#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya
পর্বঃ- ১০
(প্রতিদিন নিত্যনতুন গল্প পড়তে ভিজিট করুন গল্পের ঠিকানা ওয়েবসাইট এবং গল্পের শহর চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন যাতে করে পোস্ট দেব তখন নোটিফিকেশন পাবেন এবং সহযেই পড়তে পারবেন)
সকাল দশ কি সারে দশটা বাজে, সবাই কাজে ব্যাস্ত। কারো দিকে চোখ ফেরানোর ও সময় নেই। চারিদিকে পিন পতন নিরবতা৷
আয়শা একবার এদিক ও দিক তাকিয়ে, আয়শা উঠে দাড়ালো, ধীর পায়ে নাছিমের কেবিনের ঢুকলো। ফ্লাক্স টা খোঁজার জন্য। চারিদিকে একবার চোখ বুলালো কিন্তু কোথাও দেখতে পেলো না।
” কি খুঁজছেন মিস.আয়শা?”
ভয়ে আয়শা ঢোক গিললো, নাছিম কেবিনে চলে এসেছে। আয়শা জোরপূর্বক ঠোঁট টেনে হাসার চেষ্টা করলো।
” ইয়ে মানে স্যার..”
“হুম বলুন। ”
আয়শার ভেতর থেকে কান্না পাচ্ছে। মনে মনে নিজেকেই নিজে গালি দিচ্ছে। কি দরকার ছিলো, স্যারের কেবিনে ঢুকার। নিজের চুল নিজেরই ছিঁড়তে মন চাচ্ছে…
নাছিম খোঁচা মেরে বললো
“চুড়ি করতে এসেছিলেন নাকি?”
“কি বলছেন স্যার? ”
“তাছাড়া আমার কেবিনে ঢুকার আর কি কারন থাকতে পারে?”
” আমি তো আমার কফির ফ্লাক্স খুঁজতে এসেছি? ”
“সত্যি বলছেন? নাকি চুরি করার ধান্দা?”
” চুরি করা আমার পেশা না স্যার। আমি একজন ফটোগ্রাফার। ”
” আপনার ফ্লাক্স কেন্টিনে। ওখান থেকে নিয়ে নিন। ”
” আচ্ছা স্যার।”
বলেই আয়শা কেবিন থেকে বের হয়ে কেন্টিনের দিকে চলে গেলো। নাছিম ফ্লাক্সটা টেবিলে রাখলো। আসলে মেয়েটা কে নাছিম যতোটা অবুঝ ভেবেছে মেয়েটা ততোটাও অবুঝ না, বেশ বিচক্ষণ জবাব দেয়। নাছিমের ভাবনায় ছেদ পরলো। আয়শা উঁকি দিয়ে বললো…
” স্যার আসবো?”
“আসুন। ”
” স্যার ফ্লাক্স টা তো পেলাম না। আরে এখানে আমার ফ্লাক্স। আগে বলে নি কেনো?”
” এখানেই তো রাখা ছিলো, আপনি আগে দেখেন নি কেনো?”
” এটা তো এখানে ছিলো না। এদিক ওদিক করতে করতে আমার পা ব্যাথা হয়ে গেলো?”
“চোখের সামনে স্পষ্ট থাকা সত্বেও যদি না দেখে, তাহলে আমি এক্সপ্লেইন করতে পারবো না।
ফ্লাক্স এখানেই ছিলো। আপনি কফি খাওয়ার জন্য বিভোর হয়ে গেছিলেন। তাই খেয়াল করেন নি, হয়তো। ”
আয়শা দাঁড়িয়ে বাম হাত দিয়ে মাথা চুলকাচ্ছে। কি থেকে কি হয়ে গেলো৷
” খাম খেয়ালি আমি এক দম পছন্দ করি না। সো বি কেয়ার ফুলো। ”
” ওকে স্যার ”
বলেই আয়শা ফ্লাক্স নিয়ে বেরিয়ে গেলো কেবি থেকে। নিজের ডেক্সে গিয়ে ফ্লাক্স খোলা মাত্রই আয়শা অবাক হয়ে গেলো। ফ্লাক্সে এক ফোটা কফি নেই। কফি কে খেলো ভুতে?
ভাবতেই আয়শার গাঁ জ্বলে যাচ্ছে। লোকটা ইচ্ছা করে এতো গুলো হয়রানি করলো। পুরো অফিস চক্কর দিয়ে পায়ের ছাল -চামড়া উঠে গেলো। ব্যাটা খারুস একা হুহ’
আয়শা কম্পিউটার অন করে নিজের কাজে মন দিলো। ছবি এডিটিং করা শুরু করলো আর মনে মনে নাছিমের গুষ্টি উদ্ধার করলো। লাঞ্চ টাইমের পর আয়শা বসে কফি খাচ্ছে, ব্যাগের ভেতর ফোন খুঁজছে কিন্তু পাচ্ছে না। কলিগের ফোন দয়ে নিজের নম্বরের ডায়েল করার পর ও ফোনটা খুঁজে পাচ্ছে না। আয়শা আবারো কেন্টিনে গেলো, খুঁজে পেলো না।
অনেক বার খোঁজার পর ও ফোন না পেয়ে আয়শা হতাশ হয়ে,নিজের ডেক্সে বসে রইলো। ঠিক তখনই পিয়ন এসে বললো…
” আয়শা আফা, আন্নেরে (আপনাকে) নাছিম স্যার যাতি কয়েছে (যেতে বলেছে)।”
এই খরুস টা আবার তাকে কেনো ডাক দিচ্ছে। আবার নতুন করে আমাকে বোকা বানানোর প্লান না তো?
আয়শা পিয়নের উদ্দেশ্য বললো “যাচ্ছি। ”
আয়শা কফিটা শেষ করে নাছিমের কেবিনে গেলো। আয়শা নাছিমের অনুমতি নিয়ে কেবিনে ঢুকলো।
” আমাকে ডেকেছিলেন স্যার?”
“জ্বি। ”
বলেই নাছিম কম্পিউটারের স্ক্রিনে তাকিয়ে আছে। আয়শা কিছু বুঝতে পারছে না। বেশ কিছুক্ষণ পর কম্পিউটার ঘাটাঘাটি করে নাছিম আয়শার দিকে তাকালো।
আয়শা ফোন খুঁজে না পাওয়ার টেনশনে এসি রুমে বসে বিন্দু বিন্দু ঘামছে। নাছিম বললো…
” এনি প্রব্লেম? ”
” ফোনটা খুজে পাচ্ছি না৷ ”
নাছিম মনে মনে হাসলো। ক্ষানিকটা সিরিয়াস হয়ে বলো
” আই থিংক আপনার ডাক্তার দেখানো দরকার। কিছু দিন পর নিজের বাড়ির ঠিকানা টাও হারিয়ে ফেলতে পারেন। ”
বলেই নাছিম হাসলো। আয়শার গাঁ জ্বলে যাচ্ছে, নাছিম কে কফির কাপে চুবাতে মন চাচ্ছে আয়শার। খালি আয়শা কে অপদস্ত করার মতলব।
” স্যার আমায় কেনো ডেকেছিলেন?”
নাছিম হাসি থামিয়ে স্বাভাবিক গলায় বললো..
” সাত দিন পর আমার বোনের বিয়ে৷ আমি চাচ্ছি, আপনি ওয়েডিং শ্যুটা করুন৷ মেহেদী, গায় হলুদ সব গুলো অনুষ্ঠানের দিন ফটোগ্রাফি করবেন, এবং ওয়েডিং শর্ট ফিল্ম তৈরি করুন। আপনাকে এর জন্য এক্সট্রা পেমেন্ট কররা হবে৷ ”
” ওকে স্যার। ”
” এখন আপনি আসতে পারেন।”
আয়শা উঠে দাড়ালো বের হবার জন্য।
“মিস আয়শা৷ ”
” জ্বি স্যার। ”
” আমার একজন পরিচিত ডাক্তার আছেন, জিনি মাথ্যার ব্যামো সারান৷ আপনি চাইলে তার সাথে দেখা করতে পারেন৷ ”
বলেই নাছিম হাসলো। আয়শা নিজের রাগ টাকে কন্ট্রোল করে ভেংচি মেরে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।
–
–
সন্ধ্যা বেলা নাছিম বিছানায় বসে টিভি দেখছে হঠাৎ একটা কার্টুনের চ্যান্সেলর সামনে এলো, মটু পাতলু দেখাচ্ছে টিভিতে। আয়শার কথা মনে পরতেই নাছিম হালকা হাসলো। নাছিম ফোন টা হাতে নিয়ে আয়শার নম্বরে কল করলো..
বিছানায় বসে আয়শা ফটো শ্যুটের ছবি এডিট করছে ঠিক তখনই আয়শা পরিচিত রিং আওয়াজ কানে আসলো। এটা তো তার নিজের ফোনের শব্দ। সাইড ব্যাগ থেকে শব্দ আসছে, আয়শা দ্রুতো সাইড ব্যাগ খুলতেই ফোন টা পেলো।
অপরিচিত নম্বর স্ক্রিনে ভাসছে। আয়শা ফোন টা রিসিভ করে বললো….
” হ্যালো… ”
” ফোন পেয়েছেন, মিস আয়শা? ”
বলেই নাছিম নিঃশব্দে হাসলো।
আয়শা অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে বললো…
“স্যার আপনি?”
” হ্যাব আ গুড ডে ”
বলেই ফোন কেটে দিলো।নাছিম দাঁত কেলিয়ে হাসছে।’আমার অফিস থেকে আমাকেই বের করে দেয়া, বুঝো মিস আয়শা শাস্তি কাকে বলে।
আয়শা শকড হয়ে বসে আছে এটা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। আমাকে আমাকে বোকা বানিয়ে টর্চার করার প্লান। একটা মাসুম ভদ্র লক্ষী মেয়ে কে টর্চার করলে, আল্লাহ ছারবো না ওই খারুস টা কে।
বিছানায় শুয়ে বক বক করছে আয়াশা
” ভাইয়া আসছো কেনো?”
ফরিদের দিকে নাছিম তাকালো,
“কোথায় না তো?”
ফরিদ সন্দেহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো..
” আমি শিউর তুমি আসছিলে। প্রেমে পড়েছো নাকি?”
বলেই ফিক করে হাসি দিলো ফরিদ। নাছিম এবার একটু সিরিয়াস কন্ঠে বললো
” কি যে বলিস তুই?”
” কার্টুন দেখো কেনো?”
“কার্টুন তো আয়..”
” থামলে কেনো ভাইয়া, কার যেনো নাম নিচ্ছিলে বলো বলো..”
” এমনিতেই কার্টুন দেখছিলাম৷ আর তোর মাথায় কি প্রেম ছাড়া আর কোন টপিক নেই? ”
“আছে ভাইয়া।”
বলেই ফরিদ জোরে একটা নিঃশ্বাস ছারলো, তার চোখের সামনে ওরিনের মুখ খানা ভেসে উঠলো। তখনি ফরিদের মনে পরলো, ওরিন হাতে চোট পেয়েছিলো। কি জানি কি অবস্থা এখন মেয়েটার।
নাছিমের সাথে ফরিদ কিছুক্ষণ কথা বলে নিজের রুমে চলে এলো। মাথা ব্যাথার চোটে ফরিদ মাথা চেপে ধরলো, চোখ বন্ধ করলেই ফরিদ ওরিন কে দেখতে পাচ্ছে। কেনো? কেনো?
।
চলবে