একই সুতোয় বাঁধা পর্ব ২২

#একই_সুতোয়_বাঁধা

পর্ব-২২

সপ্ত শীখা

ফজরের আজানের শব্দে ঘুম ভাংল পুষ্পর। চোখ খুলতে গিয়ে অনুভব করল যে খুলতে কষ্ট হচ্ছে। রাতের কান্নার ফলেই হয়ত ! চোখ কচলে পাশ ফিরেই একেবারে ভূত দেখার মত চমকে উঠল সে। সায়ন ওর পাশে আধশোয়া হয়ে গভীর ঘুমে। একি কান্ড !

পুষ্পর মুখ রক্তচ্ছ্বটায় লাল হয়ে গেছে। লজ্জায়… আর তারচেয়েও বেশি আনন্দে ! ইচ্ছে করছে সায়ন কে একটু ছুঁয়ে দিতে। ঘুমন্ত অবস্থায় তো আর চেঁচিয়ে উঠতে পারবে না ! লালচে কপাল… খোঁচা খোঁচা দাড়িগুলোয় হাত বুলিয়ে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে খুব পুষ্পর। ভয়ে ভয়ে হাত রাখল আলতো ভাবে সায়নের গালে। তারপর কপালে। শেষে চুলগুলো সামনের দিকে আউলে দিলো। এখনো উঠছে না ! মজা পাচ্ছে পুষ্প… মাথার উপরে হাত রাখল চুল আরেকটু এলোমেলো করতে… আর অমনি সায়ন চোখ খুলে বড় বড় করে তাকাল।

পুষ্পর ভয়ে আত্মা উড়ে গেছে। যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থাতেই শক্ত হয়ে আছে ও। সায়নের গায়ের উপর প্রায় উঠে পড়েছে এটা এতক্ষন খেয়াল না করলেও এখন তার জন্য প্রচন্ড লজ্জা লাগছে। ওদিকে এক হাত বুকের উপর আরেক হাত ওর মাথায়… আর মুখ একেবারে তার মুখ বরাবর…

— কি করতে যাচ্ছিলে শুনি ? ঘুমের সুযোগ নিয়ে অবলা পুরুষের উপর এসল্ট ?

পুষ্প এখনো নড়াচড়া করতে পারছে না। ছোটবেলাতে সায়নের প্রতি ওর অনুভূতিটা ছিল ভালবাসার সাথে ভয়… যার এখনো বিন্দুমাত্র নড়চড় হয়নি তা আজ বুঝতে পারছে ও।

সায়নের মাথায় দুষ্টুবুদ্ধি চেপেছে। পুষ্পকে জ্বালাতে বরাবরই ভালবাসে ও। আর এখন মুখ বরাবর সামনে ওর আতঙ্কিত মিষ্টি মুখটা দেখে এত ভাল লাগছে !

— পুষ্প !

—😧😧

— আমি বুঝেছি কি করতে চাচ্ছিলে। কিস করতে চাও তাইনা ? পজিশন দেখেই বুঝতে পারছি। আগে বললেই হত ! রাতেই করে দিলে এত বকা খেতে না…

বলতে বলতে মুখটা এগিয়ে পুষ্পর ঠোঁটে টুপ করে চুমু খেয়ে নিলো সায়ন।

❤️💛💚💜💙

সায়নের আকস্মিক চুমু পেয়ে পুষ্প সচল হয়ে উঠেছে। তড়াক করে ওর গা থেকে উঠে গিয়ে বালিশে মুখ গুঁজে রইল ও। কি অসভ্য লোক ছি !

সায়ন ঘরবাড়ি ফাটিয়ে এমন হাসি শুরু করেছে যে বলার মত না। হাসতে হাসতেই সে অজু করে এলো। তখনো পুষ্প বালিশের ভেতর। সায়ন টেনে ওকে বসিয়ে দিয়েছে…

— এত লজ্জার কিহল ? হাসবেন্ডের ই চুমু খেয়েছ। আর চুমু খেলে কিন্তু ফরজ গোসল করতে হয়না। তাড়াতাড়ি নামাজের অজু কর যাও। আর আমার জন্য কফি বানিয়ে রেখ একটু।

সায়ন মসজিদে চলে গেল। আরো কিছুক্ষন পর পুষ্প নেমে এল বিছানা থেকে। অজু করে নামাজ পড়ে নিলো এবং আনন্দে দু রাকাত শোকরানা নামাজ আদায় করল। আল্লাহ ওর এত বছরের প্রার্থনা শুনেছেন !

সায়ন নামাজ থেকে ফিরে পুষ্পকে জায়নামাজে দেখে আর বিরক্ত করল না। এসে শুয়ে পড়ল পুষ্পর বিছানায়। পুষ্প সালাম ফিরিয়ে দ্রুত উঠে রুম থেকে বেরুতে নিলে সায়ন ওকে টেনে পাশে বসালো।

— কই যাচ্ছ ?

— কফি…

— লাগবেনা। আমি একটু ঘুমাতে চাই পুষ্প। মাথায় হাত বুলিয়ে দাও প্লিজ।

পুষ্পর মন মমতায় আচ্ছন্ন। সায়নের মাথার কাছে বসে ওর চুলে হাত বুলাতে শুরু করল ও। সায়ন একটু পরেই পুষ্পর দিকে ঘুরে দুহাতে ওর কোমর জাপটে ধরে কোলের উপর মাথা রাখল…

— পুষ্প… আমি সরি কাল্কে এমন বকাবকি করার জন্য। আমার খুব টেনশন হচ্ছিল তো-

— আপনি কেন সরি বলছেন। আমিই তো না বলে গিয়েছিলাম। আসলে… ভেবেছি আপনি তো আর ভাববেন না-

— কি ভেবেছ ?😡

— আর কি ভাবব ! সারাদিন তো আমাকে চলে যেতেই বলেন…

— মুখের কথাই সব হল তো ! পুষ্প আমার চুল ছাড়ো। রুমে যাব।

— রাগ করে চলে যাবেন ? আচ্ছা সরি। এখানেই থাকুন… মাথায় হাত বুলিয়ে দিই। ৮টায় ডেকে দেব।

সায়ন আর কথা না বাড়িয়ে কোলে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। পুষ্পর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে মাঝে মাঝেই। এতটা সৌভাগ্য ওর !

❤️💛💚💙💜

সায়ন আর পুষ্পর সম্পর্ক ক্রমেই বন্ধুর মত হয়ে আসছে। সায়ন অফিস থেকে ফিরে পুষ্পর সাথে প্রচুর গল্প করে। আর পুষ্প হাসি মুখে গল্প শোনে। এমনকি আবদার মত গল্প করবার সময় পুষ্পকে সায়নের সাথে সেঁটে বসে থাকতে হয়। গায়ে গা লাগিয়ে বসে এক হাতে পেছন থেকে ধরে রেখে তবেই নাকি গল্প করতে পারে ও !!

আজ শুক্রবার। সায়নের ফরমায়েশে পুষ্পর আজ শাহী খানা রাধঁতে হবে। তাই মাংস, পোলাও এর চাল সব ভিজিয়েছে। এমন সময় বেল বাজল। সায়ন ঘুমাচ্ছে… কে আসবে এখন !

দরজা খুলতেই একজন মেয়েকে দেখা গেল। জিন্স আর টপ পড়া। চুলে হাইলাইট করা। হাইহিলস পরে ইয়া লম্বা লাগছে তাকে।

— তুমিই পুষ্প ?

— জ্বি। আপনি ?

— সাইকা !

পাথর হয়ে গেল পুষ্প। সাইকার চেহারা এক দুবার দেখেছিল। ভুলেই গেছে তাই। কিন্তু এ এখানে ! এর সাথে না পাঁচ বছর আগেই ব্রেক আপ হয়েছে সায়নের !!

— আপনার… এখানে কোন দরকার আছে ?

— হাহ ! আমার দরকার আমি ডিসাইড করব ! সায়ন কোথায় ?

— ঘুমাচ্ছেন।

— ঘুমাচ্ছে’ন’ ?? সো সিলি ! আপনি করে বলো নাকি ? সে না তোমার সো কল্ড হাসবেন্ড ?

— সো কল্ড না হাসবেন্ড ই।

— কিভাবে পছন্দ করল ও তোমাকে ? ইউ আর সো আনস্মার্ট ! ঘরের ভেতর ও কিভাবে মাথায় নাক পর্যন্ত ঘোমটা দিয়েছ… সায়নের রুচি এত খারাপ তো ছিল না ?

— আপনার যা বলার তাকেই বলুন। আমি পাঠাচ্ছি তাকে। বসুন এখানে।

পুষ্পর চোখে পানি চলে এসেছে। কি অবলীলায় অপমান করল সাইকা তাকে ! স্মার্টনেস কি বিনা সঙ্কোচে অন্যকে অপমান করাকে বোঝায় ?

— এই ! এই উঠুন তাড়াতাড়ি !

— কি হয়েছে…

— হয়েছে আপনার মাথা ! বাইরে এক ঢঙ্গি এসেছে আমার মাথা খেয়ে ফেলছে। আনস্মার্ট খ্যাত কি কি বলছে ! যান সামলান গিয়ে !

সায়ন ওর মেজাজ খারাপ বুঝে গালে টুপ করে চুমু খেল। কিন্তু হিতে বিপরীত হয়ে গেল। পুষ্প এক ধাক্কায় ওকে সরিয়ে দিয়ে বলল…

— এসব পিরীত ওই খাচ্চর মেয়েকে দেখান গিয়ে। জান জান করে পাগল হয়ে গেল। আমার মত খ্যাত কে নেহাত গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছে তাইতো বাধ্য হয়ে সাথে রাখছেন। নইলে লাথি দিয়ে তাড়াতেন কবেই !

সায়ন আর এসব শুনতে পারল না। পুষ্পকে হ্যাঁচকা টানে নিজের কাছে নিয়ে জড়িয়ে ধরল।

— পুষ্প… মাথা গরম করে না। আমি ওকে ঠিক করে আসছি। তুমি নিজেকে খারাপ ভাবছ ওই মেয়ের কথায় ? আমার কাছে সবার চেয়ে প্রিয় মেয়ে তুমি।

পুষ্প শান্ত হয়ে এসেছে। নিজেই আস্তে সরিয়ে দিলো সায়ন কে।

— সাইকা অপেক্ষা করছে। যান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here