আমি সেই তনু পর্ব -০৭

#সপ্তম_পর্ব
#আমি_সেই_তনু
#জান্নাত_উল_ফেরদৌস

জানোই তো আমি আর আকাশ বিয়ে করছি খুব তাড়াতাড়ি,আজ আমি আর আকাশ বের হচ্ছি কিছু কেনাকাটা করতে তুমি চাইলে আসতে পরো?
তনুর মুখটা যেনো মলিন হয়ে গেলো, চোখ গুলো শীতল হয়েগেছে যেনো এখনই বাঁধ ভেঙে যাবে….

তনু মাথা নিচু করে, আচ্ছা! তুমি খুব সুন্দর প্রীতি আপু দুজন কে খুব মানবে।
প্রীতি: আকাশ আমাকে খুব ভালোবাসে আর আমিও আকাশ কে।
তনু যে আর সহ্য করতে পারছে না।
তনু: আল্লাহ তোমাদের সুখী করুক!!
প্রীতি: আসি, ভালো থেকো।
তনু মলিন হাসি দিল…

আকাশ যেতে চায় নি প্রীতি কে নিয়ে তবে রাত বিরেতে মেয়ে মানুষ কে একা ছাড়া ঠিক হবে না, প্রীতি কে লতিফা থাকতে বলেছিল তবে প্রীতি থাকলো না।
ইচ্ছা করে ই আকাশ কে সাথে নেওয়ার জন্য প্রীতি এখন বাসায় যাচ্ছে।
আকাশ আর প্রীতি বের হয়েছে….

এইদিকে তনু রুম এ বসে চোখের পানি ফেলছে, তনু ভাবছে কেনো আকাশ ভাইয়া তনুর সাথে এমন করলো? কেনো তাকে এভাবে দুর্বল করে দিলো? তবে ই সব টা আমার ভুল ধারণা!? আকাশ ভাইয়া ভালোবাসে না আমাকে!?
ঠিক করেছে কেনো ভালবাসবে আমাকে, কি আছে আমার!? আমার মত একটা বোকা, ভীতু আনস্মার্ট মেয়ে কে আকাশ ভাইয়ার মত ছেলে কেনো ভালবাসবে!! এসব ভাবছে আর কাড়ছে তনু….
_________________________

আকাশ প্রীতির বাসায় প্রীতি কে নিয়ে গিয়ে প্রীতির মা বাবা কে সালাম দিল, তারা ও ভীষণ অ্যাপায়ন করছে আকাশ কে…. হবু জামাই বলে কথা! আকাশ কিছু তে ই ডিনার করতে চায় নি, প্রীতি আর তার বাবার জোর জবরদস্তির জন্য ডিনার করতে হবে আকাশ কে।
এই দিকে প্রীতি চালাকি করে আকাশের খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয় ।
খাওয়া শেষ করতে ই আকাশ এর ভীষণ ঘুম পাচ্ছে… আকাশের অবস্থা দেখে রাতে আর প্রীতির বাবা মা আকাশ কে বাসায় ফিরতে দেয় নি, একটা রুম এ থাকতে দিয়েছে আকাশ কে।
আকাশ কোনো মতে গিয়ে শুয়ে ই গভীর ঘুমে চলে গেলো….

অনেক রাত প্রীতি এবার চুপ চাপ করে আকাশের রুম এ চলে গেলো, আকাশের শার্ট এর বোতাম খুলে প্রীতি কিছু অন্তরঙ্গ ছবি তুলে নিলো….
তার পর আবার নিজের রুম এ চলে গেলো।
__________________

তনু অনেক কান্না করে ঘুমিয়েছে আজ, পুরুষ মানুষের ওপর যে আলাদা একটা অনুভব থাকে সেটা তনু কে আকাশ ই শিখিয়েছে….

সকাল হয়েছে, আকাশ খুম থেকে উঠেছে কিন্তু মাথা টা এখনো ঝিম ঝিম করছে!! আকাশ লক্ষ করল ওর শার্টের বোতাম গুলো খোলা,আকাশ বেশ অবাক হলো কিন্তু আবার নিজে ই ভাবলো ঘুমের ঘোরে হয়তো নিজে ই খুলেছে তাই শার্ট এর বোতাম গুলো আটকে শার্ট এর হাতা ঘোচাতে খোচাতে বেরিয়ে যাচ্ছে, প্রীতির বাবা: কোথায় যাচ্ছ বাবা?

বাসায় যাচ্ছি আঙ্কেল, কাজ আছে তনু কে স্কুল এ দিয়ে আসতে হবে। বলে ই কথা না বাড়িয়ে বেরিয়ে গেলো আকাশ….
প্রীতি নিজের ফোন আকাশের ছবি গুলো দেখছে… কী সুদর্শন পুরুষ , কোন বোকা মেয়ে এমন পুরুষ কে পাবার আসা করবে না? নিজে কে ই নিজে প্রশ্ন করছে প্রীতি, আর মুচকি মুচকি হাসছে ।

আকাশ বাড়িতে গিয়ে, মা তনু কোথায়?
লতিফা: তনু তো স্কুল এ চলে গেছে
আকাশ : সে কি!! একা একা গেলো!?
লতিফা: তোর বাবা নিয়ে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু কি জানি হয়েছে মেয়েটার আজ! বললো সে নাকি বড়ো হয়েছে , একা একা যেতে পারে।

আকাশ: ভ্রু কুচকে! আচ্ছা তাহলে আমি অফিসে জাই তাহলে,অনেক কাজ পড়ে আছে।
বলে অফিসে বেরিয়ে গেলো আকাশ।
তনু বসে করে এই প্রথম বারের মত স্কুল এ গেলো। খুব মেধাবী ছাত্রী তনু, সামনে ই এসএসসি পরীক্ষা তাই পড়ার চাপ টা বেশি।
সব সার দের প্রিয় তনু, স্কুল এ টপ রেজাল্ট গুলোর মধ্যে তনু ই সেরা।
ক্লাস শেষে কোচিং , কোচিং টা স্কুল এর সাথে থাকায় আর কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না তনু কে।
ইরফান স্যার খুব ভালো টিচার, হায়ার ম্যাথ আর ফিজিক্স পড়ায় স্যার।
তনুর প্রতি ইরফান স্যার যেনো একটু বেশি কেয়ারিং ,শুধু ভালো ছাত্রী তার জন্য নয় অন্য কারণ আছে হয়তো। সেটা তনু না বুঝলে ও তনুর সহপাঠী গুলো ঠিকই বুঝতে পারে….

সুস্মিতা: এই তনু আজ তোকে খুব সুন্দর লাগছে, দেখিস ইরফান স্যার পড়ানো বাদ দিয়ে তোকে ই দেখবে হা হা হা
তনু: এই তোদের কোনো কাজ নেই ? সব সময় অজে বাজে বকা ছাড়া!!
প্রতাব: আরে ওর চোখ থাকলে না দেখবে…
তমা: আরে স্যার যদি এই রকম ফিলিংস আমার ওপর আন্ত এতদিনে বিয়ে করে লন্ডন হানিমুন এ যেতাম ।
তোমার কথা শুনে সবাই হা হা করে হেসে উঠলো।

ইরফান স্যার ক্লাস এ প্রবেশ করলো, এত হাসাহাসি কেনো হচ্ছে!? মুহূর্তে ই সবাই চুপ চাপ হয়ে গেলো।
রায়হান সবাই কে খুব মনোযোগ সহকারে বোঝালো। পড়া শেষ এ সবাই বেরিয়ে যাচ্ছে এমন সময় ইরফান, তনু সনো?
তনু: হাসি মুখ করে, কিছু বলবেন স্যার?
ইরফান: না কিছু না, h w গুলো বার বার try করো না বুঝলে ফোন করো ।
তনু: আমি সব বুঝেছি স্যার , সমস্যা হলে জনাব। ধন্যবাদ সার!
ইরফান মলিন হাসি দিল।
হঠাৎ আকাশের গাড়ি তনুর স্কুল এর সামনে, সবাই গাড়ি টা দেখছে! এতো দামী গাড়ি!!
ভেতর থেকে আকাশ নামলো তার পর তনু কে নিয়ে বাসায় আসলো…
সবাই বেশ ক্লান্ত।
আসার সময় তনু আকাশের সাথে কোনো কথা বলে নি, মাথা নিচু করে ছিল সব সময়।
আকাশ ফ্রেশ হয়ে নিচে বসে চা পান করছে, এইদিকে তনু গোসল করে টাওয়াল নিতে ভুলে গেছে !
খালামনি? ওওওও খালামনি কই তুমি টাওয়াল টা দাউ?
লতিফা রান্নার কাজে ব্যাস্ত, আর তনু অত জোরে ও বলে নি যে রান্না ঘর পর্যন্ত পৌঁছাবে।
আকাশ তনুর রুম এ গিয়ে দেখে সেই সোফা তে ই টাওয়াল রেখে গেছে । আকাশ ভ্রু কুচকে , মেয়েটার এত ভূলমন কেনো!!
আকাশ টাওয়াল হতে নিয়ে বাথরুম এর দরজায় টোকা দিতে ই তনু কিছু জিজ্ঞাসা না করে দরজা খুলে দিল….
আকাশ যেনো চোখ বড় বড় করে তনুর দিকে তাকিয়ে আছে!! ভেজা জমা ভেদ করে তনুর শরীর দেখা যাচ্ছে!!

তনু আকাশ কে দেখে চোখ বন্ধ করে চিৎকার দিতে যাবে তখনই আকাশ তনুর মুখ চেপে ধরে বাথরুম এ ঢুকে যায়….
আকাশ : চিৎকার করবি না! আমার কি দোষ, টাওয়াল টা হাত বাড়িয়ে নিতে ই পারতি, তোকে দরজা খুলতে কি আমি বলেছি?
এইদিকে পানিতে আকাশ ও ভিজে গেছে, আকাশ তনুর মুখ এখনও চেপে ধরে আছে। তনু লজ্জায় দুই হাত দিয়ে ই নিজে কে আকাশ এর থেকে নিজের লজ্জা ঢাকার বৃথা চেষ্টা করছে….
আকাশ হঠাৎ বুঝতে পারে তনু লজ্জা পাচ্ছে…
তনু মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে আছে। আকাশ মুচকি মুচকি হাসছে।
হাতের টাওয়াল দিয়ে তনু কে জড়িয়ে দিলো আকাশ, তার পর তনুর কপালে একটা চুমু খেল আকাশ। তনু যেনো লজ্জায় মরে ই যাবে…
তনুর থুতনি ধরে মুখ উচু করলো আকাশ।তনু চোখ খুলছে না….উফফ এই মুখটা দেখার জন্য আকাশ যেনো হাজার বছর বেচেঁ থাকতে চায়!
আকাশ: তনু, তোর সাথে আমার একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে কাল একটু বের হতে পারবি আমার সাথে?
তনু মাথা নিচু করে সায় দিল…
তনুর সম্মতি পেয়ে আকাশ বেরিয়ে গেলো।

পরদিন সকালে আকাশ অফিস এ গেলো,তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে তনু কে নিয়ে বের হবে। আজ আকাশ তনু কে তার মনের কথা জানাবে…. মণ টা বেশ হালকা লাগছে ।
তনু ও আজ যেনো নিজের মধ্যে নেই, কিসের যেনো এক শিহরণ বার বার তনু কে অতিবাহিত করছে, তনু আজ কোন জামা পড়বে ? নাকি শাড়ি পড়বে ? সময় যেনো যাচ্ছে না তনুর। কখন আসবে আকাশ ভাইয়া?

আকাশ অফিস এ সবার সাথে আজ হাসি খুশি ভাবে কথা বলছে,,, সুন্দর ভাবে মিটিং শেষ করেছে আকাশ। হঠাৎ লতিফার ফোন…
আকাশ: hello!
লতিফা: তাড়াতাড়ি বাড়ি আয় আকাশ, বলে ই ফোন টা কেটে দিলো!
আকাশ অবাক হয়ে কয় একবার ফোন দিল কিন্তু বন্ধ বলছে!!
কোনো বিপদ হলো না তো ! ভাবতে ভাবতে বেরিয়ে গেলো আকাশ…
বাসায় পৌছে দেখলো প্রীতি আকাশের বাসায়, মনে হচ্ছে কান্না করেছে!!
আকাশ: ও এখানে কেনো মা?
বলতে ই লতিফা আকাশ কে একটা থাপ্পর দেয়….
চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here