#আড়ালে_অনুভবে
#সাদিয়া_আফরিন_প্রতিভা
#পর্বঃ৬
দীর্ঘ আধা ঘন্টায় পাচ বোতল পানি শেষ করেছে প্রভা।পুড়ো রুমে কমপক্ষে ১০০+ বার রাউন্ড দেওয়া কমপ্লিট। পাশেই খাটের উপর গালে হাত দিয়ে বসে আছে প্রথা আর তার পাশেই বসে ফোন ঘাটছে অঙ্কিত।
নিশাত সুন্দর মতো পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে জেনো ওর মনে কোনো টেনশন ই নেই।আর সোফায় বসে আছে সুপ্তি।কিন্তু ওর মনে রেজাল্ট এর ভয় এর সঙ্গে এক অন্য ঝড় ও বয়ে যাচ্ছে।
হ্যা,আজকে ওদের মেডিকেল এডমিশন এর রেজাল্ট বের হবে। জিনিয়া রুমে এসেই প্রভার উদ্দেশ্যে বললো,
–প্রভা মা,এতো টেনশন করিস না তো।দেখবি তুই ঠিক চান্স পেয়ে যাবি।এখন কিছু তো খেয়ে নে মা। (জিনিয়া)
–কাকিমুনিইইই,তুমি বুঝতে পারছো না।মেডিকেল এ চান্স পাওয়া অতো সহজ ব্যাপার না।আর তুমি বলছো আমি টেনশন না করে খেয়ে নেবো? (প্রভা)
–তোর যা খুশি কর তাহলে।কিচ্ছু বলবোনা আমি। (জিনিয়া)
অঙ্কিত বারবার সুপ্তির দিকে তাকাচ্ছে।যেনো কিছু বলতে চাইছে কিন্তু বলতে পারছে না।
,,
চোখ থেকে টিপটিপ করে জল গড়িয়ে পরছে প্রভার।তবে এটা কষ্টের নয় আনন্দের অশ্রু।সে মেডিকেল এ চান্স পেয়ে গেছে।সেও ছোটবেলা থেকে দেখে আসা সপ্ন সত্যি হতে চলেছে।
সুপ্তি আর নিশাত ও ভাগ্যক্রমে সেইম মেডিকেল কলেজ এ চান্স পেয়ে গেছে তবে কলেজ টা অনেক দূড়ে তাই তিন জনেই হোস্টেল এ থাকার ডিসিশন নিয়েছে।
–আসতে পারি ম্যাম?
কথাটা বলেই ভিতরে আসলো আদিব।পাশে রোদেলাও আছে।এরা দুজন আপন ভাই বোন। আর প্রভার খালাতো ভাই বোন।
–ভিতরে ঢুকে এখন জিজ্ঞেস করছো আসবো কিনা! (প্রথা)
–কংগ্রাচুলেশনস ম্যাম।আমি তো আগে থেকেই জানতাম তুই চান্স পেয়ে যাবি তাই তো ভাইয়াকে নিয়ে চলে এলাম (প্রভার কাছে এসে বললো রোদেলা)
–থ্যাংক ইউ রোদেলা আপু।থ্যাংক ইউ আদিব ভাইয়া।তোমরা এতো দূড় থেকে কষ্ট করে এলে (প্রভা)
–এক চড় খাবি।কতোদিন তোর সাথে দেখা হয় না তাই তো এলাম।আর একটাও কথা না এখন জাস্ট ফান.. (রোদেলা)
আদিব শুধু এক দৃষ্টিতে প্রভার দিকে তাকিয়ে আছে।সেটা প্রভা খেয়াল না করলেও নিশাত ঠিক ই খেয়াল করেছে।তবুও কিছু বলতে পারলো না।
।।
আজকের প্রভার কলেজ এর প্রথম দিন।তবে প্রথম দিন ই কলেজ এ এসে এমন একটা কাণ্ডের সম্মুখিন হতে হবে তা কখনো কল্পনাতেও ভাবে নি। কলেজ এ আসতেই তার চোখের সামনে হাজির হয় নিরব।নিরব ও এই মেডিকেল এই ইন্টর্নশীপ এ আছে।
প্রভা: আ আ আপনি!
নিরব: কলেজ টা কি তোমার বাপের?
প্রভা এবার কিছু না বলে সাইড থেকে চলে যেতে নেয়,নিশাত আর সুপ্তি নিরব কে দেখে আগেই চলে গেছে ভিতরে।
নিরব: ও হ্যালো!আমি তোমাকে যেতে বলিনি।
প্রভা:আমি কোথায় যাবো না যাবো তার পারমিশন কি আপনি দেবেন নাকি?
নিরব: হাহ,খুব সাহস তো তোমার।কার সঙ্গে কথা বলছো জানো তুমি?
প্রভা: জ জানবো না কেনো?আমিও মানুষ আপনিও মানুষ।
নিরব: বাহ,কি সুন্দর এন্সার।আচ্ছা ঠিক আছে পারলে যাও।
প্রভা: প পারলে যাবো মানে?
নিরব: সেটা বুঝতেই পারবে।যাও যাও,আমি তো আর আটকে রাখিনি।
প্রভা এবার কিছু না ভেবেই ভিতরে যেতে নিলো।ঠিক তখন ই দেখতে পেলো নিশাত কে।কিন্তু ওর পাশে গিয়ে দাড়াতেই চোখ পড়লো সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেগুলোর উপর।গায়ের এপ্রোন দেখে বোঝা গেলো তারা কলেজ এর ই স্টুডেন্ট তবে ওদের সিনিয়র মনে হচ্ছে।নিশাত এর দিকে তাকাতেই ও ভীত দৃষ্টিতে তাকায় প্রভার দিকে। তখন ই সামনে থেকে একটা ছেলে বলে ওঠে,
ছেলেটি: এই মেয়ে,কি নাম তোমার?
প্রভা: আ আমার?
ছেলেটি: হ্যা তোমার।
প্রভা: প প্রতিভা।
এবার তিন টে ছেলে একসাথে বলে ওঠে,
“ওহহোওও।প্রতিভায়ায়ায়ায়া।”
ছেলেটি:তা মিস প্রতিভা,আমাদের ও একটু দেখাও তোমার প্রতিভা।
প্রভা: ম মানে?
ছেলেটি:হুম সেটা তো ভাবার বিষয়।আচ্ছা ওয়েট, (একটু চারপাশ তাকিয়ে নেয় একবার তারপর প্রভার হাতে একটা গোলাপ ধরিয়ে দিয়ে বলে) যাও,এই ফুল টা দিয়ে ঐ যে ছেলেটা আসছে ওকে প্রপোজ করো।
প্রভা ঐদিকে তাকাতেই দেখে নিরব আসছে ওখান থেকে।প্রভা এবার নিশাত এর দিকে তাকায়।
নিশাত: যা রে দোস্ত।এদের সুবিধার লোক মনে হচ্ছে না। (বিড়বিড়িয়ে বললো নিশাত)
প্রভা ওদের কাছে আকুতি মিনুতি করার পরও ওরা কেউ মানলো না।বাধ্য হয়ে ফুল টা লুকিয়ে নিরব এর সামনে গিয়ে দাড়ালো প্রভা।
নিরব: কি হলো?গেলেনা?
প্রভা: মাথা নারিয়ে না জানায়।
নিরব: তো আমার কাছে এসেছো কেনো?কিছু বলবে?
প্রভা: মাথা নাড়িয়ে হ্যা জানালো।
নিরব: বলে ফেলো।
প্রভা এবার চোখ বন্ধ করে বড় বড় শ্বাস ফেলে গোলাপ টা নিরব এর সামনে ধরে বলে,
–আ আই লাভ ইউ।
প্রভা এবার চোখ খিচে বন্ধ করে রাখে।কারণ ওর ধারণা ছিলো নিরব ঠাস ঠাস দুটো চড় মেরে দেবে। কিন্তু নিরব যা করলো তা ওর ধারণার বাহিরে ছিলো।
নিরব প্রভার হাত থেকে ফুল টা নিয়ে ওর কানের পাশে গুজে দেয়।কানের কাছে কারোর স্পর্শ পেয়ে কেপে ওঠে প্রভা।কিছু বুঝতে পারবে তার আগেই নিরব ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে থাকে।নিরব ওকে নিয়ে এসে ছেলেগুলোর সামনে দাঁড়ায়।
ছেলেগুলোর তো এবার ভিয়ে জান যায় যায় অবস্থা।নিরব এবার প্রভার হাত ছেড়ে একটা ছেলের সামনে এসে তার কাধের উপর এক হাত রেখে কানের কাছে গিয়ে বলে,
–জীবনে প্রথম একটা ভালো কাজ করলি।ট্রিট টা নিয়ে যাস আমার থেকে।
কথাটা বলেই নিরব চলে যায় ওখান থেকে।প্রভা এখনো ওভাবেই দাঁড়িয়ে আছে।এখানে কি হয়ে গেলো তা বুঝতেই পারলো না।
।।
ক্লাস শেষ হলো মাত্র।সুপ্তির মাথা ব্যাথা থাকায় ও আগেই হোস্টেল এ চলে গেছে।নিশাত হাটতে হাটতেই বললো,
–সাদু জানিস,আজকে না ভাইয়া আসবে এক মাস পর।ব্যাবসার কাজে চট্টগ্রাম ছিলো বলে এতদিনে আসতে পারেনি।আমার সাথে এখানে এসে দেখা করে যাবে। (নিশাত)
প্রভা: রোদ্দুর ভাইয়া?
নিশাত: হ্যা,আরে ঐ তো ভাইয়া।
কথাটা বলেই দূড়ে গাছের নিচে ইশারা করলো।সেই অনুসারে প্রভাও তাকালো।রোদ্দুর কে সে আগেও দেখেছে।
অন্যদিকে রোদেলার ভার্সিটি ছুটি হয়ে যাওয়ায় সে মেডিকেল এর দিকেই আসছে।তার ভার্সিটি থেকে কলেজ খুব একটা দূড়ে না।
ক্যাম্পাসে ঢুকে সে প্রভা কে খুজতে লাগলো।ঠিক তখনি চোখ পড়লো গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ফোন এ কথা বলতে থাকা রোদ্দুর এর উপর। সেখানেই চোখ আটকে গেলো রোদেলার।এক কথায় কেরাস নামক বাশ খেলো সে।গালে হাত দিয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেই দিকে।
কাধে কারোর ধাক্কা অনুভব করায় ঘোর কাটলো রোদেলার।
প্রভা: আপু তুমি কখন এলে।
রোদেলা: হায়,মে মারজাওয়া (বুকে হাত দিয়ে রোদ্দুর এর দিকে দৃষ্টি থাকা অবস্থায় বলে ওঠে)
প্রভা: মানে?আর কাকে দেখছো তুমি?
রোদেলা: ঐ ছেলেটা কে রে প্রিতু? (হাত দিয়ে ইশারা করে জিজ্ঞাস করলো)
প্রভা: আরে ঐটা রোদ্দুর ভাইয়া।নিশাত এর ভাই। কেনো বলতো?
রোদেলা: হায়য়য়,দেখতে যতটা সুন্দর নামটাও ততটাই সুন্দর।
প্রভা: তুমি আবার বাশ থুক্কু কেরাস খাইলা নাকি?
রোদেলা: এটা ক্রাশ না রে বইন।ইটস লাভ,একদম লাভ এট ফার্স্ট সাইট।
প্রভা:উইমা😳
রোদেলা: আচ্ছা শোন না,এর আবার কোনো গফ টফ আছে নাকি?
প্রভা:যতটা জানি,জিএফ নামক জিনিসটা ওনার নেই।আর হ্যা গম্ভির্যতে সেরা এওয়ার্ড টা কিন্তু এই আদ্রিয়ান আবরার রোদ্দুর ই পাবে।আপু গো,তুমি আশা ছেড়ে দাও।
রোদেলা:মোটেই না,এটাকে তো আমার চাই ই চাই।
প্রভা:নাউজুবিল্লা😒তুমি এতো লুচু কবে থেকে হইলা আপু?
রোদেলা: রোদেলার রোদ্দুর কে দেখার পর থেকে।🙈 (লাজুক হেসে বললো)
#চলবে
[