#ইট_পাটকেল
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_২৯
শুভ্র পাঞ্জাবি ছেড়ে সাদা টি-শার্ট পরে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েছে আশমিন।চুল থেকে টপটপ করে পানি পরছে। শরীরের থেকে তার মনের ক্লান্তি বেশি।নূর গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে।আধঘন্টা আগে স্যালাইন শেষ হয়েছে।এতক্ষণ সে নূরের হাত ধরেই বসে ছিল। নূরের দিকে তাকালে তার নিজেকে অপরাধী মনে হয়। মাথা ভালো করে মুছে টাওয়াল বেলকনিতে দিয়ে এলো আশমিন। নূরের দিকে নির্মিশেষে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। যতই দেখুক না কেন,চোখের তৃষ্ণা মেটে না।নূরের ফোলা পেটের দিকে তাকিয়ে হালকা ঢোক গিললো আশমিন।তাকে পুড়িয়ে ছাই করার অস্ত্র এই ছোট্ট পেটে লুকিয়ে আছে। এখনি সে নিজের করুণ পরিস্থিতি অনুভব করতে পারছে।মনে মনে চিৎকার করে উঠলো আশমিন।তার এতো পরিশ্রমের ফল নিয়ে নূর বাহাদুরি করবে ভাবতেই মুখটা শুকিয়ে গেলো। এক পুকুর কষ্ট নিয়ে নিজেকেই গালাগালি করতে লাগলো, কি দরকার ছিল এতো মেহনত করার? হলো তো এবার! বউ তোমার মেহনত দিয়েই তোমার থোতা মুখ ভোতা করে দিবে।খুশি?
আহ! কি দিন আসলো। এই দিন দেখার জন্য ই সে অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আশমিন ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো নূরের দিকে। হালকা ঝুকে পেটে কয়েকটা চুমু খেয়ে ফিসফিস করে বললো,
— মায়ের কথায় কান দেয়ার কোন দরকার নেই। তোমার বাবা খুব ভালো মানুষ। ফুলের মতো পবিত্র। বাবার পক্ষে থাকবে সবসময়। তাহলে চকলেট আইসক্রিম পাবে। এটা আমাদের গোপন ডিল।কাউকে বলবে না। ইটস ভেরি কনফিডেনসিয়াল।
আরেকটা চুমু খেয়ে বিজয়ী হাসি হাসলো আশমিন। ডিল করা শেষ। বউ টা ঝামেলা না পাকালেই হয়। এবার ঝামেলা মিটে গেলেই সে তওবা করে ফেলবে।এই জীবনে ডায়েরি নামক কোন বস্তু সে হাতে নিবে না।এতো বছরের গভীর সম্পর্ক থাকার পরেও বউয়ের কাছে ধরা খাইয়ে দিল। মীরজাফর।
নূরের পাশেই শুয়ে পরলো আশমিন।শরীর মন দুটো ই খুব ক্লান্ত। নূর কে বুকের সাথে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করলো। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়া জরুরি হয়ে গেছে।
রাত দশটায় পিটপিট করে চোখ খুললো নূর।মাথা টা ভার হয়ে আছে। কারো শক্ত বাহু বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আছে। কয়েক বার চোখের পাতা ঝাপটে ভালো করে তাকানোর চেষ্টা করলো নূর। হালকা ডিম লাইটের আলোতে আশমিনের মুখ দেখে ভ্রু কুচকে ফেললো। চারিদিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো সে কোথায় আছে। নূরের নড়াচড়ায় আশমিনের ঘুম ভেঙ্গে গেলো। নূর কে আরেকটু শক্ত করে জরিয়ে ধরে ঘুম জড়ানো গলায় বলল,
— মোচড়ামুচড়ি করছো কেন? আমি কি তোমাকে চিমটি দিয়েছি?
— আমি এখানে এলাম কিভাবে(ভ্রু কুচকে)
— তোমার একমাত্র বরের কোলে চেপে। তোমার বর টা যে কি রোমান্টিক না। আহা! ভাবতেই তো হিংসা হয়।
নূর আশমিনের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। আশমিন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উঠে বসলো।ইন্টারকম থেকে কল করে তাদের খাবার উপরে পাঠিয়ে দিতে বললো। এক কাপ কফি হলে ভালো হতো। মাথা টা ভার ভার লাগছে। বেড থেকে নেমে নিজের স্টাডি টেবিলের কাছে থাকা কফি মেকার থেকে কফি নিয়ে সোফায় বসতেই ওয়াশরুম থেকে নূর বেরিয়ে এলো। টাওয়ালে মুখ মুছতে মুছতে আশমিনের দিকে আড় চোখে তাকালো। আশমিন তার দিকেই তাকিয়ে আছে। নূর টাওয়াল নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো। আশমিন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে।
আকাশে মেঘের ছড়াছড়ি। কালো মেঘের ফাকে ফাকে বিদ্যুতের ঝলক মাঝে মাঝে পরিবেশ কে আলোকিত করে তুলছে। আশমিনের বারান্দা টা নূরের বারান্দার মতো। বারান্দার পাশেই সুইমিংপুল। ছোট বেলায় বাবার সাথে এখানে কতো সাতার কেটেছে নূর।রাফসান শিকদার নিজে তাকে সাতার শিখিয়েছে। বাবার কথা মনে হতেই চোখ থেকে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পরলো।
— ভিতরে এসো নূর।খেতে হবে তোমার।মেডিসিন আছে।
রুম থেকে আশমিন ডাকছে। নূর নিজেকে সামলে ভিতরে গেলো। আশমিন টেবিলে খাবার সাজিয়ে ফেলেছে।
নূর মুচকি হেসে চেয়ার টেনে বসে পরলো। ব্যাঙ্গাত্মক গলায় বলল,
— এতো আদর করে খাবার খাওয়াচ্ছেন যে বড়।বিষ টিস মিশিয়ে দিন নি তো আবার?
আশমিনের হাত থেমে গেলো। শান্ত চোখে কয়েক মুহুর্ত তাকিয়ে রইলো নূরের দিকে। নূর খাওয়া শুরু করে দিয়েছে ততক্ষণে। আশমিনের বুক ভাড় হয়ে এলো। এতো অবিশ্বাস! হওয়ারই কথা। বিশ্বাস করার মতো কিছু করেনি সে।
— আমার বাবা কে কেন মারলেন মন্ত্রী সাহেব?
আশমিন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে। নূর নিজের মতো খেয়ে যাচ্ছে। আশমিন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
— দরকার ছিল।সে আমার বাবার খু*নি।আমি সহ্য করতে পারিনি নূর। তাকে মারতেই আমি বাংলাদেশ এসেছিলাম। রাজনীতি তে জরিয়ে যাওয়া আমার পূর্ব পরিকল্পনা ছিল। ঠিক ভুল বিচার করার অবস্থায় ছিলাম না নূর।বিশ্বাস করো আমাকে।
আশমিনের কাতর গলা শুনে হাসলো নূর। ঘাড় নেড়ে কয়েক বিশ্বাস শব্দটা কে আওরালো।
— আপনি কি বিশ্বাসের যোগ্য মন্ত্রী সাহেব? আপনার পুরো পরিবার বিষাক্ত সাপের মতো। যত্ন করে বুকে আগলে রাখলেও বুকে কামড়ে দিতে এক বার ও ভাবে না। তা আমাকে কবে মারবেন? আমি ই তো এই পরিবারের শেষ সদস্য। একজনের মৃত্যুর বদলা কতোবার নিলেন মন্ত্রী সাহেব। আমার মা কে মারলেন।আমাকে অত্যাচার করলেন। ভালবাসার অভিনন্দন করলেন।আমার বাবা কে মারলেন। আচ্ছা আমি যদি প্রতিশোধ নিতে যাই তখন কি হবে মন্ত্রী সাহেব?
আশমিন অনুভূতিহীন চোখে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে। নূর নিজের খাওয়া শেষ করে উঠে গেলো। আশমিন থম মেরে বসে আছে। সে তো এটা ও বলতে পারবে না যে রাগের বসে সে রাফসান শিকদার কে খু*ন করেছে।সে যা করেছে সব ঠান্ডা মাথায় করেছে। তবে নূর কে সে ভালবেসেই বিয়ে করেছে।সেখানে বিন্দুমাত্র অভিনয় ছিল না। আশমিন জানতো না কামিনী চৌধুরী নূরের মা কে খু*ন করেছে।নূরের উপর হওয়া অত্যাচার সম্পর্কে ও তার কোন ধারণা ছিল না।এসব কিছু সে নূর চলে যাওয়ার পরে জেনেছে। কিন্তু তখন আর তার হাতে কিছুই করার ছিল না।
নূর নিজের ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে।আশমিন আগের মতোই খাবার সামনে বসে আছে। একবার ও খাবার মুখে দেয়নি সে। আশমিন ধীর পায়ে উঠে স্টাডি টেবিলের প্রয়াত থেকে নিজের গান বের করলো। এলোমেলো পায়ে এসে নূরের দিকে গান এগিয়ে ফিয়ে ধীর গলায় বলল,
— তুমি ও তোমার বাবার খু*নি কে মেরে ফেলো নূর। নিজের প্রতিশোধ নিয়ে নাও।
নূর শব্দ করে হেসে ফেললো। আশমিনের হাত থেকে গান নিয়ে তার মুখোমুখি দাড়ালো।
— মারবো কেন মন্ত্রী সাহেব? আমি তো আপনাকে বাচিয়ে রাখবো। বলেছিলাম না,আমাকে ধোকা দিলে আমি আপনাকে পৃথিবীতেই জাহান্নাম ঘুরিয়ে আনবো। আমি তো আপনাকে ভালবাসি বলেন। ভালবাসার মানুষ কে মে*রে ফেলা যায় বুঝি?
আশমিন স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো। যাক, এ যাত্রায় বেচে গেছে।তবে বাঘিনী যে মনে মনে কোন ভয়ংকর ছক কষছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। দোষ না করেও সব দোষ নিজের ঘাড়ে নিতে হচ্ছে । ম আর মাত্র কয়েকটা মাস।একবার নূরের মায়ের সঠিক ঠিকানা জানতে পারলে কামিনী চৌধুরী কে কবরে বসে বরের সাথে লুডু খেলার ব্যবস্থা করে দিবে। জ্বালিয়ে খেলো।
আশমিন নিজের জান হাতে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। তার সন্তান পৃথিবীতে আসার আগেই সব ঠিক করতে হবে। নূর কে এসবে জরানো যাবে না কোনভাবেই। কামিনী চৌধুরী কে বোঝাতে হবে সব কিছু তার প্ল্যান মতো ই হচ্ছে।
দরজার সামনে আশমিন কে চিন্তিত মুখে দাড়িয়ে থাকতে দেখে আমজাদ চৌধুরী কপাল কুচকে ফেললো।
— রুম থেকে বের করে দিয়েছে?(ভ্রু কুচকে)
— আমি তোমার একটা বউ কে খু*ন করতে চাইছি।তাই আগে ভাগেই আরেকটার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। বউয়ের মতো আমার হাড় না জ্বালিয়ে বলে দাও মামুনি কে তোমার বউ কোথায় আটকে রেখেছে?
আমজাদ চৌধুরী আকাশ থেকে পরলো।অবাক গলায় বলল,
— নূরের মা বেচে আছে?
— একদম ঢঙ করবে না। সব জানো তুমি। ব্ল্যাকমেইল করে আমাকে নূর থেকে দূরে সরিয়ে দেয়েছে। এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বউয়ের কাছে অপরাধীর মতো দাড়াতে হচ্ছে। মেন্টাল স্ট্রেস নিতে নিতে যদি আমার বউয়ের কিছু হয় তাহলে তোমার বউ কে আমি ভয়ংকর মৃ*ত্যু দিবো। সে মা কেন মানুষ হওয়ার ও যোগ্য নয়।মেন্টালি সিক সে। মামা কে সে নিজের হাতে মেরেছে আব্বু। তার পরেও কেন এতো ষড়যন্ত্র? আমাদের কে একটু শান্তি তে বাচতে কেন দিচ্ছে না? তার পার্টনার কে সহ তাকে জ্যান্ত যদি না জ্বালিয়েছি আমার নাম ও আশমিন জায়িন চৌধুরী না।
আমজাদ চৌধুরীর মন টা কামিনী চৌধুরীর প্রতি বিষাক্ত অনুভূতি তে ভরে গেলো। কামিনী কি পারতো না সব ভুলে তাকে নিয়ে সুখের একটা সংসার সাজাতে। রাফসান শিকদার কে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে দিলে আজ এই দিন দেখতে হতো না। সব কিছু বিষিয়ে দিয়েছে সে।
গার্ড ছাড়া গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরেছে আশমিন।সেবার কানাডা গিয়ে তন্নতন্ন করে খুজেছে নূরের মা নাফিজা শিকদার কে। ফলাফল শূন্য। কামিনী চৌধুরীর উপর বাজ পাখির মতো নজর রেখেছে সে।আশিয়ান ডুবাই গিয়ে বসে আছে। এই বজ্জাত কে হাতে পেলে আস্তো রাখবেনা সে।সানভি বিরস মুখে বসে আছে আশমিনের পাশে।আশমিন কে বের হতে দেখে সে ও পিছু নিয়েছে।
— শোন সান,বিয়ে করলেই হুট করে বাবা হওয়ার চিন্তা মাথায় আনবে না।এটা একটা ভুল সিদ্ধান্ত।সব সময় পরিশ্রম সৌভাগ্যের চাবিকাঠি হয় না। কখনো কখনো বাশ ও হয়ে যায়। ইউ শুড ইউজড প্রোটেকশন। আমি বিয়ের আগেই তোমাকে দিয়ে দিবো। আচ্ছা বাদ দাও।তোমার বিয়ে ই করার দরকার নেই। বুঝেছো?
সানভি দুঃখী দুঃখী চেহারা করে মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো। এমনি চলতে থাকলে তার বিয়ে করার স্বাদ এমনিতেই মিটে যাবে।
#ইট_পাটকেল
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_৩০
মিনিস্টার আশমিন জায়িন চৌধুরীর স্ত্রী কে কিডন্যাপ করা হয়েছে। আজ সকালে অফিসে আসার সময় তার গাড়ি থেকে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে মিনিস্টার আশমিন জায়িন চৌধুরীর স্ত্রী সনামধন্য সিঙ্গার তেহজিব নূর কে জোর করে কিছু লোক গাড়ি থেকে বের করে তাদের গাড়ি তে তুলে নিয়ে গেছে।তেহজিব নূরের সাথে তার পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট লুবানা জান্নাত ও ছিল।বাধা দেওয়ায় তাকে আঘাত করে আততায়ীরা।
সানভি অস্থির হয়ে পায়চারি করে সব জায়গায় কল করে যাচ্ছে। ভয়ে তার আত্মা লাফিয়ে বাইরে আসার অবস্থা। কয়েকদিন যাবত আশমিনের কাছে হুমকির কল আসছিলো। নারী পাচারকারীরা হুমকি দিচ্ছিলো তাকে আশমিন কে।আশমিন খুব শান্ত গলায় তাদের বলেছিল,
— বাচ্চাদের এতো দুষ্টুমি করতে হয় না। আংকেল রাগলে কিন্তু কান মলা দিবো। ভালো বাচ্চারা এসব করে? কালকে গিয়ে শিশু ক্লাসে ভর্তি হয়ে যাবে।বাচ্চা কাচ্চা হুমকি দিচ্ছে। দেশটা রসাতলে গেলো।
আশমিন ফোন কেটে আবার নিজের কাজে মন দিয়েছে।সানভি এখন বুঝতে পারছে তার স্যার মস্তো বড় ভুল করেছে।
সানভি অস্থির হয়ে আশমিনের দিকে তাকালো। সে এখন ফোনে এঞ্জেলো গেম খেলতে ব্যস্ত।দুই দিন আগে আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করে জেনেছে তার দুই টা রাজকুমারী হবে।উত্তেজনায় ডাক্তার কে জরিয়ে ধরেছিলো সে।হুস ফিরতেই তাকে ছেড়ে দিতে মিনমিন করে নূরের দিকে তাকাতেই দেখে নূর তার দিকেই কটমট করে তাকিয়ে আছে। কারন ডাক্তার ছিল একজন ইয়াং মেয়ে। আশমিন নূরের ভয়ংকর দৃষ্টি দেখে কাচুমাচু করে বললো,
— স্লিপ অফ জরাজরি বউ।আমি তো তোমাকে জরিয়ে ধরতে চেয়েছিলাম।মাঝখানে এ চলে এসেছে।আমার ছোট বোনের মতো। আজ থেকে এ তোমার ননদ। ননদের সাথে ভাব করো। আমি বাইরে আছি।
কথাগুলো বলেই হুড়মুড় করে বেরিয়ে গিয়েছিল আশমিন।সেদিন থেকেই সে এঞ্জেলা খেলা শুরু করেছে। তাদের খাওয়া, গোসল, সাজগোছ সব শিখে ফেলছে।আশমিন একশ পার্সেন্ট শিউর নূর তাকে দিয়েই বাচ্চাদের ডায়পার চেঞ্জ করাবে।
সানভি করুন গলায় বলল,
— স্যার,, পুলিশের আশায় বসে না থেকে আমরা নিজেরাই খুজলে ভালো হবে।এভাবে বসে থাকলে ওরা যদি ম্যামের কোন ক্ষতি করে ফেলে।
সানভির ভয়ার্ত গলা শুনে মুখ কুচকে ফেললো আশমিন। মনে হলো কেউ তাকে এক গ্লাস নিম পাতার রস খায়িয়ে দিয়েছে।
— তুমি একপাক্ষিক কথা বলছো সান।তোমার ম্যামের জন্য চিন্তা না করে ওই অসহায় ভোলা ভালা সন্ত্রাসী গুলোর কথা চিন্তা করো।তার জন্যই আজকে তাদের প্রাণ যাবে।এমন চলতে থাকলে আগামী নির্বাচনে আমি ভোট পাবো? বউয়ের জন্য কতগুলো ভোট হারালাম। সন্ত্রাসীদের ও একটা করে এন আই ডি কার্ড আছে। তারা দেশের জনগণ। এমন করলে জনগণ আমাদের পাশে থাকবে?
সানভি চোয়াল ঝুলিয়ে না বোধক মাথা নাড়লো। আশমিন নিজের চেয়ার ছেড়ে ওঠে পাঞ্জাবির পকেটে ফোন রাখতে রাখতে বললো,
— চলো বউ খুজতে যাই। না জানি বেচারা সন্ত্রাসীরা কোন হালে আছে।(দুঃখী গলায়)
সানভি আহত চোখে তাকিয়ে রইলো আশমিনের দিকে। এই চাকরি ই একদিন তার প্রাণ নিবে।এতো অনাচার চোখে দেখা যায় না।
আশমিন কে বের হতে দেখে রিসিপশন থেকে ছুটে এলো লুবানা।মাথায় ব্যন্ডেজ করা হয়েছে। আশমিন কে অনুরোধ করে বললো,
— আমাকে ও সাথে নিয়ে চলুন স্যার।এভাবে বসে থেকে চিন্তা করতে করতে আমি বোধহয় পঙ্গু হয়ে যাবো।
সানভির কপাল কুচকে গেলো। সে বিরক্ত গলায় বলল,
— চিন্তা করতে করতে কেউ পঙ্গু হয় না সাবানা।ঝামেলা না করে চুপচাপ এখানে বসে থাকো।আমরা দরকারী কাজে যাচ্ছি। পিকনিকে যাচ্ছি না যে তোমাকে নিয়ে নাগরদোলায় চড়াবো।
লুবানা তেতে গেলো। তাকে আবারো সাবানা বলেছে এই লোক।তার কি সাবানার মতো সেলাই মেশিন আছে? নাকি সে সারাদিন কান্নাকাটি করে? আজব!
আশমিন এই ফাকে আরেক রাউন্ড এঞ্জেলা খেলায় মন দিলো। হাতে আরো কিছু সময় আছে।এই ফাকে গোসল করানো টা শিখে ফেলা যাবে।
— জরুরি কাজে আপনাকে কি দরকার মি.সরকারি হাসপাতালের মর্গে সুয়ে থাকা অর্ধেক পচা লাশ।মুখ বন্ধ রাখুন।নইলে আপনার কংকাল মেডিক্যাল এ দান করে দিবো। তখন ঝুলে থাইকেন আজীবন।
ওদের তর্কের মাঝেই মেসেজ পেয়ে বেরিয়ে গেছে আশমিন। তার লোকের নূর কে ট্রেস করে ফেলেছে। পুরো জায়গা ঘেরাও করে আশমিনের জন্য অপেক্ষা করছে।
সানভি ও ছুটছে আশমিনের পিছনে। হুড়মুড় করে গাড়িতে উঠতেই লুবানা ও তার সাথে এসে উঠলো। সানভি কিছু বলবে তার আগেই তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
— একদম জ্ঞান দিতে আসবেন না।ম্যাম কি হালে আছে কে জানে।আমি গেলে তাকে সামলে নিতে পারবো।চুপচাপ গাড়ি চালান।
আশমিন কড়া চোখে তাকাতেই সানভি গাড়ি স্টার্ট দিলো।তাদের গন্তব্য এখান থেকে দুই ঘন্টার পথ।অমি ওখানেই আছে।
এতক্ষণ নির্লিপ্ত থাকা আশমিনের কপালে ঘাম দেখে অবাক হলো লুবানা।তবে আশমিনের চেহারা শান্ত।চোখে ও কোন অস্থিরতার ছাপ নেই। হাত শক্ত মুষ্টিবদ্ধ করে বসে আছে। সমান সর্বচ্চো স্পিডে গাড়ী চালাচ্ছে।
এতো এতো ঝামেলা আর ভালো লাগে না। মাঝে মাঝে হিমালয়ের গুহায় গিয়ে বসে থাকতে ইচ্ছে হয়।নেহাৎ ই তার টনসিল ফুলে যায় বলে যেতে পারছে না। আজকের ঝামেলা শেষ হলেই সে কুকুর খুজতে বের হবে। কোন পাগলা কুকুরের কামড় খেয়ে এই চাকরি তে এসেছিল তাকে খুজে বের করা দরকার। তার কাছে জবাব চাইতে হবে, সে তার কি ক্ষতি করেছিলো? এর একটা হেস্তনেস্ত হওয়ার দরকার।
সানভির ভাবনায় ছেদ পরল আশমিনের ডাকে।
— এখানেই গাড়ি থামাও সান।
গাড়ি থামতেই আশমিন নেমে গেলো। পাঞ্জাবি খুলে একটা সাদা শার্ট পরে তার জন্য রাখা বাইক নিয়ে মুহুর্তের মধ্যে হাওয়া হয়ে গেলো। সানভি আর লুবানা হা করে তাকিয়ে রইলো সেদিকে। এতো এতো ঝগড়া বৃথা করে আশমিন তাদের না নিয়েই চলে গেছে। সানভির চোখ ফেটে কান্না এলো। আশমিন তাকে ছাড়া চলে গেছে ভাবতেই বউ মরে যাওয়ার ফিলিং হলো।
— দেখলে সাবানা!স্যার আমাকে না নিয়েই চলে গেলো। এখন আমি কি করবো?
— আসেন গলাগলি ধরে কাদি।(বিরক্ত হয়ে)
সানভি নিজেকে সামলে নিলো। এই মেয়ের সামনে কেদে ভাসালে তার আর ইজ্জত থাকবে না। এই মেয়ে তার ইজ্জত লুটে নিবে।
আধঘন্টার মধ্যেই আশমিন তার গন্তব্যে পৌঁছে গেলো।একটা ভাঙাচোরা পুরোনো বাড়ি। কপাল কুচকে তাকিয়ে পর্যবেক্ষণ করলো পুরোটা। আশমিন কে দেখে অমি দৌড়ে এলো তার কাছে।
আশমিন বিরক্ত গলায় বলল,
— ভিতরে কয়জন আছে?
— বিশ জন আছে স্যার।
— আমার বউয়ের কি অবস্থা?
— চেয়ারে বেধে রেখেছে (ভয়ে ভয়ে)
— তাই! ভিতরে গিয়ে সব কটা কে বেধে ফেলো তো অমি।আমার প্রেম পাচ্ছে। বউয়ের সাথে কিছুক্ষণ সুখ দুঃখের গল্প করবো।কেউ যাতে ডিস্টার্ব না করে।
অমি বিরস মুখে তাকিয়ে রইলো আশমিনের দিকে। মনে মনে তার ছেড়া বলতেও ভুললো না।
অমিরা ভিতরে ঢোকার কয়েক মুহুর্ত পরেই গোলা*গু*লি শুরু হলো। আশমিন শান্ত চোখে একবার তাকিয়ে নিজের গা*ন বের করে এগিয়ে গেলো। তাকে কেউ সিরিয়াসলি নিচ্ছে না!
সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করেছে তাদের উপর। আটঘাট বেধেই নেমেছে তারা। আশমিনের কয়েকজন লোক খুব বাজে ভাবে আহত হয়েছে। বাহাদুরের বা হাতে গু*লি লেগেছে। তবুও সে থেমে নেই। অমি সব জায়গায় নূর কে খুজে যাচ্ছে। নূর কে না দেখে তার কলিজা শুকিয়ে গিয়েছে।বোনের চিন্তায় মাথা খারাপ হওয়ার অবস্থা। আশমিন কয়েক পলক গো*লা*গু*লি দেখে অলস হাই তুললো। হাই তুলতে তুলতেই কয়েকজনের মাথায় শুট করে দিয়েছে সে। ব*ন্দুক পকেটে রেখে আয়েশ করে বসলো সে। তার লোকেরা পরিস্থিতি নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে এসেছে। অমি এসে ভয়ার্ত গলায় বলল,
— ম্যাম কে কোথাও পাচ্ছি না স্যার।
আশমিন চোখ তুলে তাকালো অমির দিকে। রক্তিম চোখে চারিদিকে চোখ বুলিয়ে চোখ বন্ধ করে মাথা এলিয়ে দিলো চেয়ারের উপর। চোখ বন্ধ করেই হুংকার দিয়ে বললো,
— আমার বউ কোথায়?
আশমিনের হুংকারে সন্ত্রাসীদের সাথে সাথে অমি আর তার লোকেরা ও কেপে উঠলো। আশমিনের রক্তিম মুখের দিকে তাকিয়ে সবার প্রাণ যায় যায় অবস্থা। একজন কাপা কাপা হাতে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে একটা বস্তা দেখিয়ে দিলো।অমি এক মিনিট হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে দৌড়ে গিয়ে বস্তা থেকে নূর কে বের করলো। তার হৃদস্পন্দন থেমে গেছে।নূরের কপাল থেকে চুয়িয়ে চুয়িয়ে রক্ত পরছে।অমির মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। নূর কে বুকের সাথে আগলে ধরে বোবার মতো তাকিয়ে রইলো আশমিনের দিকে। আশমিন সেদিকে একবার তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো। হিংস্র বাঘের মতো সবার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বললো,
— ওকে কে আঘাত করেছে? নাম বল।নাহলে সব কয়টা কে আজ কিমা বানিয়ে ফেলবো।হাড় ও খুজে পাবে না কেউ।
সবাই ভয়ে কাপতে লাগলো। আশমিনের হিংস্র রুপ দেখে বাহাদুর নিজেও কাপছে।
সবাই তাদের লিডার কে দেখিয়ে দিলো।আশমিন সাথে সাথে নির্মম ভাবে মারতে লাগলো তাকে।একটা একটা করে সব গুলো হাড় ভেঙে আবার গিয়ে নিজের জায়গায় বসে পরলো। লোকটা নড়াচড়া করছে না। আশমিন বজ্র কন্ঠে বললো,
— এখনই মরবি না।আমার মারা শেষ হয় নি।আম টেকিং রেস্ট।মরে গেলে হাড়গোড় একটা ও আস্তো রাখবো না।
বাকি সন্ত্রাসীদের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বললো,
— ওরে জাগা।নাইলে তোদের অবস্থা এর চেয়েও খারাপ করে দিবো।আমার বউ রে বস্তায় ভরা! ভাবলাম বউরে এসে বাধা দেখবো।সেই সুযোগে টপাটপ কয়েকটা চুমু খেয়ে ফেলবো। অথচ তোরা আমার বউয়ের কপাল ফাটিয়ে বস্তায় ভরে রাখিস।
বাহাদুরররর,,ডাক্তার কই।আমার বউরে তারাতাড়ি চেকআপ করতে বল।বউয়ের যদি কিছু হয়, তোদের সবাইকে কবরে পাঠিয়ে দিবো।
চলবে,,,
(।)
—