একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_৩৩+৩৪+৩৫+৩৬
🍁
মুখ থেকে হাত ছাড়াতেই লাবিবা ওমাগো বাচাও বলে চিল্লানি দেয় । তানভীর মাথার পেছন থেকে হাত এনে মাথা ঝাকিয়ে বলে চুপ চুপ । ঠোটে আঙুল লাগিয়ে জোরে দেয় এক ধমক । এক ধমকে লাবিবা চুপ । চোখ গুলো বড় বড় করে তাকিয়ে পিট পিট করে দেখে তানভীর । মুখ থেকে অস্পষ্ট আওয়াজ করে —স্যা স্যাস্যারস্যা্র বলে সোফায় বসে পড়ে । তানভীর একেবারে কাছে এসে নেশা ভরা চোখে তাকিয়ে বুড়ো আঙুলে চকলেটি ঠোটটা রুডলি চাট করে বলে —-তোমারর যে আমার ঠোটের ছোয়া পেতে ইচ্ছা করছে বললেই তো হতো ।এখন তো আমি কাছেই আছি .. যখন যেখানে যেভাবে ছোয়া পেতে ইচ্ছা করবে জাস্ট ইশারা দিলেই চলবে কষ্ট করে মুখে বলতে হবে না । আমি আমার দুষ্টু পুতুলকে
—না ।
— কি না ? হু?( ক্রমশ এগিয়ে আসতে আসতে )
—-না না কিছুনা ।
—- আমিতো দেখি অনেক কিছু ।
লাবিবা ভয়ে ঠোট কামড়ে ধরে শক্ত করে চোখ দুটো বন্ধ করে নেয় । অনেকক্ষন হয়ে যায় শুধু তপ্ত নিশ্বাস টুকুই মুখে আচড়ে পড়ছে একি ভাবে । লাবিবা আস্তে আস্তে চোখ খুলে । তানভীরের চোখে চোখ পড়ে । অনেক অশান্ত দুটি চোখ । অনেক কথা বলতে গিয়েও যেনো বলছে না । ছটফট করে বের হয়ে আসতে চাইছে তবুও আসতে পারছে না । লাবিবা কাপা গলায় বলে —স্যাস্যারর.. বলুননা….।
–তুমি কি ভেবেছো আমি তোমার লিপে কিস করবো ? যদি করি সহ্য করতে পারেবে তো ? (চোখ টিপ দিয়ে)
লাবিবা ঢুক গিলে। কপালে ঠোট ছুইয়ে গাড় করে চুমু একে উঠে দাড়ায় তানভীর । গলা শক্ত করে বলে — তোমার কপালে যেমন কারো ঠোটের ছোয়া লাগতে দাওনি তেমনি শরীরেও যেনো কারো ছোয়া না পড়ে । মনে রাখবে তোমার শরীরের প্রত্যেকটা পশম পর্যন্ত আমার। ক্লাস মিস করে ফ্রেন্ডকে হেল্প করা হচ্ছে । এর জন্যই মনে হয় পরিক্ষায় ইমপ্রুভ পাওয়া হয় । যাও এখন সোজা হোস্টেলে যাবে । উঠো ।
লাবিবা পা দুটো সোফায় তুলে আরো পাকাপোক্ত হয়ে বসলো । যাবে না এখান থেকে । হোটেলে কেনো এসেছে ? বিলাতি বধু কি জানে স্যার হোটেলে এসেছে ? আর আমার পশম গুলোও নাকি উনার । এদিকে আরেক বান্দর পিছু লেগে আছে সেদিকে কি হবে ? খুব উচ্ছাস নিয়ে বলে
—স্যার । আপনি কি এখনো ফাইট করেন?
—নাহ । এখন আর করিনা । ঐগুলো ভালো না । কেনো বলোতো ?
লাবিবার মুখটা চুপসে যায় । তানভীর হাত ধরে লাবিবাকে উঠিয়ে নিয়ে হাটতে থাকে । বাইরে এসে একটা রিকশা ডেকে উঠিয়ে দেয় । লাবিবা কলেজে এসে নামতেই মিলি দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে । লাবিবাও জড়িয়ে ধরে ।
—থ্যাংক ইউ দোস্ত। তোর ভাই তোর জন্য গিফট পাঠিয়েছে নিবিনা ?
—উফফ.. লাভলি😍গিফটতো নিতেই হবে চল।
__________________
শারমিন লাবিবা জবা রাস্তা দিয়ে হাটছে । হটাৎ জবার চোখ পড়ে গাছের ডালে পাখির বাসার দিকে ।
—-দোস্ত…টিয়া পাখি 😍। এইটা আমার লাগবেই ।
লাবিবা—-না এইটা আমার লাগবে ই ।
শারমিন —এই পাখি আমার কাছে আসতে চাইছে । এইটা আমার ই লাগবে ।
এই নিয়ে তিনজনের ঝগড়া লেগে যায় । শারমিন কোমড়ে উড়না গুজে সাথের হেলানো গাছ বেয়ে উঠে পড়ে । পিছু পিছু লাবিবা জবাও উঠতে থাকে । অনেকটুকু উঠার পর বাসার কাছাকাছি এসে শারমিন যেই বাসায় হাত দিতে যাবে সেই পাখি ফুরুৎ । শারমিন পেছন দিক তাকিয়ে দেখে জবা চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছে যেন এখনি খেয়ে ফেলবে হাতের নাগালে পেলেই । আর লাবিবার চোখ টলমল করছে যেন এখনি কেদে ফেলবে । তারাতারি নেমে পালাতে হবে ভেবেই সেই গাছ বেয়েই নেমে পড়ে । জবাও লাবিবাকে রেখেই তাড়াতাড়ি নেমে পড়ে শারমিনকে ধরার জন্য । তিনটা মেয়ে গাছে উঠেছে দেখে কলেজের অনেকেই ভিড় জমিয়েছে নিচে । লাবিবা নামতে গিয়ে নিচের দিকে তাকতেই মাথা ঘুরতে শুরু করে । ও যে গাছে উড়তে পারলেও নামতে পারে না এটা ভুলেই গিয়েছিলো । এখন নামবে কিভাবে ? গাছের উপর বসেই কাদতে থাকে । নিচ থেকে সবাই নাম নাম বলে চিল্লাতে থাকে আর লাবিবা কেদে কেটে চোখ ঝাপসা করে রাখে । বাবুর দল দূর থেকে দেখে হাসতে হাসতে পেট ব্যথা করে ফেলে । হাসা হাসি শেষ করার পর বাবু শার্টটা ভালো করে পড়ে নিয়ে বলে
–সুন্দরীরে নামিয়ে নিয়ে আসি । কি বলিস ?
সবাই —হ ভাই যান । আপনিই পারবেন ভাই । আপনি ছাড়া কেউ পারবেনা । হিরো ভাই আমাদের আপনি।
বাবু গাছের নিচে আসতে আসতেই তানভীর গাছে উঠে যায় । —দুষ্টু পুতুল হোল্ড মাই হেন্ড। কাম স্লোলি । লাবিবা চোখ মুছে হাত এগিয়ে দেয়।আস্তে আস্তে নেমে আসে গাছ থেকে।গাছের ফাকে পা পড়ে মচকে যায় । শব্দ করে ব্যথায় কেদে উঠে । তানভীরের হাত শক্ত করে ধরে আবার পা ফেলতে নিলেই ব্যথায় পা আটকে রাখতে না পেরে পড়ে যায় তানভীরের কোলে । তানভীর আগেই নিচে নেমে ছিলো বলে ধরতে পেরেছে। হাত দিয়ে পা ধরে কাদছে লাবিবা । তানভীর ভয়ার্ত মুখে তাড়াতাড়ি করে গাড়ির সামনের দিকে বসিয়ে দেয় । বেশ ব্যথা পেয়েছে বুঝতে বাকি নেই।
–দুষ্টু পুতুল কোথায় ব্যথা পেয়েছো দেখি দেখি । পায়ে মচকে গেছে । ও সিট চামড়ার ছাল ও তুলে ফেলেছো । তানভীরের ব্যস্ততা দেখে সবাই অবাক । প্রিন্সিপালের কিছু হয় নাকি এই মেয়ে ? চেনা কেউ ? এমন গুঞ্জন শুরু হয় । বাবু রাগ চোখে তানভীরকে গিলে খাবে এমন ভাবে তাকিয়ে থাকে । জবা শারমিন ভয়ার্ত চোখে দাড়িয়ে আছে । তানভীর শারমিনকে বলে –গাড়ির ভিতরে দেখো ফাস্ট এইড বক্স আছে । শারমিন এনে দিলে পায়ে ঐষধ লাগাতে নিলেই লাবিবা চিৎকার শুরু করে । তানভীর আশেপাশে তাকিয়ে পরিবেশ টা একবার চোখ বুলিয়ে নেয় । লাবিবার দিকে তাকিয়ে দেখে মুখ লাল হয়ে আছে । এখানে আর থাকা যাবে না । শারমিনকে বলে
— বক্সটা ভিতরে রাখো । আমি ডক্টরের থেকে ব্যান্ডেজ করিয়ে আনছি ।
—স্যার আমিও যাবো ।
—প্রয়োজন নেই । সামান্য ইনজুরি হয়েছে । হোস্টেলে চলে যাও ।
লাবিবাকে কোলে নিয়ে গাড়িতে বসায় । নিজেও ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসে । ভাগ্যিস এই সময় এই রাস্তায় যাচ্ছিলো নয়তো কি হতো !! দুষ্টু পুতুলকে কি ওভাবেই বসে কাদতো ! নাকি অন্য কেউ দুষ্টু পুতুলকে নামাতো ? এটা হতে পারে না । লাবিবা পা ধরেই কেদে চলেছে।গাড়ি স্টার্ট করে একটা ফাকা রোড়ে নিয়ে গিয়ে গাড়ি থামায় । নিচ থেকে পা দুটো হাটুর উপর তুলে । ডান পা মচকে গেছে । গাউনটা একটু উপরে তুলে পা ধরে জোড়ে একটা মোচর দেয় । লাবিবা আকাশ কাপানো চিৎকার দিয়ে তানভীরের শার্ট টেনে ধরে বোতাম ছিড়ে দিয়ে জোরে কাদতে থাকে আর চিল্লাতে চিল্লাতে বলে — আমার পা ভেঙে দিলো গো ..আমি আর হাটতে পারবো না গো ..ও আম্মুনি গো …তোমার মেয়ের আর বিয়ে হবে না গো ..আমার আর বালবাচ্চার মুখ দেখা হলো না গো ..আমার নাতি নাতির ঘরের পুতি পুতির ঘরের হুতি হুতির ঘরের__উম উম..।
তানভীর মুখ চেপে ধরে বলে –চুপ একদম চুপ। লাবিবা বিলোপ বন্ধ করে কাদতে লাগলে মুখ থেকে হাত সরিয়ে চমকে যায় । অতিরিক্ত চিল্লানিতে যে লাবিবার মাথায় রক্ত উঠে যায় সেটা ভুলেই গিয়েছিলো । মুখ লাল হয়ে আছে । তানভীর হিযআপ এর পিন খুলতে থাকে । লাবিবা হাত ধরে বলে
–আমি খুলবোনা । আমি উড়না পড়িনি ।
—চুপ করো ।কে আছে এখানে যে উড়না লাগবে ?
—আপনি আছেন । আপনি ছেলে মানুষ । আমার শরম করে ।
—চুপ থাকো । একটা কথা বলবানা। কি অবস্থা করেছো নিজের দেখেছো ? আর একটা কথা বললে ঠাটিয়ে চড় দিবো একটা।আজ বাদে কাল আমার বউ যখন হবে তখন দেখবো কেমন শরম।
—আমি আপনার দুই নাম্বার বউ হবো না। কক্ষনোনা । বাচাও বাচাও এই ডলফিন স্যার টা আমার হিযআপ কেড়ে নিচ্ছে ..আমার শরম কেড়ে নিচ্ছে ..আমায় জোর করে বিয়ে করে নিচ্ছে বাচাও বাচাও 📢
দু একটা বাইক যাচ্ছে ক্ষনে ক্ষনে । চেচানো শুনে গাড়ির দিক তাকিয়ে তাকিয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ বলে যাচ্ছে দিন দুপুরে গাড়িতে ফুর্তি। তানভীরের রাগ উঠে যায় ।
—দুষ্টু পুতুল চুপ করো ..আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি ।
—বাচাও বাচাও ..এই ডলফিনটা আমার শরম নিয়ে নিচ্ছে ।
—দুষ্টু পুতুল এটা রোড় ইউ লুক । এখানে হচ্ছেটাকি এসব 😠 আই সে কিপ ইউর মাউথ সাট ।
—আমি চুপ করবোনা । আপনি আমার পা ভেঙে দিলেন । আমার শরম কেড়ে নিছেন । আমাকে দুই নম্বর
—ঠাসসসস…..
গালে হাত দিয়ে ভ্যা ভ্যা করে কেদে দেয়।এতোক্ষনের চিল্লানি এখন ভ্যা ভ্যা তে পরিনত হয়েছে ।
—চুপ একদম চুপ । এখনি ভ্যা ভ্যা বন্ধ না করলে আরেকটা থাপ্পর খাবে । ফালতু চিল্লানি শুধু । পা সোজা করো । দেখো একদম ঠিক । নাড়াও বলছি ।
লাবিবা পা নাড়িয়ে দেখে ব্যথা নেই । একদম ঠিক । নিচে নামাতেই পা আটকে ধরে তানভীর । মলম বের করে যত্ম করে লাগিয়ে দেয় । জ্বলা শুরু হতেই লাবিবা কান্না শুরু করে দেয় । এবার আর চিল্লানোর সাহস পায় না । আস্তে আস্তেই কাদতে থাকে । তানভীর পায়ে ফু দিতে থাকে যতক্ষন পর্যন্ত জ্বলা না কমে ।
—আর জলছেনা। এখন ঠান্ডা লাগছে ।
—কিন্তু আমার গরম লাগছে ।
গাড়ির গেইট খুলে দেয় । উপরের দিকে বোতাম ছিড়ে ফেলেছে তিনটা । শার্ট একটু আগলা করে দেয় । রাস্তার পাশে খোলা ফসলের মাঠ । হালকা ফ্রেশ বাতাস আসছে । সবুজের সমারোহে চোখ আটকে যায় তানভীরের । পানির বোতল হাতে নিয়ে গলা ভিজিয়ে নেয় । লাবিবার দিকে তাকিয়ে দেখে হেচকি তুলে তুলে নিশ্বব্দে কাদছে । মুখটা এখনো লাল হয়ে আছে । পানির বোতল এগিয়ে দেয়। লাবিবা ঢক ঢক করে পানি খেয়ে বোতল রেখে দেয় । তানভীর কাধ ধরে একহাতে বুকের সাথে চেপে নেয় লাবিবাকে।
— কান্না থামাও । এখন তো আর ব্যথা করছে না ।
লাবিবা মুখটা উচিয়ে গালটা তানভীরের মুখের সামনে ধরে বলে —এখানে ব্যথা করছে । আর কোথাও না ।
ব্যথাতো করবেই লাল হয়ে গেছে যে । আলতো করে কয়েকটা চুমু খায় সেই গালে । গালের নিচে ছোট্ট একটা কামড় দিতেই চমকে উঠে লাবিবা । বুকের মাঝে দু হাতে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে মুখ এনে বলে —- টমেটো পেকে লাল হয়ে গেছে দুষ্টু পুতুল ।এখন খাওয়ার একদম উপযুক্ত সময় । আমার বাসায় পাঠাবে নাকি আমি নিজেই গিয়ে নিয়ে আসবো ? আমার কিন্তু টমেটো চাই চাই ।
—ব্যথা দেন কেনো ? রাক্ষস লোক টমেটো ভয় পায় ।
—এতো সফট কেনো তুই বলতো ? একটু ব্যথাতেই এমন করিস । তোকে কন্ট্রোল করতে গিয়ে আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যায় ।এই পুতুল ..তোর কি বিয়ে হবে না ? বাচ্চার মম হবি না ? তখন আমার দেওয়া ব্যথা আর বাচ্চার দেওয়া ব্যথা কি করে সহ্য করবি বলতো ? তখনো কি তোকে ঠান্ডা করার জন্য আমার এরোকম অবস্থা হবে ?
To be continue___
#একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
#লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_৩৪
🍁
বারন্দায় দাড়িয়ে দুহাত দুদিকে মেলে মুক্ত মাতাল হাওয়া অনুভবে ব্যস্ত করে রেখেছে নিজেকে । হোস্টেলের অন্য মেয়েরা যে দেখছে সেই মুচকি হাসি দিচ্ছে । মেয়েটা পারেও বটে। এতো উচ্ছল চাঞ্চল্যময় মেয়েকে যে কেউ ভালোবাসতে বাধ্য । নিচ থেকে ময়নুল মামা ডাক ছাড়ে
—ও খালা..এলিজা খালা..নিচে আসেন তাড়াতাড়ি । আপনার জন্য পাখি পাঠায়ছে ।
বারান্দা দিয়ে নিচের দিকে উকি দিয়ে বলে — পাখি কে পাঠালো? আসছি মামা দাড়ান।
তিনতলা থেকে দৌড়ে নেমে এসে দেখে একটা ছেলে একটা খাচায় একটা সবুজ টিয়া পাখি নিয়ে দাড়িয়ে আছে । টিয়া পাখি দেখে লাবিবার আর হুস নেই । ঘামচি দিয়ে কেড়ে নিয়ে বলে –এটা আমার পাখি ?
—হ আপা স্যার দিছে ।
—কোন স্যার ?
—প্রিন্সিপাল স্যার ।
—ওও যাও তুমি । টা টা ।
নাচতে নাচতে উপরে চলে আসে । বিছানায় বসে পাখির সাথে কথা বলতে থাকে । আনন্দ যেনো আর ধরে না । এদিকে অনবরত ফোন বাজছে কিন্তু লাবিবার দেখার সময় নেই । একসময় বিরক্ত হয়ে না দেখেই ফোন রিসিভ করে কানে ধরে বল
—ঐ কিডারে ? এত্তোবার ফোন দেস কিলা ?
—দুষ্টু পুতুল ঠিক করে কথা বলো ।
—ও আমার আল্লাহ স্যার ..। স্যার স্যার আপনাকে অনেকগুলা ধনেপাতা উম্মাহহহ😘😘😘। টিয়া পাখিটা খুব সুন্দর ।আমার বেবি এটা ।
—আর যেনো গাছে উঠতে না দেখি । কিছুর প্রয়োজন হলে আমাকে বলবে । তো তুমার বেবির নাম কি রাখলে ?
—এটা মেয়ে বেবি নাকি ছেলে বেবি ? মেয়ে বেবি হলে আব্বুর নামে নাম রাখতে হবে আর ছেলে বেবি হলে আম্মুর নামে নাম রাখতে হবে ।
—মেয়ে বেবি ।
—উমম উমম তুতু । আমার বেবির নাম তুতু ।
—হা হা হা দুষ্টু পুতুল .তুমি নাকি আমার দুই নাম্বার বউ হবেই না আবার আমার নামে বেবির নাম রাখছো ।
— তাইতো । এটা তো ভাবিনি । ওকে নাম চেঞ্জ। ছর নাম হলো
—তুতু । আমার আর তোমার বেবি ।
—না এর নাম
—চুপ একদম চুপ । তুতু বলছি তুতুই । আমি তোমাকে চেঞ্জ করতেই দিবো না ।
—না আমি চেঞ্জ করবোই ।
—থাপ্পড় খেতে চাও আরেকটা তাইনা ?
লাবিবা চুপ হয়ে যায় ।
—শোনো খাচায় প্যাকেটে দেখো পাখির খাবার আছে । আর ফোন দিলে সাথে সাথে যেনো রিসিভ করা হয় । রাখছি ।
ফোন কেটে দিতেই লাবিবা খাবার বের করে পাখিকে খাবার দেয় । বোতলে করে পানি দেয় । দিন কেটে যায় । রাতে আর পড়া হয়না । সেই পাখির সাথে কথা বলেই পুরো রাত কেটে যায় । সকাল দিকে একটু ঘুম আসে।
শারমিন ব্রেকফাস্ট করতে এসে দেখে লাবিবা আসেনি । শারমিনের খাওয়া শেষ হয়ে যায় তবুও আসেনি । লাবিবার রুমমেট কি কেউ নেই তাহলে ? রুমের সামনে এসে দরজা খুলা । তারমানে দরজা লক করেনি । খাটে দেখে একটা খাচায় টিয়াপাখি আর ঐ পাখিকে আঙুল ছুইয়ে বিভোরে ঘুমুচ্ছে লাবিবা । শারমিন বার বার ডাকছে লাবিবাকে । লাবিবার উদ্দিশ নেই । টেবিলে মামপট দেখে এনে মুখের উপর একটু পানি ঢেলে দেয় । ওমাগো ছাদ ফুটো ফুটো ফুটো বলে চিল্লিয়ে লাফিয়ে উঠে বসে লাবিবা । শারমিন খিল খিল করে হাসতে থাকে । লাবিবা মুখের থেকে হাত দিয়ে পানি মুছে গাল ফুলিয়ে বলে –কুত্তি তুই পানি দিলি আমায় । তোর কোন দিন বিয়ে হবে না দেখিস । লাবিবার পাশে বসে গলা জড়িয়ে বলে –বিয়ে না হলেও চলবে ক্রাসের সাথে প্রেমটা হলেই চলবে ।
–কিহ ! তুই আবার মাইনষের জামাইয়ের দিক নজর দিছস? তোরে আমি মানুষ করতে পারলাম না ।
—ওক্কে মা মানুষ করতে হবে না । প্রেম হলে বিয়ে করে নিবো প্রথমেই । বাড়ি থেকে বিয়ের কথা বলছে । আমার প্রেম করে বিয়ে করার সপ্ন এভাবে আমি নষ্ট হতে দিতে পারি না ।
—ছেলে কোনটা ? ঐদিন যে ঐ লম্বুটারে দেখে ফিট খাইতে খাইতে সোজা হয়ছিলি ঐটা ?
—আমার সপ্নের পুরুষ জানু ।
—খারাপ না । ভালোই মানাবে তোর সাথে । সমস্যা নাই কথা বলে দেখি চল ।
—লাভ ইউ জানু । এর জন্যই তোকে এতো ভালো লাগে । উম্মাহহ😘😘
–সর সর কুত্তি😠 মাইনষের জিনিসে একদম ভাগ বসাবিনা বলে দিলাম ।
—ওহ সরি । আমি ভুলেই গেছিলাম তুই পুরোটাই অন্যের জিনিস । হাত দেওয়া নিষেধ ।
কলেজে এসে ক্লাসে বেঞ্চিতে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে লাবিবা । সারারাত ঘূম হয়নি । ক্লাস শেষে ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য উঠলে দেখে লাবিবা ঘুমোচ্ছে । ঘুম থেকে আর না ডাক দিয়ে শারমিনরা ক্যাম্পাসে চলে যায় । বাবু এসে দেখে শারমিনদের সাথে লাবিবা নেই । চেলাকে জিজ্জাসা করে –কিরে স্মার্ট সুন্দরী আসেনি ?
—আসছে ভাই । মনে হয় ক্লাস রুমেই আছে।
—ক্লাস রুমে না থাকলে প্রিন্সিপালের কাছে আছে তাইনা ? এটা বলবিনা ? যাই হোক দেখে আসি সুন্দরীটা কই আছে ।
ক্লাসে এসে দেখে পুরো ক্লাসে লাবিবা একাই । বেঞ্চিতে মাথা রেখে ঘুমোচ্ছে । সামনের বেঞ্চে লাবিবার দিক হয়ে বসে মুখে শয়তানি হাসি ফুটিয়ে তোলে । সুন্দর ঘুমন্ত মুখটা দেখে ঘোর লেগে যায় চোখে । হাত এগিয়ে নেয় লাবিবার দিকে । আঙুল দিয়ে হিযআপের কিনারা দিয়ে আঙুল ঘোরাতে থাকে মুখে । ঘুমন্ত লাবিবা বুঝতেও পারে না । বড় বড় পাপড়িতে ফু দিতে থাকে বাবু । লাবিবা হালকা নড়ে উঠে কিন্তু ঘুম ভাঙে না । মুখ এগিয়ে নিতে থাকে বাবু লাবিবার দিকে । যেই গালে মুখ লাগাবে সেই থমকে যায় । ছাত্রছাত্রী আসতে থাকে । শারমিন এসেই বাবুকে এই অবস্থায় দেখে চিল্লিয়ে উঠে । লাবিবা ধরফর করে উঠে দাড়িয়ে পড়ে । বাবুকে দেখে ভয়ে বুকে থু থু দেয় দুইবার । বাবু দু হাত উপরে তুলে বলে —কাম ডাউন কাম ডাউন গাইস। চিৎকার করার কি হলো ? আমি তো জাস্ট একটু ছুয়েছি । এই তোমাদের আর আসার সময় হলো না তাইনা ? আরেকটু পরে আসলে কি হতো ? কোন ব্যপার না সবাই বসে পড়ো । স্যার চলে আসবে ।
লাবিবা আমতা আমতা করে বলে —কোথায় ছুয়েছেন আপনি ? কেনো ছুয়েছেন ? আপনার সাহস কি করে হয় আমাকে ছোয়ার ?
—মুখে ছুয়েছি । আরো জায়গায় ছুতেই পারলাম না তোমার বান্ধবীরা চলে এলো । আমার সাহস হবে না তো কার সাহস হবে ? আমার ছোয়া নিতে চাওনা তুমি ? প্রিন্সিপালের কোলে উঠে এখন আর আমাকে ভালো লাগছে না তাইনা ? বড় কিছু দিয়েছে নাকি তোমার ঐ প্রিন্সিপাল?(চোখ টিপ দিয়ে)
লাবিবা রেগে বাবুর মুখে থুতু দিয়েই চিল্লিয়ে উঠে —মুখ সামলে কথা বলুন । অসভ্য লোক কথাকার । আর কখনো আমাকে ছোয়ার চেষ্টা করবেন না আপনি । এখনো সময় আছে আমার পিছু ছাড়েন । নাহলে আপনার কপালে দুংখ আছে ।
হন হন করে বেড়িয়ে আসে লাবিবা । নিজ তলায় গিয়ে ডাইরেক্ট প্রিন্সিপালের রুমের দিকে চলে আসে । দরজায় এলে সাইফুল মামা আটকে দেয় । লাবিবা রেগে বলে —মামা আমাকে ভেতরে যেতে দেন ।
—দাড়ান স্যারকে জিজ্জাসা করি । দরজা ফাক করে বলতে যাবে তার আগেই লাবিবা ঠেলে ভিতরে ঢুকে পড়ে । সাইফুল মামা হা হয়ে তানভীরের দিকে তাকায় । লাবিবা একবার তানভীরের দিকে তাকিয়েই বাথরুমে চলে যায় । তানভীর সাইফুল মামাকে বলে –সাইফুল বাইরে দাড়াও । কেউ যেন আমাকে ডিস্টার্ব না করে । আর এই স্টুডেন্ট আমার আত্মীয় কখনো আমার রুমে আসতে আটকাবেনা ।
—ওকে স্যার ।
সাইফুল বেরিয়ে যেতেই তানভীর তাড়াতাড়ি বাথরুমে চলে আসে । দরজা লক না করেই লাবিবা ভেতরে রয়েছে । দুষ্টু পুতুল দুষ্টু পুতুল ডাকতে ডাকতেই তানভীর ভিতরে উকি দেয় । লাবিবা বেসিনের সামনে দাড়িয়ে আয়নায় দরজায় দাড়ানো তানভীরের দিকে তাকিয়ে আছে । হিযআপ খুলে হ্যাঙ্গারে রেখেছে । চুল গুলো পেছনে বাধা থাকলেও সামনে ছোট চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে। বুকে উড়না নেই । গলার হাড বেরিয়ে আছে । ঘাড়ের রগ গুলো শক্ত হয়ে ফুলে উঠেছে । মুখ থেকে বিন্দু বিন্দু পানি পড়ছে । সারামুখ সহ সামনের দিকে চুল গুলোও অনেকটা ভেজা । ফেশওয়াসের দিকে আঙুল দিয়ে বলে —এটা কি আমি ইউজ করতে পারি ?? তানভীরের উত্তরের অপেক্ষা না করেই ইউজ করে । মুখে একের পর এক পানির ঝাপটা দিতে থাকে । তানভীরের ব্যপারটা একদমি ভালো লাগে না । বড্ড অগোছালো এলোমেলো লাগছে তার দুষ্টু পুতুলকে । এগিয়ে এসে কল অফ করে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয় লাবিবাকে । টাওয়েল দিয়ে মুখ হাত মুছে দেয় । হিযআপের উড়নাটা টান দিয়ে নিয়ে গলায় পেচিয়ে দিয়ে কোলে তুলে নেয় । বেরিয়ে এসে সোফায় বসে লাবিবাকে নিয়ে । কপালে ঠোট ছুইয়ে রাখে কিছুক্ষন । লাবিবার চোখ থেকে দু ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে । সেই জল বৃথা যেতে দেয় না । ঠোট দিয়ে শুষে নেয় । চোখে চোখ রেখে বলে —কে কষ্ট দিয়েছে আমার পুতুলটা ? নাম বলো । তাকে তার উচিৎ শিক্ষা দিবো আমি । লাবিবা বাবুর নামটা বলতে গিয়েও বলে না । ছাত্রলীগের সাথে প্রিন্সিপালের ঝামেলা হলে ব্যপারটা মোটেও ভালো হবে না । কলেজ বন্ধ করে দিতে পারে নয়তো প্রিন্সিপালকে ট্রান্সফার করে দিতে পারে । আরো অনেক ঝামেলা হতে পারে । তানভীর চলে গেলে আরতো দেখতে পারবেনা । এবার হারালে মরেই যাবে একেবারে । মরে গেলে বিয়ে কি করে হবে ? নাতির ঘরের পুতি পুতির ঘরের হুতি হুতির ঘরের মুতির মুখ দেখবে কি করে ? লাবিবা তানভীরের শার্ট খামচে ধরে বলে —স্যার আমার মুখটা একটু ছুয়ে দিবেন ? যাতে সর্বত্র আপনার ছোয়া মিশে থাকবে আর কারো নয় । এমনভাবে ছুয়ে দিন যেনো আর কখনো কারো ছোয়ায় এই ছোয়ার ছাপ মুছে না যায় ।
তানভীর দু হাতে দু গালে ধরে চোখে চোখ রেখে বলে –আমার দুষ্টু পুতুল পুরোটাই আমার । কেউ কখনো ছুয়ার চেষ্টা করলে আমি তার হাত ভেঙে দিবো ।
–দিননা ছোয়ে । আমি আপনার ছোয়া পেতে চাই শুধু আর অন্য কারো নয় । আমি পুরোটাই আপনার । কিন্তু আপনি আমায় ভালুপাসেন না । একটুও ভালুপাসেন না।
–কে বললো ভালুপাসিনা ? ভালুপাসিতো। আই লাভ ইউ । আই রিয়েলি লাভ ইউ অনেকমাচ । আমি শুধু তোমার দুষ্টু পুতুল শুধু তোমার ।
লাবিবা তানভীরের কোল থেকে এক ঝটকায় নেমে বলে
—আপনি ভালুপাসেন না । ভালুপাসলে এতো কষ্ট দিতেন না আমায় । আমি কতোক্ষন থেকে একটু ছোয়া চাইছি আপনি দিচ্ছেন না । লাগবেনা আপনার ছোয়া আমার । লাগবেনা আপনাকে । আপনি আপনার বিলাতি বধুকেই নিয়ে থাকেন।
এক মুহুর্ত দেড়ি না করে বেড়িয়ে আসে । তানভীর পেছন থেকে আটকাতে নিয়েও আটকাতে পারে না ।
পহেলা ফাল্গুনের জন্য অডিটরিয়মে রিয়ার্সেল করানো হচ্ছে । লাবিবা চুপ চাপ বসে আছে । সে তো রিয়ার্সেল করবে না কিছুতেই । মেম রা রিয়ার্সেল করতে বলছে কিন্তু লাবিবা তো তা করবে না । রিয়ার্সেলের জন্য সকাল সকাল আসতে হয়েছে । সকাল আটটায় এখনো দিনের চাদের মুখখানা দেখা হয়নি । প্রেজেন্ট খাতায় সই করা হয়েছে । এখন কোন মতে কেটে পড়লেই হলো । চুপি চুপি ব্যাগটা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে । কুয়াশায় ঢাকা ভেজা ঘাসে পা রেখে মাঠে ঢুকে পড়ে লাবিবা । প্রচন্ড ঠান্ডায় পা লাল হয়ে যায় যা লাবিবার বেশ লাগে । পায়ের দিকে তাকিয়ে হাটতে থাকে । হটাৎ নিজের পায়ের সাথে আরেকজোড়া পায়ের দেখা মিলে । খালি পায়ের মাঝে লোমগুলো দেখেই লাবিবার মেরুদন্ড বেয়ে শীতল হাওয়া বেয়ে যায় । সাথে মুখেও অদৃশ্য হাসি ফুটে উঠে । হটাৎ একটা পা নিজের একটা পায়ের উপর ছোয়া দিয়ে যায় । থমকে দাড়ায় লাবিবা । চোখ পায়ের দিকেই সীমাবন্ধ।
—কষ্ট হচ্ছে তো এই ঠান্ডায় । লাল হয়ে গেছে ।
—আপনার বউয়ের কি ?
—আমার বউয়ের কিছুনা । কিন্তু আমার অনেককিছু। আমার দুই নাম্বার বউয়ের পা লাল হবে সেটা তো আমার সহ্য হবে না ।
—ফোন আছে তো সাথে । পিক দেখাবেন আপনার বউয়ের ?
—আমার বউকে না দেখে আমায় দেখো লাভ আছে ।
লাবিবা চোখ তুলে তাকায় । অন্যদিনের মতো ফরমাল ড্রেসে নেই তানভীর । টি শার্টের উপর হুয়াইট জ্যেকেট, লং প্যান্ট, খালি পা , গলায় হেড ফোন । সদ্য ঘুম থেকে উঠা মুখ । অসম্ভব সুন্দর লাগছে । ভেজা ঘাসের উপর বসে পড়ে লাবিবা । হাটু গেড়ে বসে দু গালে হাত মুঠি করে ঠেকিয়ে বলে —আপনার বিলাতি বধু কি খুব সুন্দর ? আমার থেকেও ?
—হা অনেক । সে তোমার মতো এত সাধাসিধে নয় । তুমিতো গাউন পড়ো । আমার বউ শাড়ি পড়ে । মারাত্মক সুন্দর লাগে । তুমি তো ঠোটে লিপিস্টিক দাওনা । আমার বউ চকলেট কালার লিপিস্টিক দেয় । তুমি তো কাজল আইলেন কিছুই দাও না । আমার বউ আইলেন দেয় কালারফুল আইলেন। তুমিতো
— আমি কিছু শুনতে চাইনা । কিচ্ছুনা ।
—-তুমি চাইলে জন্যই তো বলছি ।
— নাহ নাহ । আমি আর নিতে পারছিনা । আসি ।
To be continue____
#একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
#লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_৩৫
🍁
পহেলা ফাল্গুনের অনুষ্টানের আয়োজন করা হয়েছে মুক্ত মঞ্চে। এই ব্যপারে অনেকটা বিরক্ত লাবিবা । মুক্ত মঞ্চে গিয়ে নাচ করা মানে পুরো শহরের মানুষের সামনে গিয়ে নাচ করা । অসহ্য লাগছে । শাড়ী হাতে নিয়ে লাবিবার কাছে এসে দাড়িয়েছে শারমিন । লাবিবা তুতুকে নিয়ে ব্যস্ত। এদিকে সময় লাগবে সাজাতে । শারমিন রেগে গিয়ে বলে —তোর বেবিটাকে রেখে এখন একটু রেড়ি হয়ে নে মা । পরে আবার তারাহুরোয় ঠিকঠাক সাজতে পারবি না ।
লাবিবা উঠে বসে । শাড়ির দিক তাকায় । শাড়ি পড়তে হবে তাইনা ? সাজতে হবে । আমি সাজি না জন্য আমি অসুন্দর তাইনা ?
—দোস্ত রেড়ি হ । পার্লার থেকে সাজবো । সুন্দরী কাকে বলে আজ দেখিয়ে ছাড়বো । পুরো কলেজের ছেলে আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে ।
—কি বলিস এগুলা দোস্ত?? বাবু ভাই তোকে ছাড়বে ভেবেছিস ?
—না ছাড়লে নাই । আল্লাহ যদি চান নিশ্চয় আমাকে রক্ষা করবেন ।তার ভয়ে আমি ঘরে বসে থাকবো নাকি ?
দুই বান্ধবীতে পার্লারে চলে যায় । সেখানেই সাজতে থাকে । কিন্তু লাবিবা মেকাপ করতে দেয়না । পরে এলার্জি হয় মুখে । ফেস পাওডার লাগায় মুখে । তানভীর ফোন দিচ্ছে । শারমিনের হাতে ব্যাগপত্র সবকিছু । ফোন বের করে দেখে ডলফিন নামে কেউ ফোন দিয়েছে । লাবিবার কাছে গিয়ে বলে —দোস্ত ডলফিন কে ? ডলফিন কল দিয়েছে ।
লাবিবা ফোন নিয়ে দেখে তিনবার কল । প্রথমবারে মিস করতে না করেছিলো আর তিনবারেও ধরতে পারেনি । এবার কি হপ্পে ? চতুর্থবার ফোন দিতেই টপ করে ধরে নেয় ।
—হ্যালো।
—কোথায় তুমি ?
—পার্লারে ।
–এখনো সাজগুজ শেষ হয়নি । ওহ তুমিতো আবার ডান্স করবে । কোন পার্লারে ?
—ওমেনস ফ্যাশন ।
—এতো দূরে কেনো গিয়েছো ? কাছাকাছি কোনো একটাতে গেলে কি হতো ?
—ঐগুলো ফুলফিল । তাই এখানে। আর এখানে মেকোভার সুন্দর করে করা হয় ।
—শেষ হয়নি ?
—আর একটু । পাচ মিনিট লাগবে ।
—ওকে আসছি আমি নিতে ।
দশমিনিটেই তানভীর পৌছে যায় । লাবিবাকে সিড়িতে নামতে দেখেই গাড়ির সাথে লেগে যায় । চোখ পুড়ো ছানাবড়া হয়ে যাচ্ছে । মনে মনে একটাই কথা ফিরে ফিরে আসছে “তুমি অন্যায় করেছো পুতুল বউ । তোমার এই রুপ নিয়ে তুমি বাহিরে বের হয়েছো । এই অন্যায়ের চরম শাস্তি হওয়া উচিত তোমার।” লাবিবা সামনে এসে দাড়িয়ে খুব স্মার্টলি বলে –চলুন স্যার ।
তানভীর আর কি যাবে । নিজেকে সামলাতেই ব্যস্ত। শারমিনের কথায় হুস ফিরে । –স্যার আপনিই ডলফিন ? আপনাকে ডলফিন কেনো বলে ? লাবিবা স্যার তোর পরিচিতো আগেতো বলিসনি । কি হয় তোর ? তানভীর কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না । লাবিবা মুচকি মুচকি হাসছে তানভীরের অবস্থা দেখে । মাথায় তার অনেক শয়তানি ঘুরছে আজ । খুব জালাতে ইচ্ছা করছে । তানভীর গাড়িতে ওঠো বলে গেইট খুলে দেয় পেছনে । শারমিন উঠে পড়লেও লাবিবা উঠে না ।ঘুরে এসে সামনের সিটে বসে পড়ে ।তানভীর কিছু বলতে পারে না শারমিনের জন্য । গাড়িতে আড় চোখে কয়েকবার তাকিয়েছিলো তানভীর লাবিবার দিকে । কিন্তু লাবিবা এক মনে তানভীরের দিকেই তাকিয়ে । দুষ্টু পুতুল এমন কেনো ভেবে পায়না তানভীর । তোমার কি লজ্জা করে না একটুও ? আমার সামনে সেজেগুজে এসেছো তবুও লজ্জা করছেনা ? আমি যখন তুমার কাছে যাই তখন তোমার মাথা সহ গায়েও পোকা ধরে । দূরে সরিয়ে দাও আমাকে। আমার রোমান্সের তেরোটা বাজাও। এমন করো কেনো দুষ্টু পুতুল…আমার যে হৃদয় চোখ মন সব জলে যাচ্ছে তোমার রুপে । এবার মুখ খুললো তানভীর । অনুনয়ের সূরে বলে —দুষ্টু পুতুল মুক্তমঞ্চে না গেলে হয়না ? হোস্টেলে ফিরে যাও প্লিজ ।
–কেনো ? এতো কষ্ট করে এমনি এমনি রেড়ি হয়েছি নাকি ? আমার পারফরমেন্স আছে স্যার । আপনার মনে হয় জানা নেই । আমাকে যেতেই হবে । তানভীর আর কিছু বলেনা । কারন এখন কিছু বললে শারমিন ও পিছু থেকে কথা ধরবে । গাড়ি থেকে নেমেই তানভীরকে কিছু বলতে না দিয়ে লাবিবা শারমিন দৌড়। এদিকে প্রফেসররা তানভীরকে ঘিরে ধরে –স্যার আপনি কোথায় গিয়েছিলেন …মন্ত্রী স্যার আপনার জন্য ওয়েট করছে ব্লা ব্লা ..।
তাই আর লাবিবার দিক যেতে পারে না । লাবিবা ভিতরে যেতেই চোখে পড়ে বাবুর । বাবু সামনে এসে দাড়াতেই চমকে উঠে লাবিবা । বাবু মাথায় হাত দিয়ে বলে —আরেব্বাস সুন্দরী যে এতো সুন্দরী আগে তো জানতাম না । অন্তর জইলা ছারখার হয়ে যাইতেছে । সুন্দরী তোমারে এখনি আমার পেতে ইচ্ছা করছে। চলো একটা রাউন্ড দিয়ে আসি বাইকে ভুম ভুম ।
লাবিবার এবার কান্না আসছে । তখনি মিলি জবা এসে টানতে টানতে নিয়ে চলে যায়। এযাত্রায় বেচে গেলাম বলে মনে হয় । পেছনে তাকিয়ে দেখে বাবু ডাকছে –এই সুন্দরী কোথাও যাও ..চলোনা একটা রাউন্ড দিয়ে আসি বাইকে । অনেক কিছু দিবো চলোনা । লাবিবা জোরে হাটতে থাকে । যেইনা হাত ধরতে যাবে তখনি চিৎকার দিয়ে উঠে লাবিবা । স্টেজের সামনে উঠতে যাচ্ছিলো তানভীর । চার সিড়ির তিন সিড়িতে পা রাখতেই হালকা চিৎকারের আওয়াজ শুনে পেছন দিকে তাকিয়ে দেখে লাবিবা সবার থেকে একটু দুরে ভয়ার্ত চোখে দাড়িয়ে । শারমিনরা এগিয়ে গিয়ে লাবিবাকে ধরে । তানভীর স্ট্রেজে না উঠে লাবিবার কাছে চলে আসে । লাবিবার সামনে গিয়ে হাত ধরে সামনে এনে বলে —চিৎকার করলে কেনো ? কি হয়েছে বলো । কেউ কিছু বলেছে ? অসভ্যতামি করেছে ? জবা বলে উঠে —স্যার বাবু ভাই সুন্দরী সুন্দরী বলে ডাকছিলো । বাইকে উঠার অফার দিচ্ছিলো । লাবিবা কেদে ফেলে এবার । তানভীর দু গালে হাত রেখে চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে আস্তে আস্তে বলে
—উত্তর দেওয়া শিখো । তুমার হাজবেন্ড মার্সিডিজ ইউজ করে । তুমি কেনো ঐ ছোট বাইকে বসতে যাবে বলোতো ? কান্না অফ করো নাহলে কাজল নষ্ট হবে । পরে আবার আমার দুই নাম্বার বউকে বেশি খারাপ দেখতে লাগবে । দুই নাম্বার বউয়ের কথা শুনেই রাগ উঠে যায় লাবিবার । সরে দাড়িয়ে শারমিনদের নিয়ে প্রস্থান করে। তানভীর থ খেয়ে যায় । এতো তেজ কেনো মেয়েটার ? পারফর্মেন্সের আগে লাবিবা চুপ চাপ বসে বসে ফুলছে আর সবার পারফরমেন্স ইনজয় করছে । একদমি ভালো লাগছেনা । আমি যেনো তার দ্বিতীয় বউ হওয়ার জন্য বসে আছি । বেশি খারাপ দেখতে আমি ? কক্ষোনা না । আপনার বিলাতি বধু সুন্দরী হলে আমিও সুন্দরী । আমিও কম না । উঠে গিয়ে কমন রুমে এসে নিজেকে ঠিক ঠাক করে নেয় একবার । কাজল আরো গাড় করে লাগায় । আয়নায় একবার নিজেকে দেখে বলে –আপনার বিলাতি বধুকে একবার দেখতেই হবে আমার স্যার কতোটা সুন্দরী সে। আমার থেকেও নাকি ___
লাবিবার সিরিয়াল আসলে মিউজিক যে প্লে করছে তার কাছে গিয়ে বলে — ভাইয়া পাঞ্জাবী ওয়ালা গানটা প্লে করেন তো ।
—আপু আপনার তো পিন্দারে পলাশের বন গানের নাচ করার কথা ।
—এতো কথা বলো কেনো ছেলে ? প্রিন্সিপালকে ডাক দিবো ? যা বলছি তাই করো।
ছেলেটা গান চেঞ্জ করে প্লে করে । লাবিবা স্ট্রেজে উঠে খুব ডিপলি স্বাভাবিকের থেকে অনেকটা অস্বাভাবিক এক্সপ্রেশন বডি ল্যাংগুয়েজে ডান্স করতে থাকে । হিরোইন দের মতো এক্সপ্রেশন দেখে পুরো গাউন্ডে হিডিক পড়ে যায় । তানভীর যেনো বসে থাকতে পারছেনা। ইচ্ছে করছে উঠে গিয়ে থাপ্পর দিয়ে নামিয়ে ফেলতে স্ট্রেজ থেকে । বেদ্দপ মেয়ে এইভাবে এতোগুলো লোকের সামনে কিভাবে নাচছে ..লজ্জা বলতে কি কিছু নেই নাকি । এই মেয়ে হবে আমার বউ। মান সম্মান সব শেষ হয়ে গেলো । লাবিবা স্ট্রেজ থেকে নামতেই চারিদিকে ছেলেরা চিল্লাতে থাকে
আগুনরে আগুন নাচলো রে ..জ্বলে গেলাম রে জ্বালিয়ে দিলো রে। তানভীর দু হাতে কানচেপে ধরেও রাগ থামাতে পারছেনা । অতিথিদের এক্সকিউজ মি বলে উঠে পড়ে তানভীর । ভার্সিটির ভিতরের দিকে যেতে থাকে । কমন রুমে গিয়ে পায়ের রক্ত মাথায় উঠে যায় তানভীরের। বাবু আর লাবিবা একটা ফোন নিয়ে লাফালাফি করছে । লাবিবা ধরতে গিয়েও ধরতে পারছেনা । আসলে বাবু ধরতে দিচ্ছে না । তানভীর রেগে জোরে বলে —কি হচ্ছে এখানে ??
লাবিবা তানভীরের কাছে এসে বলে —আমার ডান্স ভিডিও করেছে বাবু ভাই । তানভীর বাবুকে বলে —এসব কি বাবু ? ভিডিও যেনো না করা হয় এই দায়িত্ব তোমাদের দেওয়া হয়েছিলো আর তুমি ভিডিও করেছো । এটা মেনে নিতে পারছিনা আমি ।
—স্যার দেখুন আমরা তো আর ভাইরাল করতে যাচ্ছি না । ভালো লেগেছে তাই নিচ্ছি । ছোট বোন গুলোর নাচের ভিডিও আমার ফোনে থাকবে সমস্যা কি ? আমরা আমরাইতো ।
তানভীর লাবিবার দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে বলে –সত্যি বাবু এলিজা অনেক সুন্দর ডান্স করে । ভিডিওটা আমারো দরকার বুঝলে ….সময়ে অসময়ে দেখলে ভালো লাগবে । দেখি আমার ফোনে ট্রান্সফার করোতো । তুমিই তো ভিডিও করেছো তাইনা ? অন্য কারো কাছে তো আর পাচ্ছি না ।
বাবু ডেভিল স্মাইল দিয়ে এগিয়ে আসে ফোন নিয়ে —জি স্যার আমার কাছেই পাবেন ।
— থ্যাংক ইউ ।
তানভীর ফোন নিয়ে নিজের ফোনে ভিডিও টা ট্রান্সফার করে। ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বলে —বাবু আর ভিডিও করো না । ছোটরা কি শিখবে বলোতো …প্রোগ্রাম সামলাও । বাবু চলে যেতেই কমন রুমের ডোর লাগিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে লাবিবাকে । গালের নিচে জঘন্য ভাবে কামড় দিতেই লাবিবা লাফিয়ে উঠে চিল্লানি দিয়ে । দুরে সরে যেতে চাইলে তানভীর নিজের সাথে চেপে ধরে । লাবিবা চোখে চোখ রাখতে পারে না । সে কি করেছে সে বুঝতে পারছে । চোখ বন্ধ করে নিলে তানভীর রেগে বলে —লুক এট মি । একদম চোখ নিচে নামাবে না । আমি বলেছিলাম হোস্টেলে ফিরে যেতে । শোন নি । ডান্স করতে দিয়েছি বলে এভাবে ডান্স করবে?😠 ছেলেদের মাথা পাগল করা তাইনা ? আজ থেকে তোমার ডান্স বন্ধ। ইচ্ছে করলে দরজা বন্ধ করে করবে নয়তো আমাকে ডাকবে আমি দর্শক হবো । মনে যেনো থাকে ।
তানভীর লাবিবাকে ছেড়ে চলে যেতে নিলে টেনে আবার নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয় । কাদো কাদো ফেইসে বলে —সরি।
—মানবো না ।
—সরি তো । প্লিজ । আর হবে না । তবে ডান্স করবোনা দুইটা শর্তে । রাজি থাকলে বলুন ।
—বলো ।
—সত্যি বলবো ?
–হুম
—আজকের বাকি সময়টা আমাকে আপনার সাথে সাথে রাখবেন ।
—ওকে । আর ?
—আর..সত্যি করে বলতে হবে আমি সুন্দর নাকি আপনার বিলাতি বধু সুন্দর ? দেখুন আমিও কিন্তু সেজেছি । শাড়ি পড়েছি । বলুননা..প্লিজ।
একমনে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে লাবিবার দিকে । তারপর বলে —আমার বিলাতি বধু হচ্ছে কালো গোলাপের কলি । আর তুমি হচ্ছো ফুটন্ত কালো গোলাপ । কলির এক সৌন্দর্য আর ফুটন্ত ফুলের আরেক সৌন্দর্য। তবে বরাবর ই কলির থেকে ফুটন্ত কালো গোলাপ ই নজর কাড়ে ।
—-আমি ওর থেকে সুন্দর তো ?
—হুম । সুন্দরী । এর জন্য এরকম করলে তুমি ??
লাবিবা মুখে হাসি ফুটিয়ে তানভীরের কলার চেপে বলে —নাতো । আমি শুধু দেখালাম আমিও পারি ।
তানভীর লাবিবার গলা চেপে ধরে বলে
–মেরে ফেলবো একদম বলে দিলাম ।
To be continue __
#একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
#লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_৩৬
🍁
তানভীরের কোয়ার্টারে সিফট হয়েছে অনেকদিন। কিন্তু কাজের চাপে এখনো পুরো কোয়ার্টার ঘুরে দেখেনি।এক কাপ কফি হাতে ঘুরে ঘুরে দেখছে সবকিছু। ওয়েদার একদম ক্লাউডি তাই পরিবেশটা দারুন লাগছে । ফোন বেজে উঠলে পকেট থেকে বের করে দেখে ফিরোজ ফোন দিয়েছে । মুচকি হেসে রিসিভ করে লাউড দিয়ে কাপে চুমুক দিয়ে বলে
—হাই পাপা। কনগ্রাচুলেশন ফর ইউর সাকসেস পাপা।
—হেই এতোক্ষনে …তো পাপাতো মন্ত্রীপদে চলে গেলো। ড.তানভীর খান কি আসবেনা পাপাকে কনগ্রাচুলেট করতে ?
—অফ কোর্স পাপা । কামিং টুডে । আফটার ভার্সিটি হলিডেস ।
—ওকে আই এম ওয়েটিং ফর ইউ মাই সন। বাই ।
— বাই।লাভ ইউ পাপা।
গাড়িতে উঠার সময় বাবু সামনে এসে দাড়ায় । হুডির কেপ খুলে বলে –আসসালামু আলায়কুম স্যার । কেমন আছেন ?
–ওয়ালাইকুম সালাম । আম ওকে । কিছু বলবে ?
— অবশ্যই স্যার । বলেই ফেলি । ভিডিওটা ডিলিট করে আপনি ঠিক করেন নি ।
—আমি ভুল খুব কমই করি । আরো কিছু বলবে ?
—এতো তাড়া কিসের স্যার । ভার্সিটি পরিচালনা তো আমিও করি । আপনার কি কাজ থাকতে পারে সবই জানি । আমাকে এতো ব্যস্ততা দেখাবেন না । এলিজার কাছে যাবেন নাকি ?
— লিসেন বাবু । আমি কি করবো সেটা আমার ব্যপার । তোমার স্পর্ধা দেখে আমি অবাক হচ্ছি । সামান্য নেতা হয়ে প্রিন্সিপালের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেটাই ভুলে গেছো । আমি তোমার স্যার । এই ভার্সিটির প্রিন্সিপাল । আমি যদি চাই তাহলে তোমার ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া আমার বা হাতের খেল । নেক্সট টাইম থেকে ঠিক করে কথা বলবে । বেয়াদবি আমি হেট করি ।
গাড়ির গেইটে হাত দিতেই বাবু বলে উঠে
—সেটা নয় দেখা যাবে কে কার ক্ষমতা কাড়ে । আপাদত একটা কথা বলতে চাই ই এলিজা মেয়েটার সাথে আপনার অনেক ঘনিষ্টতা দেখছি । ছেড়ে দিন ব্যপারটা । ও আমার নজরে পড়েছে । ফিউচার জি এফ আমার । দুই নাম্বার জিনিস নেই না আমি। ইনটেক জিনিস বেশি__
আর বলতে পারে না বাবু । তানভীর ঘুরে ঠাস করে চড় বসিয়ে দেয় গালে । শার্টের কলার ধরে বলে
—এলিজার সম্পর্কে একটা কথাও বলবিনা তুই । তোর সাহস কি করে হয় ওর দিকে নজর দেওয়ার ? চোখ তুলে ফেলবো একদম । ওর আশে পাশেও যেন না দেখি । এটা তোর জন্য ফাস্ট এন্ড লাস্ট ওয়ার্নিং।
কলার ছেড়ে গাড়িতে ওঠে যায় তানভীর ।
বাসায় এসে ফিরোজ কে কনগ্রাচুলেট করে অর্কিডের বুকি দিয়ে । অর্কিড ফিরোজের অনেক ফেভারিট । সাথে ড্রেস তো আছেই । ডিনার করার সময় ফিরোজ বলে —তানভীর । একা থাকো তুমি । আমি চাই এবার দুকা থাকো । বয়স অনেক হলো । আর কতো ? আমি কি নাতির মুখ না দেখেই যাবো ।
—পাপা আর একটা বছর ওয়েট করতে চাইছি। দুষ্টু পুতুলের অনার্সটা শেষ হোক ।
ফিরোজ ছেলের দিকে তাকিয়ে বলে —তুমি এখনো দুষ্টু পুতুলেই আটকে আছো ? আমি তো ভুলেই গেছিলাম এই কথা । অনেক বছর দেখিনা মেয়েটাকে । ইসমাইল কে একবার বলতে হবে পরিবার সমেত দাওয়াত নিতে । ছবি আছে নাকি লাবিবার ?
তানিয়া ফোন থেকে লাবিবার একটা ছবি বের করে দেয় । ফিরোজ দেখেই হেসে ফেলে —মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দরী হয়ে গেছে দেখছি । মুখটা বাচ্চাদের মতোই আছে ।
সোহানা হেসে বলে –স্বভাব ও বাচ্চাদের মতোই আছে । আগেতো আসতো আমার কাছে । তুমি ঢাকায় ছিলে । বছর দেড়েক হলো আর আসে না ।
তানভীরের খাওয়া শেষ । উঠে দাড়িয়ে বললো –মম আমি আসছি । বেসিনে গিয়ে হাত ধুয়ে রুমে চলে আসে । চেঞ্জ করার জন্য আলমারি খুলে । ড্রেসগুলো এলোমেলো হয়ে আছে অনেক ।সব গুলো জড়ো করে ধরতেই একটা ডায়েরির মতো দেখতে পায় । হাতে নিয়ে দেখে ছোট্ট একটা ডায়েরি । ভিতরটা খুলতেই দেখে উপরে বড় বড় করে লেখা
“একগুচ্ছ কালো গোলাপের ভালুপাসা”
হাতের লেখা দেখে বুঝতে বাকি নেই যে এটা লাবিবার লেখা । এই মেয়েটার হাতের লেখা বরাবরই খারাপ । সুন্দর বলাই যায় না । বেডে এসে হাটুর উপর কুশন রেখে ডায়রীটা পড়তে থাকে ।
——–
” একগুচ্ছ কালো গোলাপের ভালুপাসায় মোড়ানো আপনার হৃদয় ছুয়েছে আমার হৃদয়কে । এ যেমন তেমন ছোয়া নয় ~এ যে প্রেম ছোয়া ~। যে ছোয়া একটু একটু করে তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে প্রতিনিয়ত আর শক্তির সন্ধান দিচ্ছে ধৈর্যের ।বাড়িয়ে দিচ্ছে অপেক্ষার ক্ষমতা । আমি আজো পথ চেয়ে আছি আপনার অপেক্ষায় ……”
” যখন ছিলেন আমার অতি নিকটে বুঝিনি আমি কিছুই ,যখন গেলেন চলে অনেক দূরে বুঝিনি আমি কিছুই , যখন প্রতিনিয়ত বহমানিত হচ্ছিলো আপনার ফেলে যাওয়া স্মৃতি গুলো বুঝিনি আমি কিছুই ~~একগুচ্ছ গোলাপ আর আপনি ছাড়া~~”
” ভালুপাসা কি ? আমি কি জানতাম ? নাকি জানি ? আমি কিছুই জানি না ।আমি জানতে চাই ,আমি শিখতে চাই ~ আপনার থেকে । আপনি আমার স্যার …সারাজীবন স্যার বলেই মানতে চাই আর একটু একটু করে শিখতে চাই । ”
” গত তিন বছর আগে এই রাতে জেনেছি …আব্বু আর আংকেল আমাদের বিয়ের কথা বলছিলো । আপনিই নাকি বলেছেন আমাকে বিয়ে করবেন । আব্বু খুব ভয় পেয়েছিলো । বিদেশ গেলে নাকি মুড চেঞ্জ হয়ে যায় । আর আপনিতো ইউকের মতো একটা দেশে আছেন। আমিই আব্বুকে অভয় দিয়েছি । কারন কেউ না জানলেও আমি জানি আমার আব্বুর পরে কারো যদি আমার কপালে ছোট ছোয়ানোর অধিকার থাকে সেটি আপনার ই । আর ঐ ঠোটের ছোয়া পাওয়ার যদি কারো অধিকার থাকে সেটি আমার ই । আপনি পুরোটাই আমার । আপনার ভাগ আমি কাউকে দিতে পারবোনা ।”
” জানেন আমি না প্রায় সপ্নে দেখি একটা ফেয়ারি ব্লাক ড্রেস পড়ে একটা বাগানে কালো গোলাপের বাগানে বসে আছে ।আর একটা ডেবিল তাকে সেই গোলাপে ভরিয়ে দিচ্ছে । জানেন আমি না আরো সপ্ন দেখি । একটা শীতের রাতে জোছনা বিলাস করছে সেই ফেয়ারি আর ডেবিল মিলে । সারারাত কাটিয়ে দিচ্ছে দুজনে । ”
” আপনার ব্লাক আর হুয়াইট কালার শার্ট দুটি আমার কাছে । না নিয়ে থাকতে পারিনি । আপনি চলে যাবার দিন এই দুটি শার্ট পরেছিলেন । বুয়া ওয়াশ করতে নিয়েছিলো । আমি এই শার্ট দুটি ওয়াশ করতে দেইনি । কাউকে না বলেই আমার কাছে নিয়ে চলে আসছি।যদি খুজেন তো আমার কাছে পাবেন। আজো আপনার গায়ের সুবাশ পাই এই শার্ট দুটি থেকে । মনে হয় আপনি আমার কাছেই আছেন।”
” আমার সকাল হয় ফোনের স্কিনের ওয়ালপেপারে আপনাকে দেখে রাত হয় আপনাকে দেখে । আপনাকে বলাই হয়নি ….আমার যে আপনার দুটো জিনিস অনেক ভালো লাগে । লাল টকটকে ঠোট জোড়া আর উন্মুক্ত বুকের লোমগুলো । আগে না বুঝলেও এখন বুঝি আপনি এই দুইটি জিনিসের কথাই বলেছিলেন । চোখ ফেরাতে পারিনা আমি । আপনি একবার আসুন ….আমি আমার চোখের তৃষ্ণা মেটাবো আপনাকে দেখে। আপনি যে পুরোটা আমারই। ”
” আমি কিন্তু আর সেই বাচ্চিকাটি নেই …আমি বড় হচ্ছি। আমার চাহিদাও বেড়ে যাচ্ছে । এবার আমি একটা নয় একগুচ্ছ গোলাপ চাই আপনার কাছে । না দিলে কাদবো অনেক । কথা বলবো না । কথাও শুনবো না । বলে দিলাম হুহহ ।”
” তানিয়া বললো আপনি নাকি বিয়ে করেছেন । আপনার বিলাতি বধু নাকি হয়েছে। খুব নাকি ভালোবাসেন। তাহলে আমার জায়গা কোথায় ?”
” আমি ঠিক আছি । শরীর একদম সুস্হ। হৃদয়টাই অসুস্থ হয়ে গেছে । পচেও যেনো পচে যাচ্ছে না আপনাকে ভুলতে চাইলেও পারছিনা।কখনো পারবোওনা । ”
ডায়রিটা আলামারিতেই রেখে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় তানভীর । চোখ বন্ধ করে লাবিবার মুখটা কল্পনা করে ।
—তুমি বড়ো হয়ছো দুষ্টু পুতুল …কিন্তু তোমার ছেলেমানুষী গুলো রয়েই গেছে। তোমাকে আর কষ্ট পেতে দিবোনা পুতুল বউ। আই এম সরি এই ফানটা তোমার সাথে করার জন্য ।
আকাশ মেঘলা দেখে লাবিবা আর বসে থাকতে পারছেনা । শারমিনকে জোরাজুরি করতে থাকে বের হবার জন্য । শারমিন চরম বিরক্ত। তার বড় বোনের বার্থডে ঘটা করে পালন হচ্ছে তার বোনের শশ্বুর বাড়িতে অথচ সে যেতে পারছেনা তার লুচু ক্যান্ডি বেয়াইটার জন্য। লাবিবা রেগে গিয়ে বলে —শোক পালন কর তুই । বলছিযে বাইরে চল আমার সাথে তা যাবে না । ছুটির দিনটা সারাদিন রুমে বসে থাকার কোন মানে হয়না ।
—তুই যা তো । আমার ভালো লাগছে না। আমি ঘুমাবো একটু । ঘুমালেই মুড অন হয়ে যাবে আমার ।
লাবিবা রেগে রুমে এসে একটা সুতি মেরুন কালার গাউন আর হিযআপ বেধে নেয় । ওয়াটার প্রুভ ব্যাগটা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে বাইরে । বৃষ্টির আগে ও পরে প্রকৃতি সবুজ হয়ে উঠে । রিভারের পাশে এসে বসে আছে লাবিবা । ঠান্ডায় ঠান্ডা হাওয়া অনেক ভালো লাগছে । চোখ পড়ে পাশের রেস্টুরেন্টের দিকে । নতুন হয়েছে রেস্টুরেন্ট টা দুতলায় । উপর থেকে সুন্দর একটা ভিউ পাওয়া যাবে আর ধোয়া উঠানো দুধচা ব্যপারটা জমপেশ হবে ভেবে উঠে রেস্টুরেন্টে চলে আসে লাবিবা । পেছন দিকের খোলা বারান্দার দিকে বসানো চেয়ার টেবিলে গিয়ে বসে । ওয়েটারকে ডাকতে যাবে হটাৎ চোখে পড়ে সামনের দু টেবিল আগে বসা তানভীর আর একটা ইংলিশ মেয়ের উপর । মেয়েটার আগা গোড়া সাদা । সাদা চুল , সাদা গায়ের রং ,সাদা টপ ,সাদা প্যান্ট ,ঠোট ভরা লাল লিপিস্টিক , কাধ পর্যন্ত চুলে ক্লিপ লাগানো সব মিলিয়ে অমাইক সুন্দর লাগছে । মেয়েটা তানভীরের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে । কখনো খাইয়েও দিচ্ছে দু জন দুজনকে । চোখের কোনা দিয়ে দু ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে লাবিবার ।আরো আসতে চাইলে চোখ মুছে ফেলে দু হাতে । ঝাপসা চোখে তাকিয়ে থাকে দুজনের দিকে । এটাই বুঝি সেই বিলাতি বধু ..কি সুন্দর …কতো স্মার্ট। বিলেতের মেয়ে হবেই তো এমন সুন্দরী । কি সুন্দর মানিয়েছে দুজনকে । আর এই মেয়েটার হাসি মুখটা একদম নজর কাড়া । দেখেই বুঝা যায় কতোটা প্রানোচ্ছল । এরোকম মেয়েরা অনেক ভালো মনের হয় । আর আমি কিনা তার সংসারে ভাগ বসাতে চাইছি । ছিহ লাবু তুই এতো খারাপ । না এটা কখনোই সম্ভব না । আই এম গুড গার্ল । আমি বেড গার্ল হতেই পারি না ।
তানভীর আর মেয়েটা উঠে দাড়ায় । এক হাত পকেটে রেখে অপর হাতে ছোট্ট করে একটা হাগ দেয়। বেড়িয়ে আসে রেস্টুরেন্ট থেকে । গাড়িতে তানভীর উঠে বলে
বেবি , টার্ন ইন দেট ডিরেকশন। মেয়েটা ঘুরে গিয়ে তানভীরের পাশের সিটে বসে পড়ে । গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ফ্রন্ট মিররের দিকে তাকাতেই বেক সাইট দেখে একটা মেয়ের । দুষ্টু পুতুল বলেই জানালা দিয়ে পেছনে তাকাতেই আর দেখতে পায়না কাউকে ।
_______________
টিপ টাপ বৃষ্টি শুরু হয়েছে । গাড়িতে না উঠে হেটেই যাচ্ছে লাবিবা । হোস্টেল এখান থেকে প্রায় দেড় ঘন্টা হাটার পথ । পুরোনো দিনের অভ্যাস তো রয়েই গেছে হাটাহাটি করার । তাই আর পা চালাতে সমস্যা হচ্ছে না। সমস্যা তো হচ্ছে বুকে । মনে হচ্ছে কেউ হাত দিয়ে কলিজা ছিড়ে নিচ্ছে । বৃষ্টির পানির সাথে দু চোখ বেয়ে জলের কনা পড়ছে অবিরত । আস্তে আস্তে একটু জোরেই বৃষ্টি নেমেছে । লাবিবা পুরো ভিজে গেছে। সুতি জামা হলেও শরীরের সাথে লেপ্টে গেছে ।
রাস্তাঘাটের দোকানপাট সব বন্ধ। তাই মানুষ জন মাঝে মাঝে দু একজন চোখে পড়ছে । লাবিবার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে । সেদিকে লাবিবার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই । তার ভেতর বাহির জুড়ে শুধু একটা কথাই ফিরে আসছে সে আর তানভীরের পানে ছুটবেনা । অন্যের সংসারে আর নিজেকে লেলিয়ে দিবে না ।
ভার্সিটির এরিয়ায় ঢুকতেই বাবুর চোখে পড়ে । বৃষ্টির জন্য বাইক নিয়ে দাড়িয়ে আছে সবাই । পুরো ভার্সিটিতে বাবুর দল ছাড়া আর কোন ছিটেফোটাও নেই । সবাই ক্যারাম খেলায় ব্যস্ত। বাবু কাউকে কিছু না বলে ফোনটাবের করে রেখে লাবিরার পিছু পিছু বেড়িয়ে পড়ে । লাবিবা বিষাধ ভরা মন নিয়ে একমনে এগুতেই থাকে । বাবু পেছন থেকে এসে কাধে হাত রাখলেই লাবিবা চিৎকার দিয়ে পিছিয়ে যায় । বাবুকে দেখে কলিজা শুকিয়ে যায় এই ভারি বর্ষনেঝ । বাবুও এগুতে এগুতে বলে— চিৎকার করো কেনো সুন্দরী ? প্রিন্সিপাল যখন ধরে তখন তো আরো মাখো মাখো হয়ে যাও । সব দেওয়া শেষ নাকি প্রিন্সিপালকে । ভেবেছিলাম ইনটেক জিনিস নিবো । কিন্তু প্রিন্সিপালের চড় খেয়ে মনে হলো ইনটেকজিনিস আর আমার ভাগ্যে নেই । এবার আমি ওন্ড জিনিস ই নিবো। অপমানিত হয়ে মনে হলো এতে বেশি হার্ড হবে প্রিন্সিপাল ।
—আপনি একটা নোংরা মানুষ তাই আপনার চিন্তা ধারাও নোংরা ।
—আজ তোকেও নোংরা করবো ।
বাবু লাবিবাকে ধরতে গেলে লাবিবা চিৎকার দিয়ে বসে পড়ে। মামুন বাবুকে পেছন থেকে ধরে ধাক্কা দিয়ে বলে -কি করছিস টা কি ? পাগল হয়ৈ গেছিস ? ও তো তোকে সহ্য ই করতে পারে না তবুও কেন ওর পিছু লেগে আছিস ?
–ওকে আমার লাগবে । ওর জন্য আমি ঘুমোতে পারি না । কোন মেয়ের মাঝে সুখ পাইনা । ওকে আমার লাগবেই ।
–আমি কখনোই তোর এই নোংরা কাজ ওর সাথে করতে দিবো না ।
–তোর কেনো লাগে ? তোরও কি ওর দিকে নজর পড়েছে নাকি?
— মুখ সামলে কথা বল বাবু । এলিজা আমার বোন ।
–তোর কোন বাপের মেয়ে ও?
–কাউকে বোন বলতে গেলে বাপ লাগে না বাবু । ওর দিকে আর নজর দিবি না তুই । তাহলে তোর সাথে আমার সব সম্পর্ক শেষ হয়ে যাবে মনে রাখিস । এলিজা তুমি যাও ।
বেগ নিয়ে উঠে দাড়িয়ে এক দৌড়ে হোস্টেলে চলে আসে ।
To be continue ___