অনুরাগে_অনুভাবে_শুধু_তুই পর্ব শেষ

#অনুরাগে_অনুভাবে_শুধু_তুই

#পর্ব-১১ (শেষ পর্ব)
#লেখনী- সুরাইয়া ইসলাম সানজি।

আলাইনা হোটেল থেকে রেগে বের হয়ে রাস্তা এককোনা হাটতে থাকে। সূর্য কিছুখন আগেই ডুবে চারদিকে আধার নেমে এসেছে।
তখনই আলাইনার পাশে একটা বড় গাড়ি থামে, আলাইনাকে জোর করে গাড়ির ভীতর টেনে নেয়।
আলাইনাও কোনো রকম ছোটাছুটি করছেনা মনে হচ্ছে সে যেনো এটারই অপেক্ষা করছিলো।

গাড়ি শহর থেকে অনেক দূরে একটা বাংলোর সামনে থামে। পিট পিটিয়ে বাংলোর বাহিরে একটা আলো জ্বলছে।

দুজন লোক আলাইনাকে টেনে ভীতরের একটা রুমে নিয়ে যায়। ভীতরটা খুব অন্ধকার হলেও আলাইনা বেশ বুঝতে পারছে এখানে অন্যকেউ আছে।
হঠাৎ লাইট জ্বলে ওঠে সামনে তাকিয়ে দেখে ন্যান্সি কালো একটা লম্বা পোশাক পড়ে আলাইনার দিকে মুখ বাকিয়ে তাকিয়ে আছে।
আলাইনা রুমটা চারদিকে তাকিয়ে দেখতেই দেখে পাশের খাটের উপর আর একটা মেয়ে পড়ে আছে দুহাত বাধা। মেয়েটাকে আর একটু ভালো ভাবে দেখেই বুঝতে পারে এটা আরশী, আয়াতের বোন।

ন্যান্সি এতোক্ষন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আলাইনা কি বলে এটা দেখার জন্য দাড়িয়ে ছিলো কিন্তু আলাইনার ড্যাম কেয়ার ভাব দেখে আলাইনার কাছে গিয়ে রেগে দুগাল চেপে ধরে বলে-

—“একদম ওভার স্মার্ট হওয়ার চেষ্টা করবিনা, তোকে যে কিডন্যাপ করছি তোর ভয় লাগছেনা, মেরে গুম করে দিবো।”

আলাইনা ন্যান্সির কথা শুনে খিলখিলিয়ে বলে- —“সেগুরে বালি, আমি এমনিতেই স্মার্ট ওভার স্মার্ট হতে হবে না। তোর সাথে অন্যকেউ আছে ভালো করেই জানি, তার দেখা পাওয়ার জন্যই চারদিকে খুজছি, কই সে তোর সাথের কুকুরটা?

কথা শুনে ন্যান্সি রেগে গিয়ে আলাইনার গালে চড় মারে, আলাইনা চেয়ারের এক পাসে কাত হয়ে পরে যায়।
পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনে আরশী ভয়ে ধরফরিয়ে ওঠে বসে।
আলাইনা রাগে পুরো শরীর জ্বলে যাচ্ছে, এই মুহুর্তে কিছু চাইলেই বলতে পারছেনা।

ন্যান্সি রাগে সেখান থেকে চলে যায়, দরজা বন্ধ করার আগে বলে যায়-
—“কাল সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা কর,তোর সব রূপ মাটিতে মিশিয়ে দিবো।”

আলাইনা মনে মনে ভয় পেলেও সেটা প্রকাশ করে এই মুহূর্তে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করতে চায় না।

আলাইনা আরশীর দিকে তাকিয়ে দেখছে আরশী ভয়ে কুকড়ে আছে। আরশীকে স্বাভাবিক করার জন্য আলাইনা বলল-
—“আমাকে চিনতে পারছো আরশী? আমি তোমার ভাইয়ের বউ তোমার ভাবি হয়। আর রোহানের ফ্রেন্ড। ভয় পেওনা আমারা এখান থেকে সকালেই চলে যাবো, ঠিক আছে।”

আরশী ভয়ে ভয়ে মাথা উপর নিচ করে হ্যাঁ বলে।

আলাইনা মুচকি হেসে আবার বলতে শুরু করে-
—“জানো আমরা সব ঠিক করে রেখেছি, আমি, তুমি, তোমার ভাইয়া আর রোহান এক সাথে অনুষ্ঠান করে বিয়ে করবো। বিয়েই তুমি আর আমি একই লেহেঙ্গা পড়ে একই রকমের মেকআপ করবো। কি মজা হবে না?

আরশীর আলাইনার কথায় তালে তাল মিলিয়ে আস্তে আস্তে ভয়টা কেটে যায়, সেও আলাইনার কথায় তাল মিলায়।

আয়াত দূর থেকে তাদের কথা শুনছে, এ রকম পরিস্থিতিতে তাদের কথা শুনে আয়াতের পাহাড় থেকে ঝাপ দিতে ইচ্ছা করলেও ইচ্ছাটাকে দমন রেখে সামনে পা বাড়ায় এখনো অনেক কাজ বাকি।

______________________________

সকালের আলো ফুটছে। আরশী বেডের উপর ঘুমিয়ে আছে আর আলাইনা চেয়ারের উপর বসে মাথা কাধ করে ঘুমাচ্ছে। তখন কেউ এসে দরজা খুলে আস্তে আস্তে আলাইনার কাছে আসে, আলাইনা সারারাত ভয়ে ভয়ে কাটিয়ে শেষ রাতে চোখ বুঝেছে। লোকটা আলাইনা কাছে গিয়ে আঙুল দিয়ে আস্তে করে কপাল থেকে ঠেনে ঠোঁট পর্যন্ত নামাতেই আলাইনার ঘুম ভেঙ্গে যায়। আলাইনা সামনে থাকা ব্যক্তিকে দেখে ভয়ে চমকে যায়। সে জানতো ন্যান্সির সাথে আরো কেউ আছে কিন্তু সে যে আদ্রিল তা কল্পনায়ও ভাবেনি।

—” কি হলো ফুলটুসি আমাকে দেখে ভয় পেলে নাকি? হুসসস সুন্দরী একটুও ভয় পেওনা আমি তো তোমার হবু হাসবেন্ড, ভুলে গেলে নাকি?”

এটুকু বলতেই দাঁত বের করে হাসিতে ফেটে পড়ে আদ্রিল তখন দরজা ঠেলে পাশে এসে দাড়ায় ন্যান্সি।

ন্যান্সি আয়াতে গলা ঝড়িয়ে ধরে বলে-
—“সুইটহার্ট দিলে তো ম্যডামকে ঘুমটা ভেঙ্গে, তুমি জানো না সবুরে মেওয়া ফলে। তাই না ম্যাডাম?”

আলাইনার দিকে তাকিয়ে কথাটা বলতেই, আলাইনা কিছু একটা ভেবে চমকে ওঠে।
সেই দিন আদ্রিলের সাথে রুমে ভিতরে যার কথাগুলো শুনে সব জানতে পারে সেই মেয়েটা আর কেউ নয় ন্যান্সি, এতোদিন চোখের সামনে দেখেও চিনতে পারেনি কিন্তু আজ ন্যান্সি আর আদ্রিলকে একসাথে দেখে তাদের কথার ভঙ্গিমা শুনে বুঝতে একটুও বাকী রইলোনা।

—“ওহহ তুই সেই মেয়ে যাকে এই জানোয়ারটার রুমে দেখে ওর আসল রুপ জানতে পারি। আমার যতো সম্পত্তি ছিলো তা তো নিছো তাহলে আর কি চাই তোমাদের।

—“তোর রুপ চাই সুন্দরী, দিন দিন তো সুন্দর হয়ে যাচ্ছিস এই সুন্দরের ভাগ কি শুধু আয়াতই পাবে আমাদেরও তো একটু দে। আর আয়াতের সম্পত্তির কি হবে শুধু তোর সম্পত্তি নিছি কিন্তু আজ আয়াতের সম্পত্তি আর বউ দুটোই নিয়ে নিবো তোর আর আরশী ব্লাকমেইল করে।

তখনই পাশ থেকে ন্যান্সি বলতে শুরু করলো-
—“তোর জন্য আমাদের এতো বছরের সব প্লান বরবাদ হয়ে গেছে, কতো কষ্ট করে আয়াতের বাবাকে গাড়ি দিয়ে ধাক্কা দিয়ে আবার নিজেই বাঁচিয়ে মন জয় করে আয়াতের হবু বউ হয়েছিলাম।
কিন্তু তুই ছোট লোকের মতো আমাদের সব প্লান ভেঙ্গে দিলি। কিন্তু আজ আমাদের কোনো প্লানই নষ্ট হবে না। সেই সাথে তোর এই মুখও কাউকে দেখাতে পারবিনা।

আদ্রিল দিকে তাকিয়ে ন্যান্সি আবার বলে-
“কি সুইটহার্ট পারবেনা এর সব রূপের অহংকার শেষ করতে?”

আদ্রিল বিচ্ছিরি ভাবে হেসে আলাইনার গাল চেপে ধরে বলে-
“কেনো পারবোনা, তোমার জন্য এমন কিছু বাকি আছে যেটা আমি পারি নাই,”

আদ্রিল আলাইনার হাত পা খুলে জোড় করে জড়িয়ে ধরতে গেলেই রুমের দরজা ভেঙ্গে আয়াত ভীতরে আসে। আয়াতকে দেখে আলাইনা আদ্রিলকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দৌড়ে গিয়ে আয়াতকে জড়িয়ে ধরে।

আয়াতের হাতে রড ছিলো তা দিয়ে এলোপাথাড়ি আদ্রিলকে মেরে হাত পা ভেঙ্গে দেয়। তবুও ধামছেনা না ইচ্ছা মতো মারতে থাকে।

সব দেখে ন্যান্সি আস্তে করে দরজার ওপাশে পা দিতেই রোহান এসে ন্যান্সিকে গায়ের সমস্ত জোড়ে থাপ্পড় দেয়। ন্যান্সি দূরে ছিটকে পরে।
রোহান দৌড়ে গিয়ে আরশী হাত পা খুলে জড়িয়ে ধরে।

______________________________

Flash Back

রাস্তার বসে হঠাৎ গাড়ি থামতেই আলাইনার গায়ে ধাক্কা লাগে তখনই আয়াত দৌড়ে এসে আলাইনাকে তুলতেই গাড়িটা দূরে পালিয়ে যায়। নরমাল হলে হঠাৎ কেউ ধাক্কা দিলে সরি বলত কিন্তু পালিয়ে যাওয়া দেখে আয়াতের সন্দেহ হয়।
আয়াত মনে মনে ভাবে ন্যান্সির কাজ ভাবে হয়তো আলাইনাকে কিডন্যাপ করতে আসছে কারন আলাইনাকে যদি মারারই হতো তাহলে সরাসরি ধাক্কা দিতে পারতো।

তখনই আয়াত কানাডার একটা নাম্বার থেকে কল আসে যেখানে বলে আলাইনার উপর কনাডায় বসে যতো গুলো এক্সিডেন্ট হইছে সবই ন্যান্সি করিয়েছে।
আয়াত কানাডায় থাকা কালিন একটু সন্দেহ হলে আলাইনার পিছনে গুপ্ত চড় লাগিয়ে দিয়েছিলো কে আলাইনার ক্ষতি করতে চাইছে এটা জানতে।

সব শুনে আয়াতের আলাইনাকে হারানোর ভয় আরো বেড়ে যায়। তখন আলাইনাকে সিসিটিভি যুক্ত লকেট আর আংটিতে লোকেশন যাতে ট্রাক করা যায় সব লাগিয়ে পড়িয়ে দেয়।
আলাইনাকে যত যা হয়েছিলো সেদিনই সব খুলে বলে।

আয়াত আলাইনাকে সব সময় নজরে রাখলেও হঠাৎ একদিন সকালে ফোন আসে-

—“তোর বোনটা খুব সুন্দরী বেঁচবি নাকি? খুব দাম দিবো। আর যদি বোনকে সুরক্ষিত রাখতে চাস তবে আলাইনাকে কিছু জানতে দিবি না আর তোকে যা যা বলছি সব কর। বেশি চালাক ভাববিনা নিজেকে তুই কখন কি করছিস সব আমি দেখছি।”

আয়াতের ভাবনার বাহিরে ছিলো, কখনো আরশীকে নিয়ে চিন্তায় করিনি। ন্যান্সি তো এখানে তাহলে কানাডা থেকে বোনকে কে কিডন্যাপ করছে এই মাষ্টার মাইন্ডের দ্বিতীয় জন কে জানতে রোহান কে সব বলে।

আর আলাইনার সাথে বাঝে ব্যবহার বাড়িয়ে দেয়, যাতে যারা তাদের উপর নজর রাখছে কিছু না জানতে পারে।
আলাইনার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে রোহানের ফোন থেকে মেসেজ করে একে একে সব বলে। তখন তারাও তাদের প্লান মতো চলে।

আবারো আয়াতের ফোনে কল আসে যা দূর থেকে আলাইনা রোহান দুজনেই শুনছে তারা কি বলছে। তখন আয়াতকে একটা ক্যাফে ডাকলে আয়াত সেখানে যেতেই কেউ তার মাথার পিছনে আঘাত করে অজ্ঞান করে নিয়ে যায়।
জ্ঞান ফিরে দরজার ঠুকঠাক আওয়াজে আয়াত সেদিকে এগিয়ে যেতেই দেখে আলাইনা। তাদের যে ফাসানো হইছে সেই মুহুর্তে আয়াত আলাইনা বুঝতে পেরে মুচকি হাসি দেয়।
তখনই ওয়াশরুম থেকে ন্যান্সিকে দেখে আলাইনা অভিনয় শুরু করে নির্জন রাস্তায় চলে গিয়ে নিজেই ধরা দেয়।
আয়াত পারলেই তখন ন্যান্সিকে ধরতে পারতো কিন্তু আরশী আর এসবের মাস্টার মাইন্ড কে তা জানার জন্য এসব নাটক।

______________________________

আয়াত এতোক্ষন আদ্রিল মেরে হাড় ভেঙ্গে দেয়। পাশ থেকে ন্যান্সি ভয় মাখা চিহ্নিত গলায় বলে
-“তোমারা কি করে এখানে আসলে।”

তখন পাশ থেকে মুচকি হাসি আলাইনা ন্যান্সির চুলির মুঠি ধরে বলে- কি ভাবছিলি তোরা আমাদের টোপে ফেলছিস? আরে আমরাই তো ইচ্ছে করে তোরে টোপে পরছি তোদের ধরার জন্য।

আলাইনা রাগে ন্যান্সির গালে কয়েকটা চড় দেয় তখনই রাহি পুলিশ নিয়ে হাজির হয়।
আয়াত রোহানকে মার ধামিয়ে আলাইনার সমস্ত জমির ফাইল সামনে ধরে সাইন করতে বলে, রোহান ভয়ে ভয়ে সাইন করে দিতেই পুলিশরা আদ্রিল, ন্যান্সি আর তাদের চ্যালাদের সাথে করে নিয়ে যায়।

______________________________

চারদিকে সব সাজানো, আজ তিনটা বাড়ি খুশিতে ভরে আছে।
আলাইনার শহরের বাড়ি ফিরে পেতেই ফুপিকে শহরে নিয়ে আসে সেই সাথে আদ্রিলের বাড়ি আর রোহানদের বাড়িও সাজানো। কালই আনুষ্ঠানিক ভাবে বিয়ে।

আরশী আর রোহান আয়াতের বাসায় সবার সাথে গল্প করছে, এদিকে আয়াত চুপচাপ বসে আছে প্রায় রাত ১টা তবুও কারো গল্প থামার নামই নেই। কেউ গান বলছে কেউ বা মজার কৌতুক।
আয়াতকে ধরে বসিয়ে রেখেছে আয়াতের সব কাজিনরা। ওদিকে আলাইনা ঘোড় আপওি বিয়ের আগের দিন নো দেখা, নো কল অনলি ঘুম।
,
,

মাএ বিছানায় শুয়েছে আয়াত, কিন্তু ঘুম আসছেনা আলাইনাকে কয়েক বার কল দিলে ধরছেনা। আয়াত তখনই গাড়ি নিয়ে ছুটে যায় আলাইনাদের বাসায়।

দেয়াল বেয়ে উপরে ওঠতেই দেখে বারান্দায় দাড়িয়ে আলাইনা তার দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে আছে।
আলাইনা এতো রাতে হঠাৎ এখানে দেখায় থতমত খেয়ে পড়ে যেতে নিলেই আলাইনা হাত দিয়ে টেনে উপরে তুলে।

—“আমার ফোন ধরো নাই কেনো?এতো রাতে এখানে দাড়িয়ে আমার পাখিটা কি করছে?”

আলাইনা অভিমানভরা গলায় বলে-
—“ঘুম আসছিলোনা তাই ইচ্ছে করেই ফোন ধরেনি, জানতাম আপনি ফোন না ধরলে চলে আসবেন।
আচ্ছা বাইকে করে ঘুরতে নিয়ে যাবেন?”

আয়াত আর কিছু না বলে আলাইনাকে নিয়ে বেড়িয়ে পরে। রাতের নিরবতায় দিনের ব্যস্ত শহরের উপর শান্ত পরিবেশে পাশাপাশি হাটছে আয়াত আলাইনা।
আয়াত কিছুখন পর আলাইনাকে কাছে টেনে কাধে উপর হাত রেখে আলাইনাকে বুকে মিশিয়ে নেয়।

হাটতে হাটতে একটা নদীর পাশে চলে যায়, আলাইনা আয়াত সরিয়ে দৌড়ে গিয়ে নদীর পাশে বসে দু-হাত মেলে দেয়। আচ্ছা নদীর পানি তো কতই সচ্ছ আয়নার মতো, এখন থেকে তাদের জীবনটাও ঠিক এমনই করে হবে তো।
,
,

আলাইনা আয়াতে রুমে বসে আছে, এইতো কিছুখন আগেই রাহি আর আয়াতের কিছু কাজিন আয়াতের ফুল সাজানো রুমে নিয়ে আসে।
কিছুখন পর আয়াত আস্তে করে পাশে বসতেই আলাইনা লজ্জায় কুকড়ে যায়।

আয়াতে আলাইনাকে কাছে টেনে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে-
—“দুই দুই বিয়ে করেছি, এবার কি আমি আমার অধিকার পাবো?”

আলাইনার কানে আয়াতের ঠোঁটের স্পর্শে লজ্জায় আয়াতের বুকে মুখ লুকায়, আস্তে করে মুখ তুলে দেখে আয়াত তার দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
আলাইনা টুপ করে আয়াতের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে ভালোবাসার সাগরে হারিয়ে যায়।

এই ক্ষুদ্র জীবনে অন্তত একবার হলেও,
তোমায় আমার প্রয়োজন।

ঝর্নার কূল ঘেসে নিয়ে আসা
আফরিন মেশানো ভালোবাসায় ভেজানোর জন্য,
তোমায় আমার প্রয়োজন।

এক বসন্তে তুমি হলুদ না পরে
পরবে নীল পাঞ্জাবি
আমি নীল না পরে পরবো লাল সাড়ী,
এক বিকেলে সন্ধ্যায় সাজে
চায়ের কাপটা এক হাতে নিয়ে,
অন্য হাতে নীল খামে হলুদ চিঠিটা আনাগোনা করার জন্য,
তোমায় আমার প্রয়োজন।

বৃদ্ধ বয়সে বকুল তলায়
শাড়ির আচলটা খানিক বাড়িয়ে দিয়ে,
তোমার হাতে হাত রেখে হাটার জন্য,
অন্তত তোমায় আমার প্রয়োজন
-সুরাইয়া ইসলাম সানজি।

______________________________

৫ বছর পর।
আজ আয়াতে অফিসের পার্টিতে আলাইনা,আয়াত আর তাদের ২ বছরের ছেলে আয়ুশ যাবে বলে তৈরি হচ্ছে।

আলাইনা, আয়াতে জামা কাপড় আর ইয়ুশের জামা কাপড় বেডের উপর রেখে অন্য রুমে চলে গেছে। নয়তো সে জানে এদের জ্বালাই আর তৈরি হতে পারবেনা।

—“জান আমার সার্ট টা কোথায়?”

আয়াতকে দেখে আয়ুশ আধো আধো গলায় বলে-
—“দান আমার সার্ত তা কোতায়?”

আলাইনা পাশের রুম থেকে চেচিয়ে বলে।
—“বেডের উপর।”

—“বেল্টা কোথায়?”

—বেডের উপর আছে, আমি রেখে আসছি দেখো।

—কোথায় নেই তো, পাচ্ছিনা একটু খুজে দিয়ে যাও।

আলাইনা কোনো মতে শাড়িটা পেচিয়ে বিরক্ত মাখা রুমে ডুকতেই আয়াত টান মেরে আলাইনাকে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে নাক ডুবায়।

—“কি হচ্ছে আয়াত? ছাড়ুন আয়ুস দেখেছে। কি অসভ্য বদ লোক রে বাবা, সব পড়ে নিজে তৈরি হয়ে এখন আমাকে আর তৈরি হতে দিচ্ছেনা। উফফফ ছাড়ুন তো।”

আয়াত আলাইনাকে ছেড়ে বাচ্চাদের মতো করে বলে- —“কি কপাল আমার, এতো যুদ্ধ করে বিয়ে করলাম, এক বাচ্চার বাবা হলাম তবুও বউয়ের লজ্জা ভাঙ্গাতে পারলাম না।”

আলাইনা আয়াতের কথায় খিলখিলিয়ে হেসে একটু রাগ দেখিয়ে পাশের রুমে চলে যায়।

আয়াত ডান চোখ টিপে উচু গলায় বলে-
—“পালাও পালাও বালিকা, দিন শেষে আমার বুকের মাঝেই ডুকতে হবে, অনুরাগে অনুভাবে তোমাকে এই বুকে মাঝেই থাকতে হবে।”

🌺🌺সমাপ্ত🌺🌺

[ গল্পটা আপনার কেমন লাগছে জানাবেন কিন্তু।😊😊
প্রথম লেখা হিসেবে অনেক সাপোর্ট আর ভালোবাসা পেয়েছি, অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ইনসাআল্লাহ নতুন গল্প খুব তাড়াতাড়ি নিয়ে আসবো।
ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।❤❤]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here