#আমি_তোমার_গল্প_হবো🍁
লেখিকা- মাহিয়া তাহসীন মেরিন
পর্ব:::১৯
আশ্বিন অফিসে প্রবেশ করার কিছুক্ষণ পর অর্ণব চলে আসে। আশ্বিন ইশারায় অর্ণবকে তার পাশে বসতে বলে।
— ” কি হয়েছে আশ্বিন? হঠাত এভাবে আসতে বললি। ”
— ” তুই তো জানিস অধরা আমাকে লুকিয়ে কিসব করছে। কে বলেছিলো তাকে আমার পাস্ট খুঁজে বেড়াতে?
আর তুইও সবটা জানার পর আমাকে একবারও বললি না। ”
— ” আমি কি করবো, বল? তুই জানিস না অধরা কতোটা জেদী। সে যখন একবার ঠিক করেছে তোর পাস্ট সম্পর্কে সব জানবে তখন হাজার যাই হোক না কেনো, অধরা পিছু পা হবে না।
আর আমি বিষয়টা আগে জানতাম না, সেদিন জনিকে অধরার সাথে ফোনে কথা বলতে শুনে জনিকে জোর করি তখন সেই সবকিছু বলে। ”
— আশ্বিন কপালে হাত বুলিয়ে, ” এট লিস্ট তোর নিজে বিষয়টা সামলানো উচিত ছিল। তাহলে হয়তো… ”
— অর্ণব চিন্তিত হয়ে, ” কি হয়েছে? আশ্বিন আমাকে সবকিছু পরিষ্কার করে বল। ”
আশ্বিন একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে অর্ণবকে একে একে সবটা খুলে বলে। অর্ণব সবটা শুনে স্তব্ধ হয়ে যায়।
— অর্ণব অবাক হয়ে, ” এর মানে কি? আকাশ আঙ্কেল…? ”
আশ্বিন অর্ণবের কথাটা শুনে চুপ হয়ে মাথায় হাত রেখে বসে আছে। অর্ণব কিছু একটা ভেবে,
— ” এখন কি করবি? হতেও তো পারে অনুরিমা আন্টি সত্যি কথা বলছেন। ”
— ” এটা বিশ্বাস করার মতো না অর্ণব। উনি চাইলে অধরাকে মিথ্যা কাহিনী শুনিয়ে মন ভোলাতে পারে কিন্তু আমাকে না।
অনুরিমা শুধু মাত্র উনার স্বার্থে কাজ করে। তিনি অধরাকে বলেছেন না, ড্যাডের কথা শুনে তিনি তার ভুল বুঝতে পেরেছেন আর ড্যাডের সাথে চলেও আসতে চেয়েছিলেন। এটা একদম মিথ্যে কথা। কারণ তিনি কখনোই আমার বাবাকে ভালোবাসেনি, আর আমাকে নিজের সন্তান বলে মানেওনি।
অনুরিমার কাছে সবচেয়ে ইমপটেন্ট হলো তার বিলাস বহুল জীবন, তার সোসাইটি আর তার ফ্রেন্ড সার্কেল। যখন ড্যাডের বিজনেসে প্রবলেম হয়েছিল তখন তিনি ড্যাডের সাপোর্ট না হয়ে, উল্টো শাহিন হাসাদের সাথে বিয়ের স্বপ্ন দেখেছে।
আর কি যেনো বলেছে অধরাকে? আমার মা হয়ে উনি ফিরে আসতে চেয়েছিলো। ড্যাডের জন্য আমার সাথে মুখোমুখি হতে চাইতেন না।
হুহহ, ছোট থেকে সবার মায়ের আদর দেখে নিজের মায়ের পিছু পিছু পাগলের মতো ঘুরঘুর করছি আমি, অর্ণব। মাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতাম। তার একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কতো চেষ্টা করেছি, অথচ উনি কোনদিন আমাকে জড়িয়ে ধরে বাবা কেমন আছো এটাও জিজ্ঞেস করোনি।
আর উনার কাছে আমি কেনো আমার ড্যাডও ভালো ব্যবহারটুকু পায়নি।
আড়াল থেকে আমি কতোবার দেখেছি মমকের বাজে ব্যবহারে ড্যাড মন খারাপ করে বারান্দায় বসে থাকতো। অনুরিমা কখনো ভালোবাসা বুঝেনি, অর্ণব। ”
অর্ণব এতোক্ষণ চুপচাপ কথাগুলো শুনছিলো। আশ্বিনের কথাগুলো শুনে কিছুক্ষণ চুপ থেকে,
— ” যদি তাই হয় তাহলে এখন কেনো আকাশ আঙ্কেলের কবরের সামনে বসে কান্না করে? এটাকে কি বলবি তুই? ”
— ” সব উনার ড্রামা। আমি কিছুই বিশ্বাস করি না। হয়তো এখন তার ভুল বুঝতে পেরেছে। কারণ ড্যাডের কাছে উনি যতোটা স্বাধীনতা আর সম্মান পেয়েছে শাহিন কখনোই তাকে সেই সুযোগ দিবে না। তাই হয়তো এখন বুঝতে পারছে।
আবার এমনও তো হতে পারে, উনি ইচ্ছে করেই কবর জিয়ারত করতে গিয়েছিলেন। হয়তো উনি আগে থেকেই জানতেন অধরা উনার পিছু নিয়েছে। হয়তো…. উনি আমাদের বড় কোন বিপদে ফেলতে চাইছেন। ”
— অর্ণব গভীর ভাবে চিন্তা করে, ” আমাদের সব ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আশ্বিন। মনে রাখিস, যদি আন্টির কথা সত্য হয় তবে তোর নানাভাই এখন বিপদে আছে সেই সাথে তোরা সবাইও।
আর যদি কথাগুলো মিথ্যা হয়, তবে তোদের উপর খুব বড় ঝড় আসতে যাচ্ছে। আমাদের যা করার এখনই করতে হবে। ”
— ” হুমম। আমার তোর হেল্প চাই। আমিও এর শেষ দেখে ছাড়বো। অনেক খেলেছে আমাদের জীবন নিয়ে। ড্যাডের সাথে তারা যা করছে এর জন্য তাদের শাস্তি পেতেই হবে। ”
কথাগুলো বলে আশ্বিন অর্ণবের দিকে তাকায়। অর্ণব আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।
🌻রাতে🌻
আশ্বিন অর্ণবের সাথে আলোচনা শেষ করে বাসায় ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়। সে বাসায় প্রবেশ করেই দেখে অধরা একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে। আশ্বিন তার দিকে না তাকিয়ে রুমে চলে আসে তা দেখে অধরাও পিছু পিছু চলে আসে।
— অধরাকে চুপ থাকতে দেখে, ” কি ব্যাপার? তুমি এখনও জেগে আছো কেনো? বলেছিলাম না খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তে। ”
আশ্বিন কথাটা বলার পর বেশ কিছুক্ষণ অধরার কোন উত্তর না আসায় আশ্বিন পিছনে ফিরে দেখে অধরা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
— আশ্বিন ভ্রু কুঁচকে, ” কি হয়েছে? আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি তোমাকে। ”
অধরা কিছু না বলে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে দৌড়ে এসে আশ্বিনকে জড়িয়ে ধরে,
— ” আপনি আমার উপর রেগে আছেন। ”
হঠাত এমন করায় আশ্বিন কিছুটা চমকে যায়। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে অধরার মাথায় হাত রেখে,
— ” একটু রেগে ছিলাম। কিন্তু এখন আর রেগে নেই। পিচ্চিদের সাথে রাগ করতে নেই। ”
অধরা কথাটা শুনে কান্না করে দেয়। আশ্বিনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,
— ” আমি জানতাম না বিষয়টা এমন পর্যায়ে চলে আসবে আশ্বিন। আমি সত্যিই অনেক সরি। আমার আপনাকে না জানিয়ে এমন করা ঠিক হয়নি। ”
অধরা কথাগুলো বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। আশ্বিন মুচকি হেসে অধরার চোখ মুছে দিয়ে,
— ” অধরা এখানে তোমার দোষ নেই। যা হওয়ার হয়েছে। আর আমি আছি তো, ভয় নেই।
হয়েছে অনেক কেঁদেছো। এখন চলো ঘুমাবে।
পড়া চোর পড়া ফাঁকি দিয়ে এসব করে বেরিয়েছে। কাল থেকে আমি নিজে তোমাকে পড়াবো। এখন চলো ঘুমাতে যাই। ”
কথাটা বলে আশ্বিন অধরাকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে শুয়ে পড়ে। অধরা কিছুক্ষণ কান্না করায় কিছুক্ষণেই ঘুমিয়ে যায়। আশ্বিন তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মনে মনে,
— ” পৃথিবীতে আমার আপন বলতে যখন শুধু দাদি ছিলো, তখন সহধর্মিণী হিসেবে আমার হাত ধরে আমার জীবনে এসেছিলে তুমি।
যদিও একটু অদ্ভুত,তবুও আমার হৃদয়ের হাজারো অনুভূতির মিশ্রণ তুমি।
জানি না এই অনুভূতির নামই কি ভালোবাসা? হয়তো কখনো ভালোবাসা পাইনি বলে জানি না।
শুধু জানি আমার তোমাকেই চাই।
আমার শূন্য হৃদয়ের পূর্ণতা হয়ে আমার তোমাকেই চাই।
আর, ভালোবাসার এই নতুন রূপে,
আমি_তোমার_গল্প_হবো। ”
আশ্বিন কথাগুলো ভাবতে ভাবতে হঠাত তার ফোন বেজে ওঠে। সে ফোনের দিকে এক নজর তাকিয়ে অধরাকে রেখে ফোন রিসিভ করে বারান্দায় চলে আসে।
🌻🌻
পরদিন সকালে আশ্বিন ঘুম থেকে উঠে দেখে রান্নাঘর থেকে শব্দ আসছে। সে একটু অবাক হয়ে ধীরে ধীরে রান্নাঘরে ঢুকে দেখে অধরা কোমরে ওড়না পেঁচিয়ে একমনে রান্না করছে।
— আশ্বিন অবাক হয়ে, ” এসব কি করছো অধরা? ”
— অধরা কাজে মন দিয়ে, ” দেখতেই তো পাচ্ছেন আমি রান্না করছি। ”
— ” কিন্তু তুমি কেনো রান্না করছো? খালা কোথায়? ”
— ” খালা আজ আসবেন না বলেছে। তাই আমি রান্না করছি। ভয় নেই, আমি ভালোই রান্না করতে পারি। ”
— আশ্বিন অধরার সামনে এসে, ” এসব কি? এতোগুলো খাবার কার জন্য রান্না করছো তুমি? ”
— অধরা আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে, ” এগুলো গরিব অসহায় বাচ্চাদের জন্য। আমি তাদের আজ দুপুরের খাবারের জন্য আসতে বলেছি।
এতে বাচ্চাগুলো যেমন খুশি হবে তেমন আকাশ বাবার জন্য তারা দোয়াও করবে। ”
অধরা কথাটা বলে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে রান্নায় মনোযোগ দেয়। আশ্বিন কিছুক্ষণ মুগ্ধ চোখে অধরার দিকে তাকিয়ে পিছন থেকে অধরাকে জড়িয়ে ধরে।
#আমি_তোমার_গল্প_হবো🍁
লেখিকা- মাহিয়া তাহসীন মেরিন
পর্ব:::২০
🌻দুদিন পর
সকাল থেকেই অধরা একমনে বই পড়ে যাচ্ছে। আশ্বিন কাজের ফাঁকে ফাঁকে অধরার দিকে তাকিয়ে,
— ” হুহহ, সারা বছর পড়ার নাম নেই। আর এখন পড়ে উনি একদম বিশ্ব জয় করে ফেলবেন। ”
— অধরা আড়চোখে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে, ” দেখতেই তো পারছেন একটা মানুষ মন দিয়ে পড়ার চেষ্টা করছে, তাকে এভাবে বিরক্ত করছেন কেনো? ”
অধরা কথাটা বলে আবার পড়ায় মনোযোগ দেয়। এদিকে আশ্বিন অধরার কথা শুনে অনেক কষ্টে নিজের হাসি থামিয়ে রেখেছে।
— ” হয়েছে আর পড়তে হবে না। কিছুক্ষণ পর থেকে পরীক্ষা শুরু হবে। যাও গিয়ে রেডি হয়ে নাও। ”
অধরা এক নজর আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে ভেংচি কেটে রেডি হতে চলে যায়। আশ্বিন অধরার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়।
কিছুক্ষণ পর অধরা রেডি হয়ে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলে চিরুনি করতে থাকে। হঠাত আশ্বিন এসে অধরার পিছনে দাঁড়িয়ে অধরার চুলে বেণী করতে শুরু করে।
অধরা কিছুটা অবাক হয়ে তাকিয়ে পর মূহুর্তে মুচকি হাসি দেয়।
🌻🌻
আশ্বিন অধরাকে নিয়ে তার কলেজের সামনে এসে,
— ” যাও।
ভালো মতো ঠান্ডা মাথায় পরীক্ষা দিবে, বুঝেছো? আর পরীক্ষা শেষে একা একা চলে যাবে না। আমি আসবো তোমাকে নিতে। ”
— ” ঠিক আছে। ”
কথাটা বলেই অধরা কলেজে প্রবেশ করে। আশ্বিন তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে পাশে ফিরে একজনের দিকে তাকায়, সেও আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে একটা চোখের ইশারা দেয়। তা দেখে আশ্বিন গাড়িতে উঠে বসে।
আশ্বিন অফিসে প্রবেশ করতেই দেখে অর্ণব বসে আছে।
— ” এতোক্ষণ পর তাহলে আসলি। ”
— ” হুমম। অধরাকে কলেজে রেখে আসলাম। আজ থেকে তো তার পরীক্ষা।
আল্লাহ জানেন, কেমন পরীক্ষা দেয়। ”
— অর্ণব মুচকি হেসে, ” আমার বোনের রেজাল্ট সব সময়ই ভালো হয়। তুই এতো চিন্তা করিস না তো। ”
— আশ্বিন হালকা হেসে, ” যে কিনা বিয়ে হয়েছে বলে বই খাতা সব বিক্রি করে দেয়, তার রেজাল্ট হবে ভালো? হাস্যকর। ”
— অর্ণব মুচকি হেসে, ” হুহহ। বন্ধু, অধরাকে তুই এখনও চিনতে পারিসনি। ”
— ” মানে? চিন্তে পারিনি মানে? ”
— ” তোর কি মনে হয়? অধরা সত্যিই তার বই খাতা বিক্রি করে দিয়েছিলো?
এখনো জানিস না তুই…? ”
— ” কি জানবো আমি? তুই সোজাসুজি বল আমাকে। ”
— ” আরে আশ্বিন, অধরা তোকে মিথ্যা বলেছিলো।
তার সব বই খাতা বাসার স্টোর রুমে রাখা আছে। সে এসব বলে তোকে পরীক্ষা করতে চেয়েছিলো। ”
— ” পরীক্ষা মানে? কিসের পরীক্ষা? ”
— অর্ণব কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে, ” তোর মনে আছে ছোটবেলার কথা যেদিন অধরা তোকে বলেছিলো সে তোকে বিয়ে করবে। ”
আশ্বিন কথাটা শুনে একটা মুচকি হেসে মাথা নেড়ে হ্যা বোঝায়।
— ” অধরা তখন অনেক ছোট ছিলো তবুও সে ভেবেই নিয়েছিলো বড় হয়ে তোকে বিয়ে করবে। তারপর একটু বড় হয়ে যখন বুঝতে শিখলো তখন থেকেই তোর প্রতি তার একটা অদ্ভুত আগ্রহ ছিলো, তোর লাইফ স্টাইল কেমন? কিভাবে সবার সামনে নিজেকে প্রেজেন্ট করিস এসব নিয়ে দিনদিন তোর প্রতি তার ভালোলাগা বাড়তে থাকে।
আর তারপর শুরু হয় তোর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা। কে তাকে হেল্প করতো জানিস?
জনি। হ্যা, জনিই অধরাকে তখন থেকে তোর সব ইনফরমেশন কালেক্ট করে দিতো। ”
— আশ্বিন অবাক হয়ে, ” কি বলিস এসব? আমি তো এর কিছুই জানি না। ”
— ” আরে এখনি অবাক হয়ে যাচ্ছিস? এখনো তো কিছু বলা শুরুই করিনি।
অধরা জনির হেল্প নিয়ে তোর সম্পর্কে সব তথ্য সংগ্রহ করতো। কিভাবে পড়ালেখার পাশাপাশি তুই আঙ্কেলের বিজনেস হ্যান্ডেল করছিস, কবে কোথায় ট্যুরে যাচ্ছিস।
এমনকি তোকে কয়জন মেয়ে পছন্দ করতো। কয়জন মেয়ে তোকে ভালোবাসি বলেছে, এটা হয়তো তুই না জানলেও অধরা ঠিকই জানতো। ভাবা যায়? ”
অর্ণবের কথাগুলো শুনে আশ্বিন বাকশক্তি হারিয়ে ফেলার মতো করে তাকিয়ে আছে। অর্ণব আশ্বিনকে এভাবে দেখে হালকা হেসে,
— ” আর সব থেকে বড় যেটা করেছে,
সেদিন যখন দাদুভাই বাসার সবাইকে ডেকে বলেছিলো আশ্বিন চৌধুরীর সাথে কণার বিয়ে ঠিক করেছে। সেদিন তো অধরার কান্না দেখে কে? আমি আর কণা কতো বোঝালাম, কিন্তু কাজ হয়নি।
তারপর তো অধরাই সব প্ল্যান করে তোর সাথে কণার বিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছে। যদিও অধরার প্ল্যানের কথা আমি আর কণা আগে থেকেই জানতাম। ”
— আশ্বিন চোখ বড় করে তাকিয়ে, ” কিহহহ? এসব কিছু তোরা প্ল্যান করে করেছিস?
তাহলে অধরা বারবার কেনো বলে তাকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। ”
— ” ড্রামা কুইন একটা। সব তো তার ইচ্ছাতেই হয়েছে।
অধরা ভেবেছিলো তুই হয়তো তাকে বলবি এই বিয়ে তুই মানিস না। তাছাড়া দাদু ভাইকে সে বোঝাতে চেয়েছিলো তাকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছে,তাই সে আর পড়ালেখা করতে চায় না, তারপর প্ল্যান করে বই গুলো স্টোর রুমে লুকিয়ে রেখেছিলো। ”
— আশ্বিন অবাক হয়ে, ” এতো কিছু করে ফেললো অথচ আমরা বুঝতেই পারলাম না। ”
— ” হুহহ। আশ্বিন, অধরার এই সবকিছু কাজের মূলে আসল কথা হলো, সে তোকে অনেক ভালোবাসে। ভাই আমার, তাকে কখনো ভুল বুঝে দূরে সরিয়ে দিসনা। অধরাকে যত্ন সহকারে নিজের বুকে আগলে রাখিস।
কারণ ভালোবাসা সবার জীবনে আসে না। ”
অর্ণব কথাটা শেষ করে মুচকি হাসি দেয়। আশ্বিনও তার কথা শুনে মুচকি হেসে মাথা নেড়ে হ্যা বোঝায়।
🌻রাতে🌻
অধরা বই নিয়ে একমনে পড়ছে। আর আশ্বিন তার পাশে বসে কফি খেতে খেতে ল্যাপটপে কাজ করছে।
মূলত এই মুহূর্তে তার মাথায় অর্ণবের বলা কথাগুলোই ঘুরপাক খাচ্ছে।
— অধরা বিরক্ত হয়ে, ” উফ কতক্ষণ ধরে পড়ছি। এখন আমার অনেক বিরক্ত লাগছে। এতো পড়া যায় নাকি? ”
— আশ্বিন ঘোরের মধ্যে, ” তাহলে চলো কিছুক্ষণের জন্য ছাদে যাই। ”
আশ্বিনের কথা শুনে অধরা অবাক হয়ে তাকায়। সে যেনো বিশ্বাসই করতে পারছে না।
তাই তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়িয়ে আশ্বিনের হাত ধরে ছাদে চলে আসে।
আশ্বিন অধরাকে নিয়ে ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে। হালকা একটা বাতাস চারদিকে বয়ে যাচ্ছে।
— অধরা মুচকি হেসে আকাশের দিকে তাকিয়ে, ” আজকের চাঁদটা অনেক সুন্দর তাই না? ”
— আশ্বিন মুচকি হেসে, ” আমার চাঁদ তো আমার কাছে সবসময়ই সুন্দর। ”
আশ্বিনের কথা শুনে অধরা তার দিকে ফিরে তাকায়। আশ্বিন অধরার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দেয়। তা দেখে অধরা মুচকি হাসে।
— ” তারপর বলুন, কোন খোঁজ পেয়েছেন নানাভাইয়ের? ”
— ” নাহ। আমি আমার কিছু লোক আর জনিকে দায়িত্ব দিয়েছি আবার নিজেও অনেক খুঁজে যাচ্ছি। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। হয়তো অনুরিমা মিথ্যা বলেছে। ”
— ” তো কি হয়েছে আজ খুঁজে পাননি? আপনি খোঁজ চালিয়ে যান। আমার মনে হয় আমরা খুব শীঘ্রই নানাভাইকে পেয়ে যাবো। ”
— ” হুমম ইনশাআল্লাহ।
আর তুমি এসব নিয়ে একদম ভাববে না, বুঝেছো? ভালোমতো পরীক্ষা দাও আগে। আমি আর অর্ণব আছি। আমরা সব সামলে নিবো। ”
— ” হুমম। ঠিক আছে। ”
অধরা কথাটা বলে চুপ হয়ে যায়। আশ্বিনও আকাশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়। বেশ কিছুক্ষণ দুজন নিরব থাকে।
হঠাত আশ্বিন অধরার দিকে এগিয়ে আসে…তা দেখে অধরা স্তব্ধ হয়ে যায়। তার হৃৎস্পন্দন ক্রমান্বয়ে বাড়তে শুরু করে।
আশ্বিন অধরার কাছে এসে তার মুখের উপর পড়ে থাকা চুলগুলো কানের পিঠে গুজে দিয়ে অধরার দুইগালে হাত রেখে,
— ” অধরা,
তুমি আমার জীবনে হুট করে এসে অজান্তেই আমার অভ্যাসে মিশে গিয়েছো। যাকে এখন আমার প্রতিটি মূহুর্তে পাশে চাই। আমি চাই তোমার সাথে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত পাশে থাকতে।
আমরা নাহয় একসাথেই বুড়ো হবো। ”
কথাটা শুনে দুজন একসাথে হেসে ওঠে।
— ” অধরা আমি জানি আমার মা যেভাবে আমার বাবাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো তুমি তা কখনোই করবে না। আমার বিশ্বাস আছে তোমার উপর। তুমিও আমার এই বিশ্বাস ধরে রেখো।
জানি না কখন কিভাবে মনের অজান্তেই তোমাকে মন থেকে ভালোবেসে ফেলেছি অধরা। সত্যিই অনেক ভালোবাসি তোমায়। আমার জীবনের এই নামহীন গল্পে…। ”
— অধরা আশ্বিনকে থামিয়ে, ” আমি তোমার গল্প হবো। ”
অধরার কথাটা শুনে আশ্বিন মুচকি হেসে আলতো করে অধরার কপালে চুমু দেয়। অধরাও মুচকি হেসে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে থাকে।
—চলবে❤
—চলবে❤