#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya
পর্বঃ-৫১
কাঁচের দেয়াল ভেদ করে সূর্যের কিরণ রুমে প্রবেশ করছে। হালকা শীত পড়েছে, টেবিলে রাখা পেপার গুলো মৃদু উড়ছে। সে দিনের পর এক মাস হয়েছে, আয়শার বাবা মারা গেছেন। সে দিনের পর থেকে আয়শা ও একটু একটু করে বদলেছে। ওরিন ও এখন কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। ওরিন বেশি ভাগ সময় আয়শার কাছে থাকতে চাইলে ও আয়শা ওরিন কে নিজের সাংসারিক কর্মের কথা মনে করিয়ে দেয়। তার জন্য তা বোন কেনো, তার স্বামী কে সময় দেবে না।
আয়শার ও অফিসে যাওয়া হয় নি আর। নাছিম তাকে খুব একটা জোর করেনি। তবে সবচেয়ে অবাকে বিষয় হলো, এক মাসে আয়শা কখনো নাছিম কে দেখার জন্য ছটফট করেনি। নাছিমের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেনি। বিষয় টা নাছিমের খারাপ লাগলেও আয়শার মেন্টাল সিচুয়েশনে কথা ভেবে চুপ করে রয়ে গেছে।
ওরিন এক ধ্যানে টেবিলে রাখা পেপার ম্যাটার দিকে তাকিয়ে আছে। সূর্যের এক ফালি রোদ কাঁচের ম্যাট টা চিক চিক করছে। ফরিদ রান্না ঘরে ঢুকলো। ওরিন কে আন মনে ভাবতে দেখে বললো…
” কি ভাবছো ওরিন?”
ওরিনের ধ্যান ভাংতেই, ওরিন এদিক সেদিক তাকালো। ছুড়ি দিয়ে সবজি কাটতে কাটতে বললো, ” কিছু না। তোমার কিছু লাগবে? ”
” না। আমি তো মিষ্টি চেহারা দেখতে এসেছি। ”
ওরিন স্মিথ হেসে বললো ” ও তাই নাকি জনাব? ”
” জ্বী বেগম সাহেবা। ”
” আপনি এখন যান। আপনার বেগম কাজ করছে। ”
” আমার বেগমের কি আমার জন্য সময় হবে না?”
বলেও ওরিনের ওরনার আঁচল ধরে ঘ্রান নিলো। ওরিন ওড়না টা ছাড়িয়ে, বললো। ” তুমি এখন যাবে কি না? হুট করে কেউ চলে এলে কি মনে করবে? অফিসে ও তো যেতে হবে যাও রেডি হয়ে আসো।”
ফরিদ কাচু মাচু মুখ করে চলে গেলো। বিয়ের আগে ওরিন ফরিদ কে ভয় পেতো এখন ফরিদ ওরিন কে ভয় পায়, ওরিনের ধমকের প্রতি উত্তর দেওয়ার সাহস পায় না। ব্যাপার টা ওরিনের খুব মজা লাগে।
নাছিম রেডি হয়ে, টেবিলে বসেছে মাত্র। ওরিন নাস্তা নিয়ে নাছিম কে বেরে দিলো। নাছিম ওরিন কে ধন্যবাদ জানিয়ে খাওয়া শুরু করলো। ওরিন প্রশ্ন করবে কি না বুঝতে পারছে না। ওরিন ক্ষানিক ক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে বললো, ” ভাইয়া একটা প্রশ্ন ছিলো। ”
নাছিম খাওয়া থামিয়ে ওরিনের দিকে তাকালো। গ্লাসে চুমুক দিয়ে বললো ” হুম বলো ওরিন। ”
” আপু কি আপনার সাথে স্বাভাবিক ভাবে মেশে? আমি বলতে চাচ্ছি যে বাবা মারা যাবার পর আগের মতো তো আপা সবার সাথে কথা বলে না। ”
” বুঝতে পেরেছি, তুমি কি বলতে চাচ্ছো। আসলে আয়শা অনেকটাই বদলে গেছে। আজকের আয়শা এবং আগের আয়শার মাঝে আকাশ সমান পার্থক্য। আয়শা আমার সাথে ঠিক মতো কথা বলেনা, আগে মতো দুষ্টুমি করে না। চুপ হয়ে গেছে।”
ওরিন ফট করে বললে ফেললো ” আপনি কি আয়শা আপু কে ভালোবাসেন?”
” ঠিক কতটা ভালোবাসি তা ব্যাক্ত করতে পারবো না। আয়শা আমার জীবনের প্রথম নারী যাকে আমি চাই খুব চাই। ”
ওরিন চুপ করে রইলো। এই মূহুর্তে তার করনীয় টা কি সে নিজেও বুঝে উঠতে পারছে না। নাছিম আবার বললো ” ঠিক কি করলে আগের আয়শা কে ফিরে পাবো? বলতে পারো ওরিন?”
ওরিন কিছু বললো না। নাছিম উঠে গেলো, যে করেই হোক আগের আপুকে ফিরে আনতে হবে৷ এভাবে চললে তো আয়শা আপুর মেন্টালি সিক হয়ে যাবে। তখন হয়তো আয়শাকে স্বাভাবিক করা টা আরো মুশকিল হয়ে যাবে।
ফরিদ দ্রুত নাস্তার টেবিলে বসলো, ওরিনের উদ্দেশ্য বললো ” আজ তাড়াতাড়ি অফিসে যেতে হবে আকাশ ভাই আসবে। ”
” আকাশ কে?”
” আকাশ ভাইয়া কে তুমি চেনো না। উনি টপ মডেল দের মধ্য একজন। ”
ওরিন ঠোঁট উল্টিয়ে না ইশারা করলো। ফরিদ হেসে ফোনটা বের করলো। মারিয়ার বিয়ের ভিডিও খানিকটা অংশ ওরিন কে দেখালো। যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আকাশ আয়শার সাথে কথা বলছে, তার মাঝেই নাছিম চলে আসে,ক্ষানিকটা জোর করেই নাছিম আকাশ কে সরিয়ে নিয়ে গেলো। ফরিদ ভিডিও স্টপ করে,” দেখিয়ে বললো উনি আকাশ ভাইয়া।”
ওরিনের মাথায় বুদ্ধি খেলে গেলো।সে দিন নাছিম ভাইয়া ও বলেছিলো লেডি স্টাফ ওনাকে টাচ করেছে সে জন্য আয়শা আপু অনেক অভিমান করেছিলো। ওরিন জোরে নিশ্বাস নিলো, আয়শা আপুকে স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে যে কোন রিস্ক নিতে ওরিন রাজি।
” কি ভাবছো ওরিন? ”
” ভাবছি কিছু একটা। এখন বলা যাবে না। ”
” তাহলে না হয় পরে বলো। দাদী এবং তুমি নাস্তা করে নিও আমি আসছি এখন।”
” আরে ঠিক মতো তো নাস্তা করলে না?”
ফরিদ ওরিনের কপালে চুমু দিয়ে বললো ” রাতে ডিনার এক সাথে করবো। ” বলেই ফরিদ চলে গেলো। ওরিন আগের মতো দাঁড়িয়ে আছে কপালে স্পর্শ করে হাসলো। প্রিয় মানুষ টাকে আপন করে পাওয়া যে বড্ড সুখের, ফরিদ কে পেয়ে তা ভালো ভাবে বুঝতে পারছে ওরিন। ভালো থাকুক ভালোবাসার ব্যক্তিটা।
দাদী হালকা কেঁশে রুম থেকে বের হলো। ওরিন দাদীর কাছে গেলো। দাদী বললেন, “জাহুরা ( সহকারী মহিলা) কি আজ আসে নি?”
” নাহ দাদী ওনার ছেলে৷ নাকি অসুস্থ। আমি আসতে বারন করেছি, বাচ্চা ছেলেটার এখন মায়ের দরকার। ”
দাদী স্মিথ হাসলো, “তোমরা দুটো বোন এতো সহনশীল। আল্লাহ পাক তোমাদের সব সময় ভালো করবে। ”
ওরিন বললো ” চলুন দাদী নাস্তা করি।”
ওরিন শেহতাজ বেগম কে নাস্তা দিলো। দাদী খেতে খেতে বললেন ” আয়শার সাথে তোমার কথা হয়েছে?”
” গত কাল রাতে কথা হয়ে ছিলো। দাদী আমি নানা ভাইকে এ বাসায় ডাকতে চাই। কিছু পরিকল্পনা করতে হবে। ”
” রাতে ডিনারে ডাকো। কিন্তু কি প্লান আমাকে বলা যায়?”
” হ্যাঁ বলবো দাদী রাতে। সবাই এক সাথে হলে তখন।”
ওরিনের পরিকল্পনা মতো রাতে নানা ভাইকে দাওয়াত দেওয়া হলো। সন্ধ্যা হতেই ওরিন রান্না করে নিলো, দাদীর ছোট বেলায় গল্প ও শুনলো, সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো দাদী যখন টিন এজের ছিলো তখন নাকি সে প্রেম করেছিলো। পঞ্চাশ বছর পর নাকি তার সে প্রেমিকের দেখা হয়েছে। ওরিন উত্তেজিত কন্ঠে বললো ” ওয়াও দাদী পঞ্চাশ বছর পর তাকে দেখে আপনি চিনিতেও পেরেছেন?”
—-“আমরা যাদের প্রকৃত পক্ষে ভালোবাসি, শত চেষ্টা করেও তাদের ভুলতে পারি না।ভুলা এতো সহজ না। যুগ যুগ পার হয়ে গেলেও সেই চেনা মুখ খানা আমাদের সামনে ভাস্যমান!”—-
~ রুহি জাহান মায়া!
ওরিন আহ্লাদী কন্ঠে বললো,” দাদী আপনার প্রেমিক কে আমি একটি বার হলেও দেখতে চাই। কে সেই সৌভাগ্যবান মানুষ টি।”
শেহতাজ বেগম কিছু বললেন না। চুপ করে বসে রইলেন। পিচ্চি মেয়েটা যদি জানতে পারে সে সৌভাগ্যবান লোকটা ওর নানা কি না কি ভাববে।
ওরিন শেহতাজ বেগমেকে জরিয়ে ধরে বললো ” আচ্ছা দাদী তার কি বউ আছে?”
” ছিলো। মারা গেছে কিছু বছর আগে। ”
” তাহলে আপনি সিংগেল সেও সিংগেল। আপনাদের ডবল করে দিলে মন্দ হয় না?”
” ধুর পাগলী মেয়ে কি বলছিস এসব? বুড়ো বয়সে লোকে কি বলবে। ”
” উফফ দাদী লোকেতো বলবেই লোকের কাজই তো বলা। আমাদের এই ছোট জীনবটাকে উপভোগ করা উচিত না হলে হুট করে মরে গেলে আফসোস রয়ে যাবে। আয়শা আপুকে সেটিং করি তার পর তোমার পালা।”
বলেই ওরিন চোখ টিপুনি দিলো। শেহতাজ বেগম হাসলেন। পরক্ষণেই ওরিনের কথা গুলো ভাবলেন, আসলেই তো জীবন টা খুব ছোট, আমাদের শখ আল্লাদ অনেক, বয়স বেড়ে যায়। আর এই সংখ্যা মাত্র বয়সে কথা চিন্তা করে, সমাজের কথা চিন্তা করে আমরা কত ইচ্ছা কে দমিয়ে রেখে দেই। যা অপূর্ণই রয়ে যায়।
রাত আটটা নাগাদ ফরিদ নাছিম বাড়ি ফিরলো। কিছুক্ষণ পর নানা ভাই আসলো। ওরিন নানা ভাই কে দেখে খুশি হলো, কালাম সাহেব নাতনীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। ভেতরে যতেই উনি সোফায় শেহতাজ বেগম কে দেখতে পেলেন। ওরিন নানা ভাইয়ের উদ্দেশ্য বললো,
” নানা ভাই তুমি বসো। আমি নাস্তা নিয়ে আসি। ”
কালাম সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন, শেহতাজ বেগম বললো ” বসছো না কেনো? পঞ্চাশ বছর পর প্রেমিকার পাশের সোফায় বসতে কি খুব লজ্জা লাগছে। ”
” লজ্জা লাগবে কেনো? তুমি কেমন আছো? ”
” ভালো আছি। আয়শা এখন কেমন আছে?”
” খুব একটা ভালো না। বড্ড চিন্তা হয় মেয়েটা কে নিয়ে।”
” চিন্তা করো না। ওরিন উপায় বের করেছে। ”
ফরিদ নাছিম ড্রইংরুমে এসে দাদীর কথা শুনে চমকে গিয়ে বললো ” উপায়?”
নাস্তার ট্রে টেবিলে রেখে ওরিন বললো ” হ্যাঁ উপায়। আমার প্লান যদি সাকসেসফুল হয়। আয়শা আপু স্বাভাবিক হবে আমার ধারনা। ”
ওরিন তার পরিকল্পনা কথা বললো।
।
।
চলবে