#একই_সুতোয়_বাঁধা
পর্ব-১৫
সপ্ত শীখা
— জান্নাতুল ! কি করেছেন আপনি ? সারাদিনের গোছানোর কাজটা আমি করে দিলাম আপনি সর্ট করতে এতবড় ভুল করলেন ! এক্সপ্লেইন ইট !
— আই… আই এ্যাম সরি স্যার… আমি এক্ষুনি ঠিক করে আনছি।
— ওয়েট ! কিভাবে করবেন শুনি ?
— যেভাবেই হোক… আমি বিকেলের মধ্যেই করে আনব।
সায়ন বিরক্ত মুখে কফি বানাতে বসল। এমন রাগ তুলে দিয়েছে মেয়েটা যে এখন কফি ছাড়া মন শান্ত হবে না। এমন আনাড়ির মত কাজ করে কেউ !
কফি খেতে খেতে হঠাৎই মন কেমন করতে শুরু করেছে সায়নের। শুন্য শুন্য একটা অনুভূতি হচ্ছে। রাগ সরে গিয়ে অমন লাগছে কেন ? জান্নাতুলের ছলছলে চোখের কারণে ? কাজে ভুল করলে তো বকবেই, তার জন্য এমন চোখ ভরা পানি আসার কি দরকার ছিল !
মা কে ফোন দেয়া যাক…
— হ্যালো আম্মা ? আসসালামু আলাইকুম…
— সায়ন ? আমার বাপ টা… ওয়ালাইকুম সালাম। কেমন আছস বাপ তুই ?
— ভাল আছি আম্মা… হঠাৎ তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করল। শরীর ভাল আম্মা ?
— হ বাপ ভালই আল্লাহর রহমতে। সায়ন ?
— হু
— তর মনডা খারাপ তাইনা বাজান ? গলা ভার ভার লাগতেছে। কি হইছে ? কেউ কিছু কইছে ?
( সায়ন হেসে ফেলল… মা এখনো ভাবে ছেলের মন খারাপের একমাত্র কারন কেউ কিছু বলেছে !)
— নাহ আম্মা। এম্নিই।
— আম্মার কাছে লুকাইলে হইব বাপ ?
— আম্মা… একজন কে বকা দিয়েছি। তাই মন খারাপ।
— কেডা… কোন মাইয়া নি রে ?
( মায়ের গলায় শঙ্কার ভাব দেখে অবাক সায়ন। )
— হুম।
— সায়ন… কোন মাইয়ার লগে ভাব করিস না বাবা দোহাই তর। আল্লাহর গজব পড়ব।
— আহহা আম্মা… কই টেনে নিচ্ছ ? উনি আমার আন্ডারে কাজ করে। আর মুখ ও দেখিনাই। বোরকা নিকাব পরা।
— অহ তাইলে ঠিকাছে।
— আম্মা রাখি ?
— রাখবি ? আইচ্ছা… রাতে ফোন করিস।
— হু। আসসালামু আলাইকুম।
সায়ন ফোন রাখতে রাখতে দেখে জান্নাতুল দরজায়। সায়ন প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। জান্নাতুল ভেতরে এসে ওর টেবিলে কাগজগুলো রাখল। মাথা তুলছেই না সে। কাগজ রাখার সময় সায়ন দেখল ওর চোখদুটি লাল লাল ফুলো ফুলো।
— স্যার ঠিক করে এনেছি। দেখে নিন একটু।
— দ্রুতই করলেন। থ্যাঙ্কস… হুম ঠিক আছে সব। রেখে যান।
— জি। আমি যাই।
— জান্নাতুল… একটু শুনুন না ?
— জি ?
— আমি আপনার সাথে আজকে অনেক রুড বিহেভ করেছি। রাগ করবেন না প্লিজ।
— জি। আসি আমি ?
— প্লিজ জান্নাতুল… প্লিজ ! আপনি রেগে আছেন। রাগ ঝেড়ে ফেলুন।
— আমি রেগে নেই স্যার…
— তবে এমন শুকনো কথা বলছেন যে ?
— এম্নি। আসি আমি।
বাইরে এসে দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকল পুষ্প। বারবার কান্না আসছে ওর। এমন ছিঁচকাদুঁনে না ও… কিন্তু সায়নের থেকে অমন রুক্ষভাবে বকা খাবার পর থেকেই ঘুরে ঘুরে কেবলি চোখ ভরে আসছে। ভালবাসার মানুষ তো…
💛💛💛💛💛
— জান্নাতুল ! এইইই জান্নাতুল ! জান্নাতুল্লল্লল্লল !
পুষ্প চমকে তাকাল। বাস স্টপে দাঁড়িয়ে ছিল ও। সায়ন একটা গাড়ির ভিতর থেকে মাথা বার করে ডাকছে। পুষ্প ভেবেছিল এড়িয়ে যাবে কিন্তু চারপাশের লোকজন তাকিয়ে আছে। তাই এগিয়ে গেল গাড়ির কাছে।
— স্যার আপনি ?
— হু। কোথায় যাবেন ?
— হোস্টেল…
— আহ হোস্টেলটা কই ?
— মিরপুর বারো…
— আসুন নামিয়ে দেই। ভয় পাবেন না গাড়ি আমার না। উবারের। আসুন বসুন। আমি মিরপুরের দিকেই যাচ্ছি পথে নামিয়ে দেব।
— না স্যার আমি বাসেই যাব।
— জানি যাবেন। আরো এক ঘন্টা দাঁড়াতে হবে তার জন্য। জান্নাতুল, আসুন না ?
— না থাক…
— প্লিজ ! আমি সরি বলার প্রক্রিয়া হিসেবে লিফট দিতে চাইছি… আসুন !
এরপরে আর কিছু বলা চলেনা। উঠে বসল পুষ্প গাড়িতে। সায়ন পুষ্পের যেন অসুবিধা না হয় তাই একধারে চেপে বসেছে। পুষ্প পাশে বসে উদাসী দৃষ্টিতে বাইরে চেয়ে আছে… যেন সায়নের এ গাড়িতে থাকা বা না থাকায় কিছুই এসে যায় না। যদিও বাস্তব ভিন্ন।
— জান্নাতুল ?
— জি স্যার
— আপনার কি কোন সমস্যা হচ্ছে ? জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছেন…
— ন…ন্না স্যার… আমার মনেহয় ঠান্ডা লাগবে তাই।
— ও… হোস্টেলে একাই থাকেন ?
— এক বান্ধবির সাথে রুম শেয়ার করি। স্যার আমি একটু চোখ বন্ধ করব।
— ওহ… শিওর !
পুষ্প চোখ বন্ধ করে মাথা এলিয়ে বসে রইল। গাড়ি জ্যামে পড়েছে। সায়ন নিজেকে আটকাতেই পারছেনা… একটু পরপর তাকাচ্ছে পুষ্পর দিকে। কি আছে এর মাঝে ? এত চেনা চেনা কেন লাগে ওর প্রতিটি ভাবভঙ্গি ?
💙💙💙💙💙
— পুষ্প রানীইইইইইই… সায়ন “স্যার” মনেহয় তোমার প্রেমে পড়ে যাচ্ছে।
— নীরা ফাইজলামি করিস না তো। আমি যে কিভাবে নিজেকে সামলেছি আমিই জানি। উনার সাম্নে থাকলেই তো আমার হার্টবিট বেড়ে যায়। আজকে তো জিজ্ঞেস ও করেছে ” জান্নাতুল বড় বড় শ্বাস নিচ্ছেন কেন ?” খ্যাতা পুড়ি জান্নাতুলের… কোথায় পুষ্পি বলবে তা না জান্নাতুল জান্নাতুল।
— আরে মেরি মা নিঃশ্বাস নে !
— বাজে লোক একটা জানিস ? আজকে কিভাবে যে বকল !
— তার তো শোধ ও দিলো… তোকে পৌঁছে দিয়ে গেল যে ! মাফ করে দে বেচারা কে।
— 😂😂 নীরা হাসাবি না তো। আমি উনার উপর রাগ হইনি যে মাফ করব।
— ওমা ! তাহলে কান্নাকাটি কেন করেছিলি ?
— অভিমান হয়েছিল তাই। উনি আমাকে বকবে কেন ? কোথায় আমি স্বপ্ন দেখে আসছি সে আমায়-
— কি বল বল ?
— কিছু না যাহ ! এসব শুনতে হয়না।
💙💙💙💙💙
সকাল সাড়ে সাতটা। পুষ্প রেডি হচ্ছে অফিসে যাবার জন্য। এইসময় ফোন বাজতে শুরু করল। বিরক্ত হয়ে হিজাব টায় পিন লাগিয়ে ফোন তুলে দেখে সায়নের নাম্বার। অবাক হল ও… এত সকালে !
— আসসালামু আলাইকুম স্যার !
— ওয়ালাইকুম সালাম। জান্নাতুল, আমি নিচে অপেক্ষা করছি। দ্রুত নিচে নামুন।
— কি ! কিসের নিচে !
— আপনার হোস্টেলের নিচে… হাঁটাহাঁটি করছি কিন্তু। পাঁচ মিনিটে নামুন।
— আপনি কেন এলেন ? আমিই তো যেতাম !
— এত কথা না বাড়িয়ে আসুন না ! অপেক্ষা করছি…
পুষ্প বিরক্ত হয়ে ফোন কাটলেও একটু পরেই প্রবল আনন্দে ওর মন ভেসে যেতে চাইল। নিকাব টা বেঁধে মুখে হাত দিয়ে বিছানায় বসে রইল কিছুক্ষন। নিজেকে সামলে নিয়ে উঠল। ব্যাগে ফোন রেখে দৌড়ে নামল নিচে। সায়ন সত্যি নিচের ফুটপাথে হাঁটছে। পুষ্পকে দেখে এগিয়ে এল।
— এতক্ষন লাগে ?
— সাত মিনিট লাগল মাত্র।
— নাস্তা করেছেন ?
— হু…
— উবার কল করেছি। এসে গেছে একটু আগে। আসুন…
আজ ও পাশাপাশি বসে অফিসে এল ওরা। গতদিনের মতই আড়স্ট হয়ে বসে রইল পুষ্প। সায়নের পাশে থাকলে ওর মাথা জ্যাম হয়ে থাকে একদম। কিচ্ছু ভাবতে ইচ্ছে হয় না। সায়ন ওর কেউ নয়… তবু এত মায়া ! কেন এ হয় !
[