#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya
পর্বঃ-১১
রৌদ্রময় সকাল, রাস্তা ঘাটে খুব একটা ভীড় নেই। বেশ কিছুক্ষণ পর পর রিক্সার হর্নের ক্রিং ক্রিং শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। ওরিন আজ হেটেই কলেজে আসলো। সকাল বেলা ভার্সিটি রোডে খুব একটা ভীড় থাকেনে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়৷
ক্লাস শুরু হতে এখনো বেশ দেড়ি আছে। ওরিন ভার্সিটির দু তলায় উঠলো লাইব্রেরি যাবার উদ্দেশ্য। লাইব্রেরিতে ঢোকার আগেই হঠাৎ কেউ ওরিনের হাত টান দিলো। ওরিন ভয়ে চিতকার দিতে যাবে ঠিক তখনি ফরিদ ওরিনের মুখ চেপে ধরে বললো…
“আস্তে আস্তে আমি ফরিদ। ”
বলেই ফরিদ হাত টা সরিয়ে নিলো। ওরিন কপট রাগ দেখিয়ে বললো…
” আপনি আমার হাত টান দিলেন কেনো?”
” কালকে যা রাগ দেখালে, আমি ডাক দিলেও তুমি আসতে না। আই নো। ”
বলেই এক হাত দেয়ালে রাখলো ফরিদ। ওরিন ভেংচি কেটে বললো,
” তো আর কি করবো? আপনার দাঁত কেলানি আমার জাস্ট সয্য হচ্ছিলো না। ”
বলেই ওরিন অনে দিকে তাকালো, ওরিনের রাগী রাগী চেহারা টা খুব ভালো লাগছে ফরিদের। ওরিনের কপালে থাকা ছোট্ট ছোট্ট চুল গুলো ফরিদ হাত দিয়ে সরিয়ে দিলো।
এই এই আপনি আমাকে আবার টাচ করলেন। বলেছিনা আমাকে ধরবেন না। ফরিদ ইচ্ছা করে ওরিনের কোমড় পেচিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। সয়তানি হাসি দিয়ে বললো…
“এবার কি করবে তুমি? ”
ওরিন ফরিদের কাছ থেকে ছোটার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। ব্যার্থ হয়ে বললো,
” আপনার নামে প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে কমপ্লেইন করবো। হুহ”
ফরিদ আরো জোরে ওরিন কে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। তার পর ভ্রু নাচিয়ে বললো…
” ওকে। দিও নালিশ। স্যার তোমার কথা বিশ্বাস করবেন কেনো?তোমার কাছে কোন প্রমাণ আছে?”
ওরিন হা করে ফরিদের দিকে তাকিয়ে রইলো। লাইব্রেরির এই কোনার সি সি ক্যামেরা ও নাই, তা খুব ভালো করেই জানে ফরিদ। পাঁচ বছর ধরে এই ভার্সিটিতে পড়ছে সে, প্রতিটা কর্নার, ক্লাস রুম ফরিদের চেনা৷
” আমাকে ছাড়ুন বলছি। ”
ফরিদ ওরিনের খোঁপার কাঠি টা টান দিতেই ওরিনেই চুল গুলো খুলে গেলো। নীল গোলাপি কামিজ, আর খোলা চুলে ওরিন কে বেশ শুভ্রো দেখাচ্ছে।
” স্যার এসেছে। ”
ফরিদ চমকে গেলো, ফরিদ হাতে বাধঁন থেকে ছাড়া পেয়ে ওরিন ভো দৌড় দিলো। কোন স্যার আসলেন না। মেয়েটা বেশ চালাক, ফরিদ কে বোকা বানিয়ে পালিয়ে গেলো।
ফরিদ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মাথা চুল্কাচ্ছে, দাঁড়াও মিস, ওরিন তোমাকে দেখে নিবো। বলেই হালকা হাসলো।
ওরিন ক্যান্টিনে ঢুকে চেয়ার টেনে ধপাস করে বসে পরলো। ব্যাগ থেকে ট্যিসু বার করে কপালের ঘাম মুছলো। তনু বইয়ের পাতা উল্টে দিয়ে বললো…
” কিরে কোথা থেকে এলি?”
” লাইব্রেরি তে গেছিলাম। বই আনতে। ”
” লাইব্রেরিতে যাওয়ার আগেই একটা ছেলে আমার হাত টান দিয়ে একটা কোনায় নিয়ে যায়৷ ”
তনু চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো..
“তারপর?”
” আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেছিলাম, যখনি চিতকার দিতে যাবো দেখলাম ওটা আমাদের ভার্সিটির চার বছরের সিনিয়ার ফরিদ ভাইয়া। ”
তখনি আশে পাশে বসা টেবিলের মেয়ে গুলো ওরিনের দিকে তাকালো। চারি পাশে সবার চাহুনি দেখে ওরিন ঘাবড়ে গেলো। কয়েক মূহুর্তেই পরিবেশ স্বাভাবিক হয়ে গেলো। তনু ওরিনের হাত চেপে ধরে, ফিস ফিসিয়ে বললো…
” তুই বোধোদয় জানিস না এই কলেজে অলমোস্ট সবাই ফরিদ কে চেনে, কারন ছেলেটা বৃত্তবান তার চেয়েও বড় কথা ছেলেটা প্রচন্ড হ্যান্সাম। তাছাড়া ছেলেটার এই কলেজে বেশ পাওয়ার আছে, মেয়েদের ক্রাশ বয়। দুই বছর ধরে কলেজে পরছি,ফরিদ ভাইয়ার সাথে কোন মেয়েকে দেখিনি৷ ”
ওরিন সন্দেহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো…
” কোন মেয়ের সাথে দেখিস নি মানে?তুই আমাকে অবিশ্বাস করছিস?”
” তোকে অবিশ্বাস করছিনা দোস্ত। আমি তোকে বিশ্বাস করি। ”
” হুম। ”
তনু কিছুটা ভাবুক হয়ে বললো..
” কিন্তু ফরিদ ভাইয়া এমনটা করছে কেনো?”
হতাশা কন্ঠে ওরিন বললো..
” আমারও সেটাই প্রশ্ন। ”
____________________
‘ সব চক্রান্ত সব। আমার মতো মাসুম শিশুর সাথে এমন অবিচার করছে উনি, ওনার ভালো হবে না। হুহ! খারুস ‘ বিড়বিড় করে বলতে বলতে আয়শা নিজের ডেক্সে গিয়ে বসলো৷
কিছুক্ষন আগেই, অনেক গুলো ছবি এডিট করে নাছিম কে দেখিয়েছে। নাছিম আরো কিছু মডেলসের ছবি আয়শাকে এডিট করতে দিয়েছে। কাজের চাপে আয়শার মাথা ভার হয়ে আসছে।
আয়শা ছবি গুলো এডিট করে নাছিমের ইমেইল একাউন্টে পাঠিয়ে দিলো। নাছিম আয়শার দিকে তাকালো। আয়শার ডেক্সের টেলিফোনটা বেজে উঠলো। আয়শা ফোন কানে নিয়ে বললো…
” হ্যালো আয়শা স্পিকিং। ”
” মিস. আয়শা আমার রুমে আসুন। ”
আয়শা নাছিমের কেবিনের দিকে তাকালো। সচ্ছ কাঁচের দেয়াল ভেদ করে দুজনের চোখা চোখি হলো। আয়শা ফোনটা কেটে নাছিমের কেবিনে দিকে গেলো।
” স্যার আসবো?”
“জ্বি আসুন। ”
” বেশ ভালোই এডিট করেছেন। ”
আয়শা কি বলবে বুজতে পারছে না। চুপটি করে দাঁড়িয়ে রইলো। এই ছবিটা একটু বেশি ব্লাক মনে হচ্ছে। ”
“আয়শা নাছিমের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো। ছবিটা দেখার জন্য। ”
আয়শা ছবিটা জুম করে দেখিয়ে বললো…
” ব্লাক ড্রেসের সাথে ব্লাক এন্ড হোয়াইট কম্বিনেশন অনেকটাই ইউনিক। ”
আয়শা একটু ঝুকে কম্পিউটার স্ক্রিনে নাছিম কে দেখিয়ে দিচ্ছিলো। এ সি র কৃতিম হাওয়ায় আয়শার গাঁয়ের মেয়েলি গন্ধ পাশে বসা, নাছিমের নাকে লাগছে। অন্যরকম একটা ঘ্রান নাছিম বেশ উপলব্ধি করছে।
” ঠিক আছে না স্যার?”
নাছিম হাল্কা কাঁশি দিয়ে বললো,
” রাইট, গুট এডিটিং। ”
আয়শা আগের জায়গায় এসে দাঁড়ালো। গন্ধটাও অদ্ভুত ঘ্রাণটাও মিলিয়ে গেলো।
” সে দিন আমার বুকে কফি ফেলেছিলেন। শাস্তি পাওয়া না আছে। ”
আয়শা মনে মনে ভেংচি কাটলো। আয়শা ঢোক গিলে বললো..
” কি শাস্তি? ”
” পাশের রুমে গিয়ে এক কাপ কফি বানিয়ে আনুন? ”
আয়শা ফট করে বললে ফেললো..
“ওটা কি আমার গাঁয়ে ঢালবেন স্যার?”
” মিস, আয়শা আপনার মাথার সমস্যা কি বেশি বেড়ে গেছে। ”
” যাচ্ছি যাচ্ছি। ”
আয়শা রুম থেকে বেরিয়ে পাশের রুমে ঢুকলো।
‘ হুহ আমাকে পাগল মনে হয় তাই না, আমার মাথায় ব্যামো আছে তাই না? মাই ডিয়ার নাছিম স্যার, আপনাকে আজ জন্মের কফি খাওয়াবো। ”
বলেই বয়ামে রাখা অর্ধেক কফি সব কাপে ঢেলে দিলো আয়শা।
” এই কি করছো কি? ”
পেছনে কারো শব্দ পেয়ে আয়শা ঘাবড়ে গেলো। ভয়ে ভয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখে মিলি দাঁড়িয়ে আছে।আয়শা ভান করে হাসি দিয়ে বললো..
” কফি বানাচ্ছি। ”
” এতো কফি দিলেতো তেতো চেটে কফি মুখে দেওয়া যাবে না। ”
” সমস্যা নেই। তুমি এখানে। ”
মিলি লজ্জা লজ্জা মুখ নিয়ে বললো..
“নাছিম স্যার কেবিনে ফাইল গুলো নিয়ে যাচ্ছি। ”
“আচ্ছা যাও। ”
মিলি আগের মতোই লজ্জা লজ্জা হাসি দিয়ে নাছিমের কেবিনের দিকে চলে গেলো। আয়শা আবারো ভেংচি কাটলো। ‘ ডং করে লজ্জা পাওয়া কি আছে?’ যত্তসব।
আশা আধা বোয়াম কফিতে অর্ধেক বয়াম গুড়াদুধ এবং দশ চামুচ চিনি মিক্স করে গরম গরম কফি নিয়ে গেলো।
কফিটা নাছিমের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো…
” স্যার কফি। ”
নাছিম কফির কাপে চুমুক দিয়ে ওয়াক থু বলে সব করি মুখ থেকে ফেলে দিলো।
“এটা কি বানিয়েছেন। তেতো আর এটা গুড়া দুধ নাকি। হুইল সাবানের গুড়া? ”
এরে, আয়শা তো মনেই ছিলো না। আয়শা গুরা দুধের বয়াম খুঁজে পাচ্ছিলো। হাতের কাছে গুঁড়া সাবান কে আয়শা গুড়ো দুধ ভেবে অর্ধেক মিশিয়ে দিয়েছে৷
আয়শা তু তো গাই রে। আয়শা মনে মনে আল্লাহ নাম নিচ্ছে।
এবার কি হবে?
#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya
পর্বঃ- ১২
আধা বোয়াম কফিতে আধা বয়াম গুড়োদুধ এবং দশ চামুচ চিনি মিক্স করে গরম গরম কফি নিয়ে গেলো।
কফিটা নাছিমের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো…
” স্যার কফি। ”
নাছিম কফির কাপে চুমুক দিয়ে ওয়াক থু বলে সব কফি মুখ থেকে ফেলে দিলো।
“এটা কি বানিয়েছেন। তেতো আর এটা গুড়ো দুধ নাকি?সাবানের গুড়ো। ”
এরে, আয়শা তো মনেই ছিলো না। আয়শা গুড়ো দুধের বয়াম খুঁজে পাচ্ছিলো। হাতের কাছে গুঁড়ো সাবান কে আয়শা গুড়ো দুধ ভেবে অর্ধেক মিশিয়ে দিয়েছে৷
আয়শা তু তো গাই রে। আয়শা মনে মনে আল্লাহ নাম নিচ্ছে।
এবার কি হবে?
নাছিম আয়শার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সে রাগবে নাকি স্বাভাবিক থাকবে বুঝতে পারছেনা। আয়শা যা করেছে ইচ্ছা করেই করেছে। কারন আয়শার হাতে কফি এর আগেও নাছিম খেছে, ফ্লাক্সে রাখা কফি ভালো ছিলো। নাছিম পাক্কা শিওর কাজটা আয়শা ইচ্ছা করেই করেছে।
নাছিম রাগী কন্ঠে বললো…
” এটা কি বানিয়েছেন? এমন বিশ্রী কফি আমি জীবনেও খাইনি। ”
” আ আ আসলা হাতের কাছে, পাউডার মিল্ক পাচ্ছিলাম না। ভু…”
নাছিম আয়শায় কথা কেড়ে নিয়ে বললো…
” তাই বলে ডিটারজেন্ট পাউডার মিক্স করে দিয়েছেন?”
আয়শা মন খারাপ করে আনমনে বললো..
” আমার কোন দোষ নেই। আমি তো শুধু অর্ধেক বয়াম কফি ঢেলে দিয়েছিলাম। ”
বলেই আয়শা নিজের মুখ চেপে ধরলো। শিট..’এটা আমি বলে ফেললাম। আজকে আমার চাকরি শেষ।’
আয়শা ভয়ে ভয়ে নাছিমের দিকে তাকালো। নাছিম মুখ বাঁকা করে হাসছে।
নাছিমের বিটকেল টাইপ হাসি আয়শার মোটেও ভালো লাগছে না। বুকের ভেতর দুরু দুরু করছে ভয়ে। নাছিম নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো…
“মিস আয়শা তাহলে আপনি স্বীকার করছেন আপনি অর্ধেক বয়াম কফি ঢেলেছেন?”
বলেই নাছিম চেয়ার থেকে উঠে আয়শার কাছে এগুচ্ছে। আয়শা ভয়ে চোখ বুঁজে দৌড় দিতে গিয়ে ওয়ালের সাথে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পরে গেলো। আয়শা ব্যাথায় “আউউউ করে শব্দ করলো।”
নাছিম আয়শার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। আয়শা হাতটা ধরবে কিনা বুঝতে পারছেনা।
” হাতটা ধরুন বলছি৷ ”
বলেই নাছিম ধমক দিলো আয়শা নাছিমের হাতে হাত রেখে উঠে দাঁড়ালো। কপালে ক্ষানিকটা কেটে দু ফোটা রক্ত গড়িয়ে পরলো। আয়শা বুজতেও পারলো না। আয়শা চেয়ারে গিয়ে বসলো।
” আর কতক্ষণ হাত ধরে রাখবেন? ”
আয়শা নাছিমে হাত থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিলো। ধুর এই লোকটা সব সময় আয়শা কে লজ্জা দেয়। আয়শা আর তাকাবেই না। হুহ।
নাছিম ড্রয়ার থেকে একটা বক্স বের করলো। রাগে আয়শা দু হাত দিয়ে চেহারা ঢেকে রেখেছে। নাছিম হাত টেনে সরালো। কর্টনে লিকুইড ঔষধ নাছিম আয়শার কপালে ছোঁয়াতেই আয়শা মৃদু চিৎকার দিলো।
“আউউ, জ্বলছে তো। প্লিজ ঔষধ এটা লাগাবেন না। ”
” ঔষধ না লাগালে আরো জ্বলবে। ”
বলেই নাছিম আয়শার দিকে ঝুকে কপালে ফুঁ দিয়ে মলম লাগিয়ে দিলো। আয়শা চোখ বুজে নাছিমের শীতল ছোঁয়া অনুভব করছে। নাহ এখন তার একদম জ্বলছে না। বরংচ ইচ্ছে করছে এভাই যেনো নাছিম তার কপালে ফুঁ দিয়ে দিক।
আয়শা পিট পিট করে চোখ খুললো, নাছিম কপালে, চোখে পড়া চুল গুলো আয়শার কানের পিঠে গুজে দিলো।
” আপনি ঠিক আছেন? ”
আয়শা একটু নড়ে চরে বসলো।
” জ্বি। এখন আমি যাই। ”
বলেই উঠে দাড়ালো। নাছিম ভারী কন্ঠে বললো…
” দাঁড়ান মিস আয়শা৷”
আয়শা স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে রইলো। ভয়ে আয়শার প্রচন্ড পানির পিপাসা পাচ্ছে। নাছিম চেয়ারটা দুলিয়ে বললো..
” আমাকে ডিটারজেন্ট পাউডার খাইয়ে মারার প্লেন ছিলো নাকি?”
বলেই নাছিম উঠে দাঁড়ালো। আয়শার কাছে এগিয়ে যাচ্ছে। আয়শার গলা শুকিয়ে আসছে, ভেতর টা বোধহয় মরুভূমির মতো সব শুকিয়ে গেছে। আয়শা এক পা দু পা করে পিছিয়ে যাচ্ছে, নাছিম আয়শার আরো কাছে যাচ্ছে।
হঠাৎ আয়শা বুক সেল্ফের সাথে ধাক্কা খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। নাছিম এক হাত বুক সেল্ফে রেখে আয়শা কে বললো…
” কি হলো বলুন মিস আয়শা?”
আয়শা শুকনো একটা ঢোক গিললো। এ সি রুমে দাঁড়িয়ে আয়শা প্রচন্ড ঘামছে। এই খারুস টা হাত থেকে কি ভাবে বাঁচবে সে এখন?
আয়শা হঠাৎ ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলো। আয়শার কান্ড দেখে নাছিম ঘাবড়ে গেলো। আয়শা ন্যাকা কান্না জুরে দিয়ে বললো…
“বিশ্বাস করুন স্যার, আমি ইচ্ছা করে ডিটারজেন্ট পাউডার মিশাই নি। ”
” তাহলে ইচ্ছা করে অনেক গুলো কফি মিক্স করেছেন?”
আয়শা মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ সূচক মাথা নারলো। নাছিম জোরে একটা নিশ্বাস নিলো। এই মেয়ে কে তো কিছুই বলাই যায় না। কছু বলতে গেলেই আবার মরা কান্না জুরিয়ে দেবে।
” প্লিজ এবারের মতো মাফ করে দিন। ”
বলেই আবারও ন্যাকা কান্না জুরিয়ে দিলো। নাছিম নিজের কপাপে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। স্বাভাবিক গলায় বললো…
” মিস আয়শা আপনি কান্না করছেন কেনো? আমি আপনাকে মেরেছি নাকি বকেছি? ”
আয়শা কাঁদো কাঁদো মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কোন উত্তর দিলো না। আয়শার কাছ থেকে উত্তর না পেয়ে নাছিম বললো…
” আপনি কান্না জুরিয়ে দিলেন কেনো বলুন তো? আমি বাঘ নাকি ভাল্লুক?”
আয়শা ফট করে উত্তর দিলো…
” ভাল্লুক ”
নাছিম ভ্রু নাচিয়ে বললো..
“কিহহ? আমি ভাল্লুক তাই না? ”
নাছিমের বুক সেল্ফে রাখা হাতের নিচ দিয়ে আয়শা দৌড় দিলো। এবার আয়শার পালানো মিস হলো না। নাছিমের কেবিন থেকে বের হয়েই আয়শা শান্তির নিঃশ্বাস নিলো।
নিজের ডেক্সে গিয়ে বোতল খুলে ঢক ঢক করে সব পানি খেয়ে ফেললো।
” খারুস টার হাত থেকে এই যাত্রায় বাঁচা গেলো৷ বাবা গো।”
অফিসে লাঞ্চ টাইম চলছে। আয়শা নিজের টিফিন বক্স বের করে পাস্তা খাচ্ছেব,সি সি ক্যামেরার মাধ্যমে নাছিম কম্পিউটারে দেখছে। এবং চার আংগুল দিয়ে কলম ঘুরাচ্ছে।
কিছুক্ষন আগে মেয়েটা নাছিম কে, ভাল্লুক বলে গেলো। কত্তো বড় সাহস মেয়েটা, নাছিম হোসাইন কে ভাল্লুক বলা, খারুস নাম দেওয়া। দাঁড়াও মিস আয়শা তোমাকে মজা দেখাচ্ছি। জাস্ট ওয়েইট এন্ড সি।
নাছিম কে তুমি চেনো না। নাছিম বুক সেল্ফ থেকে লাল রঙের একটা ফাইল বের করলো। আয়শা এখনো ছবি গুলো কামপ্লিট করে নি। মেয়েটা জাস্ট একটা ফাঁকি বাজ।
নাছিম কলিং বেল বাজালো। তৎক্ষনাত পিয়ন লোকটা কেবিনের দরজা ফাঁকা করে বললো…
” নাছিম বাবা আসবো?”
” আসুন চাচা। আপনাকে না বলেছি আমার রুমে আপনি যখন ইচ্ছা তখন আসবেন। অনুমতি নেওয়া লাগবে না। ”
লোকটা হাল্কা হাসলো।
” কিছু খাবে বাবা?”
” নাহ চাচা। এই ফাইল টা মিস আয়শা কে দিয়ে বলবেন আজকের মধ্যে রেডি করতে।”
“আচ্ছা। ”
বলেই উনি রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। ‘এবার বুঝবে মজা মিস আয়শা। ‘ বলেই নাছিম শয়তানি হাসি দিলো।
রাত আটটা বাজে। আয়শার ফোনটা বেজে উঠলো। আয়শার ফোনের শব্দ পেয়ে নাছিম বরাবর রুমে তাকালো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত আটটার বেজে উনিশ মিনিট। আয়শা এখনো যায় নি কেনো?
” পরক্ষণেই মনে পরলো নাছিম ফাইল রেডি করতে বলেছিলো হান্ড্রেড প্লাস ছবি আয়শা এক দিনে এডিট করতে পারবে না। নাছিম ভেবেছিলো আয়শা হয়তো চলে গেছে। সারা অফিস অলমোস্ট খালি। দ্বায়িত্বর বসে মেয়েটা বাসায় যায় নি৷
নাছিম ব্লেজার হাতে নিয়ে কেবিন থেকে বের হলো। আয়শার সামনে গিয়ে বললো..
” মিস আয়শা বাসায় যাননি কেনো?”
” এখনো অনেক গুলো ছবি এডিট করা বাকি আছে স্যার।”
” আপনার ফ্যামিলির সবাই চিন্তা করছে। আর কাজ করতে হবে না। ”
আয়শা ব্যাগ গুছিয়ে, রুম থেকে বের হলো। নাছিমের সাথে অফিস থেকে বেড়িয়ে এলো। সে দিনের নাছিমের সাথে লিফটে উঠলো। নাছিমের সেদিনের কথা মনে করে হাসি পাচ্ছে।
” সে দিন আপনার থ্রেট শুনে আমি প্রচন্ড ভয় পেয়েছিলাম। মিস আয়শা। আমার চাকুরী না জানি চলে যায়।”
আয়শা ভ্যাবাচেকা খেলো নাছিমের কথা শুনে। লোকটা বড্ড দুষ্ট খালি আয়শা কে লজ্জা দিতে চায়। আয়শা মনে মনে ভেংচি দিলো।
।
।
চলবে