উমা পর্ব -৪২+৪৩+৪৪+৪৫

#উমা [কপি করা নিষেধ]
#৪২তম_পর্ব

অভিনব সিংহের কথায় বিদ্রুপের হাসি হাসে রুদ্র। তার হাসির ঝংকার অভিনব সিংহের মুখোভাব বদলে দেয়। রুদ্র তখন ধীর স্বরে বলে,
“কোন বাবা নিজের ছেলের প্রগতিতে অখুশি হয় বলুন তো? কোন বাবা শুধু নিজের ছেলেকে নিজের মুঠোয় রাখার জন্য তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে?”

রুদ্রের প্রশ্নে থমকে যায় অভিনব সিংহ। পরমূহুর্তে রুদ্র রুঢ় স্বরে বলে,
“শুধুমাত্র আমাকে নিজের হাতের মুঠোয় রাখার জন্য, আপনি আমার বন্ধুকেও হত্যা করতে দু বার ভাবেন নি। আপনি জানতেন আমি যদি রাজনীতিতে জড়াই আমি আপনার অধীনে থাকবো না। তাই আপনি করিমকে হত্যা করিয়েছিলেন। আমি ভেবেছিলাম, আমার শত্রুরা আমাকে হত্যা করার জন্য ওর উপর আক্রমণ করেছে। বলুন বাবা, কোন পিতা নিজের সন্তানের সাথে এরুপ আচারণ করে। তার সন্তানের উন্নতির মাঝে বাধা তৈরি করে?”

অভিনব সিংহ অবিচল। শান্ত দৃষ্টিতে সে তাকিয়ে রয়েছে রুদ্রের মুখপানে। রুদ্রের চোখগুলো জ্বলজ্বল করছে। তার বুকে জ্বলন্ত অগ্নিশিখার প্রতিচ্ছবি চোখে ভেসে উঠছে। তিনি ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো৷ তারপর ধীর স্বরে বললো,
“আমি তোমার ভালো চাই রুদ্র। পৃথিবী অনেক কঠিন। এখানে ক্ষমতার প্রাধান্য সর্বত্র। সেই ক্ষমতার বিষাক্ত খেলায় আমি তোমাকে আনতে চাই নি। আমাকে দেখো, এ হাতে কত মানুষের লহমা লেগে আছে জানা নেই। আমি চাই নি তুমি সেই দুনিয়ায় আসো। এর চেয়ে আমার অপদার্থ মাতাল ছেলেটি হয়ে থাকো তাতে আমার আপত্তি নেই। আমার অধীনে তোমার কেউ ক্ষতি করবে না।”
“তার জন্য আমার ভালোবাসার মানুষের ক্ষতি হবে আর আমি মুখ বুজে দেখবো?”
“এই ভালোবাসা মায়া সব আপেক্ষিক৷ আমাকে দেখো, সম্পর্কের মায়া আমাকে কখনোই দূর্বল করে নি। তোমার মায়ের লাশখানা দেখলেও আমি কাঁপবো না। নিজের বোনকে বিধবা করার সময়ও আমি দু বার ভাবি নি। আমার কাছে সবচেয়ে মূল্যবান আমি নিজে। তোমাকে আমার প্রতিচ্ছবি রুপে গড়তে চেয়েছিলাম। যার ইহজীবনে মায়া নামক দূর্বলতা থাকবে না। যে হবে বজ্রের ন্যায় কঠোর। কিন্তু তোমার জীবনে ওই নিখিলের মেয়ে আসাতে তুমি বদলে গিয়েছো। এখন কি না আমার বিরুদ্ধেই লড়ছো। এখন তুমি পিতা হতে চলেছো, আরো একটি মায়া তোমাকে আকড়ে ধরবে। যখন এই মায়ার বোঝায় নিজেকে দূর্বল বোধ করবে তখন এই পিতার কথা তুমি স্মরণ করবে। যাই হোক, তুমি এখন স্বাধীনচেতা একজন পুরুষ। নিজের সকল সিদ্ধান্ত নিজেই নিচ্ছো। শুনেছি জনগনের মাঝে তোমার প্রবল জনপ্রিয়তা। আশা করি আমাকে হারিয়ে দিবে। তবে আমি কিন্তু নিজের শত্রুদের ছেড়ে দেই না। আমার লক্ষ্যের মাঝে যারা বাধা সৃষ্টি করবে তারাই আমার শত্রু। হোক সে আমার ছেলে মেয়ে অথবা আমার ভগিনীপুত্র।”

অভিনব সিংহের ঠান্ডা স্বর হিম ধরিয়ে দিলো রুদ্রের শিরদাঁড়ায়। অবনমিত চোয়াল খাড়া শক্ত হয়ে উঠলো। বাঁকা হাসি হেসে বললো,
“আমার শিরায় আপনার ই তো রক্ত। হারতে আমিও শিখি নি। শত্রুতা যেহেতু করেছি, নিঁখুত ভাবেই করবো।”

অভিনব সিংহের হাসি প্রসারিত হলো। শীতল পরিবেশ মূহুর্তেই উষ্ণ হয়ে উঠলো। বাবা ছেলের তীক্ষ্ণ চাহনী একে অপরকে ভেদ করছে। তারা ভুলেই গিয়েছে তারা পিতা পুত্র। সূর্য দিগন্তে ভিড় জমিয়েছে। নীলাম্বরি রক্তাক্ত হয়ে উঠেছে রক্তিম আভায়। পাখিরা ঘরে ফেরায় উদ্যোক্ত। সূর্যাস্ত নতুন সূর্যের উদয়ের যবনিকা, কেউ জানে না আগামী সূর্যোদয়ে তাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে।

ফেরার পালা উমাদের। ফুলির মা নিজের টুকরি বেধেছে। সে ও যাবে উমাদের সাথে। উমার এমনাবস্থায় একজন বয়স্ক তার সাথে থাকাটা জরুরী। লক্ষী দেবীর যাওয়া সম্ভব নয়। তাই তিনি ফুলির মাকে পাঠাচ্ছেন। অনেক ধরণের পিঠেপুলি বাক্সবন্দি করে দেওয়া হয়েছে। বাগানের কলা, পেপে বেধে দিয়েছে। হাজারো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ছেলে হবার জন্য পুরুতের দেওয়া ফুলটি উমার আঁচলে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। রুদ্র আগে আগেই গাড়িতে উঠে বসেছে। উমা শ্বশুর শাশুড়ীকে প্রনাম করলো। অভিনব সিংহ গতদিন তাকে কিছুই বলে নি। তবে আজ বলছে। শান্ত, গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
“নিজের এবং আসছে নারায়নের খেয়াল রেখো”
“যদি সে লক্ষী হয়?”
“যে আসবে আমার ই রক্ত। সাদরেই গ্রহণ করবো। তবুও বংশের প্রদীপের ব্যাপার ও আছে। মেয়ে মানুষ তো বংশের সূচনা করে না।”

উমা স্মিত হাসে। নম্র স্বরে বলে,
“প্রার্থনা করবেন যেনো সে সুস্থ হয়, মা ছেলে দেক বা মেয়ে। আমরা তাকে মানুষ রুপেই গড়ে তুলবো”

উমার জড়তাহীন কথায় কপাল কুঞ্চিত হয়ে আসে লক্ষী দেবীর। কিন্তু তার শারীরিক অবস্থার কথা ভেবেই দমে গেলেন। মেয়েটি আগে এতো কথা বলতো না। কিন্তু এখন মুখ খুললেই মনে হয় কেঁচি চলে। অভিনব সিংহ বাঁকা হাসি হাসলেন। উমার মাঝের পরিবর্তন দেখলে মনেই হয় না, এই মেয়েটি একদিন মাথা নত করে তার বাড়ির অবহেলিত আসবাবের মাঝে পড়ে থাকতো। উমা গাড়িতে উঠলো। গাড়ি স্টার্ট দিলো রুদ্র। পিচের রাস্তা এগিয়ে গেলো তাদের গাড়ি। কিছুদূর যেতেই জানালার কাঁচ নামিয়ে আঁচলে বাঁধা কুসংস্কারের বীজটি ফেলে দেওয়া হলো একরাশ অবহেলায়। কোথাও না কোথাও এক দলা পাথর নেমে গেলো মস্তিষ্কের কোঠর থেকে___________

২২.
সংঘটনের অফিসে হিসেব মিলাচ্ছে উমা। এই মাসে বেশ কয়েকটা সেলাইমেশিন প্রদান করা হয়েছে। নারীরা প্রগতিকে বরণ করছে ব্যাপারখানা বেশ ভালো লাগছে উমার। প্রতিটি নারীর সাবলম্বী হওয়া উচিত। সাবলম্বী নারীর কারোর দয়ার প্রতীক্ষায় থাকতে হয় না। তাই তো আজ শিল্পীর কারো কাছে দয়াভিক্ষা চাইতে হচ্ছে না। সেদিনের ঝামেলার দু দিবস বাদেই মকবুলের সাথে চরম দূর্ঘটনা ঘটে। একটুর জন্য সে যমের দোয়ারে যায় নি। কিন্তু সারাজীবনের জন্য সে পঙ্গু হয়ে গিয়েছে। হাত পা নাড়াতে পারে না। মকবুলের এমন অবস্থা দেখে শিল্পীর দয়া হয়। যতই হোক মানুষটা তার সন্তানের পিতা। তাই শত অত্যাচারের পর ও সে তাকে অবহেলা করতে পারে নি। নিজের সামান্য আয়েই তাদের সংসার চলছে। উপরন্তু উমা তাকে একটি জমি দিয়েছে। যা কেটে মাছ চাষ করা যাবে। শিল্পী জমিটা বর্গা দিয়েছে৷ ফলে তার অভাব বেশ লাঘব হয়েছে। উমার স্মিত হাসি দেখে শিউলী প্রশ্ন করে,
“এই অসুস্থ শরীরে এদিকে আসা কি খুব জরুরী? রুদ্র দা তোকে আসতে দিয়েছে?”
“আমার কলেজ বাড়ি করতে ভালো লাগে না গো, রাজশ্বীটাও থাকে না। গোপাল স্কুলের পর কোচিং এ যায়৷ মিনুটা টিভি নিয়েই বসে থাকে। আর ফুলির মা সারাক্ষণ এটা সেটায় মুখে পুড়ে দেয়। তাই ইচ্ছে হয় না, বাসায় থাকতে। আর এই সংগঠন টা আমার প্রাণ। প্রাণ ছেড়ে কি করে থাকবো। আর হিসেবটাও তো দেখতে হবে।”
“বিকেল হতে চলেছে, এবার উঠ। গাড়ি এসে পড়েছে হয়তো।”
“আচ্ছা এ মাসে নতুন সদস্য কতজন হলো?”
“দশজন বেড়েছে। তাদের ক্লাস আগামী সোমবার। তুই নিবি?”
“এবার আমি নিবো না। তুমি ই নিয়ে নিও।”

বলে উঠে দাঁড়ালো উমা। শরীরটা ক্লান্ত লাগছে। গর্ভাবস্থার তৃতীয় মাস চলে, সময় পাখির মতো উড়ছে যেনো। এখন সাবধানতা আরোও বেড়েছে তার৷ রুদ্র তার জন্য গাড়িটা বাসায় ই রাখে। উমার যাতায়াতে যেনো কোনো অসুবিধা না হয়। উমা শিউলিকে বাকি কাজ বুঝিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দেয়।

শাশ্বতের সামনে মাহমুদ সরদার বসে রয়েছে। তার আঙ্গুলের ফাঁকে জ্বলন্ত সিগারেট। মুখে একরাশ কালো ভয় কুণ্ডলী পাকিয়েছে। ক্ষণে ক্ষণে এক একটা টান দিচ্ছে আর প্রবল বেগে হাটু নাচাচ্ছে। শাশ্বত বাঁকা হাসি হেসে বললো,
“কি সরদার মশাই? ভয় টা কি বেশি পেয়ে গেলেন?”
“ভয় পাবো কেনো? আমি কোনো অন্যায় করেছি নাকি?”
“বিঘার পর বিঘা জমি হাতিয়ে মাস চাষ করাটা কি অন্যায় নয়? বেনামী জমি সরকারের, সেই জমি নিজের বলে দাবী করা অন্যায় নয়? ব্যাক্তি মালিকানায় সুদ খাওয়া অন্যায় নয়? চরম সুদে মানুষকে ঋণগ্রস্থ করে তাকে হয়রানি করা অন্যায় নয়? সবথেকে বড় ব্যাপার, চালান পথে মাদকদ্রব্য পাচার করা কি অন্যায় নয়?”

মাহমুদ চোখ নামিয়ে নিলো। শুকনো ঢোক গিলে বললো,
“কি চাই আপনার?”
“ভেবে বলছেন তো? আমি কিন্তু মানুষটি লোভী”
“আরে ভনিতা না করে বলুন ই না কতো টাকা চাই। দিচ্ছি”

সরদারের ব্যাকুল কন্ঠে উচ্চ শব্দে হাসে শাশ্বত। তার হাসির ঝংকারে কেঁপে উঠে মাহমুদ সরদার। তার কাছে শাশ্বত ভয়ংকর একজন ব্যাক্তি। যার মনে কোনো প্রকার ভয়ের রেশ নেই, নেই কোনো দূর্বলতা। তারপর হাসি থামিয়ে শাশ্বত বললো,
“টাকার মোহ আপনাদের মতো অমানুষদের আছে আমার নয়। আমার মোহ সত্যের। আমি যে সত্যান্বেষী। আমি শুধু সত্য জানতে চাই”
“কিসের সত্য?”
“দারোগা উত্তম মুখার্জির মৃত্যুর সত্য”

কথাটা শুনেই সরদারের মুখখানা ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। শুকনো ঢোক গিললো সে। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে তার। বুকের বা পাশটায় চিনচিকে ব্যাথা। শাশ্বত তার অবস্থা দেখে বললো,
“দুটো উপায় আছে হয় আমাকে সত্যটা জানাবেন নয় আগামী প্রতিবেদন আপনার নামেই হবে। আর আমি হাওয়ায় হুমকি দেই না”

বলে উঠে দাঁড়ালো শাশ্বত। এবার আর পিছু হটবে না সে। বাবার খুনীকে উপযুক্ত শাস্তি দেবে সে। সে যেই হোক না কেনো!

উমার গাড়ি চলছে আপন গতিতে। রুদ্রের কড়া নির্দেশ গাড়ির গতি ধীর রাখতে। উমার যেনো কোনো অসুবিধা না হয়। উমার নজর বাহিরের দিকে। হাতখানা নিজের পেটের উপর। কেউ একজন প্রতিনিয়ত তার মাঝেই বাস করছে ভাবতেই ভালো লাগছে তার। হঠাৎ ক্রমশ জোড়ে ব্রেক কষলো গাড়ি চালক প্রদ্যুত। উমা নিজেকে কোনো মতে সামলালো। ভয়ার্ত কন্ঠে উমা জিজ্ঞেস করে,
“কি হয়েছে প্রদ্যুত দা? ব্রেক করলে যে!”
“বৌমনি, কেউ গাড়ির সামনে চলে এসেছে। আপনি থাকুন আমি দেখছি।”

বলেই বাইরে বের হলো প্রদ্যুত। গাড়ির সামনে লোকের ভিড় জমেছে। মানুষের গোল শোনা যাচ্ছে। উমার বুক কাঁপছে। হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে ভয়ে। আর বসে থাকতে পারলো না সে। বাধ্য হয়ে গাড়ি থেকে বের হলো সে। ভিড় ঠেলে যে দৃশ্য চোখে পড়লো তা হাত পায়ে হিম ধরিয়ে দিলো উমার……….
#উমা [কপি করা নিষেধ]
#৪৩তম_পর্ব

উমার গাড়ি চলছে আপন গতিতে। রুদ্রের কড়া নির্দেশ গাড়ির গতি ধীর রাখতে। উমার যেনো কোনো অসুবিধা না হয়। উমার নজর বাহিরের দিকে। হাতখানা নিজের পেটের উপর। কেউ একজন প্রতিনিয়ত তার মাঝেই বাস করছে ভাবতেই ভালো লাগছে তার। হঠাৎ ক্রমশ জোড়ে ব্রেক কষলো গাড়ি চালক প্রদ্যুত। উমা নিজেকে কোনো মতে সামলালো। ভয়ার্ত কন্ঠে উমা জিজ্ঞেস করে,
“কি হয়েছে প্রদ্যুত দা? ব্রেক করলে যে!”
“বৌমনি, কেউ গাড়ির সামনে চলে এসেছে। আপনি থাকুন আমি দেখছি।”

বলেই বাইরে বের হলো প্রদ্যুত। গাড়ির সামনে লোকের ভিড় জমেছে। মানুষের গোল শোনা যাচ্ছে। উমার বুক কাঁপছে। হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে ভয়ে। আর বসে থাকতে পারলো না সে। বাধ্য হয়ে গাড়ি থেকে বের হলো সে। ভিড় ঠেলে যে দৃশ্য চোখে পড়লো তা হাত পায়ে হিম ধরিয়ে দিলো উমার, তার গাড়ির সামনে রক্তাক্ত একজন লোক পড়ে আছে অবচেতন অবস্থায়। লোকটির ঠোঁট চিরে রক্ত জমাট বেধে রয়েছে। ময়লা একটি শার্ট তার হায়ে জড়ানো। প্রচন্ড নিষ্ঠুরতার সাথে তাকে আঘাত করা হয়েছে। তার সারা অঙ্গের দাগ দেখে শিহরিত হয়ে গেলো উমা। কম্পিত স্বরে বললো,
“প্রদ্যুত দা, উনাকে হাসপাতালে নেবার ব্যাবস্থা করুন। উনার অবস্থা তো করুন”
“কিন্তু বউ মনি আপনার এই অবস্থায় বাড়ি যাওয়া বেশি জরুরি।”
“আপনি কি পাগল হলেন নাকি! উনার রক্তক্ষরণ দেখুন, উনাকে হাসপাতালে না দিলে মৃত্যু ও হতে পারে। আমি ঠিক আছি, প্রদ্যুত দা। আপনি উনাকে গাড়িতে তুলুন। আমরা এখন ই হাসপাতালে যাচ্ছি।”

উমার জড়তাহীন স্পষ্ট কথার বিপরীতে যুক্তি দাঁড় করাতে পারলো না প্রদ্যুত। বাধ্য হয়ে তাকে রক্তাক্ত মানুষটিকে গাড়িতে তুলতে হলো। গাড়ি যাত্রা করলো হাসপাতালের দিকে।

উমা হাসপাতালে পৌছালো তখন সূর্য ঢেলে পড়েছে পশ্চিম গগণে। লোকটির অবস্থায় বেগতিক অবস্থা দেখে অতিসত্বর তাকে ভর্তি করানো হলো। উমার ভেতরটা ঠান্ডা হয়ে আসছে। লোকটাকে হয়তো কেউ বেঁধে রেখেছিলো। ছুট পেয়ে প্রাণ বাঁচাতে ছুটেছে সে। তার মাঝেই উমার গাড়ির সামনে পড়ে গিয়েছে সে। আতঙ্কে অচেতন হয়ে গিয়েছে লোকটি৷ উমা বারান্দায় বসে রয়েছে। প্রদ্যুত ধীর স্বরে বললো,
“বাড়ি যাবেন না?”
“ডাক্তারের সাথে কথা না বলে যাওয়াটা ঠিক হবে না।”
“রুদ্র দাদা চটবেন যে, সন্ধ্যে হয়ে এলো। আপনাকে সন্ধ্যের আগে বাড়ি নিয়ে যেতে বলেছেন”
“একজন মানুষের প্রাণের চেয়ে কি আপনার রুদ্রদার মনরক্ষা করা বেশি জরুরী?”
“কিন্তু…”

উমার মুখশ্রী বিরক্তিতে ভরে এলো। সরু তীক্ষ্ণ চাহনী প্রয়োগ করলো সে প্রদ্যুতের প্রতি। প্রদ্যুত তার তীক্ষ্ণ চাহনীতে মাথা নামিয়ে নিলো। সে মনে মনে ঠিক করলো রুদ্রকে ফোনে জানিয়ে দিবে। এদিকে উমা অপেক্ষা করতে লাগলো কখন ডাক্তার বের হবে। লোকটিকে কেনো যেনো খুব পরিচিত লাগছে উমার কাছে। কোথাও তো দেখেছে কিন্তু মনে পড়ছে না। এর ই মাঝে ডাক্তার বেড়িয়ে এলো। উমা এগিয়ে যেয়ে জিজ্ঞেস করে,
“উনি কেমন আছেন?”
“রোগীর অবস্থা ভালো নেই। কতোদিন না খেয়ে আছেন ঠিক বলতে পারছি না। এক্স রে করিয়েছি, পাজরের হাড় ভেঙ্গে গিয়েছে। ভেতরে রক্তক্ষরণ হবার সম্ভাবনাও রয়েছে। উনি যে বেঁচে আছে এই ভাগ্য। উনাকে কোথায় পেয়েছেন বলুন তো? এতো অমানুষের মতো কেউ মারে মানুষকে! এ পুরোই পুলিশ কেস”

ডাক্তারের কথায় চিন্তিত উমা জিজ্ঞেস করে,
“বেঁচে যাবেন তো?”
“বলতে পারছি না। তবে এটা পুলিশ কেস, আপনি পুলিশে একটা খবর দিন। এমন হতেই পারে উনি এতোকাল গুম ছিলেন৷ কেউ তাকে মারতে চাইছে, হতেই পারে তারা আবার লোকটির উপর হামলা করবে। বুঝতে পারছেন? কোনো চান্স নেওয়া উচিত হবে না।”

উমা মাথা নাড়ালো। ডাক্তার চলে গেলে উমা একবার ওয়ার্ড এ লোকটিকে দেখে এলো। লোকটির মুখে অক্সিজেন মাক্স লাগানো, বুকটা হাপড়ের মতো উঠানামা করছে। সারা গায়ে ব্যান্ডেজের সাদা পট্টি। উমার দীর্ঘশ্বাস ফেললো। লোকটির করুন পরিণতি তাকে বিচলিত করছে। ভাবাচ্ছে বারংবার। উমা ওয়ার্ড থেকে বের হয়ে করিডোর দিয়ে হাটতে লাগলো। প্রদ্যুতকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। হয়তো গাড়িতে গিয়ে বসেছে। তাই উমা সেদিকে খেয়াল না করে সামনে হাটতে লাগলো। লোকটাকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে, লোকটির বেঁচে থাকা জরুরী। নয়তো কখনোই জানা যাবে না তার সাথে এমন অমানবিক নিষ্ঠুর কাজটি কে করেছে। এর মাঝেই তার ফোনটা বেজে উঠে। ফোনের স্ক্রিনে তাকাতেই “রুদ্র” নামটি ভেসে উঠলো। উমার বুঝতে বাকি রইলো না প্রদ্যুত কেনো তার জন্য অপেক্ষা করে নি। উমা ফোন ধরতেই অপর পাশ থেকে থমথমে কন্ঠে কানে এলো,
“তুমি এখন কোথায়?”
“হাসপাতালে”
“তোমার তো হাসপাতালে থাকার কথা নয়!”
“অদ্ভুত একটা ঘটনা ঘটেছে, তাই আসতে হয়েছে।”

রুদ্র কিছুসময় চুপ থেকে বললো,
“তোমার কবে বুদ্ধি হবে বলতো? ভোটের সময় ঘনিয়ে আসছে। হরতাল অবরোধ হচ্ছে হরহামেশা। এখন এতো সময় বাহিরে থাকা কি বুদ্ধিমানের? উপরন্তু তুমি একা নও, একজন জীবন তোমার মাঝে। তবুও তোমার এই গা ছাড়ামিটা বন্ধ হলো না।”
“একজন মানুষকে মৃত্যুর মুখে রেখে কিভাবে মুখ সরিয়ে নিন বলুন তো”

উমা কথা বলতে বলতেই এগিয়ে যায় হাসপাতালের গেটের দিকে। হঠাৎ থমকে যায় সে। রুদ্র গাড়ির গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রুদ্রকে দেখে খানিকটা অবাক হয় উমা। ফোন কেটে সামনে এগিয়ে যায় সে। বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“আপনি এখানে?”

রুদ্র কোনো কথা না বলে জড়িয়ে ধরে উমাকে। রুদ্রের কাজ আরোও অবাক করে উমাকে। তারপর ধীর স্বরে সে বলে,
“প্রদ্যুতের ফোনে তড়িৎ গতিতে এসেছি। দেখো এখনো বুক কাঁপছে।”
“আমি তো ঠিক আছি, কেনো ভয় পান বলুন তো?”
“ভয় কি শুধু শুধু পাই! আচ্ছা আমার কথা শুনলে কি হয়? বাসায় একটা লক্ষী মেয়ের মতো থাকলে কি হয়?মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় তোমাকে বন্ধী খাঁচায় আটকে রাখতে। তাহলে যদি আমার চিন্তা কমে।”
“আমি তো চাই না ঘরের চার দেওয়ালে বন্ধী থাকতে। সর্বদাই তো মুক্ত পাখি ছিলাম। তাহলে কিভাবে বন্দী খাঁচায় ধরা দেই!”

রুদ্রের স্মিত হাসিটা মলিন হয়ে যায়। সে জানে উমাকে চার দেওয়ালে সীমাবদ্ধ রাখা সম্ভব নয়৷ সে উড়তে চায়, সে তার নিজের পথ নিজে তৈরি করতে চায়। রুদ্র কথা বাড়ায় না। ধীর স্বরে বলে,
“গাড়িতে উঠো”
“আমাদের পুলিশ স্টেশন যেতে হবে একটু”

রুদ্রের চাহনী সরু হয়ে আসে৷ প্রশ্ন করে বসে,
“কেনো?”
“যে মানুষটি আমার গাড়ির সামনে পড়েছিলো তার আত্নীয়দের তো জানাতে হবে। নয়তো তারা জানবে কিভাবে?”
“তোমার এ নিয়ে মাথা না ঘামালেও চলবে”
“মাথা ঘামাবো না কেনো? অদ্ভুত কথা বলছেন। মানু্ষটা কে, কি করে জানবো না? আর তার পরিবার ও অধীর আগ্রহে বসে আছে হয়তো। আমার তো মনে হয় লোকটাকে কেউ আটকে রেখেছিলো। কত অমানবিক ভাবে অত্যাচার করেছে আপনার কোনো ধারণা নেই। চোখের সামনে এমনটা দেখেও চুপ করে কিভাবে থাকি বলুন তো?”

উমার কথা শুনে রুদ্রের চোয়াল শক্ত হয়ে আছে। সে গম্ভীর স্বরে বলে,
“শুধু শুধু ঝামেলা কাঁধে নেওয়ার কি আছে?”
“ঝামেলা কেনো বলছেন? এটা জরুরী”

এবার রুদ্র চুপ করে যায়৷ কিছু না বলে দৃষ্টি বাহিরে দেয়। নীরবতা বিরাজমান হয় গাড়িতে। উমার খানিকটা বিরক্তবোধ হয়। রুদ্র তাকে কেনো থামিয়ে দিচ্ছে। গাড়ি পিচের রাস্তা চিরে এগিয়ে যায় গন্তব্যের দিকে।

শাশ্বতের সামনে পুনরায় দাঁড়িয়ে আছে রাজশ্বী। আজ কাজ ভালো ভাবেই করেছে সে। শাশ্বতের মুখে প্রশান্তির ছাপ। স্মিত হেসে বললো,
“অবশেষে তুমি কাজ শিখেছো, যাক ভালো। এখন থেকে আরোও কিছু কাজ দিবো। চাপ বাড়বে কিন্তু”
“জ্বী”

রাজশ্বী ছোট করে “জ্বী” বলে। শাশ্বত মুচকি হেসে বলে,
“সেদিন কি বেশি বকে দিয়েছিলাম? এই কদিন তোমার মুখ ই দেখতে পেলাম না, ডুব দিয়েছো মনে হলো”
“ডুব দেই নি, সুমন দা কাজ বুঝিয়ে দিতো।”
“আমাকে ভয় পাও?”

রাজশ্বী উত্তর দিলো না। শাশ্বত এবার হাসি বিস্তৃত করে বললো,
“চলো নতুন কাজ দেই, সামনে তো নির্বাচন। তোমার কি মনে হয় কে জিতবে?”
“জানি না, অনুমান করা কঠিন।”
“আচ্ছা শোনো, জমি দখলের সে প্রতিবেদনটা সেটা তুমি করবে সুমনের সাথে। আমি কিছুদিন ব্যাস্ত থাকবো। এই নির্বাচন নিয়ে।”

বলেই অভিনব সিংহের ফাইলটা বের করে। এক এক করে অভিনব সিংহের কারসাজির সব প্রমাণ বের করে। রাজশ্বী অবাক কন্ঠে প্রশ্ন করে?
“এটা কি?
“এটা হলো প্রমাণ, কারোর সুখের সংসারে আগুন ধরাতে এটুকুই যথেষ্ট”
“এগুলো সব আপনি জোগাড় করেছেন?”
“না, সব না। কেউ আমাকে সাহায্য তো করছে। সে কে আমার জানা নেই।”

রাজশ্বী কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে বলে,
“কেউ কোনো মনোবাঞ্ছা ছাড়া কেনো সাহায্য করবে আপনাকে?”

রাজশ্বীর প্রশ্নে থমকে যায় শাশ্বত। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে সে রাজশ্বীকে চলে যেতে বলে। রাজশ্বী চলে গেলে গভীর চিন্তায় পড়ে যায় শাশ্বত। সে কখনো গভীরভাবে চিন্তা করে নি। অভিনব সিংহের পতনে কার লাভ হবে! রকিবুল মাষ্টার নাকি অন্য কেউ! হঠাৎ ফোনের শব্দে চিন্তায় ভেদ ঘটে। ফোনটা রিসিভ করতেই………
#উমা [কপি করা নিষেধ]
#৪৪তম_পর্ব

রাজশ্বী চলে গেলে গভীর চিন্তায় পড়ে যায় শাশ্বত। সে কখনো গভীরভাবে চিন্তা করে নি। অভিনব সিংহের পতনে কার লাভ হবে! রকিবুল মাষ্টার নাকি অন্য কেউ! হঠাৎ ফোনের শব্দে চিন্তায় ভেদ ঘটে। ফোনটা রিসিভ করতেই শাশ্বতের মুখশ্রী বদলে গেলো। এক চিলতে হাসি বিস্তৃত হলো ঠোঁটের কোনায়। নির্লিপ্ত স্বরে বললো,
“আমি আসছি, অপেক্ষা করুন”

ফোন রেখে উঠে দাঁড়ালো শাশ্বত। মানিব্যাগটা পকেটে পুড়ে অফিস থেকে বেড়িয়ে গেলো সে। শাশ্বতের চলে যাওয়া দেখে রাজশ্বী সুমনকে প্রশ্ন করে,
“স্যার কি সর্বদা দৌড়ের উপর ই থাকে?”
“খানিকটা থাকে, আসলে সিনিয়র রিপোর্টার কি না, যেখানে নিউজের কিছু পান কভার করার চেষ্টা করেন। এই পাড়ের সবচেয়ে দাপটে সাংবাদিক উনি। বড় বড় নেতা গোতারাও ভয় পায় তাকে। জানো বহুবার তাকে বলা হয়েছে ঢাকা যেতে, স্যার ই রাজী হন নি। কেনো হন ন উনি ই জানেন”

রাজশ্বী সুমনের কথাগুলো মন দিয়ে শুনছে, কিন্তু দৃষ্টি শাশ্বতের যাবার পানেই রয়েছে। লোকটিকে খুব অদ্ভুত ঠেকে রাজশ্বীর কাছে। কেমন যেনো রহস্যময়ী, সর্বদা কিছুর খোঁজে থাকে। কিসের খোঁজ জানা নেই তবে সর্বদা কিছু না কিছু খুজতেই থাকে। রাজশ্বী শাশ্বতকে খুব সূক্ষ্ণভাবে পর্যবেক্ষণ করে। এই তপ সেদিন একজন নামী ব্যাবসায়ী তার অফিসে এসে তার সামনে একটা মোটা বাক্স রাখলো, অনুরোধ করলো যেনো কোনো খবর না করে। কিন্তু শাশ্বত এসবের ধার ধারে না। সে স্পষ্ট স্বরে বলে দিলো,
“এখন ই এই পেটি নিয়ে বেড়িয়ে যাবেন৷ আমি যেনো আপনার মুখখানা দ্বিতীয় বার না দেখি”

রাজশ্বীর মাঝে মাঝে ইচ্ছে জাগে, লোকটির মতো হবার। লোকটির ন্যায় ন্যায়পরায়ণ, সাহসী সাংবাদিক হবার মনোবাঞ্ছা তাকে বিচলিত করে। তাইতো মন দিয়ে কাজ করে সে। যেনো শাশ্বত ভুল ধরতে না পারে। কিন্তু শত চাইবার পর ও কেনো যেনো সব গুবলেট হয়ে যায়। তখন সুমন ধীর স্বরে বলে,
“আচ্ছা রাজশ্বী, এবারে তোমাকে যদি পুরো একখানা খবর কভার করতে দেই কেমন হবে?”
“ঠিক বুঝি নি”
“বলছি, শিবপুর ইউনিয়নের দিকে বেশ কিছু জমি দখল করা হচ্ছে। গ্রামের পর গ্রাম ফাকা হয়ে যাচ্ছে। তুমি কি আমার সাথে অদিকটা যেতে পারবে?”
“কবে যাবেন”

উৎসাহিত কন্ঠে প্রশ্নটি করে রাজশ্বী। সুমন কিঞ্চিত অবাক হয়, তার ধারণা নারী মানেই ভীতু। সে কল্পনা করেছি রাজশ্বীকে প্রশ্নটি করলে সে ভয়ে শিটিয়ে যাবে। কিন্তু তা হলো না। উলটো তার মাঝে এক অদম্য জ্যোতি জ্বলজ্বল করে উঠলো। দূর্দান্ত প্রেরণা নিয়ে উদ্যমী কন্ঠে সে প্রশ্নটি করলো। সুমন স্মিত হেসে বললো,
“তোমার কলেজ বন্ধ না শুক্রবার?”
“শুক্রবার ব্যাতীত যাওয়া যাবে না?”
“সারাদিনের কাজ তো শুক্রবার গেলেই ভালো হয়”

রাজশ্বী কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললো,
“আসলে দিদি জানে না আমি সাংবাদিকতায় যোগ দিয়েছি। সে জানে আমি বাচ্চা পড়াই। তাই চাচ্ছিলাম অন্য এক দিন যেতে।”
“সমস্যা নেই, বলবে ছাত্রীর পরীক্ষা। যেহেতু ওদিকে যাচ্ছি এক বেলা তো লাগবেই।”
“ঠিক আছে তাহলে কথা বলবো নে”
“খুব বড় খবর, তোমার নিজের জন্য ই ভালো”

রাজশ্বী মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। তারপর নিজ কাজে লেগে পড়ে। সত্যি অনেক বড় একটা খবর, সুমনের সাথে এটায় কাজ করলে সাংবাদিকতায় সে একটি বড় ধাপ পাড়ি দিবে। ভেবেই মন প্রসন্নতায় ছেয়ে গেলো রাজশ্বীর, লক্ষের দিকে একপা দুপা করে এগিয়ে যাচ্ছে সে। একদিন ঠিক লক্ষ্যজয় হবেই_________

২৩.
সূর্যোস্তের সময়, নীল আকাশ লাল আভায় ছেয়ে গিয়েছে। পাখিরা বাড়ি ফেরার তাগিদে ছুটছে। আযানের ধ্বনি কানে আসছে। শীতের প্রতাপটা কমছে না, গতরাতে বরফ পড়ার মতো ঠান্ডা লাগছিলো উমার। মাঘের শেষ সপ্তাহ চলছে। গাছের পাতাগুলো খয়েরি হয়ে গিয়েছে। নতুন কচি পাতা মাথা চিরে উঠছে। শীতের প্রকোটতা শেষের লগ্নে, বসন্ত আছসে জানান দিয়ে। বরই গাছটা কেটে ফেলেছে রুদ্র। তুলসি গাছে পানি দিয়ে হাত জড়ো করে প্রনাম করে উমা। ফুলির মা শাখ বাজাচ্ছে। পেটটা একটু ভারী হয়েছে। ডাক্তার তাকে বলেছে বেশি বেশি মাছ মাংস খেতে, ছিপছিপে গড়নের শরীরটা নাকি একটু বেশি দূর্বল। বাচ্চা হবার সময় ঝুকি থাকবে। তাই ক্ষণে ক্ষণে কিছু না কিছু নিয়ে হাজির হয় ফুলির মা। উমা প্রণাম করে প্রদীপ জ্বালায়। তখন ফুলির মার তীক্ষ্ণ কন্ঠ শোনা যায়। মিনুর সাথে লেগেছে। ফুলির মার আসার পর থেকে মিনুর সাথে লেগেই থাকে। উমার মুখে এক রাশ বিরক্তি ভেসে উঠে। সে শালটা ঠিক করে ভেতরে যায়। গোপালের উচ্চস্বরে পড়া শোনা যাচ্ছে। উমা গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“কি হলো ফুলির মা, চিৎকার করছো! যে? গোপাল তো পড়ছে নাকি”
“আমি কিতা করাম, এই মাইয়া একটা কাম চোর”
“মিনু আবার কি করেছে?”

ফুলির মার ধারণা মিনু একজন অকর্মণ্য মেয়ে। তার বিয়ে হলে সে স্বামীর ঘরে কিছুই করতে পারবে না। উমার প্রশ্নে সে কালো পোড়া পাতিল এগিয়ে বলে,
“দেখো বউ, আমি ওরে বললাম, আমি শাখ বাজাতে যাচ্ছি তুই বউ এর জন্য আপেলটা কাটে দে আর দুধ গরম কর। মাইয়া টিভি দেখতে বইছে। দুধ টা পুড়ায়ে দিছে। কতবড় অমঙ্গল হইলো”
“এগুলো কুসংস্কার, এসব কিছুই হয় না”
“তুমি জানো না বউ, দুধ পোড়া অশুভ। না জানি কোনো অঘটন ঘটবে। এই ছেড়ীরে কইলাম ল, দুধ পোড়াবি না। কিন্তু সারাডাক্ষণ শুধু ডিব্বার সামনে বইসে গীত শুনে।”

উমা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। সময় এগোলেও মানুষগুলো এখন আগের মতোই আছে। কুসংস্কারে ঘেরা। শীতল কন্ঠে বললো,
“ফুলির মা, এমন কিছুই হয় না। অসর্তকতায় দুধ পুড়ে গেছে। ব্যাপারটি খুব স্বাভাবিক একটি ঘটনা। এই নিয়ে এতোটা চিন্তা করার কি আছে তাতো বুঝছি না। আর মিনু, তোমাকে বারংবার বোঝাতে বোঝাতে আমি ক্লান্ত। ঠিক সময়ে ফুলির মা যদি না দেখতো একটা অঘটন ঘটে যেতে পারতো। পাতিল দেখে বোঝা যাচ্ছে আগুন ধরে গিয়েছিলো। তাই বলি একটু সতর্ক হও। অঘটন৷ ঘটতে সময় লাগে না। গ্যাসের চুলো। আগুন ধরলে রক্ষে নেই। তাই বলছি একটু সতর্ক হও। ফুলির মা, তুমিও রবার ক্ষান্ত দেও। বাচ্চা মেয়ে, বুঝালে বুঝবে।”

উমার কথায় শান্ত হলো ফুলির মা, কিন্তু মন কু ডাকছে। কেনো যেনো তার মনে হচ্ছে কোনো অঘটন ঘটবে। তাও অতি শীঘ্রই।

উমা নিজের ঘরে পড়তে বসে। গর্ভাবস্থায় ও পড়ালেখায় কোনো ঘাটতি রাখে নি উমা। কলেজে যাচ্ছে, পরীক্ষাও দিচ্ছে। ছয়মাসের সময় শিক্ষকদের বলে বন্ধ দিবে সে, রুদ্রের সাথে তেমনটাই কথা হয়েছে। এর মাঝেই ফোনটা বেজে উঠে তার। অচেনা নম্বর দেখে কপাল কুঞ্চিত হয়ে আছে উমার। ফোনটা ধরতেই এক অচেনা কন্ঠ কানে আসে উমার,
“উমা রায় বলছেন?”
“জ্বী, বলুন”
“আমি কালীগঞ্জ থানার ওসি শ্রাবণ মুখোপাধ্যায় বলছি, বিগত সপ্তাহে আপনি একজন নিখোঁজ মানুষের নামে রিপোর্ট করান। সেই বিষয়ে কিছু কথা বলতাম”
“জ্বী, উনার পরিবারের মানুষের খোঁজ পাবার জন্য রিপোর্টটি করিয়েছিলাম। উনি হাসপাতালে ভর্তি এখনো। তার চিকিৎসা চলছে। জ্ঞান ফিরেছে উনার?”

উমার প্রশ্নে শ্রাবণ ধীর কন্ঠে বলে,
“জ্বী, উনার জ্ঞান ফিরেছে। কিন্তু একটা খারাপ খবর ও আছে।”
“খোলশা করে বলুন তো”
“উনার জ্ঞান ফিরেছিলো গতকাল রাতে, কিন্তু আজ সকালেই উনাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না……….
#উমা [কপি করা নিষেধ]
#৪৫তম_পর্ব

উমার প্রশ্নে শ্রাবণ ধীর কন্ঠে বলে,
“জ্বী, উনার জ্ঞান ফিরেছে। কিন্তু একটা খারাপ খবর ও আছে।”
“খোলশা করে বলুন তো”
“উনার জ্ঞান ফিরেছিলো গতকাল রাতে, কিন্তু আজ সকালেই উনাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমি জানি আপনাকে বিরক্ত করাটা ঠিক হবে না। কিন্তু না করে উপায় ছিলো না। আপনি কি একটু থানায় আসতে পারবেন?”

শ্রাবণের কথায় চুপ করে গেলো উমা। লোকটিকে পাওয়া যাচ্ছে না কথাটা মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষে বারংবার ঝংকার তুলছে। লোকটিকে তিনদিন পূর্বে দেখতে গিয়েছিলো সে। ডাক্তার জানিয়েছিলো অবস্থা ভালো নেই, অন্য হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। মাথায় রক্তক্ষরণের কারণে তার জ্ঞান ফিরছিলো না। ডাক্তারের ধারণা তিনি কোমায় চলে গিয়েছে। উমার জোড় করার কারণেই রুদ্র পুলিশে একটা রিপোর্ট লিখিয়েছিলো। লোকটির গত রাতে জ্ঞান ফিরেছিলো, সে কথা বলার চেষ্টা করছিলো। অথচ আজ সকাল থেকেই তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। রাতারাতি কোথায় চলে যেতে পারে সে। শ্রাবণের কন্ঠে উমার স্বম্বিত ফিরে, সে নিজেকে সামলে কাঁপা স্বরে বলে,
“আমি সকালে থানায় এসে দেখা করে যাবো”
“ধন্যবাদ, এই অবস্থায় আপনাকে বিরক্ত করার জন্য সত্যি ক্ষমাপ্রার্থী”
“না না, সমস্যা নেই। আপনি উনার পরিবারের খোঁজ পেয়েছেন?”
“জ্বী, খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পেরেছি উনি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ডাক্তার। থাকেন শিবপুরের কাছাকাছি। লোকটি বিগত আটমাস থেকে গায়েব। পরিবারের লোক সদর থানায় কমপ্লেইন তো করেছে কিন্তু কাজ হয় নি। পুলিশ গা ছাড়া দিয়েছে। উনার স্ত্রী, বাচ্চা ঢাকা থাকে। লোকটির খোঁজ না পেয়ে স্ত্রী আসেন। ছয়মাস খোঁজ না পাওয়ায় তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। অথচ সেই কিছুদিন পূর্বে আপনার গাড়ির সামনে এসে পড়েছে। উনাকে কারা বেঁধে রেখেছিলো। কি উদ্দেশ্য জানা নেই। আমি তো সব কিছু রুদ্র সাহেবকে জানিয়েছিলাম, উনার সাথে আমার ফোনেও কথা হয়েছিলো”

উমা শ্রাবণের কথায় অবাক হয়। কারণ রুদ্র এমন কোনো কথাই তাকে জানায় নি। বরং উমা নিজ থেকে জিজ্ঞেস করলেও সে চেপে গিয়েছে। উমা অবাক কন্ঠে বলে,
“উনি আমায় কিছু জানান নি”
“হয়তো আপনার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে আপনাকে বলেন নি। আমি আজ উনাকেই ফোন করতাম। কিন্তু উনার ফোন বন্ধ তাই আপনাকে ফোন করেছি”
“হতে পারে, উনি আমাকে নিয়ে বড্ড চিন্তা করেন কি না। আচ্ছা আমি রাখছি। আগামীকাল দেখা হবে। আমার সাধ্যমত আপনাদের সাহায্য করবো।”

ফোনটি রেখে দেয় উমা। তার শরীরটা ভালো লাগছে না। লোকটির নিখোঁজ শুনেই মাথাটা ঝিম ধরে গিয়েছে। এককাপ চা হলে মন্দ হতো না। চায়ের মিনুকে হাক দেয় উমা। মিনু ছুটে আসে। ক্লান্ত কন্ঠে বলে,
“ফুলির মাকে একটু চা দিতে বলো তো মিনু”
“দুধ তো পুড়ে গেছে। এখন খালারে কইলে উনি আমারে দাবরাইবো”
“চা করতে দুধ লাগে কে বলেছে তোমায়। রঙ চা বলেও কিছু আছে সেটা কি জানা আছে?”

মিনু ঘাড় কাত করে। উমা তখন বলে,
“যাও, এক কাপ রঙ চা আদা আর লং দিয়ে দিতে বলো। আজ রাজী এসেছে?”
“না ছুটো দিদিমনি এখনো আয় নাই”
“আয় নাই কি? বলো আসে নি”
“আসে নি”

বাধ্য মেয়ের মতো উমার কথা আওড়ায় মিনু। উমা স্মিত হেসে বলে,
“আচ্ছা শোনো। চা টা দিতে বলে আবার আমার রুমে আসবে। মাথাটা দপদপ করছে তেল দিয়ে দিবে। পারবে?”
“জ্বে পারবো।”
“যাও, তবে”

মিনু চলে গেলে ঘড়ির দিকে চোখ দেয় উমা। রাজশ্বীর জন্যও চিন্তা হয় খুব, মেয়েটা রাত করে বাড়ি ফিরে। সে নাকি দুটো ছাত্র পড়ায়। পড়ানোতে আপত্তি নেই উমার। কিন্তু সময়টা তো দেখবে। এখন দিত ভালো না। এই কিছুদিন পূর্বে একটি মেয়েকে ধর্ষণ করা হলো। ধরনী কল্যান সংগঠন থেকে আন্দোলন ও করেছে শিউলীরা। উমার শরীর ভালো নেই বলে শিউলী তাকে বাড়িতেই থাকতে বলেছে। তাদের আন্দোলনে পুলিশ একটু নড়ে চড়ে উঠেছে। আজকাল ধর্ষণের মাত্রা বেড়েই চলেছে। কিন্তু আইন গা ছাড়া দিচ্ছে। মাঝ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মেয়ের পিতামাতা। এটাই সমাজের কঠোর চিত্র। যা আমরা চাইলেও বদলাতে পারছি না। কারণ চাওয়ার পরিমাণটা খুব স্বল্প। আর বিকৃত মানসিকতার মানুষের পরিমাণ কল্পনাতীত।

রাজশ্বী ফিরলো সন্ধ্যে ৭টা নাগাদ, রাজশ্বীর সাথে সাথে রুদ্র ও ঘরে প্রবেশ করলো। রাজশ্বীকে দেখে রুদ্র জিজ্ঞেস করে উঠলো,
“তুমি এতো রাত অবধি কোথায় ছিলে?”

রুদ্রের প্রশ্নে খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় রাজশ্বী। কাঁপা স্বরে বলে,
“আসলে আজ সময়ের দিকে খেয়াল ছিলো না। প্রাইভেট পড়াতে পড়াতে দেরি হয়ে গিয়েছে। আরেকটা নতুন ছাত্রীর পড়ানো শুরু করেছি তো”

রাজশ্বীর দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকালো রুদ্র। ললাটে ঘাম জমেছে। কন্ঠ কাঁপছে। রুদ্র আন্দাজ করতে পারছে রাজশ্বী কিছু লুকাচ্ছে। মেয়েটির মুখখানা ভয়ে ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে। রুদ্র তখন নিজেকে স্বাভাবিক করে ধীর স্বরে বলে,
“দিদি জানে?”
“না, আজ বাঁচিয়ে দিয়েন জামাইবাবু। আর হবে না। মায়ের দিব্বি”
“বেশ, তাহলে যে ঘুষ দিতে হয়”
“কেমন?”
“দিদি থেকে বাঁচালে আমাকে সত্যিটা জানাবে এতো রাত অবধি কোথায় ছিলে! আমি মিথ্যে ধরতে পারি, আর যাদের মিথ্যে বলার অভ্যেস নেই তাদের মিথ্যে সহজে ধরে ফেলি”

রাজশ্বী জমে যায় রুদ্রের শীতল কন্ঠে বলা কথায়। তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলে,
“ঠিক আছে”

রুদ্র এবার প্রসারিত হাসি আকে ঠোঁটে তারপর একত্রে বাড়িতে প্রবেশ করে। উমা তখন বসার ঘরে পেপারের পাতা উল্টাচ্ছিলো। রাজশ্বীকে ঢুকতে দেখে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,
“কটা বাজে?”

উমার গম্ভীর কন্ঠে রাজশ্বী শুকনো ঢোক গেলে। উমা যতই ভাই বোনকে ভালোবাসুক না কেনো বড্ড শাসনে রাখে তাদের। এবং মিথ্যে তার মোটেই পছন্দ হয় না। রাজশ্বী এই সাংবাদিকতার কাজটি শুরু করেছে উমার কাছ থেকে লুকিয়ে। উমাকে বললে হয়তো দ্বিমত করতো না। কিন্তু সাহস করে উঠে নি রাজশ্বী। কারণ পেশাটি খুব ই ভয়ংকর এবং ঝুকিপূর্ণ। বাবার মৃত্যুর পর উমা তার কাছের মানুষগুলোকে নিয়ে বেশ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। তাই উমার কাছ থেকে লুকিয়েই বিগত চারমাস যাবৎ কাজ করেছে রাজশ্বী। কিন্তু আর হয়তো লুকানো সম্ভব হবে না। রাজশ্বী কিছু বলার পূর্বে রুদ্র বলে উঠে,
“আমার সাথে ছিলো, আমি একটু কেনাকাটা করাতে নিয়ে গিয়েছিলাম। তোমার এই অবস্থায় তোমাকে বের করাটা ভালো দেখায় না। তাই ওকে নিয়ে বের হলাম।”

উমা সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালে রুদ্র তার হাতে রাখা ব্যাগটি এগিয়ে দেয়। উমা সেটি খুলতে একটি সুন্দর লাল পাড়ের শাড়ি দেখতে পায়। উমা রুদ্রের পানে প্রশ্নোবোধক দৃষ্টিতে তাকালে সে বলে,
“কি হলো? আমি বউ এর জন্য শাড়ি কিনতে পারি না?”

উমা রাজশ্বীর উদ্দেশ্যে বলে,
“যাও উপরে গিয়ে কাপড় ছেড়ে নাও। চা পাঠাচ্ছি”

রাজশ্বী ঘাড় কাত করে উপরে চলে যায়। উমা শাড়ীটি সোফায় রেখে রুদ্রের উদ্দেশ্যে বলে,
“আপনার ফোন বন্ধ কেনো?”
“বন্ধ নাকি?”
“হ্যা, শ্রাবণ বাবু ফোন করেছিলেন। বন্ধ পেয়েছেন। আমিও ফোন করেছিলাম। পাই আপনাকে। আপনি বন্ধ করে রাখেন নি?”

উমার প্রশ্নে রুদ্র তার পকেটে হাত দেয়। কিন্তু ফোনটি পায় না। রুদ্রের কপালে ভাঁজ পড়ে, চিন্তিত কন্ঠে বলে,
“আমার ফোন বোধ হয় চুরি গেছে।”
“সে কি কথা? চুরি যাবে কিভাবে?”

রুদ্র তখন বিরবির করে বলে,
“আমি বোধহয় ওখানে রেখে এসেছি”
“কোথায় রেখে এসেছেন?”
“একটা পার্টির সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। হয়তো ওখানেই রেখে এসেছি। যাক গে, কাল নতুন একটা মোবাইল কিনে নিবো। শ্রাবণ কি বলছিলো?”
“ওই যে লোকটি, যে আমাদের গাড়ির সামনে চলে এসেছিলো। উনি সকাল থেকে নিঁখোজ। কাল আমাদের থানায় যেতে হবে।”

উমার কথা শুনে রুদ্রের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
“তোমার যাওয়ার প্রয়োজন নেই, আমি যাবো ক্ষন”
“কিন্তু”
“আমার ক্ষুধা লেগেছে। আমি হাত মুখ ধুয়ে আসছি”

বলেই রুদ্র ভেতরে চলে যায়। উমা কিছু বলতে যেয়েও বলতে পারে না। রুদ্রের এরুপ বিরুপ আচারণে অবাক হয় উমা। রুদ্রের এতোটা এড়িয়ে যাবার কারণ বুঝে উঠে না সে। মনের ভেতর হাজারো প্রশ্ন উঁকি দেয় তার। কিন্তু উমা প্রশ্নগুলোকে পাত্তা দেয় না। শাড়িটির দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।

তিনদিন পর,
শাশ্বতের মুখোমুখি বসে রয়েছে মাহমুদ সরদার। তার ভারী মুখখানা শুকিয়ে রয়েছে। সে যাতাকলে পিসছে তা বুঝতে বাকি রইলো না শাশ্বতের। শাশ্বত তার বিরুদ্ধে একটি প্রতিবেদন লিখেছে। যা তুমুল ঝড় তুলেছে। শাশ্বতের সাথে সাথে অন্যান্য সাংবাদিকরাও প্রতিবেদন লিখেছে। শাশ্বত চাপের কাপে চুমুক দিয়ে বলে,
“আমাকে ডেকেছেন অথচ চুপ করে বসে আছেন, সরদার বাবু আমার তো সময়ের দাম আছে নাকি”
“আমার খবরটা ধামা চাপা দেবার কি উপায় নেই?”
“উপায় বলেছিলাম আপনি রাজী হন নি, বলি তো নিজেই হচ্ছেন”
“উত্তম বাবুকে আমি খুন করি নি”
“জানি, কিন্তু তার খুনের পেছনে কে ছিলো সেটাও তো বলছেন না।”
“বললে আমাকে জ্যান্ত রাখবে না।”

ভয়ার্ত কন্ঠে কথাটা বলে মাহমুদ সরদার। সরদারের ভয় দেখে শাশ্বত এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,
“কে? কে জ্যান্ত রাখবে না?”

সরদার আশেপাশে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
“আপনার মামা অভিনব সিংহ রায়………

চলবে

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here