-আমি এইরকম খ্যাত টাইপ মেয়েকে বিয়ে করতে পারবো না আব্বু। দেখো না আছে ওর স্টাইল আর না আছে কোনো যোগ্যতে এই আজান আবরাজ খানের বউ হওয়ার।
– তুমি বিয়ে বাড়ির ভরা মজলিসে একটা মেয়েকে অপমান করতে পারো না আজান। মজা পেয়েছো না কি তুমি?
– মজা তো তুমি আমাকে নিয়ে করছো আব্বু,আমাকে মিথ্যা বলে গ্রামের বাসায় এনে এভাবে একটা গ্রাম্য জঙ্গলি মেয়ের সাথে জুরে দিতে পারো না।
– যা হবার হয়েছে আজান চুপচাপ বিয়েটা করে নাও এখন এটা আমার মান সম্মানের প্রশ্ন।
– নিজের মান সম্মান তুমি নিজের হাতে নষ্ট করেছো বাবা। আমার কিছু করার নাই আমি মারিয়া কে বিয়ে করে ফেলছি গতকাল। আমি জানতাম তুমি বা মম কেউ মারিয়া কে মানবে না তাই একা একা বিয়ে করে ফেলছি আমি।
রহমান খান কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। কতবড় বোকামি সে করে ফেলছে। কি করবে সে এখন এই বিয়ে না হলে নিজের বন্ধুর চোখে সে অনেক ছোট হয়ে যাবে। অতি আদরের ভাগ্নি মেয়েটা তার বন্ধুর। মামির অত্যাচার থেকে বাঁচাতে রহমান সাহেবের থেকে সাহায্য চেয়েছিলো। সে কোনো কিছু না ভেবে তার ছেলের সাথে বিয়ে দিতে রাজি হয়ে যাই। নাহলে যে মামির পছন্দ করা অই বাজে ছেলেটার সাথে বিয়ে দিয়ে দিতো।
ঘোমটার আড়ালে কাদছে মেয়েটা।ঘোমটা খুলে ফেললো আফরিন। দূরে দাড়িয়া থাকা কেউ আফরিন কে দেখে চমকে যায়৷ ভাবছে আল্লাহ তার সহ্যের আর কত পরিক্ষা নিবেন। সে তো চায় নাই বিয়ে করতে। মামির কথায় রাজি হয়েছে না হলে যে তার জিবন নরক করে তুলতো সে। মামা মামির আর অই সিরাজের হাত থেকে বাঁচাতে এই পদক্ষেপ নেয়।
তখন সেখানে তার মামি মুখ ঝামটা মেরে বলে উঠে।
– যেহেতু ভাই সাহেব আপনার ছেলে বিয়ে করবে না তাই সিরাজের সাথেই আমি আফরিনের বিয়ে দিবো।
– বড় আব্বু তোমার কোনো আপত্তি না থাকলে আমি বিয়েতে রাজি।
বড় ভাইয়ের একমাত্র ছেলের কথায় অবাক হয়ে যায় রহমান সাহেব। আজানের সাথে যে আবরার এসেছে তা সে খেয়াল করে নাই। বিয়ের কথা শুনে আফরিন একবার চোখ তুলে তাকায়। এক পলক তাকিয়েই সে চোখ নামিয়ে ফেলে। নিজেকে অনেক তুচ্ছ মনে হচ্ছে তার। তাকে পন্যের মত ব্যাবহার করা হচ্ছে একজনের পছন্দ হচ্ছে না তো অন্যজনের হাতে তুলে দেওয়া হলো। আবরার নির্বিকার ভাবে দাঁড়িয়ে তার চাচ্চুর উত্তরের অপেক্ষায়। রহমান সাহেব আফরিনের মামার সাথে আলাপ করে অবশেষে তাদের বিয়ের কাজ সম্পন্ন করেন। এবার আফরিনের বিদায়ের পালা। আজান অবাক হয়ে তার বড় ভাইয়ের কাজ দেখে গেলো। যে ছেলে মেয়েদের থেকে দূরে থাকে আজ সে কি না যে চেই এক মেয়েক্ব বিয়ে করলো তাও আবার তার মা কে না জানিয়ে?
আফরিনের মামা আবরারের হাতে হাত রেখে বলে।
– আমার ভাগ্নিকে আমি আজ বিশ্বাস করে তোমাদের হাতে তুলে দিলাম বাবা ও কে দেখে রেখো। ও খুব সহজ সরল গ্রামের মেয়ে ভেবে ও কে কখোনো অবজ্ঞা করো না। ও যা না বুঝে না পারে নিজেদের মতো শিখিয়ে নিও।
– আংকেল আপনি চিনতা করবেন না আমি কথা দিচ্ছি ও কে দেখে রাখবো।
– আমি আছিনা দোস্ত তোর ভাগ্মি অই বাসায় আমার মেয়ের মতো থাকবে। আমি দেখে রাখবো ওকে কথা দিলাম।
আফরিনের চোখ গড়িয়ে পানি পরছে৷ মা-বাবা মারা যায় আফরিনের ১৪ বছর বয়সে আর তখন থেকে সে মামার কাছে মানুষ। মামি যেমন কষ্ট দিয়েছে তার থেকে হাজারগুন স্নেহ মামার কাছ থেকে পেয়েছে৷ আজ যে ২১ এ পদার্পণ করেছে ৭ বছর সে মামা মামির কাছে মানুষ। সবাইকে বিদায় জানিয়ে তারা রওনা দিলো ঢাকার উদ্দেশ্যে । রহমান সাহেবের গাড়িতে আজান উঠেছে আর আফরিন কে আবরারের সাথে পাঠানো হয়েছে।
আফরিন জানালার সাথে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে চুপচাপ কান্না করছে। আবরার আফরিনের পাশে বসে নিজের মতো ফোন চাপছে। দুইজন কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছে না নিজেদের মত আছে৷ গাড়ি চলছে আপন গতিতে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে চারোদিকে অন্ধকার বাড়তে লাগলো। ড্রাইভার কে বলে গাড়ির লাইট অন করালো সে। চোখে আলো আসাতে মাথাব্যাথা বাড়তে লাগলো আফরিনের। হাত দিয়ে চোখ ঢেকে ধিরে ধিরে খুলতে লাগলো সে৷ অনেক্ষন কান্না করার জন্য তার মাথাব্যাথা শুরু হয়েছে। দুইদিন যাবোত না খেয়েই আছে সে। সিরাজের সাথে বিয়ে হওয়ার কথা শুনার পর থেকে খাবার গলা দিয়ে নামছে না তার। গ্রামে সিরাজ নাম বলতেই একজন কে সবাই চিনে,চাদা তোলা,সুদ খাওয়া সব বাজে কাজে নাম তার। বয়স তার ৪০ কবেই পেরিয়েছে তার ইয়াত্তা নাই। হঠাৎ আফরিনের পেটে আওয়াজ অদ্ভুদ আওয়াজ হলো। আবরার এক পলক তাকালো আফরিনের দিকে। আফরিন ভিশন লজ্জা পেলো। অসভ্য পেটে এখন ই আওয়াজ করার ছিলো মানলাম খুদা লাগছে তাই বলে এখন।
– আপনার কি খিদে পেয়েছে?
– ইয়ে না মানে আসলে।
– এতো ইতস্ততবোধ হওয়ার কিছু হয় নাই। আমি জিজ্ঞেস করেছি খিদে পেয়েছে কি না সোজা হ্যাঁ অথবা না করতে পারেন না?
এমন রসকসহীন রুড গলার আওয়াজে খুব রাগ হলো আফরিনের। একে তো অপরিচিত তার উপর নতুন বর সে কিভাবে বলবে যে তার খিদে পেয়েছে লোকটার কি কোনো কমনসেন্স নাই?এখন না বললে আবার কখন খাবার পাবে ঠিক নাই এমনিও অনেক খুদা লাগছে তার।
– হ্যাঁ আমার খুব খিদে পেয়েছে।
আফরিনের উত্তর শুনে আবরার ড্রাইভার কে বলে গাড়ি এক সাইড করালো। গাড়ি থেকে নেমে সে কোথাও চলে গেলো। এইদিকে একা বসে থাকতে আফরিনের ভাল্লাগছেনা তাই সে গাড়ি থাকে নামার সিদ্ধান্ত নিলো। আফরিন কে গাড়ি থেকে নামতে দেখে ড্রাইভার বলে.
– গাড়ি থেকে নামবেন না ম্যাম স্যার এসে দেখলে বকা দিবে। এমনিতেই রাত হয়ে গেছে স্যার আসা অব্দি এখানেই বসে থাকেন।
ড্রাইভারের কথা শুনে আফরিনের মনে হলো লোকটা অনেক রাগি মনে হয়। তবে তার কথা মেনে বসে থাকলে আমাত কোমড় ব্যাথা হয়ে যাবে। এর চেয়ে বরং একটু নেমে দাড়াই তারাতাড়ি আবার গাড়িতে উঠে যাবো।
– কিছু হবে না চাচা, আপনি সে আসলে কিছু বইলেন না। আমি নামবো আর উঠবো।
গাড়ি থেকে নেমে হাত টান করলো আফরিন। এতো টাইম বসে থেকে তার কোমড় ব্যাথা হয়ে গেছে। এতোক্ষন বসে থাকাত মতো মেয়ে আফরিন না। স্বভাবসূলভ আফরিন একটু চঞ্চল। গাড়ি থেকে নামার পর আফরিন খেয়াল করলো কিছু ছেলে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের চাহনী একদম ভালো লাগছে না তার। আফরিন থেকে কিছু দুরুত্তে তারা দাঁড়িয়ে আছে তাই তাদের কথা স্পষ্ট ভাবে আফরিনের কানে আসছে।
– ভাই মালটা কিন্ত অনেক জোশ দেখেন না লাল বেনারসিতে কি সুন্দর লাগছে।
– হ্যা রে সফিক সত্যি বলছিস এতো লাল কমলা।
দুইজ ছেলে এবার হাসতে লাগলো তারা৷ আফরিন গাড়িতে উঠে বসে পড়লো আর নিজেকে বকতে লাগলো কেনো সে নামতে গেলো। তখন আবরার এসেও গাড়িতে উঠে পড়লো। একটা বিরিয়ানির প্যাকেট এগিয়ে দিলো আফরিনের দিকে। আফরিন আবরারের দিকে তাকালো। আবরারের গম্ভির মুখে তাকিয়ে আছে।
– আমাকে দেখা শেষ হলে খাবারের প্যাকেট টা ধরেন এরপর খেয়ে নেন।
আবরারের কথা লজ্জা পায় অনেক আফরিন। তারাহুরো করে আবরারের হাত থেকে প্যাকেট নেয়। প্যাকেট খুলে খাওয়া শুরু করে সে৷ দুদিন পর খাবার খাচ্ছে সে। বেশ অর্ধেক খাবার খাওয়ার পরে তার খেয়াল তার পাশে একজন লোক আছে তাকে খাবার জন্য জিজ্ঞেস করা৷।
– আপনি খেয়েছেন? না খেলে আমার থেকে একটু খেতে পারেন এভাবে তাকালে তো আমার পেটু ব্যাথা করবে।
ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় আবরার আফরিনের কথায়। আফরিন কি তাকে ভুলে গেছে।
– আপনি খান আমার খিদে নাই।
আফরিন বাকিটুকু খাবার খেয়ে শেষ করে জানালা দিয়ে হাত ধুয়ে নেয়। তখন আবরার আফরিনের দিকে একটা মেডিছিন এগিয়ে দেয়। আফরিন হাতে নিয়ে দেখে মাথাব্যাথার মেডিছিন। তারমানে কি উনি খেয়াল করছে আমার মাথাব্যথা করে। আফরিনের একটু ভালো লাগে এটা ভেবে যে লোকটা একটু।।
#আসক্তিময়_তুমি
#নুসাইবা_রেহমান_আদর
#১