ঋণশোধ পর্ব ২০+২১

#ঋণশোধ
#পর্ব২০
#লেখাঃসাদিয়া_আফরিন_ইভা

অথৈ আর মনোয়ারা বেগম আবেগকে অল্প কিছু পানি খাইয়ে রুমে নিয়ে গেলেন। আর অনন্যাও দৌড়ে গিয়ে ডক্টর কে কল করে আবার নিচে চলে এলো। এসে জানালো ডক্টর একটু ব্যস্ত আছেন আসতে দেরি হবে।
সেটা শুনে মনোয়ারা বেগম কেঁদে ফেললেন। তাকে স্বান্তনা দিয়ে অথৈ বললো না কাঁদতে। আগে কি এমন আর কখনও হয়েছিল, তখন কি করেছিলেন? অথৈয়ের কথা শুনে আবেগ গরম চোখে ই ওর দিকে তাকিয়ে ছিলো। ব্রেন ঠিকই কাজ করছে তবে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। খাবার টেবিল থেকে রুম অব্দি আনার জন্য যে অথৈ সাহায্য করেছে তখন যদি পারতো অথৈকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে নিজেই চলে আসতো। কিন্তু একা একা পারবে না বলে ই বাধ্য হয়ে অথৈয়ের সাহায্য নিয়েছে। আর ও তো জানে কাজটা অথৈ করেছে তাই অথৈয়ের এই কেয়ার টা ওর অসহ্যকর লাগলো।

অথৈয়ের কথার জবাবে মনোয়ারা বেগম কেঁদে কেঁদে ই বললেন,
“খুব ছোটো বেলায় এমন হয়েছে দুইবার। তারপর থেকে আর কখনও খাবারে ঝাল দিতাম না। আজকে কিভাবে যে হয়ে গেছে সেটা ই বুঝতে পারছি না।”

বলেই আরও ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন। অথৈ আর কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। ওর জন্য ই তো হয়েছে সবকিছু। এখন কি করবে, কি বলবে ভেবে পাচ্ছিল না। অনন্যাও এক কর্ণারে দাঁড়িয়ে কাঁদতে থাকলো। ওরা দুজনেই বুঝতে পারেনি এতটা অসুস্থ হয়ে যাবে। অথৈ কয়েকমুহূর্ত চুপ থেকে জিজ্ঞেস করলো,
“মা আগের বার যখন অসুস্থ হয়েছিলো তখন কি করেছিলেন সেটা কি মনে আছে?”

মনোয়ারা বেগম কান্না থামান ই নি। কাঁদতে কাঁদতে ই না সূচক মাথা নেড়ে বোঝালেন যে তার মনে নেই। আর অথৈ কি ভেবে যেনো তখন আবেগের দিকে তাকালো। আর তাকিয়েই দেখলো ঝালে আর শ্বাসকষ্টতে হোঁসাতে হোঁসাতে ই ওর দিকে জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে আছে। আবেগের তাকিয়ে থাকা দেখে অথৈ অপরাধীর মতো ই চোখ নামিয়ে ফেললো। মনে মনে ভাবলো শ্বাসকষ্ট টা না কমাতে পারে অন্তত ঝালটা কমাতে পারলেও কিছু টা আরাম পেতো। যতটুকু পানি খেয়েছিলো তাতে ঝাল যাওয়ার কথা নয়। অথৈ এটা ভেবেই রুম থেকে বেরিয়ে রান্নাঘরে গেল ফ্রিজে মিষ্টি আছে কি-না দেখার জন্য। অথৈ নিজেও ঝাল খেতে পারেনা, একবার এক জায়গায় বেড়াতে গেলো সেখানের সবাই প্রচুর ঝাল খায়। তখন ঝাল খেয়ে অথৈয়ের হাল খারাপ হয়ে গিয়েছে দেখে ওর দুলাভাই আইসক্রিম কিনে দিয়েছিলো। আইসক্রিম খাওয়ার পর ওর ঝাল লাগা কমেছে। তাই ভাবলো ফ্রিজে যদি কিছু থাকে তাহলে সেটা আবেগকে খাওয়ানো যেত।

প্রথমে ডিপ ফ্রিজের অংশ খুলে দেখলো আইসক্রিম আছে কি-না দেখলো যে নেই কোনো আইসক্রিম। আইসক্রিমের বক্স আছে ঠিকই কিন্তু তাতে অন্য জিনিস রাখা।
অথৈয়ের হাল্কা হাসি পেলো এটা ভেবে যে এটা বুঝি মায়েদের জাতীয় কাজ আইসক্রিমের বক্সে মসলা বেটে রাখা। এরপর নরমাল অংশ খুলে দেখলো একটা বাটিতে কয়েকটা মিষ্টি আছে। ভাবলো আইসক্রিম আর মিষ্টি একই তো। সুতরাং এটা দিয়েও কাজ হয়ে যাবে। তাই বাটিটা বের করে একটা চামচ নিয়ে দ্রুত রুমের দিকে দৌড় দিলো। রুমে গিয়ে শাশুড়ীকে বললো,
“মা এই মিষ্টি খাওয়ান উনাকে, এতে অন্তত ঝাল টা যাবে।”

অথৈ বুঝতে পারছিলো ও খাওয়াতে গেলে আবেগ খাবে না। তাই রিস্ক নিলো না শাশুড়ীকেই দিলো। তাতেও প্রথম এ খেতে চাইলো না। যখন মনোয়ারা বেগম কান্নার বেগ বাড়িয়ে দিয়ে বলল তারপর খেলো।
দুটো খেয়েই বুঝি কাজ হলো কারণ আবেগকে দেখে আগের চেয়ে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে।

মিষ্টি খাওয়ানোর প্রায় ১৫ মিনিট পর ডক্টর এলো। ডক্টর এসে চেক করে ঔষধ দিয়ে গেলো। অনন্যা ফোনে ডক্টরকে বলেই দিয়েছিলো আবেগের কি সমস্যা হয়েছে। তাই ডক্টর সেই অনুযায়ী মেডিসিন নিয়ে এসেছেন। এই ডক্টরের চেম্বার আবেগদের বাসার কাছাকাছি ই। তাই যখনই দরকার হয় কল করে ডাকে। এতে ডক্টর এর ই লাভ হয়। নরমালি যদি চেম্বারে গিয়ে ডক্টর দেখায় তাহলে ফি টা কম দিতে হয় কিন্তু বাসায় ডাকলে ফি টা একটু বেশি দিতে হয়।
আর মানুষ লাভের পিছনে ই সব সময় ছুটে চলে তাই ডক্টর এর যেহেতু আসা যাওয়ার কোনো খরচ হয়না তাই ডাকলেই চলে আসেন। আবেগকে একটা ইনজেকশন পুস করে দিয়ে আর প্রয়োজনীয় ঔষধ দিয়ে রেস্ট নিতে বলে ডক্টর চলে গেলো। আজকে আর ডক্টরকে দরজা অব্দি এগিয়ে দিতে কেউ গেলো না।

আবেগকে রেস্ট নেয়ার জন্য রেখে সবাই রুমের বাহিরে চলে গেলো। মনোয়ারা বেগম এখনও কেঁদে ই যাচ্ছেন। অথৈ আর অনন্যা দুজন চুপচাপ তার পাশে দাঁড়িয়ে রইলো।
কিছুক্ষন পর অথৈ অনন্যাকে বললো,
“অনন্যা তুমি মা’কে নিয়ে তোমার ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ো আর জেগে থাকা উচিৎ হবে না।
এম্নিতেই অনেক রাত হয়ে গেছে।”

কিন্তু মনোয়ারা বেগম যেতে চাইলেন না। বললেন তিনি আবেগের পাশে বসে থাকবেন সারারাত। অথৈ তাকে বোঝালো এই বয়সে রাত জেগে থাকাটা ঠিক হবে না। এরপর তিনি অসুস্থ হয়ে গেলে ওরা দুজনে কি করবে তারচে রেস্ট নিক সকালে উঠে নাহয় সেবা করবে। মনোয়ারা বেগম বললেন,

“ছেলেটা কি সারারাত ধরে একা থাকবে? ওর যদি কিছুর দরকার হয় তখন যদি পাশে কাউকে না পায়। নিজে নিজে উঠতে চেষ্টা করবে, তারপর যদি অঘটন ঘটে যায়! না না আমি যাবো না। আমি ওর সঙ্গে ই থাকবো”।

” না মা এমন কিছু ই হবে না। আর আপনার ছেলেও একা একা থাকবে না। আমি থাকবো সাথে প্লিজ মা পাগলামি না করে শুয়ে পড়ুন।”

অথৈ মনে মনে ভাবলো এক পাপ করে মাফ এখনও পাই নি তারউপর আরেকটা করে ফেলছি এবারের টার প্রায়শ্চিত্ত করার একটু হলেও সুযোগ পেয়েছি। এক প্রকার জোর করে শাশুড়ীকে দোতলায় পাঠিয়ে দিয়ে আবেগের কাছে চলে গেলো। রুমে ঢুকে ঘুমন্ত আবেগের দিকে তাকালো। দেখে ভীষণ নিঃস্পাপ লাগছিলো। এর আগে কখনও ভালো করে তাকায় ই নি আবেগের দিকে তাই ওর চেহারার মায়াকাড়া সৌন্দর্যটাও অথৈয়ের চোখে পড়ে নি। কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ভাবতে লাগলো আবেগ যখন ইন্টারে তখন ও কোন ক্লাসে ছিলো? ও তো ভালো করে জানেই না ওদের বয়সের ব্যবধান কতটা। তবে পাঁচ বছর আগে ও কোন ক্লাসে ছিলো সেটা বোধহয় মনে আছে। ওর ও তো এক বছর গ্যাপ গিয়েছে তাহলে তো সেই সময়টায় তো ইন্টারের এক্সাম দিয়েছিলো। সম বয়সী ওরা? তাহলে কি ও আবেগকে চিনতো আগে? কিন্তু দেখার পরও তাহলে কেনো চিনে নি!ওর মেমোরি তো এতোটাও খারাপ নয়। কিছু ভেবেই কোনো কিনারা পাচ্ছিলো না যে ও কি করেছিলো আবেগের সঙ্গে।

এমন ভাবনার মাঝে হঠাৎ দেখলো আবেগ নড়ে উঠেছে। ও আবেগের থেকে কিছুটা দূরে একটা চেয়ারে বসে এসব ভাবছিলো।
আবেগকে নড়তে দেখে সতর্ক হয়ে নড়ে চড়ে বসলো, কিন্তু তেমন কিছু ই ঘটে নি।, আবেগ নড়ে এপাশ থেকে ওপাশে ফিরে শুয়েছে শুধু। অথৈ ভাবলো এতটা দূরে বসাও ঠিক না। এরচেয়ে আবেগের পাশে বিছানায় বসলেই ভালো হয়। তাই চেয়ার ছেড়ে উঠে গিয়ে আবেগের পাশে বসলো।
আর আবেগের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,
“তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যান প্লিজ। অনেক কিছু যে আমার জানা বাকি। ”

আবেগ যেনো অথৈয়ের কথা শুনে ফেলছে ঠিক এমন ভঙ্গিতে ই ওই মুহূর্তে চোখ মেলে তাকালো। হঠাৎ এমন কিছু ঘটে যাবে অথৈও আশা করে নি। ঘটনা টায় অথৈও অবাক হয়ে গেলো। মনে মনে ভাবলো আমার কথা শুনে ফেললো নাকি??
#ঋণশোধ
#পর্ব২১
#লেখাঃসাদিয়া_আফরিন_ইভা

আবার ভাবলো দূর এটা কি কখনও সম্ভব না-কি হয়তো এমনিতেই চোখ খুলেছে। আবেগ চোখ মেলে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো কে ওর সামনে আছে আর ও কোথায় আছে। আবেগকে চোখ খুলতে দেখে অথৈ জিজ্ঞেস করলো,

“কিছু কি লাগবে আপনার? এখন কেমন লাগছে।”

অথৈয়ের কথা শুনে আবেগ জ্বলে উঠলো অথৈয়ের হাত ধরে হ্যাচকা টান মারলো।
অথৈ আবেগের বাম হাতের সাইডে ওর পাশেই তো বিছানায় বসা ছিলো তাই টান মারার সঙ্গে সঙ্গে তাল সামলাতে না পেরে আবেগের বুকের উপরে গিয়ে পড়লো। আর আবেগও তো সর্ব শক্তি দিয়ে টান মেরে হাতও শক্ত করে চেপে ধরেছে। তাই অথৈ উঠতে চেষ্টা করলেও উঠতে পারবে না যতক্ষণ না আবেগ হাত আলগা করে। আর এতকিছু করার সুযোগও অথৈ পায় নি। হাত ধরে টান মেরে ই হাত চাপ দিয়ে শীতল কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
“তোমার এখানে কি চাই? তুমি এখানে কি করছো? মেরে ফেলতে চাইছিলে সেটা তখন সফল হয় নি বলে এখন সফল করতে এসেছ?”

আবেগ অসুস্থ দেখে আর যেহেতু ওর কারণে ই অসুস্থ হয়েছে তাই অথৈ নরম সুরে বলল, ” আপনি ভুল ভাবছেন। আমি আসলে..”।
কিন্তু আবেগ অথৈকে কথা টা সম্পূর্ণ করতে দিলো না তার আগেই বলে উঠলো,

“তুমি আসলে কি? আমার করা কাজের প্রতিশোধ নিতে চাইছিলে?আমি তোমাকে শাস্তি দিয়েছিলাম বলে তার শোধ নিতে চেয়েছ! তাও আমার অবুঝ সহজ সরল বোন টা কে ব্যবহার করে। আমি জানতাম তুমি বাজে খারাপ একটা মেয়ে কিন্তু এতটা নিচ হবে এটা ভাবিনি।”

আবেগের এ ধরনের কথা শুনে অথৈ আর নরম থাকতে পারলো না। গলার স্বরে কিছুটা কঠিন ভাব এনে বললো,

“দেখুন এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি করে ফেলছেন। আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলবেন না। আর আমি আপনার ভালো করার জন্য ই কাজ টা করেছিলাম। আপনি অকারণে উল্টো পালটা তো ভাবছেন ই তারপর আবার আমার চরিত্র তুলে কথা বলছেন। এটা কিন্তু ঠিক করছেন না।”

অথৈয়ের কথা শুনে আবেগ এবার অথৈয়ের দুহাত চেপে ধরে উঠে বসলো আর গরম চোখে শান্ত গলায় বললো,
“একশ বার বলবো হাজার বার বলবো তুমি একটা চরিত্রহীনা বাজে মেয়ে। ছেলেদের মন ভাঙ্গাই তোমার কাজ, এখন যখন আমি তোমাকে আটকে ফেলেছি বিয়ে করে তখন তুমি তো আর খেলতে পারছো না তাই আমাকে মেরে ফেলতে চাইছো যাতে তোমার খেলা করতে আর অসুবিধা না হয়। ”

“মানে? কি বলতে চাইছেন আপনি?”

“কেনো বুঝতে পারছো না?”

“না, পারছি না বুঝতে। আর সেজন্যই জানতে চাইছি এসব কথার মানে কি!”

“অথৈ। বিশ্বাস করো তোমার নাটক এ আমি ইম্পেসড। সিরিয়াসলি বলছি, এত সুন্দর করে করছো যে কেউ বুঝতে ই পারবে না এটা নাটক করছ। শুধু আমি বুঝতে পারছি কজ আমি জানি তুমি কত বড় অভিনেত্রী।”

আবেগের কথা অথৈ কিছু ই বুঝতে পারছিলো না। আর আবেগও অথৈয়ের সঙ্গে হেয়ালি করে ই কথা বলছিলো। অথৈয়ের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে অথৈকে একটা ধাক্কা মেরে বিছানা ছেড়ে উঠে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো। অথৈ কয়েক মুহূর্ত ওখানে ওভাবেই রইলো। মনে হলো যেনো এতক্ষণ একটা ঘোরের মধ্যে ছিলো। কি বললো এগুলো আবেগ? অথৈ ছেলেদের মন নিয়ে খেলে? ও একটা বাজে মেয়ে। আবেগ ওকে ভালো করে চিনে ও কেমন কিভাবে সম্ভব এটা? যেখানে ও কখনও কোনো ছেলের সঙ্গে সামনা-সামনিও ভালো করে কথা বলেনি। কখনও অচেনা মানুষের কল রিসিভ পর্যন্ত করে নি।
সেই মেয়ে চরিত্রহীনা! নিজের সম্পর্কে এসব কথা ভেবে অথৈ হতভম্ব হয়ে গেলো।
ভুলে গেলো কিছুক্ষণের জন্য যে আবেগ অসুস্থ ছিল ও তাকে পাহারা দিচ্ছিলো।
কিছু সময়ের জন্য হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে ওখানেই ওভাবে রইলো। হুস এলে পরে উঠে গিয়ে আবেগ কে খুঁজতে লাগলো।

প্রথম এ নিচতলায় খুঁজে দেখলো। আবেগ যে উঠে নিজের রুমে চলে গেছে সেটা অথৈ বুঝতে পারলো না। অথৈ ভাবলো হয়তো ওই রুমের আশেপাশে বা রান্নাঘরে আছে। কিন্তু যখন এসবের কোথাও পেলো না। তখন দোতলায় গেলো ওদের রুমে দেখতে। রুমে ঢুকেও আবেগকে কোথাও দেখতে পেলো না। অথৈ চিন্তায় পরে গেলো। অসুস্থ শরীর নিয়ে কোথায় গেলো, শাশুড়ী মাকে কথা দিয়েছিলো তার ছেলের খেয়াল রাখবে এখন যদি কিছু ঘটে যায় তাহলে তার দায় কে নিবে। ভাবলো হয়তো ছাদে গিয়ে থাকবে তাই ছাদে গেলো খুঁজে দেখতে কিন্তু না ছাদের কোথাও ও আবেগ নেই। ছাদের পরিবেশ টা দেখে অথৈয়ের কেনো জানি একটুখানি ছাদে থাকতে ইচ্ছে করছিলো কিন্তু আবেগ কে আগে খোঁজা দরকার। হঠাৎ খেয়াল এলো রুমে চেক করেছে ঠিকই কিন্তু বাথরুমে করে নি। তাই জন্য দ্রুত সিড়ি দিয়ে নিচে নামলো ওদের রুমে গিয়ে দেখলো আবেগ বিছানায় শুয়ে আছে। ওকে দেখতে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।

আবেগ বাথরুম থেকে বের হয়ে সবে শুয়েছিলো তাই অথৈয়ের তড়িঘড়ি করে আসা টের পেয়ে গেলো। টের পেয়ে সাথে সাথে ই চোখ মেলে তাকালো। অথৈও সেটা দেখলো কিন্তু কিছু বললো না। কিন্তু আবেগ চুপ করে রইলো না। শান্ত ভাবে উঠে এসে হাত ধরে টান দিয়ে রুমের বাহিরে দাড় করিয়ে বললো,
” তোমাকে যেখানে রেখে এসেছিলাম সেখানে ই গিয়ে থাকো আমার আশেপাশে তোমার ছায়াও যেনো না দেখি। আমি আমার আশেপাশে আমার খুনিকে সহ্য করতে পারছি না।”

এইটুকু বলেই অথৈয়ের হাত ছেড়ে দিয়ে রুমের দরজা আটকে দিলো। অথৈ কিছু বলতে চেয়েও কেনো জানি বলতে পারলো না। কেনো পারলো না কে জানে..। কিন্তু ওর খুব করে বলতে ইচ্ছে করছিলো যে একই কাজ যখন আপনি করেন তখন তো এমন টা হয়না। আমি করেছিলাম তাও আপনার ভালো ভেবে তাতেই আমি অপরাধী হয়ে গেলাম!। মানুষের ধর্ম ই কি এটা? যে নিজে করলে ন্যায় আর অন্যকেউ করলে অন্যায়!। কথা টা ভেবে অথৈয়ের ই মনে মনে হাসি পেলো। ওখানে আর দাঁড়িয়ে না থেকে ছাদে চলে গেলো। ছাদে কিছুক্ষণ থাকতে চেয়েছিলো বলেই বুঝি আবেগ ওকে রুম থেকে বের করে দিলো। এটা ভেবে শব্দ করে ই হেসে দিলো।

পুরো রাতটাই নির্ঘুম কাটিয়ে দিলো। কেনো জানি ঘুম এলো না চোখের পাতায়। এতদিন শুধু জানতো আবেগ ওর কারণে কষ্ট পেয়েছে আবেগের লাইফের অনেক টা সময় নষ্ট হয়েছে। কিন্তু এখন এরচেয়ে আরও কিছু জানে। আবেগ মনে করে ও একজন চরিত্রহীনা মেয়ে। কিন্তু কেনো আবেগের মনে ওর সম্পর্কে এ ধরনের ধারণা জন্মেছে! ও তো আবেগের সঙ্গেও কখনও কথা বলে নি। অন্য ছেলে তো বহুদূরে..। প্রশ্ন গুলো মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো আর ভাবতে লাগলো কিভাবে এর উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়। ওর বোন বা দুলাভাই বা সেই সময়ের কেউ কি কিছু বলতে পারবে? পুরোনো বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করবে? না এটা অসম্ভব!। আবার সেই নোংরা মানসিকতার মানুষের সঙ্গে কথা বলতে রুচিতে বাধে। এটা ও করতে পারবে না কখনও। আবেগের মনে যেহেতু ওর সম্পর্কে ধারণা সুতরাং এসব আবেগ ই ভালো বলতে পারবে।

ছাদ থেকে নেমে রুমে চলে গেলো। এই শীতে ঠাণ্ডার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকার পরেও কেনো জানি বেশি শীত টের পায়নি। রুমে ঢুকে দেখলো আবেগ এখনও ঘুমুচ্ছে। ঘড়িতে দেখলো পৌনে ছ’টা বাজে। হঠাৎ খেয়াল এলো আবেগ না দরজা বন্ধ করে দিয়ে ওকে রুম থেকে বের করে দিলো!
তাহলে আবেগ তো এখন ঘুমিয়ে আছে তো দরজা খোলা কিভাবে? তারমানে তখন শুধু দরজা চেপে রেখেছিলো, আটকায় নি।

চলবে…
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here