আমি সেই তনু পর্ব -০৬

#আমি_সেই_তনু
#ষষ্ঠ_পর্ব
#জান্নাত_উল_ফেরদৌস

তনু: তুমি কেনো আমায় চলে যেতে বললে আকাশ ভাইয়া? আমি খুব কষ্ট পেয়েছি, তুমি খুব খারাপ!! খুব খারাপ!! এসব বলে ই চলেছে তনু…
হঠাৎ রোহিত এসে দেখলো তনু আকাশ কে ধরে কান্না করছে,রোহিত ব্যাপার টা বুঝতে পারে লতিফকে বললো আমার খিদে পেয়েছে খেতে দিয়ে যাও।
লতিফা চলে গেলো।
তনু হঠাৎ বুঝতে পারে নড়ে চড়ে বসলো!! খুব লজ্জা ও পেয়েছে,কিভাবে আকাশ ভাইয়া কে জড়িয়ে ধরেছে আবার তুমি তুমি করে বলেছে, তনু লজ্জায় লাল হয়ে গেছে!
প্রীতি বেহায়ার মত দাড়িয়ে আছে যেনো আকাশ কে একা রেখে যাবে ই না!!
আকাশ: প্রীতি তুমি এখানে কেনো?
প্রীতি: আন্টি আসতে বলেছে তাই এসেছি, স্যার আপনি তো বলেন নি আপনার বোন আছে?
আকাশ: ও আমার ছোট খালামনির মেয়ে তনু
প্রীতির যেনো উত্তর টা পছন্দ হলো না!
প্রীতি: nice to meet you তনু
তনু: nice to meet you too প্রীতি আপু, আপনার কথা অনেক শুনেছি খালামনির মুখে কিন্তু দেখা হয় নি।
প্রীতি মিথ্যে হাসি দিয়ে, আচ্ছা এইবার তো হলো।
তনু ও হাসি বিনিময় করলো।
আকাশ: তনু বেশি কথা বলিস না তুই সুস্থ হস নি।
প্রীতি: স্যার তনু একটু একা থাকুক না, চলুন আমাকে বাড়ি টা একটু ঘুরে দেখান?
আকাশ: মা কে গিয়ে বলো দেখাবে।
প্রীতি বুঝতে পারলো আকাশ ওর উপস্থিতি তে বিরক্ত হচ্ছে তাই বেরিয়ে গেলো।
তনু আর আকাশ বসে আছে, আকাশ তনু কে দেখছে… কোমল চেহারা টা যেনো মলিন হয়ে আছে,তনু নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
আকাশ: তুই আমাকে ক্ষমা করে দিস তনু, আমি জানতাম তোর বাবা নারী বেবসাই তবে আমি ভাবতে পারি নি সে নিজের মেয়ের সাথে ও এমন কিছু করতে পারে! তোকে নিয়ে যাওয়ার পর আমি ওনার প্রতিটা এক্টিভিটিস ফলো করছিলাম…. তোকে বাসা থেকে যখন বের করে এই ওনার বাসার নিচে ই ছিলাম।
আমার জন্য তোকে এত কষ্ট পেতে হলো রে।
তনু আকাশ এর দিকে তাকালো এবার, আকাশ এর করুন দৃষ্টি!! তনু যে কখনও আকাশ ভাইয়া কে এভাবে মাথা নোয়াতে দেখে নি করো সামনে…

তনু: আকাশ ভাইয়া আপনি sorry কেনো বলছেন? উল্টো আমার আপনাকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিৎ। আপনার জন্য ই আমার মায়ের সাথে করা অন্যায় এর জবাব আজ দিতে পারলাম।

আকাশ: হম আমাদের তনাবাবু বড়ো হচ্ছে, কথা বলা শিখেছে এখন।
তনু চুপচাপ!
আকাশ: তনুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে, তুই বিশ্রাম নে আমি আসছি ।

আকাশ নিজের রুম এ এসে একটা চেয়ার এ বসে চোখ বন্ধ করে আছে।
প্রীতি সুযোগ বুঝে আকাশ এর রুম এ ঢুকলো, প্রীতি শাড়ী পরে আছে।
প্রীতি: আকাশ?
আকাশ: তুমি এখানে কেনো?
প্রীতি: এই রুম টায় ত কিছু দিন পর আমি ই থাকবো তাই দেখতে এলাম।
আকাশ: this is just your fantasy বলে মুক ফেরালো আকাশ।
প্রীতি এবার আকাশের কাছে এসে… এতো রাগ তোমার!? কই প্রীতির সামনে তো কখনো রাগ দেখাও না?
আকাশ: আমাকে তুমি বলার সাহস তোমায় কে দিয়েছে? And how dare you to call me by my name!?
প্রীতি রেগে গিয়ে বলছে কেনো আপনি এভাবে আমাকে অপমান করেন !? কী নেই আমার সুন্দর্যো,শিক্ষা,ট্যালেন্ট কি নেই বলতে বলতে আকাশের কাছে চলে গিয়েছে প্রীতি।
আকাশ এবার উঠে দাড়িয়ে পড়েছে, প্রীতি তার শাড়ীর আঁচল ফেলে দিয়েছে… প্রীতির সুন্দর ধবধবে সাদা শরীর পর্যবেক্ষণ করা যাচ্ছে যেকোনো পুরুষ এভাবে কোনো মেয়ে কে দেখলে ঠিক থাকতে পারে না!
আকাশ এর রাগে শরীর কটমট করছে, একহাত মুষ্টি বদ্ধ করে আর এক হাত দিয়ে প্রীতির চুল গুলো ধরে খুব কাছে এসে আস্তে আস্তে বললো, জানতে চাও কি নেই তোমার????
তোমার যেটা নেই সেটা হলো লজ্জা! আর তোমার মত মেয়ে আমি আমেরিকায় হাজার হাজার দেখেছি, ভোগ করেছি, শরীর দেখিয়ে কারোর মণ জয় করা যায় না বুঝলে? করুণা হচ্ছে তোমার জন্য!
Hope you got it! বলে ই ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল প্রীতি কে । আবার চেয়ার এ বসে বলছে, এখনই বেরিয়ে যাও তোমার ছায়া ও যেনো আমার সামনে না আসে!!
প্রীতি কিছু না বলে শাড়ী ঠিক করে বেরিয়ে গেলো আর যাওয়ার সময় বলে গেলো, তুমি তো আমার হবে ই আকাশ সেটা যেভাবে ই হোক।
আকাশ আর কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না।
পরদিন সকালে সবাই খেতে বসেছে, তনু ঘুম থেকে উঠছে না। তনুর এই একটা বাজে সভাব প্রচুর ঘুম পাগলী ।

আকাশ: মা তনু কে দেখছি না যে?
লতিফা: ওকে ডেকে ওঠানো যাবে না কাল অনেক রাত্রে ঘুমিয়েছে তাই এমন করছে…
প্রীতি কিছু বলছে না, চুপ চাপ হয়ে আছে আর মনে মনে ভাবছে কি আছে এই বোকা মার্কা মেয়েটার মধ্যে জার জন্য আকাশের মত ছেলে ও গোলে যায়!! জেকোরে ই হোক ওকে আমাকে আর আকাশের রাস্তা থেকে সরাতে হবে।

আকাশ: ঘুমাতে দাও অনেক ধকল গেছে ওর ওপর দিয়ে। এখনো বাচ্চা ই রয়ে গেলো বলে মুচকি হাসলো।
প্রীতি যেনো আকাশের হাসির মাঝে তনুর জন্য এক সাগর ভালোবাসা দেখতে পেলো…

লতিফা: আকাশ আমি চাই তুই আর প্রীতি একটু নিজেদের মধ্যে সময় কাটা। সামনে মাসে আমি তোর বিয়ে দিতে চাই অনেক হয়েছে আর না মরার আগে ছেলের বউ দেখে যেতে চাই আমি।

আকাশ: মা আবার শুরু করেছ তুমি? বাবার কথায় এখানে থেকে গেলাম অন্তত বিয়ে টা আমার সিদ্বান্ত তে করতে দাউ? আমি এখন বিয়ে করতে পারব না অনেক কাজ আছে আমার ।

লতিফা: আচ্ছা 2মাস সময় দিলাম কিন্তু বিয়ে তোকে প্রীতি কে ই করতে হবে এই আমি বলে দিলাম

লতিফার কথা যেনো আকাশ কানে ই নিলো না চুপ চাপ খাচ্ছে, প্রীতি মনে মনে খুশি হচ্ছে।কিন্তু আকাশ এর দিকে তাকাচ্ছে না কারণ কাল রাতে প্রীতি যা করেছে তার জন্য আকাশ ওর ওপর খুব রেগে আছে, অন্য কেউ হলে আকাশ হয়তো তাকে আঘাত করতো কিন্তু আকাশ মেয়ে মানুষের গায়ে হাত দেয় না বলে ই কিছু বলে নি।

তনু উঠে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়েছে, আকাশ খাবার নিয়ে তনুর রুম এ গিয়েছে।
তনু: ভাইয়া এসব কেনো করতে গেলেন আমি পারতাম তো।
আকাশ: হ্যাঁ দেখেছি আমি তুই কত পারিস, এখনও হাত দিয়ে ভালো করে খেতে প্যারিস না টা আমি জানি । নে লক্ষ্মী মেয়ের মত খেয়ে নে…
তনু বাধ্য মেয়ের মত চুপ চাপ বসে আছে।
আকাশ ভাত মেখে খাইয়ে দিচ্ছে, আর তনু খাচ্ছে…
ইচ্ছা করছে আকাশ ভাইয়ার হাত কামড়ে দিই। সেদিন কিভাবে আমায় কষ্ট দিলো!
কিন্তু দুষ্টু বুদ্ধি মাথায় চাপলে ও দিলো না…
আকাশ: আজ তোর স্কুল এ যেতে হবে না।ভালো করে সুস্থ হয়ে নে । তোর টিচার কে ফোন করে বলে দিয়েছি ।
তনু লক্ষী মেয়ের মতো মাথা নাড়ল।
আকাশের যে তনুর এই সোভাব গুলো খুব ভালো লাগে। সবসময় লজ্জা পায় আর এত ভীতু মেয়ে আকাশ কখনো দেখেনি আকাশ কে এত ভয় পায় তনু!
খাওয়ানো শেষ এ আকাশ বেরিয়ে গেলো।

____ সারাদিনের ক্লান্তি শেষ করে আকাশ বাসায় আকাশ।
তনুর চুল গুলো বাতাছে উড়ছে, বাধার চেষ্টা করছে কিন্তু পারে উঠছে না ।
আকাশ কি মনে করে যেনো মায়ের ঘরে যেতে গিয়ে তনুর ঘরে গেলো, তনু চেষ্টা করে যাচ্ছে ব্যান্ডেজ এর ওপর দিয়ে চুল গুলো বাঁধতে, পারছে না।
আকাশ চুপ চাপ গিয়ে তনুর চুল গুলো বেধে দিচ্ছে, এমন আকস্মিক ভাবে ভাইয়া চলে আসবে,তনু ভাবে নি…
তনু হালকা লজ্জা পাচ্ছে, আকাশ জানে তনু লজ্জা পাচ্ছে… যেনো ইচ্ছা করে ই আকাশ করছে এমন।
চুল বাঁধতে বাঁধতে কাধের তিল টা আকাশের নজরে আসে, তিল টা যেনো তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে….

তনু চোখ বন্ধ করে আছে… তনু কে চমকে দিয়ে আকাশ তনুর কাধে মুখ ডুবলো….
তনুর শরীর দিয়ে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে, বালিশ টা জোরে খামচে ধরেছে তনু, কি করছে ভাইয়া এটা ।
তনু: আকাশ ভাইয়া ছাড়ুন প্লিজ…
আকাশ তনুর কথায় ঘোর ভাঙলো,তনুকে ছেড়ে দিয়েছে কিন্তু তনুর কাধে দাগ হয়ে গেছে। তনু যেনো লজ্জায় কুকড়ে গেছে।

আকাশ: চোখ বন্ধ করে আছিস কেনো?
তনু: জানিনা!
আকাশ তনুর এই অবস্থা বেশ উপভোগ করলো তার পর কিছু না বলে বেরিয়ে গেলো।

আকাশ না চাইতে ও আজ প্রীতি কে সাথে নিয়ে হবে, প্রীতি আজ বেজায় খুশি। যাওয়ার আগে প্রীতি একবার তনুর রুম এ আসলো।
প্রীতি: কেমন আছো এখন?
তনু: আগের থেকে ভালো, তুমি কেমন আপু?
প্রীতি: hmm ভালো, হটাৎ প্রীতির চোখ তনুর কাধের দিকে , প্রীতি বুঝতে পারল , একটু আগে আকাশ আর তনুর মধ্যে কি হয়েছে!! প্রীতি রাগ সংবরণ করে বলতে শুরু করলো।
জানোই তো আমি আর আকাশ বিয়ে করছি খুব তাড়াতাড়ি,আজ আমি আর আকাশ বের হচ্ছি কিছু কেনাকাটা করতে তুমি চাইলে আসতে পরো?

তনুর মুখটা যেনো মলিন হয়ে গেলো, চোখ গুলো শীতল হয়েগেছে যেনো এখনই বাঁধ ভেঙে যাবে….

চলবে?

(যারা কোনো মন্তব্য না করে নেক্সট লিখবে তাদের বিয়ে হবে না!!)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here