অনুরাগে_অনুভাবে_শুধু_তুই পর্ব ৮

#অনুরাগে_অনুভাবে_শুধু_তুই

#পর্ব-০৮
#লেখনী-সুরাইয়া_ইসলাম_সানজি।

কাজী অফিস থেকে আলাইনার কথা মতো গাড়ি সোজাসুজি অফিসের সামনে থামে। গাড়ি থেকে নেমে আলাইনা আয়াতের বাম হাতটা ধরে একদৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে বলে-

—“যতোদিন না ন্যান্সিকে আমাদের বিষয়ে জানাচ্ছেন, আর যতোদিন না আপনার ফেমেলী আমাকে মেনে নিচ্ছে, ততদিন অফিসে আপনি আমার বস আর আমি আপনার পি.এ। আর না তো আমাদের কোনো সম্পর্ক আছে আর না আপনি আমার উপর কোনো দায়িত্ব দেখাবেন।”

আলাইনার কথাগুলোর কারন আয়াত ভালো করেই বুঝতে পারছে, আলাইনা সবদিক থেকে নিজের সম্পূর্ণ অধিকার চাচ্ছে, আর চাইবেই না কেনো? সব মেয়েই তো বিয়ের পর শ্বশুর বাড়ীর সব অধিকার পেতে চায়। গোপনে গোপনে নয় যেনো সবার সামনে বুক ফুলিয়ে স্বামীর পরিচয় দিতে পারে।

আয়াত মুচকি হেসে আলাইনার কপালে চুমু দিয়ে বলে-
—“যাহা আজ্ঞা রানি সাহেবা। কিন্তু শর্ত হলো তোমাকে আমাদের বাসায় দাদিমার সাথে থাকতে হবে। অন্তত অধিকার না পাই সারাদিন তো দেখতে পারবো।

______________________________

আফিসে বসে ফাইল দেখছে আলাইনা, পাশে বসে রাহি একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে।

—“আয়াত স্যারকে তুই কি আগে থেকেই চিনতি, আয়াত স্যার কি তোকে আগে থেকেই ভালোবাসে? আচ্ছা এটা বল তুই কি আয়াত স্যারকে ভালোবাসিস, তোর সেই স্বপ্নের পুরুষই কি আয়াত স্যার? আচ্ছা সব বাদ দে শুধু এটা বল আজকের বিয়ের কথা কি তুই আগে থেকে জানতি?”

আলাইনা এতোখন ফাইলের দিকে তাকিয়ে থাকলেও রাহির একসঙ্গে এতোগুলো প্রশ্নে রাহির দিকে তাকায়, বেচারা আর কি বা করবে আয়াতের এতোখনের রিয়েকশন সব মাথার উপর দিয়ে গেছে।
,
,

আলাইনা রাহির সাথে বাসায় এসে সবকিছু গোছাচ্ছে,আয়াত আফিস থেকে আসার সময় বলে দিছি সন্ধ্যায় নিতে আসবে।
রাহি মুখ ভার করে বেডের উপর বসে একবার এদিক আর একবার ওদিক করে আলাইনা কি করছে তার দিকে তাকাচ্ছে।

—“আচ্ছা তুই কি ওই বাসায় গেলে আমাকে ভুলে যাবি, তোর সাথে আর কি রাতে বসে হরর মুভি দেখা হবে না।”

আলাইনা রাহির দিকে তাকিয়ে রাহির অবস্থা বুঝতে পেরে আস্তে করে রাহির পিছনে বেডের উপর বসে রাহিকে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরে ঘারের উপর থুতনি দেখে বলে-

—“কে বলছে ভুলে যাবো, তোকে ছাড়া থাকতে পারবো নাকি? আমি এখানেও থাকবো আর ওই বাড়িও থাকবো। মাঝে মাঝে তোকেও সাথে করে নিয়ে রাতে বসে একসঙ্গে হরর মুভি দেখবো। আর অফিসে তো দেখা হবেই

রাহি মুখ বাকিয়ে বলে- হুমম আমাকে ও বাসায় নিলে যখন আমি তোমাদের রোমান্স এ কাবাব মে হাড্ডি হবো তখন আয়াত স্যার আমাকে মাথায় তুলে দিবে এক আচাড়, যে রাগরে বাবা। তারপর আমার হবু হাসবেন্ড কি হবে?

রাহির কথা শুনে আলাইনা খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে সাথে রাহিও।
,
,

রোহান দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে অনেকক্ষন থেকে হঠাৎ আলাইনার দরজার দিকে চোখ যেতেই দেখে রোহান তার দিকে তাকিয়ে আছে।
আলাইনার মনে মনে একটু খারাপ লাগছে রোহানের জন্য, ছেলেটা খুব বিরক্ত করলেও তাকে খুব ভালোবাসতো কেয়ার নিতো। খারাপ কোনো মতলব ছিলোনা। অতিরিক্ত কেয়ার নেওটা তার খারাপ লাগতো তাছাড়া কিছুইনা।

সেদিন দরজার পাশে ছিটকিনিটা থেকে উরনা ছাড়িয়ে দেওয়ার সময় কতো কথাই না বলছিলো কিন্তু রুমে এসে এক পাশ দিয়ে উরনা ছিয়ে যাওয়া দেখে সব বুঝতে পারছে।
অফিস থেকে ফিরলে কফি নিয়ে দাড়িয়ে থাকা কায়ারিং হলেও আলাইনার কাছে বেশ বিরক্ত লাগতো। আসলে মনে অন্যজন বসবাস করলে চোখের সামনের জনকে বিরক্ত লাগাটাই স্বাভাবিক।

—“আরে রোহান ভিতরে আসো দাড়িয়ে আছো কেনো? কই কোনো দিন তো পারমিশন নেও নাই তাহলে আজ কি হলো?”

রোহান লজ্জায় মাথা চুলকে মুচকি হাসি দিয়ে বলে-

—“অভিনন্দন ভাবি, এই নাও মিষ্টি খাও। আর আমাকে পারলে পুরোনো কথা মনে করিয়ে একটু কম লজ্জা দিও। যা করেছি সবই আয়াত ভাইয়ার কথা মতোই করতাম।

আলাইনা রোহানের কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কিছু বলতে যাবে তার আগেই রোহান বলে-

—“আয়াত ভাইয়ার ছোট বোন আরশিকে আমি ভালোবাসি। আমাদের বিয়েও ঠিক হয়ে আছে।
কিন্তু বড় ভাই বিয়ে না করে ছোট বোনকে বিয়ে দেয় কি করে, লোকে কি বলবে?এটা ভেবে আমার হবু শ্বশুর ন্যান্সির সাথে বিয়ে ঠিক করে কিন্তু আয়াত ভাইয়া একটা পর একটা অজুহাত দেখিয়ে যেতো
একদিন আমার সাথে ভিডিও কলে কথা বলার সময় তোমাকে আমার পিছনে দেখে তোমার সম্পর্কে সব জিঙ্গেস করে। তারপর রোজ রোজ তোমার খোজ নিতো, খাইছো কিনা, ঘুমাইছো কিনা এসব।
তুমি না খাইলে আমাকে দিয়ে খাবার পাঠাতো। রোজ রাতে তুমি ঘুমালে জানালা দিয়ে এসে তোমাকে দেখতো।
আজ তোমাদের বিয়ের কথা শুনে আমি কতো খুশি তোমাকে বুঝাতে পারবোনা, অন্তত আমার আর আরশির বিয়েটা তো এবার হবে।
তোমাকে আয়াত ভাইয়া খুব ভালোবাসে তুমি খুব সুখি হবে দেখে নিও।

আলাইনা রোহানের কথা শুনে চোখ থেকে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পরে, একটা মানুষ কতোটা ভালোবাসলে এমনটা করতে পারে।

______________________________

আয়াত গাড়ি নিয়ে নিচে বসে আছে। রোহান সব জিনিসপত্র গাড়িতে রাখছে। আর এদিকে দুই বান্ধবীর বিদায় শেষই হচ্ছেনা।
তাদের দেখে মনে হচ্ছে আবার কতো বছর পর দেখা হবে আজই সব কথা বলে শেষ করা লাগবে।

আলাইনা গাড়ির পিছনের দিকে যেতেই আয়াত গাড়ি টা টান দিয়ে কয়েক পা এগিয়ে নেয়, আলাইনা আবার পিঠনে উঠতে গেলে আয়াত আবার টান দিয়ে গাড়িটা কয়েক পা এগিয়ে নিয়ে গম্ভীর গলায় বলে-

—“করো যদি মনে হয় আমি ড্রাইভার তাহলে সে অন্যকোনো গাড়িতে আসতে পারে।”

আলাইনা চুপচাপ সামনের সিটে একপাশে গুটিয়ে বসে, আয়াত আলাইনাকে একটানে নিজের কাছে নিয়ে সিট বেল্ট বেধে দিয়ে, আলাইনার মাথাটা নিজের ঘাড়ের উপর রাখে।

______________________________

আয়াতের বাসার রহিম কাকা সব জিনিসপত্র নিয়ে আয়াতের পাশের রুমে রাখছে।
আলাইনা কড়া দৃষ্টিতে আয়াতের দিকে তাকিয়ে বলে-

—“আপনি না বলছিলেন আমি দাদিমার রুমে থাকবো তাহলে এসব কি, আমার জিনিস পএ এই রুমে নিয়ে যাচ্ছে কেনো?”

আয়াত মাছুম বাচ্চার মতো মুখ করে না জানার ভান করে বলে-
—“আমি কি জানি, রহিম চাচা নিচ্ছে তুমি রহিম চাচাকেই জিঙ্গেস করো।
আর তুমি চাইলে দাদিমার রুমে ঘুমাতে পারো কিন্তু মাঝ রাতে আমি যখন নিয়ে আসব তখন যদি তোমার গভীর ঘুমটা ভেঙ্গে যায় তখন কি ভালো লাগবে বলো?”

—“আপনার মতো বদ লোকের সাথে কথা বলাই বোকামি, আর কোনো কিছু জিঙ্গেস করা তো মহা বোকামি।”

আলাইনা রুমে ডুকে খুব জোরে শব্দ করে দরজা বন্ধ করে দেয়। আয়াত আলাইনার রেগে চলে যাওয়া দেখে একটু শব্দ করে হেসে গলা উচিয়ে বলে-

—“জানপাখি যতই দরজা দেও,
ওই বাসায় যদি আমি জানালা খুলে ডুকতে পারি তাহলে আমার পাশের রুমের দরজা ভেঙ্গেও ডুকতে পারবো।”
,
,
চলবে,,,,,,
[প্লিজ সবাই সবার মতামত জানাবেন। আর ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ❤❤]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here