ইঁচড়েপাকা এবং সে❤️ পর্ব ১|বসের সাথে প্রেমের গল্প

#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤

পর্বঃ০১

“লিফটে একা মেয়ে, দেখে খুব লুতু পুতু টাইপ কথা বলতে মন চায় তাই না? ”

বিপরীত পাশে দাড়ানো ছেলেটা আবার ও মুখ টিপে হাসলো। মেয়ে টা জ্বলে উঠে বললো..

” এই আপনি কোন অফিসে জব করেন হ্যাঁ?”

” নাছিম’স ফ্যাশন ওয়াল্ডে।”

” আপনার চাকরি থাকে কিভাবে আমিও দেখছি দাড়ান। ”

ছেলেটা আবার হাসলো।

” আবার হাসছেন? ”

ছেলেটা বললো, “হাসবো আর নয় তো কি করব? পঞ্চাশ মিনিট ধরে, দুজন আটকা পরেছি। টাইম পাসের জন্য পরিচিত হওয়াই যায়৷ আর সেটা কে আপনি লুতু পুতু বলছেন! ”

” ওহ তাই নাকি? ”

” আর নয় তো কি?’

বলেই, নাছিম ফোনটা হাতে নিয়ে, ম্যানেজারের ফোনে, কল করলো। কয়েক সেকেন্ড পর ম্যানেজার ফোন রিসিভ করে, বললেন..

” স্যার আর পাঁচ মিনিট লাগবে। লিফট অলমোস্ট ঠিক হয়ে গেছে। ”

নাছিম বললো..” ওকে হ্যারি আপ। ”

নাছিম ফোন কেটে দিলো। মেয়েটা গুটি সুটি মেরে কমলা রংয়ের ফাইল টা বুকের সাথে জরিয়ে দাড়িয়ে, আছে। নাছিম আর চোখে, তাকাতেই মেয়েটা ভেংচি কাটলো৷ নাছিম মনে মনে হাসলো।

কিছুক্ষণ পরই লিফট টা ঠিক হয়ে, গেলো। লিফট আট তলায় এসে থামলো। নাছিম দ্রুতো পায়ে, লিফট থেকে বেরিয়ে গেলো। পিছনে মেয়েটার দিকে আর তাকালো না। নাছিম অফিসে ঢুকতেই সবাই দ্বারিয়ে গেলো। নাছিম সবাই কে গুড মর্নিং বলে, হালকা হেসে নিজের কেবিনের দিকে পা বাড়ালো।

অফিসের কর্মি মিলি নীলার কানে ফিস ফিস করে বললো..
” উফফ..দেখেছিস স্যার কে আজ কি সুন্দর লাগছে। ”

নীলা নাছিমের যাবার পানে তাকিয়ে বললো..
” স্যারের মিষ্টি হাসি টা দেখেছিস। আমি তো জাস্ট খুন হয়ে যাচ্ছি ওনার হাসি দেখে। ”

মিলি ঠোঁট কামড়ে হাসি দিয়ে বললো…
” এই হাসি এক নজর দেখার জন্য আমি আজীবন এই অফিসে চাকরি করতে রাজি আছি। ”

নীলা মিলির কাধে হেলে পড়ে বললো…

” আমিও রে দোস্ত। ”

_______

” এক্সকিউজ মি।”

মিলি স্বাভাবিক ভাবে, বসে বললো…

” জ্বি বলুন। ”

” আজ সকাল দশ টায় ইন্টারভিউ ছিলো। ফটো গ্রাফারের জন্য। ”

” জ্বি বাট। স্যার আসতে বলেছেন দশ টায়, এখন এগারোটা বাজে। ”

” অফিসের লিফট, নষ্ট ছিলো, আমি আটকে গেছিলাম। তাই লেট হয়েছে।”

মিলি বলল…

” স্যার এই মাত্র কনফারেন্স রুমে ঢুকেছেন মিটিংয়ের জন্য। আপনি ওয়েট করুন। ”

” মিটিং শেষ হতে কত ক্ষন লাগবে?”

” বারোটা তো বাজবেই, আরও বেশি সময় ও লাগতে পারে। ”

মেয়েটা নিরাশ মনে, বললো..

” ওহ। ”

মিলি হাত ইশারা করে দেখিয়ে বললো…

” ওই রুম টায় আপনি বসুন। স্যার ডাকলে আমি বলে দিবো। ”

“আচ্ছা। ” বলে আয়শা ওয়েটিং রুমের গিয়ে বসলো।”

প্রায় দু ঘন্টা ধরে, ওয়েটিং রুমে মেয়েটা বসে আছে। কিছুক্ষণ পর পর হাত ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। সকাল বেলা তাড়া হুড়ো করে ঠিক মতো খেয়ে আসাও হয় নি। বাবা কত করে বলেছিলো খেয়ে আসার জন্য, এক পিস পাউরুটি খেয়ে মেয়েটা দ্রুতো ছুটে এসেছে। প্রথম বার ইন্টারভিউ দিতে এসে মেয়েটা পরলো ফেসাদে, লিফটা চার তলায় এসে থেমে গেলো।

একা একা একটা মেয়ে, আর এক টা ছেলে লিফটে আটকা পড়ে গেছে এর চেয়ে বিব্রতকর আর কিছু হতে পারে না। আয়শা প্রথমে না বুঝার ভান করলেও আয়শা বেশ টের পাচ্ছিলো ছেলেটা তাকে আর দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ পর পর ই দেখছে। নার্ভাসনেস, চাপা ভয় কাজ করছিলো।

” এক্সকিউজ মি-। স্যার ডেকেছেন আপনাকে…”

মেয়েটার ধ্যান ভাংলো, মেয়েটা ক্ষুধার্থ ক্লান্ত শরীর টাকে টেনে নিয়ে গেলো। আয়শা অফিসের সি ই ওর রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে দরজাটা খুললো৷

” ভেতরে আসতে পারি ?”

ভেতর থেকে পুরুষালী কন্ঠে ভেসে এলো..

” ইয়েস। কাম ইন..”

আয়শা ঠোঁট কামড়ে বিরক্তি নিয়ে ভাবলো ‘ ইসস আমি বাংলায় বললাম। লোকটা ওভার স্মার্ট নেস দেখিয়ে ইংরেজিতে উত্তর দিলো। আমার ইংরেজিতে পার্মিশন নাওয়া উচিত ছিলো। ধুর ধুর..’

আয়শা দরজা টা খুলে ভেতরে ঢুকে দেখলো। চেয়ার ঘুড়িয়ে কেউ বসে আছে। আয়শা দাঁড়িয়ে রইলো,মেয়ে কে বসতেও বললো না। মনে মনে আয়শার চাপা রাগ হচ্ছে। লোকটা কে চিবিয়ে খেতে মন চাচ্ছে। এ রে… কি না কি ভাবছে সে।

কিছু বলছেও না লোক টা চুপ করে চেয়ার ঘুড়িয়ে বসে আছে। মেয়েটা এক নজর চারি দিকে তাকালো। লোকটা হাল্কা খেকারি.. দিয়ে চেয়ার ছুরিয়ে সামনে তাকালো। লোকটা আর কেউ না, নাছির ফ্যাশন ওয়াল্ডের ডাইরেক্টর নাছিম হোসাইন।

মেয়েটা মৃদু চিৎকার দিয়ে বললো…

” আপনি? এখানে? আমার পিছু নিতে নিতে আমার বসের রুমে ঢুকে পরেছেন। সাহস তো কম না…

নাছিম মনে মনে হাসলো। কিন্তু প্রকাশ করলো না। হালকা কেঁশে স্বাভাবিক ভাবে বললো…

” শান্ত হোন। ”

” কি শান্ত হবো। আমার বসের চেয়ার থেকে উঠেন.. মেয়ে পটানোর ধান্দা, তাই না..”

” কি বলছেন। আমার কি খেয়ে দেয়ে কাজ নাই, আপনাকে পটাতে যাবো।”

” তবে রে… আগে আমার বসের চেয়ার থেকে উঠুন। ”

অফিসের সি ই ওর রুমে চেঁচামেচি শুনে, ম্যানেজার চলে এলো। মেয়ে টাকে কে উদ্দেশ্য করে বললো…

” কি হচ্ছে টা কি? আপনি ফটো গ্রাফার না? আপানার তো ইন্টারভিউ দেয়ার কথা।”

” স্যার ইন্টারভিউ দিতেই তো এসেছি। ভেতরে এসে দেখি সি ই ও স্যারের রুমে এই লোকটা বসে আছেন। ”

” উনিতো, সি ই ও ফ্যাশন বিজনেসের মালিক নাছিম হোসাইন। ”

মেয়েটা হা করে তাকালো। নাছিম টেবিলে রাখা গোল বুক মার্কটা ঘুরাচ্ছে, আর বাঁকা বাঁকা হাসি দিচ্ছে। মেয়েটা কাঁদো কাঁদো চেহারা নিয়ে, দারিয়ে রইলো। জোরে নিঃশ্বাস ছেরে মনে মনে বললো…

” আয়শা রে আজকে তোর চাকরি শেষ। এই জন্মে তোর আর চাকরি হবে না রে..”

ম্যানেজার চলে গেলেন। নাছিম গোল বুক মার্কটা বাম হাত দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বললো…

” কি ব্যাপার দাঁড়িয়ে আছেন কেনো। ”

নাছিম চেয়ার দেখিয়ে বললো..

” বসুন। ”

আয়শা বসলো। আয়শা ভাজা মাছটা উল্টে খেতে পারি না টাইপ হাসি দিয়ে বললো…

” ইয়ে মানে স্যার…সরি। আসলে..”

নাছিম চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে বললো…

” কি যেনো বলছিলেন? আপনার পিছু পিছু এখানে চলে এসেছি? ”

আয়শা কাঁদো কাঁদো মুখ নিয়ে বললো..

” জ্বি না স্যার। ”

” সব মেয়ে পটানোর ধান্দা। ”

বলেই আয়শার বসা চেয়ার চেপে ধরলো। আয়শার ভতরটা ভয়ে, মৃদু কম্পন দিলো। আয়শা মনে, মনে আল্লাহ নাম যপছে। নাছিম আয়শার কাছ থেকে সরে গিয়ে নিজের চেয়ারে বসলো।

” আপনার ফাইল। ”

” হ্যাঁ? ”
” আপনাএ ইন্টারভিউর ফাইল?”

আয়শা কাঁপা কাঁপা হাতে ফাইল টা এগিয়ে দিলো। নাছিম কলম। নাড়ছে, আর মন দিয়ে আয়শার ফাইল দেখছে। আয়শা প্রচুর ঘামছে, সাথে তার হাতের তালুও ঘেমে অনেকটা চিটচিটে হয়ে গেছে। ছোট বেলা থেকেই আয়শা বেশি টেনশনে থাকলে, তার নাকের মাথা এবং হাতের তালু ঘামে।

আয়শা দু হাত নিচু করে ঘষছে। নাছিম কিছুক্ষণ ফাইলটা পড়ার পর। চশমা নাড়িয়ে বললো..

” মিস আয়শা, আপনার এসএসসি, এইচএসসি সি তে নম্বর ভালো না। ভার্সিটির প্রথম ইয়ারে, দুই বিষয়ে ফেল করেছেন। এডুকেশন কোয়ালিটি খুব খারাপ।

ছবি গুলো ভালো, কিন্তু এডুকেশনাল কোয়ালিটি টাও তো ইম্পর্ট্যান্ট। ”

আয়শা লজ্জয় মাথা নিচু করে আছে। প্রথমেই নাছিমের সাথে উলটো পালটা ব্যাবহার করেছে, চাকরিটা মনে হয় আর হবে, না…



চলবে
#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️

পর্বঃ০১

Written by #Ruhi_jahan_maya😇

[ অন্যরকম ভালোবাসার গল্প নিয়ে, নাছিম-আয়শা আবারও চলে এসেছে। আশা করি সবাই সাপোর্ট করবেন?]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here