একটি নির্জন প্রহর চাই পর্ব -২৮

#একটি_নির্জন_প্রহর_চাই
২৮
#WriterঃMousumi_Akter.
পৃথিবীতে বন্ধুজাতির মতো জাত শ* ত্রু আর দ্বিতীয়টি নেই।এরা থাকলে আপনার আর বাঁশের অভাব হবেনা।আপনি নিজেই একটা আস্ত বাঁশ বাগানের মালিক হয়ে যাবেন।যেমন টা আজ আমার সাথে হলো।এমন একটা বাজে সিসুয়েশনে দাঁড়িয়ে আছি সেটা বলার মতো নয়।উনি অদ্ভুত ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।আমি তাকানোর সাহস টুকুও পাচ্ছিনা।তাকালেই দেখছি উনি তাকিয়েই আছেন।এমন লজ্জকর মুহূর্তে কী করা উচিত সেটাও বুঝতে পারছিনা! কোনো মানুষ যেন এমন লজ্জায় না পড়ে বরের সামনে।বর যদি হয় আবার শিক্ষক! ইয়া মাবুদ আমাকে তুলে নাও!উনি এবার বুকে হাত বেঁধে আরও একটু সোজা হয়ে দাঁড়ালেন।দৃষ্টি আমার দিকে স্থির রেখেই ভ্রু কুঁচকে বললেন, ‘ এগুলো কোন ধরণের মেডিসিন?’ উনার চোখে মুখে প্রশ্ন নাকি বিস্ময় ঠিক বোঝা যাচ্ছেনা!উনি কী রেগে আছেন নাকি অবাক হয়েছেন সেটাও বোঝা যাচ্ছে না।তবে থমথমে ভাবেই প্রশ্নটা করলেন।উনাকে দেওয়ার মত কোনো উত্তর ই আমার কাছে নেই।মিনিট খানিক চুপ রইলাম।আমাকে চুপ থাকতে দেখে আবারও প্রশ্ন করলেন,
‘হোয়াট হ্যাপেন্ড?আনসার মি!এসব কী ছিল।আর এসব-কে মেডিসিন বলে? তুমি এটা আমাকে খাওয়াতে নিয়ে এসেছ?
‘স’সরি, আমি বুঝতে পারিনি।’
‘কী বুঝতে পারোনি?’
‘কিছুক্ষণ আগে যেটা হলো।’
‘আমার অর্ধেক বয়স পার হতে গেল এখনো এসব জিনিস ছুঁয়ে দেখলাম না আর তুমি এইটুকু একটা মেয়ে এসব জিনিস কিনে এনেছ দোকানে গিয়ে।’
‘ইয়ে মানে স্যার।’
‘কী বলেছিলে দোকানে গিয়ে?’
‘কী কী বলব?’
‘কী বলে এসব কিনেছ?’
‘দেখুন এই টপিকস চেঞ্জ করুন।’
‘নো চেঞ্জ।এই টপিকসে আজ সারারাত ক্লাস চলবে।দোকানদারকে গিয়ে কী বলেছিলে বলো?তোমার হাজবেন্ডকে এটা খাওয়াতে চাও?’
‘না এসব বলিনি।’
‘এটা কী খাওয়ার জিনিস যে আমাকে খেতে বললে।’
‘খাওয়ার জিনিস না কীসের জিনিস আমি কি জানতাম নাকি!’
‘এটা খেতে হয় না-কী করতে হয় তুমি জানোনা?’
‘না।’ ঠাস করে একটা মিথ্যা বলে দিলাম জানিনা।জানি বললেও মহা বিপদ।জানিনা বলে এই কথায় স্ট্রং থাকতে হবে।
‘আসলেই জানোনা?’
‘না স্যার আসলেই জানিনা।’
‘ওপস ভেরি স্যাড!আমার ওয়াইফ এত গুরুত্বপূর্ণ একটা সাব্জেক্ট জানেনা!আজ আমি তোমাকে এই সাব্জেক্ট টা পড়াব।’
কথাটা কর্নকুহরে প্রবেশ করতেই খেলাম আরেক ধাক্কা।উনি আমাকে এসব শেখাবেন মানে!আমি যে মিথ্যা বলছি উনি বুঝে গিয়েছেন!না হলে উনার মতো মানুষ তো এসব নিয়ে কথা বলার লোক নন।মিথ্যা বলে লাভ নেই।কোনো উপায় না পেয়ে বললাম,
‘আমি জানি এগুলা কী,আর কী করতে হয়।আমি মিথ্যা বলেছি যে জানিনা।’
‘আচ্ছা। বাকি সত্যি টাও বলে দাও।এসব পেয়েছ কোথায়?’
‘ফ্রেন্ডরা দিয়েছে।’
‘কেন দিয়েছে?’
‘আপনার ছবি দেখতে চেয়েছিল।আমাদের কাপল ছবি।আমার কাছে আপনার পিকচার নেই।তাই আমি বলেছি আমার বর খুব আনরোমান্টিক উনি ছবি তুলতে পছন্দ করেন না।একদম রোমান্টিক নন। তখন ওরা বলল এটা নিয়ে জামাইকে দিবি, খবরদার খুলে দেখবি না।জামাই-এর কসম দে।আমি জিজ্ঞেস করলাম যে এতে কী আছে?ওরা বলল, রোমান্টিক হওয়া মেডিসিন।’
‘আমার কসম দিয়েছ বলে খুলে দেখনি?’
‘হুম।’
‘কেন?’
‘কসম না রাখলে যদি আপনার কিছু হয় তখন।’
‘হলেও বা তোমার কী?কিছু যায় আসে?’
‘দেখুন এত কিছু বলতে পারব না।’
‘ওকে ফাইন।তো তোমার ফোনে পিকচার নেই এইজন্য আমি আনরোমান্টিক।পিকচার তোমার ফোনে নেই হিসাব অনুযায়ী তুমি আনরোমান্টিক।তোমার সাথে যার বিয়ে হয়েছে তুমি কখনো সেই ভাবে আগ্রহ প্রকাশ করোনি পিকচার তুলতে।তোমার মাঝে সেইসব কোনো ফিলিংস আসেনি তাই পিকচার তোলোনি।আসবেই বা কী করে চাঁদের পাশে কালা মানিক কি মানায়!আমার ফোনে তো তোমার অসংখ্য পিকচার আছে।দেখতে চাও?’
বলেই উনি বিয়ের প্রথম দিন থেকে এ পর্যন্ত অসংখ্য পিকচার দেখালেন।ওহ মাই গড! এত এত ছবি কবে কখন তুললেন!আমার তো মনে হয় উনি কখনো তাকাননি আমার দিকে।কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে উনি চব্বিশ ঘন্টা আমাকেই দেখেছেন।আমার খাওয়ার সময়ের ছবি,ঘুমন্ত ছবি,খিলখিল করে হাসছি সেই ছবি,রাগি মুডে তাকিয়েছি সেই ছবি,শাড়ি,জিন্স, প্লাজু, সেদিন বৃষ্টিতে ভেজা পিকচার।সব কেমন জীবন্ত লাগছে দেখতে।লোকটা ভালো ফটোগ্রাফারও বটে!সারাজীবন ভং চং দিয়ে কত সেল্ফি তুললাম।অথচ এমন সুন্দর আমাকে কখনো দেখায়নি।আমি চুপচুপ দেখে যাচ্ছি।মানুষটা আড়ালে গোপনে আমাকে এইভাবে দেখেন।আবার ও মনের মাঝে প্রেম শিহরণ বয়ে গেল।উনি ফোন অফ করে বিছানায় ফেলে দিয়ে বললেন, ‘দেখি বাকি গিফট গুলা খুলে দেখি।’
বলেই সব প্যাকেট গুলা খুলতে শুরু করলেন।
বড় দুইটা প্যাকেট থেকে বেরিয়ে এলো,
বদনা, বালতি,মগ, ঝা**ড়ু, আরও কিছু হাবিজাবি জিনিস। তার মাঝে ইয়া বড় একটা চিঠি লেখা।
‘তোর বর যে এমন আনরোমান্টিক হবে ভাবতেই পারিনি।আমরা ভাবতাম তোর ক্রাশ রোশান স্যারের সাথে বিয়ে হলে তোর কী হবে! কারণ স্যার তো গম্ভীর মানুষ;উনার দ্বারা প্রেম ভালবাসা রোমান্স এসব কিছুই হবেনা।এখন তো দেখছি তোর ক্রাশ আমাদের রোশান স্যার মনে হয় এর থেকে বেশি রোমান্টিক। বদনা টা দিস আর বলিস তার স্পেশাল শালামহল গিফট করেছে।আমাদের দেওয়া মেডিসিন টা খেয়ে তোকে স্পেশাল চুমু দিতে বলিস।ওটা খেতে হবে নাকি কী করতে হবে এটাও যদি না বোঝে তাহলে আমাদের চ্যাটিং প্যানেলে এড কইরা দেস ওপেনলি বুঝাইয়া দেব।তাও যদি না বোঝে বুঝতে হবে ওই শা**লা**র অন্য সমস্যা আছে।তার চিকিৎসার প্রয়োজন।তোর বংশের বাতি জ্বালানোর জন্য এটা জরুরি।

উনি চিঠিটা পড়ে পুনঃরায় এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।ওরা তো আর জানেনা আমার জামাই কেডা।জানলে ভুলেও এসব লিখত না।আজ একই দিনে এতকিছু হওয়ার ছিল আমার সাথে।হাই আল্লাহ!বাঁচাও আমায়!এখন কী হবে আমার!ওরা না হয় মজা করেছে কিন্তু এই ভদ্রলোক তো গম্ভীর মানুষ উনি কি মজা টজা বুঝবেন!কী অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে!এখনি গি**লে ফেলবেন মনে হচ্ছে আমাকে।আমাকে আজ রাতের মতো এ-ঘর ছেড়ে গা**য়ে**ব হতে হবে।উনার ওই দৃষ্টির সামনে ভস্ম হয়ে যেতে হবে না-হলে।আমি আস্তে করে উঠে দাঁড়িয়ে পেছনের দিকে পা বাড়াচ্ছি।আমাকে পেছনে সরতে দেখে উনি ও এক দু’পা এগিয়ে আমার কাছাকাছে এগোচ্ছেন।উনার ভাব সাব মোটেও ভালো নয়।এখন যদি এই বন্ধু জাতিকে পেতাম কু* চি কু* চি করে ফেলতাম।উনি ক্রমশ এগোচ্ছেন আমার দিকে উনার এগোনতে বুকের মাঝে ধুকপুক আওয়াজ বেড়েই চলেছে আমার।কেমন দুড়ুম দুড়ুম শব্দ হচ্ছে।হৃৎস্পন্দনের গতি বেড়েই চলেছে।পেছনে যেতে যেতে দরজায় গিয়ে ঠেকে গেলাম।আর সাথে সাথে কেঁপেও উঠলাম।উনিও আমার কাছাকাছি চলে এসছেন।একদম কাছাকাছি মিশে দাঁড়ালেন আমার সাথে।আমার পায়ের সাথে উনার পা মিশে গিয়েছে।দরজা ফাঁকা করে বাইরে বের হব, পেছন দিয়ে দরজায় হাত দিতেই উনি আমার হাত চেপে ধরলেন। আবারও কাঁপে উঠলাম ।ওনার ওই বড়ো হাতের মুঠোয় আমার ছোট্ট হাতটা পুরোপুরি দখলে চলে গেল উনার।ভয়ে বুকের মাঝে থরথর করে কাঁপছে।হঠাৎ বলে উঠলেন,
‘কোথায় পালাচ্ছ?দূরে থাকলে কাছে টানার চেষ্টা করো।কাছে আসলেই পালানোর চেষ্টা করো।তোমার পালানোর দিন শেষ। ‘
কী সাংঘাতিক কন্ঠে কথাগুলো বললেন!হৃদয়ের মাঝে কী যে এক শিহরণ বয়ে গেল টের ও পেলাম না!কী ছিল ওই কথার মাঝে বুঝতেও পারলাম না।উনি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকেই অন্য হাতে দরজায় সিটকিনি লাগিয়ে দিলেন।এবার আরো বেশি ধুক করে উঠল বুক, সিটকিনির শব্দে লাফিয়ে উঠলাম খানিক টা।উনি দরজায় হাত ঠেকিয়ে ভ্রু উঁচিয়ে ঝুঁকে দাঁড়ালেন আমার দিকে।ভয় আর জড়তা দুটোই আমার মধ্য বিরাজমান।উনার আর আমার মধ্য একটুও দূরত্ব নেই।কেবলই মিশে আছেন আমার সাথে।কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে মুখে পড়ে থাকা এক গোছা চুল কানের নিচে গুজে দিলেন।আরও একটু ঝুঁকে ডান গাল দিয়ে আমার বাম গালে স্পর্শ করে আবার সোজা হলেন।আমার সমস্ত শরীর অবশ হয়ে এসছে।উনার হঠাৎ এমন আচরণ আমাকে অন্য জগৎ-এ হারিয়ে ফেলেছে।কিছুই বলতে পারছি না শুধুই তাকিয়ে আছি উনার দিকে। উনি এবার আঙুল দিয়ে বাম গালে স্লাইড করে বললেন,
‘আমি আনরোমান্টিক?’কি নেশাভরা কন্ঠে বললেন।মাতাল করা কিছু আছে এই কন্ঠে।আবার ও হৃদয় আহত হলো, আরেক ধাপ এগিয়ে গেল উনার প্রতি উইকনেস।এই মানুষটার কন্ঠেও যাদু।এত যাদু সামান্য একটা কথাতেই!আমি হারিয়ে গেলাম কোথায়!উনার কথায় কী বলব কিছুই বুঝতে পারছি না!
উনি আবার প্রশ্ন করলেন, ‘ আমাকে এতটাই আনরোমান্টিক লাগে?দূর্ভাগ্যক্রমে তুমি আমার কলেজের স্টুডেন্ট না-হলে এতদিনে বুঝে যেতে কেমন আনরোমান্টিক।তবে আজ তোমাকে এটা না বোঝালেই নয়।স্কুল আর কলেজে জব করলেই তাদের আনরোমান্টিক ভাবার কারণ নেই।রোমান্টিক ছেলেদের ও দূর্ভাগ্যক্রমে স্কুল কলেজে জব হয়ে যায়।’
‘কী কী বোঝাতে চাইছে?’
উনি উপর দিকে তাকিয়ে লাইট অফ করে দিলেন।সাথে সাথে রুম নিকশ কালো অন্ধকারে ছেঁয়ে গেল।ঘুটঘুটে অন্ধকারে ভ* য় টা আরও প্রবল হলো।উনি কী করতে চাইছেন!হঠাৎ শরীর কেমন শিরশির করে উঠল।উনার ওষ্ঠের স্পর্শ কানে লাগল।নিমিষেই কেমন ঠান্ডা অনুভূত হলো সমস্ত শরীরে।সমস্ত লোমকূপ দাঁড়িয়ে গেল। ফিসফিস করে বললেন,
‘পুরুষ মানুষ এমনি প্রচুর রোমান্টিক হয় তার প্রেয়সীর কাছে।তাকে রোমান্টিক হতে এত বাধ্য করতে নেই।পরে সামলানো মুশকিল হয়ে যাবে।পারবে সামলাতে?’
‘কী সামলাব?’
‘এই-যে আমি প্রতিনিয়ত নিজেকে কন্ট্রোল রাখার চেষ্টা করি আর তুমি আমাকে খোঁচাতে থাকো।এর পরিণতি কী জানো?’
‘না আমি কিছুই জানিনা।আমার ভ**য় করছে লাইট অন করুন।’
‘কীসের ভ**য় আমি থাকতে?নাকি আমাকেই ভ**য় পাচ্ছ?’
‘না তা নয়।’
হাত দিয়ে হাতড়ে উনার বুকে হাত রাখলাম।ভ**য়ে গেঞ্জি খামচে ধরলাম।
উনি আবার প্রশ্ন করলেন,
‘তাহলে কীসের ভ**য়?’কিছু বলতে যাব তখন-ই কোমরে উনার হাতের স্পর্শ লাগল।তড়িৎ বেগে শিউরে উঠলাম।তার চেয়ে বেশি শিউরে উঠলাম গালে উনার ওষ্ঠ ডুবিয়ে দেওয়াতে।ভ**য় কেটে গিয়ে কেমন অদ্ভুত এক অনুভূতি হলো যা ভালো লাগার,ভালোবাসার।কোথায় যেন একটা হারিয়ে যাচ্ছি,ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কোথাও।কেমন লজ্জাও অনুভব করছি!ভীষণ লজ্জা!ভাগ্যিস উনার মুখে দেখা যাচ্ছেনা।তাহলে লজ্জায় হার্টফেল করতাম।
এরই মাঝে ডিম লাইট অন করে দিলেন।ডিম লাইটের মিহি আলো চোখে পড়তেই দেখি আমার মুখের সামনে উনি।একবার তাকিয়েই চোখ সরিয়ে নিলাম আমি।উনার চোখে কোনো থমথমে ভাব নেই আছে এক শীতল চাহনি।
আস্তে করে বললেন, ‘ লজ্জা পাবে বলেই লাইট অফ করে রেখেছিলাম।আরিয়ান ঠিক -ই বলেছিল মেয়েটা চঞ্চল;প্রেমে পড়ার জন্য হাজার টা কারণ আছে!’

আরিয়ানের নাম শুনেই বুকের মাঝে ধুক করে উঠল।উনি আরিয়ান ভাই-এর পরিচিত।
চলবে,,,?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here