ইঁচড়েপাকা এবং সে❤️ পর্ব ৩১+৩২

#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ-৩১

সবুজ গাছগাছালির পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে গাড়ি। পাশে প্রিয় রমণী বসে আছে, আর নাছিম মনের সুখে গাড়ি ড্রাইভ করছে এর চেয়ে শান্তির আর কিছু হতে পারে না, বলে নাছিমের এই মূহুর্তে মনে হচ্ছে।

কিছুক্ষণ আগে ঘটনা, এলিয়েন মেয়েটাকে নিয়ে নাছিম, ধাবা টাইপ রেস্টুরেন্টে নাস্তা করার জন্য বসেছে, নাছিম খাবারের অর্ডার দিলো রুটি, আর সবজির। নাছিম আয়শার দিকে ম্যানু কার্ড দিতেই আয়শা, সবগুলো ব্রেকফাস্ট আইটেম অর্ডার দিয়ে দিলো।

নাছিম আবাক হলো, কারন এতো খাবার কে খাবে ভেবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই টেবিল খাবারে পরিপূর্ণ হয়ে গেলো। আয়শা একটার পর একটা খেয়েই যাচ্ছে। নাছিম মনে মনে, ভাবছে, এতো টুকু মেয়ে এতো খাবার কিভাবে খাচ্ছে।

খাওয়া শেষে আয়শা, ঢেকুর তুলে হালকা হেসে বললো..

” থেংক ইউ স্যার ফর ট্রিট। প্রচন্ড খুধা পেয়েছিলো। ”

নাছিম কিছু বললো না, আয়শার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো, কয়েক মুহূর্ত। নাছিমের খুব ইচ্ছা করছে আয়শার হাতে হাত রাখতে। নিজের ইমেজ টাকে বজায় রাখতে নাছিম তার অদম্য ইচ্ছা টাকে চেপে রইলো।

হয়তো আয়শা ভাববে, নাছিম তার একার সুযোগ নিচ্ছে। হঠাৎ আয়শা নাছিমের কাঁধে ঘুমে ঢলে পড়লো। নাছিম আয়শার মূখ পানে তাকালো। মেয়েটা ঘুমাচ্ছে। বেশ মায়াবী লাগছে আয়শা কে। যে দিন রাতে আয়শা নাছিম দের বাসায় পায়ে ব্যাথা পেয়েছিলো সে রাতেও মোমের আলোয় আশাকে বেশ স্নিগ্ধ দেখতে মনে হচ্ছিলো।

গাড়ির ঝাকুনিতে নাছিম আবার ড্রাইভিংয়ে মন দিলো৷ লং ড্রাইভ নাছিমের বরাবর খুব প্রিয়। আগে একা একা নাছিম ড্রাইভ করে ঢাকার বাইরে চলে, যেত আবার ফিরে আসতো। কাজে চাপে বেশ কয়েক বছর ধরেই লং ড্রাইভে যাওয়া হয় না নাছিমে। আর আজ প্রিয় সে, রমণী কে নিয়ে দূরে যাচ্ছে। আপাদত এটা নাছিমের ক্ষানিকের শান্তি বই কি।

আয়শা চুল গুলো নাছিমের নাকে চোখে লাগছে। বাতাসের কারনে চুল গুলো খুব উড়ছে, নাছিমের ড্রাইভ করতে ক্ষানিকটা অসুবিধা হচ্ছে৷ কিন্তু আয়শা জাগাতে ইচ্ছা করছে না। নাছিম জানালাটা আটকে দিলো। আয়শা আগের মতোই বিভোর হয়ে ঘুমাচ্ছে। মেয়েটা রাতে ঘুমায় না নাকি…

রোদের আলোতে আয়শার ঘুমে ব্যঘাত ঘটছে বার বার।আয়শা আড়মোড়া হয়ে,ঘুম ভাঙ্গতেই সে গাড়িতে নিজেকে একা আবিষ্কার করলো। হাইওয়ের এক কোনে গাড়িটা থামানো। আশে পাশে কোথাও নাছিম কে দেখা যাচ্ছে না। আয়শা গাড়ি থেকে বের হবার চেষ্টা করলো, কিন্তু দরজা আটকানো৷

আয়শার বড্ড নার্ভাস হয়ে, গেলো। এই লোকটা একটা মেয়ে কে একা রেখে কোথায় চলে গেলো। এই মূহুর্তে আয়শার অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। প্রচন্ড গরম লাগছে, পানির পিপাসা ও পেয়েছে। আয়শা মুখে ওরনা ঢেকে বসে রইলো।

দরজা খলার শব্দে আয়শা চোখ খুললো। নাছিম হাতে খাবারের শুকনো খাবারের প্যাকেট আর পানির বোতল। নাছিম আয়শা কে উদ্দেশ্য করে বললো…

” ঘুম ভেঙ্গেছে তাহলে।”

আয়শা কোন উত্তর দিলো, না উল্টো প্রশ্ন করলো…

“কোথায় চলে গিয়েছিলেন আপনি?”

” রিলেক্স। হাইওয়ে কিছুটা দূরের একটা দোকানে গেছিলাম খাবার কিনতে। ”

আয়শা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো..

” আমাকে নিয়ে গেলে কি হতো, আপনাকে পাশে না পেয়ে জানেন কতো ভয় পেয়ে ছিলাম। দরজাটাও খুলছিলো না।”

” দিনে দুপুরে কিসের ভয়?পালিয়ে যাই নি। আর কথায় কথায় কাঁদেন কেনো?”

” আমি এমনই, আমার ইমোশন একটু বেশি। ”

” একটু?”

আয়শা অভিমানী সুরে বললো..
” অনেক বেশি। এখন খুশি?”

নাছিম হালকা হেসে বললো..
” আপনি কান্না করছেন কেনো? আর দরজাতো ভেতর থেকে লক করা ছিলো। আপনি হয়তো ভুলে গেছেন। ”

আয়শা ভেংচি কেটে মনে মনে বললো..’ আমাকে ইডিয়ট বলে, নিজে তো বড় ইডিয়েট।এটাও বুঝে না ওনাকে না দেখে আমি ভয় পেছিলাম, খারুস টা ভাবছে আমি আমি দরজা খুলতে পারি নি তাই কাঁদছি। বুঝতে হবে না। হুহ।’

” কি হলো?”

” কিছুনা।”

বলেই আয়শা, অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো। নাছিম একটা টিস্যু নিয়ে আয়শার ভেজা চোখ মুছিয়ে দিলো, আয়শা আড় দৃষ্টিতে নাছিমের দিকে তাকাচ্ছে। নাছিম আয়শার চোখ মুছিয়ে দিতে ব্যাস্ত। নাছিম পানির বোতল টা এগিয়ে দিয়ে,বললো..

” পানি পান করুন। ভয়ের কিছু নেই, আপনাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি, আমার কাছে আছেন। ”

নাছিম আবার গাড়ি স্টার্ট দিলো। নাছিম খুব স্প্রিডে গাড়ি ড্রাইভ করছে৷ আশে পাশে খুব বেশি গাড়ি নেই। নাছিম সমনের দিকে তাকিয়ে বললো…

” সামনে বেশ ক্ষানিকটা রাস্তা হাইওয়ে। হোটেল রেস্টুরেন্ট নেই। পেকেটে শুকনো খাবার আছে ক্ষুধা লাগলে খেয়ে নিবেন। ”

” আচ্ছা। ”

বলে আয়শা কয়েক সেকেন্ড নাছিমের দিকে তাকালো। এই লোকটা এমন কেনো? চোখে মুখে সরলতার ছাপ অথচ মাঝে মাঝে রোবটদের মতো কথা বলে, নিজেকে শক্ত খোলাসায় আবদ্ধ করে রাখতে চায়, কিন্তু ভেতরের সরলতা তাকে শক্ত হতে দেয় না। মাঝে মাঝে বড় অচেনা লাগে তাকে।
আয়শা নিজেই বা এতো ভাবছে কেনো, বুঝতে পারছেনা।

গাড়ি চলছে আপন গতিতে আয়শা আগের মতোই বাইরের দৃশ্য দেখতে ব্যাস্ত হঠাৎ-আসা চিতলার দিয়ে বললো…

” গাড়ি থামান গাড়ি থামান। ”

নাছিম ক্ষানিকটা ভরকে গেলো দ্রুত গাড়ির ব্রেক কষলো। আয়শার বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে, আয়শার চোখ দুটো খুশিতে জল জল করছে। নাছিম আয়শার দিকে তাকিয়ে বললো…

” কি হয়েছে?”

” দেখুন কাশ বন।”

নাছিম,আই ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়য়ে বললো…
” হ্যাঁ তো?”

” অনেক বছর পর কাশ বন দেখলাম। লাস্ট ক্লাস এইটে থাকতে গাজীপুর পিকনিকে গেছিলাম। তখন কাশবন দেখেছিলাম। ”

” ও আচ্ছা। ”

” চলুন না যাই…”

” কিহ। এখন কাশ বাগানে গেলে আমাদের লেট হবে।”

আয়শা হাত জোর করে বললো..” প্লিজ প্লিজ প্লিজ!”

নাছিম জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে বললো…
” ওকে।”

আয়শা গাড়ি থেকে নেমে কাশ বনে গিয়ে বেশ কিছু ছবি তুললো..আয়শা যে খানেই যায়, তার ক্যামেরা নিতে ভুলে না সে। ছবি তুলতে তুলতে বললো…

” স্যার একটু সানগ্লাস টা পড়ুন প্লিজ। একটা ছবি তুলি।”

” শিওর। ”

বলেই নাছিম সান গ্লাস টা পড়লো, নাছিম কে বেশ সুদর্শন লাগছে। এক গুচ্ছ সাদা কাশ ফুল এবং সে। আয়শা আরো কয়েকটা কেন্ডিড পিক তুললো, নাছিম টের পেলো না। দু একটা কাশ ফুলের আয়শা নাড়া দিতেই শাদা ফুল গুলো, প্রজাপতির মতো উড়তে শুরু করলো..।নাছিম আয়শার হাসি খুশি চেহারাটার দিকে তাকিয়ে আছে।

” এবার চলুন। যাওয়া যাক। ”

” আচ্ছা। ”

বলেই আয়শা গাড়িতে উঠে বসলো। নাছিম গাড়ি স্টার্ট দিলো৷ আয়শার প্রচন্ড খুধা লেগেছে৷ আয়শা পেকেট থেকে চিপস বের করে খেতে শুরু করলো। তখনি তার মনে পড়লো, নাছিম ও তো কিছু খায় নি। পাঁচ ঘন্টা ধরে ড্রাইভ করছে। আয়শার ইচ্ছা করছে নাছিম কে চিপস খাইয়ে দিতে। কিন্তু সংকোচের কারনে পারছে না।

আয়শা বাকি চিপস না খেয়ে রেখে দিলো। তার আর খেতে ইচ্ছা করছে না। সিটের হেলান দিয়ে, নাছিমের দিকে তাকিয়ে রইলো…

।#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ -৩২

শোঁ শোঁ বাতাস আসছে বাইরে থেকে৷ হয়তো আবার বৃষ্টি আসবে। আবার যদি অন্ধকার হয়ে,যায় তাহলে কি হবে?
মিস আয়শা আবার ভয় পাবে না তো? মেয়েটা এমনিতেই অন্ধকার একদম সয্য করতে পারে না, তাও আবার একা। নাছিমের মাথায় সুক্ষ্ণ চিন্তার ভাজ পড়লো।

ঘন্টা ক্ষানেক আগেই, নাছিম আর আয়শা হোটেলে এসেছে। লং জার্নি তার ওপর ড্রাইভ করায় নাছিমের বেশ ক্লান্ত লাগছে। হোটেলে আসতেই যে যার রুমে চলে গেছে। নাছিম ওয়াশরুম থেকে বের হতেই, দেখলো বাইরে বৃষ্টির আভা দেখা যাচ্ছে। রাতে বিদ্যুৎ কানেকশন না গেলেই হয়। তাহলে, আয়শা ভয় পাবে না।

কলিং বেজ বাজার শব্দ নাছিম ভাবনার জগৎ থেকে বের হলো, দরজা খুলতেই দেখলো একজন সার্ভেন্ট ডিনার নিয়ে এসেছে। দরজার বাইরে থেকে, ছেলেটা বিনয়ের সুরে বললো…

” স্যার ভেতরে আসতে পারি?”

” হ্যাঁ। ” বলেই নাছিম দরজা থেকে সরে দাঁড়ালো।

” বৃষ্টি হবে হয়তো, এই কারনে আমরা রুমে ডিনার পৌঁছে দিচ্ছি। ম্যামের (আয়শার)খাবার টা কি এখানে রাখবো। ”

” হ্যাঁ এখানেই। ”

খাবার টেবিলে, রেখে ছেলেটা বেড়িয়ে গেলো। নাছিম আয়শা কে ফোন দিলো, কিন্তু আয়শা ফোনটা রিসিভ করলো না।

আয়শা মনের অনন্দে শাওয়ার নিচ্ছে। আর লা লা লা করে গুন গুনিয়ে গান গাইছে। ফোনের শব্দ শুনতে না পাওয়া টাই স্বাভাবিক। বাইরের পরিস্থিতির আয়শার কোন খেয়ালই নেই।

নাছিম আয়শার রুমে, যাবে কি না বুঝতে পারছে না। নাছিম ড্রাইভিংয়ে ব্যাস্ততায় খায় নি বলে, আয়শাও কিছু খায় নি। তা নাছিম ভালো ভাবেই জানে। ক্ষুধার্ত হয়ে, মেয়েটা ঘুমিয়ে গেলো না তো? নাছিম রুম থেকে বেরিয়ে আয়শার দরজায় বেল বাজালো৷ ক্ষানিকটা সময় পর আয়শা দরজার কোনায় উঁকি দিলো….

” মিস আয়শা, বৃষ্টি আসার সম্ভাবনা আছে, তাই সার্ভন্ট ডিনার আমার রুমে দিয়ে গেছে৷ ”

” আমার খুব ক্ষুধা লেগেছে৷ আপনি দু মিনিট দাঁড়ান আমি আসছি। ”

বলেই আয়শা দরজা আটকিয়ে, বাথ ড্রেস চেঞ্জ করে নিলো। আয়শা রুম থেকে বের হতেই দেখলো, নাছিম তার জন্য অপেক্ষা করছে। আয়শা কে দেখে নাছিম ক্ষানিক মূহুর্ত তাকিয়ে রইলো।
বেগুনি রঙের জামা আর ভেজা চুলে আয়শাকে বেশ মায়াবী লাগছে। চুল থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে এখনো। চেহারা টা ক্ষানিকটা, শুষ্ক হয়ে গেছে। আয়শা হাত ইশারা করে বললো..

” কি হলো?চলুন। ”

নাছিমের পিছু পিছু আয়শা গেলো। ডিনার শেষে, আয়শা নাছিম কে বিদায় জানিয়ে, নিজের রুমে ফিরে এলো। নাছিম আয়শার হাতে একটা টর্চ লাইট দিয়ে বললো…

” রাতে বিদ্যুৎ কানেকশন অফ হয়ে গেলে ভয় পাবেন না৷ এটা সাথে রাখবেন। ”

আয়শা মাথা দুলিয়ে, হ্যাঁ বললো।নাছিম আবারো বললো…

” আর বেশি প্রয়োজন হলে, আমাকে ফোন দিবেন। ওকে?”

আয়শা ক্ষানিকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো, এই ভয়ংকর লোকটার মাঝে এতো মায়া কেনো? ভালোবাসার এক অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছে সে..।অচেনা এই মেয়েটার জন্য তার এতো চিন্তা কিসের?আয়শা রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো৷

ক্লান্ত শরীরটাকে বিছানায় এলিয়ে দিলো। মাঝ রাতে জোরে মেঘের গর্জন শুনে আয়শার ঘুম ভেঙে গেলো সারা ঘর ময় ঘুট ঘুটে অন্ধকার। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকানোর আলো জানালার বাইরে দৃশ্য দেখা যাচ্ছে৷
আয়শা পাশে রাখা টর্চ লাইট টা জ্বালিয়ে দিলো৷

আয়শার ফোনেটা বেজে উঠলো। আয়শা ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো, ‘ খারুস ‘ নাম টা,ভেসে উঠেছে। আয়শা দ্রুত ফোনটা রিসিভ করতেই, ওপাশ থেকে নাছিম বললো…
” ভয় লাগছে?”
” উঁহু!”

নাছিম সস্তির নিঃশ্বাস নিলো। আয়শা হাতের নোখ দিয়ে, বিছানা খুটছে। এই লোকটা তার এতো খেয়াল রাখছে কেনো? সে কি বুঝে না, আয়শা দিন দিন দূর্বল হয়ে পড়ছে। আয়শা ঠোঁট কামড়ে চুপ করে রইলো। কেউ কোন কোন কথা বলছে না৷ নিস্তব্ধতা চারিদিকে ছেয়ে আছে।

নিস্তব্ধতা যে নাছিমের ভালো লাগে না, কিছু তো বলুক আয়শা।

” থ্যাংক ইউ। ”

আয়শার কথা শুনে নাছিম, কিছুটা চমকে বললো…
” থ্যাংক ইউ কেনো?”

” আমার হাতে টর্চ লাইট টা দেয়ার জন্য। ”

” ঘুমান আয়শা। ”

নাছিম স্পষ্ট শুনতে পেলো, আয়শা জোরে নিশ্বাস ছাড়লো। ফোনের ওপাশ থেকে নাছিম ফোনটা কেটে দিলো। আয়শা ধাম করে শুয়ে পড়লো। আয়শার হঠাৎ খুব খুশি খুশি লাগছে। কেনো লাগছে তা নিজেও বুঝতে পারছে না।

——— সকাল বেলা ———

কলিং বেলের শব্দে আয়শার ঘুম ভাংলো। আয়শা হাই মেরে দরজা খুলতেই দেখলো, নাছিম দাঁড়িয়ে আছে। তাকে একদম বিদেশি রাজপুত্রের মতো দেখাচ্ছে। হালকা গোলাপি রঙের শার্ট, নীল ব্লেজার চুল গুলো আয়শার ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছা করছে, ঠোঁটের কোনে তিক্ষ্ণ হাসি ফুটে উঠেছে।

আয়শা চোখ বড় বড় চোখ করে নাছিমের দিকে তাকিয়ে আছে৷ চোখ দুটো ডলে, আবারো সামনে তাকালো। নাছিম ঘড়ির দিকে এক নজর তাকিয়ে বললো…

” এভাবে ডেপ ডেপ করে তাকিয়ে কি দেখছেন? ”

আয়শা মাথা নিচু করে ভেংচি দিলো, নাছিম ভাব দেখিয়ে বললো…

” আই নো আমি খুব হ্যান্সাম। তাই বলে এভাবে তাকিয়ে নজর দিবেন না। ”

আয়শা মুখ বাকিয়ে বললো, ” নজর দেয়ের কি আছে। আপনার চেয়ে আরো বেশি হ্যান্সাম ছেলে আছে? ”

নাছিম হাতে হাত ভাজ করে, বললো..
” ওহ রিয়ালি? কে সে?”

” অভাব নাই, আকাশ কম হ্যান্সাম নাকি?”

বলেই, আয়শা সরু দৃষ্টিতে তাকালো, নাছিম চুপ করে আছে৷ চুপ করে থাকা তো বিপদের লক্ষন। আয়াশা আমতা আমতা করে বললো…

” আমি এখন রেডি হবো। বায়।”

বলেই আয়াশা ওয়াশরুমে চলে, গেলো। দরজা ক্ষানিকটা ফাঁকা করে, দেখলো নাছিম এখনো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কিছু একটা ভাবছে। আয়শা এখন সত্যি ভয় লাগছে। আয়শা ও রেডি হয়ে, ওয়াশ রুম থেকে বের হলো। গাড়ো নীল রঙের কামিজের সাথে চুল গুলো উঁচু করে ঝুঁটি পাকিয়ে নিলো।

আয়াশা রেডি হয়ে, রুম থেকে বেড়িয়ে নাছিম কে দেখতে পেলো না। হোটেল থেকে বের হতেই আয়শা দেখলো, নাছিম গাড়ির ভেতরে বসে আছে, গাড়ির গ্লাস টা খুলে, নাছিম আয়শার উদ্দেশ্য বললো…

” ভেতরে আসছেন না কেনো?”

নাছিমের থম থমে মুখ দেখে আয়শা বেশ অবাক হলো। হঠাৎ কি এমন হলো? আয়শা পাশের সিটে বসতেই, নাছিম এক মনে, ড্রাইভ করা শুরু করলো। আয়শার দিকে এক বার তাকালো ও না। আয়শা বাইরের দিকে তাকিয়ে, আছে। হঠাৎ গাড়ি থামতেই নাছিম গাড়ি থেকে, বের হয়ে একটা বিল্ডিংয়ে ভেতরের হাটা শুরু করলো৷ আয়শাও নাছিম কে অনুসরণ করে তার পিছু পিছু গেলো।
নাছিমের ব্যাবহার আয়শাকে এখন ভাবাচ্ছে। নাছিম মিটিং রুমে ঢুকতেই সবাই

নাছিমের সাথে, হ্যান্ড শেক করলো। সবার উদ্দেশ্য বললো…

” সরি ফর লেইট। প্লিজ সিট ডাউন। ”

” হু ইজ সি..?”
আয়শার উদ্দেশ্য ফরেনার মেয়ে,টা বললো..

নাছিম হালকা হেসে বললো..” সি ইজ মাই এমপ্লয়ি। ”

রাশিয়ান মেয়েটা গট গট কররে ইংরেজিতে বললো…

” ওয়েস্টার্ন ব্রেন্ডে চাকুরী করে, এই পোশাক কেন পড়েছে। ”

নাছিম, আয়শার দিকে তাকিয়ে হাসলো, সবাই আয়শার দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে, আয়শা ও আই ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো..

” এম আ বেঙ্গলি গার্ল। এন্ড দ্যা বেঙ্গলি ড্রেস আর মোর এক্সেম্পটেবল দ্যান ওয়েস্টার্ন ড্রেস। ”

একজন লোক তালি মেরে বললো..
” বিউটিফুল। ”

আয়শা হেসে, তার প্রেজেন্টেশন বলা শুরু করলো। সবাই মন দিয়ে আয়শার প্রেজেন্টেশন শুনছে। রাশিয়ান মেয়েটা আয়শার দিকে হাত এগিয়ে দিয়ে বললো..

” ইউ আর আমেজিং গার্ল। এন্ড ইউও ড্রেসিং সেন্স আলসো নাইস। ”

আয়শা হালকা হেসে হ্যান্ড শেক করলো। রাশিয়ান ব্রেন্ডের সাথে ডিল ফাইনাল হলো। সবাই নাছিম কে কংগ্রেস দিচ্ছে। সবার ভীরে নাছিম আয়শা কে খুঁজছে। কিন্তু আয়শা কে নাছিম দেখতে পেলো না।



চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here