#এক_আকাশ_ভালোবাসি
#পার্ট_৩২
#নিশাত_জাহান_নিশি
মুহিত মাথায় গাঁধা গাঁধা টেনশান নিয়ে গাড়িতে উঠে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হলো। এই মুহূূতে রূপের জন্য বেশি চিন্তা হচ্ছে মুহিতের। কেউ যদি সত্যিই রূপকে ফলো করে থাকে তাহলে নিশ্চয়ই সামনে কোনো ঝড় আসছে।
এসব ভাবতে ভাবতে মুহিত প্রায় পনেরো মিনিট পর অফিসে এসে পৌঁছে গেলো। অফিসে পৌঁছেই সে কাজে মনযোগ দিলো। আপাতত টেনশান গুলো সে মাথা থেকে ঝাড়তে চায়। রূপকে দেখে রাখার জন্য মারজানা চৌধুরী আছে বলে মুহিত এক্টু স্বস্তি পাচ্ছে। নিজেকে খানিকটা হলে টেনশান মুক্ত রাখতে পারছে।
রূপ মারজানা চৌধুরীর থেকে বিদায় নিয়ে দু তলায় চলে গেলো। ঘরের কাজ সামলে রেঁধে বেড়ে, একেবারে মারজানা চৌধুরীর ফ্ল্যাটে যাবে। বেড রুমটা গুছিয়ে রূপ কিচেন রুমে চলে গেলো। হাড়ি, পাতিল ধূঁয়ে রান্না বসিয়ে দিবে।
অন্যদিকে,,,,,,,
মৃন্ময় অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে। মারু ফ্রেশ হয়ে বেডের উপর বসে আছে। মৃন্ময়কে নিয়ে এক সাথে নিচে যাবে বলে। মৃন্ময় হাতে ঘড়ি পড়ছে আর মারুকে উদ্দেশ্য করে বলছে,,,,,,
—-“মারু….আমার ফিরতে ফিরতে রাত হবে। তুমি সাবধানে থেকো। আর শুনো….দোলা বা বাড়ির বাকিরা যদি তোমাকে কিছু বলে তবে তুমি ও চুপ থাকবে না। যা মন চাইবে তাই বলবে। বাকিটা আমি বাড়ি ফিরে বুঝে নিবো।”
মারু বসা থেকে উঠে মৃন্ময়কে পেছন থেকে ঝাপটে ধরে বলল,,,,,,
—–“রাত হবার আগেই ফিরে এসো। রূপকে এক্টু দেখতে যাবো। মনে হচ্ছে কতো বছর দেখি না ওকে।”
—–“আচ্ছা আমি ট্রাই করব। এখন নিচে চলো। অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
মারু মৃন্ময়কে ছেড়ে শাড়িটা ঠিক করে মৃন্ময়ের পাশে দাঁড়ালো। অফিসের ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে মৃন্ময় মারুর হাত ধরে রুম থেকে বের হয়ে নিচে চলে গেলো। ডাইনিং টেবিলে বাড়ির সবাই নিজেদের মতো ব্রেকফাস্ট করে চলছে। কারো মুখে হাসি নেই। সবাই আপসেট। মৃন্ময় আর মারুকে দেখে সবার ফুলানো মুখটা যেনো ব্লাস্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। চোখ, মুখ লাল করে সবাই মারুর দিকে তাকিয়ে আছে। মারু ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে মৃন্ময়ের হাত ধরে দুটো চেয়ার টেনে মৃন্ময়ের পাশের চেয়ারটায় বসে পড়ল। দোলা স্যান্ডুইচে বাইট দিচ্ছে আর মারুর দিকে তেজী দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। মনে হচ্ছে স্যান্ডুইচ খাচ্ছে না মারুকে খাচ্ছে। সানায়া আর সোহেলী আহমেদ চোখ, মুখ লাল করে কফি খাচ্ছে। মায়া আহমেদ নিচের দিকে তাকিয়ে কাটা চামচ দিয়ে ওমলেট কাটছে। সাকিবকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। সানোয়ার আহমেদ আর রেজাউল আহমেদ অনেকক্ষন আগেই অফিস চলে গেছে।
সবার চোখ, মুখের হাল দেখে মারু সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,
—–“আরে আপনারা সবাই মুখটাকে এমন ফুলিয়ে রেখেছেন কেনো? অনেকের তো চোখ দুটো বের হয়ে আসছে। আবার অনেকে স্যান্ডুইচ আর ওমলেট খাচ্ছে কম তবে আমাকে খাচ্ছে বেশি। এর কারণ কি? আমি আপনাদের বাড়ির নতুন বউ। কোথায় আমাকে সবাই হাত ধরে টেনে টুনে খাবার টেবিলে বসিয়ে আদর করে খাবার খাইয়ে দিবেন তা না উল্টে আমাকে আস্ত কাঁচা চিবিয়ে খাচ্ছেন।”
মারুর কথা শুনে মৃন্ময় হেসে দিলো। মারু হাসি চেঁপে মায়া আহমেদের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,
—–“ইট’স নট ফেয়ার শ্বাশু মা।”
মায়া আহমেদ এবার মারুর দিকে তাকিয়ে জোর পূর্বক হেসে বলল,,,,,,,
—–“তোমার ধারনা সম্পূর্ণ ভুল মারু। আমরা সবাই তোমাকে মেনে নিয়েছি। সবটাই আমার ছেলের দিকে তাকিয়ে। আদরের ছেলে তো আমার। তাই ওর সিদ্ধান্তের উপর কিছু বলতে পারলাম না। ওর অন্যায়টাকে ও মেনে নিলাম। তুমি খাও। মনযোগ দিয়ে খাও। আমরা কেউ তোমাকে কটু কথা শুনাব না এমনকি তোমার পিছনে লাগতে ও আসব না। তুমি নিশ্চিন্ত থাকতে পারো।”
মায়া আহমেদের কথা শুনে সানায়ার নাকে, মুখে কফি উঠে গেলো। দোলা স্যান্ডুইচে কামড় দিতে গিয়ে জিহ্বায় দিয়ে ফেলল। একজন কাশছে তো অন্যজন কাঁদছে। মাঝখান থেকে মারু আর মৃন্ময় মজা নিচ্ছে। মৃন্ময় মিটিমিটি হাসছে আর স্যান্ডুইচ গিলছে। সোহেলী আহমেদ ব্যস্ত সানায়াকে নিয়ে আর মায়া আহমেদ ব্যস্ত দোলাকে নিয়ে। মারু ও মৃন্ময়ের মতো মিটিমিটি হেসে স্যান্ডুইচ খাচ্ছে।
প্রায় দশ মিনিট পর সানায়া এবং দোলার কাশি, কান্না বন্ধ হলো। দুজনই ডাইনিং টেবিল ছেড়ে নিজেদের রুমে চলে গেলো। মৃন্ময় খেয়ে দেয়ে মায়া আহমেদ আর মারুর থেকে বিদায় নিয়ে অফিসে চলে গেলো। মারু ড্রইং রুমটা ঘুড়ে ঘুড়ে দেখছে আর বোম পুলিশের মতো হাঁটছে। মায়া আহমেদ আর সোহেলী আহমেদ মারুর দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ডাইনিং টেবিল গুছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। ওদের জানা হয়ে গেছে মারুকে দিয়ে কোনো কাজ করানো যাবে না। মারু যেভাবে লেডি কন্সটেবলের মতো গোল গোল হয়ে ঘুড়ছে যে কোনো সাধারন পাবলিক ভয় পেয়ে যাবে। ওদের দুজনের কান্ড দেখে মারু হেসে কুটিকুটি। ওদের ডাইনিং টেবিল গুছানো শেষ হলে মারু বড় এক্টা হাই তুলে উপরে উঠে গেলো।
দুপুর দুইটা,,,,,,
রূপ রান্না বান্না করে শাওয়ার নিয়ে এক্টা বক্সে তরকারী বেড়ে নিচ তলায় নেমে গেলো। কলিং বেলে দুবার চাঁপ দেওয়ার পর সাথে সাথে আদ্রিতা দরজা খুলে দিলো। আদ্রিতাকে দেখে রূপ মৃদ্যু হাসল। আদ্রিতা দাঁত বের করে হেসে রূপকে এক টানে রুমের ভিতর ঢুকিয়ে নিলো। ড্রইং রুমে মারজানা চৌধুরী সোফার কভার লাগাচ্ছে। রূপকে দেখে মারজানা চৌধুরী হাসি মুখে রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,
—-“তোমার জন্যই এতোক্ষন ওয়েট করছিলাম রূপ। চলো এবার আমরা লাঞ্চ করে নেই।”
রূপ মুচকি হেসে মারজানা চৌধুরীর দিকে হাতে থাকা বক্সটা এগিয়ে দিয়ে বলল,,,,,,
—–“আন্টি এক্টু তরকারী এনেছি। আপনি টেস্ট করে দেখতে পারেন।”
মারজানা চৌধুরী তরকারীর বক্সটা হাতে নিয়ে রূপের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,,,,,
—-“অবশ্যই টেস্ট করব মা। চলো।”
রূপ আর মারজানা চৌধুরীর পিছু পিছু আদ্রিতা আর আফ্রিদা ও ডাইনিং টেবিলে বসে গেলো। মারজানা চৌধুরী খাবার সার্ভ করছে। আদ্রিতা বার বার আড়চোখে রূপের দিকে তাকাচ্ছ। রূপ ব্যাপারটা নোটিশ করছে বাট প্রকাশ করছে না।
প্রায় আধ ঘন্টা পর। খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই ড্রইং রুমের সোফায় বসে আড্ডায় মেতে উঠল। নানা রকমের কথা জুড়ে দিলো সবাই। মারজানা চৌধুরী এক্টা ফটো এ্যালবাম নিয়ে এক এক করে উনার ফ্যামিলি ফটো দেখাচ্ছে। রূপ ও খুব মনযোগ দিয়ে সব গুলো ফটো দেখছে। এভাবেই আড্ডায় আড্ডায় দুপুর ঘনিয়ে বিকেল হয়ে এলো। মারজানা চৌধুরী চা করতে কিচেন রুমে চলে গেলো।
রূপ অনেকক্ষন ধরে খেয়াল করছে আদ্রিতা কেমন ছটফট করছে। হাত দুটোকে ক্ষনে ক্ষনে কচলাচ্ছে। দাঁত, মুখ খিঁচে রেখেছে। পা দুটোকে সমান ভাবে কচলাচ্ছে। আদ্রিতাকে দেখতে কেমন উগ্র লাগছে। পুরো খাঁপ ছাড়া হয়ে গেছে সে। আদ্রিতার এমন আচরন রূপের মনে সন্দেহের পাহাড় তৈরী করছে। রূপ কিছুটা সিরিয়াস হয়ে যেই না আদ্রিতাকে কিছু বলতে যাবে এর আগেই আদ্রিতা চুল টানতে টানতে ড্রইং রুম থেকে উঠে এক দৌঁড়ে বেড রুমে চলে গেলো। রুমেই ঢুকেই ঠাস করে রুমের দরজাটা লাগিয়ে দিলো আদ্রিতা।
রূপ আদ্রিতাকে ফলো করে দরজায় কান ঠেঁকিয়ে কিছু এক্টা বুঝার চেষ্টা করছে। ভিতর থেকে আদ্রিতার অস্পষ্ট গলার স্বর শুনা যাচ্ছে। কারো সাথে সে ফোনে কথা বলছে। নেশাক্ত কন্ঠে সে কথা গুলো বলছে। ফোনের ঐ পাশের লোকটার থেকে কিছু চাইছে সে। আর বলছে জিনিসটা ইমার্জেন্সি লাগবে। কিন্তু নাম, ভেদ ভেঙ্গে কিছুই বলছে না। ঐ পাশের লোকটার সাথে কিছুক্ষন চিৎকার চেঁচামেচি করে আদ্রিতা ফোনটা কেটে পুরো রুমের জিনিসপত্র এলোমেলো করে এদিক সেদিক ছুড়ে ফেলছে। যার আওয়াজ রূপের কান অব্দি এসে ঠেঁকছে।
আদ্রিতার সব কর্ম কান্ড রূপ নিজ চোখে প্রত্যক্ষন করতে চাইছে। তাই সে আর দেরি না করে দৌঁড়ে ফ্লাট থেকে বের হয়ে বাড়ির গার্ডেনে গিয়ে আদ্রিতার রুমের জানালায় উঁকি দিলো। আদ্রিতা রুমটাকে পুরো এলোমেলো করে দিয়েছে। রুমের এক কোনায় হাঁটু ভাজ করে বসে আছে সে। চোখ, মুখ লাল হয়ে দাঁত গিজগিজ করছে আদ্রিতার। হাত, পা মুচড়া মুচড়ি করছে। চুল ধরে টানছে। কেমন ছটফট করছে। আদ্রিতার এই ভয়ংকর অবস্থা দেখে রূপের গাঁয়ে কাটা দিয়ে উঠল। রূপ থরথর করে কাঁপছে আর ঘামছে।
আদ্রিতা কিছুক্ষন হাত, পা কচলা কচলি করে কিছু এক্টা ভেবে দাঁত বের করে হেসে বসা থেকে উঠে পড়ার টেবিল থেকে এক্টা প্র্যাক্টিকাল খাতা বের করে খাতার মাঝখান থেকে এক্টা সাদা প্যাকেট জাতীয় কিছু এক্টা বের করল। প্যাকেটটার ভিতর গুড়ো দুধের মতো কিছু দেখা যাচ্ছে। রূপ খুব আগ্রহ নিয়ে আদ্রিতার দিকে তাকিয়ে আছে। আদ্রিতা প্যাকেটটা হাতে নিয়ে চোখ বন্ধ করে প্যাকেটটা শুকছে আর হাসছে।
আদ্রিতার এমন বিভৎস রূপ দেখে রূপের চোখে জল চলে এলো। চোখের সামনে রূপ এসব সহ্য করতে পারছে না। তাড়াহুড়ো করে রূপ জানালা থেকে সরে আবারো ফ্ল্যাটে ফিরে এলো। সোফার এক কোনায় চুপটি করে বসে আছে রূপ। ভয়ে ওর শরীর কাঁপছে। এর মাঝেই মারজানা চৌধুরী হাতে করে চায়ের ট্রে এনে টি টেবিলের উপর রাখল।
রূপের পাশে বসে মারজানা চৌধুরী রূপের কাঁধে হাত রাখার সাথে সাথে রূপ আচমকা কেঁপে উঠল। মারজানা চৌধুরী অবাক হয়ে বলল,,,,,,
—–“কি হয়েছে রূপ? তুমি হঠাৎ কেঁপে উঠলে কেনো?”
রূপ জোর পূর্বক হেসে বলল,,,,,
—–“না আন্টি এমনি। হঠাৎ করে আপনি কাঁধে হাত রেখেছেন তো তাই।”
মারুজানা চৌধুরী মৃদ্যু হেসে বলল,,,,,
—–“ওহ্ আচ্ছা। আমি ভেবেছি কি না কি।”
মারজানা চৌধুরী এবার রূপের হাতে চা এর কাপ ধরিয়ে দিয়ে বলল,,,,,,
—-“খাও মা। চা টা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।”
রূপ হাসি মুখে চায়ের কাপটা হাতে নিলো। মারজানা চৌধুরী এদিক সেদিক তাকিয়ে বলল,,,,,
—-“আদ্রিতাটা আবার কোথায় গেলো। এতক্ষন তো এখানেই ছিলো।”
রূপ কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,,,,,
—–“আন্টি আদ্রিতা রুমে গেছে। প্লিজ ওকে ডেকে আনুন।”
—–“না থাক। এক্টু পরে নিজেই চলে আসবে চা খেতে।”
মারজানা চৌধুরী চায়ের কাপ হাতে নিয়ে যেই না চুমুক দিতে যাবে এর আগেই আদ্রিতা এসে হাজির হয়ে গেলো। আদ্রিতাকে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে দেখে রূপ হতবাক হয়ে আদ্রিতার দিকে তাকিয়ে আছে। সম্পূর্ণ গোছানো লাগছে আদ্রিতাকে। চোখ, মুখ স্বাভাবিক। চুল গুলো ও সেট করা। আদ্রিতা হাসি মুখে রূপের পাশে বসে ট্রে থেকে চা নিয়ে খুব আয়েশ করে চা খেয়ে চলছে। আদ্রিতাকে দেখে রূপ অবাকের পর অবাক হচ্ছে। মানে কিভাবে সম্ভব? এক্টু আগে যে মেয়েটাকে সম্পূর্ণ উন্মাদ অবস্থায় দেখা গেলো সে হুট করে কিভাবে এতোটা চেইন্জ্ঞ হতে পারে? হাউ?
মনের ভিতর হাজারো সন্দেহ, ভয় আর প্রশ্নের ঝুড়ি নিয়ে রূপ বিকেল থেকে সন্ধ্যা পাড় করে দিলো। ঘড়িতে সন্ধ্যা সাতটা বাজছে। মুহিতের ফেরার সময় হয়েছে। রূপ বার বার দরজার দিকে তাকাচ্ছে কখন দরজায় টোকা পড়বে। এর মাঝেই সত্যি সত্যিই দরজায় টোকা পড়ল। মারজানা চৌধুরী দরজার কাছে যাওয়ার আগেই রূপ দৌঁড়ে মারজানা চৌধুরীকে ক্রস করে রুমের দরজা খুলে দিলো। দরজা খুলেই রূপ মারুর হাসোজ্জ্বল চোহারাটা দেখতে পেলো। মারুকে দেখে রূপের চোখে জল চলে এলো। রূপ আর দেরি না করে মারুকে ঝাপটে ধরল। মারু ও রূপকে ঝাপটে ধরে খুশিতে খিলিখিল করে হেসে উঠল। মৃন্ময় ওদের পিছনে দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে।
মারজানা চৌধুরীর থেকে বিদায় নিয়ে রূপ মারুকে নিয়ে উপরে উঠে গেলো। ফ্ল্যাটে ঢুকে মারু আর রূপ আলাপ জুড়ে দিলো। মাঝখান থেকে মৃন্ময় খুব বোর্ড ফিল করছে। রূপ আর মারুর হাসি খুশি যেনো উপচে পড়ছে। মারুকে পেয়ে রূপ টোটালি মুহিতের কথা ভুলে গেছে। মৃন্ময় মুহিতের নাম্বারে কল করে মুহিতকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে বলে দিলো। রূপ আর মারু কিচেনে গিয়ে নানা আইটেমের নাস্তা বানানো শুরু করল। সবাই এক সাথে খাবে বলে।
প্রায় আধ ঘন্টা পর। মুহিত বাড়িতে ফিরল। চারজন মিলে খুব হাসি খুশিতে রাতের অনেকটা সময় পাড় করে দিলো। মারুকে ঐ বাড়ির সবাই প্রচন্ড ভয় পায়। এ কথা টা শোনার সাথে সাথে রূপ আর মুহিত অট্ট হাসিতে ফেটে পড়ল। মারুর ভয়ংকর রূপে বাড়ির প্রতিটা মানুষ জড়সড় হয়ে থাকে। মৃন্ময় এসব রূপ আর মুহিতকে বলছে আর হাসছে। রাতের ডিনার করে মারু আর মৃন্ময় ঐ বাড়ি ফিরে গেলো। মুহিত আর রূপ ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।
এভাবেই কেটে গেলো চার চারটে দিন। এই চারিদনে সব কিছুই স্বাভাবিক ছিলো। মারজানা চৌধুরী দায়িত্ব নিয়ে কাজী সাহেব দিয়ে মুহিত আর রূপের বিয়েটা পড়িয়ে নিয়েছে। মুহিত হাজার চেষ্টা করে ও ঐ ফেরার কাজী সাহেবকে খুঁজে পেলো না। তবে মুহিত আশা করেছিলো এইবারের বিয়েটা ও হয়তো আটকে যাবে। যদি কেউ ষড়যন্ত্র করে থাকে তাহলে নিশ্চয়ই এইবারের বিয়েটা ও ভেস্তে যাবে। কিন্তু না এইবারের বিয়েটা সুস্থ ভাবেই হয়েছে। কোনো রকম বাঁধা ছাড়াই।
রূপকে ও এখন কেউ ফলো করছে না। না মুহিতকে ফলো করছে। সব কিছু টোটালি স্বাভাবিক। আদ্রিতা ও যথেষ্ট সংযত হয়ে গেছে। মুহিত বা রূপের সাথে গাঁয়ে পড়া ভাব নিচ্ছে না। প্রয়োজনের তুলনায় বেশি কথা বলে না। তবে আদ্রিতার ঐ নেশাক্ত চেহারাটা প্রায়ই রূপকে দেখতে হচ্ছে। আদ্রিতা কিছু ক্ষন পর পরই ভাইলেন্ট হয়ে উঠে। তবে সেটা মারজানা চৌধুরীর অগোচরে। রূপ এ ব্যাপারে মারজানা চৌধুরীকে ও কিছু বলে নি এমনকি মুহিতকে ও না। ব্যাপারটা টোটালি চেঁপে যাচ্ছে সে।
আজ বৃহস্পতিবার। দোলার গাঁয়ে হলুদ আজ। সকাল থেকেই রূপ জামা কাপড় গুছাচ্ছে ঐ বাড়িতে যাবে বলে। মুহিত সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরলেই ওরা ঐ বাড়িতে রওনা দিবে।
#এক_আকাশ_ভালোবাসি
#পার্ট_৩৩
#নিশাত_জাহান_নিশি
আজ বৃহস্পতিবার। দোলার গাঁয়ে হলুদ আজ। সকাল থেকেই রূপ জামা কাপড় গুছাচ্ছে ঐ বাড়িতে যাবে বলে। মুহিত সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরলেই ওরা ঐ বাড়িতে রওনা দিবে।
মারু সকাল থেকেই রূপকে কল করে জ্বালিয়ে মারছে। কখন আসবে কখন আসবে বলে। রূপ বার বার মুহিতের বাহানা দিয়ে মারুকে দমিয়ে রাখছে। না হয় মারু হন্ন হয়ে ছুটে আসবে রূপকে পিক করতে। অফিসে যাওয়ার আগে মুহিত রূপকে কড়া ওয়ার্নিং দিয়ে গেছে। মুহিতকে ছাড়া যেনো ঐ বাড়িতে এক কদম ও না বাড়ায়। মুহিত চায় না রূপ একা ঐ বাড়িতে যাক। মুহিতের সাথে যাবে আবার মুহিতের সাথেই ফিরবে। মুহিতের কথা রাখার জন্য রূপ মারুকে দমিয়ে রাখছে। নয়তো মুহিত ভীষণ রাগ করবে।
ঘড়িতে সন্ধ্যা সাতটা। রূপ রেডি হয়ে মারজানা চৌধুরীর ফ্ল্যাটে বসে আছে। রুমে একা একা থাকতে ভয় করছে ওর। বাসন্তী কালার সিল্কের শাড়ীতে রূপ নিজেকে সাজিয়েছে। সাথে বাসন্তী কালার অরনামেন্টস। চোখ ভর্তি কালো কাজল, ঠোঁট ভর্তি লাল লিপস্টিক, হাত ভর্তি ম্যাচ করা চুড়ি, খোঁপায় গাজরা ফুল। নাকে পাথরের এক্টা নাক ফুল। রূপের খুব ইচ্ছে ডায়মন্ডের নাক ফুল পড়া। রূপ ভেবে ও রেখেছে মুহিতকে বলবে এই মাসে যেনো এক্টা ডায়মন্ডের নাক ফুল এনে দেয়। খুব নরমাল ভাবে সেজেছে রূপ। এই সাজেই রূপকে দারুন লাগছে। চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়ার মতো।
মারজানা চৌধুরী তো রূপের প্রশংসা করতে করতে মুখে ফেনা তুলে ফেলছে। ঐদিকে রূপ লজ্জায় মুর্ছা যাচ্ছে। কিছুক্ষন আড্ডা দেওয়ার পর মারজানা চৌধুরী রূপের জন্য চা নিয়ে এলো। রূপ চা এর কাপটা হাতে নিতেই ফ্ল্যাটের দরজায় টোকা পড়ল। রূপ বেশ বুঝতে পেরেছে মুহিত এসেছে। মারজানা চৌধুরী ফ্ল্যাটের দরজাটা খুলে দিতেই মুহিত রুমে এসে প্রবেশ করল। মারজানা চৌধুরী হাসি মুখে মুহিতকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,
—-“মুহিত বসো। আমি চা করে আনছি। সব সময় তুমি না খেয়ে আমার ফ্ল্যাট থেকে বের হও। আজ কিন্তু তা হবে না।”
মুহিত মৃদ্যু হেসে বলল,,,,,,
—-“ওকে আন্টি তাই হবে। আজ চা খেয়েই বের হবো।”
মারজানা চৌধুরী হাসতে হাসতে কিচেন রুমে চলে গেলো। আদ্রিতা ও মারজানা চৌধুরীর পিছু পিছু কিচেন রুমে চলে গেলো। আদ্রিতা কখনো কিচেন রুমের দিকে যায় না। তবে আজ গেলো। হয়তো মা কে হেল্প করবে বলে।
মুহিত ড্রইং রুমে ঢুকে সোফার দিকে তাকাতেই হঠাৎ থেমে গেলো। ওর চোখ জোড়া আচমকাই থমকে গেলো। এক দৃষ্টিতে মুহিত রূপের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ যেনো সরছেই না তার। পারছে না এভাবেই ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থেকে সারা জীবন কাটিয়ে দিতে।
রূপ লজ্জা পেয়ে চা খাওয়া বন্ধ করে মুখটা দু হাত দিয়ে ঢেকে ফেলল। মুহিত বাঁকা হেসে ধপাস করে রূপের পাশে বসে রূপের কানে ফিসফিসিয়ে বলল,,,,,,,
—–“লজ্জা নারীর ভূষণ বলে বরকে ও এমন অতৃপ্তিতে রাখা ঠিক না বৌ। আমি দেখতে চাই তোমায়। প্লিজ মুখটা দেখাও।”
রূপ অট্ট হেসে বলল,,,,,,,
—-“দেখলে হবে? খরচা আছে!”
—-“ওহ্ তাই বুঝি? তা কি লাগবে?”
—-“ডায়মন্ডের নোজ পিন।”
কথাটা বলেই রূপ জিভ কেটে মুখ থেকে হাতটা সরিয়ে মুহিতের দিকে তাকালো। মুহিত মাথাটা নিচু করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। রূপ কথা ঘুড়ানোর জন্য মুহিতের কাঁধে মাথা রেখে মুহিতের কানে ফিসফিসিয়ে বলল,,,,,,,
—–“আমার এক্টা ফুটফুটে বাবু চাই মুহিত। এর চে বেশি কিছু চাই না।”
মুহিত রূপের দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে বলল,,,,,,
—-“নোজ পিন ও আসবে। বাবু ও হবে। তুমি যা যা চাও সব হবে ”
—-“নোজ পিনের ব্যাপারটা সত্যি না মুহিত। আমি মজা করেছি।”
—–“তবে আমি মজা করছি না।”
এর মাঝেই মারজানা চৌধুরী চলে এলো। রূপ মুহিতের কাঁধ থেকে মাথা সরিয়ে নিলো। মারজানা চৌধুরী সোফায় বসে মুহিতকে উদ্দেশ করে বলল,,,,,,
—–“আদ্রিতা চা নিয়ে আসছে। তুমি বসো।”
মুহিত মাথা নাঁড়ালো। রূপ চা এর কাপটা হাতে নিয়ে আবারো চায়ে চুমুক দিচ্ছে। মারজানা চৌধুরী মুহিতের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,
—–“তা কবে ফিরবে তোমরা? রূপকে ছাড়া খুব ফাঁকা ফাঁকা লাগবে।”
মুহিত মলিন হেসে বলল,,,,,,
—–“আন্টি দুদিন পরেই ফিরব। রিসিপশান শেষ করে।”
—-“রূপকে খুব মিস করব। এই এক সপ্তাহে মেয়েটা খুব আপন হয়ে গেছে।”
রূপ মন খারাপ করে মারজানা চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে আছে। রূপের ও খুব খারাপ লাগছে উনাকে ছেড়ে যেতে। রূপ বসা থেকে উঠে মারজানা চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,,,
—-“আন্টি প্লিজ মন খারাপ করো না। দুই দিনের ই তো ব্যাপার। দুইদিন পর ঠিক ফিরে আসব।”
মারজানা চৌধুরী মুচকি হেসে রূপের কপালে চুমো খেয়ে বলল,,,,,,
—-“ওকে, মা মন খারাপ করব না। সাবধানে থেকো। আনন্দ, উল্লাস করো। আর দুদিন পর আমার কাছে ফিরে এসো।”
এর মাঝেই আদ্রিতা চা নিয়ে এলো। এক মগ ধোঁয়া উঠা গরম চা। হাসি মুখে আদ্রিতা চায়ের কাপটা মুহিতের হাতে ধরিয়ে দিলো। মুহিত মলিন হেসে এক্টু এক্টু করে চুমুক দিয়ে সম্পূর্ণ চা টা খেয়ে নিলো। চা খাওয়া শেষে মুহিত রূপকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,,
—-“রূপ তুমি এখানেই বসো। আমি চেইন্জ্ঞ করে আসছি।”
রূপ এক নিশ্বাসে বলে উঠল,,,,,,
—-“মুহিত ড্রইং রুমের সোফার উপর আমাদের ল্যাকেজটা আছে। আসার সময় নিয়ে এসো।”
—-“ওকেহ্।”
মুহিত আর দেরি করল না রুম থেকে বের হয়ে সোজা উপরে উঠে গেলো। ফ্লাটে গিয়ে মুহিত শার্ট, প্যান্ট পাল্টে হলুদ কালার পান্জ্ঞাবী পড়ে নিলো। চুলটা সেট করে মুহিত ড্রইং রুমের সোফার উপর থেকে ল্যাকেজটা হাতে নিয়ে রুমটা ভালো করে তালাবন্ধ করে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে নিচ তলার কলিং বেল চাঁপার সাথে সাথেই রূপ বের হয়ে এলো। দুজনই মারজানা চৌধুরী আর আদ্রিতার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে বসে পড়ল।
মুহিত গাড়িতে উঠে রূপের দিকে তাকিয়ে যেই না গাড়িটা স্টার্ট করতে যাবে অমনি মুহিতের মাথাটা কেমন ঘুড়ে এলো। ঘুম ঘুম ও পাচ্ছে। চোখ মেলে তাকাতে পারছে না মুহিত। শরীরটা ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে। রূপ মুহিতের দিকে না তাকিয়ে শাড়ী ঠিক করতে ব্যস্ত। মুহিত নিজেকে কিছুটা কন্ট্রোল করে খুব আস্তে করে গাড়িটা স্টার্ট করে দিলো।
মুহিত গাড়ির স্পিড খুব কমিয়ে রেখেছে। স্পিড বাড়িয়ে জোরে ড্রাইভ করার শক্তি নেই ওর। শরীরটা কেমন নিস্তেজ হয়ে আসছে। নিজেকে খাঁপ ছাড়া লাগছে। রূপ ব্যাপারটা এখনো আঁচ করতে পারছে না। সে মুহিতের ফোনে গেইমস খেলছে। মুহিত ও ব্যাপারটা রূপকে বুঝাতে চাইছে না। নয়তো রূপ খামোখা টেনশান করবে।
প্রায় আধ ঘন্টা পর। গাড়ি এসে পৌঁছে গেলো মৃন্ময়দের বাড়ি। বাড়ির গেইটটা দারুন ভাবে সাজানো হয়েছে। পুরোটা গেইট জুড়ে ঝাঁড় বাতি আর গোলাপ ফুল দিয়ে সাজানো। বাড়িটা আলোয় আর রোশনাইয়ে ভরপুর। চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়ার মতো। চারদিকে আলো আর খুশি উপচে পড়ছে। বিয়ে বাড়ি পুরো জমজমাট হয়ে আছে। চারদিকে মেহমান আর ডিজে গান। সব মিলিয়ে এলাহি কান্ড। রূপ এখনো ফোনে মুখ গুজে রেখেছে। গেইমসের প্রতি নেশা ওর। তাই অন্যদিকে তাকানোর আগ্রহ নেই।
মুহিতের গাঁ থেকে ঘাম ঝড়ছে। নিজের সাথে না পেরে মুহিত গাড়ির সিটেই মাথা এলিয়ে দিলো। প্রচন্ড মাথা ঘুড়াচ্ছে ওর। সাথে শরীরটা ও কেমন নিশক্তি লাগছে। গেইমস শেষ হওয়ার পর আশেপাশে তাকিয়ে রূপ ফোনটা হাত থেকে রেখে খিলখিল হেসে যেই না মুহিতের দিকে তাকালো অমনি রূপ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। মুহিত চোখ জোড়া বন্ধ করে সিটে মাথা এলিয়ে সেন্সলেসের মতো পড়ে আছে।
রূপ মুহিতের দিকে ঝুঁকে মুহিতকে খানিক ঝাঁকিয়ে বলল,,,,,,
—–“এই মুহিত। কি হয়েছে তোমার?”
মুহিত পিটপিট চোখে রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,
—-“রূপ আমার খুব ঘুম পেয়েছে। মাথাটা ও খুব ঘুড়াচ্ছে। শরীরটা ও নিশক্তি লাগছে। প্লিজ এক্টু মৃন্ময় ভাইয়াকে কল করে বলো গেইটের কাছে চলে আসতে। আমি রুমে যাবো।”
রূপ খুব ঘাবড়ে গেলো। মুহিত কখনো এমন করে নি। মাথা, ঘুড়ানো,,শরীর নিশক্তি এসব মুহিত কখনো বলে নি। জ্বর আসলে ও মুহিত ভিতরে ভিতরে সব কষ্ট ভোগ করে নিতো। এর পরে ও কাউকে কিছু জানাতো না। তবে আজ মুহিতের এমন পরিবর্তন রূপকে খুব ভাবাচ্ছে। কাঁপা কাঁপা হাত নিয়ে রূপ মৃন্ময়ের নাম্বারে কল করল। সাথে সাথেই মৃন্ময় কলটা পিক করে নিলো। মৃন্ময় কিছু বলার আগেই রূপ বলে উঠল,,,,,,
—–“ভাইয়া আমি রূপ বলছি। তুমি প্লিজ বাড়ির গেইটের সামনে চলে এসো। মুহিতের শরীরটা আচমকাই খারাপ হয়ে গেছে।”
—–“দাঁড়া দাঁড়া আমি আসছি। মিউজিকের আওয়াজে ক্লিয়ারলি কিছু শুনছি না।”
মৃন্ময় কলটা কেটে বাড়ির ড্রইং রুম থেকে দৌঁড়ে বাড়ির গেইটের সামনে চলে এলো। মুহিতের গাড়িটাকে দেখে মৃন্ময় এক ছুটে গাড়ির কাছে চলে এলো। রূপ মুহিতকে ঝাপটে ধরে রেখেছে। মুহিতের শরীরটা সত্যিই খারাপের দিকে যাচ্ছে। মৃন্ময়কে দেখে রূপ চেঁচিয়ে বলে উঠল,,,,,,
—–“ভাইয়া প্লিজ মুহিতকে ধরো। ওকে রুমে নিয়ে যেতে হবে।”
মৃন্ময় গাড়ির দরজা খুলে মুহিতকে এক হাত দিয়ে ধরে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিলো। রূপ ও গাড়ি থেকে মুহিতের অন্য হাতে ধরল। মৃন্ময় মুহিতকে নিয়ে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করছে আর রূপকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,
—–“এই রুপ, কি হয়েছে মুহিতের? মুহিত এমন করছে কেনো?”
রূপ চোখে জল নিয়ে বলল,,,,,,
—-“আমি কিচ্ছু জানি না ভাইয়া। গাড়িতে উঠার পর থেকে মুহিত এমন করছে। শরীর নাকি নিশক্তি লাগছে। মাথা ঘুড়াচ্ছে।”
মৃন্ময় রূপকে শান্তনা দিয়ে বলল,,,,,
—–“কাজের স্ট্রেচ থেকে হয়তো এমন হচ্ছে। সারা দিন কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে তো তাই। তুই টেনশান করিস না। এক্টু রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।”
মুহিতকে নিয়ে বাড়ির ড্রইং রুমে পা রাখার সাথে সাথেই মারু দৌঁড়ে এলো রূপের কাছে। মুহিতকে ঐ অবস্থায় দেখে মারু বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,,,,,
—-“এই রূপ। মুহিতের কি হয়েছে?”
—-“জানি না রে। আচমকাই কেমন যেনো করছে মুহিত।”
বাড়ির বাকিরা দৌঁড়ে এলো মুহিতের কাছে। সবাই বেশ অবাক মুহিতকে ঐ অবস্থায় দেখে। সানায়া আর সাকিব দূরে দাঁড়িয়ে আছে। দোলাকে পার্লারের মেয়েরা সাজাচ্ছে। মায়া আহমেদ আর সোহেলী আহমেদ মুহিতের পাশে এসে দাঁড়ালো। মায়া আহমেদ মুহিতের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,,,,,
—–‘কি হয়েছে মুহিত? তুমি এমন করছ কেনো?
মুহিত কিছু বলছে না। অস্থির দৃষ্টিতে মায়া আহমেদের দিকে তাকিয়ে আছে। এর মাঝেই সানোয়ার আহমেদ সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো। মুহিতকে ঐ অবস্থায় দেখে সানোয়ার আহমেদ বেশ উওেজিত হয়ে মুহিতের কাঁধে হাত রেখে বলল,,,,,
—-“এই মুহিত…. তোমার শরীরের এই অবস্থা কেনো? কি হয়েছে তোমার? বাবাকে বলো।”
মুহিত সানোয়ার আহমেদের দিকে একবার তাকিয়ে রূপের কাঁধে মাথা এলিয়ে দিলো। চোখ জোড়া ও বুজে নিলো। রূপ মুহিতের দিকে তাকিয়ে চিৎকার দিয়ে সানোয়ার আহমেদকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,
—–“আংকেল…..মুহিত সেন্সলেস হয়ে গেছে। প্লিজ ডক্টর ডাকুন।”
সানায়া দৌঁড়ে এসে এক নিশ্বাসে বলে উঠল,,,,,,
—–“আরে ডক্টর ডাকতে হবে না। ওভার স্ট্রেচে মুহিতের এই অবস্থা। বউকে ভালো রাখার জন্য সারা দিন ছেলেটা অফিসে খেটে মরছে। শরীর ওর খারাপ হবে না তো কি আমাদের হবে? আজ রাতটা মুহিতকে রেস্ট নিতে দাও। কাল সকাল থেকে সব কন্ট্রোলে চলে আসবে।”
সানায়ার কথায় বাড়ির সবাই সায় জানালো। স্ট্রেচ থেকে মুহিতের এমনটা হচ্ছে এটা সবার ধারণা। রূপ ও সবার ধারনাকেই মেনে নিলো। সানোয়ার আহমেদ, মৃন্ময়, মারু, রূপ মিলে মুহিতকে উপরের রুমে নিয়ে গেলো। মুহিতকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে রূপকে মুহিতের কাছে রেখে সবাই রুম থেকে বের হয়ে গেলো। বাড়ির কাজের লোক এসে রূপের ল্যাকেজটা রুমে পৌঁছে দিয়ে গেলো।
কিছুক্ষন পর হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হবে। তাই সবাইকে নিচে যেতে হলো। মুহিতের অসুস্থতার জন্য রূপ ও হলুদের অনুষ্ঠানে এটেন্ড করতে পারবে না। এই নিয়ে রূপের কোনো অভিযোগ নেই। সে চায় আগে মুহিত সুস্থ হয়ে উঠুক।
রূপ মুহিতের মাথার পাশে বসে মুহিতের চোখে, মুখে পানি ছিটাচ্ছে। প্রায় পাঁচ মিনিট পানি ছিটানোর পর মুহিতের জ্ঞান ফিরল। চোখ মেলে মুহিত রূপের দিকে তাকালো। মুহিতের চোখ জোড়া লাভার মতো লাল হয়ে আছে। দেখতে কেমন বিভৎস লাগছে। রূপ মুহিতের মুখের কাছে ঝুঁকে মুহিতের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,
—–“মুহিত তোমার চোখ জোড়া এমন লাল হয়ে আছে কেনো? কি হয়েছে তোমার? শরীর কি এখনো খারাপ লাগছে?”
মুহিত মাথা নাঁড়িয়ে বলল,,,,,,
—-“আমার শরীরটা কেমন জ্বালা পোড়া করছে। হাত, পা চুলকাচ্ছে, মাথাটা ঘুড়ছে, বুকটা কেমন ব্যাথা ব্যাথা করছে, শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, চোখ জোড়া সাংঘাতিক জ্বলছে। কেমন বমি বমি ও পাচ্ছে।”
কথাগুলো বলার পর পরই মুহিতের উল্টানি এসে গেলো। গড়গড়িয়ে মুহিত বমি করছে। রূপকে ও ভাসিয়ে দিয়েছে। প্রায় দশ মিনিট নাগাদ মুহিত বমি করল। রূপ পেরেশান হয়ে মুহিতের পিঠে হাত ঘঁষছে। এক পর্যায়ে বমি করতে করতে মুহিত ক্লান্ত হয়ে গেলো। রূপ মুহিতকে বেডের এক্টা কোণার সাথে ড্যাশ দিয়ে মুহিতের পান্জ্ঞাবি টা খুলে দিলো। ডেস্কের উপর থেকে পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে রূপ মুহিতের মুখের কাছে ধরে বলল,,,,,,
—-“নাও মুহিত পানি টা খেয়ে নাও।”
আচমকাই দরজা খুলে সানায়া রুমে ঢুকল। সানায়ার হাতে স্যুপের বাটি। সানায়া দ্রুত পায়ে হেঁটে মুহিতের দিকে একবার তাকিয়ে রূপের হাতে স্যুপের বাটি টা ধরিয়ে দিয়ে বলল,,,,,,,
—-“মুহিতকে স্যুপটা খাইয়ে দাও। গরম গরম স্যুপটা খেলে ওর শরীরটা ব্যাটার লাগবে।”
রূপ সানায়ার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,
—-“মাএ বমি করেছে মুহিত। এক্টু পর খাইয়ে দেই?”
—-“না এক্ষনি খাইয়ে দাও। বমির পর পেটটা হয়তো খালি হয়ে গেছে।”
—-“ওকে খাইয়ে দিচ্ছি।”
সানায়া আর দাঁড়াল না। হনহন করে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। মুহিত চোখ খুলে রূপের দিকে তাকালো। ওর শরীরটা আগের চেয়ে ব্যাটার লাগছে। বমিটা করার পর শরীরটা যেনো তাল খুঁজে গেলো। আগের মতো চনমনে লাগছে। রূপ মুচকি হেসে মুহিতের গালে হাত বুলিয়ে বলল,,,,,,
—–“এখন কেমন লাগছে মুহিত?”
মুহিত রূপের হাত জোড়া ধরে মলিন হেসে বলল,,,,,,
—-“ভালো লাগছে রূপ। খুব চাঙ্গা লাগছে। তুমি ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসো। নিচে যেতে হবে।”
—–“না মুহিত আজ নিচে যাওয়া হবে না। বাড়ির সবাই বলে দিয়েছে আজ তোমাকে রেস্ট নিতে।”
—–“আরে আরে কি বলো, আজ দোলা আপুর গাঁয়ে হলুদ আর আমি কি না বিছানায় বসে বসে রেস্ট নিবো? না না এটা হবে না। আমরা দুজনই নিচে যাবো চলো।”
মুহিতের জেদের কাছে রূপের হার মানতেই হলো। রূপ ওয়াশরুমে ঢুকে শাড়ীটা পানি দিয়ে ক্লিন করে রুমে এসে মুহিতের পাশে বসল। মুহিত ল্যাকেজ থেকে আরেকটা পান্জ্ঞাবী বের করে পড়ে নিলো। রূপের হঠাৎ স্যুপের কথা মনে পড়ল। ডেস্কের উপর থেকে রূপ স্যুপের বাটিটা হাতে নিয়ে এক চামচ স্যুপ মুহিতের মুখের কাছে ধরে বলল,,,,,,
—–“স্যুপটা খেয়ে নাও মুহিত। এরপর নিচে যাবো।”
—–“না না এখন খাবো না। অনুষ্ঠান থেকে ফিরে এসো খাবো।”
—–“ততক্ষনে স্যুপটা ঠান্ডা হয়ে যাবে মুহিত। প্লিজ এক্টু খেয়ে নাও। নয়তো শরীরে শক্তি পাবে না।”
মুহিত নিরুপায় হয়ে তিন চামচ স্যুপ খেয়ে নিলো। এরপর রূপের হাত ধরে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। দুজনই গাঁয়ে হলুদের স্ট্যাজে চলে গেলো। মারু খুব সেজে গুজে স্টেইজে মৃন্ময়ের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। বাড়ির সবাই স্ট্যাজে উপস্থিত। সানায়া তো সেজে গুজে বিয়ে বাড়ি। দোলাকে দারুন লাগছে হলুদের সাজে। একেবারে চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়ার মতো।
রূপ আর মুহিতকে দেখে মারু আর মৃন্ময় এসে ওদের দুজনকে টেনে স্ট্যাইজে উঠিয়ে নিলো। এক এক করে সবাই দোলাকে হলুদ পড়ানো শুরু করল। মুহিত আর রূপ ও দোলাকে হলুদ পড়িয়ে এসেছে। এর মাঝেই মুহিতের আবারো মাথা ঘুড়ে এলো। মাথায় হাত দিয়ে মুহিত রূপকে নিয়ে স্টেইজ থেকে নেমে সোজা বাড়ির ভিতর ঢুকে নিজেদের রুমে চলে এলো।
রুমের দরজা আটকে মুহিত রূপকে নিয়ে বেডের উপর ধপ করে বসে পড়ল। রূপ চোখে, মুখে আতঙ্ক নিয়ে মুহিতের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,
—-“কি হয়েছে মুহিত?”
মুহিত মাথার চুল গুলো টানছে আর রূপকে উদ্দেশ্য করে বলছে,,,,,,,,
—–“রূপ আমার কেমন যেনো লাগছে। শরীরটা আবারো জ্বলছে।”
রূপ চোখে জল নিয়ে মুহিতকে বুকের মাঝে চেঁপে ধরে বলল,,,,,,,
—–“আমার জন্যই তোমার আজ এই অবস্থা মুহিত। এসবের জন্য আমিই দায়ী। টেনশান থেকে তোমার এমন হচ্ছে। সারাদিন কাজের চাপ, আমাকে নিয়ে ওভার টেনশান এসবের জন্যই তোমার শরীর জ্বালা করছে।”
আচমকাই মুহিত রূপের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে লাল দুটো চোখ নিয়ে নেশাখোরদের মতো রূপের দিকে তাকিয়ে আছে। এক প্রকার ঘোর লাগা দৃষ্টিতে। মুহিতের এমন অদ্ভুত দৃষ্টির সাথে রূপ নতুনভাবে পরিচিত হচ্ছে। মুহিত এক্টু এক্টু করে রূপের ঠোঁটের দিকে এগিয়ে এসে রূপকে এক্টা ধাক্কা দিয়ে বেডের উপর শুইয়ে দিলো। রূপ অবাক হয়ে মুহিতকে দেখছে। রূপ শারীরিক ভাবে অসুস্থ ছিলো বলে কবুল বলার তিন দিন পরে ও ওদের মধ্যে কিছু হয় নি। তবে আজকে মুহিতের দৃষ্টি অন্য রকম। রূপের বুঝা হয়ে গেছে আজ মুহিত রূপের কোনো বারণ শুনবে না। মুহিতের চোখে, মুখে হিংস্রতা দেখা যাচ্ছে। রূপ ভয়ে বার বার কেঁপে কেঁপে উঠছে। ওর সাথে কি হতে চলছে সে আদৌ বুঝতে পারছে না।
মুহিত রূপের একদম কাছাকাছি গিয়ে রূপের ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরল। রুডলি কিস করছে মুহিত রূপকে। এই কাছে আসায় রূপ ভালোবাসা খুঁজে পাচ্ছে না। হিংস্রতা খুঁজে পাচ্ছে। মুহিত হিংস্র জানোয়ারদের মতো আচরণ করছে। রূপের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। মুহিত কিছুতেই থামছে না। রূপকে আঘাত করেই যাচ্ছে। রূপ ও নিরুপায় হয়ে মেনে নিচ্ছে। এক্টু এক্টু করে মুহিতের হিংস্রতা বেড়ে চলছে। রূপ ও মুখ বুজে সব সহ্য করে নিচ্ছে।
ঘড়িতে মধ্যরাত তিনটা। মুহিত নাক টেনে ঘুমুচ্ছে। রূপ মুহিতের পাশে বসে হাঁটু গুজে কাঁদছে। এক প্রকার হেচকি তুলে কাঁদছে সে। পুরো শরীরে মুহিতের আচড়ের দাগ। শরীরের ব্যাথায় রূপ উঠে দাঁড়াতে পারছে না। মুহিতের এসব হিংস্র কর্মকান্ড রূপ মানতে পারছে না। মুহিতের দিকে তাকাতে ও তার রুচিতে বাঁধছে। এক প্রকার ঘৃণা জন্ম নিচ্ছে। কাঁদতে কাঁদতে রূপ ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। শরীরে ও শক্তি পাচ্ছে না। নিজেকে অপবিএ লাগছে। লম্বা এক্টা শাওয়ার নিতে ইচ্ছে করছে। তবে বসা থেকে উঠে দাঁড়াতে পারছে না সে। সামনে কদম বাড়ানোর শক্তিটা ও নেই।
প্রায় অনেকক্ষন কান্না কাটির পর রূপ ফ্লোরে পড়ে থাকা শাড়ীটা হাতে নিয়ে শাড়ীটা গাঁয়ে জড়িয়ে খুব কষ্টে বেড ছেড়ে নামল। নাক, মুখ খিঁচে রূপ আস্তে করে সামনে কদম বাড়ালো। এক পা দু পা করে হেঁটে রূপ ওয়াশরুমে গেলো। ওয়াশরুমের দরজাটা লাগিয়ে রূপ আয়নার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে কান্না জুড়ে দিলো। মুখের বেশ কয়েকটা জায়গায় বাইটের দাগ। পুরো শরীরে আচড়ের দাগ। দাগ গুলো থেকে রক্ত পড়ছে। এজন্যই রূপের পুরো শরীরটা জ্বালা করছিলো। ব্যাথায়, যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে রূপ। এই মুহূর্তে মরে যেতে ইচ্ছে করছে রূপের। মুহিতের এমন অমানবিক নির্যাতন রূপের ভালোবাসাটাকে মেরে দিচ্ছে। মুহিতের উপর থেকে আস্থা, বিশ্বাস, ভালোবাসা উঠে যাচ্ছে।
কোনো রকমে শাওয়ার নিয়ে রূপ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে কাঁপা কাঁপা শরীর নিয়ে বেডের উপর বসল। শীতে এক প্রকার কাঁপছে সে। সাথে পুরো শরীরটা ও ব্যাথায় অসার হয়ে আসছে। পানি লাগাতে কাটা জায়গা গুলো খুব জ্বলছে। রূপের এই মুহূর্তে বিশ্রাম দরকার। শরীরটাকে গরম করা ও দরকার।
মুহিতের পাশে শুয়ে রূপ একবার মুহিতের দিকে তাকালো। কেমন শান্ত হয়ে ঘুমুচ্ছে মুহিত। দিন দুনিয়ার খরব নেই ওর। শান্তির ঘুম ঘুমুচ্ছে সে। মুহিতের নাকে, মুখে, বুকে রূপের লিপস্টিকের লাল দাগ পড়ে আছে। মুহিতকে দেখে রূপের কান্না যেনো আরো দ্বিগুন বেড়ে গেলো। মুহিতের গাঁ থেকে কম্বলটা এক্টু টেনে এনে রূপ নিজের গাঁয়ে জড়িয়ে নিলো।
মুহিতের থেকে মুখ ফিরিয়ে উল্টো পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়ল রূপ। ঘুমানোর পরে ও রূপের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। চোখের জমানো পানি গুলো টুপটাপ করে ঝড়ছে। আজকের পর থেকে হয়তো রূপ মুহিতকে আর বিশ্বাস করতে পারবে না। আগের মতো ভালো ও বাসতে পারব না।
পরের দিন,,,,,,,,
#চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,
#চলবে,,,,,,,,
(খুব ব্যস্ততার মাঝে গল্পটা লিখেছি। জানি আজকের পর্ব তেমন গুছানো হয় নি। তাও দিলাম। অনেকে অপেক্ষায় থাকে তাই।)