আড়ালে অনুভবে পর্ব ২৭

#আড়ালে_অনুভবে
#সাদিয়া_আফরিন_প্রতিভা
#বোনাস_পার্ট (বিদ্র পড়ার অনুরোধ রইলো)

সকালে ঘুম ভাঙতেই চোখ মুখ কুচকে যেই না সোজা হতে যাবে তখনি নিরবের খেয়াল হয় কেউ তাকে জাপটে ধরে আছে।ধীরেধীরে চোখ খুলে পাশে তাকাতেই দেখলো তার দিয়াপাখি বাচ্চাদের মতো গুটিসুটি মেরে তাকে জরিয়ে ধরে বুকের মাঝে বুক গুজে ঘুমিয়ে।ঠোটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে নিরব এর।একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার দিয়াপাখির মায়াবি মুখের দিকে।কতোদিন ধরে এভাবে দেখতে পারেনা সে।গত এক মাসে প্রতিদিন ই নিরব দিয়াকে জড়িয়ে ধরেই ঘুমোতো আবার ভোরবেলা তার ঘুম ভাঙার আগেই সরে যেনো। এই মায়াবি মুখের দিকে তাকালেই তো সে দুর্বল হয়ে পরে।পারেনা নিজেকে শক্ত রাখতে।

এক মিনিট,দু মিনিট,তিন মিনিট গুনে গুনে ১০ মিনিট শেষ হয়ে যায়।নিরব এখনো একদৃষ্টিকে তাকিয়ে আছে তার ঘুমন্ত প্রেয়সির দিকে।
খেয়াল করে কিছু চুল চোখে মুখে এসে পড়ায় ঘুমের মাঝেই চোখ মুখ কুচকে নিচ্ছে প্রভা।
নিরব মুচকি হেসে সজত্নে সেই চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দেয়।ঘুমের মাঝেই সামান্য কেপে ওঠে প্রভা।নিরব এবার প্রভার গালে হাত রাখে। সামান্য ঝুকে ঠোট ছোঁয়ায় প্রেয়সির কপালে।
একটু খেয়াল করতেই দেখে প্রভার চোখের পাশে খানিকটা জল শুকিয়ে রয়েছে।
বুকের মাঝে ধক করে ওঠে নিরবের।কাপা কাপা ভাবে হাত বোলায় প্রেয়সির সম্পূর্ন মুখশ্রী তে। আবারো কিছুটা ঝুকে চুমু খায় দুই চোখে।
কিছুটা সরে গিয়ে ধীর গলায় বলতে লাগে,

নিরব:আমি খুব খারাপ তাই না দিয়াপাখি?খুব কষ্ট দেই তোকে তাই না?তবুও কেনো এই আমি টাকে এতো ভালোবাসিস বলতে পারিস?আর নয় দিয়াপাখি,আর কষ্ট দিতে পারবোনা আমি তোকে। সে যাই হয়ে যাক না কেনো আমি তোকে সব সত্যিটা বলে দেবো।এই নিরব বেচে থাকতে তোকে কেউ কিচ্ছু করতে পারবেনা।
জানিস দিয়াপাখি?তোকে করা প্রতিটা অবহেলা আমায় কতোটা পোড়ায়?প্রতি মুহূর্তে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাই আমি।কিন্তু আমি কি করবো বলতে পারিস?ইচ্ছে করে তোকে নিয়ে অনেক দূড়ে চলে যাই,কিন্তু সেটাও করতে পারবোনা। আমি যে বাধ্য দিয়াপাখি,বাধ্য আমি।তোর সব না পাওয়া জিনিস তোকে ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম দিয়াপাখি।কিন্তু আমি আর পারছিনা,পারছিনা আমি..

কথাটা বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে নিরব।খুব সাবধানে তার দিয়াপাখিকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে যেই হাতে ভর দিয়ে বিছানা থেকে উঠতে যাবে তখনি চাপ লাগে বাম হাতে।
মুখ থেকে “আহহহ” শব্দ বেড়োতে চাইলেও দাতে দাত চেপে সজ্য করে নেয়।সে চায় না তার জন্য দিয়াপাখির ঘুমে ব্যাঘাত ঘটুক।
হাত টা সামনে এনে দেখে ব্যান্ডেজ খানিকটা ভুজে গেছে রক্তে।সেদিকে তাকিয়ে বাকা হাসে নিরব।

নিরব:তোর তো আরো বেশি শাস্তি পাওয়ার দরকার ছিলো নিরব।তুই কি করে পারলি এই হাত দিয়েই তোর দিয়াপাখি কে সামনে থেকে সরিয়ে দিয়ে বাড়ির ভিত্র ঢুকতে?ইচ্ছে তো করছিলো হাত টাই কেটে ফেলি।সিনথু টা যে কেনো আটকালো!
(দিয়ার দিকে একবার তাকায়) ভালোই হয়েছে দিয়াপাখি খেয়াল করেনি।নাহলে হাজারো প্রশ্ন করে বাড়ি মাথায় তুলতো।
আবারো বাকা হাসে নিরব।ঠিক সেই মুহূর্তেই ফোনে একটা মেসেজ আসে।নিরব ফোন টা হাতে নিয়ে দেখে আবারো সেই আইডি থেকে হোয়াটসএপ এ মেসেজ।নিরব দ্রুতগতিতে ভিতরে ঢুকতেই দেখে একটা বড় মেসেজ সাথে একটা ভিডিও।যা দেখা মাত্র নিরব এর পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যায়।আইডিতে কল দিতে যাবে সেই মুহূর্তেই আর খুজে পেলোনা আইডিটা।বাম হাত দারা সজোরে ঘুষি মারলো পাশে থাকা টি টেবিল এ।রক্তে সম্পূর্ন ব্যান্ডেজ ভিজে জেতে লাগলো।এক সেকেন্ড ও দেড়ি না করে কল দিলো ওর বন্ধু নিলয় এর নম্বরে।

নিরব:হ হ্যালো নিলয়,আইডিটা কিছুক্ষণ আগে একটিভ হয়েছিলো।কিহ?এটা কি করে পসিবেল? তুই আরেকবার ট্রাই করে দেখ হ্যাক করতে পারিস কিনা!ওহ শিট! ও ওকে আমি রাখছি।

বলেই কলটা কেটে দিলো নিরব।ডান হাত দিয়ে নিজের মাথার চুল টানতে লাগলো।কিচ্ছু মাথায় ঢুকছে না তার।কেমন যেনো পাগল পাগল লাগছে।আর দেড়ি না করে সিনথিয়া কে কল দিলো,

নিরব:হ্যালো সিনথু।জলদি নিচে নাম,পাচ মিনিটের মধ্যে।
সিনথিয়া কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কলটা কেটে দিলো নিরব।বিছানা থেকে যেই নামতে যাবে তখন নিজের ডান হাতে টান অনুভব করে।পিছনে ঘুড়তেই দেখে দিয়া ওর হাত টেনে ধরে ঘুমের মাঝেই কিছু বলে চলেছে,
নিরব ভ্রু কুচকে কিছুটা ঝুকে যায় দিয়ার দিকে।

দিয়া:ত তুমি এমন কেনো করছো নির?আমি কি কোনো ভুল করেছি?এমনটা ক করোনা প্লিজ। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।কেনো আমার থেকে এভাবে দূড়ে সরে যাচ্ছো তুমি।

দুয়ার কথা শুনে নিরব এর চোখ থেকে দু ফোটা জল গড়িয়ে পরে।ছেলেরা নাকি কাঁদেনা,একটা ছেলে কতোটা কষ্ট পেলে কাদতে পারে?
নিরবের মনে হচ্ছে ওর হৃদয়ে যেনো কেউ বারংবার ধারালো ছুড়ি দারা আঘাত করছে। ইচ্ছে করছে এখন ই তার দিয়াপাখি কে বুকের মাঝে আঁকড়ে ধরে বলুক,
“আমি তোর থেকে দূড়ে যাইনি দিয়াপাখি।এই নিরব যে তার দিয়াপাখি ছাড়া অস্তিস্তহীন।”
কিন্তু পরিস্থিতি তাকে বলতে দিচ্ছে না।সজত্নে প্রেয়সির কপালে ঠোট ছুইয়ে দেয় নিরব।
আর এক মুহূর্ত দেড়ি না করে বেড়িয়ে যায় রুম থেকে।

_____🍃
সিনথিয়া:ভাইয়া তুমি এসব কি বলছো?তুমি তো কাল রাতেও বললে আপুকে সবকিছু বলে দেবে।তাহলে…

নিরব:এটা দেখ সিনথু.. (নিচের দিকে তাকিয়ে ফোন থেকে ভিডিও টা বের করে দেয়)
সিনথিয়া কিছু না বলে ফোনটা হাতে নিয়ে ভিডিও টা অন করে।কিছুক্ষণের মাঝেই চোখ বড়বড় হয়ে যায় সিনথিয়ার।হাত অটোমেটিকালি মুখে চলে যায়।চোখ থেকে দউ ফোটা জল গড়িয়ে পরে তার।ভিডিও টা দ্রুত অফ করে বলে,

সিনথিয়া:ব্যাস ভাইয়া আমি আর দেখতে পারছি না।মানুষ এতোটা নিকৃষ্ট কি কঅরে হতে পারে?

নিরব:এখন ও বলবি আমি কালকের সিদ্ধান্ত তেই থাকবো?সিনথু আমি কি করে নিজের কথা ভেবে এতোটা স্বার্থপর হতে পারি?একটা মানুষকে জেনে শুনে মৃত্যুর মুখে রেখে দেবো?

সিনথিয়া:নিশ্চুপ

নিরব:আমাদের হাতে আর সময় নেই সিনথু। যেকোনো সময় ওরা যা খুশি করে ফেলতে পারে।ইচ্ছে না থাকলেও আমায় এটাই করতে হবে।

সিনথিয়া:কিন্তু আপু..

নিরব:তোকে যেমনটা বললাম তুই ঠিক তেমনটাই করবি।আমার দিয়াপাখির গায়ে যেনো একটা ফুলের টোকাও না লাগে।

সিনথিয়া:বুঝেছি ভাইয়া।তুমি চিন্তা করোনা,তুমি যেমনটা বলেছো তেমনটাই হবে।

নিরব আর কিছু না বলে রুমে চলে আসে।ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে তার দিয়াপাখির ঘুমন্ত মুখে দিকে তাকায় আবারো। মনে মনে বলে,
“আমায় ক্ষমা করে দিস দিয়াপাখি।ক্ষমা করে দিস।”
আর কিছু ভাবলো না নিরব।চোখের কার্নিশে জমে থাকা জল মুছে বেড়িয়ে পরে রুম থেকে।

বর্তমান—-
চোখ দুটো মুছে নেয় নিরব।এখন ভাবছে সেদিন হয়তো কিছুটা স্বার্থপর হলেই ভালো হতো।তবুও তো নিজের দিয়াপাখি কে কাছে পেতো।

______”যেই মানুষটি নিজের স্বার্থের কথা না ভেবে অপরকে বাচানোর জন্য সবচেয়ে প্রিয় ব্যাক্তিকে হারাতে পারে🌿সে আর যাই হোক, অপরাধি নয়🍂”_____[সাদিয়া আফরিন প্রতিভা]
#আড়ালে_অনুভবে
#সাদিয়া_আফরিন_প্রথা
#পর্বঃ২৭

সিনথিয়া:তুমি আসলে আমায় কখনো ভালোই বাসোনি উজ্জ্বল।কারণ ভালোবাসলে বিশ্বাস করতে হয় আর তোমার আমার প্রতি কোনো বিশ্বাস ই ছিলোনা।হেরে গেলে উজ্জ্বল,হেরে গেলে।
কথাটা বলেই চোখের জল আটকে স্থান ত্যাগ করে।
আর উজ্জ্বল একই জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।মনের মাঝে খচখচ করছে তার,সে কি ভুল করছে?কিন্তু পরমুহূর্তেই পাচ বছর আগের কথা এবং ইশার বলা কথা ভাবতেই মাথায় রাগ চড়ে বসে।

পাচ বছর আগে–

উজ্জ্বল আর সিনথিয়ার পরিচয় হয় অনলাইন এ আর তারপর ধীরেধীরে তাদের বন্ধুত্ত গভীর হতে থাকে।এক সময় তারা একে অপরের সঙ্গে দেখা করে প্রথম দেখাতেই উজ্জ্বল নিজের অজান্তে ভালোবেসে ফেলে সিনথিয়া কে।
প্রপোজ টাও উজ্জ্বল ই করে।সিমথিয়াও মনে মনে উজ্জ্বল কে পছন্দ করতো তাই আর না করেনি।
প্রায় এক বছর বেশ ভালোই কাটে।কিন্তু হঠাত করে সিনথিয়া উধাও হয়ে যায়।উজ্জ্বল অনেক চেষ্টা করেও ওর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি।
একপর্যায় ও সিনথিয়ার বাড়ির এলাকায় যায়।কিন্তু আসল বাড়ি খুজে পাচ্ছিলো না।

তাই সেই এলাকায় একজনের বাড়িতে নক করে। সেখান থেকে একজন মধ্যবয়সি মহিলা।(এটাই হলো প্রিয়াঙ্কা আন্টি😴)

উজ্জ্বল:আসসালামু আলাইকুম আন্টি।

প্রিয়াঙ্কা:ওয়ালাইকুম আসসালাম।কাকে চাই?

উজ্জ্বল:আসলে আন্টি আমি একজনের বাড়ি খুজছিলাম।এইজে এই মেয়েটার বাড়ি কোনটা একটু বলতে পারবেন?

প্রিয়াঙ্কা:আরে এইটা তো সিনথিয়া।এই মাইয়াডার কথা আর বইলোনা বাবা।একেবারে নির্লজ্জ হয়ে গেছে।বোনের বাড়ি গিয়েই তো পড়ে থাকে। আবার ওর বোনের জামাই এর সঙ্গে ঘুড়ে বেড়ায়। ছিহঃ ছিহঃ…

উজ্জ্বল:আন্টি আপনার কিছু ভুল হচ্ছে ও এমন মেয়েই নয়।আমি চিনি ওকে।

প্রিয়াঙ্কা:তা তো বিশ্বাস করবাই না।খাড়াও তোমারে দেখাই। (কথাটা বলেই রুম থেকে নিজের ফোন নিয়ে এসে একটা ভিডিও দেখায় উজ্জ্বল কে যেখানে সিনথিয়া এবং নিরব একসাথে একটা হোটেল এ ঢুকছিলো)

প্রিয়াঙ্কা:এইবার বিশ্বাস করা না করা তোমার ব্যাপার।আর ওদের বাড়ি ঐযে সোজা দেখছো ঐটা।আমি বরং যাই বাপু,অনেক কাজ আছে।

ঢং করে কথাটা বলে দড়জা আটকে দেয় প্রিয়াঙ্কা।উজ্জ্বল কিছুক্ষণ ওভাবেই দাঁড়িয়ে থেকে চলে আসে।আর ওদের বাড়িতে যায় নি।
বাড়িতে এসে সিদ্ধান্ত নেয় বিদেশে চলে যাবে।কারণ এখানে থাকলে কখনোই তার প্রিথুরাণী কে ভুলতে পারবেনা।আর এমন একজন বিশ্বাসঘাতক এর সঙ্গে সে কোনো যোগাযোগ রাখবে না।
তার দু দিন পর সিনথিয়া উজ্জ্বল কে অনেকবার ফোন এ ট্রাই করে কিন্তু ও রিসিভ করে না বরং নাম্বার টা ব্লক লিস্ট এ রেখে দেয়।
তারপরের ঘটনা সবাই ই জানেন।সপরিবার এ বিদেশে চলে আসার সময় সে মনে মনে ভেবেছিলো প্রথা যখন সুখেই আছে তখন সে আর ওর রাস্তায় বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।
কিন্তু সএই মুহূর্তে যে তার প্রিথুরাণী আই সি ইউ তে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছিলো তা আজ পর্যন্ত অজানা।

কিছুক্ষন আগে ইশার সঙ্গে হসপিটাল এ ঢোকার সময় হঠাত করেই সিনথিয়া সামনে চলে আসে।উজ্জ্বল কে দেখে সিনথিয়ার চোখ দুটো ভরে ওঠে। সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই উজ্জ্বল বলে ওঠে,

উজ্জ্বল:ওহ মিস সিনথিয়া,মিট মাই ফিয়ন্সি ইশা।

ইশা:ত তুমি ওকে চেনো?

উজ্জ্বল:তেমন একটা না।হসপিটাল এই একদিন দেখেছিলাম।

ইশা ছলোছলো নয়নে তাকিয়ে থাকে উজ্জ্বল এর দিকে।ইশাকে একজন নার্স এসে ডেকে নিয়ে যায়
তারপর সিনথিয়া উজ্জ্বল কে নানান প্রশ্ন করায় উজ্জ্বল রেগে গিয়ে সেদিনের ঘটনা বলে।
সিনথিয়া আর কিছু বলতে পারেনা।উজ্জ্বল এর বিশ্বাস যে এতটা ঠুনকো হবে তা কখনো ভাবতেও পারেনি।

_______🌿
“আসতে পারি?”

নিরব ফাইল থেকে মুখ তুলে দড়জার দিকে তাকাতেই ফাহাদ খান দাঁড়িয়ে আছেন।

নিরব:আরে আঙ্কেল আপনি!আসুন না,বসুন।

ফাহাদ:(এসে চেয়ারে বসে) আর কতোদিন আঙ্কেল ডাকবে?বাবা বলেও তো ডাকতে পারো।

নিরব:যার সূত্রে বাবা বলে ডাকবো সএই তো আর আমার নেই (মনে মনে)

ফাহাদ:ঠিক আছে বলতে হবে না।এখন বলো, কেমন আছো?

নিরব:এইতো আছি আঙ্কেল।

ফাহাদ:জানো তো বাবা,জীবনে কখনো নিজের মেয়ের মুখে বাবা ডাকটা শোনার ভাগ্য আমার হয়নি।না পেরেছি একটা বারের জন্য মেয়েটাকে দুচোখ ভরে দেখতে।
আমি তোমায় নিজের ছেলে মনে করি,তুমি পারবেনা আমার ছেলে হতে?একবার বাবা বলে ডাকবে আমায়?

নিরব ছলোছলো নয়নে তাকায় ফাহাদ এর দিকে। তার চোখেও জল।নিরব এবার কাপা কাপা গলায় বলে ওঠে,

নিরব:বাবা

ফাহাদ এবার এসে জড়িয়ে ধরলো নিরব কে।

ফাহাদ:আজ আমার মেয়েটা থাকলে বড়ই খুশি হতো।আমি আর কদিন ই বা বাচবো।তুমি কেনো আমার জন্য এতকিছু করলে বাবা?

নিরব:জানেন তো বাবা,ছোটবেলা থেকে কখনো আব্বু,আম্মু কারোর ভালোবাসাই পাইনি আমি। আম্মু বেচে থাকতেও তাকে মৃত বলে ভেবে এসেছি।আর আব্বু?সে তো ভুলেই গেছে বাড়িতে ও একটা ছেলে অপেক্ষা করে বসে থাকে কখন তার বাবা আসবে।সে তো নিজের বিজনেস নিয়েই ব্যাস্ত।মাদার্স ডে কিংবা ফাদার্স ডে তে আমার সঙ্গে কেউ স্কুল এ যেতোনা।সবাই আড়ালে বলতো আমার মনে হয় বাবা মা কেউ ই নেই।অনাথ আমি,একবার ভেবে দেখুন তো এমন কথা শুনে আমার কেমন লাগতো?
বড়ো হওয়ার পর আর এসব বিষয়ে মন খারাপ করতাম না।তারপর যখন আমার জীবনে দিয়া এলো,মনে হলো আমি জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ পেয়ে গেছি।
আমি নাহয় বাবা থেকেও নেই।কিন্তু দিয়া?ও তো সেই ছোটবেলা থেকে কতোকিছু সজ্য করেছে। আর তাছাড়াও বাবার মূল্যটা আমি বুঝি,কি করে পারতাম নিজের বাবার সমতূল্য একজনকে ঐ অবস্থায় ছেড়ে দিতে?
আমি তো এমনটা চাইনি।আমি তো চেয়েছিলাম আমার দিয়াপাখির না পাওয়া সবকিছু ওকে ফিরিয়ে দেবো।কিন্তু তা আর পারলাম কোথায়!

_______🌿
বেশ খানিক্ষন ফাহাদ এর সঙ্গে কথা বলার পর চলে যায় সে।রাত ৮ টার দিকে নিরব ও কোয়াটার এ চলে আসে।খুব ইচ্ছে করছে তার দিয়াপাখি কে একনজর দেখার।কিন্তু সেই ইচ্ছেকে দমিয়ে রেখে আলমারির দিকে চলে গেলো সে।সেখান থেকে একটা পেপার বের করে চোখের সামনে ধরে বাকা হাসে।
এটা সেই ডিভোর্স পেপার।যেখানে নিরব এর সাইন টা এখনো আছে তবে প্রভার সাইন টা নেই।

আসলে এই ডিভোর্স পেপার টাই নকল। তার উপর নিরব নিজের সাইন টাও দেয়নি,এমনি ই একটা সাইন বসিয়েছে।
আর প্রভাকে যেই কলম দিয়ে সই করতে বলেছিলো সেটা সাধারণ কলম নয়। সেই কলমের কালি দু থেকে তিন ঘন্টার মাথায় আপনা আপনি মুছে যায়।

নিরব সবকিছু মনে করে আবারো হাসে।

নিরব:আজও কাগজে কলমে তুই শুধু আমার দিয়াপাখি।আজও তোর নামের পাশে আমার নামটাই যুক্ত আছে।কিন্তু সেটা আর তোকে বলবো না।কারণ আমি তো চাই তুই জীবনে সুখি থাক।আমি বেচে থাকতে তুই কিছুই জানতে পারবি না দিয়াপাখি।আমি জানতে দেবোনা।তবে পরে ঠিক জানতে পারবি।
কিন্তু সেদিন একটুও কাঁদবিনা দিয়াপাখি।তোর মিঃচঞ্চল এর আদেশ এটা।কারণ তোর চোখের জল যে আমায় ভেঙে চুরমার করে দেয়।

#চলবে

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here