#আড়ালে_অনুভবে
#সাদিয়া_আফরিন_প্রতিভা
#পর্বঃ২২
সিনথিয়া:ভ ভাইয়া ওরা এসব কি বলছে?কেনো বলছে?তুমি বলো না এসব কিছু মিথ্যে,আপুর কিছু হয়নি।বলো না,চুপ করে আছো কেনো বলো।
নিরব এর দু বাহু ঝাকিয়ে কাদতে কাদতে বলে সিনথিয়া।নিরব এতক্ষন চুপ ছিলো।এবার সে নিরবতা ভেঙে বলে,
নিরব:কে বলেছে তোর আপু নেই?কিচ্ছু হয়নি তোর আপুর।
সিনথিয়া:(ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে সিনথিয়ার)ব বলেছিলাম না আপুর কিচ্ছু হয়নি।আপু একদম ঠিক আছে,ওরা এতদিন আমায় মিথ্যে বলেছে তাই না?
নিরব:তোর আপু কোথায় আছে জানিস?
সিনথিয়া:ক কোথায়?
নিরব:আমার হৃদয়ে,আমার অনুভবে,আমার প্রতিটা অনুভুতির সঙ্গে মিশে আছে আমার দিয়াপাখি।ও তো বেচে আছে,আমার হৃদয়ে।আমি তো প্রতি মুহূর্তে অনুভব করি ও আমার সঙ্গেই আছে।
সিনথিয়া:(মুখিটা মলীন হয়ে যায় আবারো,চোখ থেকে অনবরত জল গড়িয়ে পরতে থাকে)
নিরব:দিয়াপাখি চলে যায়নি সিনথু।ও বেচে আছ। শুধু আমার না সকলের মনে ও বেচে আছে, যেখান থেকে চেষ্টা করলেও সরিয়ে ফেলা সম্ভব না।
সিনথিয়া:আমি পারবোনা ভাইয়া,আপুকে ছাড়া থাকতে পারবোনা।আমি কেনো বেচে গেলাম বলতে পারো?আমাকেও সঙ্গে করে নিয়ে যেতো। কেনো রেখে গেলো আমায়?
নিরব:সবকিছুর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য।
সিনথিয়া:(অবাক হয়ে তাকায় নিরব এর দিকে)
নিরব:আমি যে বড্ড ক্লান্ত বোন।একা একা লড়তে লড়তে আর শক্তি নেই আমার মাঝে।তোকে যে খুব প্রয়োজন আমার।যাদের কারণে আজ আমার দিয়াপাখি আমার সঙ্গে নেই তাদের শাস্তি দিবিনা বোন?থাকবিনা তোর এই ভাইটার পাশে?
সিনথিয়া:(কাদতে কাদতে নিরব এর বুকে লুটিয়ে পরে) থাকবো ভাইয়া,থাকবো।উপযুক্ত শাস্তি দেবো তাদের।
নিরব:(চোখের কার্নিশে জমে থাকা অশ্রু গড়িয়ে পরার আগেই মুছে নেয়।তারপর সিনথিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে ওকে সরিয়ে কিছুটা সামনে বসায়)এভাবে বিছানায় শুয়ে থাকলে কি করে করবি এসব?তার জন্য তো সুস্থ হতে হবে তোকে। যে কদিন আছি তার মধ্যেই আমি আমার দিয়াপাখির খুনিদের শাস্তি দিতে চাই,যা আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়।
সিনথিয়া:শেষের কথাটা কি বললে তুমি?
নিরব:আব না না,ছাড় তো ওসব।এখনও কি কেদেই যাবি?
সিনথিয়া:(নিজের চোখের জল মুছে নেয়)নাহ, কাঁদবো না আমি।শাস্তি দেবো আসল দোষিকে, নিজের প্রাণ দিয়ে হলেও আমি আপুর চলে যাওয়ার প্রতিশোধ নেবোই।নাহলে আমার নামও সিনথিয়া আফরিন প্রথা নয়।
বেশ শক্ত গলায় বলে কথাটা।সিনিথিয়াকে এমন দেখে নিরব এর কোণেও হাসি ফুটে ওঠে।মনে মনে বলে, “আসছি আমি,তবে এবার আমি একা নই।আর কতোদিন বেচে থাকতে পারিস তোরা তা এই নিরব দেখে নেবে।আমার দিয়াপাখির প্রতি বিন্দু বিন্দু চোখের জলের প্রতিশোধ নেবো আমি।”(কপালের সিরাগুলো খানিকটা ফুলে ওঠে নিরবের)
______🌿
জিসান:মে আই কাম ইন ইশা?
ইশা:আরে স্যার পারমিশন নিচ্ছেন কেনো?আসুন না। (ফাইল থেকে মুখ সরিয়ে বললো)
জিসান:তুমি যেহেতু ফর্মালিটি দেখিয়ে স্যার বলতে পারো তাহলে তো আমারো পারমিশন নেওয়া উচিৎ। (চেয়ার এ বসে বললো)
ইশা:মানে আসলে..
জিসান:আমি তোমার বাবার বয়সি।তাই আমায় আঙ্কেল বলতে পারো।এসব স্যার বলার কোনো দরকার নেই।
ইশা:আচ্ছা আঙ্কেল।তা হঠাত আমার কাছে?কোনো দরকার?
জিসান:তোমার সাথে কিছু কথা বলতে এসেছিলাম।
ইশা:হ্যা স্যার সরি আঙ্কেল বলুন না কি বলবেন।
জিসান:বিষয়টা নিরব কে নিয়ে।
ইশা:(ঠোটের হাসি মিলিয়ে গেলো)
জিসান:ইশা,আমি নিরব কে তিন বছর ধরে চিনি। নিজের ছেলের মতোই দেখি ওকে।কেনো জানিনা এক অদ্ভুত মায়া কাজ করে আমার ওর প্রতি।আমি এত বছর এ এইটুকু সিওর হয়েছি যে ও নিজের ভিতর খুব বড় কিছু লুকিয়ে রেখেছে।আমি যতবার ওকে জিজ্ঞেস করেছি ততবার ওর মুখে শুধু একটা নাম ই শুনেছি।আর বাকি যা বলে কোনোটাই ক্লিয়ার না,যার কিছুই বুঝতে পারি নি আমি।
ইশা:ক কি নাম?
জিসান:উমম হ্যা দিয়া।
ইশা:(বিষ্ফরিত চোখে তাকালো জিসান এর দিকে)
জিসান:আই থিংক ওর কিছু একটা পাস্ট আছে যা ও নিজের মাঝে চেপে রেখেছে।খুব মায়া লাগে ছেলেটার উপর,ওর ফ্যামিলি মেম্বার্স বলতেও কাউকে তেমন দেখতে পাইনা।ওর বাবা কে এই কয় বছরে শুধু একদিন দেখেছিলাম,তাও এই মাস খানেক আগে।একটাবার ভেবে দেখো তো, যার ছেলের অপারেশন এর পর বেচে থাকার চান্স অনলি ৩০% সে কি করে এতো স্বাভাবিক ভাবে নিজের বিজনেস এর কাজে লেগে থাকতে পারে?আসলেই,এতো ভালো একটা ছেলের খোজ খবর রাখার জন্য দু তিনজন ফ্রেন্ড ছাড়া কেউ ই নেই।
ইশা:(আপনি ওর ব্যাপারে সবকিছু জানলে এমন টা বলতে পারতেন না স্যার)মনে মনে বললো।
জিসান:এনি ওয়ে,আমি তোমাকে এসব এই কারণেই বলছি যে একজন ডক্টর হিসেবে তোমার এতটুকু জানা উচিৎ।কারণ প্রেজেন্ট এ ওর ব্রেইন এ প্রেসার পরা মানেই সিচুয়েশন আরো বেশি খারাপ হয়ে যাওয়া।এমনভাবে চললে হয়তো বা ওকে বাচানো যাবে ন..
ইশা:নাহ..মানে এমন ভাবে বলছেন কেনো আঙ্কেল। আমি শতভাগ চেষ্টা করবো।
জিসান:তোমার উপর আমার বিশ্বাস আছে।কালকে তোমাদের কথা শুনে আমার কেনো জানিনা মনে হয়েছিলো তুমি ওর খুব ভালো বন্ধু হয়ে উঠতে পারো।তাই তোমায় পারসোনালি বললাম এসব।বাকিটা তোমার ব্যাপার।আমি তাহলে আসছি এখন।
ইশা:মাথা নেড়ে হ্যা সম্মতি জানালো।
জিসান বেড়িয়ে যেতেই উজ্জ্বল কেবিনে ঢুকলো। ইশাকে কোথাও নিয়ে যেতে চাইলো।ইশাও কিছু না বলে ওর সঙ্গে যেতে লাগলো।কারণ ও জানে উজ্জ্বল এখন কি বলতে চলেছে।
________🌿
ইশা নিজের চোখ থেকে চশমা টা খুলে জমে থাকা জল মুছে নেয়।তারপর ওড়না দিয়ে চশমা টা মুছে আবারো চোখে দেয়।সামমে থাকা নদীর দিকে তাকিয়ে থাকে,চাঁদের আলোটা সরাসরি এসে পানির উপর পরায় মনে হচ্ছে আসল একটা চাঁদ।
উজ্জ্বল এখনো স্তব্ধ হয়ে আছে।নিজের অজান্তেই তার চোখের কোণেও জল এসে ভীর জমিয়েছে। কিছুক্ষন আগে ইশাকে এখানে এনে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার পর ইশা নিজের অতীত সম্পর্কে সবটা বলে উজ্জ্বল কে।সবটা শুনে সে নিজেই অবাক হয়ে যায়।
নিস্তব্ধতা ভেঙে এবার ইশা বললো,
ইশা:কি হলো?চুপ করে আছো যে?তুমি হয়তো আমার জীবনের সাথে নিজের জীবন জড়াতে চাওনা আর।তাই না?
উজ্জ্বল:আমি আগেই বলেছি আমি তোমার অতীত সম্পর্কে কিছু জানতে চাইনা।তবুও তোমার ইচ্ছে হয়েছে বলে তুমি বলেছো।কিন্তু এতে আমার মন পরিবর্তন হয়ে যাবে ভাবলে কি করে ইশা?
ইশা:(অবাক হঅয়ে তাকালো উজ্জ্বল এর দিকে)
উজ্জ্বল:আমি আর যাই হোক না কেনো তোমার প্রাক্তন স্বামীর মতো নই।হয়তো বা তোমায় ভালোবাসতে না পারলেও তোমার প্রতি দায়িত্ব পালনে আমি সামান্যতম ত্রুটি রাখবোনা।ঠকাবোনা আমি তোমায় এটুকু বিশ্বাস রাখতেই পারো আমার উপর।
ইশা:তোমার মতো মানুষকে নির্দিধায় বিশ্বাস করি আমি উজ্জ্বল।কিন্তু তোমার এখনো একটা জিনিস জানা বাকি।
উজ্জ্বল:আমিতো কিছু জানিতে চাই না ইশা।
ইশা:কিন্তু আমি বলতে চাই উজ্জ্বল।
উজ্জ্বল:ঠিক আছে বলো।
ইশা:সেই লোকটা আর কেউ নয়,সয়ং নিরব।
উজ্জ্বল:কিহ! (চোখ বড়বড় করে বলে)
ইশা:হুম।আর আমার নাম, সাদিয়া আফরিন প্রতিভা।
উজ্জ্বল:(নামটা শোনা মাত্রই উজ্জ্বল যেনো আকাশ থেকে পড়লো।তার মানে ও যা ভাবছে তাই সত্তি!)
ইশা:আর আমার সেই বোনের নাম সি..
উজ্জ্বল:সিনথিয়া আফরিন প্রথা!এম আই রাইট? (নিচের দিকে তাকিয়ে বলে)
#আড়ালে_অনুভবে
#সাদিয়া_আফরিন_প্রথা
#পর্বঃ২৩
প্রভা:মিঃ চঞ্চল আপনি আমাকে মাঝে মাঝে তুই করে ডাকেন কেনো বলুন তো?
নদীর পারে বসে আছে নিরব এবং প্রভা।প্রভা নিচের সিড়িতে বসে পানিতে হালকা পা ডুবিয়ে রেখেছে আর নিরব তার এক সিড়ি উপরে বসে পিছন থেকে তার প্রেয়সি কে জড়িয়ে ধরে কাধে মুখ ডুবিয়ে রেখেছে।তখন ই নিরবতা ভেঙে প্রশ্ন করে বসলো প্রভা।
নিরব:আমি যাদের বেশি ভালোবাসি তাদের তুই করেই ডাকি।কিন্তু হবু বউ কে তুই ডাকলে কেমন একটা দেখায় না!তাই আরকি মাঝে মধ্যে ডাকি।কেনো তোমার খারাপ লাগে বুঝি?
প্রভা:মোটেই না।বরং আমার তো খুব ভালো লাগে।
নিরব:তা নাহয় বুঝলাম।এবার আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।
প্রভা:কি প্রশ্ন মিঃ চঞ্চল ভাই?
নিরব:কে তোমার ভাই? (ভ্রু কুচকে বললো)
প্রভা:হি হি..
নিরব:দিস ইজ নট ফেয়ার দিয়াপাখি!তুমিও দেখছি ইদানিং আমায় ভাই বলে ডাকো।এসব কতোদিন চলবে শুনি!
প্রভা:যতদিন না আপনার ছেলে মেয়েরা আপনাকে মামা বলে ডাকবে।
নিরব:ওকে আপু নো প্রবলেম।তাহলে তোর ছেলে মেয়েও তোমায় ফুফি বলে ডাকবে।
প্রভা:ঐ কে তোর বোন?আমি বোন হলে বউ টা কে!
নিরব:যাক বাবা,নিজের বেলায় ষোলো আনা আর আমার বেলায় জিরো আনা।তবে হ্যা, ভাবছি নতুন করে বউ খুজতে হবে।
প্রভা:একেবানে মেরে ফেলবো। (নিরব এর দিকে ঘুড়ে ওর কলার চেপে ধরে বলে)
নিরব:এই হাতে মৃত্যু ও যে আমার কাছে সোভাগ্যের ব্যাপার।
(প্রভার হাত ধরে কথাটা বলে এবং ওর হাত টা বুকের মাঝে চেপে ধরে।প্রভাও মুচকি হেসে জাপটে ধরে নিরব কে।)
বর্তমান—-
দেওয়ালে থাকা ঘড়ির টুং টুং শব্দে ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এলো নিরব।আনমনেই মুচকি হাসলো সে,অতঃপর তার দিয়াপাখির ছবি চোখের সামনে তুলে ধরে।
নিরব:হ্যাপি ফার্স্ট মিট এনিভারসারি দিয়াপাখি। তুমি ভুলে গেলেও আমি কিন্তু ভুলিনি।আজ থেকে সাত সাতটে বছর আগে এই দিনেই তো প্রথম সেই রুপসি কে দেখেছিলাম আমি।ভাগ্যেস সেদিন তুমি বেখেয়ালি করে তাড়াতাড়ি হাটছিলে নাহলে তো তোমার সঙ্গে অমন অদ্ভুতভাবে দেখাও হলো না।
আবারো মুচকি হাসলো নিরব।ছবিটি রেখে দিয়ে হাতে থাকা একটি নুপুড় তুলে ধরলো।এই নুপুড়টা সেদিন প্রভা সামান্য হোচট খাওয়ায় খুলে পড়ে গিয়েছিলো।নিরব এটা নিজের অজান্তেই যত্ন করে রেখে দিয়েছিল।
নিরব:বড্ড মিস করি দিয়াপাখি।আমার সেই ছোট্ট দিয়াপাখি কে।যেই দিয়া পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া আমার সঙ্গে ঝগড়া করতো সেই দিয়া কে,১০ টাকার জন্য শত লেকচার দিতো সেই দিয়াকে, মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়ার আবদার করতো সেই দিয়াকে,আমাকে হাজারো উদ্ভট নাম দিতো সেই দিয়া কে,রাতের আধারে বাহিরে ঘুড়তে যাওয়ার বায়না ধরতো সেই দিয়াকে। সেই দিয়াপাখি কে আমি বড্ড মিস করি,তার করা প্রতিটা কাজ কে মিস করি আমি।
তোর প্রতিটা আবদার পূরণেও যে এক অন্যরকম আনন্দ পেতাম আমি দিয়াপাখি।সেই সময়টা কি থেকে থাকতে পারতোনা?চাইলেই কি সেই সময়টাতে ফিরে যেতে পারি না?একটিবার কি যাওয়া যায় না সেই সময়টাতে?যদি যেতে পারতাম তাহলে তোকে হৃদমাঝারে শক্ত করে আকড়ে ধরে থাকতাম।কোথাও যেতে দিতাম না।
একবার ও তোর মিঃ চঞ্চল এর কথা ভাবলিনা তাই না?সে যে তার দিয়াপাখি ছাড়া অসম্পূর্ণ। তুই বুঝতে পারলিনা তাই না?
নুপুড় টা বুকে আকড়ে ধরে চোখ বন্ধ করে নিলো নিরব।চোখে জমে থাকা অশ্রু এবার গড়িয়ে পড়লো গাল বেয়ে।আপনমনেই বলে উঠলো সে,
নিরব: ~~হাজার পূর্ণতা পেয়েও যে,
অসমাপ্ত রয়ে গেলো সপ্ন🥀
তবুও যে প্রতি মুহূর্তে,
দেখি শত নতুন সপ্ন
আজ পাশে নেই তুমি,
তবে তাতে কি?
তুমি নাহয় আমার~
আড়ালে অনুভবে ই থেকো🌼🥀
______🌼
উজ্জ্বল এর মুখে প্রথার নাম শুনে বিষ্মিত হলো ইশা।ভ্রুযুগল কুচকে বলে উঠিলো,
ইশা:তুমি কি করে জানলে।
উজ্জ্বল:নিশ্চুপ (এখনো নিচের দিকেই তাকিয়ে আছি)
ইশা:আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করছি উজ্জ্বল! তুমি কি করে সিনিথুর নাম জানলে?
উজ্জ্বল:হ্যা,ন না ত তুমি ই তো বললে।
ইশা:আমি কখন বললাম?
উজ্জ্বল:তুমি ই বলেছিলে একটু আগে।তোমার হয়তো বা মনে নেই।
ইশা:ওহ।
উজ্জ্বল:আশা করি তোমার অতীত সম্পর্কে আর কিছু বলার নেই?
ইশা:(মাথা নাড়িয়ে না জানালো)
উজ্জ্বল:আমি তোমার থেকে জানতে চাই নি তবুও তুমি বললে।কিন্তু তাতে আমার মনে সামান্যতম সংকোচ জাগেনি।বরং তোমার প্রতি শ্রদ্ধা আরো বেড়ে গেছে।যেই মেয়েটা ছোট বেলা থেকে এতো কিছু সজ্য করতে পারে এমনকি বিয়ের পর ও এতকিছু সজ্য করে তার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে তাকে নিয়ে কোনো সংকোচ থাকার প্রশ্নই ওঠে না।
ইশা:নিশ্চুপ
উজ্জ্বল:আমি তোমায় বলেছি ইশা,তোর উপর আমি কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছিনা।আমি শুধু তোমার মতামত জানতে চাইছি।যদি তোমার মতামত না ও হয় তবুও আমাদের সম্পর্ক আগের মতোই থাকবে।
ইশা:আমার এ একটু সময় চাই উজ্জ্বল।
উজ্জ্বল:ফাইন,তুমি যত ইচ্ছে সময় নেও এবং ভেবে চিনতে উত্তর দাও।
ইশা:আ আজকে ক কয় তারিখ?
উজ্জ্বল:২২ মেবি।(রাত ১২ টার পর)
ইশা:(আজকের দিনটা আমার জীবনের সমচেয়ে বিষাক্ত দিন।মনে রাখতে চাইনা তবুও কেনো মনে পরে যায়!কেনো ইচ্ছে করে আবারো সেই সাত বছর আগের সময়টাতে ফিরে যেতে?যদি আবারো ফিরে যেতে পারতাম তাহলে কখনো অমন একজন মানুষের সঙ্গে নিজের জীবন জড়ানোর মতো ভুল করতাম না।নাই তাকে ভালোবাসার মতো ভুল করতাম।)মনে মনে
দুজন মানুষ ই দুদিক থেকে দিনটিকে মনে রেখেছে।দুজনেই ভাবনায় আজ সেই প্রথম দেখার দৃশ্য রয়েছে।কিন্তু দুজনের চিন্তা আজ ভিন্ন।একজন চাইছে তার প্রেয়স্যার স্মৃতি আকড়ে ধরে রাখতে,জীবনের শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত।অন্যদিকে আরেকজন চাইছে সকল স্মৃতি মুছে ফেলতে!🥀
হয়তো বা দুজনের চিন্তা ভিন্ন ই রয়ে যাবে বাকি জীবন টাতে••
______🌼
কিছুক্ষণ আগেই বাড়ি ফিরলো উজ্জ্বল এবং ইশা।উজ্জ্বল রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে রোজকার মতো ব্যালকনি তে এসে দাড়িয়েছে।আজও তার হাতে একই ছবি।
উজ্জ্বল:এতো বছর তোমায় ভুলে যেতে চেয়েছি আমি কিন্তু পারিনি।সবকিছুর মাঝেই সামান্যতম সবকোচ থেকে যেতো,মনে হতো আমি ভুল করছি না তো?কিন্তু না আজ সেই সকল চিন্তা দূড় হয়ে গেছে।এতদিন তোমায় খারাপ ভাবতাম।কিন্তু আজ থেকে তোমায় আমি ঘৃণা করি,আই জাস্ট হেট ইউ।তোমার মতো মেয়েরা না কাউকে ভালোবাসতে যানে আর নাই কারোর ভালোবাসার দাম দিতে জানে।আমার নিজের উপর ঘৃণা লাগছে আমি কিনা তোমায় ভালোবেসেছিলাম!
কথাটা বলেই হাতে থাকা ছবিটি টুকরো টুকরো করে বাহিরে ফেলে দেয়।
উজ্জ্বল:আজ এই ছবির মতো তোমার প্রতি থাকা আমার সকল অনুভুতি ও ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে প্রথা।যা চাইলেও জোড়া লাগানো সম্ভব নয়।
_________🌿
“আপু দাড়া প্লিজ,আপু,আপু সরে যা ওখান থেকে।”
একটি মেয়ে পাগলের মতো দৌড়োচ্ছে এবং চিৎকার করে বলছে কথাগুলো কিন্তু অপর মেয়েটির কানে কিছুই যাচ্ছে না।হঠাত করেই মেয়েটি খেয়াল করো সামনে থেকে একটি বঅড় গাড়ি আসছে।দৌড়োতে থাকা মেয়েটি চিৎকার দিয়ে বললো,”আপুউউউউ” কথাটা বলেই আরো দ্রুত দৌড়ে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো অপর মেয়েটিকে।পরক্ষনে সামনে তাকাতেই চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো…
সিনথিয়া:নাহহহহহ… (চিৎকার করে ঘুম।থেকে উঠে বসলো)
সিনথিয়া:আপু সরে যা প্লিজ,আপুউউউ..
সিনথিয়া চিৎকার শুনে সুপ্তি ধরপরিয়ে উঠে বসলো।
সুপ্তি:কি হয়েছে সিনথু!শরীর খারাপ লাগছে!
সিনথিয়া:নাহহহ,আপু.. (কানে হাত দিয়ে কাদতে কাদতে একই কথা বলে যাচ্ছে)
সুপ্তি ব্যাপার টা বুঝতে পেরে নিজে মুখ চেপে ধরে কান্না নিয়ন্ত্রন করে।সিনথিয়া কে বুকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগে।
সুপ্তি:চুপ কর বোন।তোর আপু নেই এখানে।
সিনথিয়া:আ আপু কে আটকাও ভাবি।ও আমার কথা শুনছে না কেনো!..
কাদতে কাদতে কথাগুলো বলতে বলতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ে।সুপ্তি সাবধানে ওকে শুইয়ে দেয় বিছানায়।
সুপ্তি:কেনো আল্লাহ?পৃথিবীতে ভালো মানুষদের ই কেনো তুমি এভাবে কষ্ট দেই?কেনো এদের দুই বোন কে তুমি এভাবে আলাদা করে দিলে!
#চলবে