#একই_সুতোয়_বাঁধা
পর্ব-২১
সপ্ত শীখা
— এই রাজু ! রাজুউউউ ! তোর ভাবি কি নাই ?
— না ভাই… কই জানি গেসে বিকালে সাইজা গুইজা।
— সেজেগুজে গেছে ?
— হ… শাড়ি পিন্ধা উপ্রে বোরকা পরসে। অনেক সুন্দর লাগতাছিল…
— খাবার সরা… খাবনা আমি !
প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ হচ্ছে সায়নের। না বলে শাড়ি পরে কোথায় বের হয়েছে ? সায়ন সারাদিন যে পরিমান বিরক্তি দেখাত… চলেই গেল না তো ?
💚💚💚💚💚
রাত ১২টা বাজে। এখনো ফেরার নাম নেই পুষ্পর। কোথায় ও ? সায়নের প্রচণ্ড চিন্তা লাগছে ওর জন্য। কান্নার ভাব হচ্ছে। কিন্তু কেন হচ্ছে জানেনা সে। যাকে দেখলেই বিরক্তি আসত আজ তার অনুপস্থিতি এতটা পীড়া দিচ্ছে কেন ?
ফোন বাজছে। আননোন নাম্বার থেকে কল এসেছে।
— হ্যালো কে বলছেন ? পুষ্প ?
— সায়ন… আমি।
— আমি কে ?
— সাইকা।
— তুমি ! কেন কল করেছ ?
— খুব মিস করছিলাম তাই… পুষ্পটা কে ? তোমার গফ ??
— তাতে তোমার কি ? শোনো… আমার লাইফ থেকে দূরেই থাকো।
— বলোনা সায়ন… ও তোমার নতুন গফ ?
— ব্লাডি হেল !! ও আমার ওয়াইফ !!
— কি !! বিয়ে কবে করলে তুমি ? আমি তোমার প্রতিটা মুভমেন্ট জানি। এমন কিছু তো জানিনা !
— আর ইউ স্টকিং মি ?
— ইয়াহ… আমি তোমায় প্রচণ্ড মিস করছিলাম তাই গত এক মাস ধরে স্টক করছি। সায়ন আমাকে ভুল বুঝ না। তোমার ওয়াইফ বাসায় নেই তাইনা ?
— সাইকা আবার তুমি-
— সায়ন বারবার ভুল বোঝো কেন ? বল না…
— হ্যাঁ নেই।
— কেমন মেয়ে বিয়ে করেছ সায়ন ? সরি টু সে… আমার ড্রেস নিয়ে এত সমস্যা ছিল তোমার আর আজ এমন একজন কে বিয়ে করলে যার রাতে বাড়ি ফেরার ও ঠিক নেই !
— সাইকা ! 😡😡
— চিৎকার করে কি লাভ জান ? আমি বুঝতে পারছি কেমন লাগছে তোমার! সে আমার থেকেও শর্ট ড্রেস পরে ?
— সাইকা জাস্ট শাটাপ ! ও… ও বোরকা নিকাব পরে !
— তারমানে কনফার্ম যে মেয়ে ভাল না। বোরকার নিচে খেমটা নাচ… প্রবাদটা এম্নিই হয়নি নিশ্চ্যই ! ইউ নো ওয়াট আই মিন…
— ইউ মিন নাথিং ! রাস্কেল… বোরকা মুসলিম মেয়েদের জন্য আল্লাহর দেয়া বিধান যেন তারা নিজেকে ঢেকে চলে। কিন্তু কিছু খারাপ মেয়ে নিজের পরিচয় লুকিয়ে কুকাজ করতে করতে বোরকার বদনাম রটিয়েছে। আর এই বদনাম গুলো ব্যবহার ও করে তোমার মত খারাপ মেয়েরাই !!
ফোন কেটে দিয়ে ছুঁড়ে মারল সে বিছানায়। আবার বসল চেয়ারে। আজ আসুক পুষ্প। না বলে কোথায় বেরিয়েছে এত সেজেগুজে তা বের করবে সায়ন।
💚💚💚💚💚
পুষ্প গিয়েছিল নীরার আকদের প্রোগ্রামে। হুট করেই বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে ওর। আশুলিয়ায় এক খালার বাসায় আকদ হচ্ছে। এমনকি এক্সাইট্মেন্টের জন্য সায়ন কে জানাতেও ভুলে গেছে সব। অবশ্য এও ভেবেছিল জানিয়েই বা লাভ কি… সে তো পুষ্প চলে গেলেই বাঁচে !
নীরার ওখানে আকদ শেষ হতে যখন মনে হল খোঁজ নেবে… তখন চার্জ শেষ হয়ে ফোন অফ হয়ে গেছে। ঝামেলা করে চার্জার খুঁজতে মনে সায় দিল না ওর। বিয়েবাড়ির ঝামেলায় কে চার্জার দেবে ! থাকুক গে… যার জন্য এত ভাবা সে তো আর ভাবছেনা !
নীরা এত ঝামেলার পর ও নিজের কথা রেখেছে। আকদের পরপরই খালাকে বলে একটা গাড়ি দিয়ে বাড়ি পাঠিয়েছে পুষ্পকে। তবু আশুলিয়া থেকে আসতে আসতে রাত প্রায় দুটো বেজেছে ওর।
বেল চাপছে তো চাপছেই… দরজা কেউ খোলেনা। ভাগ্যিস পাশের ফ্ল্যাট নেই। নইলে এতক্ষনে লোক জমে যেত। দুহাতে মুখ চেপে সিঁড়িতেই বসে পড়ল পুষ্প। এতদিন তো টের পায়নি… সায়ন এত ঘেন্না করে ওকে ! একবার বেরিয়েছে আর সে হাঁফ ছেড়ে বেচেঁছে। আর ঘরেই আসতে দেবেনা !! হেরে যাবে পুষ্প এই লড়াইয়ে !
💛💛💛💛💛
সায়ন রাগের চোটে দরজা খুলছেনা। দরজার ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। রাজু মরনঘুম দিয়েছে।
বেল চাপা বন্ধ হয়ে যেতে ভয় পেয়ে গেল সায়ন। পালিয়ে গেল না-কি ? পিপহোল দিয়ে উঁকি মেরে দেখে সিঁড়িতে বসে হু হু করে কান্না করছে। কি অদ্ভুত বোকা মেয়ে !
— এই যে ! ঘরে আসুন। সিঁড়িতে বসে কাহিনি করতে হবে না।
পুষ্পর প্রচন্ড ভয় লাগছে সায়নের মুখ দেখে। রাগে কঠিন মুখ। ছোটকালে এ মুখ দেখে ভয় পেত পুষ্প… কারণ এরপর মার বা চুলটানা অবধারিত ভাবেই জুটত ওর কপালে।
— এখানে দাঁড়াও।
পুষ্পকে সামনে দাঁড় করিয়ে সায়ন চেয়ারে বসেছে। এখন তাকে লাগছে বিচারক আর পুষ্পকে আসামীর মত !!
— কোথায় গিয়েছিলে ?
— ইয়ে… নি-নি-
— নি নি করছ কেন ? জবাব দাও !
— নীরার…আকদ ছিল…
— ভাল কথা ! বলে যাওনি কেন ?
— ইয়ে মানে…
— লুক… তুমি আমার বাসায় থাকো কাজেই কিছু হলে আমিই ফাঁসব। ফার্দার আমাকে না বলে এমন দূরে যাবে তো মেরে ফেলব একদম !
— ফেসেঁ যাবেন… তাই বকলেন ? আমি ভেবেছি আমার জন্য ভাবছিলেন-
— কেন ভাবব শুনি ? তুমি ভেবেছ ? ড্যাং ড্যাং করে চলে গেলে… বলে যাবার প্রয়োজন বোধ করনি। সমস্যা কি তোমার ?
— কিছু নাহ… সরি। বলতে ভুলে গিয়েছিলাম আনন্দে।
— আনন্দ না ? আনন্দের চোটে একটা যে বর আছে তাই ভুলে গেছিলে ? আর ভুলবে না। দাওয়াই তো আছেই আমার কাছে…
বলতে বলতে এসে এক হাতে পেছন থেকে পুষ্পকে ধরল সায়ন… আর আরেক হাতে কোমরের পাশে শাড়ির কারনে উন্মুক্ত জায়গাটায় জোরে চিমটি কাটল।
অস্ফুট শব্দ করে উঠল পুষ্প। চোখে পানি এসে গেছে আবারো ব্যথা চাপতে গিয়ে। এই ছেলের বদ স্বভাব এখনো যায়নি !! পুষ্পকে শিক্ষা দেয়ার জন্য আগে যা করত ঠিক তারই পুনরাবৃত্তি হচ্ছে আজ।
পুষ্প দৌড়ে নিজের ঘরে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল। কাঁদছে খুব। অসহায় লাগছে নিজেকে। একটু না বলে যাওয়াতেই এত শাস্তি !
💜💜💜💜💜
সায়নের মাথা ঠান্ডা হয়ে এসেছে। পুষ্প কান্না করছে… জানে ও। তবে শাস্তির দরকার ছিল ওর। এত রাত করে বাড়ি ফিরেছে তার উপর না বলে গেছে।
রাত তিনটায় পুষ্পর ঘরে উঁকি দিল সায়ন। এলোমেলো ভাবে উপুড় হয়ে ঘুমাচ্ছে সে। শাড়ি হাঁটুর উপর উঠে এসেছে । চুলগুলো মুখের চারপাশে ছড়ানো। চোখে আর গালে পানির দাগ। কাঁদতে কাঁদতেই ঘুমিয়েছে। সায়ন একটু ইতস্তত করে কোমরের শাড়ি সরালো। কালো হয়ে কালশিটে পড়ে গেছে।
এত মায়া লাগছে কেন আজ ! মেয়েটার মুখে সেই বাচ্চা পুষ্পর আদল আজ খুঁজে পাচ্ছে সায়ন… যার রাগ ভাঙ্গাতে সারাদিন পেছন পেছন ঘুরত ও। কোমরের দাগটায় একটু হাত বুলিয়ে দিলো সায়ন। আহা বেচারি ! শাড়িটা টেনে নিচে নামিয়ে মাথার নিচে বালিশ দিয়ে দিলো। চোখটাও মুছে দিলো আলতো করে। মশারি টানিয়ে দিয়ে লাইট অফ করে বেরিয়ে গেল রুম ছেড়ে।
কিন্তু ঘুম আজ আসবে না হয়ত ! আচ্ছা… আজ যদি না আসত পুষ্প ? কি করত ও ? মন খারাপ করত ? অস্থির হত ? নাকি… আপদ বিদেয় হবার খুশিতে নাচত ?
ফোন বাজছে। আনমনে ফোন তুলল সায়ন।
— জান…
— সাইকা ! আবার তুমি !
— হুম… ফিরেছে তোমার বেগম ?
— কবেই ফিরেছে। ঘুমিয়েও গেছে। কি চাও ?
— সে ঘুমিয়েছে তুমি ঘুমাওনি যে ? খুব অস্থির লাগছে স্ত্রীর চরিত্র খারাপ তাই ভেবে ?
— সাইকা ! আর আজেবাজে কথা বললে জিভ টেনে ছিঁড়ে ফেলব। আর কল দিবিনা তুই নোংরা মেয়ে কোথাকার ! তোর বাপ ও আমার কিসসু করতে পারবে না এখন মনে রাখিস। আমি আগের সায়ন নেই।
ফোন রেখে এইবার ব্লক করল সাইকার নাম্বার। মন অশান্ত হয়ে গেছে আবার। কিছুক্ষন ছটফট করে শেষে উঠে বসল। শব্দহীন পায়ে পুষ্পর ঘরে গিয়ে আধঘন্টা বসে রইল ওর মশারির ভেতর। এ মেয়ে ঘুমালে ঘুম ভাঙ্গেনা… এর সুবিধা নিয়ে চুপচাপ বসে ওর মুখের দিকে চেয়ে রইল সায়ন। শীতল হয়ে আসছে মন। আচ্ছা… অবিচার করছে না তো ও পুষ্পর সাথে ?