#একই_সুতোয়_বাঁধা
পর্ব-২৩ (শেষপর্ব)
সপ্ত শীখা
সায়ন ড্রয়িং রুমে এসে ঢুকতেই সাইকা প্রায় দৌড়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরল। গায়ের সাথে লেপ্টে গেছে একেবারে… সায়ন নাক কুঁচকে ফেলেছে ওর গায়ের পারফিউমের তীব্র গন্ধে। ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল সাইকা কে।
— তুমি আমার বাসায় কেন ? আর তারচে বড় কথা… আমার স্ত্রী কে অপমান করার সাহস পেলে কিভাবে ?
— সায়ন ডারলিং ! কুল ডাউন। আমি জানি এখনো তুমি আমাকেই ভালবাসো…
— ওহ রিয়েলি ! মে আই নো হাউ ক্যান ইউ বি সো শিওর ?
— বিকজ… আমার মত মেয়ের সাথে রিলেশন হবার পর অমন খ্যাত একটা মেয়েকে পছন্দ হতেই পারেনা তোমার। আমি জানি তোমার টেস্ট এতটা খারাপ না।
— সাইকা… নিজেকে কোন ভিত্তিতে এতটা উপরে তুলছ বল তো ? চেহারা যত না ভাল তার উপর তো মেকাপ আর পার্লারের অবদান ! ফিগার… ট্রেইনারের অবদান ! এসবের ভিত্তিতে নিজেকে আমার ওয়াইফের চেয়ে বেটার ভাবছ ? হাহ হা !
— এসবই সব সায়ন… এগুলো ছাড়া ছেলেরা কক্ষনো আকৃষ্ট হয়না ! আর তোমার আমাকে খুব ভাল লেগেছিল… তারমানে তোমার টেস্ট ভাল-
— হু ভাল লেগেছিল… তখন আমার বয়স ছিল ২১ মাত্র ! তোমার মাঞ্জামারা সৌন্দর্য আমার নজর কেড়েছিল। আর এই হারাম সম্পর্কের শাস্তি আল্লাহ আমাকে সাথে সাথেই দিয়েছেন। আচ্ছা… কিসের টেস্ট ফেস্ট করছ ? মেয়েরা কোন খাবার না যে কোন টা ভাল টেস্ট করে দেখব আমরা ! তোমার মত কিছু সো কল্ড স্মার্ট মেয়ের জন্য সব মেয়ের বদনাম হয় !
— সায়ন, আজ যতই অপমান করো আমি ভুলছিনা। আমি জানি তুমি রেগে আছ আমার উপর। এই পাঁচ বছরে আসিনি যে তাই ! রাগ টা ঝাড়ো আমি বাধা দেব না।
— আর ইউ ম্যাড ! তোমাকে ডাক্তার দেখানো উচিত সাইকা। ডিভোর্সের পর নিশ্চয়ই পাগল হয়ে গেছ… নাহলে সব এক্স দের বাড়ি বাড়ি গিয়ে এমন বেহায়াপনা করতে না !
যেন বোমা ফাটিয়েছে সায়ন… এ ভঙ্গিতে সবাই চুপ হয়ে গেছে। সাইকার মুখ লাল হয়ে উঠেছে… রাগে না লজ্জায় কে জানে ?
— তুমি কি ভাবে-
— তুমি আমাকে স্টক করতে পারলে তোমাকে স্টক করা কোন ব্যাপার ? যেদিন থেকে এসব শুরু করলে আমি সেদিনই বুঝেছিলাম যে এইই করবে একদিন। তাই তোমার ব্যাপারেও খোঁজখবর নিয়েছি। আর তারচে বড় কথা কি জানো ? তোমার এক্স রাহুল আমার অফিসেই জুনিওর হিসেবে আছে। তার থেকে তোমার এই রিসেন্ট এডভেঞ্চারের ব্যাপারে জানি। কি লাভ হচ্ছে শুনি এমন সবখানে ঠোকর খেয়ে খেয়ে ফিরতে ?
— সায়ন… সায়ন… আমি কি কম চার্মিং বলো ? আমি কত্ত সুন্দর… কত গ্ল্যামারাস ! তবু ওই চাষা রবিন টা আমাকে ডিভোর্স দিলো কি করে ! তোমার মত একই ভুল করেছে সেও… আমাকে ডিভোর্স দেয়ার ছয়মাস পর একটা হুজুরনি বিয়ে করে এনেছে-
— সাইকা তুমি জানো একটা ব্যাপার ? তুমি একটা ইলিউশনের দুনিয়ায় বাস করছ। তুমি ভাবো যে গ্ল্যামার… শর্ট ড্রেস… এসব দিয়েই দুনিয়ার সব ছেলের মন জয় করা যায়। আসল ঘটনা কি জানো ? এসব দিয়ে গলির মোড়ের বখাটে ছাড়া কারুর মত জয় করতে পারবে না। আর যাদের কে হুজুরনি বলছ, এধরনের মেয়েরা জীবনের আসল উদ্দেশ্য বোঝে। তাই তোমার মত অকারনে দুনিয়া শুদ্ধ মানুষ কে শরীর দেখিয়ে বেড়ায় না… বরং স্বামীর সেবা করে, স্বামী সন্তান কে ভালবেসে দুনিয়া ও আখিরাতের নেকি হাসিল করে।
সাইকা মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুই বলতে পারছেনা ও। আজ সে তার সমস্ত সৌন্দর্য নিয়ে হেরে গেছে। সায়ন ওর পাশে এসে নরম কণ্ঠে ডাকল।
— সাইকা
— 😢😢
— একদিন তোমার বাবা ব্ল্যাকমেইল করে আমাকে তোমার পাশে রাখতে চেয়েছিলেন যেন তুমি সুখি হও। তার মত ভালবাসার মানুষ যে মেয়ের আছে সে মেয়ের আবার কিছুর অভাব হয় নাকি ? এমন বাবা পেয়েছ তুমি যে তোমাকে বুকের ভেতর রাখবে। সাইকা, এসব বন্ধ করো। তোমার বাবা আমাকে যখন ব্ল্যাকমেল করেছিলেন তখন তুমি আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলে।
— আমি… কি করব সায়ন ! আমার খুব একা একা লাগে…
— ধৈর্য ধরো সাইকা। আল্লাহ যদি তোমার কপালে জীবন সংগি রেখে থাকেন তুমি তাকে অবশ্যই পাবে। নিজেকে একটু পরিবর্তন করে নাও। নামাজ রোজায় মন দাও। মন শান্ত হবে।
সাইকা সোফায় বসে দুহাতে মুখ ঢেকে কাঁদতে শুরু করল। সায়ন ভেতরে চলে এল। পুষ্প দরজায় বাইরেই ছিল। সব শুনেছে ও। সায়নের প্রতি ভালবাসায় আজ ওর হৃদয় কানায় কানায় পূর্ণ। সায়ন বের হয়ে আসতেই পুষ্প খুব জোরে জড়িয়ে ধরল তাকে।
— আরে কি করছ কি ? দম বন্ধ হয়ে মারা যাব তো !
— মরবেন কেন ? সায়ন… থ্যাঙ্ক ইউ ! আমার পক্ষ নেয়ার জন্য !
— তুমি কি ভেবেছিলে আমি ওর পক্ষ নেব ?
— সরি… আসলে প্রথম প্রেম ফিরে আসলে তো…
— পুষ্প ! আমি খুব রাগ করেছি কিন্তু। সাইকা কে বিদায় করে আসি এরপর তোমার বিচার হবে।
সাইকার ডাক শুনে সায়ন আবার ড্রয়িং রুমে গেছে। সাইকা ধরা গলায় বলল…
— সায়ন… তোমার ওয়াইফ কে একবার ডাকো। আমি উনাকে সরি বলে চলে যাব।
পুষ্প নিজেই ভেতরে এল…
— সরি বলতে হবেনা আপু। আপনি সব বুঝতে পেরেছেন তাই যথেষ্ট।
— তোমার মত ভাল যেন হতে পারি সে দোয়া করো বোন…
— ইনশাল্লাহ…
— আসি। সায়ন, মাফ করে দিও।
সাইকা চলে যেতেই দরজাটা লাগিয়ে সায়ন পুষ্পকে টেনে বেডরুমে এনে দরজা লক করে দিলো। সায়নের শক্ত মুখ দেখে আবার ভয় হচ্ছে পুষ্পর। মারবে নাকি !
সায়ন সামনে এগুচ্ছে… পুষ্প পেছনে যাচ্ছে। যেতে যেতে ঠাস করে বিছানায় পড়ে গেল ও। আর সায়ন…ওকে না তুলে নিজে এসে একদম পুষ্পর উপরে উপুড় হয়ে পড়ল।
পুষ্প দম বন্ধ করে ফেলেছে। যদিও সায়ন ওর গায়ে ওজন দিচ্ছে না কিন্তু লজ্জায় তাকাতেও পারছে না পুষ্প। সায়ন ওর চুলে হাত রেখে ফিসফিসে গলায় বলল…
—- আমাকে সন্দেহ করার শাস্তি পাবে আজ ! যে শাস্তি কক্ষনো দেইনি !
— কি ! 😰😰
— বুঝবে এখনই 😜
সায়ন গায়ের সব জোর দিয়ে পুষ্পর ঠোঁটের উপরে ঠোঁট চেপে ধরল। পুষ্প চোখ খুলছেই না। বেশ অনেকক্ষন পরে সরে গেল সায়ন। পুষ্পকে জড়িয়ে ধরে ওর বুকের উপর মাথা রাখল।
— পুষ্প… তুমি এখনো বুঝতে পারোনি আমি তোমাকে কতটা…
— কি কতটা ?
— কতটা ভালবাসি ! সন্দেহ করলে কেন আমাকে ?
— আর করব না। আমি… সরি সায়ন ! রিয়েলি সরি !
— সরি তে হবে না জান। আরো কিছু চাই আমার… রাজি থাকলে বলো !
পুষ্প হেসে ফেলল। এই মুহূর্তে জীবনের কাছে কিছুই চাওয়ার নেই ওর। সব পেয়েছে আজ। জীবন টা এই সময়েই থমকে গেলে ভাল হত না !!