ইঁচড়েপাকা এবং সে❤️ পর্ব ৩৩+৩৪

#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ-৩৩

বেলা এগারো টা কি সারে এগারোটা বাজে। অক্টোবর মাস অথচ চারিদিক থেকে ঠান্ডা বাতাস আসছে। সরু রাস্তার দু পাশে চা বাগান কড়া রোদের আলোতে উজ্জ্বল হয়ে আছে। আয়শা মিটিং শেষ করে রিসোর্ট থেকে বেরিয়ে এসেছে। চারিদিকে সবুজ গাছগাছালি পরিবেশ টাই অন্যরকম। আয়শা জোরে শ্বাস নিলো। আজ যদি ডিল টা ফাইনাল না হতো তাহলে, আয়শার নিজেরও আত্নসম্মানে আঘাত লাগতো।

নিজের সম্মান রক্ষার করতে পেরে, আর বিদেশীনি মেয়েটাকে যোগ্য জবাব দিতে পেরে আয়শার ভালো লাগছে। কিন্তু যখন বিদেশি মেয়েটা আয়শার পোশাক নিয়ে প্রশ্ন ছুড়েছে, তখন নাছিম জবাব দেয় নি, আয়শার দিকে তাকিয়ে, তাচ্ছিল্য হাসি হেসেছে। সে হাসি আয়শা কি ভাবে ভুলবে। সে হাসি যে আয়শার মনে দাগ লাগিয়ে দিয়েছে।

চারিদিকের সবুজ পরিবেশ হঠাৎ ঘোলাটে হয়ে আয়শার গাল বেয়ে পানি গরিয়ে পড়লো। ভেতরে ভেতরে আয়শার এতো নিজেকে প্রচন্ড ছোট মনে হচ্ছে। অনেকেই তো আয়শাকে কষ্ট দেয় আয়শা তা মনের এক কোণেও ঠাই দেয় না কিন্তু নাছিমের ব্যাবহারে আয়াশার কষ্ট লাগছে কেনো? আয়শা নাছিম কে ভালোবাসে নাতো?’

ভবতেই আয়শা নিজের চুল গুলো মুচড়ে ধরলো। অফিসের সি.ই.ও কে পছন্দ করা তার প্রতি ফিলিংস জমানো টা তো আয়শার নিজেরই অপরাধ। এক কথায় ব্রাহ্মণ হয়ে, চাঁদে হাত দেয়ার মতো। আয়শার নিজের হাসি পাচ্ছে এখন।

আয়াশা হাটতে হাটতে হোটেলে ফিরে গেলো। দরজা আটকে দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। ভেতর খুব মোচড়াচ্ছে এতো কষ্ট হচ্ছে কেনো আয়শার। বার বার সেই অবহেলার হাসি, কেনো এতো মনে আসছে। হয়তো নাছিম আয়শাকে অকর্মণ্য অযোগ্যই ভেবে ছিলো।

রাশিয়ান দের সাথে ডিল টা কনফর্ম হওয়াতে সবাই নাছিম কে বাহবা জানাচ্ছে, আয়শা যদি সুন্দর ভাবে উপস্থাপন না করতো, স্মার্টলি জাবাব না দিতো তাহলে হয়তো ডিল টা সহজে হতো না। মিটিং রুমে আয়শা কে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। নাছিম সবার ভীর কাটিয়ে রিসোর্ট থেকে বের হয়ে আয়শা কে খুঁজে পেলো না।

নাছিম চুপচাপ দাঁড়িয়ে হইলো, হয়তো তার নিজের ব্যাবহারের কারনেই আয়শা, কষ্ট পেয়েছে। সকাল বেলা আকাশের নাম শুনতেই নাছিমের রাগ লাগছিলো। নিজের রাখ টাকে কন্ট্রোল করতে গিয়ে, অজান্তেই আয়শাকে ছোট করে ফেলেছে সে, হয়তো আয়শা নিজেই ইনসাল্টেড ফিল করছে।

নাছিমের নিজের প্রতি প্রচন্ড রাগ লাগছে৷ এখন এই অচেনা জায়গায় মেয়েটাকে কোথায় খুঁজবে সে? নাছিমের কাঁধে কেউ হাত রাখলো। নাছিম পেছনে ঘুরে তাকাতেই দেখলো, রাশিয়ান মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে সাথে তার সহকারীরাও এসেছে। মেয়েটা অস্পষ্ট বাংলায় বললো…

” রিসোর্টে আগামীকাল রাতে আমরা পার্টি রেখেছি। তুমি আসলে খুশি হবো। ”

নাছিম কিছু বললো না। পাশের দাঁড়ানো লোকটা বললো..
” আপনার সাথে, আইশা (আয়শা) কে ও নিয়ে আসবেন মিস্টার। ”

” ওকে। আমাকে এখন যেতে হবে৷ ”

লোকটা নাছিমের অস্থিরতা দেখে বললো..
” ওকে। সি ইউ টুমরো নাইট। ”

নাছিম দ্রুত বেড়িয়ে পড়লো। শহরের শেষ অংশে রিসোর্ট টা তৈরি করা হয়েছে। হোটেলে যেতে হলে সরু পথ ধরে গাড়ি চালিয়ে যেতে হয়, নাছিম ধীরে গাড়ি চালাচ্ছে, এদিক ওদিক তাকিয়ে আয়শা কে খুঁজছে। আয়শা এখানে কিছুই চেনে না। কোথায় যেতে পারে মেয়েটা। নাছিম কপাল ঘসে ভাবছে, আয়শা কোথাও চলে গেলো নাতো…?

———————————-

দু দিন ধরে ওরিনে কে কলেজে দেখা যাচ্ছে না। গতকাল তনু কেও দেখা যায় নি। ওরিনের কথা বার বার মাথায় ঘুর পাক খাচ্ছে ফরিদের। শেষের পরিক্ষা গুলোতে মনোযোগ দিতে পারছে না ফরিদ। এক্সাম শেষে রুম থেকে বের হতেই ফরিদ দেখলো বাইরে বাধন দাঁড়িয়ে আছে।

ফরিদ কে দেখামাত্র বাধন এক চিলতে হাসি দিয়ে বললো…

” পরিক্ষা কেমন দিলি দোস্ত?”

” ভালো৷ তোর পরিক্ষা কেমন হয়েছে?”

” পাশ করতে পারলে হইসে আর কি। ”

ফরিদ বাধনের কাধে হাত দিয়ে হাসলো..
” তুই ও না৷ কোন খোঁজ পেয়েছিস?”

” কিসের খোঁজ দোস্ত?”

” ওরিনের খোঁজ দু দিন ধরে মেয়েটা কোথায় গায়েব গয়ে গেলো?”

বাধন হাত ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে, কিছু একটা ভেবে বললো..

” কয়েক মিনিটের মধ্যেই কলেজ ছুটি হবে৷ চল গেটের কাছে যাই। দেখি ওদের দেখা পাওয়া যায় নাকি..”

” হুম। চল।”

দুজনেই কলেজ গেটের দিকে হাটা শুরু করলো, বাধন ফরিদ কে বললো…

” আগামিকাল তো আমাদের পরিক্ষা শেষ। তার পর তো আমাদের ক্লাস নেই, তুই ওরিন কে দেখবি কি ভাবে? ”

” তুই ভুলে যাচ্ছিস? সিনিয়ার স্টুডেন্ট আমি, যখন ইচ্ছা কলেজে আসতে পারি। আফটার অল আমারা তো এই ভার্সিটির শিক্ষার্থী তাই না। ”

” কথা টা তুই ঠিকই বলেছিস। ”

মনে মনে বাধন নিশ্চিত হতে পারলো, তনু কে মাঝে মাঝে অন্তত সে দেখতে পারবে৷ হুহ ফাজিল মেয়ে, আমাকে বলে হনুমান। হাহ, তোমাকে দেখে নিবো। দুজনেই কলেজ গেটের কাছে এসে দাড়ালো, একে একে সব স্টুডেন্ট বের হচ্ছে। তনু কে এক পাশে দেখা গেলো, সে ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে আছে, রিক্সার জন্য।

ফারিদ আর বাধন, তনুর কাছে আসতেই তনু চমকালো৷ আজ তো ওরিন ও নেই, এদের সাথে একা ঝগড়া করবে কি ভাবে। তনু ভয়ে ঢোক গিললো। ফরিদ ভদ্রতার খাতিরে বললো…

” কেমন আছো তনু?”

” ভালো। ”

” তোমার ফ্রেন্ড ওরিন আসে নি? ”

তনু ভ্রু কুচকিয়ে তাকালো, তাহলে কি তনুর সন্দেহই ঠিক। ফরিদ ভাই ওরিন কে পছন্দ করে? তনু মনে মনে ভাবলো, একটু পরিক্ষা নিতে হবে…
” কিছু বলছো না যে?”

” আসলে,..”

” আসলে কি তনু?”

তনু ফরিদ কে পরিক্ষা করার জন্য মিথ্যা বললো…

” ওরিনের বিয়ে ঠিক হয়েছে।”

তনু ফরিদের দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকালো, ফরিদ তব্দ খেয়ে আছে। কয়েক সেকেন্ডে পড় জোর দিয়ে বললো…

” কি বলছো তুমি? ”

” ঠিক বলছি ভাইয়া। ”

তনু মনে মনে, ভাবলো ‘এবার শিওর হওয়া যাবে ফরিদ ভাই কি সত্যিই ওরিন কে পছন্দ করে নাকি না।
ওরিনে সামনে রিকশাওয়ালা আসতে ওরিন বিদায় নিয়ে চলে গেলো।

ফরিদ সে আগের মতোই দাঁড়িয়ে আছে। বুকের ভেতর সুক্ষ্ণ যন্ত্রনা হচ্ছে খুব। প্রিয়তমার জন্য যন্ত্রণা হবারই কথা ফরিদের বেলায় তা ব্যাতিক্রম নয়। বাধন ফরিদের কাঁধে হাত রাখলো, ফরিদ ভাঙ্গা ভাঙ্গা কন্ঠে বললো…

” আমি কি ওরিন কে হারিয়ে ফেললাম..?”

বাধন উত্তর দিতে পারলো না। বিরামহীন শহরে একা একা গন্তব্যেহীন পথে হাটতে শুরু করলো। কি হবে এই অবাধ্য একতরফা ভালোবাসার?
———————————-

আয়াশা কে খুঁজে না পেয়ে, হতাশা হয়ে নাছিম হোটেলে ফিরে এলো৷ নাছিম এবং আয়শার রুমের দরজা বরাবর হওয়াতে নাছিম খেয়াল করলো আয়শার রুমে চাবি ঝোলানো। দরজার চাবি মোচড় দিতেই দরজা খুলে গেলো, বাথরুমে থেকে শাওয়ারের শব্দ আসছে।

নাছিম দরজায় শব্দ করে, বললো…
” আয়শা আপনি কি ভেতরে?”

ভেতর থেকে কোন শব্দ এলো না নাছিম আবারো, দরজায় নক করে বললো…

” আয়শা সারা দিন, বলছি।”

নাছিম মাথা চেপে বিছানায় কিছুক্ষণ বসে রইলো। ভেতর থেকে শুধু পানি পড়ার শব্দই আসছে। নাছিম চিতকার দিয়ে বললো…

” এক থেকে দশ পর্যন্ত কাউন্ট করবো। এবার না খুললে, ভেঙেই ফেলবো বলে দিলাম। ”

নাছিমের কাউন্ট করা শেষ হবার পরও আয়শা দরজা না খোলায়, কয়েকটা লাথি মেরে নাছিম দরজা ভেঙ্গে ফেলো। আয়শা শাওয়ারের নিচে গুটি মেরে শুয়ে আছে। নাছিম আয়শার হাত ধরতেই অবাক হলো, কারণ…

।ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ-৩৪

গাছ গাছালির অরন্যের মধ্য সূর্যস্তের দৃশ্যটাই অন্যরকম। ভর সন্ধ্যার এক মগ কফি হাতে নিয়ে জানালার কাছে বসে ম্যাগাজিন পড়ছে নাছিম। আর কিছুক্ষণ পর পর আয়শার দিকে আড় দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে৷ সাদা রঙের বাথ জেকেট পড়ে আয়শা শুয়ে আছে, চেহারাটা বড্ড ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। ঠোঁট জোড়াও সাদা বর্ন ধারন করেছে৷ তবুও আয়শাকে দেখতে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে।

“””” যার চোখে যাকে, সুন্দর লাগে। তাকে সব সময়, সুন্দর মনে হয়।চোখে মাঝে পার্মানেন্টলি ভালোলাগা, মোহ, আকর্ষন সব ফিট হয়ে যায়।”””
—রুহি জাহান(মায়া)

তখন নাছিম আয়শার গায়ে, হাত দিতেই দেখলো, আয়শার শরীর প্রচন্ড ঠান্ডা হয়ে গেছে, নাছিম দ্রুত রিসিপশনে ফোন দিয়ে ডক্টর কে খবর দিতে বললো।
ডক্টর কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে এলো, আয়শার গায়ে, প্রচন্ড জ্বর। ডক্টর চেক আপ করে ইঞ্জেকশন দিলেন সাথে কিছু ঔষধের নাম লিখে চলে গেলেন।

আয়শার চোখের পাপড়ি নড়ছে। নাছিম ম্যাগাজিন পড়ায় মন দিলো। আয়শার ঘুম থেকে উঠে নাছিম কে দেখে আকাশ থেকে পড়লো। আয়শার তো বাথরুমে শাওয়ারের নিচে বসে ছিলো৷ বিছানায় কি করে এলো । জামার দিকে তাকিয়ে আরো বেশি অবাক হলো, হাটু অব্দি তাওয়ালের মতো জামা পড়ে এতোক্ষন সে শুয়ে ছিলো, ভাগ্য ভালো যে তার ওপর এতোক্ষণ কম্বল ছিলো৷

আয়শার মাথা এখন প্রশ্নে কিলবিল করছে৷ শেষে এই লোকটা আয়শার জামায় হাত দিয়েছে, কতো ভালো ভেবে ছিলো, সে নাছিম কে। আর নাছিম কি না তা সম্মানে হাত দিলো। আয়শার এখন গড়া গড়ি করে কান্না করতে মন চাচ্ছে। পাগলা কুকুরের কামড় খেয়ে সে সিলেট এসেছিলো।

আয়শা হেঁচকি তুলে কান্না করছে, নাছিম ম্যাগাজিন সরিয়ে আয়শার দিকে তাকালো। আয়শা মুখ টমেটোর মতো লাল হয়ে গেছে। নাছিমের বড্ড মায়া হচ্ছে। কিন্তু এখন গললে চলবে না। নাছিম, হাল্কা কাঁশি দিয়ে, বললো…

” কান্না করছেন কেনো? শরির খারাপ লাগছে? ”

আয়শা হেঁচকি তুলে, কান্না করতে করতে বললো, ” শরীর ঠিক আছে মন খারাপ লাগছে ”

” কেনো?”

আয়শা নাছিমে কথায় পাত্তা দিলো না, আগের মতো কেঁদেই যাচ্ছে। নাছিম খেয়াল করে দেখলো, আয়শার কান দুটো ধীরে ধীরে লাল হয়ে যাচ্ছে। নাছিম বেশ ভাবনায় পড়ে গেলো হঠাৎ মেয়েটার কি হলো। নাছিম কিছুটা ধমক দিয়ে, বললো…

” কিছু বলছেন না কেনো?”

আয়শা নাছিমের ধমক শুনে কিছুটা ভরকে গেলো। আয়শা আগের মতোই কান্না করে, বললো…

” আপনি একটা খারাপ লোক। আপনাকে আমি ভালো ভেবেছিলাম। ”

নাছিম চোখ গুলো, গোল গোল করে, অবাক চোখে বললো…
” আমি আবার কি করলাম? ”

” আমার কাপড় কে চেঞ্জ করেছে? হ্যাঁ? নতুন কাপড় কে পড়িয়ে দিয়েছে?”

নাছিম, মাথায় হাত রাখলো, ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিয়ে, নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছে। কপাল ডলতে ডলতে নাছিম বললো…

” আমি আপনার কাপড় চেঞ্জ করি নি৷ হোটেলের মহিলা একজন স্টাফ চেঞ্জ করিয়েছে। আর নতুন কাপড় উনিই পড়িয়ে দিয়েছেন। ”

আয়শা কান্না থামিয়ে চুপ করে বসে আছে। নাছিমের দিকে তাকিয়ে, আছে। নাছিম চেয়ার থেকে উঠে বললো…

” বাবা -মা নেই বলে অমানুষ হয়েছি আপনার ধারণা?”

” আসলে, আমি নার্ভাস হয়ে গেছিলাম। কিছু খেয়াল ছিলো না। সরি। ”

নাছিম জোড়ে নিঃশ্বাস নিয়ে মনে মনে বললো, সরি তো আমার আগে বলা উচিত, অজান্তেই আপনার মনে আঘাত দিয়েছি। বুঝতে পারি নি আপনি এতো টা কষ্ট পাবেন। ‘

” ইউ নিড রেস্ট মিস, আয়শা।”

বলেই নাছিম চলে গেলো। বিছানার পাশে রাখা টেবিল থেকে আয়শা ফোন টা হাতে নিলো। বাবা সতেরো টা মিস কল দিয়েছে আয়শা একটাও রিসিভ করতে পারে নি৷ আয়শা দ্রুত বাবা কে কল দিলো কয়েক মূহুর্ত পরেই ওরিন ফোনটা রিসিভ করে খুশি খুশি মনে বললো…

” হ্যালো আপু কেমন আছো?”

” ভালো আছি। তুই কেমন আছিস?”

” আমিও ভালোই আছি। তোমার গলার কন্ঠে এমন লাগছে কেনো? মনে হচ্ছে, তুমি অসুস্থ?”

” কিছু হয় নি আমার। বাবা কেমন আছে। ”

” বাবা ভালো আছে। ছাদে গেছে। ”

” রান্না কে করছে?”

ওরিন কিছুটা হতাশ হয়ে, বললো…
” আর বলো না আপা। জাহিদা খালার ( কাজে সহকারী) ছেলে অসুস্থ। উনি আসেন না। ইউটিউব দেখে রান্না করতে আমার লেট হয়ে যায়, কলেজে এটেন্ড করতে পারছি না। ”

” এ মা! আমি আগামীকালই চলে আসবো। কালকের দিন টা মেনেজ করে নে। ”

” হুম। আচ্ছা ঠিক আছে আপা।

” এখন রাখছি৷ বাবা এলে ফোন দিতে বলিস।”

আয়শা ফোনটা কাটতেই, নাছিম পেছন থেকে আয়শাকে বললো…
” আগামীকাল নয়, পরশুদিন সকালে যাবো আমরা।”

” কিন্তু কেনো স্যার?”

” আগামীকাল রাতে পার্টি আছে। রাশিয়ান ডিলার দের, আপনাকেও ইনভাইট করেছে। ”

আয়শা কিছুটা অবাক হয়ে, বললো…
” আমাকে?কিন্তু আমি কর্পোরেট পার্টিতে অভস্ত নই।”

” একটা কর্পোরেট অফিসে জব করলে, আপনাকে কর্পোরেট পার্টিতে এটেন্ড করতে হবে৷ ”

” আমি পার্টি ড্রেস আনি নি।”

” ‘নাছিম ফ্যাশন ওয়াল্ডের’ ব্লেক ড্রেস পরবেন৷ আশা করি পড়বেন?”

আয়শা না করতে পারলো না। অফিসের মালিকে কথা শোনা তো তার কাজ। আয়শা মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো। নাছিম হালকা হেসে বললো…

” আপনি যখন ফোন কলে কথা, বলছিলেন সার্ভেন্ট স্যুপ রেখে গেছে। খেয়ে নিবেন। ”

আয়শা স্যুপের বাটি টা হাতে নিলো। নাছিম আবারও বললো..
” কিছুর প্রয়োজন হলে, আমাকে ডাক দেবেন। কেমন।”

” ওকে স্যার। ”

নাছিম দরজা আটকে দিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। আয়শা দু -তিন চামুচ স্যুপ খেয়ে আর খেতে পারলো। এক দম কিছু খেতে ভালো লাগছে না তার।

———————————-

রাত আটটা বাজে। আয়শা রুম থেকে বের হয়ে বাইরে হাটাহাটি করছে। আকাশের অবস্থা খুব একটা ভালো না। রাতে হয়তো আবারো বৃষ্টি আসবে। নাছিমের রুমের দরজা কিঞ্চিৎ ফাঁকা আয়শা দরজাটা হালকা খুলতেই দেখলো, নাছিম উদোম গাঁয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পিঠে মলম লাগানোর চেষ্টা করছে।

আয়শা দরজায় শব্দ করে বললো…
” স্যার আসবো? ”

” হ্যাঁ আসুন। ”

” আপনার কাঁধে কি হয়েছে?”

” শাওয়ারের নিচে অজ্ঞান হয়ে, পরেছিলেন। আপনাকে কোলে নিয়ে বের হতে গিয়ে দরজা সাথে কিছু একটার সাথে বাড়ি লেগে ছিলো। ”

আয়শা নাছিমের কাঁধের দিকে তাকালো, ফর্সা কাঁধে খয়েরী ছোপ হয়ে আছে। ‘ আয়শার জন্য লোকটার ব্যাথা পেলো’ ভাবতেই আয়শার খারাপ লাগছে। এই লোকটা বড় অদ্ভুত তার জন্য এতো করে কেনো?

” কি ভাবছেন আয়শা?”

আয়শা আমতা আমতা করে বললো…
” কিছু না। আমি কি ঔষধ টা লাগিয়ে দিতে পারি?”

নাছিম আয়শার হাতে মলম টা দিয়ে, মনে মনে হাসলো। মেয়েটা ইনোসেন্ট কিন্তু মনে মধ্যে মায়া অনুভূতিটা বেশি। আয়শা হাতে, মলম নিয়ে নাছিমের কাঁধে আলতো করে লাগিয়ে দিলো। নাছিম আয়নায় আয়শা কে দেখছে, আয়শা ক্ষানিকটা দূরে হওয়াতে ঘাড়ে মলম দিতে পারছে না। নাছিম বললো…

” আপনি তো ঠিক মতো মলম লাগাতে পারেন না, ঘাড় পর্যন্ত যাচ্ছে না যে…”

আয়শা ভেংচি কাটলো। এতো লম্বু হলে, কিভাবে ঘাড় পর্যন্ত হাত যাবে আয়শার? আয়শা আরেকটু কাছে আসলো। নাছিমের ঘারে মলম লাগিয়ে দিলো। নাছিম মলম টা রেখে দিলো। আয়শা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে ‘ সরি, থেংক ইউ, ধন্যবাদ এমন শব্দ মনে হয়, এই লোকটা ডিকশিনারিতে নেই। আয়শাকে একটা ধন্যবাদ জানালো না।

” কি ভাবছেন? ”

” কিছু না। আমি আসি। ”

আয়শা বের হতে যাবে ঠিক তখনি বিদ্যুৎ কানেকশন চলে গেলো। জানালা দিয়ে, বিদ্যুৎ চমকানো দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ বজ্রপাতের শব্দ হলো। আয়শা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে নাছিমের হাতের বাহু জরিয়ে ধরলো। নাছিম মনে মনে হাসলো, ভালো লাগছে তার। বজ্রপাতের শব্দ না হলে মেয়েটা ঠেটার মতো ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকতো । নাছিম একটু হলেও এখন জানে আয়শা অন্ধকার খুব একটা ভয় পায় না৷

ক্ষানিক পড়ে বিদ্যুৎ কানেকশন অন হতেই, আলো জ্বলে উঠলো। আয়শা দৌড়ে তার রুমে চলে গেলো। আয়শার লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে মন চাচ্ছে। নাছিম এখনো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছে।

।।।
নতুন দিনের শুরু। গতকাল ঢাকা শহরের প্রচন্ড বৃষ্টির কারনে রাস্তায় পানি জমেছে৷ ওরিন কলেজে যাবার জন্য মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ একটা কালো গাড়ি ওরিনের সামনে থামলো, অনেক ক্ষানিকটা কাঁদা ওরিনের জামায় লেগেছে। ওরিনের ভিষণ রাগ লাগছে, ওরিন গাড়ির কাছে যেতেই, গাড়ি থেকে দুজন লোক নেমে ওরিনের মুখে রুমাল চেপে ধরলো, ওরিন অজ্ঞান হয়ে গেলো……


চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here