতে চায়। কিন্তু নাহহহহ (কথাটা বলেই এক লাফে দাঁড়িয়ে)। আমি বেঁচে থাকতে আমার বরকে চুরি হতে দিবো না।
কখনোই নাহহহহ। ”

কথাটা বলেই অধরা ব্যাগ কাঁধে নিয়ে এক দৌড়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে যায়। তিশা হা করে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে…

— ” জামাই চোর? শাকচুন্নি? এসব কি বললো অধরা? ”

🌻এদিকে….

অধরা এক দৌড়ে আশ্বিনের অফিসে এসে সোজা আশ্বিনের রুমে ঢুকে পড়ে।
মারিয়া এতোক্ষণ আশ্বিনের পাশে বসে বকবক করছিলো আর আশ্বিন বিরক্ত ভাব নিয়ে ল্যাপটপে কাজ করতে করতে মারিয়ার সাথে কথা বলছিলো।

— অধরা একনজর তাদের দেখে দৌড়ে আশ্বিনের সামনে গিয়ে, ” আমি এসেছিইইইই। ”

হঠাত চিৎকার শুনে আশ্বিন চমকে সামনে তাকিয়ে দেখে অধরা। আশ্বিন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে,

— ” তুমি এখানে? তোমার না এখন কলেজে থাকার কথা? ”

— অধরা একটা চোখের ইশারা দিয়ে মারিয়ার দিকে তাকিয়ে, ” আমি তো তোমাকে দেখতেই এসেছি। তোমাকে না দেখা আমার এক মুহূর্ত চলেই না। তাই…। ”

— আশ্বিন অধরাকে থামিয়ে, ” আচ্ছা, থামো থামো। বুঝেছি আমি…। ”

মারিয়া এতোক্ষণ রাগী দৃষ্টিতে অধরার দিকে তাকিয়ে ছিলো। শেষে রাগে উঠে দাঁড়িয়ে,

— ” আশ্বিন, আমি আজ আসি। পরে আবার আসবো। বাই। ”

কথাটা বলেই মারিয়া রাগে গজগজ করতে করতে চলে যায়। অধরা একটা ভেংচি কেটে…

— মনে মনে, ” তোকে আর আসতে হবে নারে শাকচুন্নি। আমার বরকে আমি নিজেই দেখে রাখবো। হুহহহ ”

মারিয়া রুম থেকে বেরিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে,

— ” এই অধরা জাস্ট অসহ্য। একে তো আশ্বিন আর আমার মাঝে চলে এসেছে আবার নিজের অধিপতি বিস্তার করতে চাইছে।
নাহ, এভাবে চলতে দেওয়া যাবে না, কিছু একটা তো করতেই হবে। ”

আশ্বিন অধরার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে,
— ” হঠাত কি মনে করে এখানে এসেছো পিচ্চি? পড়া ফাঁকি দিয়ে এসেছো তাই না?
এখনি বই নিয়ে পড়তে বসো। কুইক। ”

আশ্বিনের ধমক শুনে অধরা চোখ ছোট করে একবার আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে একটা ভেংচি কাটে বই নেয়।

🌻রাতে🌻

সকাল থেকেই অনুরিমা আশ্বিনকে নিয়ে ভাবছে। সাহিল যা বলে সে তা করেই ছাড়বে আর যদি অধরাও তার মতো ভুল করে তাহলে আশ্বিনের কি হবে?

— ” ছেলেটা জীবনে অনেক দিন পর আলোর সন্ধান পেলো। আমি পারবো না তার জীবন আবার অন্ধকারে ফেলে দিতে। কিছু একটা তো করতেই হবে। ”

কথাটা বলেই অনুরিমা ধীর পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে সাহিলের রুমের সামনে আসতেই কিছু কথা শুনতে পায়।

— সাহিল ফোন নিয়ে, ” হ্যালো মারিয়া ড্যালিং, কেমন আছো? ”

— ওপাশ থেকে, ” আরে সাহিল! আমি ভালো আছি। ভুলেই তো গিয়েছো আমাকে।কাল পার্টিতেও কথা বলোনি। আফটার অল আমরা বেস্ট ফ্রেন্ড। ”

— ” আরে বলিস না…কাল পার্টিতে এক সুন্দরীকে দেখে আমি তো পুরো ফিদা হয়ে গিয়েছি। ”

— ” কি বলিস? কে মেয়েটা? নাম জানতে পেরেছিস? ”

— ” অবশ্যই। নাম কেনো… পুরো ডিটেইলস জানি।
মেয়েটা আর কেউ না আশ্বিনের অধরা। ”

— ” হোয়াট! অধরা? তুই কি পাগল হয়ে গিয়েছিস? ”

— ” ইয়েস, অনলি ফর হার। আমি অধরাকে চাই, যেভাবেই হোক তাকে চাই। আর আমি জানি তুইও আশ্বিনকে লাইক করিস। তাই আমার তোর হেল্প দরকার। ”

— ” বল কি করতে হবে আমাকে। আমি রাজি আছি। ”

— ” কাল দেখা করে তোকে বলবো। এখন রাখছি। বাই। ”

কথাটা বলেই সাহিল ফোন রেখে একটা ভিলেন হাসি দেয়।

এদিকে, দূর থেকে অনুরিমা তাদের কথা শুনে চিন্তায় পড়ে যায়।

—চলবে❤
—চলবে💜

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here