একটি নির্জন প্রহর চাই পর্ব -৩৮

#একটি_নির্জন_প্রহর_চাই
৩৮
#WriterঃMousumi_Akter.
মাথার উপর উত্তপ্ত সূর্য,ঝলমলে আলো আর তাপ একই সাথে ছড়াচ্ছে ধরণীতে।ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।বাতাস বন্ধ হয়ে আছে,গাছের একটা পাতাও নড়ছে না।অটোতে যেন আরও দম বন্ধ লাগছে। চারিদিকে মানুষ আর গাড়ির কালো ধোঁয়ায় আরও বেশি গরম লাগছে।কেমন ভ্যাপসা গরম।কিছুক্ষণের মাঝেই চোখ-মুখ ঘেমে লালচে হয়ে গেল।জামার পিছন দিকে ঘামে ভিজে পিঠের সাথে লেপ্টে গিয়েছে।ওড়নার আঁচল দিয়ে মুখে বাতাস দেওয়ার চেষ্টা করছি।শহরে শীত নামার পূর্বে বুঝি গরম তার ভ/ য়/ং/ক /র রূপ দেখিয়ে যায়!অটোতে আমি একাই ছিলাম। কিছুক্ষণের মাঝে অটো-তে একজন মধ্যবয়স্ক মানুষ উঠল।লোকটার চুল অর্ধেক পেঁকে গিয়েছে। লোকটা উঠেই কেমন যেন আমার শরীর ঘেঁষে বসল।হয়ত খেয়াল করেনি,বেখেয়ালি ভাবে লেগে গিয়েছে।কিন্তু সাথে সাথে আমার শরীরে কেমন অস্বস্তি অনুভূত হলো।তড়িৎ গতিতে সরে বসলাম।পৃথিবীর যে কারো স্পর্শ বড্ড অসহ্যকর আমার জন্য।একমাত্র রোশান স্যার ছাড়া আমার শরীরে অন্য কারো স্পর্শ কত ভ/য়া/ন/ক ভাবে নিষিদ্ধ সেটা ওনাকে ভালো না বাসলে বুঝতাম কি-না জানি না।আমার জীবনের সব কিছুর প্রতি ওনার অধিকার ছাড়া আর কারো অধিকার নেই।হঠাৎ কেমন অস্বস্তি অনুভূত হলো।মনে হচ্ছে পাব্লিক কোনো গাড়িতে আর কখনো উঠব না।এরই মাঝে লোকটা আবারও আমার সাথে ঘেঁষে বসল।ব্যাপারটা কাকতালীয় ভাবে ঘটছে কি-না বুঝতে পারছি না।আমি লোকটার দিকে তাকাতেই দেখলাম সে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।আবারও সরে বসলাম।একদম অটোর সাথে ঘেঁষে কোনরকম বসলাম।পুনঃরায় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলো।বিষয়টা এবার আমার কাছে সন্দেহজনক মনে হচ্ছে।বুঝার চেষ্টা করছি কাহিনি কী!এরই মাঝে লোকটা আমার উরুতে হাত রাখল।উরুতে আঙুল চেপে চেপে ধরছে।এদিক-সেদিক তাকিয়ে আস্তে করে বলল, ”উত্তেজনা হচ্ছে।”
মুহূর্তের মাঝে ক্রোধান্বিত চোখে লোকটার দিকে তাকালাম।সাথে সাথে লোকটা হাত সরিয়ে অন্যদিকে তাকাল।আমার কাছে মনে হলো কেউ আমার নারী সত্ত্বায় প্রবল ভাবে আঘাত করেছে।সমস্ত র // ক্ত বিন্দু যেন টগবগ করে উঠল।ভীষণ অপমানবোধ করলাম।কেন একজন পুরুষ রাস্তায় একা পেয়ে একটা মেয়েকে দেখে খারাপ কথা বলবে!রা/গে চোখ-মুখ ঝালের মতো জ্বলছে।সাথে সাথে পায়ের স্যান্ডেল খুলে লোকটার দিকে উঁচু করে বললাম,
“জু*তা চিনিস জু*তা?”জু*তা দিয়ে মুখ সোজা করে দিব!এই ভাই অটো থামান!অটোওয়ালা অটো থামিয়ে বলল,
“কী হয়েছে আপা?”
আমি অটো থেকে তড়িৎ গতিতে নেমে বললাম,
“এই লুচ্চা বেটা আমাকে হ্যারাস করছে।”
অটোওয়ালা অটো থেকে নেমে বলল, “কী ব্যাপার চাচা?বদমায়েশী করেন ক্যান?নামেন গাড়ি থেকে!’
লোকটা নেমে থতমত হয়ে বলল, “মিথ্যা কথা,সব মিথ্যা!”
আমি আরও রে*গে গিয়ে লোকটার মুখে স্যান্ডেল দিয়ে স্বজোরে বাড়ি মেরে দাঁত কিড়মিড় করে বললাম,”কী বললি? আমি মিথ্যা বলছি?জু*তা দিয়ে তোর মুখ আজ সোজা করে ফেলব!চিনিস আমারে?এমন শিক্ষা দিব জীবনের মতো আর উত্তেজনা আসবে না!তোর অন্ডকোষ আজ আস্ত রাখব না!”
নিজে কেমন একটা অন্যজগতে চলে গেলাম।কন্ট্রোল এর বাইরে চলে গেলাম।
রা**গে থর থর করে কাঁপছি।অটোওয়ালা আমার রোষ পূর্ন চাহনি দেখে ভ**য় পেয়ে গেল।অটোওয়ালা আমাকে বলল,”আপা শান্ত হন;এরে আমি দেখছি।”
লোকটা বলেই যাচ্ছে আমি কিছু করিনি।
কিন্তু মিথ্যুকের চোখের ভাষা দেখলেই বোঝা যায়।আশ-পাশ থেকে কয়েকজন লোক এসে হাজির হলো।
আমি রাগে কাঁপতে কাঁপতে বললাম,”আমি মিথ্যা বলছি?শোনেন,আমি এম এম কলেজের লেকচারার রোশান সিদ্দিকীর ওয়াইফ।নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন একজন ভদ্রলোকের ওয়াইফ।ওনাকে নিয়ে মিথ্যা বলে লাভ কী?কী জন্য বলব?ওনাকে কী আমি চিনি?”
লোকটা বলল,” আমাকে ফাঁসাতে চাইছ?”
‘কেন? তোকে কী আমি বিয়ে করতে চাই? যে ফাঁসাতে যাব?’
পাশ থেকে কয়েকজন লোক এসে লোকটাকে ধরে মা/র/ধর শুরু করে বলল, “আপা আপনি যান।এরে আমরা পুলিশে দিচ্ছি।”
আমি জায়গা ত্যাগ করলাম।এ রকমের অনেক মানুষ মুখোশ পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে।সুযোগ পেলেই এরা খারাপ কিছু করে।

ঘটনাটির জন্য খুব বিশ্রী লাগছে।জীবনে এমন ঘটনার সম্মুখীন হইনি। সাড়ে বারোটায় তরীর বাসায় পৌঁছালাম।অটো থেকে নেমে মাত্র দু’মিনিটের রাস্তা।রোহানের জন্য বেশ কিছু চিপ্স,আর চকলেট।তরী আর পিহুর জন্য আইসক্রিম আর বার্গার নিলাম।
আমি ঢুকতেই দেখলাম রোহান বাসার সামনে কড়া রোদে দাঁড়িয়ে বল খেলছে একা একা।ঘেমে বাচ্চাটার মুখ লাল হয়ে গিয়েছে।মাথার উপর উত্তপ্ত সূর্যের তাপে ছেলেটার নাজেহাল অবস্থা;অথচ সেদিকে কোনো খেয়ালই দিচ্ছে না।একা একা বলে লা/ থি দিচ্ছে আর ঘরের ওয়ালে লাগলে গোল দিয়েছি বলে উল্লাস করছে।বলটা গড়াতে গড়াতে আমার পায়ের কাছে আসতেই আমি পা দিয়ে বল আটক করে ফেললাম।বলের উপর পা দিয়ে রোহানের দিকে তাকাতেই রোহান ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,”নতুন আম্মা এসেছ?আমার জন্য এসব নিয়ে এসেছ?”
আমি রোহানকে কোলে তুলে নিয়ে বললাম, ”এ কী বাবু!তুমি এই রোদে বল খেলছ কেন?শরীর খারাপ করবে তো বাবা!”
‘এমনি খেলছি।’
রোহান চিপস ধরে টানাটানি করছে আর বলছে ‘আম্মা আমি চিপস খাব;আম্মু কিনে দেয় না আমাকে!’
‘এমন দুষ্টুমি করলে কী আর আম্মু চিপস দেয়?’
‘আমি দুষ্টুমি করি না-তো।’
‘এই যে রোদে খেলছিলে।আম্মুকে বলব?’
‘না।’
‘ওকে আর দুষ্টুমি করবা না কিন্তু।তোমার বড়ো পাপ্পা তোমার জন্য সাইকেল কিনবে বলেছে।যদি দুষ্টুমি করো তাহলে আর দিবে না কিনে।’
‘না,আর করব না দুষ্টমি।’
‘আম্মুর সব কথা শুনবে তো?’
‘শুনব।’
‘প্রমিস করো।’
‘প্রমিস নতুন আম্মা।’
‘প্রমিস মানে বোঝো তো?মানে ওয়াদা করা,কথা দেওয়া।কথা দিয়ে কথা না রাখলে কিন্তু অনেক পা’প দেয় আল্লাহ।ওই যে উপরে আকাশ আছে না?আকাশে চাঁদ মামার উপরে আল্লাহ থাকে।সে কিন্তু কথা না রাখলে খুব শা**স্তি দেয় বুঝেছ বাবা?’
এরই মাঝে তরী এসে বলল,
”ভাবি এসেছেন?এত লেট হলো যে!আমি রেডি হয়ে আবার চেঞ্জ করে ফেলেছি।”
‘ইয়েস বেবি।এসেছি।একটু ঝামেলার জন্য দেরি হলো।’
‘রোহান আম্মার কোল থেকে নামো।আম্মার কষ্ট হয়ে গিয়েছে।’
‘কী বলো এসব তুমি তরী?বাচ্চাকে কোলে নিতে কোনো ক্লান্তি আসে না আমার।’
‘ভাইয়ার ফোন ধরছেন না কেন?আমাকে অনেক বার ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করেছে আপনি পৌঁছিয়েছেন কি-না?ভাইয়া খুব চিন্তা করছে।এক্ষুনি ফোন দেন।’
‘ফোন যেন কে কে দিয়েছে!আমি খেয়াল করিনি।’
এরই মাঝে পিহু এসে বলল,
‘সারাহপু তুমি নাকি খুব ভালো মাংস রান্না করতে পারো?’
‘আমি?কে বলল?’
‘তোমার বন্ধু মৃন্ময়। বলল,’আজ সারাহ এলে ও-কে দিয়ে রান্না করিয়ে দোকানে খাবার নিয়ে আসবি।’
‘মৃন্ময় এই কথা বলেছে?ভাবা যায়।কী অদ্ভুত কথা!আজ এমন রান্না খাওয়াব এই রান্না খেয়ে জীবনে কোনো নারীর হাতের রান্না খেতে চাইবে না।’
‘সারাহ আপু তাহলে আমরা বিকালে যায়; কী বলেন?আপনি মাত্রই এলেন।দুপুর হয়ে গিয়েছে।রান্না করে খেয়ে একটু রেস্ট নিয়ে যাব।তাছাড়া ভাইয়া আজ বাজার করে দিয়ে গিয়েছে।’
‘বাবাহ!কিপ্টায় বাজার করেছে?’
‘করেছে। তবে কাকতালীয় ভাবে তরী আপুর সব প্রিয় সবজির সাথে মিলে গিয়েছে।’
‘মানে কী পিহু বেবি?’
‘মানে আমিও বুঝলাম না।মানে তরী আপু যেসব সবজি-মাছ পছন্দ করে সেসব কিনে দিয়েছে।অথচ ভাই আমার!বোনে সারাজীবন পিছু পিছু ঘুরলেও কিছু কিনে দেয় না।’
তরী আমাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ছিঃ!ছিঃ!এসব কী কথা পিহু?আমার পছন্দের জিনিস কিনে দিয়েছে মানে?আমিতো এসব ভেবেই দেখিনি।দেখলাম সবজি।বাট আমার পছন্দের কি-না এসব তো খেয়ালই করিনি।’
পিহু গুন গুন করে গেয়ে উঠল, ” তুমি কি জানো কেউ আড়ালে বসে।তোমাকে জীবন দিয়ে ভালো সে বাসে।”
তরী বেশ অবাক ভঙ্গিতে বলল, ”আমি কিন্তু কিছুই বুঝতেছি না।আমাকে নিয়ে মজা হচ্ছে!”
আমি মৃদু হেসে বললাম, ”তরী বেবি আমি কিন্তু সবই বুঝেছি।আপাতত তোমাকে কিছুই বুঝতে হবে না।চলো কী রান্না হবে দেখি।”
ঝুড়িতে একগাদা তাজা সবজির মাঝে করলাগুলো কেমন শুকিয়ে গিয়েছে।করলাগুলো হাতে নিয়ে বললাম,
”এ কী করলাগুলা শুকাচ্ছে কেন?”
তরী বলল, ”পিহু তো খায় না।তাই রান্নাও হচ্ছে না।”
‘আই লাভ করলা ভাজি।তরী বেবি তুমি তো জানোই আমি করলা ভাজি দিয়ে ভাত খেতে কত পছন্দ করি।করলার মাঝে বেশি করে পিয়াজ দিয়ে ভাজি কোরো।’
‘আচ্ছা ভাবি।’
এরই মাঝে আবারও ফোন বেজে উঠল তরীর।রোশান স্যারই ফোন দিয়েছেন।তরী ফোন রিসিভ করে আমার কাছে দিয়ে বলল,
”ভাবী ভাইয়ার ফোন।কথা বলুন।”
‘আমি কী তোমাকে বলেছি কথা বলব?’
‘কী হয়েছে ভাবি?রে**গে আছেন?’
‘না।’
‘তাহলে?’
‘কিছু না দাও ফোন।’
ফোন কানে নিয়ে রাগান্বিত কণ্ঠে বললাম, ‘আমাকে ফোন দেওয়া হচ্ছে কেন?’
‘তাহলে আর কাকে ফোন দেব?’
‘জানি না।’
‘রে*গে আছো?’
‘না।’
‘কেন রে*গে নেই কেন?’
‘রা*গ*ব কেন?’
‘রা*গ*বা*না কেন?’
‘রা*গ*ব কী জন্য?’
‘রা*গ-বা না কী জন্য।’

‘ফোন কাটেন এখনি ফোন কাটেন।আমি তো ঝ*গ**ড়া করি।ভালো না তাই ভালো মানুষ খুঁজে সেখানে ফোন দিন।’
‘যাক রা*গে*র কারণ পাওয়া গেল অবশেষে।’
‘আমি তো মজা করেছিলাম, আমার বউ খুব ভালো। ‘
‘আমি আতিনা,ফাতিনা মেয়ে না বুঝলেন?আজ আমি বাড়ি ফিরব না শুনেছেন?আর ফোনও যেন না দেওয়া হয়।’
‘এই না।কান ধরছি আর জীবনে এসব বলব না।’
‘কেন বলবেন না?’
‘এমনি। ‘
‘এমনি কেন বলবেন না।’
‘বলব কেন?’
‘বলবেন না কেন?’
‘উম্মম্মম্মম্মম্মম্মম্মম্মম্মম্মম্মম্মম্মম্মমাহ।আজ রাতে পায় তোমাকে,কেন বলব না,কী বলব না সব বোঝাব।’
হঠাৎ যেন কেমন চমকে গেলাম আমি।সাথে লজ্জাও পেলাম।এইভাবে কেউ লম্বা চুমু দেয়!তাও ফোনে!মানুষটার লজ্জা বলতে কিচ্ছু নেই।আমি এবার আর ফোনে কোনো কথা বলতে পারছি না লজ্জায়।
লজ্জামিশ্রিত কন্ঠে বললাম,
‘অসভ্য লোক।রাখলাম।’
‘খেয়েছ?দুপুর তো হয়ে এসছে।’
‘না খাব এখন।’
‘কী রান্না চলছে?’
‘আমার ফেভারিট সবজি।’
‘আলু?’
‘নো, করলা ভাজি।’
‘বাহ!আর এর প্রভাব পড়ছে আমার মতো নিরীহ পুরুষের উপর।যার ঠোঁটে করলা লেগে থাকে সে কী আর রোমান্স বোঝে!সব এই করলা চুষে নিচ্ছে।’

চলবে?

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here