আরশিকথা -৬
সুপ্রভা রুম থেকে দ্রুত বের হয়ে গেল। শুভ্র এগিয়ে এসে দেখে নেভিন সবজি কাটছে৷ আর কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। শুভ্র নেট ডিসকানেক্ট করে দিলো৷ তারপর টিশার্ট গায়ে চাপিয়ে বাইরে বের হলো, সুপ্রভা কি চলে গেছে!
দীপ্রর রুমটা ড্রয়িংরুমের অপর দিকে, রুমের দরজা ভেজানো আছে।
সুপ্রভা কি ভেতরে! দরজা নক করবে!
শুভ্র সমীচীন নয় ভেবে ছাদে উঠে গেল।
সুপ্রভা তখন বের হয়ে ছাদে উঠে এসেছে। মাথা ঘুরছে৷ কি করছিল শুভ্র! ওই মেয়েটা এরকম ন্যাংটো হয়ে কিচেনে কেন! নিশ্চয়ই শুভ্র বলেছে বলে এই অবস্থায় কলে আসছে, ছেলেরা ইনসিস্ট না করলে মেয়েরা কি এরকম অবস্থায় আসে ভিডিও চ্যাটিংয়ে!
শুভ্র এতটা নিচে নেমে গেছে! এত জঘন্য হয়ে গেছে! অথচ প্রভা টিশার্ট পরেছে বলে কত কিছু বলে ফেলল গতকাল! মাঠে হিরোইজম দেখানোর চেষ্টা করল! বদের হাড্ডি একটা!
প্রভার খুব কান্না পাচ্ছে। কিন্তু প্রভা কাঁদবে না। শুভ্রর বিষয়ে কেন প্রভা মন খারাপ করছে, কেন! ওর সবকিছু তো ক্লোজ হয়ে গেছে চার বছর আগেই, যেদিন শুভ্র ওকে জানিয়ে দিলো, আমি আমেরিকা চলে যাচ্ছি পরশু! তুমি তোমার মত লাইফ সেটল করে নিও!
প্রভা আগে থেকেই বুঝতে পারছিল, শুভ্র ওকে এভয়েড শুরু করেছে, কিন্তু এরকম ধাক্কা দিবে সেটা ভাবে নি! সেই শুভ্রকে কেন এতটা স্পেস দিয়ে দিলো, কিভাবে দিলো! নিজেকে ছ্যাচড়া মনে হচ্ছে। প্রভা নিজেকে সামলে নিচে নামতে গিয়ে সিঁড়িঘরে ঢুকতেই ধাক্কা খেল শুভ্রর সাথে। শুভ্র প্রভাকে ধরে ফেলল, না হয় পড়ে যাচ্ছিল সিঁড়িতে।
প্রভা এখানে! শুভ্র তো ভাবল দীপ্রর ঘরে!
কি হয়েছে, এখানে এসেছ কেন!
প্রভা নিজেকে ছাড়িয়ে নিচে নামতে গেল। শুভ্র বলল, নেভিন আমার কলিগ। বন্ধু!
সুপ্রভা দাঁড়ালো না৷
প্রভা, আমি খারাপ ইটস ওকে৷ কিন্তু আমি যা না, সেটা আমাকে ভেবো না প্লিজ।
সুপ্রভা কোনো উত্তরই দিলো না।
এবারে শুভ্র নিচে নেমে এলো। দুই সিঁড়ির মাঝের স্পেসে দ্রুত নেমে প্রভার হাত ধরে ফেলল।
নরম স্বরে বলল, কেন গিয়েছিলে রুমে? কিছু বলবে?
সুপ্রভা হাতটা ছাড়িয়ে নিলো। শুভ্রর জিদ চেপে গেল। -একটা কথাও বের হচ্ছে না মুখ থেকে৷ দীপ্রর সাথে তো অনেক কথা বলো!
সুপ্রভা বলল, হাতটা ছাড়ুন। আর দীপ্র আমার বন্ধু, ওর সাথে আমার কথা থাকে, আপনার সাথে আমার কোনো কথা নেই।
শুভ্র বলল, শুধুই বন্ধু?
-শুভ্র, ছি! আমি ভাবতেই পারি না আপনার মনটা কত নিচে নেমে গেছে! যার কথা নোংরা ভাবে বলছেন, সে আপনার ভাই, নিজের ভাই!
শুভ্র সুপ্রভার হাতটা আরো জোরে চেপে ধরে ওকে দেয়ালের কাছে নিয়ে গেল, একটা হাত দিয়ে সুপ্রভার চিবুক ধরে বলল, আমি নোংরা মানুষ, তাই নোংরা কথা বলতে পারি!
সুপ্রভা বলল, শুভ্র আমাকে ছাড়ো, আমার তোমাকে অসহ্য লাগছে!
অসহ্য লাগছে! সহ্য করতে পারছ না! তা পারবে কি করে, তোমার তো এখন বন্ধু আছে, ক্লোজ ফ্রেন্ড নাকি জাস্ট ফ্রেন্ড!
ইতর পর্যায়ে চলে গেছ তুমি শুভ্র! আমার ভাবতে লজ্জা লাগছে, এই তুমি! এই তোমাকে আমি……………..
ছি!
সুপ্রভা কথা শেষ করো, এই আমাকে কি? বলো? বলে ফেলো!
সুপ্রভা অন্যদিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল।
কারো পায়ের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে, দীপ্র! ডাকছে, প্রভা! প্রভা!
সুপ্রভা দাঁতে দাঁত চেপে বলল, হাতটা ছাড়ুন!
শুভ্র সুপ্রভার চিবুক ধরে গালে একটা আলতো করে চুমু খেলো। সুপ্রভার সমস্ত শরীর কেঁপে উঠল! প্রচন্ড ঘৃণা জমে আছে শুভ্রর জন্য কিন্তু ওর স্পর্শ যেন খুব কামনার, খুব আকাঙ্খিত ছিল সুপ্রভার! ভালোবাসা আর ঘৃণার এমন মিশ্রিত অনুভূতি, পৃথিবীর আর কারো না হোক!
শুভ্র সুপ্রভাকে ছেড়ে দিয়ে নরম স্বরে বলল, যাও!
সুপ্রভা ছুটে নিচে চলে গেল এক দৌড়ে।
চলবে
শানজানা আলম