#ঋণশোধ
#পর্ব২২
#লেখাঃসাদিয়া_আফরিন_ইভা
অথৈ তো তখন দরজাতে হাত লাগায়নি, ধাক্কাও দেয়নি তাই বুঝতেও পারে নি খোলা না বন্ধ। যাইহোক যা হওয়ার হয়ে গেছে সেটা ভেবে আর লাভ নেই এটা ভেবে অথৈ বাথরুমে ঢুকে গেলো। ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখলো আবেগ উঠে গিয়েছে। অথৈকে বের হতে দেখেই যেনো তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো। লাফ দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে অথৈয়ের বাহু চেপে ধরলো আর বললো,
“তোমাকে না বললাম আমার সামনে আসবে না। আমার রুমের আশেপাশেও না। তারপরও তুমি এখানে কি করছো?”
“হাত ছাড়ুন আর এটা একা আপনার নয় এটা আমারও রুম। আর আপনার বিহেভিয়ার দেখে তো মনে হচ্ছে আপনি একদম সুস্থ আছেন। সুতরাং আপনার সঙ্গে নরম সুরে আর কথা বলার প্রয়োজন দেখছি না।”
আবেগের চোখে চোখ রেখে ই অথৈ কথাগুলো বললো। আবেগ তখন বরাবরের মতো ই বাহু চেপে ধরে বললো,
“আমার সাথে তুমি কথা বলবে নরম সুরে?
হাহা নাইস জোক্স পাটরানি। আমি তো তোমার আসল স্বরুপ জানি তাই জন্য তো তোমার মিষ্টি কথায় আমি ভুলবো না এটা তুমি জানো আর এজন্যই বলছো না। মিষ্টি করে কথা তো তুমি তোমার আশিকদের সঙ্গে বলবে”
“আচ্ছা? আমি আপনাদের বাড়ি আসার পর আমাকে কখনও কথা বলতে দেখেছেন?
বাহিরের কারোর কথা বাদ ই দিন। আমার ফ্যামিলির কারো সঙ্গে কথা বলতে দেখেছেন?”
“আমি কি তোমার বডিগার্ড নাকি? আমি আমার কাজে থাকি, বাকিরাও যার যার কাজে থাকে। তুমি সেই সুযোগ এ যে কারোর সঙ্গে কথা বলো না সেটা কে জানে!”
“আচ্ছা। তাহলে যখন জানেন ই আমি এমন তাহলে আমাকে আপনি জেনেশুনে বিয়ে কেনো করলেন?”
“যাতে আর কোনো ছেলের জীবন নষ্ট না করতে পারো।”
“তাই! তা আটকাবেন কিভাবে শুনি? আপনি আপনার কাজে, বাকিরা বাকিদের কাজে থাকে। আমি সেই সময় টায় করলে আপনি কি করে সেটা আটকাবেন শুনি।
আমি তো সেই সময় টায় ই লুকিয়ে কথা বলি, তাইনা? তো কিভাবে বাঁচাবেন শুনি!”
অথৈয়ের এই কথার জবাবে আবেগের আর কিছু বলার রইলো না। অথৈ কাটা কাটা যুক্তির কাছে হার মানতে হলো। কিন্তু অথৈ এর কাছে তো এমন ভাবে হেরে গেলে চলে না। তাই জন্য এবার বললো যে ওকে মারার চেষ্টা করেছে সেটা কি ছিলো? অথৈ ও উত্তর দিয়ে বলল,
“সে তো আমি ও বলতে পারি আপনি আমায় মারতে চাইছিলেন দুনিয়ায় বাকি ছেলেদের বাঁচানোর জন্য আমাকে ঠান্ডার মধ্যে ফেলে রেখে মারতে চাইছিলেন । যদি আপনি মনে করেন তাহলে তো আমিও করতে পারি, তাইনা?”
এবারেও অথৈয়ের সঙ্গে তর্কে না পেরে হেরে গিয়ে বললো,
“তুমি বড্ড বেশি কথা শিখে গেছো দেখছি। আগে তো দেখতাম সহজ সরল বোকা বোকা ছিলে কথাই বলতে পারতে না। অবশ্য বলতে না পারলে নিশ্চয়ই ছেলেদের মন নিয়ে খেলতে পারতে না। তখন হয়তো মিচকে শয়তান ছিলে। এখন আপগ্রেড হয়ে গেছো”।
আবেগের এই কথা শুনে অথৈয়ের সেই খারাপ অতীত টার কথা মনে পড়ে গেলো।
আর কোনো শব্দ করলো না। আবেগও দেখলো হঠাৎ করে মুখটা কেমন যেন হয়ে গেছে অথৈয়ের। আবেগ মনে মনে ভাবলো হঠাৎ করে এমন কেনো হয়ে গেছে এতক্ষণ তো খুব কনফিডেন্স নিয়ে কথা বলে যাচ্ছিলো। কিন্তু অথৈকে উদ্দেশ্যে করে বলে উঠলো,
” এই তো এসেছেন লাইনে। সুন্দর সেই অতীত টার কথা মনে পড়ে গেলো বুঝি?
আহারে কি মিষ্টি ছিলো! তাইনা? কত কত ছেলের সঙ্গে.. ”
আবেগ এইটুকু বলার পর অথৈ কেমন যেনো কান্না জড়ানো গলায়। মানে কান্না এসে গলার কাছে আটকে গেলে যেমন হয় তেমন স্বরে বললো,
“প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন”
অথৈয়ের এই কথাতে আবেগও নিশ্চুপ হয়ে সাথে সাথে হাত ছেড়ে দিলো। ছাড়া পেয়ে অথৈ আর এক মুহূর্ত সেখানে না দাঁড়িয়ে ছাদে চলে গেলো। আবেগের কেমন যেনো লাগলো হঠাৎ করে.. কয়েক সেকেন্ড ওভাবেই রইলো আর বোঝার চেষ্টা করলো কি ঘটেছে৷ অথৈ ওইরকম কেনো করলো!
অথৈকে ছাদের দিকে যেতে দেখেছে। তাই কৌতূহল মেটাতে আবেগেও ছাদে চলে গেলো। কারণ আবেগ ভেবেছিলো অথৈ নিচে চলে যাবে কিন্তু ছাদের দিকে যাবে এটা ভাবে নি। আর ভাবেনি বলেই কৌতুহল হলো আর সেও তাই ছাদের দিকে গেল। ছাদে দরজায় দাঁড়িয়ে দেখলো অথৈ ছাদের এক কর্ণারে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
অথৈকে এভাবে কাঁদতে দেখে আবেগের বুকের ভেতর কেমন একটা চিনচিনে ব্যথা অনুভব হলো। আর এক মুহূর্ত সেখানে রইলো না নিজের রুমে চলে গেলো। আর বাথরুমে ঢুকে গেলো ফ্রেশ হতে। চোখের সামনে বারবার ওই সিন ভেসে উঠতে লাগলো আর কেমন কেমন যেনো একটা অনুভূতি হতে লাগলো। ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে যখন নিচে গেলো দেখলো অথৈ নেই, বুঝতে পারলো অথৈ এখনও ছাদ থেকে নামে নি। এখন আরও বেশি করে ভাবাচ্ছে অথৈয়ের এমন করা টা। কোনো কিছু ই ভাবতে পারছে না যে ঠিক কি কারণে করছে এমন।
অথৈ সহজে ভেঙে পড়ে না। সেই খারাপ অতীত টাকে ভুলে গিয়ে নিজেকে একটু একটু করে সামলে নিয়ে এমন শক্ত করে গড়ে তুলেছে। ওর মা আর বোন ছাড়া আর কেউ জানেনা ওর ওই খারাপ অতীতের কথা। আর যতই নিজেকে শক্ত করুক ওই ঘটনা মনে পড়লে যেনো সেই আগের মতোই ভেঙে পড়ে। তাই সেই এলাকা বন্ধু বান্ধব সব কিছু ছেড়ে চলে এসেছিলো। আর ওর মা -বোনও কখনও সেটা মনে করায় না।
তারাও চেষ্টা করে যাতে অথৈয়ের মনে ই না থাকে সেই ঘটনা। হঠাৎ করে আবেগ এমন করে বললো তাতে কেনো জানি সেই ঘটনা টা অথৈয়ের সামনে ভেসে উঠতে লাগলো।
আর সেই দিনের মতোই হয়ে গেলো। অনেক গুলো দিন পর বুঝি এভাবে কেঁদেছে। শেষ কবে কেঁদেছিলো সেটা ওর মনে ই নেই। মনে মনে বলল, “আবেগ তুমি তো আমাকে কাঁদাতেই চাইছিলে..তুমি তোমার কাজে সফল হয়েছো।”
কখন যে সময় পেরিয়ে গেছে সেটা অথৈয়ের খেয়াল ই রইলো না। যখন খেয়াল এলো তখন তাড়াতাড়ি চোখ মুছে উঠে দাঁড়ালো। রুমে ঢুকে বাথরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি দিলো যাতে কান্নাকাটির দাগ না থাকে। নিচে নেমে এলে শাশুড়ী মা অথৈকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন আর বললেন,
“আজও সেদিন এর মতো দেরি দেখে তো আমি ভয় ই পেয়ে গিয়েছিলাম। যাক এসেছ দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারলাম। তা আজকে এত দেরি যে? ও দেরি তো হবে ই সারারাত না ঘুমিয়ে ছিলে যে”
অথৈ শাশুড়ীর কথার জবাবে কিছু না বলে মলিন একটা হাসি দিলো। আবেগ চেয়ারে ই বসে ছিলো আর অথৈয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো। আবেগ আসার পাঁচ সাত মিনিট পর ই অথৈ এসেছিলো। অথৈয়ের চোখ মুখের অবস্থা দেখেও মনোয়ারা বেগম কিছু জিজ্ঞেস করলেন না। ভাবলেন বুঝি না ঘুমানোর জন্য এমন হয়েছে। অনন্যা তখনও আসেনি আর এসেই বললো,
“ভাবি গো কি হয়েছে তোমার খালি ছাদে যাচ্ছ। সকালে যাচ্ছ রাতে যাচ্ছ কাহিনি কি হু?”
রাতের ব্যাপার টা কাউকে জানতে দিতে চাইলো না অথৈ, তাই অনন্যার কথার প্রেক্ষিতে বললো,
“রাতে কই আমি তো সকালে ই গিয়েছিলাম!”
“উহু। তুমি রাতেও ছাদে ছিলে। আমি ভাইয়াকে দেখার জন্য আসছিলাম তখন তোমাকে ছাদে যেতে দেখেছি। আমার ধারণা তুমি সারারাত ই ঘুমাও নি।”
#ঋণশোধ
#পর্ব২৩
#লেখাঃসাদিয়া_আফরিন_ইভা
অথৈ কি বলবে ভেবে পাচ্ছিল না। অনন্যার কথা শুনে মনোয়ারা বেগম জিজ্ঞেস করলেন,
“তুমি সারারাত ঘুমাও নি বউমা?”
” না মানে মা, আসলে… ”
অনন্যা কথা শেষ করতে দিলো না ও বলে উঠলো,
“হ্যাঁ মা ঘুমায় নি। ভাইয়ার টেনশনে আমার ঘুম আসছিলো না ঠিক ঠাক তাই আমি বারবার উঠে দেখছিলাম। প্রথম বার তো নিচে গেলাম তোমার ঘরে কিন্তু গিয়ে দেখি ফাঁকা। পরে যখন উঠে আসছিলাম তখন ভাবিকে ছাদে যেতে দেখছিলাম।”
মনোয়ারা বেগম বুঝতে পারলো ছেলেটা আবার কিছু করেছে কিন্তু ভয়ে আর কিছু বলার সাহস করলেন না। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অথৈকে বললেন নাস্তা করে যেনো ঘুমাতে যায়। আবেগ খেতে খেতে অথৈয়ের মুখের দিকে ই তাকিয়ে ছিলো। ভালো করে দেখে বুঝতে পারলো অন্যন্য দিনের মতো প্রানোবন্ত নয় অথৈয়ের চেহারা। আর এটাই ওকে অবাক করছে। যত যাই ঘটেছে অথৈকে শক্ত থাকতে দেখে আবেগ ভেবেছে অথৈ ভালো সাজার অভিনয় করছে। কিন্তু আজকে কনফিউশান এ পরে গেলো। ব্যাপার টা খতিয়ে দেখতে হবে এটা ভেবে অফিস চলে গেলো।
অথৈয়ের ঘুম আর আসেনি। আর ভয়ে চোখ ও বন্ধ করে নি ওই অভিশপ্ত অতীতের কথা ভেবে যে যদি চোখ অফ করলেই ওগুলো ভেসে ওঠে। সারাটাদিন ছাদেই কাটিয়ে দিলো। সন্ধ্যার নাস্তার সময় নিচে গেলো কিন্তু কোনো কথা বললো না চুপচাপ রইলো। মনোয়ারা বেগম বুঝতে পারলো কিন্তু কিছু আর বললো না। বলে কি লাভ? নিজের ছেলেটাকে শাসন তো আর করতে পারবেন না শুধু শুধু মনে করিয়ে দিয়ে কাটা গায়ে নুনের ছিটা দিতে চাইলেন না। সন্ধ্যার নাস্তা করে আবারও ছাদে চলে গেলো। অথৈয়ের মনে হলো এই বাড়িতে এটাই বুঝি ওর একান্ত আপন যায়গা যেখানে এলে কেউ কিছু বলবে না। নিজের মতো ই থাকতে পারবে।
কিছুটা সময় কাটার পর অনন্যা এলো৷ এসে জিজ্ঞেস করলো,
“ভাবি তোমার কি হলো? আজকে শুধু বারবার ছাদে আসছো”
“এম্নিতেই ভালো লাগছে খোলামেলা পরিবেশ তাই আরকি। তুমি কখন এসেছ?”
“অনেকক্ষন। এসে খেয়েছি দেন তোমায় খুঁজতে রুমে গিয়ে দেখি রুমে তুমি নেই। ভাইয়া একা। তখন বুঝে ফেলেছি কোথায় পাওয়া যাবে”
অনন্যা কথা টা বলে দাঁত বের করে হেসে দিলো আর অনন্যার হাসির জবাবে অথৈ একটা মলিন হাসি দিলো। কিন্তু সেই অন্ধকারের জন্য অনন্যা সেটা দেখতে পায় নি। ও নিজের মতো করে বলে গেলো।
“জানো ভাবি আমাদের প্ল্যান একবারে হেব্বি কাজে দিয়েছে। যদিও ভাইয়ার অনেক কষ্ট হয়েছে কিন্তু তাও মা আর ভাইয়ার মিল তো করাতে পারলাম। মাকে নিয়ে শুতে গেলাম কিন্তু মা মোটেই ঘুমাতে চাইলো না। বারবার বিড়বিড় করে এক কথা বলে যাচ্ছিলো আর ভাইয়াকে কিছু বলবে না, আর ভাইয়াকে বকবে না। ভাইয়ার সাথে যদি কথা বলা অফ না করে দিতো তাহলে তো ভাইয়া বলতো খাবারে ঝাল হয়েছে তাহলে আর এভাবে অসুস্থ হয়ে যেতো না। এসব বলে বলে পাগল করে দিচ্ছিলো।”
অথৈ অনন্যার কথার জবাবে ছোট্ট করে একটা “হুম” বললো আর কিছু বললো না।
অনন্যা ভেবেছিলো অথৈ শুনে হেসে ফেলবে যে ওদের প্ল্যান সাকসেসফুল হয়েছে। কিন্তু অথৈকে নির্বিকার থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলো,
“ভাবি তোমার কি কিছু হয়েছে?”
“উহু।”
“তাহলে এমন মন খারাপ কেনো তোমার!”
“জানি না”
অথৈয়ের কথা শুনে অনন্যা অথৈয়ের হাত ঝাকি দিয়ে বলল,
“বলো না ভাবি প্লিজ। তোমাকে এমন দেখতে ভালো লাগছে না। প্লিজ ভাবি প্লিজ কি হয়েছে বলো আমাকে”
“তেমন কিছু না। হঠাৎ করে পুরোনো কিছু বাজে অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গিয়েছে আরকি। যদি কিছু মনে না করো আমাকে একটু একা থাকতে দিবে প্লিজ?”
অথৈ রেলিঙের পাশে দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলছিলো। অথৈয়ের কথা শুনে অনন্যার হাল্কা মন খারাপ লাগলো কিন্তু যেহেতু অথৈ একা থাকতে চাইছে তাই চুপ চাপ চলে গেলো।
অনন্যা চলে যাওয়ার সময় খেয়াল করলো না পাশে দাড়িয়ে আছে কেউ। ওরা দুজন ছাড়াও তৃতীয় কেউ ছিলো যে ওদের কথা শুনে ফেলেছে৷ অনন্যা যখন অথৈকে খুঁজতে রুমে গিয়েছিলো তখন আবেগ কি ভেবে জানি অনন্যার পিছন পিছন ছাদে চলে আসে। আর এসেই ওদের কথা শুনে ফেলে। আবেগর খটকাটা আরও বেড়ে যেতে লাগলো। আর আবেগ অথৈয়ের পূর্বের কোন কিছু ই ওর ফ্যামিলির কাছে জানতে চায় নি। ও ভেবেছে অথৈ কেমন মেয়ে এটা তো জানেই, নতুন করে আর কি জানার আছে? আর এমনও হতে পারে অথৈয়ের ওসব কথা ফ্যামিলির কেউ জানে না৷ আর জানলেও কেউ কি তাদের মেয়ে খারাপ এইকথা কাউকে বলবে!। এজন্যই আবেগ কিছু জানতে চায় নি।
আবেগ কি ভেবে জানি অথৈয়ের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। ওর কি হয়ে গেছে ও নিজেই জানে না। মুহূর্তের জন্য যেন সব কিছু ভুলে গেলো। অথৈয়ের কাধে হাত দিয়ে নরম সুরে অথৈ বলে ডাক দিলো। আবেগ অথৈ দুজনেই যেনো কোনো ঘোরের মধ্যে চলে গেলো। আবেগের চেয়ে অথৈ বুঝি একটু বেশি ঘোরের মধ্যে চলে গেলো। এমন নরমসুরে ডাকটায় অথৈয়ের যেনো মনে হলো ওর আপন কেউ, খুব কাছের কেউ ওকে ডাক দিয়েছে। অথৈ ঘুরে আবেগকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো। অথৈয়ের এমন কান্ডে আবেগও হতভম্ব হয়ে গেলো। কি করবে বুঝে উঠতে পারছিলো না। জিজ্ঞেস করলো,
“কি হয়েছে কাঁদছো কেনো।”
অথৈ কোনো জবাব না দিয়ে কেঁদেই যাচ্ছিলো দেখে আবেগ আবার জিজ্ঞেস করলো। তখন অথৈ বললো,
“আমি ওগুলো ভুলে যেতে চাই। মনে করতে চাইনা ওগুলো মনে পড়লেই মনে হয় এক্ষুণি দম আটকে মরে যাব। প্লিজ ওগুলো আমি মনে করতে চাইনা।”
“কি মনে করতে চাওনা?”
“ও..গুলো ও..গুলো ভুলে যেতে চাই.. ”
কথা গুলো কেমন যেনো জড়িয়ে যাচ্ছিলো গলায় এমন ভাবে বলে অথৈ সেন্সলেস হয়ে গেলো। অথৈয়ের সেন্স নেই এটা বুঝতে আবেগের সময় লাগলো। “ওগুলো ভুলে যেতে চাই” বলার পরে আবেগ জিজ্ঞেস করেছিলো কোনগুলো ভুলে যেতে চায়। যখন দেখলো অথৈ জবাব দিচ্ছে না। তখন আবার জিজ্ঞেস করলো, পরপর তিনবার জিজ্ঞেস করলো পরে যখন জবাব বা কান্নার শব্দ, নড়াচড়া কিছু ই টের পেলো না তখন বুঝতে পারলো। তারপর পাঁজকোলো
করে তুলে রুমে নিয়ে গেলো। বিছানায় শুইয়ে দিয়ে মুখের দিকে তাকালো। দেখলো চোখের কোনা দিয়ে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ছে। পানির ফোটাটা কেনো জানি আবেগের মুছে দিয়ে ইচ্ছে করছিলো তাই মুছে দিয়ে তাকিয়ে রইলো আর ভাবতে লাগলো অথৈ কিসের কথা বলছে। কি মনে করতে চায় না?এই এতগুলো দিনে কান্না তো দূরে থাক এক মুহূর্তের জন্য ভেঙে পড়তেও দেখে নি। সকালের তর্কের সময়েও বেশ কনফিডেন্সের সঙ্গে কথা বলে গেছে। কথা শিখে যাওয়ার কথা বলার পর ই অথৈ দমে গেছে।
ধীরে ধীরে আবেগের আগ্রহ বেড়ে যাচ্ছে।
অথৈ কেনো কি কারণে এমন করছে সেটা জানতে ইচ্ছে করছে। অথৈয়ের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো আর ভাবতে লাগলো কিভাবে জানা যাবে সব। কার কাছে অথৈয়ের অতীতের খবর আছে। ওরা যে এলাকায় ছিলো সেই এলাকার ওদের বন্ধু বান্ধব, ক্লাস মেইট এরা নিশ্চয়ই বলতে পারবে। আর এসব জানতে হলে আবেগের সেখানে যেতে হবে। আবেগ তো অথৈয়ের জন্য সেই এলাকা ছেড়েছিলো এখন অথৈ তো ওর সঙ্গে ই আছে তাই সেখানে যেতে কোনো দ্বিধা নেই। অথৈয়ের খারাপ অতীতটা যেনো ওর মনে না পড়ে সেজন্য ও যেতে চায়না। আবেগের তো আর এই সমস্যা নেই। তাই ভাবলো যাবে সেখানে জানবে অথৈয়ের অতীত। হয়তো ওই অতীতটাই অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে অথৈকে কাবু করতে পারবে।
অথৈয়ের হুস এবার আবেগ নিজেই ফেরাতে চেষ্টা করলো কিন্তু ব্যার্থ হলো।
এবার তো আবেগ কিছু করে নি কিন্তু তাও ডক্টর ডাকলে ওর মা টের পেয়ে ভাব্বে ও ই বুঝি কিছু করেছে। মনে মনে ভাবলো এই মেয়ে যেনো জেনেশুনে ওকে বিপদে ফালায়। হুস এ আসলে তো আর ডক্টর ডাকার দরকার হতো না। এক প্রকার বাধ্য হয়ে ই ডক্টর কে ডাকলো। ডক্টর দেখে বলে গেলো না ঘুমানোর কারণে দূর্বল হয়ে বেহুশ হয়ে গেছে। ডাক্তার চলে গেলে আবেগ মা’কে বললো,
“এবারে কিন্তু আমি আর কিছু করিনি। তুমি আবার আমাকে দোষী ভেবে বসে থেকো না।”
আবেগের কথায় মনোয়ারা বেগম কিছু বললেন না। অথৈকে ডক্টর ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে গেছেন সকালের আগে ওর ঘুম আর ভাঙবে না। আবেগ দ্বিতীয় বারের মতো বুঝি স্বইচ্ছায় অথৈয়ের পাশে শুয়েছে। সকালে অথৈয়ের ঘুম ভাঙলে আগের চেয়ে স্বাভাবিক অনুভব হলো। উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে গেলো। অথৈকে দেখে মনোয়ারা বেগম বললেন,
“যাক উঠেছো। দুই দিন পরে পরে অসুস্থ হয়ে যাও আমার বড্ড বেশি ভয় করে।”
কথা টা বলে ছেলের দিকে তাকালেন। অথৈ কিছু না বলে চুপচাপ খেতে বসলো। মনোয়ারা বেগম অথৈকে খাবার দিতে দিতে বললেন,
“বলি কি বউমা। তুমি আর এখানে থেকো না। তোমার বাবা-মা এর কাছে চলে যাও। অন্তত সুস্থ তো থাকবে। এখানে থাকলে দুইদিন পর পর অসুস্থ হও।”
যদিও মনোয়ারা বেগম জানেন অথৈ যাবে না। কিন্তু তাও উনার মনে হলো যেনো অথৈ চলে গেলেই বেশি ভালো হবে। আবেগ এর থেকে এত সহজে কথা বের করতে পারবে না অথৈ সেটা উনি ভালো করে জানেন। সেই আশায় থাকলে অথৈয়ের আর এ বাড়ি থেকে যাওয়া হবে না। অথৈও যেনো হাল ছেড়ে দিয়েছে তাই শাশুড়ীর কথার জবাবে তার ভাবনাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে বললো,
“হ্যাঁ মা আমিও ওদের কাছে চলে যেতে চাইছি। আপনি না বললে কথা টা এক্ষুনি আমি ই বলতাম”
চলবে
চলবে..