#আশ্রিতা🌿
Sumana Easmin
পর্ব সাত
কংকা রুমে ঢুকেই দেখতে পেলো হিমু ও মায়া কি জানি একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে। কংকাকে আসতে দেখে মায়া চুপ করে রইলো আর হিমু কংকার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইল।
কংকা হিমুর দিকে তাকিয়ে বলল-
“রুমে এসে মনে হয় তোমাদের খুব দিস্টার্ব করলাম। ওকে নো প্রবলেম। আমি এখনি চলে যাচ্ছি।”
কথাটা বলেই সাথে সাথে কংকা রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। ওদের কিছু বলার সুযোগ ই দিলোনা। হিমু তাড়াহুড়া করে কংকার পিছু পিছু যেতে লাগলো। কিন্তু কংকা সায়লা বেগমের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।
হিমু কংকাকে আর বিরক্ত না করে সোজা ওর রুমে চলে আসলো। মায়া তখনো হিমুর রুমেই বসে ছিলো। সে হিমুকে বিষন্ন মুখে রুমে ঢুকতে দেখে বলল-
“সরি হিমু! আমার জন্য তোমার এতো প্রবলেম সহ্য করতে হচ্ছে। আমি কাল পরশুর মধ্যেই চলে যাবো!”
হিমু কিছু না বলে সোফায় বসে পরলো। সে মনে মনে কংকার অস্বাভাবিক আচরন নিয়ে ভাবছে। কেমন সামান্য বিষয় নিয়েও সে খুব বেশি রিয়েক্ট করছে সেটা হিমুকে খুব ভাবালো।
হিমু মায়ার সাথে এতোক্ষণ ধরে ওর বাবার গেইম টা নিয়েই আলোচনা করছিলো। কংকার প্রতি হিমুর অমন নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দেখে মায়া অনুতপ্ত হয়ে হিমুকে ওর বাবার সব প্লানের কথা বলেছে। হিমু সেইটা ডিটেইলস জানার জন্য এতোক্ষণ মায়ার সাথে কথা বলেছে।
মায়া হিমুকে সত্যি সত্যিই অনেক ভালোবাসে। কিন্তু যখন সে এখানে এসে কংকার প্রতি ওর অসীম ভালোবাসা দেখতে পেলো তখন সে নিজে নিজে অনেক কষ্ট পেতে লাগলো। সে যতোবারই হিমুর মুখে কংকার কথা শুনতে পেতো সে ততোবারই মনঃকষ্ট পেতে লাগলো। অবশেষে সে সিদ্ধান্ত নিলো যে সে আর ওদের মাঝে কাঁটা হয়ে থেকে শুধু শুধু অশান্তি বাড়াবেনা। তাই সে হিমুকে ওর বাবার সব প্লান বলে দিলো।
হিমুকে চুপ থাকতে দেখে মায়া উঠে যেতে যেতে বলল-
“আর কোন চিন্তা করোনা হিমু। আমি তোমাদের পথে কখনো কাঁটা হতে আসবোনা। শুধু তোমরা সুখে থেকো তাহলেই হবে।”
বলেই মায়া চলে গেলো। হিমু কোন কথা বলল না। শুধু ওর যাওয়ার দিকে এক পলক দেখেই চোখ নামিয়ে নিলো। সে বুঝতে পারলো মায়া কান্না চাপিয়ে রেখে কথা গুলো খুব কষ্ট করে বলল।
একটুপর সে কংকার কাছে গেলো। একবার দরজা নক করতেই কংকা দরজা খুলে দিলো। কংকার চোখে পানি দেখে হিমু বলল-
“তুমি যেটা সন্দেহ করে এতো কান্না কাটি করছো, যদি বলি সেটা একদম ই মিথ্যা। তাহলে কি সব মেনে নিবে?”
কংকা কোন কথা বলল না। হিমু কংকাকে মায়ার সাথে কথা বলিয়ে দিলো। সবকিছু শুনে কংকা হিমুর বাবার উপরে অনেক থেগে গেলো। তবে সে অনেকটা হালকাও হয়ে গেলো। সে মায়ার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো।
পরদিন বিকেলে মায়া হিমুর বাবাকে সবকিছু বলে বাসায় রওনা দিলো। সে উনাকে জানালো যে তার পক্ষে হিমুর সাথে কংকার বিচ্ছেদ ঘটানো সম্ভব নয়। হিমুর বাবা খুব নিরাশ হয়ে গেলেন। কেননা তিনি তার শেষ আশাটিও হারিয়ে ফেললেন।
তিনি কংকাকে পুত্রবধূ হিসেব কখনোই মেনে নিতে পারবেন না। কারন তিনি কংকাকে প্রচন্ড হিংসা করতেন। হিমুর মায়ের নামে যতো সম্পত্তি ছিলো হিমুর সব কংকার নামে লিখে দিয়েছেন। একজন আশ্রিতার প্রতি হিমুর মায়ের এমন ভালোবাসাকে তিনি আদিখ্যেতা মনে করতেন। অবশ্য হিমুর বাবার আচরনে সেই বিষয়টা সবাই বুঝতে পারতো।
কয়েকদিন পর হিমুরাও তাদের শহরের বাসায় চলে গেলো। এখনো হিমুর বাবা কংকাকে মেনে নিন নি। কিন্তু তাতে কংকা বা হিমুর কারো কিছু এসে যায় না। কয়েক মাস পর কংকা হিমুকে অনেক বুঝিয়ে রাজি করায় যে, তার মা তার নামে যে সম্পত্তি লিখে দিয়েছিলো সেগুলো সে তার বাবার নামে লিখে দিবে। সে সম্পত্তি নিয়ে কি করবে? তার কাছে হিমুই অনেক বড় সম্পত্তি। অনেক বড় একটা প্রাপ্তি। কংকার কথা শুনে হিমু হেসে বলে-
“যদি কখনো আমি তোমায় ছেড়ে চলে যাই, তাহলে?”
কংকা গম্ভীর মুখে বলল-
“আমি জানি, তুমি আমায় কক্ষনো ছেড়ে চলে যাবেনা!”
“আমার প্রতি তোমার এতো বিশ্বাস?”
“শুধুই বিশ্বাস নয় হিমু অন্ধ বিশ্বাস বলতে পারো। যে এরকম অনাথ মেয়েকে সবকিছু জেনে শুনেও ভালোবাসতে জানে তার প্রতি শুধু বিশ্বাস রাখাটা অনেক কম হয়ে যায়!”
কংকার কথা শুনে হিমুর চোখের কোনায় পানি জমতে লাগলো। সে জীবনে এই প্রথমবার কারো ভালোবাসায় অভিভূত হয়ে কাঁদতে লাগলো।
কংকা হিমুকে কাঁদতে বারন করলো না। বরং ওকে জড়িয়ে ধরে বলল-
“আজ তুমি কান্না আটকিয়ে রেখো না হিমু। আজ তোমার চোখ ভর্তি আমি সুখের জল দেখতে চাই। আজ ই।”
হিমু কংকাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে পাগলের মতো কিস্ করতে লাগলো।
এভাবে কিছুদিন কেটে গেলো। অতঃপর কোন এক বর্ষা ঘন সন্ধ্যায় কংকা ছোট বাচ্চার একটা কাপড়ে ফুল তুলছিলো। এমন সময় হিমু আধাভেজা হয়ে বাহির থেকে আসলো। কংকা হিমুকে দেখে তাড়াহুড়ো করে বালিশের পার্শে কাপড় টা লুকিয়ে রাখলো। কিন্তু হিমু সেটা ঠিকই আড় চোখে দেখতে পেলো।
হিমু ফ্রেস হয়ে খাওয়া দাওয়া সেরে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই তখনকার ঐ ঘটনাটা মনে পরে গেলো। সে বালিশের নিচ থেকে খুব কৌতূহলের সাথে বস্তুটি বের করে দেখলো সেটা একটা ছোট মেয়ের জামা/ফ্রক। সে অবাক হয়ে দেখতে লাগল। কংকা কিচেনে প্লেট ধুয়ে রাখছিলো। এমন সময় ওর মনে পরে গেলো হিমু তো বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরেছে।
তখনি সে প্রায় দৌড়ে রুমে চলে গেলো। তারপর সে যে ভয় করছিলো সেটাই দেখতে পেলো। হিমু ফ্রক টা হাতে নিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখছে।
কংকাকে দরজার কাছে দেখতে পেয়ে সে হাসতে হাসতে বলল-
“এইটা কি তুমি পরবে না কি? কিন্তু এইটাতো অনেক ছোট!”
কংকা দৌড়ে গিয়ে হিমুর হাত থেকে ফ্রক টা কেড়ে নিলো। তারপর সে রেগে গিয়ে বলল-
“মানুষের লুকিয়ে রাখা জিনিস দেখতে খুব ভালো লাগে তাইনা?”
হিমু সে কথার উত্তর না দিয়ে বলল-
“তুমি এইটা দিয়ে কি করবে শুনি? আমার তো খুব হাসি পাচ্ছে!”
কংকা হিমুর কানে কানে বলল-
“তুমি বাবা হতে চলেছো?”
হিমু কথাটা শুনে কিছুক্ষণ হা করে কংকার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর খুশিতে আত্মহারা হয়ে কংকাকে কোলে তুলে নিয়ে বলল-
“সত্যি বলছো তো? আমি বিশ্বাস করতে পারছিনা!”
“হ্যাঁ সত্যিই!”
হিমু কংকাকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে বলল-
“কিন্তু ঐ টাতো একটা মেয়ের জামা। তুমি কি করে জানলে মেয়ে হবে?”
কংকা চোখ টিপে বলল-
“সিক্রেট!”
কংকার কথা শুনে হিমুর মধ্যে সন্দেহ কাজ করতে লাগলো।
আর সেদিন রাতেই ওর কাছে কংকার সব রহস্য উন্মোচন হয়ে গেলো। রাতে রোজকার মতো সে কংকাকে জড়িয়ে ধরে আদরের স্পর্শে ভরিয়ে দিতে লাগলো। কংকাও ওকে কিস্ করতে লাগলো। কিন্তু হিমুর মাথার ভেতরে কংকাকে নায়ে অদ্ভুত রহস্য গুলো ঘুরপাক খেতে লাগলো। তাই সে অন্য দিনের মতো কংকার সাথে মিলিত হওয়ার পূর্বে নেশার ঘোরের মধ্যে হারিয়ে গেলো না।
কিন্ত কংকা রোজকার মতো ভেবে নিলো হিমু বোধহয় নেশায় ডুবে গেছে। তাই সে ধীরে ধীরে হিমুর ঘাড়ের কাছে মুখ টা নিয়ে গিয়ে মুহুর্তের মধ্যে দুটো ধারালো দাঁত বসে দিলো। তারপর ঢকঢক করে রক্ত পান করতে লাগলো।
হিমু আজ সব স্পষ্ট বুঝতে পারলো। সে প্রচন্ড যন্ত্রণা পেয়েও চুপ করে রইলো। কংকাকে কিছুই বুঝতে দিলো না। কারন সে কংকাকে অনেক বেশি ভালোবাসে ফেলেছে। সেই ভালোবাসাকে কোন কারনে সে হারাতে রাজি নয়।
সকালে হিমু ঘুম থেকে উঠে দেখলো কংকার মুখ চোখ সৌন্দর্যে ভরে গেছে।
দিনে দিনে ও আরো সজীব আর প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে। হিমু একটু সুযোগ পেলেই কংকাকে আয়নায় দেখতো। পুকুর পাড়ে নিয়ে গিয়ে গল্পের ছলে ওর প্রতিচ্ছবি দেখতো কিন্ত কখনোই আগের বার গুলোর মতো ওকে বিদঘুটে আর অদ্ভুত দেখতে পেতো না।
কংকা প্রেগনেন্ট হওয়াতে সবাই খুব খুশি হয়েছে। প্রেগনেন্সির নয় মাসের মাথায় হিমু ওর মায়ের জোরাজুরি তে কংকাকে চেকআপ করতে নিয়ে যায়। চেকআপ শেষে ডাক্তার জানিয়ে দেই কংকা কন্যা সন্তানের মা হতে চলেছে।
ডাক্তারের কথা শুনে কংকা কিছুটা দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে হিমুর দিকে তাকালো। ও দেখতে চাইলো হিমু ওর ভবিষ্যত বাণীর জন্য ওকে কোন রকম সন্দেহ করছে কিনা। কিন্তু হিমুর মুখের দিকে তাকিয়ে ও অবাক হয়ে গেলো। হিমু বিষয়টা একদম সহয ভাবে মেনে নিয়েছে।
হসপিটাল থেকে বাড়ি ফেরার পথে ওদের শিলার সাথে দেখা হয়ে গেলো। শিলা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো। হিমু ওকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে যেতে লাগলো। কিন্তু কংকা ওকে কার থামাতে বলল। হিমু বিরক্ত হয়ে বলল-
“তোমার মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে? এখন ওর সাথে কথা বলে কি নতুন করে ঝামেলায় জড়াতে চাও?”
“হোক ঝামেলা আমি তবু কথা বলবো!”
কংকা ঠিক মতো হাঁটাচলা করতে পারেনা এখন। তাই হিমু কার থামিয়ে কংকাকে ধরে নামালো। কংকা আর হিমুকে দেখে শিলা দাঁড়িয়ে পরলো। শিলার সাথে তার এক বান্ধবী ও ছিলো। কংকা সোজা শিলার কাছে গিয়ে ওর দুটো হাত ধরে ফেলল! শিলা অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল-
“কংকা তুমি প্রেগনেন্ট?”
“হ্যাঁ আপু!”
“কতোদিনের?”
“এইতো আপু নয় মাস চলছে!”
কথাটা বলতে গিয়ে কংকার গলা আটকে গেলো। ওর চোখে পানি টলমল করতে লাগলো। ও শিলাকে জড়িয়ে ধরে বলল-
“আপু আমায় কি ক্ষমা করে দেওয়া যায়না? আমার জন্যেই তোমায় অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে!”
কংকার কথাবার্তায় ও আচরনে শিলার সব রাগ পরে গেছে। সে কংকার চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বলল-
“ধুর পাগলি! আমি ঐ সব কি মনে রেখেছি নাকি?”
“তবুও!”
কংকা কান্না করতে লাগলো। রাস্তা দিয়ে লোকজন যেতে যেতে কংকাকে দেখতে লাগলো। হিমু অস্বস্তি বোধ করে বলল-
“শিলা তুমি একদিন আন্টিকে নিয়ে আমাদের বাসায় এসো। এখানে রাস্তায় আর কথা না বাড়ানোই মনে হয় ভালো হবে!”
বলেই হিমু কংকাকে নিয়ে চলে গেলো। শিলা শুধু তাকিয়ে রইল। সে মন থেকে কংকাকে ক্ষমা করে দিলো।
কিছুদিন পরের ঘটনা। মাঝরাতে হঠাৎ কংকার পেটে প্রচন্ড ব্যথা ওঠে। সে ব্যথা সহ্য করতে না পেরে কান্না করতে লাগে। হিমু সাথে সাথেই ঘুম থেকে জেগে উঠে কংকাকে কাঁদতে দেখে বলল-
“শরীর খারাপ লাগছে?”
“হুম। হিমু আমি তোমায় কিছু গোপন কথা আজ বলতে চাই। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আজ না বললে আর কখনো বলার সুযোগ পাবোনা।”
হিমু বুঝতে পারলো কংকা ওকে কি বলতে চায়। তাই সে বাঁধা দিয়ে বলল-
ওরকম অলক্ষুণে কথা মুখে আনিওনাতো। পরে অনেক সময় পাবে বলার!”
কিন্তু কংকা হিমুর কথা শুনলো না। সে হিমুকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো-
“আমি রক্ত চোষা পিশাচিনী। আমার বাবা মার কালো জাদুর অপব্যবহারের ফলে আমি অর্ধমানবী ও অর্ধ পিশাচিনী হয়ে জন্মেছি। কিন্তু আমি কখনো কারো ক্ষতি করিনি। তোমার ছাড়া আর কারো রক্ত পান করিনি। আমি তোমাদের ভালোবাসায় নিজের রক্তের নেশাকে দমন করে রেখেছি এতোদিন।”
হিমু কংকার মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরে বলল-
“চুপ, একদম চুপ। আর একটা কথাও নয়! আমি সব জানি। আমায় নতুন করে কিছু বলতে হবেনা।”
কংকা আশ্চর্য হয়ে গেলো। সে কান্না থামিয়ে বলল-
“তবু তুমি আমায় ভালোবাসো? আমি তো ভেবেছিলাম সত্যি টা জানার পর তুমি আমায় ত্যাগ করবে!”
হিমু কংকার কপালে একটা কিস্ করে বলল-
“তোমায় ত্যাগ করার আগে যেনো আমার মৃত্যু হয় কংকা। তুমি জানো না আমি তোমায় কতোটা ভালোবাসি!”
কংকা ব্যথায় কাতরাতে লাগলো। হিমু আর দেরী না করে ওর মাকে ডেকে আনলো। ওর মা কংকার অবস্থা দেখে হসপিটালে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।
কংকা ব্যাথার তাড়নায় একটু পর পরই সেন্সলেইস হয়ে যেতে লাগলো। আর বার বার সে মায়াকে দেখতে চাইলো।
তাই হিমু মায়াকে খবর দিলো।
সূর্য উঠার কিছুক্ষণ পরেই কংকা সন্তান প্রসব করলো। ডাক্তার হিমু আর ওর মাকে গিয়ে বলল-
” আপনাদের মেয়ে সন্তান হয়েছে! বেবি টা পুরোপুরি সুস্থ আছে কিন্তু মার অবস্থা অনেক বেশি ডেনজারাস!”
হিমু আর ওর মা দ্রুত কংকার কাছে গেলো। কংকা প্রায় হাফ সেন্সলেইস হয়ে শুয়ে আছে। হিমুর মা বেবিটাকে টাকে কোলে তুলে নিলো। বেবিটা দেখতে একদম কংকার মতোই হয়েছে।
হিমু একবার বেবিটার দিকে তাকিয়েই সে কংকার পাশে গিয়ে বসলো। কংকার একটা হাত স্পর্শ করতেই কংকা ধীরে ধীরে চোখ মেলালো। কংকার শরীর প্রচন্ড খারাপ হয়ে গেছে। ওর চেহারারও একদম মৃত মানুষের মতো দেখাচ্ছে। হিমু সেটা সহ্য করতে না পেরে ওর মায়ের সামনেই কংকার হাত ধরে কান্না করতে লাগল। কংকা কথা বলার মতো অবস্থাতে নেই। তবু সে ফিসফিস করে বললো-
“আমি তোমার কান্না সহ্য করতে পারছিনা হিমু। প্লিজ কান্না থামাও!”
হিমু যেনো কোন ভাবেই কান্না থামাতে পারছেনা। সে কাঁদতে কাঁদতে কংকার মুখের দিকে ঝুঁকে পড়ে বলল-
“আজ কেনো জানি মনে হচ্ছে তুমি আমায় একলা করে ফেলে রেখে যাবে! কেনো এমন মনে হচ্ছে বলতে পারো?”
কংকা চোখ বন্ধ করে বলল-
“জানিনা! হয়তো আমি তোমার রক্তের সাথে মিশে গেছি তাই অমন মনে হচ্ছে!”
হিমু কিছু একটা বলতে যাবে তখনি মায়ার কন্ঠ শুনে সে থেমে গেলো। মায়া কংকার পাশে বসেই অবাক হয়ে গেলো। কংকাকে দেখতে একদম অদ্ভুত লাগছে। সেই পুর্নিমার চাঁদের মতো সৌন্দর্য হারিয়ে গেছে। কংকা মায়ার একটা হাত ধরে বলল-
“আমি এতোক্ষণ তোমার অপেক্ষায় সময় গুনছিলাম!”
মায়া কোন কথা বলতে পারলো না। ওর চোখে পানি ছলছল করে উঠলো। ওর গলা আটকে গেলো।
কংকা চোখ বন্ধ করে রেখে বলল-
“আপু তুমি আমার একটা শেষ আবদার রাখবে? বড় বোন হিসেবে?”
মায়া কংকার কথা শুনে কান্না করে ফেলল। সে কাঁদতে কাঁদতে বলল-
“তুমি এমন কোন আবদার করো না যেটা রাখার কোন যোগ্যতা আমার নেই!”
কংকা কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে ফিসফিস করে বললো-
“তুমি আমার মেয়েটার মা হতে পারবে?”
কংকার কথা শুনে হিমু কংকার মুখে হাত দিয়ে বলল-
“কেনো এসব কথা বলে আমায় কষ্ট দিচ্ছো? আমার নিশ্বাস যতক্ষণ থাকবে ততক্ষণ তোমার নিশ্বাস ও থাকবে। তোমার কিচ্ছু হবেনা কংকোনা!”
কংকা হিমুর কথার কোন উত্তর দিলোনা। ধীরে ধীরে ওর হাত পা নিস্তেজ হয়ে যেতে লাগলো। হিমু দ্রুত ডাক্তার কে ডেকে আনলো। ডাক্তার এসে চেকআপ করে বলল-
“সরি হিমু সাহেব! তিনি আর বেঁচে নেই!”
হিমু ডাক্তারের কথা বিশ্বাস করতে পারলো না। সে কংকাকে ধরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে ডাকতে লাগলো। কিন্তু কংকার শরীর নিস্তেজ হয়ে ঢলে ঢলে পরতে লাগলো। দীর্ঘক্ষণ ধরে সে পাগলের মতো অস্থির হয়ে কংকাকে ডাকতে লাগলো। শেষে সায়লা বেগম ওকে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে কিছুটা শান্ত করতে পারলো।
হিমু ওর মেয়েকে কোলে তুলে নিলো। ও দেখলো মেয়েটা একদম কংকার মতোই দেখতে হয়েছে। মেয়েকে দেখে ওর মন টা ভরে গেলো। ওর অজান্তেই চোখ দিয়ে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো। আর সাথে সাথে ও শুনতে পেলো কংকা ওর কানে ফিসফিস করে বলছে-
“তোমার কান্না আমি একদম সহ্য করতে পারছিনা হিমু, প্লিজ কান্না থামাও…..”
হিমু অবাক হয়ে চারপাশে তাকিয়ে দেখলো। তারপর নিমিষেই ওর ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো।
কংকাকে শেষবার দেখার সময় হিমু ওর ঠোঁটে একটা গভীর চুমু এঁকে দিলো।
সমাপ্ত।