অনুরাগে_অনুভাবে_শুধু_তুই পর্ব ৯

#অনুরাগে_অনুভাবে_শুধু_তুই

#পর্ব-০৯
#লেখনী-সুরাইয়া_ইসলাম_সানজি।

ফোনট বিরক্তকর আওয়াজে বেজেই যাচ্ছে আলাইনার তাতে কোনো খেয়াল নেই সে ফাইল দেখায় ব্যস্ত। তাকে দেখে মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে ফোনটার কাজই ক্রিং ক্রিং করে বেজে যাওয়া সে কেনো ফোনের কাজকে ডিস্টাপ করবে।

রাহি আলাইনার কেবিনে এসে দেখে ফোন বাঝছে তাতে আলাইনার কোনো খেয়ালই নেই।

—“তোর কি হইছে বল তো? ফোন ধরছিস না কেনো জরুরী ফোনও তো হতে পারে।”

আলাইনা বিরক্ত ভড়া মুখ নিয়ে বলে-
—“জরুরী না ছাই, তোর আয়াত স্যার ফোন দিছে। আচ্ছা বল তো কার ভালো লাগে এভাবে সারাদিন তার কেবিনে বসে থাকলে অন্য স্টাফরা কি ভাববে।”

—“যাই ভাবুক তুই তার পি.এ তুই যাবি না তো কে যাবে, তাতে যে যা ভাবার ভাবুক। অন্তত তোর এটা বুঝা উচিত, শুধু শুধু আয়াত স্যার তোকে বকে না।”

আলাইনা রাহির কথায় ওর দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে জিঙ্গেস করে-
—“রোহান না হয় আরশির জন্য আয়াতের কথায় এভাবে করতো, আয়াতে তো আর কোনো ভাই নেই তুই তাহলে কার কথা ভেবে আয়াতের পক্ষে কথা বলছিস?”

আলাইনার কথা শেষ হতেই অফিসের পিয়ন এসে আলাইনাকে বলে যায়- “আয়াত স্যার আরজেন্ট কাজে আপনাকে তার কেবিনে ডাকছে।”
,
,

আলাইনা একটু ভয়ে ভয়ে আয়াতের কেবিনের ভিতরে ডুকছে, ভিতরে ডুকে দেখে আয়াত স্বাভাবিক ভাবে চেয়ারে পিঠ ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে।
আলাইনা ভাবছে আয়াত হয়তো ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরেছে।
আলাইনা আস্তে করে আয়াতের পাশে গিয়ে কিছুখন তাকিয়ে থাকে, কয়েকটা আগোছালো চুল কপালের উপর পরে আছে সেগুলো হাত দিয়ে আস্তে করে সরিয়ে দেয় তারপর কাপালে টুপ করে চুমু এঁকে দেয়।

আচমকা আয়াত আলাইনাকে একটানে কোলে বসিয়ে নেয়, সবকিছু আচমকা হওয়ায় আলাইনা ভয়ে কুকড়ে যায়।

আয়াত পিছন থেকে আলাইনাকে জড়িয়ে ধরে চুল মুখ ডুবায়।
—“কি হলো জানপাখি, আমার ঘুমের সুযোগ নেওয়া হচ্ছিলো বুঝি?

—“ক ক কই নাতো”

—“সিরিয়াসলি, কিছু করছিলেনা? আমি বোধহয় স্বপ্নে দেখছি কেউ আমার কপালে চু….

আলাইনা লজ্জায় আয়াতের মুখ হাতের তালু দিয়ে চেপে ধরে, আয়াত শব্দ করে আলাইনার হাতে ঠোঁট ছোঁয়ায়।

—“অসভ্য বদ লোক একটা, মুখে কিছু বলতে আটকায় না।
,
,

আলাইনা আয়াতে কোল থেকে উঠার চেষ্টা করলেও আয়াতের শক্তির সাথে পেরে ওঠেনা।

—“কী, হচ্ছেটা কী ছাড়ুন আমায়, দরজা খোলা যে কেউ কোনো সময় কেবিনে চলে আসতে পারে।

আয়াত আলাইনার কথায় দুষ্টু হেসে চোখ টিপে বলে-

—“তুমি চাইলে দরজা বন্ধ করে আসতে পারি, কেউ আর আসতে পারবেনা। আর আসলে আসুক আমার বউ কে আমি জড়িয়ে ধরেছি তাতে কার কী? বাই দ্যা ওয়ে এতোখন ফোন না ধরার শাস্তি এটা।”

আলাইনা আয়াতের কথা শুনে চুপ হয়ে যায়।
আয়াতের মুখে বউ ডাকটা শুনে আলাইনা মনে মনে কয়েক বার ভাবতাই লজ্জায় আয়াতের বুকে মুখ লুকায়।
,
,

ন্যান্সি কিছুখন আগেই কেবিনের সামনে আসছে এতোখন চুপচাপ আয়াতের কেবিনের সামনে দাড়িয়ে সব দেখলেও এবার দরজা ঠেলে ভিতরে ডুকে।

দরজার খোলার শব্দ শুনে আয়াত আলাইনা দুজনেই সেদিকে তাকায়। আলাইনা ন্যান্সিকে দেখে ভয়ে তড়িঘড়ি করে আয়াতের কোলে থেকে উঠতে নেয়। আয়াত আলাইনাকে শক্ত করে বুকে চেপে ধরে মুচকি হেসে ন্যান্সির দিকে তাকিয়ে বলে-

—“ওহহ ন্যান্সি তুমি, আগে বলবেনা তুমি আসবে তাহলে অথিতি আপ্যয়নের ব্যবস্থা করতাম।
কিছুখন আগেই ভাবছিলাম তোমাকে আসতে বলব আমার বউয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে।

আলাইনার দিকে ইশারা করে ন্যান্সির দিকে তাকিয়ে আয়াত আবার বলে- “এই হলো আমার বউ মিসেস আয়াত।”

আলাইনা ভাবছে ন্যান্সি এখন কি করবে কিন্তু আলাইনার সব ভাবনায় পানি ঠেলে ন্যান্সি কিছুখন চুপ করে থেকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে সামনে চেয়ারটা ধাক্কা দিয়ে রাগে হনহন করে বাহিরে চলে যায়।

______________________________

আলাইনা বাসায় ফিরে বেডের উপর বসে দু পা গুটিয়ে হাটুর উপর থুতনি রেখে বার বার অফিসে ঘটে যাওয়া প্রত্যেকটি ঘটনা ভাবছে আয়াতের মুখে তাকে “বউ” ডাকটা মনে করতেই লজ্জায় লাল হয়ে যায়।
তবে ন্যান্সির বিষয়টা ভেবে খারাপ লাগছে, কেনো মেয়েই চাইবেনা তার হবু হাসবেন্ট অন্য কাউকে বউ ডাকুক।

কিছুখন আগে রাহি আর রোহান এসেছে, আলাইনা রাহিকে দেখেই সারাদিনের সব গল্প জুড়ে দেয়। আয়াত রোহানের সাথে কথা বলছে আর ফাকে ফাকে আলাইনার দিকে তাকাচ্ছে।

তখনই আয়াতে দাদিমা এসে সবার মাঝে বসে গল্প জুড়ে দেয়। তার সাথে আয়াতের দাদার কবে প্রথম দেখা হইছে, প্রথম ফিলিংস কেমন ছিলো এসব।
কথার মাঝে দাদিমা আয়াতের দিয়ে তাকিয়ে বলে- “তা দাদুভাই, দিদি ভাইয়ের কথা কবে মা-বাবাকে বলবে? না জানিয়ে এভাবে তো আর সারাজীবন চলতে পারবেনা।”

—“দাদিমা আমি এটা নিয়েই একটু টেনশনে ছিলাম, বাবা কিছু না বললেও মাম্মাম ঘোড় আপত্তি করবে। আমি ভাবছি আমাদের বিয়ের কথা শুনে যদি আরশির বিয়ে ভেঙ্গে দেয়? মাম্মা জানে আমার দুর্বলতা শুধুই আরশি। আমি চাইনা আমার কারনে রোহানের ভালোবাসার মানুষ হারিয়ে যাক।”

—“কিন্তু ন্যান্সি তো সব জানে, যদি ও বলে দেয় তাহলে?”

—” ও ততো বোকা মেয়ে না, বললে এতোখনে মাম্মাম ফোন করতো।
ও জানে মাম্মাকে বলে দিলে ওর আর আমার সম্পর্কে সবাই জেনে যাবে সেই সাথে আলাইনার কথাও। আর সবাই জানলে ওর শেষ সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাবে। এখন ও গোপনে গোপনে আলাইনার ক্ষতি করতে চাইবে প্রকাশ্যে আসবেনা যাতে আমাদের ব্যাপারে অন্য কেউ না জানে।”

—” এই না হলে আমার দাদুভাই, পুরাই দাদার মতো চিন্তা ভাবনা, টেনশন করো না আমি আছি তো।”

আয়াত দাদিমাকে জড়িয়ে ধরে আদুরী গলায় বলে-
—” হুমম সুইটহার্ট তুমি আছো তো চিন্তা কিসের”

কিছুখন পরই নিচ থেকে সবাইকে খাবারের জন্য ডাকা হয়। খাবার টেবিলে আলাইনা আর রাহি এক পাশে বসছে। রাহির সোজাসুজি রোহান আর আলাইনার সোজাসুজি আয়াত বসছে।

আলাইনা খাবার খাওয়ার সময় হঠাৎ পায়ে সুরসুরি পেয়ে নিচে তাকিয়ে দেখে আয়াতের পা তার পায়ের উপরে রেখে সুরসুরি দিচ্ছি আর মুচকি মুচকি হাসছে।
আলাইনার রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে কেউ দেখলে কি ভাববে? পা অন্য জায়গায় সরিয়ে নেয়।
কিছুখন পর আলাইনা অনুভাব করছে পা থেকে প্লাজুটা হাঁটু অব্দি ওঠে পায়ের আঙুল দিয়ে স্লাইড করছে।
আলাইনা এবার আর নিচে না তাকিয়ে সরাসরি আয়াতের মুখের দিকে তাকায়, আয়াত রোহানের দিকে তাকিয়ে রোহানের সাথে কথা বলছে আর খাচ্ছে তাকে দেখে মনে হচ্ছেনা এটা তার কাজ।

আলাইনা সন্দেহের বসে নিচে তাকিয়ে আয়াতের পা দেখে, সুরসুরির জন্য কাশতে শুরু করে, আয়াত অন্যদিকে তাকিয়ে পনির গ্লাসটা আলাইনার দিয়ে এগিয়ে দেয়। আলাইনা আবার আয়াতের দিকে তাকালে আয়াত সবার আড়ালে মুচকি হেসে বাম চোখ টিপে দেয়।

আলাইনার এই মূহুর্তে লজ্জায় মনে হচ্ছে আল্লাহ মাটি ভাগ করো আমি ভিতরে ডুকে যায়, নয়তো দড়ি ফালাও আমি উপরে ওঠে আসি।
,
,

[বিঃদ্রঃ আর বেশি পার্ট নেই কিছু পার্টের ভিতরেই গল্পটা ইতি টানবো, পাঠকরা হেপি এন্ডিং চান নাকি স্যাড এন্ডিং চান?]

চলবে,,,,,,
[প্লিজ সবাই সবার মতামত জানাবেন। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ❤❤]

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here