#একদিন_কাঁদবে_তুমিও
#পর্ব_২৭
#Saji_Afroz
-তাসফিয়াকে কেমন দেখলি?
বাসায় আসতেই মা এর করা প্রশ্ন শুনে বিরক্ত হয় সাজির। সে বলল, ভালোই।
-তবে কী কথা আগাতে পারি আমরা?
কোনো কিছু না ভেবেই সাজির উত্তর দিলো, নাহ।
সাজেদা বেগম ভ্রু কুচকে বললেন, না মানে?
-না মানে না! জেদ করেছ বলে গিয়েছি। ওতটুকুতেই পুরোটা বিষয় শেষ চাই।
এই বলে নিজের রুমে চলে আসে সাজির৷ ও বাড়ি থেকে আসার পথে অনেকটা ভেবেছে সে। হতে পারে নাবীহার মা বাবার পরিচয় সে জানেনা৷ কিন্তু তার মামার কাছেই তো বড়ো হয়েছে সে। তাছাড়া নাবীহাকে ভালোবাসে সাজির৷ বিয়ে অবধি ঠিক হয়ে আছে তাদের। এই মুহুর্তে এসে এমন কিছু সে করবে না, যাতে নাবীহা কষ্ট পায়! বিয়েটা নাবীহা কেই করবে সে।
.
.
.
দেখতে দেখতে মানতাশার হলুদের দিন চলে এল। আয়োজনে কোনো কমতি রাখেননি মানতাশার বাবা। বাড়িতেই হলুদের আয়োজন করার কথা থাকলেও হলো না। আরশানের ভাবী চায় কোনো বড়ো কমিউনিটি সেন্টারে হলুদের আয়োজন হবে। কেননা তারাও এই আয়োজনে সামিল হতে চায়।
তাদের কথানুযায়ী কমিউনিটি সেন্টারে গায়ে হলুদের আয়োজন করা হয়।
একে একে সবাই আসলেও নাবীহা ও আজরা এখনো আসেনি। মানতাশা তাদের বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েছে। আজরা রিসিভ করলেও নাবীহা করেনি। তাই মানতাশা আজরাকে ওর খবর নিতে বলল।
এদিকে নাবীহার বাড়ির সামনে কার এ বসে রয়েছে ইনতিসার। আজরা তাকে গায়ে হলুদে নেওয়ার জন্যে এসেছে। কিন্তু প্রায় ত্রিশ মিনিট হবে ইনতিসার এখানে বসে রয়েছে। এখনো কারও দেখা নেই। তবে কী অনুষ্ঠানে যেতে রাজি হয়নি নাবীহা? স্বাভাবিক! তার মনের অবস্থা বেশ বুঝতে পারছে ইনতিসার।
-তুই না গেলে মানতাশা কতটা রাগ করবে ভেবে দেখেছিস?
আজরার করা প্রশ্নে নাবীহা বলল, আমার মনের অবস্থাটা তোরা বুঝবি না?
-বুঝছি বলেই তো নিতে এসেছি তোকে। চল না প্লিজ!
রুমের মাঝে আসলেন নায়লা খাতুন। আজরা এসেছে অনেকক্ষণ হলো। নিশ্চয় নাবীহাকে রাজি করাতে পারছে না। পরপর প্রিয় দু’জন কে হারিয়েছেন নায়লা খাতুন। আর কাউকে হারাতে চান না তিনি। নাবীহা এভাবে মনমরা হয়ে বসে থাকলে মানসিক অশান্তিতে ভুগবে। যেটা তার জন্যে ক্ষতিকর।
নায়লা খাতুনকে দেখে আজরা বলল, আন্টি দেখুন না? ও কিছুতেই যেতে রাজি হয় না।
নায়লা খাতুন মেয়ের উদ্দেশ্যে বললেন, নাফিসা যেমন তোর বোন ছিল মানতাশাও ঠিক তেমনি তাইনা? একজনের জন্য অন্যজনের মন খারাপ করাবি? যা মা। জহিরকেও নিয়ে যা৷ ওর ও মনটা ভালো হবে।
মা এর কথা শুনে যেতে রাজি হয় নাবীহা। আসলেই তো! মানতাশাও তার কাছে প্রিয়জন৷ তার মন কীভাবে খারাপ হতে দেয়। এই ভেবে উঠে দাঁড়ায় সে।
আজরা বলল, আয়। আমি তোকে তৈরী হতে সাহায্য করি।
নাবীহা তৈরী হলে তাকে ও জহিরকে নিয়ে বেরুলো আজরা৷
নাবীহা হলুদ রঙের সুতি একটা শাড়ি পরেছে। কোনো সাজসজ্জা নেই তার। চুলে খোপা করেছে।
এভাবেই বের হয়ে আসে। ইনতিসারের সাথে তাকে কথা বলিয়ে দিলো আজরা। এরপর তারা গাড়ির ভেতরে এসে বসলো।
নাবীহাকে দেখে মনে হচ্ছে, তার খোপায় ফুল থাকলে ভালো হত। ফুল ছাড়া খোপার সৌন্দর্য্য ফুটে উঠছে না। কিন্তু একথা সে বলল না। কারণ তার পাশেই বসে রয়েছে আজরা।
পথিমধ্যে একটি ফুলের দোকান চোখে পড়লে গাড়ি থামালো সে। আজরা বলল, গাড়ি থামালে যে?
-ফুলের দোকান দেখে।
-ফুল কেন?
-তোমার বেণি তে ফুল দিলে ভালো দেখাবে।
আজরা হেসে গাড়ি থেকে নামে। এরপর এগিয়ে যায় ফুলের দোকানের দিকে। ইনতিসারও গাড়ি থেকে নামতে নামতে বলল, তোমার খোপাতেও ফুল থাকলে মন্দ হত না।
এই বলে ইনতিসার নেমে পড়ে। নাবীহা তার কথাতে একটু চমকালেও পরক্ষণে সেও গাড়ি থেকে নামে। তাকে দোকানে দেখে আজরা বলল, তোকে ডাকতে যাচ্ছিলাম। ফুল নিবি?
হ্যাঁ সূচকভাবে মাথাটা নাড়লো নাবীহা। আজরা গোলাপ ফুল দেখতে চাইলে ইনতিসার বলল, বেলী ফুল ভালো লাগবে।
আজরা হেসে বলল, আসলেই।
বেলী ফুল নিয়ে নাবীহার খোপাতে গুজে দেয় আজরা। এরপর বলল, এখন একদম পারফেক্ট।
আড়চোখে নাবীহার দিকে তাকিয়ে ইনতিসার আপনমনে বলল, আসলেই পারফেক্ট।
অনুষ্ঠানে চলে আসে তারা। মানতাশা বেশ খুশি হয়। কেক কাটার পর্ব শুরু করা হয়। এক পর্যায়ে মানতাশার হবু বর আরশান আসে তার ভাই ভাবী ও আত্মীয় সজনদের নিয়ে।
কেক খাওয়া ও হলুদ ছোঁয়ানোর পর্ব শেষ হলে গানের তালে অনেকেই নাচতে থাকে। মানতাশাও সকলের সাথে যুক্ত হয়। যা দেখে মালিহা আরশানের উদ্দেশ্যে বলল, মেয়ের কমনসেন্স বলতে কিছু নেই? শশুরবাড়ির লোকজন দের সামনে কেউ এভাবে নাচে?
যা শুনে ক্ষেপে যায় আরশান। মানতাশার উপরে প্রচন্ড রাগ হয় তার। রাগে তার দিকে এগিয়ে যায়। এরপর তার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে থাকে তাকে। তার এমন কাণ্ডে অবাক হয় মানতাশা। তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আরশান?
সবাই মজা করলেও একপাশে বসে রয়েছে নাবীহা। সাজিরকে দাওয়াত দিয়েছিল মানতাশা৷ এখানে আসার আগে তাকে ফোন করে নাবীহা। আসতে বলেছিল সাজিরকে। কিন্তু সে হ্যাঁ, না কিছুই বলেনি। সময় পেলে আসবে জানিয়েছে। এখনো বেশ কয়েকবার তাকে ফোন দেয় নাবীহা। কিন্তু রিসিভ করে না সাজির।
ইদানীং সাজিরের মাঝে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করছে সে। মনমরা মনেহয় তাকে। আর তার ফুফুও আসেননি তাদের বাড়িতে। একমাত্র আপন ছিল এই ফুফুর পরিবার। তারাও হঠাৎ এমন নীরব ভূমিকা পালন করছে কেন? এসব নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে নাবীহা।
স্টেজের পেছনে মানতাশা কে নিয়ে আসে আরশান। মানতাশা মুখে শব্দ করে বলে উঠলো, হাত ছাড়ুন। লাগছে আমার!
আরশান বলল, সামান্য হাত ধরেছি তাতেই লাগছে। হাত তুললে কতটা লাগবে ভেবে দেখেছ?
মানতাশা অবাক হয়ে বলল, মানে?
-আমাদের বংশের মেয়ে বউরা এভাবে শশুরবাড়ির সামনে বেহায়াপনা করে না।
-আমি কী করেছি?
-সবার সামনে নেচে নেচে বেহায়াপনা করোনি তুমি?
-আজকের দিনটা আমার! মজা করাটাও কী দোষের?
-শশুরবাড়ির সামনে করাটা দোষের।
-শশুর, শাশুড়ী কেউ তো নেই। মা বাবা থাকলে…
তাকে থামিয়ে আরশান বলল, ভাবী আমার মা এর চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। কথাটি মাথায় ঢুকিয়ে নাও। ও বাড়িতে থাকতে হলে তার কথা মতোই চলতে হবে। আর যদি না পারো এখুনি জানিয়ে দাও৷ সময় আছে এখনো। দেরী হয়নি। চাইলে শেষ করতে পারো সব।
এই বলে আরশান চলে যায়। মানতাশা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ছলছল নয়নে। অন্তত আজকের দিনে এমন কিছু আশা করেনি সে!
.#একদিন_কাঁদবে_তুমিও
#পর্ব_২৮
#Saji_Afroz
কমিউনিটির সেন্টারের সাজ ঘরে চুপচাপ বসে রয়েছে মানতাশা। আরশানের আচরণে তার ভীষণ কান্না পেয়েছিল। তাই সবার কাছ থেকে লুকিয়ে এখানে চলে আসে সে। কিছুক্ষণ চোখের পানি ফেলার পর নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টায় লিপ্ত হয়ে পড়ে মানতাশা। হঠাৎ কারো কণ্ঠস্বর শুনে পেছনে ফিরে তাকালো সে। নাবীহাকে দেখে বলল, ওহ তুই!
-তোকে খুঁজতে খুঁজতে এখানে এলাম৷ কী করছিস এইখানে?
-সাজ ঠিক আছে কিনা দেখতে এলাম।
-অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে?
মানতাশা কী বলবে ভেবে পায় না। নাবীহা বলল, কিছু লুকোচ্ছিস? সব ঠিক আছে তো?
জবাবে মানতাশা বলল, আরে হ্যাঁ সবই ঠিক আছে।
এই বলে সে দাঁড়িয়ে পড়ে। নাবীহার হাত ধরে বলল, চল যাওয়া যাক।
নিজের দূর্বলতার কথা কাউকে বলে নিজেকে ছোটো করতে চায়না মানতাশা। পরিস্থিতি মোকাবেলা করার সাহস তার রয়েছে।
আরশানের এমন আচরণের যোগ্য জবাব সেও দেবে। সময় এর অপেক্ষা…
.
.
.
বাসায় যাচ্ছে এজাজ। হঠাৎ তার পথ আটকায় পাড়ার কয়েকজন বন্ধু। তাদের মধ্যে তারেক নামের একজন বলল, শুনলাম মানতাশার নাকি বিয়ে হয়ে যাচ্ছে?
এজাজ শান্তস্বরে বলল, হুম।
শাইয়েদ নামের একজন বলল, বেশ বিত্তবান নাকি তার বর?
-হবে হয়তো।
-মেয়েদের স্বভাব ই এমন। টাকা ওয়ালা পেলে পুরান সম্পর্কটা ছিন্ন করে।
নিশ্চুপ এজাজকে দেখে তারেক বলল, এমনটা হতে দিলি কেন?
-কাউকে জোর করে আঁটকে রাখা যায়?
-অবশ্যই যায়। তোদের পারসোনাল ক্লোজ ছবি ছিল না? ওসব নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করতে পারতি।
-ওমন মেয়ে মানতাশা নয়।
-কেমন মেয়ে বোঝা হয়ে গেছে। নাহলে তোর মতো ছেলেকে ছেড়ে দিতো?
দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে এজাজ বলল, ভাগ্য আমার সহায় হয়নি।
-এখনো তুই ওর দোষ দিচ্ছিস না? আমি হলে বিয়ে কীভাবে করে দেখে নিতাম। সব ছেড়ে দিতাম নেটে।
এইবার খানিকটা বিরক্ত হয়ে এজাজ বলল, বললাম না ওমন মেয়ে ও নয়! আর মানুষ বিয়ের পরেও সম্পর্ক ছেদ করে। সেখানে মাত্র আমাদের প্রেমের সম্পর্ক ছিল! কাউকে জোর করে রাখা যায় না, যদি না সে থাকতে চায়। এতে মনের সুখ মেলে না। অশান্তিই হয় কেবল। থাক না সে তার মতো!
এই বলে এজাজ নিজের বাড়ির দিকে চলে যায়।
শাইয়েদ বলল-
কী পরিমাণ ভালোবাসলে ধোকা খাওয়ার পরেও ছেলেটা মেয়েটির সম্পর্কে কোনো বাজে কথা বলতে পারে না, এটা এজাজকে না দেখলে বুঝতাম না। দেখবি মানতাশা সুখী হবে না। অন্তত এজাজকে কাঁদানোর কারণে হলেও!
.
.
.
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষে যে যার বাসায় চলে যাচ্ছে।
নাবীহাও জহিরকে নিয়ে বের হয়ে গাড়ি দেখতে থাকে। আজরা এসে বলল, এত রাতে গাড়ি কই পাবি?
-আসলেই পাচ্ছি না।
-আমাকে না বলে এখানে এলি কেন?
-তোদের কষ্ট দিতে ইচ্ছে করছিল না।
ইনতিসার এসে বলল, বাসায় নামিয়ে দিচ্ছি আমি। বসুন প্লিজ।
নাবীহাও চুপচাপ উঠে বসে গাড়িতে। আজরা বলল, কালও আমি নিয়ে যাব তোকে। সময় মতো তৈরী হয়ে থাকিস।
কথানুযায়ী বিয়ের দিনও নাবীহা ও জহিরকে গাড়িতে তুলে নেয় আজরা। কমিউনিটি সেন্টারে তারা পোঁছে মেহমানদের আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়ে৷ মানতাশার আত্মীয় স্বজন বেশিরভাগই চেনে তাদের। এক পর্যায়ে মানতাশা চলে আসে পার্লার থেকে। তার ভারী লেহেঙ্গা পরে হাঁটতে অসুবিধা হয়। সাথে সাথেই সেদিকে এগিয়ে যায় নাবীহা ও আজরা। দু’জনে তাকে স্টেজে উঠতে সাহায্য করে। এরপর তিন বান্ধবী ছবি তুলতে থাকে।
এই দৃশ্য দেখে মুচকি হাসে ইনতিসার। আজরা প্রায় নাবীহা ও মানতাশার গল্প শোনায় তাকে। মানতাশার জীবন সুন্দর হতে চলেছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু নাবীহা? আদৌ কী সুখের দেখা মেলবে তার জীবনে?
এই ভেবে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো ইনতিসার। সে চায় নাবীহার মুখেও হাসি থাকুক।
এটা ভাবতেই সাজিরকে চোখে পড়লো তার। তাকে দেখে নাবীহা স্টেজ থেকে নেমে আসে। একগাল হেসে সে বলল, তুমি?
-হু আমি।
-কাল এলে না। ফোনও রিসিভ করোনি আর।
-আজ তো এসেছি।
সাজির নাবীহার হাত ধরে তাতে একটি বেলী ফুলের বালা পরিয়ে দেয়। নাবীহা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে সাজিরের দিকে। সাজির বলল, মানতাশার বিয়ের ড্রেসটা ভারী সুন্দর।
-তাইনা?
-হু। কিন্তু তোমাকে এত টাকার ড্রেস দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই। বেনারসি শাড়ি চলবে?
-দৌঁড়াবে!
-তবে বলে কবে শপিং করতে যাবে?
নাবীহা আরও অবাক হয়ে বলল, মানে?
-মানে বলো কখন বিয়ের শপিং করতে যাবে? বিয়েটা তাড়াতাড়ি সেরে ফেলি। কী বলো?
নাবীহা কী বলবে ভেবে পায় না।
সাজির আবারও জিজ্ঞাসা করলে সে বলল, আমাদের না বিয়ে আরও পরে করার কথা ছিল?
-হুম। কিন্তু আমি তাড়াতাড়ি করতে চাই। এখন তো নাফিসা আপুও নেই। তোমাদের তিন জনের দায়িত্ব কী আমি নিতে পারব না! ভরসা নেই আমার উপর?
-তা নয়। কিন্তু আমি বোঝা হয়ে তোমার কাছে থাকতে চাইনা।
-কী যে বলো না! তুমি তো আমার রাণী।
এই বলে হাসলো সাজির ও নাবীহা।
এদিকে আরশান চলে আসে। স্টেজে উঠে আসে ভাবীর সাথে। মানতাশার কাজিনরা মালা পরাতে আসে আরশানকে। এখানেই ঘটে বিপত্তি। আরশান টাকা দিলে সে টাকা তারা নেয় না। আরও বেশি দাবি করে।
মালিহা হেসে বলল, আরে গেইটেও দিলো তো তোমাদের টাকা। এতটুক নিয়েই খুশি থাকো।
মানতাশার ফুফাতো বোন বলল, না না হবে না! মালার টাকা বেশি দিতে হয়। আরও না দিলে আপুর হাত থেকে মালা পরতে দেব না আমরা।
মালিহা বলল, মালা না পরিয়েই চলে যাব তবে।
-টাকার ভয়ে পালাবেন? তবে কী কিপটে নাম দেব আপনাদের?
এই বল হেসে উঠে সবাই।
মানতাশাও হেসে তাদের টাকা দিতে বলল আরশানকে। সাথে বলল, শালিকাদের উজার করে টাকা দিলেই তো ভালো দুলাভাই হবেন।
মালিহা বলল, নাহলে?
-নাহলে আর কী! কিপটে…
সবাই হাসতে থাকলেও মালিহার মুখে হাসি নেই৷ সে আরশানকে ফিসফিস করে বলল, এখুনি দেখছি তোমার বউ খরচ করা শুরু করেছে!
.
.
.
সাজেদা বেগমের মেজাজ প্রচন্ড খারাপ। তাসফিয়ার বিষয়ে কিছু কথা কানে এসেছে তার। এই মেয়ে নাকি আগেও একটা বিয়ে করেছিল নিজের পছন্দে। পালিয়ে গিয়েছিল সে। সাতদিন পর ফিরে আসে। এরপর ডিভোর্স হয়ে যায়। একথা তেমন কেউ জানে না। তাসফিয়ার আপন কেউই জানিয়েছে সাজেদা বেগমকে। এসব শুনে সে তাসফিয়ার বাবাকে ফোন দেন। তিনিও সব স্বীকার করেন।
সাথে বললেন, মেয়ের ভুল ছিল সেটি। ও নিজেও মানে তা। তাইতো এখন আমাদের সিদ্ধান্তকে মেনে নিচ্ছে।
-কিন্তু ওর যে আগে বিয়ে হয়েছে এটা তো মিথ্যে নয়। ওমন একটা মেয়েকে কেন আমার ছেলের বউ করব!
-প্লিজ এমনটি বলবেন না! আমার সবকিছু আমি সাজিরের নামে করে দেব।
একথা শুনে থেমে যান সাজেদা বেগম।
তাসফিয়ার বাবা বললেন, হ্যাঁ! শুধু একথা সাজিরকেও জানাবেন না। আসলে আমি চাই আমার মেয়েটা ভালো কাউকে নিয়ে সুখে থাকুক। কিন্তু ওর অতীত থাকার কারণে অন্য কোথাও বিয়ে দেওয়ার সাহস পাচ্ছিলাম না। এই যে প্রথম সাজিরের জন্যই প্রস্তাব দিলাম। আপনিও জেনে গেলেন! যাক ভালোই হলো। এখন সব জেনেও যদি আমার মেয়েটাকে পুত্রবধূ করে নেন চিরকৃতজ্ঞ থাকব। বিনিময়ে আমার সমস্ত কিছু সাজিরের নামে লিখে দেব। প্লিজ বিষয়টা ভেবে দেখবেন।
ফোন রেখে আবারও চিন্তিত হয়ে পড়লেন সাজেদা বেগম। এই মুহুর্তে কী করা উচিত তার?
.
চলবে
.
(