উমা পর্ব -৫০+৫১+৫২+৫৩

#উমা [কপি করা নিষেধ]
#৫০তম_পর্ব

হঠাৎ কারোর চিৎকার কানে এলো তার। বুকটা কেঁপে উঠলো। হিম ধরে গেলো শিরদাঁড়ায়। সিড়ি থেকে থেমেই একটি ঘর। যার দরজা আজানো। মশালের হলুদ রশ্নি ফাঁক থেকে চুইয়ে পড়ছে। উমা কাঁপা হাতে দরজাটা খুললো। যে দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠলো তাতে বুক কেঁপে উঠলো তার। চিনচিনে অসহনীয় ব্যাথায় আহত হলো হৃদয়। শাবীব, তূর্য দাঁড়িয়ে আছে। তাদের সামনে চারজন মানু্ষ নগ্ন দেহে হাটু গেড়ে বসে রয়েছে। তাদের শরীর চিরে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। একজনকে খুব সহজেই চিনে ফেললো উমা। বেঁধে রাখা লোকগুলোর সামনে একজন শ্বেত প্রশস্থ দেহধারী মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। তার শরীর ঘামে ভেজা, হাতে একখানা চিকন রডের ন্যায় বস্তু। তাতে তাজা রক্ত লেগে রয়েছে। উমার লোকটিকে চিনতে কষ্ট হলো না। হাতে থাকা মোবাইলটি মাটিতে পড়ে গেলো অগোচরেই। চোখ ঝাপসা হয়ে এলো একরাশ বিষাক্ত যন্ত্রণায়, মুখ থেকে আড়ষ্ট কন্ঠে বেড়িয়ে এলো,
“নিষ্ঠুর”

উমার কন্ঠ কর্ণপাত হতেই মানুষটি তার দিকে ফিরে তাকায়। রক্তিম হিংস্র চোখজোড়া তীর্যক দৃষ্টি প্রয়োগ করে উমার দিকে। উমা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। তার বুকটা কাঁপছে, অসহ্য যন্ত্রণায় জ্বলছে। সামনে থাকা লোকটিকে যে সে বিশ্বাস করতো, ভালোবাসতো। রুদ্রের পাশবিকতায় বাতাসটি যেনো আজ কলুষিত, বিষাক্ত। রুদ্রের হাতে থাকা রডটি খসে পড়ে মাটিতে। চোখের হিংস্রতা পরিণত হয় দুশ্চিন্তা এবং ত্রাশে। আড়চোখে অবস্থার বিবেচনা করে সে, তারপর দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে উমাকে চেপে ধরে নিজের সাথে। শাবীবের উদ্দেশ্যে বলে,
“এদের ভেতরে নিয়ে যা”

শাবীব তূর্য লোকগুলোকে ওই ঘরের পাশের ঘরে নিয়ে যায়। উমা এখনো স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। আতঙ্কে তার পাজোড়া হিম ধরে গিয়েছে। কালো ভয়ে মস্তিষ্ক ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। বিশ্বাসের প্রাচীর ভাঙ্গলে যে রক্তক্ষরণ হয় তা শরীরের রক্তক্ষরণের চেয়েও অধিক অসহনীয় এবং যন্ত্রণাদায়ক হয়। রুদ্র উমার মুখখানা তুলে ধরে আকুল কন্ঠে বললো,
“দুঃস্বপ্ন ছিলো ভুলে যাও”

উমার চোখ বেয়ে সূক্ষ্ণ জলের রেখা গড়িয়ে পড়ে কোমল গালে। বিতৃষ্ণা, ঘৃণা, ক্রোধে ঝাপসা হয়ে যায় চোখগুলো। এতোটা পাশবিকতা কি কোনো মানুষের মাঝে থাকতে পারে। মাথাটা ঘুরছে উমার। মেঝেতে কালো রক্তের ছাপ চোখে পড়তেই গা গুলিয়ে আসছে। দৃশ্যটি এতোটাই রুঢ় এবং নিষ্ঠুর যে মস্তিষ্ক কিছুতেই মেতে নিতে পারছে না। মাথার পেছনটা দপদপ করছে। নিস্তেজ শরীরটা নিজেকে ধরে রাখার শক্তি পাচ্ছে না। চোখের দৃষ্টি আবছা হয়ে এলো। ঢলে পড়লো সে রুদ্রের বুকে। অচেতন শরীরটা ভার ছেড়ে দিলো। তলিয়ে পড়লো উমা নিকষকৃষ্ণ গভীর আঁধারে________

জ্ঞান ফিরতে নিজেকে রুদ্রের ঘরে আবিষ্কার করলো উমা। উমা চোখ ঘুরিয়ে দেখে নিলো স্থানটা। উমার অনুভব হলো যেনো শরীরের ভারটা অধিকগুন বেড়ে গিয়েছে এবং এক বিন্দু শক্তি অবশিষ্ট নেই। শরীরটিকে তুলে ধরা তার পক্ষে সম্ভব হলো না। গলাটা শুকিয়ে এসেছে। মস্তিষ্ক যেনো নিস্ক্রিয় হয়ে উঠলো৷ কিছুক্ষণ পূর্বের দৃশ্য গুলো চোখের সামনে সিনেমার পর্দার ন্যায় এক এক করে ভেসে উঠলো। সেই দৃশ্য মনে পড়তেই পেট মুচরিয়ে বমি পাচ্ছে। ঘরে পিনপতন নিস্তব্ধতা। টিউবলাইটের সফেদ আলোতে আঁধার ঘরে সেই দৃশ্য গুলো ভ্রম মনে হতে লাগলো। সত্যি কি যেগুলো ঘটেছিলো? নাকি সব কেবল অবচেতন মনের কল্পনা! এক মূহুর্তের জন্য সব কিছু অবিশ্বাস করতে করতে ইচ্ছে হলো উমার। বাস্তব এবং কল্পনার মাঝে নিজেকেই গুলিয়ে ফেলেছে সে। ঠিক তখন ই রুদ্রের আগমণ ঘটলো৷ জলের গ্লাস হাতে সে প্রবেশ করলো রুমে। উমা সরু দৃষ্টিতে তার পানে চাইলো। সেই হিংস্র চোখজোড়া এখন পরম মায়ায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু তার সফেদ শার্টের কোনায় রক্তের ছিটায় উমার সকল ভ্রম বাস্তবতায় পরিণত হলো। চোখ ঝাপসা হয়ে এলো নোনা বিষাদে। রুদ্র তার দিকে এগিয়ে আসতেই মুখ ঘুরিয়ে নিলো উমা। তার বিশ্বাস গলা টিপতে দুবার ভাবলো না এই পুরুষটি! এতো পাষন্ড কাউকে আদৌও ভালোবাসতে পারে! সে ভালোবাসা কি আদৌ সত্য ছিলো! নাকি সব কিছুই ক্ষণিকের বাসনা! ক্ষণিকের মরীচিকা! মূহুর্তের রঙ্গিন জীবন ধূসর ছাই বর্ণের হয়ে গেলো! উমার মনে হলো তার রংধনুর মূহুর্তগুলো সব মিথ্যে। রুদ্র চোয়াল শক্ত। তার চোখে শান্ত দৃষ্টি। বুকটা তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে প্রেয়সী চোখে নিজের জন্য ঘৃণার রেখায়। চেয়ারটা টেনে বসলো রুদ্র। জলের গ্লাসটি এগিয়ে দিয়ে শান্ত গলায় বললো,
“জলটা খেয়ে নাও”

উমা ঘৃণাভরা দৃষ্টিতে তাকালো রুদ্রের দিকে। দাঁতে দাঁত চেপে ক্ষুদ্ধ কন্ঠে বলে উঠে,
“কোনো মানুষ এতোটা পশু হতে পারে আমার জানা ছিলো না!”
“তোমার জানার বাহিরেও অনেককিছু আছে উমা; সবকিছু জানতে হবে এমনটাতো কথা নেই”
“নির্মম পাশবিক অত্যাচার করার সময় হাত কাঁপলো না আপনার! তারাও কারোর পিতা, কারোর ছেলে, কারোর স্বামী। একটি বার নিজের সন্তানের কথাও ভাবলেন না! এই রক্তাক্ত হাতে কিভাবে ছুবেন তাকে! আপনি আমায় কথা দিয়েছিলেন, কথা দিয়েছিলেন এই হাতে কারোর রক্ত লাগতে দিবেন না! কি হলো সেই কথার! সব মিথ্যে! সব ধোয়াশা! কেবল মরীচিকা!”

উমা চিৎকার করে কাঁদছে। তার বিলাপ কানে আসছে রুদ্রের। কিন্তু সে নির্বিকার। শান্ত দৃষ্টিতে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে। উমা এক সময় চোখ মুছে নিলো, খুব কষ্ট করে উঠে বসলো সে। মনের জোর যেখানে গুড়ো গুড়ো হয়ে যায় সেখানে শরীর ও কেবল ই মাংসের দলা। উমাকে উঠতে দেখে নড়ে চড়ে উঠে রুদ্র। চেয়ার ছেড়ে উমাকে ছুতে নেয়। উমা তাকে বাধা দেয়,
“ছোবেন না আমাকে, রক্ত লেগে আছে এই হাতে। নিস্পাপ মানুষের রক্ত। অবশ্য অভিনব সিংহের রক্ত কি ভালো হতে পারে! কি অপরাধ ছিলো তাদের! কেনো এতোটা পাশবিক অত্যাচার করছেন! কেনো? ওই ডাক্তারটিকে আপনি এতোদিন আটক করে রেখেছিলেন তাই না? তাই তো যখন হাসপাতাল থেকে সে গায়েব হয়ে গেলো আমাকে পুরো ঘটনা থেকে দূরে রেখেছিলেন। কি দোষ এদের! কেনো এসব! উত্তর দিন!”

উমা রুদ্রের শার্ট আকড়ে ধরে। একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকে! এতোসময় পর রুদ্র অবশেষে মুখ খুলে,
“এদের বাঁচার অধিকার নেই, মানুষ রুপী জানোয়ার গুলো পৃথিবীতে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া শ্রেয়। আমিতো তাও এদের বাঁচিয়ে রেখেছি।”

রুদ্রের উত্তরে স্তব্ধ হয়ে যায় উমা। উমার মনে হলো এই রুদ্র সেই পূর্বের রুদ্র, নির্মম, নিষ্ঠুর রুদ্র। যার কাছে মানুষ কেবল ই এক দলা হাড় মাংসের স্তুপ। রুদ্র উমার চোখে চোখ রেখে বললো,
“জিজ্ঞেস করছিলে না এদের দোষ কি! তবে জেনে রাখো, এদের জন্মানোটাই দোষ। আমার কাছে এরা নর্দমার কিট। আর রুদ্র সিংহ রায় কাউকে দয়া করতে শিখে নি। এই ধরণীতে নরকের স্বাদ কেমন লাগে তাদের ও জানা উচিত। উমা, আমি কখনো ভালো ছিলাম না। অভিনব সিংহের রক্ত কি ভালো হতে পারে! আমি এমন ই, আমার সন্তান ও তার জানোয়ার বাবাকে চিনবে!”

উমা স্তব্ধ হয়ে রইলো। আজ মানুষটির কথাগুলোও তার অচেনা লাগছে। অজানা লাগছে সেই চির পরিচিত মানুষটিকে। উমা সঠান হয়ে দাঁড়ালো, রুদ্রের চোখে চোখ রেখে বললো,
“একটা প্রশ্নের উত্তর দিবেন?”
“বলো”
“কেনো? সব তো ভালোই ছিলো”
“আমি এমন ই, আমি তো বলেইছিলাম উমা। নিজেকে বদলাতে পারবো না। এই পৃথিবী ভালো মানুষের নয়। বাদল, মকবুল, এই ডাক্তারের মতো মানুষগুলো তোমাকে ভালো থাকতে দিবে না।”

রুদ্রের হেয়ালী কথার মর্মার্থ বুঝতে পারবো না উমা। উমা তীক্ষ্ণ গলায় বলে উঠে,
“যদি অপরাধী হয়ে থাকে তবে আইন আছে”
“তোমার মনে হয় আইন সত্যি আছে? যখন আইন ই দূষিত থাকে, তখন কোনো আইন সত্যি অন্ধ হয়ে যায়। আর আমি কখনোই আইনের অপেক্ষা করি নি, প্রতিবার শাস্তি নিজ হাতেই দিয়েছি।”

রুদ্র এবার শান্ত গলায় বললো,
“আজ যা হয়েছে ভুলে যাও, ভুলে যাও এখানে এসেছিলে, ভুলে যাও কিছু দেখেছো। আমাদের জীবন যেমন ছিলো তেমন ই থাকবে।”
“সম্ভব নয়! সব ভুলে পুনরায় আগের মতো থাকতে যে পারবো না আমি। মানলাম তারা অন্যায় করেছে। কিন্তু আপনার কোনো অধিকার নেই এই পাশবিক কর্মকান্ড চালানোর। তারা যদি দোষী হয় আপনিও নিষ্কলুষ নয়।”

রুদ্রের উত্তরটা জানা ছিলো। কিন্তু তবুও সে উমার রুঢ়তা নিতে পারছে না। চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। রুদ্র চোখ বুঝে নিজেকে সামলে নিলো। উমার চোখে চোখ রেখে দৃঢ় কন্ঠে বললো,
“আফসোস এই পশুর সাথেই তোমাকে থাকতে হবে। এই প্রশুর সাথেই থাকতে হবে চিরটাকাল। ঘৃণা করো বা ভালোবাসো এই পশুই তোমার সন্তানের পিতা”

রুদ্রের দৃষ্টিতে হিংস্রতা স্পষ্ট, সাথে এক অদম্য জিদ। জিদ উমাকে নিজের সাথে বেধে রাখার। উমা নিশ্চুপ দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো রুদ্রের দিকে, এতো কাছে থেকেও এক অদৃশ্য দেয়াল তাদের মাঝে। এই দেওয়াল ভাঙ্গা ইহজীবনে কি সম্ভব___________

অভিনব সিংহ মাটিতে বসে আসেন। তার সেলটি অন্যরকম। যথেষ্ট পরিষ্কার, মাটিতে শুলেও মোটা দুটো কম্বল দেওয়া হয়েছে। অভিনব সিংহ সেলে পায়চারী করছেন। তখন ই এক কস্টেবল এসে খুলে দিলো তার সেলের লকাপ। হিনহিনে স্বরে বললো,
“আপনার সাথে দেখা করতে এসেছে। আসুন। সময় পনেরো মিনিট”

অভিনব সিংহের সাথে এমন হেয় ভাবে কথা এই প্রথম কেউ বললো। কিন্তু সে এই অপমান গিলে নিলেন। দেখা করার জায়গায় জালের ওপাশে দীপঙ্গকর দাঁড়িয়ে আছে। অভিনব বাবুকে দেখেই সে জিজ্ঞেস করলো,
“জ্যেঠু, কেমন আছেন?”
“দীপঙ্কর আমাকে দেখে তোমার কি মনে হচ্ছে?”

দীপঙ্কর একটু দমলো। অভিনব বাবু তখন বললো,
“বাহিরের অবস্থা কি?”
“কি বলবো জ্যেঠু, কোনো উকিল আপনার কেস লড়তে চাচ্ছে না। শাশ্বত একেবারে ঝোপে কোপ মেরেছে। এতো নিঃশব্দে এতো বড় চাল চালবে বুঝতেই পারি নি। একেবারে ঘোড়ার আড়াই।”
“বেশি কথা ভালো লাগে না দীপঙ্কর”
“আমাকেই বকে গেলেন জ্যেঠু৷ অবশ্য আপনার ও মাথা কি ঠিক আছে৷ যেখানে দুধ কলা দিয়ে কালসাপ পুষেছেন। ছোবল তো দিবেই। অবশ্য দুটো কালসাপ এক সাথে ছোবল দিলে তো মৃত্যু নিশ্চিত থাকে”

দীপঙ্কর অপ্রাসঙ্গিক কথায় বিরক্ত হলেন অভিনব বাবু। হুংকার ছেড়ে বললেন,
“খলসা করে বলো দীপঙ্কর”

এবার দীপঙ্কর বললো,
“শাশ্বত একা আপনাকে ফাঁসায় নি, রুদ্রদাদা ছিলো পেছনে………..
#উমা [কপি করা নিষেধ]
#৫১তম_পর্ব

দীপঙ্কর অপ্রাসঙ্গিক কথায় বিরক্ত হলেন অভিনব বাবু। হুংকার ছেড়ে বললেন,
“খলসা করে বলো দীপঙ্কর”

এবার দীপঙ্কর বললো,
“শাশ্বত একা আপনাকে ফাঁসায় নি, রুদ্রদাদা ছিলো পেছনে। আমি ভেবে পাই না, ছেলে হয়ে নিজের বাবাকে এভাবে ফাঁসাতে পারে?”

দীপঙ্করের হেয়ালী কথা ভ্রু কুঞ্চিত হয়ে এলো অভিনব সিংহের। গম্ভীর সন্দিহান কন্ঠে সে প্রশ্ন ছুড়লো,
“তোমার মাথা কি ঠিক আছে? রুদ্র আমার ছেলে, আমার রক্ত। নিজের বাবার পেছনো ছোরাঘাত সে করবে না।”
“আপনি বড্ড সরল মনের জ্যেঠু, কিন্তু রুদ্র দাদা তেমন নয়। আপনার মনে নেই! সে কিভাবে গত নির্বাচনের সময় আপনার শত্রুদের সাথে হাত মিলিয়ে আপনার বিরোধী দলে যোগ দিয়েছিলো। আপনার বিরুদ্ধে কত বড় ষড়যন্ত্র করেছিলো। কোন ছেলে নিজ পিতার সাথে এমনটা করে! আমাদের প্রতিটা ছেলে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছিলো। ভোট চুরি তো দূরে থাক আমরা একটা ব্যালোট ছুতে ও পারি নি। রুদ্র সেখানে উপদথিত না থেকেও আমাদের সকল কাজ ভেস্তে দিয়েছিলো। জ্যেঠু, রুদ্রদাকে আপনি ভালোবাসলেও সে আপনাকে নিজের বাবা হিসেবে মানে না। আসলে ক্ষমতা জিনিসটাই এমন! শাহজাহান বলুন বা আওরঙ্গজেব সবাই এই গদির লোভে নিজের বাপকেও ছাড়ে নি। আর এতো আমাদের রুদ্র দাদা। সামনে ভোট, আপনি যেনো মনোনয়ন পত্র না পান সেটার পুরো ছক কষেছে রুদ্র দাদা। নয়তো গোপনীয় খবর গুলো শাশ্বত দাদা জানলো কি করে জ্যেঠু। সব রুদ্র দাদার পরিকল্পনা। ছেলে বেলা থেকে আপনার নুন খেয়েছি। আপনার প্রতি আমার দূর্বলতা আছে, যতই হোক বাপের জায়গায় আপনাকেই দেখে এসেছি। তাই বলছি, জ্যেঠু অন্ধবিশ্বাস পতনের মূল”

অভিনব সিংহের মুখশ্রীতে এক চিন্তার রেখা ভেসে উঠলো। উদ্বিগ্নতা তাকে গ্রাস করছে ধীরে ধীরে। বৃদ্ধ শরীরের ভেতরের মজিবুত হৃদয় টলোমলো হয়ে গেলো। বুকটা চেপে ধরে এলো তার। সন্তানের প্রতি প্রছন্ন ভালোবাসাটা মাথা তুলে দাঁড়ালো। চোখটা জ্বলছে, জ্বলছে কাঁচের মতো স্বপ্নগুলো ভেঙ্গে যাওয়ায়। অভিনব সিংহ ও দূর্বল হয়, তারও অদম্য প্রাচীর হাটু গেড়ে বসে। সেও সাধারণ মানুষের ন্যায় কাবু হয়। বিষাদ যন্ত্রণা তাকেও হানা দেয়। সে কিছু বললো না। এর মাঝেই কন্সটেবল এসে তীক্ষ্ণ অবহেলিত স্বরে বললো,
“সময় শেষ, চলেন”

দীপঙ্করের মাঝে তীক্ষ্ণ অস্থিরতা, অস্থিরতা জ্যেঠুর প্রতিত্তোরের। সে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো অভনব সিংহের দিকে। কিন্তু তাকে হতাশ করে অভিনব সিংহ বললো,
“তুমি আমার বেইলের ব্যবস্থা করো দীপঙ্কর। আর রুদ্রকে একবার দেখা করতে বলো”

বলেই সেই কন্সটেবলের সাথে চলে গেলো। চরম বিরক্তি এবং ক্রোধে দীপঙ্করের মুখ বিকৃত হয়ে এলো। মুখ খিঁচিয়ে বললো,
“শালা বুইড়া”

অভিনব সিংহের এলোমেলো পদক্ষেপ তাকে নিয়ে গেলো তার বর্তমান বাসস্থানে। চৌদ্দ শিকের এই ঘরটি ই তার আবাস্থল। চুন খোয়া নোংরা দেওয়ালটির দিকে চাইলে এই ইহজীবনের কর্মগুলো সিনেমার মতো চিত্রিত হতে লাগলো। নিজের সকল পাপ কাজ গুলো জীবন্ত হয়ে উঠলো অভিনব সিংহের চোখে। আজ নিজেকে পরাজিত এক সেনানায়ক লাগছে। মহাভারতের জমিতে থাকা সেই কৌরভ সেনানায়ক, যাকে পরাজিত করেছে নিজের আপনজন, হ্যা নিজের আপনজন_____

—————

উমা নিজের ঘরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। হাতজোড়া উদর আগলে রয়েছে। হিনহিনে বাতাসে সাপের মতো প্যাচানো চুলগুলো উড়ছে। হাওয়া মুখশ্রী ছুয়ে যাচ্ছে পরম আদরে৷ আবার সেই বদ্ধ কারাগারেই তাকে ফিরতে হলো৷ প্রতিনিয়ত অসহ্য যন্ত্রণার অগ্নি ভেতরটাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খার করে দিচ্ছে।নিখিলের মৃত্যুর পর রুদ্রকে আকড়েই তার দুনিয়াটা ছিলো৷ ছিলো তার নিবিড় ভালোবাসার উৎস। ছোট উমা জানতোই না ভালোবাসা কি! পরিবারের বাইরেও কারোর প্রতি আবেগের সঞ্চার হতে পারে! রুদ্র সেই মানুষটি যার প্রতি তার প্রথম আবেগ জন্মেছিলো, সেই পুরুষ তার আলিঙ্গনে অস্বস্থির বদলে স্বস্থির ছোয়া পেতো। সেই মানুষটির উষ্ণ হাসির ছাপে নিজেকে আবিষ্কার করতো উমা। ঢাল হয়ে সকল কন্টককে নিজের মাঝে সমাহিত তাকে এগিয়ে দিতো ধরণীর ফুলজড়িত পথে। সেই মানুষটি কি করে এতোটা নিষ্ঠুর হতে পারে! উমা সেদিন গভীর রাতে পুনরায় সেই পাতালের ঘরে গিয়েছিলো। কিন্তু কাউকে খুজে পায় নি। অর্থাৎ রুদ্র খুব নিপুন ভাবে তাদের সরিয়ে ফেলেছে। উমা যখন তাদের তন্নতন্ন করে খুজছিলো তখন রুদ্রের প্রবেশ ঘটে। ভারী গম্ভীর থমথমে কন্ঠে বলে,
“তারা এখানে নেই”

উমা চমকে উঠে পিছনে চাইলে রুদ্রের রুদ্রমূর্তি দেখতে পায় সে। চোখজোড়া রক্তিম বর্ণ ধারণ করে রয়েছে। সরু তীর্যক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার পানে৷ উমার বুক কেঁপে উঠলো। কেনো যেনো সেই মূহুর্তে রুদ্রকে বড্ড অচেনা লাগছিলো তার। চেনা মুখের আদলে অচেনা মানুষটিকে দেখে অজানা ভয়ে হাত পা শীতল হয়ে এলো। রুদ্র ধীর এগিয়ে আসতে লাগলে উমা পেছাতে থাকে। পেছাতে পেছাতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে ঈষৎ চমকে উঠে উমা। তখন রুদ্র উমার সম্মুখে চলে আসে। তার উষ্ণ নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে; রুদ্র ধীর কন্ঠে বললো,
“ভয় পাচ্ছো?”

উমা রুদ্রের চোখে চোখ রাখে। কি উত্তর দিবে সে! এতো বছরের পরিচিত মুখখানা অপরিচিত যে বড্ড অপরিচিত ঠেকছে! উমাকে চুপ থাকতে থেকে রুদ্র বলে,
“চিন্তা করো না, তোমার কোনো ক্ষতি আমি করবো না। পারবো না, ভালোবাসি যে”
“নিষ্ঠুর পশুরাও কাউকে ভালোবাসতে পারে?”

উমার কথায় বাকা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে রুদ্র। তারপর বিদ্রুপের টানে বলে,
“পশুরাই ভালোবাসতে পারে। মুখোশধারী ভালোমানুষগুলোই সেই ভালোবাসার অপমান করে পদে পদে করে। উমা, সর্বদা চোখের দেখাটাই সত্য হয় না৷ সত্য অনেক গভীর। সেই গভীরত্ব মেনে নেওয়াটাই দুষ্কর”
“আমিও জানতে চাই। সেই সত্যকে আমিও অনুধাবন করতে চাই।”
“অহেতুক এসব এ জড়ানোর কি আদৌ কোনো মানে আছে? ভালোই তো আছো আমার মহলে। রাজরাণীর মতো রাখবো। আমাকে আমার কাজ করতে দাও। আমি চাই না তুমি আমর অবাধ্য হও”

রুদ্রের কথায় চোখজোড়া জ্বলজ্বল করে উঠে উমার। এতোসময়ের ভীতু নারী নির্ভীক মূর্তিতে পরিণত হয়৷ নিজেকে সংযত রাখতে পারলো না সে। একজন মানুষের ভেতরটা সম্পূর্ণ নিঃস্ব হয়ে গেলে অন্তরের ভয়গুলো এক এক করে বাস্পীভূত হতে থাকে। আজ উমার নিজেকে নিঃস্ব মনে হচ্ছে। তীব্র ঝাঝালো স্বরে বললো,
“যদি বাধ্য হয়ে না থাকি তবে?”

উমার প্রশ্নে ভ্রু কুঞ্চিত হয়ে আসে রুদ্রের। থমথমে স্বরে বলে,
“আমি প্রতারকদের সাথে কি করি তা হয়তো তোমাকে বুঝিয়ে বলতে হবে না। রুদ্র ভালোবাসলে যেমন সব উজার করে ভালোবাসে, ঘৃণা করার সময় ও সব ধ্বংস করতে দুবার ভাবে না।”

রুদ্র এবং উমার দৃষ্টি বদল হয়৷ কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজী নয়। নিজেদের মূল্যোবোধের কাছে বাঁধা তারা। উমার সেদিনের কথা মনে হতেই চোখ ঝাপসা হয়ে উঠে। বুকের ভেতরের চব্বিশ ঘন্টা জ্বলমান অগ্নিকুন্ড কিছুতেই নিভসে না। তার ভয় হয়, নিজের জন্য নয়। নিজের অনাগত সন্তানের জন্য৷ এই কেমন পরিবারে নিজের সন্তানকে আনতে চলেছে সে। সে কি আদৌ স্বাভাবিক জীবনটা পাবে? উমা পরমূহুর্তে চোখ মুছে নেয়। সত্যের সন্ধান সে করবে! রুদ্র যদি ভুল পথকে বেঁছে নেয় তবে স্ত্রী হিসেবে তাকে বাধা সে দিবে। শেষ একটা চেষ্টা করতে চায়! নিজের জন্য নয়, নিজের সন্তানের জন্য।

শাশ্বতের সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছে সুমন এবং রাজশ্বী। শিবপুরের জমিদখলের কান্ডের বিবরণ দিয়েছে সুমন। সুমনের কথাগুলো শুনে কিছুসময় চুপ করে থাকে শাশ্বত। এতোবড় অরাজকতা চলছে অথচ তারা কেউ জানেও না। শাশ্বতকে চুপ করে থাকতে দেখে রাজশ্বী প্রশ্ন ছুড়ে দেয়,
“দিনের পর দিন এমন হয়ে চলেছে স্যার, আমরা কি কিছুই করতে পারি না?”
“কিন্তু আমাদের কাছে প্রমাণ নেই রাজশ্বী”
“প্রমাণ নেই বলে কি হাতের উপর হাত রেখে বসে রইবো আমরা? কিছুই করবো না? আমরা তো সাংবাদিক, সমাজের দর্পন আমরা। ওখানের থানার পুলিশেরা প্রচুর টাকা গিলে বসে আছে। ওদের কাছে গেলে বলে, আমরা নাকি তিলকে তাল করি। এভাবে আর কতোদিন অরাজকতা চলবে?”

শাশ্বতের মুখ থমথমে হয়ে যায়। কিন্তু সে ইতিমধ্যে অন্য খবর কভার করছে এই জমি দখলের খবরে হাত দিতে পারছে না। গম্ভীর স্বরে বলে,
“স্ট্রিং অপারেশন করতে পারবে?”

শাশ্বতের কন্ঠে এক সুপ্ত ভয় লুকায়িত৷ সুমনের মুখখানা লম্বাটে হয়ে যায়। কিন্তু সকলকে অবাক করে রাজশ্বী বলে উঠে,
“আমি রাজী”

শাশ্বতের ঠোঁটে স্মিত হাসি ফুটে উঠে। রাজশ্বীকে দেখে তার উমার কথা মনে পড়ে গেলো। সেই একই মুখের আদল, সেই একই তেজ, সেই একই উদ্যমী মনোভাব। শাশ্বত পুনরায় বললো,
“তুমি সত্যি রাজী?”
“জ্বী স্যার, আমি রাজী”
“বেশ, কাল তবে তোমরা এই অপারেশনটি করবে। অপারেশনটি হবে। আমি ঢাকা থেকে কিছু ভালো ক্যামেরা এবং ভয়েস রেকর্ডিং পেন এনে দিবো। মনে থাকে যেনো, সাবধানে। প্রচুর রিস্কি একটা কাজ। এরা কিন্তু মানুষ রুপী হিংস্র জানোয়ার।”

রাজশ্বী সম্মতি প্রদান করলো। কিন্তু সুমনের মুখখানা চুপসে গেলো। তার ভয় হচ্ছে। সে মানুষ রাতারাতি মানুষের গলা কেটে দেয় তারা কতটা ভয়ংকর ধারনার অতীত………
#উমা [কপি করা নিষেধ]
#৫২তম_পর্ব

রাজশ্বী সম্মতি প্রদান করলো। কিন্তু সুমনের মুখখানা চুপসে গেলো। তার ভয় হচ্ছে। সে মানুষ রাতারাতি মানুষের গলা কেটে দেয় তারা কতটা ভয়ংকর ধারনার অতীত। নিকষকৃষ্ণ মৃত্যুর ভয় তার হৃদয়কে কাবু করছে, না জানি কি অপেক্ষা করছে তাদের জন্য____

গুদামের চেয়ারে বসে রয়েছে রুদ্র। টেবিলে এলোমেলো হয়ে রয়েছে কিছু জমির মাঠ পর্চা রয়েছে৷ সামনে আধ খাওয়া র’চায়ের কাপ এবং খোলা সিগারেটের প্যাকেট। আঙ্গুলের ফাঁকে অর্ধজ্বলন্ত সিগারেট৷ শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে সে সিলিং এর পানে। চোখ জোড়া বসে গিয়েছে তার। ঘুম নামক শব্দটি হারিয়ে গেছে চোখ থেকে। এই ক দিন ঘুম হচ্ছে না; গুদামের চৌকিতে ঘুম আসে না রুদ্রের। সেদিনের পর থেকে বাড়ি যাওয়া হয় নি। ইচ্ছে করেই যায় নি রুদ্র। উমার শীতল দৃষ্টি তাকে গ্রাস করে, বুকের যন্ত্রণা কমার বদলে বৃদ্ধি হয়৷ এক মূহুর্ত সব কিছু এলো মেলো করে দিয়েছে যেনো। সাজানো দুনিয়াটা কাঁচের মতো ভেঙ্গে গিয়েছে। এতোদিনের সব পরিকল্পনা মূহুর্তেই ফাস হয়ে গিয়েছিলো। চারটা বছর ভালোবাসার উষ্ণ চাঁদরে ঢেকে রেখেছিলো উমাকে। নিজের পশুপ্রবৃত্তিকে নিপুণভাবে ঢেকে রেখেছিলো রুদ্র। চায় নি উমা জানুক এই নোংরা বাস্তবতা। এই নির্মম ধরাতে ভালো মানুষের অস্তিত্ব নেই, এখানে টাকা, ক্ষমতা, বলের রাজত্ব। রুদ্র এই নোংরামি থেকে নিজেকে কখনোই পৃথক করতে পারে নি। যত উপরে উঠেছে তত রক্তাক্ত হয়েছে তার জমিন, এখন রক্তকে ভয় পায় না সে। একটা সময় ছিলো মানুষের মৃত্যু সহ্য করতে পারতো না সে, কিন্তু এখন নিজ হাতে কাউকে মারতেও হয়তো হাত কাঁপবে না। উমার কাছে প্রতীজ্ঞা করেছিলো এই হাতে কখনো কারোর রক্তে রক্তিম করবে না। কিন্তু সেই প্রতীজ্ঞা সেদিন ই ভেঙ্গে গিয়েছে যখন নিজ হাতে বাদলকে শাস্তি দিয়েছে। যমের দোয়ারে ফেলে এসেছিলো তাকে। এই তো বছর দেড়েক আগে তার মৃত্যুর খবর কানে এলো রুদ্রের। অথচ এক ফোঁটা জল গড়ায় নি। বরং এক পৈচাশিক আনন্দ অনুভব করেছে রুদ্র। বাদলের পর ঠিক কয়জনকে এভাবে শাস্তি দিয়েছে তার কোনো ঠিক নেই। শত্রু বা প্রতারক; যারা তার ক্ষতি করতে এসেছে তাদের ই যমের দোয়ারে পচার জন্য ফেলে দিয়েছে রুদ্র। এর মাঝেই শাবীবের আগমণ ঘটে। রুদ্রকে চোখ বুঝে থাকতে দেখে সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। রুদ্রের শুকনো মুখখানা দেখে তার মায়া হয়। নিজের বন্ধুকে এভাবে দেখতে ভালো লাগছে না তার। শুকনো চোখ, বিক্ষিপ্ত হৃদয় নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে সে। খাওয়ার ঠিক নেই, না আছে ঘুমের ঠিক। ময়লা শার্টটা বদলায় নি অবধি। যার দাপটে মানুষ ভয়ে কুকড়ে উঠে তার এমন অবস্থা দেখে ব্যথিত হয় শাবীব। দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুদ্রের কাছে যায় সে। গলা খাকাড়ি দয়ে লাফিয়ে উঠে রুদ্র। শাবীবকে দেখে নড়ে চড়ে উঠে সে। কাগজগুছাতে গুছাতে শাবীব বললো,
“বাড়ি গেলেই তো পারিশ, এখানে ঝিমুনির থেকে বাড়ি গিয়ে একটু জিরিয়ে আয়”
“বেশি বকিস না, আরেক কাপ চা দিতে বলিস তো। চা টা বিস্বাদ লাগছে। এতো অখাদ্য কেউ চা বানায়?”
“চায়ের কি দোষ? চা তো চায়ের মতোই হবে। বিগত বিশ বছর ধরে এভাবেই চা খাও তুমি। এখন অখাদ্য লাগার কারণ চা নয়, কারণ তোমার বুকের অশান্তি। এভাবে আর কতোদিন রুদ্র? তুই এখানে কষ্ট পাচ্ছিস, উমা ওখানে! সত্যিটা ওকে বলে দিলে হয় না?”
“কি লাভ? কি লাভ হবে তাতে?”
“উমা তোকে ভালোবাসে, তোকে বুঝবে। তোকে ঘৃণা তো করবে না। শুধু শুধু মেয়েটির চোখে নিজের ঘৃণার পাত্র কেনো করতেছিস!”

রুদ্র মলিন হাসি হাসে। বুকের যন্ত্রণা ফুটে উঠে সেই হাসিতে। আজ প্রথমবার রুদ্র নিজের খোলস ছেড়েছে, স্পষ্ট দর্পনের মতো তার হৃদয়ের আঙ্গিনা দেখতে পারছে শাবীব। রুদ্রের স্বচ্ছ চোখে মনের কোনে জমা কষ্টের ঘড়াটি উপছে পরছে। রুদ্র ধীর স্বরে বললো,
“উমা একটি নিস্কলুষ ফুল শাবীব, আমি চাই না সে আমার মতো কলুষিত ফুলের সাথে মিশে কলুষিত হোক। হ্যা, হয়তো ভালোবাসে বিধায় আমার সব কিছু সে মুখ বুজে মেনে নিবে। কিন্তু প্রতিনিয়ত নিজের অন্তরাত্মার সাথে ওকে লড়াই করতে হবে। যেমনটা আমাকে করতে হয়। আমি প্রতি প্রভাতে ভাবি, আমি সাধারণ জীবন কাটাবো। যেখানে আমাকে কারোর রক্তের হলি খেলতে হবে না। কিন্তু হয় না জানিস তো। নোংরা কাঁদায় নেমে বলবো হাত ময়লা করবো না; তা কি হয়! একটা সময় এই হাত নোংরা হবেই। আমরা যে নোংরার মধ্যেই থাকি রে”

রুদ্রের চোখ চিকচিক করছে। তার শুকনো ঠোঁট জোড়ায় বিষাদের এক চিলতে হাসি। শাবীব এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে রুদ্রের দিকে। মানুষ এক বার যে পথ বেঁছে নেয় সেই পথ থেকে ফেরা সত্যি কঠিন_______

২৬.
সংগঠনে যাবার জন্য তৈরি হচ্ছে উমা। বহুদিন পর সে সংগঠনে যাচ্ছে। শেষ গিয়েছিলো বহু দিন পূর্বে। গতরাতে শিউলি তাকে ফোন করেছিলো। হুট করে অনেক মহিলা এখন তাদের সংঘটনের কাজের সন্ধানে আসছে। গত সম্মেলনটি বেশ সফল হয়েছে। শুধু তাই নয় বাহিরের একজন এজেন্সিও তাদের সাথে যোগাযোগ করেছে। বেশ মোটা অংকের একটি ডোনেশন আসতে চলেছে। তাই আজ উমার সেখানে যাওয়া খুব ই দরকার। বর্তমানে সাড়ে চার মাস চলে উমার। পেটটা ভারী হয়েছে। খানিকটা বেড়েছে, এখন হাটাহাটি করলেই ক্লান্ত হয়ে যায় সে। কিন্তু তবুও আজ বের হবে। কারণ শিউলীকে নিয়ে একবার স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দিকে যাবে সে। সাথে রুদ্রের নতুন জমিগুলোর ব্যাপারেও তার খোঁজ নিতে হবে। মনের মাঝে এক গভীর সন্দেহ দলা পাঁকাচ্ছে, শিবপুরের ভূমিদস্যুতায় রুদ্র জড়িত কি না! রুদ্রকে প্রশ্ন করলে সে কখনোই উত্তর দিবে না। কিন্তু উমার সত্যটা জানার খুব প্রয়োজন। দরজায় কড়া নাড়লে তার চিন্তায় ছেদ পড়ে। আয়না দিয়ে তাকালে রাজশ্বীকে দেখতে পায় সে। স্মিত হেসে বলে,
“কিছু বলবি রাজী?”
“তুমি কি কোথাও বের হচ্ছো?”
“হ্যা, সংঘটনের অফিসে যেতাম। কিছু বলবি?”

রাজশ্বী কিছু একটা ভেবে বলে,
“তোকে বহুদিন ধরে একটা কথা বলতাম দিদি, তোর সময় থাকলে একটু বসবি?”

উমা পেছনে ফিরে মনোযোগ দিয়ে তাকায় রাজশ্বীর দিকে। রাজশ্বী হাতের সাথে গাত ঘষছে। তার মুখখানা ফ্যাকাসে লাগছে। উমা গম্ভীর কন্ঠে বলে,
“আয়, বস।”

রাজশ্বী খাটে বসে। তার ভয় হচ্ছে। খুব বড় মিথ্যে বলতে যাচ্ছে সে। আজ রাতের স্ট্রিং অপারেশনের কথা শুনলে উমা কখনোই রাজি হবে না। তাই বাধ্য হয়ে মিথ্যে বলতে হবে তাকে। রাজশ্বী কিছু বলছে না বিধায় উমা বলে উঠে,
“কি হলো বলবি কিছু?”
“আসলে আজ আমার বান্ধবীর বাসায় থাকবো। তোমার কাছে অনুমতি চাইতে এলাম”

উমার ভ্রু কুচকে আসে। সে গম্ভীর স্বরে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়,
“বান্ধবীর বাড়ি কেনো? আর কোন বান্ধবী?
” সুপ্তি, আমি সুপ্তির বাড়ি থাকবো। আগামী সপ্তাহে আমাদের পরীক্ষা আছে। কিছু সমস্যা ছিলো। একসাথে পড়লে সেই সমস্যাগুলোও সমাধান হবে। আর ইংলিশ লিটারেচার। জানোই তো কতটা কঠিন”
“কাল কখন আসবি?”
“সকাল ১০টা নাগাদ, চলে আসবো”
“ঠিক আছে আমি প্রদ্যুত দা কে পাঠিয়ে দিবো”
“লাগবে না, আমি নিজেই এসে যাবো”

প্রদ্যুতের কথায় অতি দ্রুত বাঁধ সাধে রাজশ্বী। উমার মন খচখচ করছে৷ কেনো যেনো মনে হলো রাজশ্বী মিথ্যে বলছে। কিন্তু পরমূহুর্তে নিজের ভ্রম ভেবে দমে গেলো সে। রাজশ্বীর মাথায় হাত বুলিয়ে বেড়িয়ে পড়লো সে। রাজশ্বীর মাঝে এক অপরাধ বোধ কাজ করছে কিন্তু দিদিকে চিন্তায় ফেলতে চায় না সে। আর এই প্রথম এতোবড়ো একটা কাজে যাচ্ছে সে। কোনো ভাবেই সেটিকে ভেস্তদিতে চায় না। সে দৃঢ় পণ করেছে এই ভূমিদস্যুতায় কে কে জড়িত তাদের বের করবেই!!!

উপজেলার স্বাস্থ্যে কেন্দ্রে পৌছালো উমা এবং শিউলী। হুট করে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসার কারণটি জানতে অনেকবার প্রশ্ন করেছিলো শিউলী। কিন্তু উমা উত্তর দেয় না। সেউত্তরে শুধু বলে,
“সময় হলে ঠিক জানতে পারবে।”

স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পৌছাতেই শ্রাবণের সাথে দেখা হয় উমার। শ্রাবণও তদন্তের জন্যই এসেছিলো এখানে। শ্রাবণকে দেখতেই উমার মুখোভাব বদলে যায়৷ শ্রাবণ উমাকে দেখেই এগিয়ে আসে।৷ নমস্কার দিয়ে বলে,
“এ কি উমা দেবী যে, আপনাকে এখানে পারো কল্পনা করি নি, আমি আপনাকেই ফোন করতাম। কেমন আছেন?”
“ভালো আপনি কেমন আছেন?”
“আর কেমন, ডাক্তার রাকিবের কেসেই এখানে আসা।”
“ডাক্তার রাকিব?”
“যে আপনার গাড়ির সামনে পড়েছিলো। উনার নাম রাকিবুল আহমেদ”

ডাক্তারের কথায় উমার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। উমা জানে লোকটিকে কারা উধাও করেছে। কিন্তু সেটা বলতে পারবে না। কারণ রুদ্র তাকে সঅরিয়ে ফেলেছে। সে জানেও না লোকগুলোকে কোথায় রেখেছে রুদ্র। শ্রাবণ এর মাঝেই বলে উঠে,
“নতুন যে কতো পর্দা খুলছে এই কেসের বলবেন না। ডা. রাকিব একজন অপভ্রষ্ট ডাক্তার ছিলেন। তার ক্লেমের তো অভাব নেই। অর্গান স্মাগলিং এর সাথে জড়িত সে। আমার তো মনে হয় তাদের সংস্থার ই কেউ ধরে নিয়ে গেছে।”

শ্রাবণের কথায় ঈষৎ কেঁপে উঠে উমা। মুখটি কেঁপে উঠে নিকষকৃষ্ণ ভয়ে। তবে কি রুদ্র এই সংস্থার সাথে জড়িত!!!

রাত ১০টা,
সুমন এবং রাজশ্বী লুকিয়ে রয়েছে কাঠের দোকানের পাশের ঝোঁপের আড়ালে। জানালা দিয়ে একটি কলম সুতোর মাধ্যমে ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়েছে। যারা দখল করেছে তারা দোকান তুলেছে বেশ কটা। তার মধ্যেই বিকেল হলে তাশের আড্ডা চলে। এরা জমি দখল করে চরা দামে বেঁচে দেয়। ভালো ভালো পার্টি কিনে নেয় সেই জমি। হাটু অবধি পানির জমির ও দাম আগুনের মতো। সুমনের খেচরের মতে আজ রাতে জমি বেঁচা কেনার কাজ চলবে। এদের আসল লিডার অনেকেই রয়েছে। কেউ দখল করে, কেউ মানুষকে ভয় দেখায়, তো কেউ বিক্রি করে। সুমনের দুজন জুনিয়ার খরিদ্দার সেজে আসবে। সেই ফাঁকে সুমন এবং রাজশ্বী তাদের সব কথাগুলো রেকর্ড এবং ছবি তুলে নিবে। ছক পাতা হয়ে গিয়েছে। এখন শুধু মূল চরিত্রের আগমণ বাকি। ক্যামেরা হাতে অপেক্ষা করছে রাজশ্বী। হঠাৎ চার পাঁচ জন লোক ঘরে ঢুকলো। জানালার শিক দিয়ে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। তাদের মাঝে একজনকে দেখে রাজশ্বীর চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। ধীর স্বরে বেড়িয়ে এলো,
” দীপঙ্কর দা……….
#উমা [কপি করা নিষেধ]
#৫৩তম_পর্ব

সুমনের দুজন জুনিয়ার খরিদ্দার সেজে আসবে। সেই ফাঁকে সুমন এবং রাজশ্বী তাদের সব কথাগুলো রেকর্ড এবং ছবি তুলে নিবে। ছক পাতা হয়ে গিয়েছে। এখন শুধু মূল চরিত্রের আগমণ বাকি। ক্যামেরা হাতে অপেক্ষা করছে রাজশ্বী। হঠাৎ চার পাঁচ জন লোক ঘরে ঢুকলো। জানালার শিক দিয়ে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। তাদের মাঝে একজনকে দেখে রাজশ্বীর চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। ধীর স্বরে বেড়িয়ে এলো,
” দীপঙ্কর দা, এদের মূলে”

সুমন ফিসফিসিয়ে বলে,
“তুমি চেনো এদের কাউকে?”
“হ্যা, চিনি। মাঝের আসমানী রঙ্গের পাঞ্জাবী পড়া লোকটির নাম দীপঙ্কর রায়। আমার জামাইবাবুর কাকাতো ভাই। কিন্তু দীপঙ্কর দাদা এখানে কেনো?”
“কেনো আবার, এই শয়তানগুলোর নেতা। সে এখানে না থাকলে হবে?”

সুমনের কথা শুনে ক্ষোভে ঘৃণায় মুখ খিঁচিয়ে আসলো রাজশ্বীর। ভাবতেও তার খারাপ লাগছে, এই লোক কি না রুদ্রের ভাই। এতোটা লোভীও মানুষ হয়! সে হাতে থাকা ক্যামেরাটি দিয়ে বেশ কিছু ছবি তুলে নিলো। তারপর ঘাপটি মেরে বসে রইলো তাদের কথা শোনার জন্য। একেবারে জানালার কাছে বিধায় তাদের কথাগুলো স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। দীপঙ্করের সাথের লোকগুলোর মাঝে একজন খরিদ্দরকে বললো,
“আপনারাই জমি কিনতে চান?”
“আজ্ঞে, আমরাই কিনবো।”
“কতটুকু কিনবেন?”
“বিঘা দশেক”
“এতো জমি কি একাই কিনবেন?”
“জ্বী না, আমরা মোট দশ বন্ধু। আমরা দশজন মিলেই এই জমি কিনতে চাই। একটা বড় মিল করবো এখানে। তা কত করে বিঘা?”

দীপঙ্কর আয়েশ করে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বললো,
“বুঝলেন ভাই, জমি তো জমি না। এখন সব সোনা এক একটা। এই জমি কিছুদিনের মধ্যে আগুনের দামে হবে। এখন মন্দা চলে ঠিক কিন্তু এই পাশে যখন বিদ্যুৎকেন্দ্র করবে, জেলখানা হবে তখন জমির দাম বেড়ে যাবে। তখন কাঠা এই দামে পান কি না সন্দেহ! বেশি না সাত লক্ষ টাকা করে বিঘা।”
“একটু বেশি হলো না? এই জায়গাগুলো ডোবা! এখন জায়গার সরকারী দর তো এতো না ভাই। শতক হবে আট দশ হাজার টাকা করে। এখানে সাতলাখ অনেক বেশি। আমরা তো দশ বিঘার মতো খরিদ করবো। একটু কমিয়ে দিন।”
“দেখুন আমরা মাছের বাজারে তো নই এখন। জমি জমায় কি এভাবে দর কষাকষি চলে? যা দাম সেটাই ফিক্স। আমাদের খদ্দরের অভাব নেই। এটা ভবিষ্যতে আবাসিক হবে। বড় মার্কেট তুলতে পারবেন মশাই। ভেবে দেখুন।”

খরিদদারেরা মুখ চাওয়াচাওয়ি করে বললো,
“আচ্ছা কাগজ ঠিক আছে তো? পেপারে লেখালিখি চলছে। এ জমি নাকি বেয়াইনি দখলে। কিনবো কি করে?”
“এসব আইন ফাইন পকেটে রাখি বুঝলেন? কোনো হালার পুতের সাহস নেই আমার সামনে জবান খোলার৷ দখল বুঝিয়ে দিবো, কাগজ বুঝিয়ে দিবো আর কি চাই?”
“কেস হলে?”
“আদালতে যাবে কেউ আপনার মনে হয়। ও সব কেস তো ঝুলতেই থাকে ঝুলতেই থাকে। এসব হলো সব কিছু টাকার খেলা। আর ওদের টাকা দিয়ে আমরা কিনেছি। সই, টিপ, আঙুলের ছাপ সব আছে। এই যে, দেখুন খতিয়ান।”

রাজশ্বীর গা জ্বলছে। ইচ্ছে করছে লোকগুলোর গলা টিপে ধরতে৷ কতটা অমানুষ হলে এতোটা চড়াও হয়ে নিজের অপকীর্তির বড়াই করতে পারে! সব কথা শেষ হবার পর সুমন আস্তে করে সুতোয় বাঁধা কলমটি বের করে নেয়। তারা সেখান থেকে সরতেই যাবে, তখনই সুমনের চটি শুকনো পাতায় শব্দ করে উঠে। বাইরে সিগারেট খাওয়া, দীপঙ্করের ছেলেপেলের নজর পড়ে ঝোপের দিকে। বাজখাই স্বরে বলে উঠে,
“কে রে? কে ওখানে?”

তাদের কন্ঠ শুনেই সুমন এবং রাজশ্বীর ভেতরটা কামড় দিয়ে উঠে। রাজশ্বী সুমনকে বলে,
“সুমন দা পালাতে হবে। দৌড় দিতে পারবেন তো? চলুন দৌড় দেই। ধরা পড়লে মেরে ফেলবে কিন্তু”

দীপঙ্করের লোকেরা টর্চের আলো ফেলতেই আলো সুমনের ভয়ার্ত মুখে গিয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে একজন বলে উঠে,
“দাঁড়া ওখানে, এই কে কোথায় আছিস। ধর ধর, লুকিয়ে কথা শুনছিলো বোধ হয়”

মূহুর্তেই শান্ত নিবিড় পরিবেশটি গমগমে হয়ে গেলো। সবার শোরগোল বাড়তে লাগলো। ছেলেপেলের শোরগোলে দীপঙ্কর বাহিরে আসে। তাদের জিজ্ঞেস করে,
“কি রে চিৎকার করছিস কেনো?”
“দাদা, দুজন ক্যামেরা হাতে লুকিয়ে জানালার পাশে ছিলো। হয়তো ছবি তুলছিলো। কি করবো দাদা?”
“অকর্মন্য, গবেট কোথাকার। তোদের টাকা দিয়ে কি গন্ডমূর্খের মতো দাঁড়িয়ে থাকার পয়সা দেই। যা না দেখ কোথায় গেছে। এগুলোকে ধরতে না পারলে আমাদের সব ফাঁস হয়ে যাবে। যা”

রাজশ্বী এবং সুমন প্রাণ বাঁচাতে ছুটতে থাকে। ক্যামেরার রিলটা এবং কলম টি অতি সাবধানে নিজের কাছে রাখে। তাদের জুনিয়রদের কাছেও রেকর্ডিং কলম আছে সেকারণে প্রমাণের অভাব হবে না। শুধু তারা ধরা না পড়লেই হয়। এদিকে দীপঙ্করের লোকজন পেছনে ছুটতে থাকে। হাতে তাদের ছড়ি, দা। না জানি কত অস্ত্র। উদ্দেশ্য রাজশ্বী এবং সুমনকে এই গ্রাম থেকে বের না হতে দেওয়া। ছুটছুটতে পায়ে ব্যাথা করে উঠে রাজশ্বীর। আকা বাকা পথ যেনো শেষ হবার নাম নেই। অবশেষে একটি পানের বরজের কাছে চলে আসে তারা। উপায়ন্তর না পেয়ে রাজশ্বী এবং সুমন সেই পানের বরজের ভেতরে লুকিয়ে পড়ে তারা। আমাবস্যার রাত, চাঁদও যেনো ঘাপটি মেরে রয়েছে তাদের বাঁচাতে। টর্চ দিয়ে তন্ন তন্ন করে খুজতে থাকে তারা। সুমন আয়াতুল কুরসী পড়তে থাকে। তার হৃদস্পন্দন ক্রমেই বেড়ে চলেছে। মৃত্যির ভয়ে তার হাটু কাঁপাচ্ছে। এদিক রাজশ্বীর পা টা যেনো হিম ধরে গিয়েছে। অবশ হয়ে আসছে। পানের বরজের ভেতরে হাটু গেড়ে ঘাপটি মেরে বসে থাকাটা খুব সহজ কার্য নয়। তার কপালে ঘাম জমছে, ফাগুনের শীতল রাতেও ঘামছে সে। গলাটা শুকিয়ে আসছে ছুটার কারনে। এক এক জায়গায় তন্ন তন্ন করে খুজতে খুজতে এক পর্যায়ে একটি ছেলের চোখে পানের বরজে যায়। সে সিদ্ধান্ত নেয় পানের বরজে একবার দেখবে, সে টর্চ হাতে ঢুকে পড়ে বরজে………

চলবে

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here