🚫কঠোর ভাবে ১৮+ এলার্ট❌
প্রিয় বন্ধু মিত্রকে তার প্রিয় প্রেমিকার সাথে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে খুশিতে আত্মহারা চার বন্ধু শাহাদ, রিবু, রিদান আর কবির। কিন্তু এই খুশি তাদের বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। রেল স্টেশন থেকে বেরিয়ে তারা নিজেদের বাড়ি পৌঁছিয়ে একটা দিনও বিশ্রাম করতে পারলো না। মধ্য রাতে প্রত্যেককে তাদের বাড়ি থেকে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছিল। শাহাদ, রিবু ছিল শাহাদদের মেসে। এবং রিদান ও কবিরকে উঠিয়ে নেওয়া হয় তাদের নিজ নিজ বাড়ি থেকে। প্রত্যেকের বয়সই আঠারো-উনিশের এপাড় কিংবা ওপাড়। সদ্য দেখা দিয়েছে গোঁফের রেখা, মুখে গালে খসখসে ভাব। ছিমছাম দেহটা ছেড়ে বুক-পিঠ চওড়া হওয়া শুরু করেছে কয়েকদিন হলো। তাদের নিয়ে গেছে পুলিশ। সারারাত কেটেছে পুলিশ স্টেশন। সাথে তো মারধর ছিলোই। পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার একটাই কারণ- পালিয়ে যাওয়া বন্ধু মিত্রের বাড়ির মানুষ ছিল প্রচুর ধনী। তাদের সাথে ক্ষমতায় কেউ-ই নেই। অপরদিকে ওরা চারজনই মধ্যবিত্ত পরিবারের। শাহাদের বাবার নিজেদের গ্রামেই পানের ব্যবসা, রিদানের বাবার কাপড়ের দোকান, কবিরের বাবার আছে একটি নার্সারী এবং রিবুর বাবা-মা দু’জনই গ্রামে থাকে। ওর বাবা প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক। সাদামাটা সহজ সরল জীবন। পড়াশোনার তাগিদেই শহরে আসা রিবু এবং শাহাদের। তবে শাহাদের গ্রাম একটু উন্নত হলেও রিবু ওঠে এসেছে পিছিয়ে পড়া এক অজপাঁড়া গ্রাম থেকে। বর্তমানে তারা পড়ছেও শহরের বেশ বিখ্যাত এক কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে। দারুণ মেধাবী ছিল চারজন। সুন্দর গোছানো জীবনই ছিল। কিন্তু বন্ধুকে পালাতে সাহায্য করার ঘটনা’ই তাদের জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায়।
পুলিশ স্টেশনের ভেতর অমানবিক নির্যাতনের স্বীকার হয় চার বন্ধু। নির্মম মারধরে সদ্য যুবক হওয়া দেহ গুলো প্রায় নেতিয়ে আসে। অতঃপর রিদান ও কবিরের বাবার সাহায্যে এক রাতের অমানবিক মারধরের পর ছেলেগুলো ছাড় পায়। তাদের থেকে বারাংবার মিত্র কোথায় গিয়েছে জানতে চাওয়া হয় কিন্তু তারা সঠিক ঠিকানা দিতে পারে না। তারা কেবল জানায় মিত্রদেরকে তারা রাজশাহীর ট্রেনে উঠিয়ে দিয়েছিল। এরপর রাজশাহীর কোন জায়গায় মিত্ররা অবস্থান করবে এগুলো অজানাই তাদের। মিত্রের বাবা আশানুরূপ ফল না পেয়ে নিজেই নির্দেশ দিলেন ছেলে গুলোকে ছেড়ে দেওয়ার।
ক্লান্ত, অসুস্থ দেহ গুলোকে নিয়ে তারা পৌঁছে যায় নিজেদের জায়গায়। তারপর ছেলেগুলোর অবস্থার অবনতি ঘটে। শাহাদ সুস্থ হওয়ার জন্য চলে যায় নিজেদের গ্রামে, রিবুও যায় নিজেদের গ্রামে আর কবির ও রিদানের সেবাযত্ন চলে নিজেদের বাড়িতে।
প্রায় সপ্তাহ খানেক পর মোটামুটি সকলেই সুস্থ হয়ে একত্রিত হয় কলেজ ক্যাম্পাসে। রিবু বরাবরের মতনই চোখের সামনে বই নিয়ে বসে আছে, মোটা ফ্রেমের চশমা চোখে। তার পাশে বসেই শাহাদ, রিদান ও কবির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হাসাহাসি করছে। রিবু প্রায় বিরক্ত হয়েই বলল,
“তোরা একটু চুপ থাক, কত পড়া জমেছে দেখেছিস? হয় পড় নাহয় আমাকে পড়তে দে।”
“এত পড়ে কী হবে, মামা? সেই তো মিত্রের মতন পালিয়ে যেতেই হবে কোনো সুন্দরীর হাত ধরে।”
রিদানের কথায় আবার বন্ধুদের মাঝে হাসির রোল পরলো। রিবু বিরক্ত হয়ে ওঠে দাঁড়াল। নিজের কাঁধের ব্যাগটা থেকে একটা টিফিনবক্স বের করে ওদের হাতে দিয়ে মিনমিন করে বলল,
“আপাতত টিফিনটা খা, তবুও মাথা খাচ্ছিস কেন? ধর, তোদের পছন্দের খিচুড়ি, মা রান্না করে দিয়েছেন।”
রিবু বলতে দেরি অথচ ওর হাত থেকে খাবার ছিনিয়ে নিতে দেরি করল না রিদান। সাথে যোগ দিল কবিরও। খাবারের কৌটাখানি খুলে বিরাট এক শ্বাস টেনে বলল,
“আহা! আন্টির হাতের রান্না কতদিন পর! আন্টি এসেছে?”
রিবু উপর-নীচ মাথা নাড়িয়ে বলল,
“হ্যাঁ, একসাথেই তো এলাম। প্রায়ই তো মা এসে থাকে জানিসই।”
রিদান, কবির কথায় তেমন আর ধ্যান দিল না, হামলে পড়লো খাবারের উপর। শাহাদ বরাবরই সব থেকে ঠান্ডা প্রকৃতির। তাই ছিনিয়ে নেওয়া, হামলে পড়া ব্যাপার গুলোতে সে থাকেনা। কিন্তু রিবুর মায়ের হাতের রান্না তার বেশ পছন্দের। তাই লজ্জা লজ্জা কণ্ঠে বলল,
“আমাকেও একটু দিও আন্টির হাতের রান্না। আমিও খাব।”
শাহাদের এমন আবদারে হেসে কুটিকুটি বাকি বন্ধুরা। রিবু শাহাদের পিঠে ছোটো চাপড় মেরে বলল,
“গিয়ে ছিনিয়ে খা, বেডা। ওরা তোকে দিবে না। রা ক্ষ স একেকটা।”
রিদান আর কবির হাসলো। শাহাদের পিঠে দুম করে কিল বসিয়ে কবির বলল,
“নে খা, আন্টির খাবারের উপর সকলের অধিকার আছে।”
শাহাদ লাজুক হাসলো, তার চোখের চশমাটা আলগোছে ত্বকের সাথে আঁটসাঁট করে খাবার মুখে দিলে, বেশ কয়েক লোকমা খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে তুলতে বলল,
“আজকের রান্নাটা একটু ভিন্ন স্বাদ হয়েছে। আন্টির অন্যান্য দিনের রান্নার মতন হয়নি। আন্টি থাকতে থাকতে একদিন বাসায় গিয়ে পেট ভরে খেয়ে আসবো, কেমন?”
রিবু হাসলো, মিষ্টি কণ্ঠে উত্তর দিল,
“অবশ্যই যাবি। নো সমস্যা।”
চার বন্ধু আবার হাসি ঠাট্টাতে মেতে উঠল। তাদের হাসি ঠাট্টার মাঝেই রিদান লুকিয়ে নিজের ফোনটা বের করল। প্রায় ফিসফিসিয়ে বলল,
“মামারা, নতুন জিনিস আসছে, দেখবি?”
রিদানের মুখে দুষ্টু হাসি। কবিরের মুখেও বিশ্বজয় করা হাসি। শাহাদ একটু বাঁধা দিল,
“রিদান, ক্লাসে যদি টিচার এসে পরে তাহলে কিন্তু সমস্যা হবে। তোমার ফোনটা যাবে।”
রিদান যেন পরোয়া করল না সেসব। ক্লাশের শেষ বেঞ্চে বসে মোবাইলে আগ্রহ নিয়ে অন করল এডাল্ট ভিডিও। রিবুও এবার অস্বস্তিকর কণ্ঠে বলল,
“আমি এসব দেখবো না, তোরা দেখ। কীসব বিরক্তিকর জিনিস।”
কথাটা বলেই রিবু ওদের পাশ থেকে ওঠে গেল। রিদান দুষ্ট হাসি দিয়ে ফোনে মনযোগ দিয়ে বলল,
“আমাদের গ্রুপেও ফরওয়ার্ড করে দিয়েছি। মেসেঞ্জারে ঢুকে যখন ইচ্ছে দেখে নিস। তুই যে আমাদের সামনে না দেখলেও পরে ঠিকই দেখবি তা আমার জানা, মামা। তুমি হইলা গভীর জলের মাছ। যা, শা লা।”
রিবু হাতের বইটা দিয়ে রিদানের মাথায় একটা বারি দিয়ে ওঠে সামনের বেঞ্চে চলে গেল। তার সহজ-সরল জীবনে এগুলো নিত্য নতুন ঘটনা না।
২.
বিকেল হলেই চার বন্ধুর আবার সাক্ষাৎকার ঘটে। একসাথে কোচিং করে তারপর আধাঘন্টা চলে আড্ডা। সেই মোতাবেক তারা রাস্তার টং দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছে আর আড্ডা দিচ্ছে আজও। তাদের আড্ডার মাঝে উপস্থিত হয় একটি মেয়ে। সুন্দর, সুশ্রী এই কিশোরীকে দেখেই তাদের হাসি হাসি আড্ডায় ভর করে বিস্ময়। মেয়েটা সোজা এসেই শাহাদকে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“ভাইয়া কবে ফিরবে?”
শাহাদের হাতে চায়ের কাপ। সে বন্ধুর বিস্মিত দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে লাজুক লাজুক কণ্ঠে বলল,
“আমি কীভাবে জানবো মৃণী! ও তো যাওয়ার পর আর যোগাযোগ করেনি আমাদের সাথে।”
তিন বন্ধুর এতক্ষণে বুঝতে বাকি রইল না এই মেয়ে কে। নিশ্চয় মিত্রের বোন। কিন্তু প্রশ্ন হলো শাহাদকে ও চিনলো কীভাবে! আর খুব অকপটেই তো সম্বোধন করে কথা বলছে, তার মানে নতুন চেনা নয়। মেয়েটা হাসতে হাসতে বেশ খানিকক্ষণ কথা বলে বিদায় নিয়ে চলে গেল। তার ভাব হাবে বুঝাই গেল যে নিজের ভাইয়ের কথা জিজ্ঞেস করতে আসাটা তার অজুহাত মাত্র, উদ্দেশ্য তো ছিল অন্যকিছু।
তিনজনের সন্দিহান দৃষ্টি তখন শাহাদের দিকে। শাহাদের মাথা নত। বরাবরের মতনই রিদান গিয়ে চাপড় মারল শাহাদের পিঠে, সন্দিহান কণ্ঠে বলল,
“কী মামা? তুমি তো তলে তলে তালতলা চলে গিয়েছ। কাহিনী কী? যেখানে আমরা মিত্রের বোনকে চিনিই না সেখানে তুই এত ভাব করে ফেলেছিস? ঘটনা কী?”
“তোমরা যা ভাবছো তেমন কিছুই না। কয়েকমাস আগে মিত্রের সাথে একদিন ওর বোনসহ দেখা হয়েছিল সেখানেই পরিচয়। মাঝে মধ্যে টুকটাক কথা হয়। এ-ই যা।”
“মেয়েটা কিন্তু হেব্বি, মামা। ওর ভাই শালাটা না পালিয়ে গেলে ওর বাপের কাছে আমরা খারাপ হতাম না তখন মেয়েটার সাথে একটা লাইন করা যেত। কিন্তু উফ ভাই, এই ভদ্রলোকের জন্য কী মারটাই না খেলাম। আর এদিকে শালার মিত্রকে দেখ, সেই যে গেল আর কোনো যোগাযোগ করল না অব্দি। ও আসুক ঢাকা। ওর বাপ যেমনে মারছে আমাদের তার কিছু হলেও ফেরত দিবো।”
কবিরের কথায় তাল মেলালো রিদান, “একদম ঠিক। এখনো কী ব্যাথা পাই বন্ধু। কিন্তু বেশি মারধর করেনি বলে বল হাত পা সাথে আছে, নাহয় কী হতো বল? পঙ্গু হয়ে ঘরে পরে থাকতাম। শোন শাহু, এই মাইয়ার সাথে এত কথা বলতে যাইস না, পরে দেখবি আবার নতুন করে কেইস খেয়ে গিয়েছিস। এদের জল্লাদ পরিবার।”
শাহাদ কেবল মাথা ঝুলালো বন্ধুদের কথায়। কোনো প্রতিবাদ কিংবা প্রতিত্তোর করল না। তারপর সন্ধ্যার আজান দিতেই যে যার যার মতন চলে গেল নিজ ঠিকানায়। পরে রইল কেবল চায়ের খালি কাপ।
৩.
রিদান ঘুমিয়ে আছে নিজের ঘরে। প্রকৃতিতে ভোর হয়েছে মাত্র। মিহি স্বরে ডাকছে কোকিল। চারপাশে সবে আলো ফুটেছে। ঠিক এ সময়ে নিজের শরীরে বেশ ধাক্কা অনুভব করে সে। বার বার ধাক্কা দিয়ে তাকে কেউ ঘুম থেকে তুলতে চাচ্ছে। রিদানের গাঢ় ঘুম হালকা হয়ে আসে, পিটপিট করে চোখ মেলতেই নিজের মায়ের ঘুম ঘুম মুখমন্ডলটা চোখের সামনে স্পষ্ট হয়। রিদান কপাল কুঁচকায়, বিরক্ত কণ্ঠে শুধায়,
“কী সমস্যা, আম্মু? এত সকালে ডাকছ কেন?”
শিউলি বেগমের কণ্ঠেও বিরক্তি। তিনি তার হাতের মাঝারি আকারের বক্সটা রিদানের পড়ার টেবিলের উপর সশব্দে রেখে বিরক্ত কণ্ঠে বলল,
“এত ভোরে তোর পার্সেল এসেছে। এ আবার কেমন পার্সেল হ্যাঁ? এত সকালে কেউ পার্সেল পাঠায়? যত্তসব।”
রিদানের ঘুম ছুটে যায়। তার তো পার্সেল আসার কথা না তাও আবার এত ভোরে! কে পাঠালো পার্সেল! কৌতূহলী চিত্ত নিয়ে সে বিছানা ছেড়ে ওঠে। পার্সেলটার সামনে গিয়ে খুব দ্রুত বক্সটা দেখল। কোনো নাম ঠিকানা দেওয়া নেই। কী অদ্ভুত! এত সকালে পার্সেল এলো তাও নাম-ঠিকানা বাদে! কিছুটা অবাক নিয়েই বক্সটা খুলল রিদান। বক্সটা খুলতে ছোটো একটা বক্স এর ভিতরে দৃষ্টিগোচর হলো, যার উপরে গোটা গোটা অক্ষরে লিখা,
“ইতি, আলাপী”
রিদান এই নামে কাউকে চেনেনা। একবার ভাবছে হয়তো ভুল ঠিকানায় পার্সেল এসেছে আবার ভেতরের কৌতূহল তাকে শান্তি দিচ্ছে না অতঃপর বাক্সটা খুলতে সে ভয়ানক এক চিৎকার দিয়ে ওঠল। শিউলি বেগম তখন রুমেই উপস্থিত ছিলেন। ছেলের চিৎকারে সে হতভম্ব হয়ে ছুটে যেতেই নিজেও বিমূঢ় হয়ে আৎকে উঠলেন। ততক্ষণে রিদান জ্ঞানশূন্য হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। শিউলি বেগম একবার ছেলে আরেকবার পার্সেল আসা বাক্সটার দিকে তাকাচ্ছেন। তাজা একটি কাটা হাত দিয়ে গলগল করে পড়ছে রক্ত। কী বিভৎস সেই দৃশ্য, কী অস্বাভাবিক!
৪.
পৃথিবীতে অনেক অস্বাভাবিক ঘটনা-ই ঘটে। তার মাঝে চার বন্ধুর বাড়িতে কাটা হাত-পা পাঠানো পার্সেলও ছিল একটি অস্বাভাবিক ঘটনা। ভীত চার বন্ধু। কার হাত-পা পাঠানো হয়েছে তাদের বাড়ি! কবিরের বাবা বুদ্ধিমান লোক, তিনি সাথে সাথেই পুলিশকে ইনফর্ম করলেন। চারটা বাক্স রাখা হলো একসাথে। যেখানে প্রতিটা বাক্সেই ছোটো চিরকুট সংযুক্ত করে লিখা ‘ইতি আলাপী’ নামক শব্দ।
পুলিশও কূলকিনারা খুঁজে পেল না। হাত-পা দেখে তো আর বুঝা যায় না কার হাত-পা! পুলিশ অফিসার সালাম সাহেব গম্ভীর মুখে বসে আছেন। তার সামনেই বসা শাহাদ, রিবু, রিদান, কবির ও তাদের বাবা-মা। সালাম সাহেব ভাবুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছেলে গুলোর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়লেন,
“তোমরা কী আন্দাজ করতে পারছ এটা কার হাত-পা? বা কে পাঠিয়েছে?”
ছেলে গুলোর চোখ-মুখে তখন প্রগার ভয়। তারা আকস্মিক শকটাও যে মানতে পারছে না সেটাও বুঝা যাচ্ছে। সালাম সাহেব কোমল হলেন, স্বান্তনা দিয়ে বললেন,
“ভয় পেও না। তোমাদের কিছু হবেনা। আমরা দেখছি।”
শাহাদ যেন এই কথাটাতে ভরসা পেল, কম্পনরত স্বরে বলল,
“স্যার, আমি বোধহয় কিছুটা আন্দাজ করতে পারছি।”
এবার রিদানসহ সকলেই শাহাদের দিকে তাকালো। সালাম সাহেবও আগ্রহ নিয়ে শুধালেন,
“কী আন্দাজ?”
শাহাদ ঢোক গিলল। বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে কেমন গাঢ় কণ্ঠে বলল,
“এগুলো মিত্রের হাত-পা হবে নিশ্চয়।”
সবাই বিস্মিত। কবির তো চেয়ার ছেড়েই ওঠে দাঁড়াল। সালাম সাহেবও অবাক হলেন। বিস্মিত কণ্ঠে বললেন,
“মিত্র? কোন মিত্র? গতবার যার জন্য তোমাদের মারধর করা হয়েছিল ঐ ছেলে?”
শাহাদ উপর-নীচ মাথা নাড়াল। সালাম সাহেব হতভম্ব কণ্ঠেই বললেন,
“তোমার কী দেখে মনে হলো এটা ওর হাত-পা?”
“স্যার, মিত্রের ডান পায়ে ছয়টা আঙ্গুল ছিল, একবার খেয়াল করেছিলাম। আর এইখানে থাকা পা গুলোকেও দেখেন। মিলে যাচ্ছে তো, স্যার?”
সালেম সাহেব এবার খেয়াল করলেন, সত্যিই তো! কাটা একটি পায়ে ছয়টি আঙুল আছে। তাহলে কী সত্যিই…….
সালাম সাহেব আর ভাবতে পারলেন না। জলের গ্লাসটা থেকে ঢকঢক করে জল পান করলেন। বিজ্ঞ কণ্ঠে বললেন,
“যদি তেমনটা হয় তাহলে তো তোমাদের বিপদ কারণ তোমরা তোমাদের বন্ধুকে সাহায্য করেছিলে।”
শাহাদ আর কিছু বলল না। বাকিরাও নিশ্চুপ। শাহাদের ভাবনাকে ঠিক করে দিতেই বোধহয় আকস্মিক পুলিশ স্টেশনের টেলিফোনটা বেজে উঠলো। মিত্রের বাবা জরুরী তলব পাঠালেন, এক্ষুণি ওদের বাড়ি যেতে হবে। সকলের মনের সন্দেহ এবার যেন স্থায়ী হওয়া শুরু করল। সালাম সাহেবের নির্দেশেই ওরা চারজনও সাথে চলল।
মিত্র বাড়িতে গভীর নিশ্চুপতা। মিহি স্বরে কান্নার শব্দ ভেসে আসছে। মিত্রের বাবা সোফার এক কোণায় বসে আছে। তার সামনে ছোটো টেবিলে একটি পার্সেল। সালাম সাহেবের বুজতে বাকি নেই কিসের পার্সেল। উনি দ্রুত গিয়ে পার্সেলটা খুলতেও আতকে উঠলেন। একটা কা টা মাথা যার চোখ গুলো উপড়ে ফেলেছে কেউ। কা টা মাথাটাকে দেখে হড়বড় করে বমি করে দিল শাহাদ।
#চলবে
গল্প:#ইতি_আলাপী
কলমে: মম সাহা
[অনেক বড়ো হয়ে যায় পুরোটা দিলে তাই আরেকপর্বে শেষ হবে।]