বিয়েতে কবুল না বলায় ঠাস করে একটা চর পরে যায় আখির গালে। গালে হাত দিয়ে ডুকরে কেদে উঠে সে। আসে পাসে থাকা সাক্ষি গুলো খিটখিটিয়ে হেসে উঠতেই, আকাশ রাগি লুক নিয়ে ঠোট জোড়ায় আঙুল দিয়ে সবাইকে চুপ থাকতে বলে।
নিজেকে আজ খুবই অসহায় মনে হচ্ছে আখির। বাবা মা কে বন্ধি করে রেখেই তাকে জোর করে বিয়ে করছে আকাশ চৌধুরি। মাথাটা নিচু করে চোখের জল বিশর্জন দিচ্ছে আখি।
কাজি অফিসে সকলের সামনে এভাবে থাপ্পর খাওয়া আর তাকে নিয়ে সকলে এভাবে হেসে উঠায়, ঘৃনা ও লজ্জা দুটুর ছাপই আখির মুখে স্পস্ট পুটে উঠেছে।
মায়ের কথা ভেবে হলেও কাপা কাপা হাতে সাইন করে দিলো আখি। সাইন করেই শব্দ করে কেদে উঠে সে। আাকাশের ধমকেই কান্না স্তব্দ হয়ে যায় আখির।
এবার কান্না করছে কিন্তু আর আওয়াজ নেই। ভিতর ভিতর বুকটা ফেটে যাচ্ছে আখির।
আখিকে গাড়িতে উঠিয়ে আকাশ সোজা বাড়ি নিয়ে বাবার সামনে দাড়ায়।
— বাবা আমি বিয়ে করে ফেলেছি, তোমার পছন্দ করা মেয়েকেই। তোমাকে না জানিয়ে অন্যায় করে ফেলেছি যানি। প্লিজ বাবা ক্ষমা করে দাও।
আসিফ সাহেব মুখে একটা হাসি ফুটিয়ে বলে।
—বিয়ে কি জোর করে করেছিস নাকি তোদের দুজনের ইচ্ছেতে?
— কি বলো বাবা, আমাদের দুজনের ইচ্ছেতেই বিয়েটা হয়েছে।
— ওহ্ তাহলে ঠিক আছে। আয় ভেতরে আয়।
মাথা নিচু করে দাড়িয়ে সব কিছু সুনে যাচ্ছে আখি। তাদের ইচ্ছেতেই বিয়েটা হয়েছে এটা ভাবতেই চিৎকার দিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে সত্যিটা। কিন্তু বলতে পারছেনা, কারণ তার মা এখনো আকাশের হাতে বন্ধি।
ঘরে প্রবেশ করতেই সাগর দেখে ঘরটা ফুলে ফুলে শুসাজ্জিত।
— কি হলো বাবা? বাড়িটা এমন করে সাজিয়েছো, যেনো তুমি যানতে আমি আজ বিয়ে করছি?
— হুম, ফাহিম আমাকে আগেই বলেছে। তোরা দুজন বিয়ে করতে যাচ্ছিস। তাই বাড়িটা হালকা সাজিয়ে নিলাম। আমার একমাত্র ছেলে বলে কথা।
আকাশ ফাহিমকে এক পাসে ডেকে বলে,
— তুই আবার সত্যিটা বলে দিসনি তো?
— আরে না ভাইয়া, চাচাকে কি আমি এসব বলতে যাবো? বলেছি তুমি আর ভাবি বিয়ে করতে যাচ্ছো ব্যাস।
— ভালো করেছিস, আর শুন বাবা যেনো এই ব্যাপারে কিছুই যানতে না পারে।
,
,
,
,
,
বাসর ঘরে বসে আছে আখি। একটু আগে কয়েকটা মেয়ে এসে সাজিয়ে দিয়ে গেছে তাকে। দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে ছোট্ট একটা কাশি দিলো আকাশ।
মাথাটা নিচু করা অবস্থায় সান্ত ভাবে আখি বলে উঠলো,
— আপনার কাজ শেষ?
— বলতে পারো।
— আম্মুকে কি ছেরেছেন নাকি এখনো আটকে রেখেছেন?
— তাকে কাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথেই ছেরে দিয়েছি। শাশুরি বলে কথা।
— খবরদার আপনার ওই মুখে, আম্মুকে শাশুরি দাবি করবেন না।
— তুমি আমার বিয়ে করা স্ত্রী, তো সেও আমার শাশুরিই হয় তাই না?
— আমি আপনার স্ত্রী নই কারন আমি আপনাকে স্বামি হিসেবে মানিনা। আর হ্যা একধম অধিকার ফলাতে আসবেন না। আপনি জদি জোর করেন তাহলে……..
— তাহলে কি? দেহ পাবো মন পাবোনা তাই তো। আমি তোমাকে দেহের জন্য বিয়ে করিনি। বাবার কারনেই বিয়ে করেছি তোমাকে। তোমাকে আমার বাবাই পছন্দ করেছে। বাবাকে খুশি করতেই বিয়েটা করেছি আমি। কারন বাবা একজন মৃত্যুর পথ যাত্রি। খুব জোরে চার মাস সময় দিয়েছে ডাক্তার। এর ভেতরে বাবার সকল আবদার পুরন করে, ইচ্ছা অনিচ্ছাকে প্রাধান্ন দিয়ে বাবাকে সবসময় খুশি রাখবো আমি। তাই বাবাকে খুশি করতেই তোমাকে বিয়েটা করেছি আমি। যদিও তোমাদের বাড়িতে সেদিন বাবা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলো, তুমার মা মুখের উপর না বলে দিয়েছিলো। সেই দিন বাবাকে বলেছিলাম যে, আমি বিয়ে করলে তোমাকেই করবো। বাবা বলেছিলো, মেয়েটার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছু করতে যাস না। আমি চেস্টা করেছি, কিন্তু পারিনি তোমাকে রাজি করাতে। তাই বাধ্য হয়েই……..
— আপনি যানেন মা কেনো আপনাদের মুখের উপর নিশেদ করেছিলো? কারন, অন্য একজনের সাথে আমার বিয়ের কথা বার্তা একেবারে পাকা ছিলো। আমিও তাকে ভালোবাসি সে আমাকে ভালোবাসে। তাকে ছারা আমি নিজের জায়গায় কাওকে কল্পনাও করতে পারিনা।
— সমস্যা নাই, আমি নিজেই তোমাকে তার কাছে পৌছে দিবো। এখন থেকে এই বাড়িতে সব কিছু তোমার ইচ্ছেতেই হবে। কিন্তু,,,,,,
— কিন্তু কি?
— বাবা যেই কয়দিন বেচে আছে, তুমি তাকে বুঝতে দিওনা আমাদের মাঝে দুরুত্বটা। বাবা যেনো বুঝে আমরা দুজনই খুব সুখে আছি। প্লিজ সুধু এই চারটা মাস।
বিছানায় চুপ করে বসে আছে আখি। আকাশের কথায় কি উত্তর দেবে ভেবে পাচ্ছেনা। বাবা নামটার প্রতি যে সে ছোটবেলা থেকেই দুর্বল। জম্মের আগেই বাবাকে হারায় সে। মাথার উপর বাবা নামক কোনো ছায়াই ছিলোনা কোনো দিন।
— কি হলো চুপ করে আছো যে?
— আমি ভেবে নিই।
— যত ইচ্ছে ভাবতে পারো। কিন্তু প্লিজ আমার মৃত্যুর পথ যাত্রী বাবার মনে আঘাত দিওনে। বাবার কাছে আমাকে খারাপ করোনা। তোমার কাছে নাহয় আমি আজিবনই খারাপ থাকবো। প্লিজ।
— ওকে আমি ভেবে দেখবো। এখন আমার ঘুম পাচ্ছে। আপনি সোফায় গিয়ে ঘুমান।
আকাশ আর কিছু না বলেই, একটা বালিশ নিয়ে সোফায় গিয়ে সুয়ে পরে।
শাড়িটা চেন্জ করে একটা টি-শার্ট গায়ে শুয়ে পরলো আখি।
দুচোখ লেগে আসছেনা কিছুতেই। মনে আসছে নানান চিন্তা। কি করবে সে? মৃত্যুর পথযাত্রী একটা বাবার মনে আঘাত দিবে, নাকি আকাশের নকল বৌ হয়েই অভিনয় করে যেতে হবে তাকে। কিন্তু ওদিকে রাফিন? সেওতো আমায় খুব ভালোবাসে। একজন বাবাকে খুশি রাখতে গিয়ে তার সাথে প্রতারনা করে ফেলবো নাতো? তাকে বিষয়টা খুলে বললে কি সে বুঝবে? নাকি আমার আকাশের বাবার মনে কষ্ট দিয়ে দিয়ে তাকে ছেরে চলে যেতে হবে?
#গল্পঃ_ইচ্ছেটা_তোমারই
#লেখাঃ_মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
#পর্বঃ__১
To be continue………….