আরশিকথা পর্ব -০৭

আরশিকথা -৭

সুপ্রভা দ্রুত নিচে নেমে গেল। শুভ্র আজ প্রথমবার চুমু খায় নি, এর আগে অসংখ্য চুমু খেয়েছে, কিন্তু দীর্ঘদিন দূরে থাকার পরে এটুকু কাছে আসা তীব্র অভিমান আর ক্ষোভ নিয়েও ভালোবাসার বাঁধ ভেঙে দিয়েছে, রাগও হচ্ছে আবার শুভ্রকে দেখতেও ইচ্ছে করছে।
সুপ্রভা নিজেকে নিজে চিনতে পারছে না। কতবার ভেবেছে, আর কখনো শুভ্রকে মনে করবে না, কিন্তু এক মুহুর্তও ভুলে থাকতে পারে নি। কি ভীষণ কষ্ট দিয়ে চলে গিয়েছিল শুভ্র৷ আচ্ছা ও তো চলেই গিয়েছিল, আবার কেন এখন এমন করছে! শুভ্রর সাথে কি খোলামেলা কথা বলে নিবে!

দীপ্র সিঁড়ির নিচে দাঁড়িয়ে আছে, তুই ছাদে কি করছিস প্রভা?

এমনি উঠলাম, ভাইয়া রুমে নেই, ছাদে ছিলেন।

ওহ আচ্ছা। সরি বললি?

না।

কেন?

এমনিই বলি নি৷

চল বসি?

চল।

সুপ্রভা, তোর সাথে আমার কিছু জরুরি কথা আছে। তোকে বলা খুব দরকার।

বলে ফেল।

তুই কবে বিয়ে করবি?

কেন?

না এমনি।

করব, বাসা থেকে ছেলে দেখছে, দুই দুই মিলে গেলেই বিয়ে করব৷

ওহ আচ্ছা।

দীপ্র চুপ করে গেল।

সুপ্রভা বলল, দীপ্র, সবাই যাই বলুক, তুই আমার বন্ধু। শুধুই বন্ধু, সব চাইতে ভালো বন্ধু। এটাই বিশ্বাস কর।

দীপ্র হেসে বলল, কেন এটা বলছিস? আমি কি কিছু বলেছি?

সুপ্রভা বলল, না বলিস নি৷ তবুও বলে দিলাম। আরো কিছু কথা আছে, যেটা আমি তোকে বলতে পারব না। বলতে পারলে হয়তো ভালো লাগত!

কি কথা? তুই একজনকে ভালোবাসতি আর সে তোকে ছেড়ে চলে গিয়েছে, সেটা?

সুপ্রভা চুপ করে রইল!

প্রভা, সেই দিনগুলোতে আমি তোকে দেখেছি, ঠিকঠাক করে কোথাও ভর্তিও হতে পারলি না৷ ভেঙে চুড়ে গিয়েছিলি!

আমাদের প্রিয় মানুষেরা আমাদের সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেয় দীপ্র। আজ যাই রে! আমি ঢাকায় চলে যাব দুয়েকদিন পরে, এর মাঝে আর আসব না।

চল তোকে ছেড়ে দিয়ে আসি।

না থাক। আমার কিছু কাজও আছে। তোর আসতে হবে না৷

আচ্ছা।

সুপ্রভা বের হয়ে আসপাশে কোনো অটো পেলো না। হাঁটতে শুরু করার কিছুক্ষণ পরে শুভ্র কোথা থেকে এসে পাশে হাঁটতে লাগল।

আপনি?

হ্যা! সমস্যা আছে?

সুপ্রভা দাঁড়িয়ে বলল, সমস্যা আছে, আপনি চলে যাওয়ার আগে আমার লাইফ গুছিয়ে নিতে বলেছিলেন, মনে আছে?

সুপ্রভা, আমার তোমাকে বলার কিছু কথা আছে, কথাগুলো তোমার জানা প্রয়োজন। একটা ভুল হয়ে গেছে আমার। অনেক বড় ভুল!

ভুল করা হয়ে গেছে, এখন আর তাকে শোধরানোর সময় নেই শুভ্র। আপনি আসবেন না আমার সাথে।

প্রভা, আমাকে একটু সময় দাও প্লিজ, আমি তোমাকে এক্সপ্লেইন করি। তারপর তুমি যেও।

ধরুন, আমি আপনার এক্সপ্লানেশন শুনলাম। তারপর?
তাতে কি হবে? আমার সময়গুলো আমি ফিরে পাব? পাব না! এসব আর আমি শুনতে চাই না।

প্রভা!

সুপ্রভা হাঁটতে শুরু করেছিল।

প্রভা, আমি ভেবেছিলাম, তোমাকে ভুলে যেতে পারব, বিশ্বাস করো, আমি অসংখ্য মেয়ের সাথে মিশেছি, যতবার কাউকে নিয়ে ডেটে গিয়েছি, আমার তোমার কথা মনে পড়েছে, যতবার কারো সাথে ইন্টিমেট হয়েছি, আমি তোমাকে ভেবে নিয়েছি, আমি জানতাম না, এত সহজ নয় সবকিছু ভুলে যাওয়া!

প্রভা তাচ্ছিল্য করে বলল, আপনার মত ক্যারেক্টারলেস কাউকে আমি ভালোবাসব আবার, এটা ভাবলেন কি করে?

আবার কেন ভালোবাসবে, তুমি তো আমাকেই ভালোবাসো!

যে শুভ্রকে আমি ভালোবাসতাম, সে আর আপনি এক মানুষ নন, আমার শুভ্রর জীবনে প্রভাই ছিল শুধু, ন্যাংটা মেয়েমানুষ ছিল না।

একটা অটো যাচ্ছিল। প্রভা উঠে পড়ল। শুভ্রও উঠে বসল প্রভাকে ঠেলে।

এটা কি হলো!

কিছু না, আমার তোমাকে যেতে দিতে ইচ্ছে করছে না। প্রভা, সেই ভাঙা বাড়িটা আছে এখনো? ওখানে যাই চলো! তোমাকে কথা গুলো বলি?

সুপ্রভা ঠান্ডা স্বরে বলল, শুভ্র, আপনি নেমে যান। আমি আপনার সাথে কোথাও যাব না।

শুভ্র একদৃষ্টিতে সুপ্রভাকে দেখে অটো থেকে নেমে গেল। সুপ্রভা শুভ্র পেছনে রেখে অটো নিয়ে চলে গেল।

★★★

সুপ্রভাকে বলে ঢাকা চলে যাওয়ার দুই সপ্তাহ পরে শুভ্র আবার বাসায় এলো। সকাল সকাল বাসা থেকে বের হয়ে দেখল সুপ্রভা আর পিয়া মিসের বাসার দিকে আসছে।

শুভ্র সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল।
সুপ্রভা পিয়াকে বলল, তুই চলে যা, আমি আসছি!

পিয়া চলে যেতেই শুভ্র হাসল।
কেমন আছ সুপ্রভা?

হ্যা ভালো, এত তাড়াতাড়ি পুজোর ছুটি হয়ে গেল?

না তো!

তাহলে?

তাহলে বলতে হলে তো একটু সময় লাগবে।

ওহ আচ্ছা।

শুভ্র একটা প্যাকেট দিলো সুপ্রভাকে, এটা দেখো বাসায় গিয়ে, কিন্তু সিক্রেট, কাউকে জানাবে না। একা দেখবে। ঠিক আছে।

ঠিক আছে।

এখন যাও, আমি অপেক্ষা করব।

সুপ্রভা ব্যাচে ঢুকে মন দিতে পারল না। মিস কয়েকবার বকা দিলেন৷

বাসায় গিয়ে সুপ্রভা প্যাকেটটা খুলল, একটা কার্ডে সুন্দর করে লেখা,

when i will die, you will come to my grave, but don’t cry or don’t pray, just say only, I LOVE YOU।

পরের পেজে লেখা, সুপ্রভা, ভালোবাসবে আমাকে?

আলাদা একটা কাগজে লেখা,
কাল স্কুল টাইমে আমি অপেক্ষা করব, মীরের রাস্তায়।

সুপ্রভা কতক্ষণ ঝিম দিয়ে বসে রইল, এসব কি হচ্ছে! ভালো লাগছে অনেক, কিন্তু এরকম করে কখনো ভাবে নি প্রভা! আচ্ছা প্রেম কি এটাই? এরকম করে হয়?
স্কুল টাইমে যেতে হলে তো স্কুল মিস হবে! ধরা পড়ে গেলে কি হবে!

কিন্তু সুপ্রভা এভয়েড করতে পারল না। শুভ্র অপেক্ষা করবে, সুপ্রভাকে যেতেই হবে৷

চলবে

শানজানা আলম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here