এক আকাশ ভালোবাসি পর্ব শেষ

#এক_আকাশ_ভালোবাসি
#শেষ_পর্ব (প্রথমাংশ)
#নিশাত_জাহান_নিশি

—–“লুক ভাবী। সি ইজ রূপ। আমার প্রিয়তমা, আমার সহধর্মিণী, আমার অর্ধাঙ্গিনী। যাকে আমি এক আকাশ ভালোবাসি।”

রূপ টোটালী তব্দা লেগে কিছুক্ষন মুহিতের দিকে তাকাচ্ছে তো কিছুক্ষন অনিক এবং মেয়েটার দিকে তাকাচ্ছে। অনিক খুব হেসে রূপকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—–“কেমন আছেন ভাবী?”

রূপ আমতা আমতা করে বলল,,,,,,

—–“ভাভাভালো আছি।”

অনিকের পাশের মেয়েটা এক গাল হেসে বলল,,,,,,

—–“ভাবী আপনি এভাবে থেমে থেমে কথা বলছেন কেনো? নিশ্চয়ই খুব অবাক হচ্ছেন আমাকে আর অনিককে দেখে?”

রূপ জোর পূর্বক হাসি টেনে মাথা নাঁড়ালো। মুহিত রূপকে বুকের মাঝে ঝাপটে ধরে অনিকের দিকে তাকিয়ে রূপকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—–“রূপ…. গতকালই অনিক বিয়ে করেছে। পরিবারের পছন্দ অনুযায়ী ই ওদের বিয়েটা হয়েছে। ঐদিন নোয়াখালী থেকে ফেরার পর আন্টি আঙ্কেলকে অনেক বুঝিয়ে সঠিক পথে নিয়ে আসে। আন্টির জেদের কাছে আঙ্কেলকে হার মানতেই হলো। অনিক হসপিটাল থেকে রিলিজ পাওয়ার পর পরই আন্টি, আঙ্কেল আমাদের ভাবীকে পছন্দ করে অনিকের সাথে জোড়া মিলিয়ে দিলো। অনিক আমাকে এই মাএ সবটা বলল। মূলত আমাদের থেকে ক্ষমা চাওয়ার জন্যই অনিক কলটা করেছে।”

রূপ সবটা শুনে মৃদ্যু হেসে অনিককে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—–“ভাই…. শুধু আমার কাছে ক্ষমা চাইলে তো হবে না। মারু আর মৃন্ময় ভাইয়ের কাছে ও ক্ষমা চাইতে হবে।”

অনিক মলিন হেসে বলল,,,,,,

—–“কাল তো ঢাকা আসছি ই ভাবী। সামনা সামনি না হয় ক্ষমা চেয়ে নিবো। মুহিত কিন্তু আমাকে এবং জেসি কে দাওয়াত করেছে। আমরা কাল সকালের মধ্যেই ঢাকা আসছি।”

রূপ এক গাল হেসে বলল,,,,,,

—–“কেনো নয়? অবশ্যই আসবেন। আমরা কিন্তু ভাবী আর আপনার জন্য ওয়েট করব।”

এর মাঝেই বাড়ির ভিতর থেকে রূপের ডাক এলো। মায়া আহমেদ সেই কখন থেকে রূপকে ডেকেই যাচ্ছে। রূপ বেশ ব্যস্ত কন্ঠে অনিক আর জেসির দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—–“আমি এখন আসছি কেমন? কাল সরাসরি দেখা হবে। মা ডাকছে আমায়।”

রূপ আর দাঁড়ালো না। দ্রুত পায়ে হেঁটে বাড়ির ভিতর ঢুকে গেলো। মুহিত কিছুক্ষন অনিকের সাথে কথা বার্তা বলে ফোনটা কেটে কাজে ঝাঁপ দিলো। মৃন্ময় তো সেই কখন থেকে খেটেই মরছে। সাথে সাকিব ও হাতে হাত লাগিয়ে কাজ করছে।

রূপ রুমে ঢুকেই অবাক হয়ে গেলো। মারু আর দোলাকে হলুদ পাড়ের কাপড়ে দারুন লাগছে। সাজ টা ও সিম্পলের মধ্যে অনেক সুন্দর হয়েছে। খোঁপায় গাজরা ফুলে পুরোটা খোঁপা ঢাকা পড়ে আছে। গাঢ় কাজল, গাঢ় লিপস্টিক সব মিলিয়ে অনন্য লাগছে। মায়া আহমেদ এবার টেনে এনে রূপকে শাড়ি পড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। শাড়িটা সুন্দর করে পড়িয়ে উনি রূপকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে দিলো। একে একে উনি রূপকে কাজল, লিপস্টিক পড়িয়ে খোঁপাটা গাজরা দিয়ে সুন্দর করে বেঁধে দিলো। রূপ আয়নার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে খোঁপায় হাত দিয়ে খোঁপাটা ঠিক করছে। মায়া আহমেদ উনার তিন মেয়ের কপালে চুমো খেয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

বাড়ির সব ছেলেরা হলুদ পান্জ্ঞাবী পড়ে স্টেইজের কাজ কর্ম দেখছে। রূপ, মারু আর দোলা মিলে সানায়াকে এনে স্টেইজে বসিয়ে দিলো। মুহিত আর মৃন্ময় মিলে সাকিবকে অন্য পাশের স্টেইজে বসিয়ে দিলো। দুই ভাই বোনকে দুই স্টেইজে হলুদ পড়ানো হবে। মুহিত আর মৃন্ময় অনেকক্ষন ধরে উসখুস করছে রূপ আর মারুকে কাছে পেতে। তবে অসংখ্য কাজের প্যারা ওদের মনটাকে নাজেহাল করে ছাড়ছে। দোলার হাজবেন্ড তো অনুষ্ঠানে এসেই দোলার পিছনে ঘুড়ঘুড় করছে। দোলা কেবল মিটিমিটি হাসছে।

আদ্রিতার সাথে কিছু ক্ষন ফোনে কথা বলে সাকিবের হলুদ লাগানো শুরু হলো। ভিডিও কলে সবাই এক এক করে আদ্রিতাকে হলুদের সাজে দেখে নিয়েছে। আদ্রিতাকে দারুন লাগছে হলুদের সাজে। সাকিবের হলুদ পড়ানো শেষ হলে সবাই মিলে সানায়াকে হলুদ পড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। আদনান কিছুক্ষন আগে ভিডিও কলে সানায়ার সাথে কথা বলে নিয়েছে।

রূপ, মারু, মৃন্ময় আর মুহিত মিলে হলুদ খেলা শুরু করেছে। রূপ আর মারু মিলে বাড়ির সবাইকে হলুদ দিয়ে গোসল করিয়ে দিয়েছে। মুহিত আর মৃন্ময়কে ও আস্ত রাখে নি ওরা। পুরোপুরি হলুদ ভূত বানিয়ে ছেড়েছে। মৃন্ময় আর মুহিত ও তেড়ে এসে মারু আর রূপকে হলুদ দিয়ে কাক ভেজা করে দিয়েছে। এভাবেই হৈ, হুল্লোড়ে কেটে গেলো সারা রাত। এই রাতে কেউ ঘুমায় নি। বাড়ির সবাই মিলে জমিয়ে আড্ডা দিয়েছে। সব মুরুব্বিরা ও একসাথে ছিলো। মায়া আহমেদ কেবল টেনে টেনে উনার ছেলে আর মেয়েদের বুকে ঝাপটে ধরত। সানোয়ার আহমেদ এসব দৃশ্য চোখ ভরে দেখত আর হাসত।

বিয়ের দিন সকাল সকাল সবাই সানায়াকে রেডি করাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। দুপুর বারোটার মধ্যেই সানায়াকে বিদায় দেওয়া হবে। এগারোটায় বরযাএী চলে আসবে। তাই বাড়ির সবাই বেশ ব্যস্ত। এগারোটার মধ্যেই পার্লারের মেয়েরা সানায়াকে বউ সাজিয়ে চলে গেলো। এরই মাঝে অনিক এবং জেসি এসে মৃন্ময় আর মারুর থেকে ক্ষমা চেয়ে নিলো। মারু আর মৃন্ময় ও হাসি হাসি মুখে ওদের ক্ষমা করে দিলো। মিনা আর মেঘা খুব ব্যস্ত অনিক আর জেসিকে আপ্যায়ন করতে।

মায়া আহমেদ বেশ পেরেশান হয়ে বাড়ির ছেলে মেয়েদের জলদি জলদি রেডি হতে বলল। কিছুক্ষন বাদেই বাড়ির সবাই রেডি হয়ে স্টেইজে চলে এলো। ছেলেরা পড়েছে লাল পান্জ্ঞাবী আর মেয়েরা লাল শাড়ী। লাল শাড়িতে রূপ আর মারু ফুটে আছে। দুজনকেই লাল পরী লাগছে। মুহিত আর মৃন্ময় ওদের লাল পরীদের চোখে চোখে হারাচ্ছে।

এক্টু পরেই বরযাএী চলে আসবে। বাড়ির ছেলেরা গেইটের সামনে পায়চারী করছে। বরযাএীদের জন্য ওয়েট করছে। এর মধ্যেই আদনানের গাড়ি এসে বাড়ির গেইটের সামনে থামল। বরকে নিয়ে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ল। আদনানের সাথে মিসেস আয়রা আর মিম হাসিব ও এসেছে। চার চারটে গাড়ি ভর্তি বরযাএী এসেছে। সবাইকে প্রথমে খাইয়ে দাইয়ে এরপর বিয়ে শুরু হলো। কাজী সাহেব তিন কবুল পড়িয়ে বিয়েটা সম্পূর্ণ করল। বিয়ের পর পরই সানায়াকে বিদায় দিয়ে সবাই আদ্রিতাদের বাড়ি যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে গেলো। সবাই হাসি হাসি মুখে সানায়াকে বিদায় দিয়েছে। তবে সোহেলী আহমেদ খুব কেঁদেছে। উনার কান্না দেখে সানায়া ও এক্টু আধটু কেঁদেছে।

এখন সবার উদ্দেস্য আদ্রিতাদের বাড়ি যাওয়া। চারটে বড় গাড়িতে ও বাড়ির সবার জায়গা হচ্ছে না। সব গুলো গাড়িতেই খুব গাজাগাজি করে বসতে হয়েছে। মুহিতের কোলে রূপ, মৃন্ময়ের কোলে মারু, লিয়েনের কোলে দোলা আর অনিকের কোলে জেসি। আত্নীয় স্বজনে পুরো গাড়ি ভর্তি। মায়া আহমেদ, সোহেলী আহমেদ আর রেজাউল আহমেদ বাড়িতে রয়ে গেছে। শুধু সানোয়ার আহমেদ মুরুব্বি হিসেবে যাচ্ছে।

মুহিত কিছুক্ষন পর পর রূপের পেটে শুড়শুড়ি দিচ্ছে। সাথে সাথেই রূপ খিলখিলিয়ে হেসে দিচ্ছে। গাড়িতে উপস্থিত সবাই এক ভ্রু উঁচু করে মুহিত আর রূপের দিকে তাকাচ্ছে। মুহিতের এহেন কান্ডে রূপ প্রতিবারই লজ্জা পাচ্ছে। এরপর ও মুহিত ক্ষান্ত হচ্ছে না। রূপের পিঠে, ঘাড়ে, চুলে মুখ ডুবিয়ে দিচ্ছে। মৃন্ময় ও কিন্তু কম যায় না। মুহিতের মতো সে ও একই ভাবে খুনশুটি চালিয়ে যাচ্ছে। মাঝখান থেকে মারু মুখ বুজে সব সহ্য করে নিচ্ছে।

প্রায় আধ ঘন্টার মধ্যেই সবাই খুব হৈ- হুল্লোড়ে আদ্রিতাদের বাড়ি পৌঁছে গেলো। আদ্রিতাদের বাড়িটা ও খুব দারুন ভাবে সাজানো হয়েছে। ইয়া বড় এক গেইট, প্যান্ডেল। চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়ার মতো। গাড়ি থেকে সবাই নেমে একে একে প্যান্ডেলের ভিতর চলে এলো। আমজাদ চৌধুরী এবং উনার আত্নীয় স্বজনরা মিলে বরযাএীদের খুব আপ্যায়ন করে খাওয়ালো। এরপর তিন কবুল শেষে সবাই আদ্রিতাদের নিয়ে বিদায় পর্ব মিটিয়ে বাড়ি ফিরে এলো। মারজানা চৌধুরী খুব কেঁদেছে আদ্রিতার জন্য। আদ্রিতা ও ঢুকরে কেঁদেছে ওর পুরো পরিবারের জন্য।

বাড়িতে ফিরেই সবাই ফুলসজ্জার খাট সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। মৃন্ময়, মুহিত, লিয়েন আর অনিক মিলে সাকিবের ফুলসজ্জার খাট সাজাচ্ছে। ঐ দিকে আদনানের ফ্রেন্ড রা মিলে সানায়া আর আদনানের ফুলসজ্জার খাট সাজাচ্ছে। রাত দশটার দিকে সাকিব আর আদ্রিতাকে এক রুমে বন্ধি করে দেওয়া হলো। রূপ আর মারু মিলে বাহির থেকে রুমের দরজা আটকে দিলো। দুজনই রুমে ঢুকার সাথে মুহিত আর মৃন্ময় রোজকারের মতো ওদের রোমান্টিক অত্যাচার শুরু করল।

ঐদিকে সানায়া আর আদনানকে ও ওর ফ্রেন্ডরা মিলে রুম বন্ধি করে দিলো। দু জোড়া দম্পতি তাদের মধ্যকার পবিএ ভালোবাসায় নিজেদের বিলিয়ে দিলো।

,,
,,
,,,

কেটে গেলো আট আটটি মাস। আজ মারুর ডেলিভারী ডেইট। মারুর বিশ দিন পরেই রূপের ডেলিভারী ডেইট। সকাল থেকেই মারুর লেবার পেইন শুরু হয়েছে। ব্যাথায় যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে সে। মারুর পরিবার দুই দিন আগেই এসে মারুর সেবা যত্ন করছে। দোলা আর সানায়া ও চলে এসেছে। মায়া আহমেদ তো মারুর পাশ থেকে নড়ছেই না। সকাল, বিকেল মারুর আশেপাশে লেগে আছে। এই নয় মাসে উনি মারুর যেমন সেবা করেছে তেমনি দ্বিগুন বেশি রূপের সেবা করেছে। সারাক্ষন মারু আর রূপের পেছনে লেগে থেকেছে। মৃন্ময় আর মুহিতকে এক দিনের জন্য ও অফিস কামাতে দেয় নি উনি। দুই ববউকে উনি সব রকমের সেবা যত্ন করে গেছে। উনার মধ্যে ক্লান্তি জিনিস টা একদমই আসছে না। নামায, রোজা সব ঠিক রেখেছেন। সারাদিন পড়ে পড়ে বউদের সেবা ও করেছেন। মারুর চেয়ে রূপ বেশি জ্বালাতো মায়া আহমেদকে। ক্ষনে ক্ষনে রূপ বমি করে দিতো। বমি করতে করতে বেডের চাঁদর ভিজিয়ে দিতো। মায়া আহমেদ সব পরিষ্কার করে রূপকে বুকে আগলে নিতো।

রাতের পর রাত মুহিত নির্ঘুম থেকেছে। রূপকে কোলে তুলে পুরো রুমে পায়চারী করেছে। রূপের শরীর কিছুটা দুর্বল থাকায় রূপ বেশি ছটফট ছটফট করত। খাওয়া দাওয়া তেমন করতে পারত না। হাঁটা, চলা ও করতে পারত না। পাঁচ মাসে গিয়ে রূপ আর মারু দুজনই আলট্রাসনো করে এসেছে। মারুর ছেলে হবে। আর রূপের মেয়ে। পুরো বাড়িতে আনন্দ উৎসবের রোল পড়ে গিয়েছিলো।

আট মাস পাড় হয়ে আজ মারুর ডেলিভারির ডেইট ঘনিয়ে এসেছে। মৃন্ময় খুব ভয়ে আছে। মারু শেষ পর্যন্ত স্ট্রাগল করে বেঁচে ফিরতে পারবে কিনা তা নিয়ে সে সংশয়ে আছে। ডক্টর রা বলে দিয়েছে মারুর নরমাল ডেলিভারী ই হবে। তাই বাড়ির সবাই চাইছে ডক্টরের কথা মতো নরমাল ডেলিভারী করতে।

মারুর রুমে বাড়ির সব মুরুব্বি মহিলারা গোল হয়ে বসে আছে। মায়া আহমেদ আর মাইমুনা আহমেদ মারুর দুই পাশে বসে আছে। ওরা একনাগাড়ে মারুর মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছে। মারু ব্যাথায় কাতরাচ্ছে আর জোরে জোরে চিৎকার করে কাঁদছে। মৃন্ময় দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে ভয়ে ঘামছে আর আল্লাহ্ কে ডাকছে। মুহিত কিছুক্ষন পর পর এসে মৃন্ময়কে ঝাঁকিয়ে সাহস যোগাচ্ছে। মৃন্ময় মলিন হেসে মুহিতের দিকে তাকাচ্ছে। রূপ রুমে বসে আদ্রিতার সাথে কথা বলছে। মুহিত আদ্রিতাকে রূপের কাছে রেখে এসেছে। আদ্রিতা ও প্র্যাগনেন্ট। তিন মাস চলছে ওর বাবুর।

রূপ মারুর কথা ভেবে ভয়ে কাঁপছে আর চোখের জল ছাড়ছে। পেটে বার বার হাত বুলিয়ে রূপ আদ্রিতার দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলছে,,,,,,,,

—–“মামামারুর খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না আদ্রিতা?”

আদ্রিতা মলিন হেসে রূপের হাত ধরে বলল,,,,,,

—–“এমন এক্টু আধটু কষ্ট হবেই। তুমি এ নিয়ে ভয় পেও না প্লিজ।”

রূপ মাথা নাঁড়ালো। এর মাঝেই মুহিত রুমে ঢুকল। মুহিতকে দেখে আদ্রিতা রুম থেকে বের হয়ে গেলো। মুহিত রূপের চোখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রূপের পাশে বসে রূপকে বুকের মাঝে চেঁপে ধরে বলল,,,,,,,,

—–“বোকা মেয়ে! কাঁদছ কেনো? এতো ভয় পেলে হবে?”

রূপ চোখের জল ছেড়ে মুহিতের শার্ট আঁকড়ে ধরে মিনমিনিয়ে বলল,,,,,,,

—–“আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে চাই না মুহিত। আমার নতুন মা কে ছেড়ে ও না। তোমরা দুজনই আমার জীবনের পার্ট এন্ড পার্সেল। কেনো জানি না বার বার মনে হচ্ছে আমি বাঁচব না। হয়তো মরে যাবো। মেয়েটাকে দেখার সৌভাগ্য ও হবে না।”

আচমকাই মুহিত রূপকে ছেড়ে বেড থেকে নেমে ডেস্কের উপর থেকে ফুলের টব টা হাতে নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় ছুড়ে মেরে চোখ লাল করে জোরে চেঁচিয়ে বলে উঠল,,,,,,,

—–“আই হেইট ইউ রূপ। আই রিয়েলি হেইট ইউ। বাড়ি থেকে বের হয়ে যাচ্ছি আমি আর কখনো ফিরব না।”

কথাগুলো বলেই মুহিত শো শো বেগে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। রূপ মাথায় হাত দিয়ে ঢুকড়ে কেঁদে দিলো। তাড়াহুড়ো করে রূপ কান্না থামিয়ে বসা থেকে উঠে জানালার সামনে দাঁড়িয়ে বাড়ির গার্ডেনের দিকে তাকালো। মুহিত গাড়ি নিয়ে অলরেডি বের হয়ে যাচ্ছে। রূপ জানালার গ্রীল ধরে কাঁদছে আর বলছে,,,,,,,,

—–“আমার সামন্য এক্টু কথায় তুমি এতোটা রাগ করবে আমি বুঝতে পারি নি মুহিত। আমি তো আমার মনের ভয়টা তোমাকে জাস্ট শেয়ার করলাম। আর তুমি কিনা……..

প্রায় অনেকক্ষন কান্না কাটির পর রূপ চোখের জল মুছে কিছুটা শান্ত হয়ে বলল,,,,,,

—–“তুমি যদি সত্যিই আমাকে ভালোবেসে থাকো তবে আজ রাতেই তুমি বাড়ি ফিরবে। আমি তোমার অপেক্ষায় থাকব।”

,
,

সন্ধ্যার দিকে মারুর ছেলে বাবু ভূমিষ্ঠ হলো। মৃন্ময় এতক্ষনে হাফ ছেড়ে বাঁচল। মায়া আহমেদ চোখের জল ছেড়ে উনার নাতনীকে আদরে আদরে ভরিয়ে দিচ্ছে। মারু সেন্সলেস হয়ে পড়ে আছে। বাড়ির বাকিরা এক এক করে বাবুকে কোলে নিচ্ছে। সানোয়ার আহমেদ বাবুকে ঠিকভাবে কোলে নিতে পারছে না। এরপরে ও চেষ্টা করছে। মৃন্ময় এক প্রকার কাড়াকাড়ি করে ওর ছেলেকে কোলে নিলো। চোখের জল ছেড়ে মৃন্ময় ওর ছেলেকে চুমো খাচ্ছে।

প্রায় অনেকক্ষন পরে মারুর সেন্স ফিরল। সেন্স ফেরার সাথে সাথেই ওর কানে বাবুর চিৎকারের আওয়াজ ভেসে আসল। মৃন্ময় এসে মারুর পাশে বাবুকে শুইয়ে দিলো। মারু মৃদ্যু হেসে বাবুকে স্তন পান করাচ্ছে। মৃন্ময় এক দৃষ্টিতে মারু আর ওর বাবুর দিকে তাকিয়ে আছে। এক এক করে সবাই রুম থেকে বের হয়ে গেলো। বাবুকে খাওয়ানোর পরই মারুকে ফ্রেশ করানো হবে। সেই সুযোগে মৃন্ময় ও ওর ছেলে আর বউকে দেখে নিচ্ছে।

সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত ঘনিয়ে এলো। রূপ ধীর পায়ে হেঁটে মারুর ছেলেকে দেখে এলো। মায়া আহমেদ রূপকে ধরে ধরে আবার রুমে নিয়েগেলো। রূপকে বেডের উপর বসিয়ে মায়া আহমেদ বেশ সিরিয়াস হয়ে রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—–“কি রে রূপ। মুহিতকে দেখছি না। মুহিত কোথায়?”

রূপ নিচের দিকে তাকিয়ে চোখের জল ছেড়ে বলল,,,,,,,

—–“তোমার ছেলে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে মা। আমার কলটা পর্যন্ত পিক করছে না।”

—–“মানে? কি বলছিস এসব?”

—–“ঠিকই বলছি মা। তোমার ছেলে আমার সাথে রাগ করে কোথাও এক্টা চলে গেছে। যাওয়ার আগে বলে গেছে আমার কাছে আর ফিরবে না।”

মায়া আহমেদ মলিন হেসে রূপের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,,,,,,,

—–“কাঁদিস না পাগলী। আমার ছেলে ঠিক ফিরবে। আজ রাতেই ফিরবে। তোকে ছাড়া আমার ছেলে বেশিক্ষন থাকতে পারবে না। তুই খামোখা কষ্ট পাচ্ছিস। তোকে ভয় দেখানোর জন্য মুহিত এসব করছে বুঝেছিস?”

রূপ ছলছল চোখে মায়া আহমেদের দিকে তাকিয়ে আছে। মায়া আহমেদ রূপের চোখের জল মুছে দিয়ে রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—–“সকাল থেকে কিছুই খাস নি। মা তোর জন্য খাবার নিয়ে আসছি। তুই এক্টু বস কেমন?”

রূপ মাথা নাঁড়ালো। মায়া আহমেদ রুম থেকে বের হয়ে সোজা কিচেনে চলে গেলো। রূপ আবারো বালিশের তলা থেকে ফোনটা বের করে এক নাগাড়ে মুহিতের নাম্বারে কল করে যাচ্ছে। অথচ মুহিত কিছুতেই কলটা পিক করছে না। উল্টো কেটে দিচ্ছে। রূপ কিছুতেই হার ছাড়ছে না। একের পর এক কল করেই যাচ্ছে। বেশ কিছুক্ষন পর মায়া আহমেদ হাতে করে খাবারের প্লেইট এনে রূপকে খুব যত্ন করে খাইয়ে দিয়ে প্লেইটটা ডেস্কের উপর রেখে রূপকে একেবারে ঘুম পাড়িয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। রূপ মাথা থেকে সব চিন্তা ঝেড়ে নিশ্চিন্তে ঘুম দিলো।

মাঝরাতে আচমকাই রূপ কেমন কেঁপে কেঁপে উঠল। মনে হচ্ছে সে ঠোঁট জোড়া নাঁড়াতে পারছে না। কেউ ঠোঁটে কামড় দিয়ে রেখেছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে। রূপ এক ঝটকায় চোখ খুলে সামনের দিকে তাকালো। সাথে সাথেই মুহিতের মুখটা ভেসে উঠল। মুহিত রূপের ঠোঁটে হালকা করে কামড় দিয়ে রেখেছে। আর চোখ থেকে পানি গড়গড়িয়ে পড়ছে। মুহিতকে দুই হাত দিয়ে ঝাঁকিয়ে রূপ মিনমিন করে বলল,,,,,,,,,

—-“ঠোঁট ছাড়ো মুহিত। আমার ব্যাথা লাগছে।”

সাথে সাথেই মুহিত রূপের ঠোঁট জোড়া ছেড়ে রূপের বুকে মাথা রেখে ফুফিয়ে ফুফিয়ে কেঁদে বলল,,,,,,,

—–“আর কখনো বলবে আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা?”

রূপ মুহিতের মাথায় হাত বুলিয়ে মুহিতের কপালে চুমো খেয়ে বলল,,,,,,,,

—–“বলব না। সত্যি বলছি আর কখনো বলব না।”

—-“এবার গেলে কিন্তু আর ফিরব না।”

—-“যেতে দিলে তো? আর কোত্থাও যেতে দিবো না তোমাকে!”

—–“আমি ও তোমাকে ছেড়ে আর কোথাও যাবো না রূপ।”

রূপ কিছুটা অভিমানী সুরে মুহিতের মাথায় বিলি কেটে বলল,,,,,,

—–“তা কোথায় গিয়েছিলেন আপনি আমাকে ছেড়ে?”

মুহিত নাক টেনে বলল,,,,,,,,

—–“অফিসে ছিলাম।”

—–“ইচ্ছে করে আমার কল গুলো কেটেছ তাই না?’

মুহিত অপরাধীর মতো মাথা নাঁড়ালো। রূপ একগাল হেসে মুহিতের মাথায় চুমো খেয়ে বলল,,,,,,

—–“সেই তো ফিরেই এলে। এতো রাগ দেখানোর কি ছিলো?”

—–“এটা আমার জামাইগত অধিকার বুঝলে?”

রূপ হু হা করে হেসে বলল,,,,,,,

—–“আচ্ছা বুঝলাম।”

রূপ কিছুটা থেমে আবার বলল,,,,,,,

—–“বাবুকে দেখেছ?”

—-“হুম এই মাএ দেখে এলাম। পুরোপুরি ভাবীর মতো হয়েছে।”

—-“হুম। আমার মেয়ে ও আমার মতোই হবে দেখে নিও।”

——“আমি ও তাই চাই।”

মুহিত খুব আরাম করে রূপের বুকে মাথা রেখে বলল,,,,,,,,

—–“হুম এবার ঘুমাও। অনেক রাত হয়েছে।”

মুহিতকে আঁকড়ে ধরে রূপ চোখ জোড়া বুজে ফেলল। মুহিত তো অলরেডি ঘুমিয়েই পড়েছে।

,
,,
,,,

কেটে গেলো আরো উনিশ দিন। রূপের ডেলিভারী ডেইট ঘনিয়ে এসেছে। রাত দশটায় এসে মায়া আহমেদ রূপের পাশে বসল। উনার হাতে কয়েকটা গয়নার বক্স। মুহিত স্টাডি রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। মায়া আহমেদের মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রূপ। কারণ উনার চেহারাটা কেমন নূরানী আলোতে ফুটে উঠেছে। পুরো শরীরটা হিজাব দিয়ে ঢেকে রেখেছে উনি। রূপের হাত ধরে মায়া আহমেদ রূপের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“রূপ সত্যি করে এক্টা কথা বলবি?”

রূপ মায়া আহমেদের হাত ধরে মলিন হেসে বলল,,,,

—–“বলব মা। বলো কি কথা?”

—–“তুই আমাকে সত্যি মাফ করেছিস তো?”

রূপ মায়া আহমেদের বুকে মাথা রেখে বলল,,,,,,

—–“সেই কবেই আমি তোমাকে মন থেকে মাফ করে দিয়েছি মা। তুমি আমার কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা। যাকে আমি খুব খুব খুব ভালোবাসি।”

মায়া আহমেদ চোখের জল আড়াল করে গয়নার বক্স থেকে এক্টা স্বর্ণের ছোট আংটি বের করে রূপের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,,,,,,

—–“এই আংটি টা আমার নাতনীর জন্য। সবসময় হাতে পড়িয়ে রাখবি। আর বলবি এটা ওর দাদু দিয়েছে। কক্ষনো যেনো হাত থেকে না খুলে। সবসময় যেনো আগলে রাখে।”

রূপ অবাক দৃষ্টিতে মায়া আহমেদের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—–“তোমার নাতনী তো এখনো ভূমিষ্ঠ হয় নি মা। আংটি টা রেখে দাও। তুমি নিজেই তোমার নাতনীর হাতে পড়িয়ে দিও।”

মায়া আহমেদ বসা থেকে উঠে দরজার দিকে পা বাড়াচ্ছে আর বলছে,,,,,,,,

—–“বাকি দুটো গয়নার বক্স তোর। সবসময় নিজের কাছে আগলে রাখবি। মারুকে ও দুটো গয়নার বক্স দিয়ে এসেছি। মুহিতের থেকে ও ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি। তোরা সবাই আমাকে ক্ষমা করে দিস মা। জীবনের অনেক কিছুই হয়তো দেখা হবে না। তার মধ্যে তোর মেয়েটা অন্যতম। যদি আমি না থাকি, আমার অনুপস্থিতিতে এ বাড়ির সব দায়িত্ব তোর আর মারুর থাকবে। তোরা আমার পরিবারটাকে সামলে রাখিস মা।”

কথাগুলো বলেই মায়া আহমেদ শো শো বেগে নিজের রুমে চলে গেলো। রূপ ব্যাপারটা আমলে না নিয়ে গয়না গুলো আলমারিতে গুছিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষন পর মুহিত এসে রূপের পাশে শুয়ে পড়ল। মায়া আহমেদ রুমে ঢুকে এই প্রথম নিজ থেকে সানোয়ার আহমেদকে বুকের মাঝে ঝাপটে ধরে ঘুমিয়ে পড়ল।

ভোর পাঁচটা থেকেই রূপের পেইন শুরু হয়েছে। ব্যাথায় সে নাক, মুখ খিঁচে রেখেছে। মুহিতের ঘুম ভেঙ্গে যাবে বলে সে চিৎকার করছে না। সারা রাত নির্ঘুম থেকে মুহিত সবে মাএ ঘুমিয়েছে। তাই রূপ মুহিতকে জাগাতে চাইছে না। প্রায় এক ঘন্টা যাবত রূপ অর্নগল ব্যাথা সহ্য করে গেছে। ব্যাথায় আর টিকতে না পেরে রূপ এবার চিৎকার জুড়ে দিলো। সাথে সাথেই মুহিত ধরফরিয়ে ঘুম থেকে উঠে রূপের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,,,,,,

—–“কি হয়েছে রূপ? কাঁদছ কেনো?”

—–“মা কে ডাকো। আমার লেবার পেইন হচ্ছে।”

মুহিত তাড়াতাড়ি বসা থেকে উঠে রুম থেকে বের হয়ে দৌঁড়ে মায়া আহমেদের রুমের দরজা ধাকাচ্ছে আর জোরে চেঁচিয়ে বলছে,,,,,,,,

—–“আম্মু…..দরজা খোলো। রূপের লেবার পেইন শুরু হয়েছে।”

দু, তিনটে ডাক দেওয়ার পর সানোয়ার আহমেদ চোখ খুলে দ্রুত পায়ে হেঁটে এসে রুমের দরজা খুলে দিলো। মুহিত রুমে ঢুকে মায়া আহমেদকে ঝাকাচ্ছে আর বলছে,,,,,,,

—–“আম্মু শুনছ। রূপ তোমাকে ডাকছে। ওর ব্যাথা উঠেছে।”

অনেকক্ষন ঝাঁকানোর পরে ও মায়া আহমেদ টু শব্দ করছে না। চোখ খুলে ও তাকাচ্ছে না। সানোয়ার আহমেদ বেশ পেরেশান হয়ে মায়া আহমেদের পাশে বসে নাকে আঙ্গুল ঠেঁকিয়ে দেখল উনার শ্বাস নিশ্বাস পড়ছে না। উনি তাড়াহুড়ো করে মায়া আহমেদের বুকে মাথা রেখে হার্টবিট চেইক করে দুই মিনিট চুপ করে থেকে চোখ জোড়া বুজে মৃদ্যু চিৎকার দিয়ে বলল,,,,,,,

—–“তোমার মা আর নেই মুহিত। চলে গেছে আমাদের ছেড়ে।”

সাথে সাথেই মুহিত থম মেরে গেলো। পাশের রুম থেকে রূপের বুক ফাঁটা চিৎকার ও ওর কান অব্দি পৌঁছাচ্ছে না। সানোয়ার আহমেদ এখনো মায়া আহমেদের বুকে মাথা ঠেকিয়ে চুপ করে আছে। এক প্রকার বোবা হয়ে গেছে উনি। উনি কাঁদছে ও হাসছে ও না। কেমন জনাজীর্ণ হয়ে আছে। রূপের চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে মৃন্ময় দৌঁড়ে রূপদের রুমে চলে গেলো। মৃন্ময়ের পিছু পিছু সাকিব, আদ্রিতা, সোহেলী আহমেদ আর রেজাউল আহমেদ ও ছুটল। সানায়া আর দোলা শ্বশুড় বাড়িতে। দুই দিন আগে ওরা শ্বশুড় বাড়ি ফিরেছে। মারু ওর ছেলেকে নিয়ে পেরেশান আছে। দুইদিন ধরে ওর ছেলে ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করছে না। সারাক্ষন শুধু কান্নাকাটি করে। তাই মারু চেয়ে ও রুম থেকে বের হতে পারছে না।

মৃন্ময় রুমে ঢুকেই দেখল রূপ ব্যাথায় চোখ, মুখ উল্টে ফেলছে। সাংঘাতিক খারাপ অবস্থা ওর। আদ্রিতা আর সোহেলী আহমেদ রূপের পাশে বসে রূপের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,,,,,,,

—–“মুহিত কোথায় রূপ?”

রূপ গলা জড়ানো কন্ঠে বলল,,,,,,,

—–“মুহিত সেই কখন মায়ের কাছে গেছে কিন্তু এখনো ফিরছে না। প্লিজ তোমরা এক্টু মা আর মুহিতকে ডেকে আনো।”

মৃন্ময় আর সাকিব দৌঁড়ে গেলো মায়া আহমেদের রুমে। রুমে ঢুকেই ওরা অবাক হয়ে সানোয়ার আহমেদ আর মুহিতের দিকে তাকিয়ে আছে। সানোয়ার আহমেদ মায়া আহমেদের বুকে মাথা ঠেকিয়ে রেখেছে আর মুহিত সোজা হয়ে বসে এক দৃষ্টিতে মায়া আহমেদের দিকে তাকিয়ে আছে। মৃন্ময় ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে মুহিতকে ঝাঁকিয়ে বলল,,,,,,

——“কি রে। কি হয়েছে? তোরা এভাবে বসে আছিস কেনো? ঐ দিকে রূপের অবস্থা ক্রমাগত খারাপের দিকে যাচ্ছে।”

অনেক ঝাঁকানোর পর মুহিতের সম্মতি ফিরল। মুহিতের চোখের কোনে পানি চিকিচিক করছে। মুহিত করুন চোখে মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—–“ভাই….. আমাদের মা আর পৃথিবীতে নেই। আমরা এতিম হয়ে গেলাম।”

মৃন্ময়ের বুকটা কেমন কেঁপে উঠল। অজান্তেই ওর হেচকি উঠে চোখ দিয়ে গড়গড়িয়ে পানি পড়া শুরু করল। সাকিব দৌঁড়ে গিয়ে রূপদের রুমে ঢুকে গলা জড়ানো কন্ঠে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

—–“তোমরা সবাই এখানে কি করছ? সবাই জেঠি মনির রুমে চলো। আমার জেঠিমনি আর নেই।”

সাকিবের কথা শুনে রূপের চিৎকারের আওয়াজ যেনো আরো দ্বিগুন বেড়ে গেলো। রুমের সবাই কাঁদতে কাঁদতে মায়া আহমেদের রুমে চলে গেলো। রূপ বুক ফাঁটা চিৎকার করছে আর বলছে,,,,,,,

—–“এটা কি হলো মা? তুমি এতো সহজে আমাকে ছেড়ে চলে গেলে? তাহলে কি এতো দিন ধরে মৃত্যুর আজরাইল ই তোমাকে তাড়া করছিলো? এজন্যই তুমি ঐসব হেয়ালী কথা বার্তা বলতে। এজন্যই আমাদের সবার থেকে তুমি ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলে? সংসারের সব দায়িত্ব আমাকে আর মারুকে দিয়েছিলে। আমাদের মিলে মিশে থাকতে বলেছিলে। তুমি তো আমাদের কাঙ্গাল করে চলে গেলে মা। আমরা তোমার মায়া ভুলব কি করে?”

রূপ কয়েকটা ঢোক গিলে আবার বলল,,,,,,

—–“আমার বাচ্চাটা ভীষণ অভাগা মা। দাদুর আদর পেলো না। দাদুকে কাছ থেকে এক্টিবার দেখার সুযোগ ও পেলো না। আমার সন্তানকে না দেখেই তুমি চলে গেলে মা? আমি যে আবারো এতিম হয়ে গেলাম মা। তোমাকে পেয়ে মায়ের যন্ত্রনা ভুলে গেছিলাম। এখন থেকে সেই যন্ত্রনা আবারো আমাকে তাড়া করবে। আমার মুহিতটা ও এতিম হয়ে গেলো। আমরা তোমাকে ছাড়া কিভাবে থাকব মা কিভাবে?”

কথা গুলো বলেই রূপ কাতরাতে কাতরাতে সেন্সলেস হয়ে গেলো। সেই সেন্স ফিরল রূপের হসপিটালের বেডে। পাশেই ওর নবজাতক মেয়েটা কেঁদে কেটে যাচ্ছে। মুহিত ওর মেয়েকে কোলে নিয়ে রূপের মাথার পাশে বসে আছে। পড়নে ওর সাদা পান্জ্ঞাবি। চোখ দুটো লাল হয়ে ফুলে আছে। মুখে কোনো হাসির রেখা নেই। আছে শুধু বিষাদের ছাপ। রূপ বেশ বুঝতে পেরেছে মায়া আহমেদের শোকে মুহিতের এই অবস্থা। রূপের চোখ থেকে ও টলটলিয়ে পানি পড়ছে। রূপ শোয়া থেকে মুহিতের গালে হাত রাখার সাথে সাথেই মুহিত রূপকে বুকের মাঝে চেঁপে ধরে ঢুকড়ে কেঁদে বলে উঠল,,,,,,,

—–“আমার মা কে এই মাএ দাফন করে এলাম রূপ। এই দুই হাতে মাটির নিচে শুইয়ে এসেছি। কি নিষ্পাপ লাগছিলো আমার মা কে। যাকে বলে নূরানী চেহারা। বেশি ক্ষন তাকিয়ে থাকতে পারি নি আমার মায়ের দিকে। এই যে, আমার কোলে থাকা মা টা আমাকে খুব ডাকছিলো। তাই এক মা কে ছেড়ে আরেক মায়ের কাছে ছুটে চলে এলাম। আমার ভিতরটায় কেমন চিনচিনে ব্যাথা করছে রূপ। মাতৃ শোকে এতো জ্বালা এই নিয়ে দুইবার সেই জ্বালা ভোগ করছি। আল্লাহ্ আমার মা করে এতো তাড়াতাড়ি নিয়ে গেলো! বিশ্বাস ই করতে পারছি না। মা কে ছাড়া আমরা সবাই অসম্পূর্ণ। পুরো বাড়িটা নরক হয়ে গেছে রূপ। দোলা আপু আর সানায়া বার বার কাঁদতে কাঁদতে সেন্সলেস হয়ে যাচ্ছে। মারু ভাবী কেমন নীরব হয়ে গেছে। বাবুকে খাওয়াচ্ছে না পর্যন্ত। আব্বু আর মৃন্ময় বাি শোকে পাথর হয়ে গেছে। ওদের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। পুরো বাড়িটা বিষাদে ছেঁয়ে গেছে। আমরা মা কে ছাড়া কিভাবে থাকব রূপ?”

রূপ চোখে অসংখ্য জল নিয়ে ওর মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে মুহিতকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—–“এই যে কোলে নিয়ে রেখেছ তোমার মা। এই মা কে নিয়ে তুমি বাঁচবে। যাওয়ার সময় মা এই পরীটাকে আমাদের কাছে ছেড়ে গেছে। ওকে অবলম্বন করেই আমরা বাঁচব। মা উপর থেকে তাকিয়ে তাকিয়ে সব দেখবে আর হাসবে।”

মুহিত অশ্রুসিক্ত চোখে ওর মেয়ের দিকে তাকিয়ে আদরে আদরে ওর মেয়েকে ভরিয়ে দিচ্ছে আর বলছে,,,,,,,,

—–“ভালোবাসি মা। বাবা সবসময় তোমাকে এইভাবে ভালোবেসে যাবো। যতোটা ভালো আমি আমার ঐ মাকে বেসেছি। তোমার মাঝেই আমি আমার ঐ মায়ের প্রতিচ্ছবি দেখতে চাই।”

রূপ মলিন হেসে মুহিত আর ওর মেয়েকে ঝাপটে ধরল।
#এক_আকাশ_ভালোবাসি
#শেষ_পর্ব (শেষাংশ)
#নিশাত_জাহান_নিশি

রূপ মলিন হেসে মুহিত আর ওর মেয়েকে ঝাপটে ধরল।



”’

দীর্ঘ দশ বছর পর,,,,,,

একজন মহিলা রাগে কটকট করতে করতে এক্টা ছোট ছেলের হাত ধরে রূপদের বাড়ির ড্রইং রুমে ঢুকে পড়ল। উনার বাম হাতে স্কুলের ব্যাগ আর ডান হাতে বাচ্চা ছেলেটা। ছেলেটা একনাগাড়ে চোখ কচলাচ্ছে আর কাঁদছে। মহিলাটি ছোট ছেলেটার দিকে একবার তাকিয়ে জোরে চেঁচিয়ে ড্রইং রুমের এদিক সেদিক তাকিয়ে বলল,,,,,,,,,

—–“বাড়িতে কি কেউ নেই? রূপ আপনি কোথায়? আপনার গুনধর মেয়ে কি করেছে এক্টু শুনে যান।”

মহিলার গলার আওয়াজ পেয়ে মারু কিচেন রুম থেকে দৌঁড়ে এলো। আঁচলে হাত মুছতে মুছতে মারু বেশ ব্যস্ত ভঙ্গিতে মহিলাটির মুখোমুখি দাঁড়ালো। মলিন হেসে মারু মহিলাটিকে দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—–“কি হয়েছে শালিনী?”

মিসেস শালিনী কিছু বলার আগেই বাচ্চাটা কেঁদে কেটে বলে উঠল,,,,,,,

—–“আম্মু আম্মু। এই আন্টির ছেলে ইয়াদ ও আমাকে মেরেছে। রোশনী আর ইয়াদ মিলে আমাকে খুব মেরেছে।”

মারু মুহূর্তেই ভ্রু যুগল কুঁচকে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—–“কি বললে অথৈ? রোশনী আর ইয়াদ তোমাকে মেরেছে?”

—–“হুম আন্টি। ওরা আমাকে খুব মেরেছে।”

মিসেস শালিনী মারুর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—–‘দেখলেন তো ভাবী। ওরা দুই ভাই বোন মিলে আমার ছেলেটাকে কিভাবে মেরেছে? আমি কিন্তু এর বিচার চাই ভাবী। প্লিজ আপনি বাচ্চাদের সহ রূপকে ডেকে আনুন।”

মারু মলিন হেসে শালিনীর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

—–‘আমার ছেলে মেয়েরা কিন্তু অকারনে কাউকে মারে না ভাবী। নিশ্চয়ই কোনো কারণ ছিলো। যাই হোক আমি ওদের ডেকে দিচ্ছি। আপনারা বসুন।”

মারু সিঁড়ি বেয়ে রূপদের রুমের দিকে পা বাড়াচ্ছে। এক্টা পুচকো ছেলে উপর তলার রুম থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে নিচের সব কর্মকান্ড দেখছিলো। তাৎক্ষনিক ছেলেটা দৌঁড়ে স্টাডি রুমের দিকে পা বাড়ালো। স্টাডি রুমে ঢুকেই ছেলেটা পড়ার টেবিলে বসে থাকা রোশনী আর ইয়াদকে উদ্দেশ্য করে জোরে চেঁচিয়ে বলল,,,,,,,

——“ভাইয়া, আপু তোমরা দুজনই লুকিয়ে পড়ো। অথৈ ভাইয়া শালিনী আন্টিকে নিয়ে বাড়ি বয়ে বিচার দিতে এসেছে। বড় চাচী মনির কাছে তোমাদের নামে নালিশ দিয়েছে। রূপ মনির কানে কথাটা গেলেই উনি তোমাদের দুজনকে মেরে ভর্তা করে ফেলবে।’

ইয়াদ কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে রোশনীর দিকে তাকালো। রোশনী পুচকে ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে মিনমিন করে বলল,,,,,,

—–“এই সুবাহ। তুই ও রুমে ঢুকে পড়। চল তিনজন মিলে লুকিয়ে পড়ি। সবাই ভাববে আমরা তিনজনই বাইরে খেলতে গেছি।”

সুবাহ তাড়াহুড়ো করে রুমে ঢুকে পড়ল। তিনজনই স্টাডি রুমের টেবিলের নিচে ঘাপটি মেরে বসে পড়ল। কেউ এক্টা টু শব্দ ও করছে না। রোশনী মুখে হাত দিয়ে খুব মিনমিন করে ইয়াদ আর সুবাহকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—–“ইসসস দাদাভাই ও আজ বাড়িতে নেই। আমাদের কে বাঁচাবে বল তো? আমি সিউর আম্মু আজ আমাদের খুঁজে বের করে খুব মারবে।”

রোশনী মুখে এক্টা ভেংচি কেটে আবার বলল,,,,,,

—-“ধ্যাত এটা কোনো ব্যাপার ই না। বাবাই এলেই আমি আম্মুর নামে নালিশ দিবো। দেখবে বাবাই আম্মুকে খুব বকবে।”

ইয়াদ রোশনীর মাথায় গাড্ডা মেরে বলল,,,,,,,

—–“এই তুই চুপ থাক। বেশি পাকাস না। ধরা খেলে রক্ষে থাকবে না।”

রোশনী ইয়াদকে ভেংচি কেটে সুবাহকে ঝাপটে ধরে বলল,,,,,,,

—-“তুই হচ্ছিস আমার লক্ষি ভাই বুঝেছিস? তুই না একদম আদ্রিতা চাচীমনির মতো হয়েছিস। খুব শান্ত শিষ্ট।”

বিনিময়ে সুবাহ মুচকি হেসে রোশনীকে ঝাপটে ধরল। ইয়াদ কোঁমড়ে হাত দিয়ে রোশনীর বেনুনি টেনে বলল,,,,,,

—–“তার মানে আমি অশান্ত? তুই এটাই মিন করতে চাইছিস?”

রোশনী নাক, মুখ কুঁচকে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—–“আমি কিছুই মিন করতে চাইছি না ভাইয়া। প্লিজ চুপ করো। নয়তো আমরা ধরা পড়ে যাবো।”

রোশনীর কথায় সবাই চুপ হয়ে গেলো। নিশব্দে সবাই টেবিলের তলায় থম মেরে বসে আছে।

,
,,
,,,

মারু রূপের রুমে ঢুকে এদিক সেদিক তাকিয়ে রূপকে খুঁজছে। বেডের উপর রূপের দুই বছরের ছেলে রনিত হাত, পা ছুড়ে খেলছে আর খিলখিল করে হাসছে। ওয়াশরুম থেকে পানি ছাড়ার আওয়াজ শুনা যাচ্ছে। মারু বেশ বুঝতে পেরেছে রূপ ওয়াশরুমে আছে। রনিতের পাশে বসে মারু রনিতের চোখে, মুখে চুমো খেয়ে রনিতের সাথে আহ্লাদি স্বরে নানা রকমের কথা বলছে। আর রনিত বাবুটা খিলখিল করে হাসছে। এমন সময় রূপ ও ওয়াশরুম থেকে বের হলো। হাতে নিয়ে এক বালতি কাপড়, চোপড়। সবই মুহিতের পড়নের শার্ট, প্যান্ট। এক সপ্তাহের জামা কাপড় ভিজিয়ে রেখেছিলো। আজ অনেক সময় নিয়ে ধুঁতে হলো।

কাপড়ের বালতিটা রূপ ওয়াশরুমের দরজার সামনে রেখে মারুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,,,,,,

—–“কি রে কি হয়েছে? নিচ থেকে কারো গলার আওয়াজ শুনছিলাম। কে এসেছে বল তো?”

মারু বসা থেকে উঠে রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

—–“আমার ছেলে আর তোর মেয়ে মিলে অথৈকে খুব মেরেছে। শালিনী নালিশ নিয়ে এসেছে।”

রূপ ভ্রু কুঁচকে বলল,,,,,,,

—–“ওয়েট ওয়েট। ইয়াদ আর রোশনী তো এমন না। কারন ছাড়া কারো গাঁয়ে হাত তুলে না। নিশ্চয়ই অথৈ কিছু করেছে তাই তো অথৈকে ওরা মেরেছে।”

—–“হুম তাই তো বলছি। নিচে চল। সত্যি টা আগে জানি। ছেলে মেয়ে দুটোকে খুঁজতে হবে। সুবাহ টাকে ও অনেকক্ষন ধরে দেখছি না। আদ্রিতা কিচেন রুমে খেঁটে মরছে। সুবাহ র খোঁজ নিতে পারছে না। আমরা মনে হয় ওরা তিন ভাই বোন খেলতে গেছে!”

রূপ রনিতকে কোলে নিয়ে দরজার দিকে পা বাড়াচ্ছে আর বলছে,,,,,,,,,

—–“নিশ্চয়ই পাঁজি তিনটে বাবার রুমে আছে নয়তো স্টাডি রুমে ঘাপটি মেরে বসে আছে। দাঁড়া আমি খুঁজে আনছি।”

মারু ও রূপের পিছু পিছু ছুটল। রূপ আর মারু প্রথমে সানোয়ার আহমেদের রুমটা সার্চ করল। কাউকে কোথাও না পেয়ে ওরা এবার স্টাডি রুমে ঢুকে টেবিলের তলায় চোখ রাখতেই তিন চোরকে দেখতে পেলো। তিনজনই হাঁটু ভাজ করে হাঁটুতে মুখ লুকিয়ে বসে আছে। রূপ এক্টু ঝুঁকে এক হাতে রোশনীর কান টেনে বলল,,,,,,,

—–“রোশনী তাড়াতাড়ি টেবিলের তলা থেকে বের হও বলছি। তোমার ভাইকে নিয়ে আমি ঝুঁকতে পারছি না। রনিত কিন্তু আমার কোলে আছে।”

মারু ও এক এক করে ইয়াদ আর সুবাহর কান টেনে টেবিলের তলা থেকে বের করল। তিনজনই টেবিলের তলা থেকে বের হয়ে প্যাচ প্যাচ করে কাঁদছে। রূপ রোশনীর কান ছেড়ে রাগী চোখে তিন ভাই বোনের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—–“তোমরা তিনজনই এখন আমাদের সাথে নিচে যাবে। অথৈকে মারার মূল কারনটা সবাইকে বলবে। বুঝেছ?”

ইয়াদ আর রোশনী মাথা নাঁড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালো। সবাই এক এক করে রুম থেকে বের হয়ে নিচে চলে গেলো। মিসেস শালিনী এখনো একই ভাবে উনার ছেলেকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রূপ, মারু আর বাচ্চাদের দেখার সাথে সাথেই উনি চেঁচিয়ে বলে উঠল,,,,,,,,

—–“আজ কিন্তু আপনাদের সঠিক বিচার করতেই হবে ভাবী। আপনাদের ছেলে মেয়েরা অকারনে আমার ছেলেকে মেরেছে।”

অথৈ আবার ন্যাকা কান্না জুড়ে দিলো। রোশনী কাঁদতে কাঁদতে রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—–“আম্মু বিশ্বাস করো আমি আর ইয়াদ ভাইয়া অকারনে অথৈ কে মারি নি। অথৈ আমার দাদুর দেওয়া আংটি টা নিয়ে খুব টানাটানি করছিলো। আমার দাদু তো খুব ব্যাথা পাচ্ছিলো বলো। আংটি টা তো আমার দাদুর দেওয়া শেষ স্মৃতি। আমি খুব আগলে রাখি আংটি টাকে। আংটি টাকে কেউ টাচ করলেই আমার খুব কষ্ট হয়। মনে হয় আমার দাদুকে কেউ নিয়ে যাচ্ছে। আংটি টা আমার সাথে থাকলে মনে হয় দাদু আমার সাথে আছে। আমি বার বার করে অথৈ কে বারন করেছি আমার আংটি টা না ধরতে। সে কিছুতেই শুনতে চাইছিলো না। আংটি টা আমার হাত থেকে খুলে নিয়েছিলো। তাই তো আমি রাগ করে অথৈ কে চড় মেরে ছিলাম। আমি কাঁদছিলাম বলে ইয়াদ ভাইয়া কষ্ট পাচ্ছিলো। তাই ইয়াদ ভাইয়া ও তেড়ে এসে অথৈ কে চড় মেরে দেয়।”

কথা গুলো বলেই রোশনী হেচকি তুলে কেঁদে অথৈ এর হাত ধরে বলল,,,,,,,,

—–“আমাকে মাফ করে দাও অথৈ। আমি কিন্তু তোমাকে অকারণে মারি নি। আমার দাদুকে আঘাত করেছ বলে আমি তোমাকে মেরেছি। জানো, এই আংটি টা আমার দাদু আমাকে দিয়ে গেছে। বলেছে সবসময় হাতে পড়ে থাকতে। সবসময় আগলে রাখতে। আমি যখন এক্টু এক্টু করে বড় হচ্ছিলাম তখন আংটি টা আমার আঙ্গুলে জায়গা হতো না। তখন বাবাই এই আংটি টাকে আরো এক্টু বাড়িয়ে নতুন করে গড়ে দেয়। এরপর থেকে আমি খুব ইজিলি আংটি টাকে পড়তে পারি। এই আংটি টাতে আমার দাদুর ছোঁয়া আছে। এর মাধ্যমেই আমি আমার দাদুকে সবসময় ফিল করি। আমি আমার দাদুকে কখনো সামনে থেকে দেখি নি তো, তাই আংটি টা দেখেই দাদুকে ফিল করি।”

রোশনীর কথা শুনে উপস্থিত সবার চোখে জল চলে এলো। ছোট রনিত ও খুব জোরে কান্না জুড়ে দিলো। বাচ্চাদের সাথে ফেরেশতা আছে বলেই হয়তো ওরা সবকিছু বুঝতে পারে। রূপ চোখের জল ছেড়ে রোশনীকে ঝাপটে ধরে বলল,,,,,,,

—–“কেঁদো না মা। নয়তো তোমার দাদু খুব কষ্ট পাবে। তুমি তোমার দাদুর খুব আদরের নাতনী। তুমি কাঁদলে তোমার দাদু মোটে ও ভালো থাকবে না।”

মিসেস শালিনী চোখের জল মুছে রোশনীর কপালে চুমো খেয়ে বলল,,,,,,,

—–“আল্লাহ্ তোমাকে বাঁচিয়ে রাখুক মা। তোমার দাদু খুব লাকী। কারন উনি তোমার মতো একজন নাতনী পেয়েছে। তোমার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই মা। আমার ছেলে আর কখনো তোমার আংটি তে টাচ করবে না।”

অথৈ রোশনীকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,,,

—–“কেঁদো না রোশনী। আমি তোমাকে আর কক্ষনো হার্ট করব না।”

রোশনীকে ছেড়ে অথৈ ওর মা কে নিয়ে বাড়ি ফিরে গেলো। ইয়াদ আর সুবাহ এসে রোশনীকে জড়িয়ে ধরে ওদের দাদুর জন্য অনেকক্ষন কান্না কাটি করে উপরে চলে গেলো। আদ্রিতা কিচেন রুম থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব দেখছে আর চোখের জল ছাড়ছে। এতোটা বছরে ও কেউ মায়া আহমেদকে ভুলতে পারে নি। সবাই উনাকে দারুনভাবে মিস করে।

এর মধ্যেই বাড়ির ল্যান্ডলাইনে কল বেজে উঠল। মারু দৌঁড়ে গিয়ে কলটা পিক করল। প্রায় দশ মিনিট পর মারু কলটা কেটে হাসি মুখে রূপকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,,

—–“চাচীমনি কল করেছে। সানায়ার মেয়ে হয়েছে।”

মারু দৌঁড়ে গিয়ে খবরটা আদ্রিতাকে ও দিয়ে এলো। ওরা তিন জা মিলে খুশিতে হাসাহাসি করছে। বিগত নয় বছর পর সানায়ার প্রথম বাচ্চা জন্ম নিলো। কোনো এক্টা সমস্যার কারনে সানায়ার কনসিভ করতে এতোটা লেইট হয়ে গেলো। দোলার টুইন বেবি হয়েছে। দুজনেরই সাত বছর বয়স।

,
,,
,,,

ঘড়িতে রাত দশটা। বাড়ির পুরুষরা অফিস থেকে মাএ বাড়ি ফিরেছে। সবাই হসপিটাল থেকে সানায়া এবং,ওর বাবুকে দেখে একেবারে বাড়ি ফিরেছে। মৃন্ময় রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে ইয়াদের সাথে খুনশুটিতে লেগে পড়ল। মারু খুব ব্যস্ত হয়ে কাবার্ড গুছাচ্ছে।

মুহিত রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে রনিতকে কোলে নিয়ে পাশে শুয়ে থাকা রোশনীর মাথায় হাত বুলাচ্ছে। দুই ছেলে মেয়ের সাথেই সে খুব আহ্লাদি স্বরে নানা রকমের কথা বলছে। রোশনী কিছুক্ষন পর মুহিতের কাঁধে উঠে যাচ্ছে। মুহিত হাসি হাসি মুখে মেয়ের গাল টেনে দিচ্ছে। রূপ কিচেন রুমে ব্যস্ত। ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে। আদ্রিতা ও রূপের সাথে কাজ করছে। সাকিব রুমে ঢুকে সুবাহকে নিয়ে পড়েছে। সুবাহ সাকিবের কাঁধে উঠে ঘোড়া ঘোড়া খেলছে। সানোয়ার আহমেদ রুমে ঢুকে এক্টা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দেয়ালে ঝুলানো মায়া আহমেদের ছবিটার দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে বলল,,,,,,,,,

—–“কেমন আছো মায়া? কতো দিন তোমাকে দেখি না বলো? তোমার ছবির সাথে কথা বলতে বলতে প্রায় ক্লান্ত হয়ে গেছি। আমার জীবনে দু দুটো প্রেম এসে ধরা দিয়েছিলো। এক্টা যৌবনে আর এক্টা বার্ধক্যে। কোনো প্রেম ই আমার জীবনে স্থায়ী হলো না। সবাই আমাকে ছেড়ে চলে গেলো। আমি পুরো একা হয়ে গেলাম মায়া। একাকিত্বের জীবন আমার আর ভালো লাগছে না। উপর ওয়ালা কেনো যে আমাকে তুলে নিচ্ছে না।”

কথাগুলো বলেই সানোয়ার আহমেদ ইজি চেয়ারে বসে পড়ল। পিছন থেকে রোশনী কোঁমড়ে হাত দিয়ে তেঁড়ে এসে সানোয়ার আহমেদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,,,,,,,,

—–“এই এই…… তুমি কোন দিক থেকে একা বলো তো? এই যে আমার মতো সুন্দুরী রাজ রানীকে তোমার চোখে লাগে না? দেখো দেখো আমি তোমার দু দুটো বউয়ের চেয়ে ও ডাবল সুন্দুরী। আমাকে বিয়ে করে নাও। তবে তোমাকে আর একা থাকতে হবে না। আমি সারাক্ষন তোমার পাশে থাকব। তোমার সেবা যত্ন করব।”

সানোয়ার আহমেদ হু হা করে হেসে রোশনীর গাল টেনে বলল,,,,,,,

—–“তাহলে চলো। আমরা কালই বিয়ে করে নেই।”

—–“হুম করব তো। আগে তো আমার দাদুর মৃত্যুবার্ষিকি টা করে নেই। আমি আর ইয়াদ ভাইয়া মিলে কোরআন খতম দিয়েছি দাদুর নামে। কাল তো দাদুর মৃত্যুবার্ষিকী বলো? আব্বু আর চাচ্চুরা মিলে ড্রইং রুমে এসব নিয়ে আলোচনা করছে। সুপ্রিয়া দাদু আর মায়া দাদুর একদিনেই মৃত্যুবার্ষিকি। তাই আব্বু বলছে কাল এতিমখানার বাচ্চাদের খাইয়ে দিবে। আর আমাকে বলেছে তোমাকে নিচে নিয়ে যেতে। তাই তো আমি এক ছুটর তোমার কাছে চলে এলাম।”

সানোয়ার আহমেদ এক্টা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রোশনীর হাত ধরে নিচে নেমে এলো। সানোয়ার আহমেদকে সোফায় বসিয়ে মুহিত সানোয়ার আহমেদের হাঁটুতে মাথা রেখে বলল,,,,,,,,

—–“আব্বু…..আগামীকাল আমার দুই মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী। আমরা সবাই চাইছি এতিমখানায় বড় করে এক্টা খাবারের অনুষ্ঠান করতে। যা আমরা প্রতি বছরি করে থাকি।”

সানোয়ার আহমেদ মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,

—–“হুম তাই করো।”

রাতে সবাই ডিনার সেরে সবাই যে যার রুমে চলে গেলো। ইয়াদ, রোশনী আর সুবাহ তিন ভাই বোন মিলে ছোট্ট এক্টা রুমে থাকে। তিনজনেরই আলাদা আলাদা তিনটি বেড। রূপ এসে একে একে সবাইকে ঘুম পাড়িয়ে রুমে চলে গেলো। মারু আর আদ্রিতা ওদের পার্টনারদের নিয়ে অলরেডি ঘুমিয়ে পড়েছে। রূপ রুমে ঢুকে ব্যালকনির দিকে তাকিয়ে দেখল মুহিত ব্যালকনির গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টি তার আকাশের দিকে। রূপ ধীর পায়ে হেঁটে পিছন থেকে মুহিতকে ঝাপটে ধরল। মুহিত মলিন হেসে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—–“রূপ…… জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না তাই না?”

—–“না মুহিত। জীবন তার নিজস্ব গতিতেই চলমান।”

—–“হুম। তাই তো আমরা আপন জনদের ছাড়াই সময়ের স্রোতে গা ভাসিয়ে দিচ্ছি। জীবনটা অবলীলায় পাড় হয়ে যাচ্ছে। পিছে রয়ে গেছে কিছু আপন মানুষের রেখে যাওয়া হাজার হাজার স্মৃতি। যে স্মৃতি গুলো রাতের আঁধারে হানা দেয়। রাতের আকাশে তাঁরার মতো মিটমিট করে জ্বলে। ধীরে ধীরে যন্ত্রনা গুলো বুকের মাঝে চেঁপে বসে। কি অসহ্য এ জ্বালা। বুকটাকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দেয়।”

মুহিতের চোখের কোনে জল জমে এলো। চোখের জল গুলো মুছে দিয়ে রূপ মুহিতকে সামনে থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,,,,

—–“আমাদের মা রা ভালো আছে মুহিত। তুমি কেঁদে কেটে ওদের ভালো থাকাটাকে নষ্ট করে দিও না। ওদের নিজেদের মতো করে ভালো থাকতে দাও। কেবল প্রাণ ভরে দো’আ করে তবেই হবে।”

মুহিত খুব জোরে এক্টা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে চোখ জোড়া বুজে রূপকে বুকের মাঝে ঝাপটে ধরে বলল,,,,,,,

—–“ভালোবাসি রূপ। এক আকাশ ভালোবাসি। এভাবেই আজীবন আমার পাশে থেকো।”

—–“আমি ও তোমায় এক আকাশ ভালোবাসি মুহিত। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এভাবেই তোমার পাশে থাকব।”

এর মাঝেই রনিত ঘুম থেকে উঠে কান্না জুড়ে দিলো। রূপ তাড়াহুড়ো করে মুহিতের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে রনিতকে খাওয়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। মুহিত মা ও ছেলের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে রুম থেকে বের হয়ে সোজা রোশনীদের রুম গেলো। তিন ভাই বোন খুব আয়েশ করে ঘুমাচ্ছে। মুহিত একে একে ইয়াদ, সুবাহর কপালে চুমো খেলো। রোশনীর কপালে চুমো খেয়েই মুহিত হঠাৎ থেমে গেলো। রোশনী মায়া আহমেদের এক্টা ছবিকে বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। চোখের জল ছেড়ে মুহিত মায়া আহমেদের ছবিটাতে এক্টা চুমো খেয়ে রূপের পাশে গিয়ে চুপটি করে শুয়ে পড়ল।

,
,,
,,,

পরের দিন। সবাই খাবার দাবার প্যাক করে এতিম খানায় চলে গেলো। রোশনী রনিতকে কোলে নিয়ে পুরো এতিমখানাটা ঘুড়ে ঘুড়ে দেখছে। রোশনীর পাশে ইয়াদ আর সুবাহ ও আছে। দোলার দুটো টুইন মেয়ে রনিতের হাত ধরে টানছে আর খিলখিল করে হাসছে। মারু, রূপ, মৃন্ময়, মুহিত, সাকিব, আদ্রিতা, দোলা, লিয়েন, সানোয়ার আহমেদ সবাই এতিমখানার ছোট ছোট ছেলেদের খুব আপ্যায়ন করে খাওয়াচ্ছে। পেট ভরে খেতে দিচ্ছে।

রোশনী কিছুক্ষন হাঁটাহাঁটি করে রনিতকে কোলে নিয়ে এতিমখানার বাচ্চাদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে জোরে চেঁচিয়ে বলে উঠল,,,,,,,,

—–“তোমার সবাই তৃপ্তি মিটিয়ে খাও কেমন? ভালো করে খেয়ে আমাদের দাদুদের জন্য দো’আ করো। আল্লাহ্ যেনো আমার দাদুদের জান্নাত নসিব করে। ওরা যেনো পরকালে শান্তিতে থাকে। পাশাপাশি আমাদের ভাই বোনদের জন্য ও দো’আ করো। আমরা যেনো সবসময় আমাদের দাদুদের জন্য আল্লাহ্ র কাছে প্রার্থণা করতে পারি। ওদের ভালো থাকার জন্য বেশি বেশি করে আমল করতে পারি।”

এতিমখানার ছেলেরা মাথা নাঁড়িয়ে হ্যাঁ জানালো। উপস্থিত সবাই হাসি মুখে রোশনীর দিকে তাকালো। সানোয়ার আহমেদ রোশনীর কাছে এগিয়ে এসে রোশনীর কপালে চুমো খেয়ে বলল,,,,,

——“দো’আ করি তোকে। যুগ যুগ বেঁচে থাক। আর আমাদের জন্য আমল করে যা। হয়তো আমি ও আর বেশি দিন বাঁচব না। তবে তোদের ভালোবাসায় আমি বেঁচে থাকব। যেমনটা সুপ্রিয়া আর মায়া আছে।”

একে একে মুহিত, মৃন্ময়, রূপ, মারু, সাকিব, আদ্রিতা, দোলা এসে সানোয়ার আহমেদকে ঝাপটে ধরে কেঁদে দিলো। সানোয়ার আহমেদের কথা গুলো ওরা মানতে পারছে না। সানোয়ার আহমেদ সবাইকে শান্তনা দিয়ে বলল,,,,,,

—–“এভাবে ভেঙ্গে পড়িস না তোরা। একদিন সবাইকেই পরকালে পাড়ি জমাতে হবে। হয়তো কেউ আগে, পরে। তবে পৃথিবীর মায়া সবাইকে ত্যাগ করতেই হবে।”

এতিম খানার বাচ্চাদের খাইয়ে পড়িয়ে সবাই বাড়িতে ফিরে গেলো। আবারো জীবনের বিভিন্ন কর্মকান্ডে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ল। সময়ের স্রোতে গাঁ ভাসাতে লাগল। চলে যাচ্ছে জীবন, যে যার জীবনকে যেভাবে নিচ্ছে, জীবনটা ঠিক সেভাবেই চলছে। শুধু মাঝে মাঝে খনিকের জন্য থমকে যেতে হয়। পিছিয়ে পড়া কিছু স্মৃতির মুখো মুখি হতে হয়। যা দুই দিনের জীবনের বেঁচে থাকার সব লড়াইকে ফিকে করে দেয়। জীবনের বেঁচে থাকার সব আয়োজনকে ব্যর্থ করে দেয়।

মুহিত এবং রূপ ওদের জীবনে দারুন খুশি। দুই ছেলে, মেয়েকে নিয়ে খুব হাসি খুশিতেই জীবন কেটে যাচ্ছে। মারু এবং মৃন্ময় ও খুশি। ওদের একমাএ ছেলেকে নিয়ে। তেমনিভাবে, দোলা, লিয়েন, সাকিব, আদ্রিতা, আদনান, সানায়া সবাই খুব খুশি। ওদের খুশি দেখে সানোয়ার আহমেদ ও বেশ খুশি।

মায়া আহমেদ প্রমাণ করে গেলো জীবনের শেষটা কিভাবে সুন্দর করতে হয়। কিভাবে খারাপ দিক গুলো ঝেঁড়ে ফেলে ভালো দিকে নিজকে অগ্রসর করতে হয়। কিভাবে সবার মনে ভালো কাজের মাধ্যমে জায়গা করে নিতে হয়। কথা ই তো আছে,,,,,,

—–“শেষ ভালো যার। সব ভালো তার!”

——————————সমাপ্ত————————

(

1 COMMENT

  1. golpota ending ta khub sundor hoyeche….. Ato tai sajano je khub valo lageche….. Sobar modhe ak akas valobasa deoya hoyeche…… Khub khub khub khub khub khub khub khub sundor…… Thanks….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here