#একদিন_বৃষ্টিতে_বিকেলে(পর্ব_২)
#লেখায়_সুমাইয়া_আক্তার_মনি
‘ আপনি জানেন আমার প্রাক্তন ছিল?’
বেশ সুরালো কণ্ঠে বলল রূপা। রাফসান গোসল থেকে বেরিয়েছে কেবল। তাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বলল,
‘ এখন তো নেই!’
‘ আপনায় কে বলেছে? এত জোড়ালো ভাবে না জেনেশুনেই বলছেন।’ নিচের দিকে তাকিয়ে বলল রূপা।
রাফসান খানিকটা সামনে এগিয়ে যায়। বলে,
‘ তা বেশ। বিয়ের বয়স এক সপ্তাহ হোক বা এক যুগ হোক মানুষ চিনতে আমার এক মিনিটও লাগে না।’
বলে থামলো রাফসান। রূপা এখনো নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। রাফসান শব্দ করে হাসে। রূপার মাথায় থুতনি রেখে বলে,
‘ লম্বায় তো এইটুকুখানি! আবার প্রাক্তনও থাকবে?’
‘ একটুখানি লম্বা তালগাছ হয়ে এত হামবড়া ভাব! দেখুন…।’
রূপাকে সম্পূর্ণ কথাটি শেষ করতে না দিয়েই রাফসান বলল,
‘ আশ্চর্য! এভাবে নিচে তাকিয়ে থেকে দেখতে বললে কীভাবে দেখব?’
কথাটিতে রসাত্মকতা, ঠাট্টা জড়িয়ে বলেছিল রাফসান। তারপরে ঠোঁট টিপে হাসছে। রূপা খানিকটা ভড়কে যায়।
এতক্ষণে খেয়াল হল, রাফসান তার নিকটে খুব। সে খানিকটা নড়তে চাইলে বাঁধায় পরে রাফসানের বাহুডোরে।
‘ এসব কিন্তু ভালো হচ্ছে না।’ ছুটতে গিয়ে বলল রূপা।
‘ আমিও তো জানি ভালো হচ্ছে না। ‘ ভাবলেশহীন ভাবে রাফসানের জবাব।
‘ তো! সঙ সেজে আছেন কেন? ছাড়ুন।’
‘ তিন কবুল কেন পড়েছি? ছাড়ার জন্য তো নয়।’
‘ আমি তো বললামই চলে যাব। খামোখা…।’
‘ খামোখা লেইম কথা শোনাবে না। আমি কিন্তু ভীষণ বদরাগী। দাঁতে দাঁত চেপে বেশিক্ষণ থাকতে পারি না।’
এবারেও রূপার কথার মধ্যে দিয়ে রাফসান বলল। রূপা নীরব দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
রাফসান সরে যায়। বেশ দূরত্ব নিয়ে দাঁড়ায়। তবে চোখের দৃষ্টি রূপার মুখপানে।
রূপাও সেখানি স্থির। তবে চোখের এলোমেলো চাহনি ছিল। একে তো রাফসান কেবল গোসল করে বেরিয়েছে। ভেজা শরীর, তাওয়ালে পরা। এরজন্য বেশ লজ্জায় পরে গেল৷ তারমধ্যে রাফসানের কঠোর কথা।
রাফসান বুঝলো রূপার অবস্থা। হাসিও পাচ্ছে আবার রাগও হচ্ছে। বিয়ে হয়েছে, যেভাবেই হোক। তাকে গ্রহণ কেন করবে না?
নিজেকে শান্ত রেখে রাফসান বলল,
‘ সাতদিন হল আমরা একসাথে থাকছি। তুমি দূরত্ব নিয়ে স্কুলে যাও, তাও ঠিক আছে। তোমার স্বাধীনতা তোমার কাছে। আমি কোনো বাঁধা দেবো না, না কখনো সামনে বাঁধা দেবো। আমি আমার মতো, তুমি তোমার মতো। এ পর্যন্ত ঠিক আছে তো?’
‘ হুহ।’
‘ ভাগ্যে যা ছিল তাই হয়েছে, হয়ে গেছে। এখন সেগুলো অস্বীকার করার তো কিছু নেই, তাই না? তারথেকেও বড়ো কথা হল, আমার জন্য তোমায় এই বিপাকে পরতে হয়েছে। আমি তো মাঝপথে ছেড়ে দেবো না। তোমার দাদিকে কথা দিয়েছি। অন্ততপক্ষে কথার খেলাপও তো করবো না!’
বেশ জোড়ালো কণ্ঠে বলল রাফসান।
রূপা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। এখন কি কিছু বলা উচিত? নাকি চুপ থাকবে? ভেবে পায় না রূপা। ইচ্ছে করে রাফসানের মতোই জোড়ালো কণ্ঠে বলতে,
‘ আপনি তো বেশ দুমুখো মানুষ! বাইরে প্রেমিকা রেখে এখন ঘরে বউয়ের আঁচল ধরে ঘোরা!’ তবুও ইচ্ছেকে দমিয়ে রেখে সেখান থেকে নড়লো।
শাওয়ার ছেড়ে মনে মনে আওড়াল,’ যতটুকু শুনেছি তার বাবা-মা বাড়ি উঠানোর আগেই অক্কা পেয়েছে। তাহলে এত ভালোবাসাপূর্ণ নাম কে রেখেছে? নিশ্চয়ই ইনি তার অন্যকারো জন্য রেখেছে। এসবও ভুল মানলাম। কেউ পছন্দমতো কোনো নাম রাখতেই পারে। তাহলে তার ড্রয়ারে যা দেখছিলাম, সেসবে তো কোনো ভুল ছিল না। এখানে থাকবো কেন তাহলে? পরবর্তীতে হাতের খেলনা হতে? একটুও না, কখনোই থাকবো না। বিয়েটা যেভাবে হয়েছে ঠিক সেভাবেই চলে যাব। সে দাদিকে দেওয়া দায়িত্ব পালন করছে আমায় রেখে। আর আমি সেই ভরসায় এখানে থাকব?’
চোখেমুখে পানির ছিটে দিয়ে কিছুটা স্বাভাবিক হল রূপা। অনেক প্রশ্ন, জড়তা তারমধ্যে।
কী থেকে কী হবে বা হতে চলেছে জানা নেই ওর। এতটা ভরসা, বিশ্বাস টিকবে তো? ও কী থাকবে এখানে? নাকি নিজের জীবন আগে থেকেই নিজে গোছাবে? এত এত প্রশ্নের ভিড়ে রূপাকে নিজের কাছে ছন্নছাড়া লাগছে।
এত ভরসা, বিশ্বাস দিয়ে কী হয়? সবাই তো এর মর্যাদা রাখতে পারে না। স্ব চক্ষে কত দেখলো। এরজন্য বিশ্বাসটা আর এত শীঘ্রই হচ্ছে না। তবে রাফসানের জন্য বেশ মায়াও জন্মেছে। দারুণ একজন মানুষ। কত সহজে সবকিছু হ্যান্ডেল করতে পারে, কত দারুণভাবে কথা বলতে পারে। আর বাকি রইলো তার স্বভাব চরিত্র! তাও বেশ লাগে রূপার কাছে। সাতদিন একই ছাদের নিচে আছে কিন্তু যে যার মতো। কোনো অধিকারত্ব খাটাতে আসেনি। কিন্তু অন্যকেউ হলে নিশ্চয়ই ঝাপিয়ে পরতো! কতশত কাহিনীও তো শুনে যাচ্ছে দিন দিন।
_________________
‘শাড়ি পরবে।’ বলল রাফসান।
‘ আচ্ছা।’
‘ পরতে পারো?’
‘ এতটাও অকর্মা নই।’
‘ আনরোমান্টিক একটা।’ বিড়বিড় করে বলল রাফসান।
কথাটি স্পষ্ট হল না রূপার কাছে। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
‘ কিছু বললেন?’
‘ হ্যাঁ, গোসল করে বেরিয়েছো। চুল শুকাবে না?’
রাফসান সাবলীলভাবে বলল। রূপা কিছু বলেও বলতে পারলো না। লোকটার কত চিন্তা! শুধুমাত্র দায়িত্ববোধ থেকে তো এসব হবে না। তাহলে? অন্যকিছু নিশ্চয়ই? ভেবেই নীরবে হাসলো রূপা।
ওর হাসিমুখটা স্পষ্ট রাফসানের কাছে।
****
‘ গাড়িতে যাবে? নাকি রিকশায়?’ রূপাকে উদ্দেশ্য করে বলল রাফসান।
‘ রিকশায় যাই?’
‘ আচ্ছা। ‘
‘কাকা, গাড়িতে যাব না আজ। আপনি বরং একটা রিকশা ডেকে দিন।’ ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে বলল রাফসান।
……..
……
‘ হুক টেনে দেবো?’
‘ শীতের বেলা। সমস্যা নেই রোদে।’ অন্যদিকে তাকিয়ে বলল রূপা।
‘ চিন্তিত? ‘
‘ কই, না তো!’
‘ চিন্তার কারণ নেই, আপনার ইচ্ছেটাকেই প্রাধান্য দিলাম।’ রাফসানের শান্ত দৃষ্টি, শান্ত কন্ঠে বলল।
হঠাৎই এমন কথায় চমকে গেল রূপা। এমন কী হল? হঠাৎই পরিবর্তন মানুষটার?
দৃষ্টি মেলে বলল,’ আপনি ঠিক আছেন?’
‘ খারাপ নেই।’
‘ এত পেঁচিয়ে কথা বলেন!’ বলল রূপা।
‘ সহজ কথা সবাই শুনে না।’ কথাটি বলেই হাসলো রাফসান৷
চকিতে চমকে যায় রূপা। মানুষটা ঠিক কীরকম ধরণের হতে পারে? বেশ পরিবর্তন তার মধ্যে। ক্ষণিকে ক্ষণিকে এই পরিবর্তন দেখায়? নাকি মানুষটা এরকমই? এই ক’দিনে ঠিকঠাক বুঝতে পারলো না। কিন্তু ঠিকই ও’কে বুঝার চেষ্টা করেছিল সে।
রূপা শান্ত হয়ে যায়। এর আগেও তো চলে যাব, চলে যাব বলেছিল। এখন তার সম্মতি দেখে সবকিছু ঘুরে গেল?
অস্থিরতা নিয়ে সময়টা কাটাতে হল ওর। মানুষটা আর কথা বলেনি। যে কি-না গায়ে পরে কথা বলতো। হঠাৎই রূপার মন খারাপ হল। কী কারণে হল? জানা নেই। আবার হয়তো জানাও আছে।
রাস্তায় জ্যাম। মিনিট দশেক তো লাগবেই ছাড়তে। হঠাৎই চোখ আঁটকে যায় রাফসানের। শরীর থরথর করে কাঁপুনি দেয়। চোখমুখে রাগ, ক্ষোভ, সবকিছুর প্রভাস পাচ্ছে রূপা। কিন্তু কী হল তার? বুঝতে পারলো না। নীরব দর্শক হয়ে রাফসানের দৃষ্টি অনুসরণ করে সেও তাকালো। মুহূর্তেই রূপাও চুপ! এই তো সে…।
#চলবে
গল্প টা কেমন part 3 থেকে অন্য কোনো গল্প কে