#একদিন_কাঁদবে_তুমিও
#পর্ব_২১
#Saji_Afroz
আরশান দেরী করলো না। সে ইনতিসার কে ফোন করে এসব জানালো। সাথে বলল, আজরা যেন মানতাশার পরিবারের সাথে কথা বলে এই বিষয়ে।
তার সাথে কথা বলা শেষে আজরা কে ফোন দেয় ইনতিসার। এসব জানিয়ে বলল, সে যেন দুই পরিবারের মধ্যে সাক্ষাতের একটা ব্যবস্থা করে।
আজরা সম্মতি জানিয়ে ফোন রাখলেও চিন্তার ভাজ পড়ে তার কপালে।
এজাজের সাথে মানতাশার বিচ্ছেদ হয়েছে বেশি দিন হয়নি৷ এই মুহুর্তে হুট করে নতুন সম্পর্কে তার আগানোটা কী ঠিক হবে? তাছাড়া এজাজ বিষয়টা কীভাবে নিচ্ছে? সে কী মানতাশা কে ফেরাতে কোনো চেষ্টা করছে না?
অনেক ভেবে আজরা একটা সিদ্ধান্ত নেয়। আর তা হলো এজাজের সাথে কথা বলা। পরবর্তীতে এজাজ যদি মানতাশা কে ফিরে পেতে চায়? ঝামেলা হওয়ার আগেই কথা বলে নেওয়া ভালো। এই ভেবে এজাজ কে ফোন দেয় আজরা৷ তার নাম্বার চিনতে অসুবিধা হলো না এজাজের। একবার রিং হতেই রিসিভ করলো সে। আজরা তাকে সালাম জানিয়ে কেমন আছে জিজ্ঞাসা করতেই বলল,
ওয়াআলাইকুম আসসালাম। আমি আর ভালো! তোমার বান্ধবী থাকতে দিলো কই?
নিশ্চয় জেনেছ সবটা?
-শুনেছি। কিন্তু বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আপনি নিজেকে শক্ত রাখুন।
-তা তো রাখছি।
-মানতাশা সম্পর্কটা শেষ করেছে। টিকিয়ে রাখার জন্য আপনি কিছু করছেন না?
-কী করব বলো? আমাকে ও ভালোবাসেই না। যে সম্পর্কে ভালোবাসা নেই তা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে লাভ কী বলো?
-এখন সে যদি অন্য কাউকে বিয়ে করে নেয়?
-তার জীবন। যা খুশি করুক। আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। তবে হ্যাঁ, ওকে আমি মন থেকে ভালোবেসেছিলাম। তাই অভিশাপ দেব না। মন থেকে চাইবো, ওর আশা যেন পূরণ হয়। তোমার মতো ধনী পরিবারের বউ যেন সে হতে পারে!
এজাজের সাথে কথা বলে আজরা বুঝলো, তাদের সম্পর্কটা ঠিক হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। মানতাশা তো চায় না, সাথে এজাজও নিজের ভাগ্যকে মেনে নিয়েছে।
যদিও আজরার খারাপ লাগছে। কিন্তু সে চাইলেও কিছু করার নেই। এতে মানতাশার মনে হতে পারে সে তার ভালো চায়না!
এজাজের সাথে কথা বলা শেষেই নাবীহার ফোন আসে। আজরা রিসিভ করে তার হালচাল জিজ্ঞাসা করে। কথার এক পর্যায়ে নাবীহা বলল, তোর কণ্ঠস্বর এমন কেন শোনাচ্ছে? সব ঠিক আছে তো?
আজরা বলল, এজাজ ভাই এর সাথে কথা বললাম। তিনি অনেক কষ্ট পেয়েছেন রে।
-স্বাভাবিক। মানতাশার এটা করা একেবারেই উচিত হয়নি।
-ইনতিসারের এক বন্ধু আজ মানতাশা কে দেখে পছন্দ করেছে। সে মানতাশার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দিতে বলেছে৷ ও যেমন চায় ছেলেটা ঠিক তেমন।
-ধনী?
-হ্যাঁ। আমি কী করব বুঝতে পারছি না।
-তোকে প্রস্তাব দিতে বলেছে যখন দিবি। মানলাম সে এজাজ ভাইকে ঠকিয়েছে। কিন্তু এখন কোনো সম্পর্ক তার সাথে তো নেই। তাইনা?
-আমিও এটা ভাবছিলাম। কিন্তু এজাজ ভাই এর জন্য খারাপ লাগা কাজ করছে বলে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না।
-মানতাশা ও আন্টিকে জানা সব।
-ঠিক আছে।
আজরা ফোন দেয় মানতাশা কে৷ সে শুয়ে শুয়ে ইউটিউবে ধনী পরিবারের ব্লগ দেখছিল। আজরার ফোন পেয়ে রিসিভ করে বলল, কীরে? মাত্রই তো তোর বাসা থেকে এলাম। মিস করছিস নাকি?
সে কথার জবাব না দিয়ে আজরা বলল, আমার একটা কথার স্পষ্ট জবাব দে মানতাশা। তুই এজাজ ভাই কে ভালোবাসিস কিনা?
খুব সহজ ভাবেই মানতাশা বলল, বাসি না। দেখ আজরা! এসব নিয়ে জ্ঞান দিয়ে আমার মাথাটা খাস না তুই।
-জ্ঞান দিতে নয়। প্রস্তাব দিতে ফোন করেছি। তাই ক্লিয়ার হয়ে নিলাম।
-কীসের প্রস্তাব?
-আরশানের পরিবার তোর পরিবারের সাথে দেখা করতে চায়।
-কেন?
-আরশানের তোকে পছন্দ হয়েছে তাই।
একথা শুনেও যেন বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে মানতাশার।
সে একলাফে শোয়া থেকে উঠে বসে বলল, সত্যি?
-হু। আন্টিকে ফোনটা দে। আমি কথা বলে দিন তারিখ ঠিক করি।
মানতাশা কী বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। জেগে জেগে দেখা স্বপ্ন এত তাড়াতাড়ি পূরণ হতে চলেছে তার! খুশিতে আত্মহারা হয়ে মা এর কাছে যায় সে। আজরার ফোন তাকে দেয়।
আজরা তাকে সব খুলে বলে। তিনিও বেশ অবাক হোন।
মরিয়ম বেগম জানান, আমার কোনো সমস্যা নেই। তারা কখন আসতে চায় জানালেই হবে।
আজরা ফোন রাখতেই মানতাশা মা কে জড়িয়ে ধরে বলল, দেখেছ তো মা? আমার আশা পূরণ হতে চলেছে!
তাকে নিশ্চুপ দেখে মানতাশা বলল, তুমি কী খুশি হওনি?
তিনি বললেন, একজন কে কষ্ট দিয়ে তোর কপালে সুখ কীভাবে জুটবে ভাবছি!
মানতাশা বিরক্তির সুরে বলল,
মা হয়ে যদি এসব ভাবো তুমি? ধুর….
এখন আয়োজন করো তো। ওরা যেন আমাদের আয়োজনে খুশি হয়ে যায়।
এই বলে রুমে আসে মানতাশা। আরশানের চেহারাটা মনে করে আপনমনে হাসলো সে। ছেলেটাও দেখতেও বেশ সুদর্শন। ভালোই হলো, এজাজের সাথে সম্পর্কের ইতি টেনে। নাহলে এমন একটা ভালো প্রস্তাব কী সে পেত?
.
.
.
একদিন পরেই মালিহা মুমতাজ আরশান কে নিয়ে মানতাশা দের বাড়িতে আসে। সাথে আছে ইনতিসার ও আজরা৷
মানতাশা নিজেকে যতটুক সম্ভব পরিপাটি করে রেখেছে। কেননা সে চায়না, কিছুতেই এই প্রস্তাবটি হাত ছাড়া হোক!
এই বাড়িতে এসে মালিহা মুমতাজের খুব একটা ভালো লাগলো না। সবকিছুই তার কাছে সাধারণ মনে হচ্ছে। আরশানের মুখের দিকে তাকিয়ে তার কেমন লাগছে বোঝার চেষ্টা করলো সে। আরশানের কুচকানো ভ্রু দেখে বুঝতে বাকি রইলো না, সেও খুব একটা খুশি নয়। যেটা স্বাভাবিক! কোথায় তাদের পরিবেশ আর কোথায় এদের! আকাশ-পাতাল তফাত।
মরিয়ম বেগম ও দিদার আলমের সাথে কথা বলছেন মালিহা। ইনতিসার ও আরশান নিজেদের মধ্যে কথা বলতে ব্যস্ত।
খানিকবাদে মানতাশা কে নিয়ে উপস্থিত হয় আজরা৷ মানতাশা কে দেখে আরশান পলকহীনভাবে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। ওর মুখের দিকে তাকালে যেন বাকিসব কিছু ভুলে থাকা সম্ভব!
মানতাশা এসে সালাম জানায় মালিহা কে। তার পাশে বসানো হয় মানতাশা কে। তিনি প্রথমেই জিজ্ঞাসা করলেন, রান্না বান্না জানো তো?
একথা শুনে সকলে অবাক চোখে তাকালেন তার দিকে। বিষয়টা এমন যে, এতবড়ো ঘরের বউ হয়ে এমন প্রশ্ন করছে কেন?
মালিহা হেসে বললেন, আমাদের বাড়িতে বেশ কয়েকজন কাজের লোক থাকার পরেও নিজেদের কাজ নিজেরা করি। রান্না তো আমিই করি। আরশানও বাইরের কারো রান্না খেতে অভ্যস্ত নয়। তাই জিজ্ঞাসা করলাম।
আজরা বলল, এটাই ভালো! আমার শাশুড়ী নিষেধ করার পরেও আমার কাজ আমিই সামলাই। কেন করব না বলেন? নিজেরই তো সংসার। আমার বান্ধবীও করবে। যদিও ও ঘরের কাজ সব পারে না তবে শিখে নেবে। কী বলিস মানতাশা?
“কাজ আর আমি! এমন হলে তো এজাজ কেই বিয়ে করতে পারতাম। যাক, ব্যাপার না! একবার বিয়েটা করে নিই। এরপর এসব কোনো ব্যাপার না। ভাবীকে কে পাত্তা দিচ্ছে! আরশান কে হাতের মুঠোতে রাখলেই চলবে।”
মনে মনে এসব আওড়িয়ে মানতাশা বলল, নিশ্চয়!
মানতাশার সাথে আরও কিছুক্ষণ কথা বলে মালিহা বললেন, আমার মনেহয় আরশান ও মানতাশা কে আলাদা কথা বলতে দেওয়া উচিত। ওরাও একে অপর সম্পর্কে জেনে নিক?
মরিয়ম বেগম থেকে সম্মতি নিয়ে আজরা তাদের নিয়ে ছাদে আসে। দু’জন কে কথা বলতে বলে সে নিচে নেমে যায়।
মানতাশা সম্পর্কে মোটামুটি সবটুকুই আরশান জেনেছে। গত রাতে ভাবী বারবার একটা কথা জিজ্ঞাসা করে নিতে বলেছিল। আর তা হলো, মানতাশার কোনো সম্পর্ক ছিল কিনা। ভাবীর মতে এই যুগের প্রেমের সম্পর্ক বড়োই অশ্লীল হয়ে থাকে। তাই ওমন মেয়ে বিয়ে না করাই উত্তম।
আরশান এই প্রশ্নটি মানতাশা কে করতেই তার মুখে অন্ধকার নেমে আসে। কিন্তু সে আরশান কে কিছু বুঝতে দেয় না। হাসতে হাসতে বলল, না না! এসব আমার দ্বারা কখনো হয়নি। ইচ্ছে ছিল বিয়ের পরেই স্বামীর সাথে সব হবে।
এদিকে মালিহা মরিয়ম বেগম দের এমন একটি কথা বললেন, যা শুনে তারা চিন্তিত হয়ে পড়লেন। তিনি বললেন, আরশান খুবই রোগ চটা একটি ছেলে। সব তার মন মতো হওয়া চায়। যদি না হয় তবে সে চরম মাত্রায় রেগে যায়। তাই এই বিষয়ে আগেই জানিয়ে রাখলাম।
ইনতিসারও তার সাথে সহমত পোষণ করে বলল, বিষয়টা আমিও খেয়াল করেছি। তবে আমার সাথে তো কিছু করেনি। রাগ বেশি মানেই যে সবসময় রাগ দেখায় এমন না।
মালিহা হেসে বললেন, ওই যে তার মন মতো না হলে দেখায়!
এই প্রস্তাবে মোটেও খুশি নন দিদার আলম। তবুও মুখে হাসি নিয়ে বসে রয়েছেন তিনি। এমন বড়ো ঘরে মেয়ে বিয়ে দিয়ে তাদের সাথে খাপ খাওয়াতে পারবেন তো তারা? আর মানতাশা? সেই বা সব সামাল দিতে পারবে তো!
.
.
.
বাসায় এসে মালিহার কাছে আরশান জানতে চাইলো, মানতাশা কে তার কেমন লেগেছে?
জবাবে মালিহা বলল, ভালোই। এখন তুমি যা সিদ্ধান্ত নেবে তাই হবে।
-তুমি কী চাও ভাবী?
-তোমার চাওয়াই আমার চাওয়া!
-তবে বিয়েটা করেই ফেলি! কী বলো?
-মেয়ের পরিবারের সাথে কথা বলব তবে।
আরশান হেসে নিজের রুমের দিকে যায়।
মানতাশাদের ঘরে বসেই মালিহা ঠিক করেছে, এই বিয়েতে সে রাজি হবে। এতে করে তারও যে ফায়দা রয়েছে। উঁচু ঘরের মেয়ে বউ হয়ে আসলে কী তার আয়ত্তে থাকতো সব? এখন মানতাশা কে সহজেই দাবিয়ে রাখতে পারবেন তিনি। শুধুমাত্র এসব ভেবেই বিয়েতে রাজি হয়ে যান মালিহা মুমতাজ!
এই সংসার তার। সংসারের সবকিছু তার হিসাবেই চলবে।
.#একদিন_কাঁদবে_তুমিও
#পর্ব_২২
#Saji_Afroz
-মেয়ে কেমন দেখলে তোমরা?
স্বামী আশফাকুল হোসাইনের প্রশ্নে মালিহা মুমতাজ জবাব দিলেন, দেখতে মিষ্টি।
-কিন্তু আমি আরশানের জন্য অন্য কিছু ভেবেছিলাম। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আমাদের সাথে মানিয়ে নিতে পারবে তো? আমি কী বলতে চাইছি নিশ্চয় বুঝছ? এমন ঘরের মেয়ে যদি এখানে এসে রাজ করবে ভাবে? তার চেয়ে আমাদের মতোই কাউকে পছন্দ করতো আরশান! উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ের ওসব চাহিদা থাকতো না। সহজেই আমাদের কালচারাল বুঝতো।
-ধনীর ঘরের মেয়ে আনলেই যে খাপ খাওয়াতে পারবে এমনটা নয়৷ আসলে আচরণ উচ্চবিত্ত, নিম্নবিত্ত এসবের উপরে নির্ভর করে না। করে শিক্ষার উপরে! তারা শিক্ষিত মানুষ। আশাকরি এডজাস্ট করতে পারবে।
-সেই ভালো! আমার ভাই এর খেয়াল রেখে ওকে খুশিতে রাখলেই হলো। আর আমাদেরও যেন সম্মান করে।
-ওত ভেবো না তো। সব ঠিক হবে।
-তবে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করো?
-হ্যাঁ করব।
মরিয়ম বেগমের সাথে ফোনের মাধ্যমেই মালিহা মুমতাজ তার সিদ্ধান্ত জানালেন। এবং বিয়ের দিন তারিখও ঠিক করলেন।
কাল থেকেই শপিং শুরু করবেন জানালেন তারা। যেহেতু দশ দিন পরেই বিয়ে!
এদিকে মানতাশার খুশি দেখে কে! সে খুশিতে আত্মহারা হয়ে মোবাইলে গান ছেডে সারারুম জুড়ে নাচতে শুরু করে।
মেয়ের এত খুশি দেখেও দিদার আলম খুশি হতে পারছেন না। অজানা এক আতঙ্ক ঘিরে ধরেছে তাকে।
তবুও তিনি নিশ্চুপ ভাবে সব আয়োজন করার জন্য মনস্থির করেছেন। প্রথমেই তিনি বিয়ের কার্ড বানানোর জন্য বেরিয়েছেন। হাতে সময় বেশি নেই!
-মানতাশার আশা তবে পূরণ হতে চলেছে। যাক, আমি অনেক বেশি খুশি হয়েছি তার জন্যে। শুধু এজাজ ভাই এর জন্য খারাপ লাগা কাজ করছে। উনি জানলে নিশ্চয় কষ্ট পাবেন।
নাবীহার কথা শুনে আজরা বলল, সে তো অবশ্যই! উনি তো আর মানতাশার মতো আবেগের বশে ভালোবাসেননি। যাক, এখন এসব বলে লাভ নেই। শুধু মন থেকে চাচ্ছি, উনাকে কষ্ট দেওয়ার শাস্তি যেন মানতাশা না পায়।
-হুম।
মানতাশার বিষয়ে কথা বলা শেষে ফোন রাখে নাবীহা। তার ছোটো ভাই এসে বলল, আপু তুমি কী চাকরি টা পাওনি?
যেখানে ইন্টারভিউ দিয়েছিল সেখান থেকে নাবীহা কে ডাকা হয়নি। সে হতাশ হয়ে বলল, নাহ!
জহির মন খারাপ করে বলল, তবে কী আমি ভালো কোনো কলেজে পড়তে পারব না?
জহির নিঃসন্দেহে ছাত্র ভালো। ভালো কলেজে পড়ার ইচ্ছে তার। সাইন্স নিয়ে পড়াশোনা করতে গেলে আরও বেশি খরচা রয়েছে। টিউশনি ছাড়া এত কঠিন পড়া আয়ত্ত্ব করা সম্ভব না।
নাফিসার মতে, জহির কে সাইন্স এ না পড়ানো শ্রেয়। সংসার খরচ সামলাবে নাকি তার পেছনে ব্যয় করবে তারা? কিন্তু নাবীহা তা চায়না। সে চায় ভাইটা অন্তত নিজের আশা পূরণ করতে পারুক।
নাবীহা তাকে শান্তনা দিয়ে বলল, তোদের ফর্ম এপ্লাই করতে আরও কিছুদিন সময় আছে না? এর ভেতরে আমি নিশ্চয় কোনো ব্যবস্থা করে ফেলব। আরেকটু সময় দে ভাই।
জহির কোনো কথা না বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। তার মলীন মুখ নিয়ে বের হওয়াটা নাবীহার মনে ঝড় তুলে দেয়।
জানেনা, ভাই এর আশা সে পূরণ করতে পারবে কিনা!
আজ আরশান ও তার ভাবীর সাথে শপিং এ এসেছে মানতাশা। আজকে শুধু বিয়ের কাপড়ই ঘুরেফিরে কিনবে ঠিক করেছেন মালিহা মুমতাজ। শহরের সবচেয়ে বড়ো শপিংমল এ এসেছে তারা।
মালিহা তার পরিচিত এক দোকানে নিয়ে আসে মানতাশা কে। তাকে কাপড় পছন্দ করতে বলা হয়। কিন্তু এত এত লেহেঙ্গার মাঝেও মানতাশা নিজের জন্য পছন্দ করতে সক্ষম হয় না। তার মতে, এই দোকানের কালেকশন ভালো নয়। আরশান হেসে বলল, দোকানের অভাব নেই! অন্য একটাই ট্রাই করি চলো?
তারা অন্য দোকানে যায়। সেখানেও একই অবস্থা হয়! এভাবে বেশ কয়েকটা দোকান ঘোরার পর মালিহা খানিকটা অবাক হয়েই বললেন, শহরের বেস্ট শপিংমলের বেস্ট দোকানের বেস্ট কালেকশন গুলো দেখানো হচ্ছে তোমাকে। তারপরেও কেন পছন্দ হচ্ছে না বুঝলাম না!
মানতাশা বলল, আমি ইন্ডিয়ার নায়িকা দের যেসব পরতে দেখি ওমন তো পাচ্ছি না ভাবী! বিয়ে একবারই করব। মনের মতো না হলে হয়?
মালিহা হেসে বললেন, যেসব দেখছ সেসব ওগুলার চেয়েও কম নয়! আরেকটা দোকান আছে। এসো৷ ওখানে নিশ্চয় পছন্দ হবে তোমার।
মালিহার সাথে মানতাশা গেলেও সে লেহেঙ্গা দেখতে আগ্রহ প্রকাশ করলো না। তবুও মালিহা নিজেই দেখতে থাকেন। এবং একটি তার খুব বেশি পছন্দও হয়। এটি মানতাশা কে বলতেই সে বলল, এসব হবে না! আমি বরং ডিজাইনার দিয়ে বানাব। এতে খরচ বেশি হলেও আমার মনমতো তো হবে!
মানতাশার ফোন এলে সে একটু দূরে যায়। আরশান তার ভাবী কে বলল, মেয়েদের এই এক শপিং নিয়ে কত বাহানা!
-এটা ইচ্ছাকৃত বাহানা আরশান।
আরশান অবাক হয়ে বলল, মানে?
-সে এখন থেকেই নিজের দাপট প্রতিষ্ঠিত করতে চায়ছে। ডিজাইনার দিয়েই যদি বানাবে তবে আমাকে আনলো কেন? এটা কী এক ধরনের অপমান হলো না! আগে বললে কী আমরা রাজি হতাম না? এভাবে হয়রানির কী প্রয়োজন? তোমারও কাজ আছে। তুমি একজন বিজনেসম্যান। ওর এটা বুঝতে হবে। আমার কিন্তু মানতাশার এই কাজটি মোটেও পছন্দ হয়নি।
মানতাশা এসে বলল, গতকাল এক ফ্রেন্ড কে বলেছিলাম ভালো কোনো ডিজাইনের সন্ধান পেলে জানাতে। সেই ফোন দিয়েছে…
তাকে থামিয়ে আরশান একটু গম্ভীর হয়ে বলল, ভাবী এখন যে লেহেঙ্গা চয়েজ করেছে সেটা তোমাকে মানাবে। আমি চাই তুমি সেটাই পরো।
-কিন্তু…
-কোনো কিন্তু না! হবু বর হিসেবে এতটুকু আমি চাইতেই পারি?
আরশানের গলার স্বর শুনে মানতাশা দ্বিতীয় কোনো কথা বলার সাহস পেল না। আড়চোখে তাকালো সে মালিহা মুমতাজের দিকে। তিনি আরশান কে বললেন, বাদ দাও। ওর যদি…
-বিয়েটা শুধু ওর নয়! আমাদের বউ কে নিশ্চয় আমরা খারাপ লাগুক তা চাইবো না? এটা পরেই বিয়ে করবে ও। আমার ভাবীর পছন্দ সবার থেকে বেস্ট!
মালিহা মুমতাজ প্রশান্তির হাসি হাসলেন। এদিকে মানতাশা নিশ্চুপ ভাবে তাকিয়ে রয়েছে আরশানের দিকে। নিজের বিয়েতেই সে পছন্দের লেহেঙ্গা পরতে পারবে না, শুধুমাত্র মালিহা চান না বলে?
লেহেঙ্গা নিয়ে বাসায় ফিরে আসে মানতাশা। মরিয়ম বেগম লেহেঙ্গাটি দেখে বেশ প্রশংসা করলেন। দাম শুনে অনেক বেশি অবাক হয়ে তিনি বললেন, কী বলছিস! লাখ টাকার লেহেঙ্গা এটা? অবশ্য দেখেই বোঝা যাচ্ছে এর দাম এমনি হবে।
মানতাশার গম্ভীরমুখ দেখে তিনি কিছু জিজ্ঞাসা করতে যাবেন, ঠিক তখনি হাসনার আগমন ঘটে। সে লেহেঙ্গাটির দিকে হিংসাত্মক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
মরিয়ম বেগম তাদের জন্য নাস্তা আনতে গেলে হাসনা বলল, তোর কথা ছিল ইনতিসার কে পটানো। তা না করে বিয়ে করে নিচ্ছিস অন্য কাউকে?
-তাকে পটালে কী তোরা আমাকে লাখ টাকা দিতি?
এমন প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত হাসনা ছিল না। মানতাশা এমনিতেই রেগে আছে হাসনার কথা শুনে আরও বেশি রাগ হয় তার। সে আরও বলল, পাগল নাকি! আমার বিয়ে শুনেও এসব বলছিস তুই?
-তার মানে চ্যালেঞ্জ এ হেরে গেছিস তুই?
-হু। এইবার তুই গিয়ে পটা। খুশি?
মানতাশার কথাবার্তা সুবিধার মনে না হওয়াই হাসনা বেরিয়ে যায়। মানতাশা ভাবে আরশানের কথা। প্রথম দিনেই তার ইচ্ছে কে গুরুত্ব দিলো না সে। কাজটা মোটেও ঠিক করেনি আরশান।
এদিকে মানতাশার জন্য খুশি হলেও নাবীহার জন্য চিন্তিত আজরা। তার পরিবারের অবস্থা সম্পর্কে অজানা নয় তার। যদিও সাজির রয়েছে ওদিকটা সামলানোর জন্য। কিন্তু সেও নতুন জব করছে। শুনেছে তার নিজেরই অনেক দেনা রয়েছে। সেসব পরিশোধ না করে পুরোপুরি ভাবে নাবীহাদের সাহায্য সে কীভাবে করবে?
ইনতিসার কে বলে কী নাবীহার জন্য একটা চাকরির ব্যবস্থা করবে আজরা?
.
চলবে
প্রকাশিত হয়ে গেল #বান্ধবী।
একদিনের অফারে মাত্র ১৮০টাকায় পেয়ে যাবেন আমার পরবর্তী বই #বান্ধবী!
.
চলবে