#আড়ালে_অনুভবে
#সাদিয়া_আফরিন_প্রথা
পর্বঃ২৪+২৫
সুপ্তি:এতো কি ভাবছিস তুই সিনথু?
সিনথিয়া:পাচ বছর আগের কথা
সুপ্তি:মানে?
সিনথিয়া:এক্সিডেন্ট এর দিনের আসল ঘটনা।
সুপ্তি:তুই ঠিক কি বলতে চাইছিস?
সিনথিয়া:আমি তোমাকে কিছু প্রশ্ন করবো ভাবি। উত্তর দিতে পারবে?
সুপ্তি:উত্তর জেনে থাকলে অবশ্যই বলবো।
সিনথিয়া:সেদিন এক্সিডেন্ট প্রেস এ আপুর ডেড বডি কোন জায়গায় পাওয়ায় যায় বলতে পারো?
সুপ্তি:যতটা জানি ব্রিজ এর উপরেই পাওয়া যায়।
সিনথিয়া:কিন্তু এটা কি করে সম্ভব?
সুপ্তি:মানে?
সিনথিয়া:(একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো) সেদিন আমি আপুকে বারবার বলছিলাম সরে যেতে।কিন্তু ও শোনেনি।গাড়িটা যখন খুব কাছে তখন আমি ছুটে গিয়ে আপুকে ধাক্কা দেই।যার ফলে মেইন এক্সিডেন্ট টা আমার হয়।কিন্তু তারপর ও আপুকে পুরোপুরি সেইভ করতে পারিনি।গাড়ির মিডেল পয়েন্ট এ আমি ছিলাম।আপুকে ধাক্কা দেওয়ার ফলে ও কিছুটা সাইডে চলে যায় আর তখনি এক্সিডেন্ট টা হয়।আমি জ্ঞান হারানোর আগে পর্যন্ত যতটা দেখিতে পেয়েছি তাতে আমি সিওর গাড়ির সাইডে ধাক্কা লেগে আপু ছিটকে অনেকটা দূড়ে গিয়ে পড়ে। ব্রিজটার একদম শুরুর দিক হওয়ায় নিচে নদি ছিলোনা।কিন্তু ডান পাশের নিচের রাস্তায় অনেকটা ঝোপঝাড় ছিলো।যার কারণে নিচে থেকে মানুষ গেলেও ঝোপঝাড় এর মধ্যে নজড় যাওয়া খুব কঠিন ব্যাপার।আমার যতটা মনে আছে আপু ছিটকে গিয়ে ঐদিকটাতেই পরে যায়।তারপর আমার কিছু মনে নেই।
সুপ্তি:কি বলছিস সিনথু!
সিনথিয়া:যতটা বলছি তা আমি ১০০% সিওর হয়েই বলছি।যার কারণে ব্রিজ এর উপর আপুকে পাওয়া ইম্পসিবল।
সুপ্তি:তার মানে!
সিনথিয়া:আচ্ছা এবার বলো তো তোমরা কি আপুর মুখ দেখতে পেয়েছিলে?
সুপ্তি:ন না,খুব বাজেভাবে বিকৃত হয়েছিল তাই কারোর দেখার সাহস হয় নি।
সিনথিয়ায়:ওহ শিট!(বলেই পাশে থাকা টেবিলে ঘুষি মারে)তাহলে তোমরা এতো সিওর হলে কি করে?
সুপ্তি:উচ্চতা,ফিগার সবকিছু প্রভার সঙ্গে মিলে যাচ্ছিলো।এমনকি ও সেদিন যেই রঙের জামা পরেছিলো ও ঐটাও মিলে গেছিলো।
সিনথিয়া:শুধু এমন মিল দেখেই তোমরা মেনে নিলে ওটা আপু!এতটা জ্ঞানশূন্য কি করে হতে পারো তোমরা।মেইন এক্সিডেন্ট টা আমার হয় তাই মৃত্যুর রিস্ক ও তো আমার বেশি ছিলো।আমি কেনো মরলাম না তাহলে!
সুপ্তি:সিনথু কি বলছিস এসব!
সিনথিয়া:ঠিক আছে ওসব ছাড়ো।আর কি কি হয়েছিলো সবটা বলো আমায়।
সুপ্তি:আমরা সকলে বিশ্বাস করে নিলেও নিরব ভাইয়া কিছুতেই বিশ্বাস করছিলো না।আশেপাশের সব এলাকা সার্চ করায় কিন্তু সেখানে কিছুই পাওয়া যায় না।ত তবে হ্যা তুই যেই ঝোপঝাড় এর কথা বললি ওখানে প্রভার পায়ের একটা নুপুড় পাওয়া যায়।আরেকটা নুপুর..
সিনথিয়া:আরকেটা নুপুড় আগে থেকেই ভাইয়ার কাছে ছিলো।
সুপ্তি:মানে?
সিনথিয়া:ক কিছু না।এখন আমার কথাটা মন দিয়ে শোনো।আমি তোমাকে যা বললাম এই বিষয় যেনো কেউ ছিটেফোঁটা ও না জানতে পারে। নিরব ভাইয়া তো নাই।আমি সিওর কিছু না জেনে ভাইয়াকে মিথ্যে আশা দিতে চাইনা।
সুপ্তি:কিন্তু তুই কি সিওর ওটা প্রভা ছিলো না?
সিনথিয়া:আমি তোমাকে কি বললাম ভাবি!এটা ইম্পসিবল।
সুপ্তি:ত তার মানে প্রভার কিছু হয়নি!ও ঠিক আছে?বল না সিনথু ও ঠিক আছে? (চোখে মুখে একরাশ আশা নিয়ে বলে)
সিনথিয়া:আমি জানিনা ভাবি।তবে আমি তোমায় কথা দিচ্ছি।সবটা আমি জেনেই ছাড়বো।একটু ভরসা করো আমার উপর।আমি নিজের সবটা দয়ে চেষ্টা করবো সত্যিটা জানার।তুমি দোয়া করো ভাবি।
সুপ্তি:হে আল্লাহ,প্রভাকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দাও প্লিজ।মেয়েটাকে ছাড়া সবকিছু ফাকা ফাকা লাগে।এই আশার আলোটা যেনো নিভে না যায়। আমি তোর সঙ্গে আছি সিনথু।যেকোনো দরকার হলে আমায় বলিস।আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করবো তোর সাহায্য করার।তুই সফল হবি সিনথু,তুই সফল হবি দেখিস।
সিনথিয়া:আমাকে যে সফল হতেই হবে ভাবি।আপুর সঙ্গে যে জড়িয়ে আছে আরো একটি জীবন।শত চিকিৎসাও নিরব ভাইয়াকে সুস্থ করতে পারবেনা।পারবে শুধু তার দিয়াপাখি। আমি তোমায় বলছি ভাবি,আপু থাকলে ভাইয়ার কিচ্ছু হবেনা।আমার সফল হতে হবে ভাবি,সফল হতে হবে। (সুপ্তিকে জড়িয়ে ধরে বলে)
______🌿
আজ আবারো নিরব এর কাছে যাচ্ছে ইশা।কেনো জানে না জিসান এর বলা কথাগুলো খুব ভাবাচ্ছে ওকে।আর নিজের ও জানতে ইচ্ছে করছে এই ব্যাপারে।
প্রতিবার এর মতো এবারো নিরব এর কেবিনের দিকে যত এগোচ্ছে ততই হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে ইশার।এত বোঝায় নিজের মনকে তবুও মন তো বুঝতেই চায় না।অন্যদিকে কালকে রাত থেকে উজ্জ্বল এর ব্যাপারে ভাবতে ভাবতে ঘুমোতে পারেনি সে।কি করবে সেটাই বুঝতে পারছে না। একদিকে উজ্জ্বল কে ফিরিয়ে দিতে পারছে না অন্যদিকে এতোকিছুর পর ও নিরবের যায়গায় অন্য কাউকে বসাতে বুক টা ফেটে যাচ্ছে তার।
সব ভাবনা বাদ দিয়ে নিরবের কেবিন এর সামনে চলে আসে ইশা।দড়জা টা সামান্য খুলে পারমিশন নিতে যাবে তার আগেই চোখ আটকে যায় ওর।
নিরব নিজের চেয়ার খানিকটা পাশে ঘুড়িয়ে হেলান দিয়ে বসে আছে।এবং তার হাতে একটু ছবি।ছবিটি অন্য কারোর না সয়ং প্রভার।
এমন কিছু দেখার জন্য ইশা মোটেই প্রস্তুত ছিলো না।সে ভাবতে লাগলো নিরব তার ছবি নিয়ে কি করছে?পরক্ষনেই ভাবলো হয়তো বা নিজের করা কাজের জন্য অনুতপ্ত তাই।
চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ইশা।
ইশা:ম মে আই কাম ইন ডক্টর?
নিরব:কে?(ছবিটা নিচে নামিয়ে চেয়ার টা শোজা করে) ওহ ইশা আপনি।হ্যা আসুন না,পারমিশন নিচ্ছেন কেনো?
ইশা:(মুচকি হেসে ভিতরে আসে)
নিরব:বসুন
ইশা:(চেয়ারে বসে)কারোর ছবি দেখছিলেন বুঝি?
নিরব:(হাত থেকে ছবিটা উপরে তুলে মুচকি হাসে) এই ছবি তো আমার মনের গহীনে গভিরভাবে গেঁথে রাখা আছে।সবসময় ই দেখতে পাই। (কিছুটা আস্তে বললো কথাটা)
ইশা:(পুরো কথাটাই শুনতে পেলো তবুও নিজেকে শান্ত রাখলো) কিছু বললেন ডক্তর নিরব?ছবির এই মেয়েটি কে জানতে পারি?স্পেশাল কেউ?
নিরব:হা হা হা..
ইশা:হাসছেন কেনো?
নিরব:আমার হৃদয় ও,আমার প্রেমময়ী নারী ও, আমার সকল অনুভির সঙ্গে মিশে থাকা একমাত্র নারী ও,আমার আড়ালে অনুভবে থাকার একমাত্র ব্যাক্তি ও।সবশেষে আমার স্ত্রী ও।এই নিরবের দিয়াপাখি।
ইশা:(চোখ বন্ধ করে নিলো।শ্বাস আটকে আসছে ওর আজ পাচ বছরের ও বেশি সময় পর সেই মানুষটির মুখে দিয়াপাখি ডাকটা শুনে সময়টা থমকে যাচ্ছে তার।হৃদয় জানান দিচ্ছে,”হ্যা দিয়া, তুই শুধু নিরবের দিয়াপাখি” আর মস্তিষ্ক জানান দিচ্ছে, “নিরবের দিয়াপাখি অনেক আগেই মরে গেছে।এই মানুষটা তোর সাথে যা করেছে তা ভুলে যাওয়ার মতো নয়।)
নিরব:কি হলো ইশা চুপ করে আছেন কেনো?
ইশা:আব না মানে আমার একটু কাজ মনে পরে গেলো।আমি আপনার সঙ্গে পড়ে কথা বলছি ডক্টর নিরব।
নিরব:আপনাকে একটা কথা বলবো?
ইশা:হ হ্যা বলুন
নিরব:আপনার চোখদুটো একদম আমার দিয়াপাখির মতো।আপনি আশেপাশে থাকলে কেনো জানিনা মনে হয় দিয়াই এখানে আছে।হাহ, আমি তো মাঝে মাঝে ভাবি আপনি ই আমার দিয়াপাখি।
ইশা:(চোখ বড়বড় করে তাকালো নিরব এর দিকে। কপাল থেকে ঘাম বেয়ে বেয়ে পরছে তার।)
নিরব:আরে ডক্টর ইশা আপনি এসির মধ্যে এতো ঘামছেন কেনো?আমি তো জাস্ট মজা করলাম, ডোন্ট মাইন্ড প্লিজ।
ইশা:ন না না সমস্যা নেই।আমি আসছি..
কথাটা বলেই বেড়িয়ে গেলো ইশা।নিরব এর একটু অদ্ভুত লাগলেও পাত্তা দিলোনা।আবারো নিজের দিয়াপাখি কে দেখায় মন দিলো।
_______🌿
রাত ৮ টা বাজে এখন।ইশা নিজের কাজ শেষ করে ব্যাগটা নিয়ে বেড়িয়ে যেতে লাগলো ঠিক সেই সময় দেখলো নিরব আর সিনথিয়া পাশাপাশি হেটে বেড়িয়ে যাচ্ছে।সিনথিয়া কে দেখেই কেনো জানেনা বুকের মাঝে মোচড় দিয়ে উঠলো।
সারাদিন মুখে মেকাপ দিয়ে স্টাইল করে চুল বেধে ঘুড়ে বেড়ানো মেয়েটা কেমন যেনো অগোছালো হয়ে গেছে।চোখের নিচে খানিকটা কালি পড়ে গেছে।চুলগুলো ও সাধারণ ভাবে খোপা করা। মুখটাও কেমন যেনো খশখশে লাগছে।সবসময় কনুই পর্যন্ত মেহেন্দি দিয়ে থাকা মেয়েটার হাতে এখন মেহেন্দির ছিটেফোঁটা ও নেই।নখেও নেইলপলিস নেই।
সিনথিয়া কথা ভাবতে ভাবতেই খেয়াল হলো ওদের একসাথে বেড়িয়ে যাওয়ার কথাটা।পরক্ষনেই মেজাজ টা বিগড়ে গেলো।সকালে নিরবের কথায় কিছুটা সন্দেহ লাগলেও তা আবারো কেটে গেলো।
আর কিছু না ভেবে বেড়িয়ে পরলো হসপিটাল থেকে।নিচে আসতেই দেখলো উজ্জ্বল গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে।ইশা কে দেখতেই মুচকি হাসলো ও।ইশাও মুচকি হেসে গাড়িতে উঠে বসলো।
কিছুটা দূড় যেতেই উজ্জ্বল গাড়িটা থামালো।
উজ্জ্বল:ইশা।
ইশা:হুম বলো,গাড়ি থামালে কেনো?
উজ্জ্বল:আমার মনে হয় তুমি ভুল করছো।
ইশা:কিসের ভুল?
উজ্জ্বল:তোমার নিরব কে সবটা বলে দেওয়া উচিৎ।তোমার ওকে জানানো উচিৎ যে তুমি ই প্রতিভা।
ইশা:কিন্তু কেনো?আমি আমার বর্তমান পরিচয় নিয়ে যথেষ্ট খুশি উজ্জ্বল।আমি আমার অতীত এর কিছুই আবারো ফিরিয়ে আনতে চাইনা।তুমি বুঝতে পারছো আমি কি বলতে চাইছি?
উজ্জ্বল:সকালে নিরব এর বলা কথাগুলো আমি শুনেছিলাম ইশা।আর তাতে করে আমার মনে হয়..
ইশা:কি মনে হয়? সে আমায় খুব ভালোবাসে তাই না?এমনটা ভেবোনা উজ্জ্বল,ঐ মানুষটা ভালোবাসার মানে বোঝেনা।
উজ্জ্বল:ইশা!ভালো না বাসলে ঐ ধরণের কথা বলা যায়না বলে আমি মনে করি।আর আমি তোমায় বলছিনা নিজের অতীত কে ফিরিয়ে আনতে!আমি শুধু বলছি ওকে সত্যিটা জানাতে। আর যাই হোক,আমি কারোর ভালোবাসার মানুষকে তার থেকে কেড়ে নিতে চাইনা।
ইশা:কিন্তু উজ্জ্বল..
উজ্জ্বল:চুপ..আর কোনো কথা নয়।তুমি না বলতে পারলে আমি ওকে সব সত্তিটা বলবো।ঠিক আছে?
ইশা:যা ইচ্ছে করো।আমি আর কি বলবো?
উজ্জ্বল:(মুচকি হেসে আবারো গাড়ি স্টার্ট দেয়)
,,,,,🌿
নিচের দইকে তাকিয়ে থমকে দাঁড়িয়ে আছে নিরব।চোখ দুটো তার অসম্ভব লাল হয়ে আছে। কিছুক্ষন আগেই উজ্জ্বল এসে সব সত্যিটা জানায় ওকে।সবটা শুনে যেনো বিশ্বাস করতে পারছেনা নিরব।তার দিয়াপাখি বেচে আছে,তার সামনেই ছিলো এই কদিন ধরে।এবার সব কনফিউশন দূড় হয়ে গেলো নিরব এর।এই কারণেই ইশা আসেপাশে থাকলে ওর অন্যরকম লাগতো।
উজ্জ্বল:দেখুন নিরব,আমি জানিনা আপনি কেনো ইশা আই মিন প্রভার সঙ্গে এমন টা করেছেন।তবে আপনি যা করেছেন তা একটুও ঠিক করেননি। আপনি ওকে ডিভোর্স দিতেন ঠিক আছে কিন্তু তার জন্য ওকে মিথ্যে অপবাদ দেওয়ার কি খুব বেশি প্রয়োজন ছিলো?একটা মেয়ে কোথায় যাবে কি করবে কিছু না ভেবে আপনি কি করে ওকে একা বের করে দিতে পারলেন বাড়ি থেকে।
নিরব:আপনি সবটা জানেন না উজ্জ্বল
উজ্জ্বল:আমি আর কিছু জানতেও চাই না নিরব। আমি আপনাকে সবটা এই কারণেই বললাম কারণ আমি কারোর ভালোবাসাকে ছিনিয়ে নিতে চাই না।আর আমি সবটা প্রভার উপর ছেড়ে দিয়েছি।আমি ওকে কোনো পরকার জোড় করবোনা।ও নিজে যা ডিসিশন নিবে তাই হবে।
নিরব:আ আমি দিয়ার সাথে কথা বলতে চাই।
উজ্জ্বল:চলুন।
,,
প্রভার সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছে নিরব।পাশে উজ্জল ও রয়েছে।প্রভা বুজে হাত গুকে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে,তার চোখ দুটো ও লাল হয়ে আছে।আর নিরব?সে তো তার চোখের তৃষ্ণা মেটাতে ব্যাস্ত।
নিরব:ক কেমন আছিস দিয়াপাখি?
প্রভা:আমাকে বললেন মিঃ নিরব?যদি আমাকে বলে থাকেন তাহলে আপনাকে জানিয়ে দেই এই ফালতু নাম আমার সামনে উচ্চারণ করবেন না।সজ্য হয়না আমার।
নিরব:এ এটা ফালতু নাম? (টলমলে চোখে তাকিয়ে বলে)
প্রভা:হুম।অবিশ্যই এটা আমার কাছে ফালতু নাম। আর বিশেষ করে আপনার মুখ থেকে শুনতে তো আরো বেশি ঘৃণা লাগছে আমার।
নিরব:(অবাক চোখে তাকায়)
প্রভা:আপনি কি ভাবলেন নিরব?আমার সাথে এসে সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলবেন আর আমি আবারো আপনার কাছে ফিরে যাবো?হাহ,সেটা ভেবে থাকলে আপনি ভুল টা শুধরে নিন নিরব। আপনার আমাকে কি মনে হয় বলুন তো?আমি একটা খেলনা?আপনার খেলনার পুতুল আমি? যখন খুশি আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলবেন, আমার মতো মেয়েরা জাস্ট ফ্রেন্ড কে ভালোবাসা ভাবে।তাই তো?সত্যি ই আমি জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল টা করেছিলাম জানেন তো?তবুও আমি সেই ভুলটা শুধরে নিতে চেয়েছি।তখন আপনি কি করলেন?আমার প্রতি দয়া দেখাতে আসলেন। আপনার ভালোবাসা উতলে পড়লো তখন।আর তারপর?আমায় বিয়ে করলেন।সেদিন আপনার প্রতিটা কথা শুনে না নিজেকে খুব বেশি ভাগ্যবতি মনে করেছিলাম।ভেবেছিলাম আপনার মতো মানুষ ও আমার ভাগ্যে ছিলো?হাহ,খুব হাসি পায় সেগুলো ভাবলে জানেন তো?তারপর যখন আমার ই বোনের সঙ্গে চোখের সামনে টাইম স্পেন্ড করতে থাকলেন!আমি বোকার মতো ভেবেছিলাম শালিরা জিজুদের সাথে একটু তো মজা করবেই।কতো বোকা আমি তাইনা? দিনের পর দিন অবহেলা সজ্য করেও আমি পরে ছিলাম ঐ বাড়িতে।কেনো জানেন?আপনার মতো জঘন্য মাণূষোটাকে ভালোবাসতাম বলে।ভেবেছিলাম হয়তো বা সময়ের সাথে সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আবারো আমি ভুল প্রমাণিত হলাম।আমার সব বিশ্বাস ভেঙে গেলো।আমি জানি ঐ লোকটাকে সেদিন আপনি ই আমার ঘড়ে পাঠিয়েছিলেন।আফটার অল,ডিভোর্সের জন্য একটা তো অজুহাত লাগবেই তাই না?কিন্তু আপনি আমায় অমন একটা অপবাদ না দিয়ে যদি নিজে থেকে বলতেন!বিশ্বাস করুন আমি খুশিমনে চলে যেতাম আপনার জীবন থেকে।
কিন্তু আপনি সেটা করেন নি,একটা মেয়েকে বাড়ি থেকে বের করে রাস্তায় নামিয়ে দিলেন।একবারো ভেবেছেন আমি কোথায় যাবো?ভাবেন নি।আরে ভাববেন কেনো তখন তো আপনি নিজের লাইফ নিয়ে খুব ব্যাস্ত।
নিরব:দিয়াপাখি,একটিবার আমার কথাটা শোন। (আকুতির স্বরে বলে)
প্রভা:আমি আপনার কোনো কথা শুনতে চাই না। (চিৎকার করে বলে)
প্রভা এবার উজ্জ্বল এর হাত ধরে দড়জা এর দিকে নিয়ে যায়।পরক্ষনে আবারো পিছন ফিরে তাকিয়ে বলে,
প্রভা:আমি আর উজ্জ্বল খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে করছি।আপনিও ইনভিটেশন পাবেন।আসবেন কিন্তু আমাদের বিয়েতে।
নিরব:দিয়ায়া
প্রভা:কে দিয়া?এখানে দিয়া বলতে কেউ নেই। আমি,ডক্টর মাহমুদা তাসনিম ইশা। দিয়া মরে গেছে।সাদিয়া আফরিন প্রতিভা মরে গেছে আরো পাচ বছর আগেই।এতোদিন যেমন ভেবে এসেছেন সে মৃত এখনো তাই ভাববেন।আশা করি আমায় আর কখনো এই নাম এ সম্মোধন করবেন না আপনি।উজ্জ্বল চলো।
উজ্জ্বল:ইশা তুমি..
প্রভা:তুমি না গেলে আমি একাই চলে যেতে পারবো।
উজ্জ্বল:(নিরব এর দিকে একবার তাকিয়ে) ঠিক আছে চলো।
দুজনে বেড়িয়ে যায় কেবিন থেকে।হসপিটাল থেকে বেড়িয়েই ইশা গাড়িতে উঠে বসে।উজ্জ্বল ও কিছু না বলে গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
________🌿
ইশা:গাড়ি থামাও উজ্জ্বল!
উজ্জ্বল:কিন্তু এখানে ক..
ইশা:প্লিজ উজ্জ্বল থামাও গাড়িটা!
উজ্জ্বল এবার গাড়িটা থামাতেই ইশা দ্রুতগতিতে গাড়ি থেকে নেমে যায়।দু হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে বসে পরে সেখানে।চিৎকার করে কাদতে থাকে সে।বৃষ্টির সঙ্গে তার চোখের জল গুলোও মিলিয়ে যাচ্ছে।
উজ্জ্বল সবটা বুঝতে পেরে কিছুই বললো না।কাদুক না মেয়েটা একটু,তাতে যদি ওর মন থেকে ভারি পাথর টা একটুও সরে।
বেশ কিছুক্ষণ পর ইশা কান্না থামিথে উঠে দাঁড়ায়
চোখ মুখ মুছে উজ্জ্বল এর সামনে গিয়ে বলে,
ইশা:আমি তোমায় বিয়ে করতে রাজি উজ্জ্বল। তুমি সব ব্যাবস্থা করো।
উজ্জ্বল:ইশা তুমি ভেবে চিন্তে বলছো তো?
ইশা:হ্যা আমি সুস্থ মস্তিষ্কে বলছি।আমি রাজি, আশা করি আমায় আর কোনো প্রশ্ন করবে না।
#চলবে
[এখন ও আমি কিছু বলবো না🙃সকলের মন্তব্য দেখবো এবং রিপ্লাই দিবো।
হ্যাপি রিডিং❤️]